প্রেমময়_বসন্তের_আগমন #পর্বঃ১ #বর্ষা

”আমি কারো হৃদয় হরিণী নই।না আমি কারো রাত জাগার কারণ।আর না আমি আমার বাবা-মায়ের রাজকন্যা!আমি হলাম সকলের পথের একমাত্র কাঁটা যাকে উপরে ফেলতে সবাই চায় কিন্তু কেউ পারে না।”

ওয়াজিহার কথায় ছোট ছোট চোখ করে সামনের দিকে তাকায় জুনায়েদ ইফতেখার চৌধুরী।চেয়ারের ওপর বসেনি ওয়াজিহা বরং পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে বিশৃঙ্খলভাবে। ইফতেখার রেগে যায় ওয়াজিহার এমন আচরণে।তার মতে,নারী হবে কোমল।যাকে যেমন আকৃতিই দেই না কেন সে সেমন আকৃতিকেই আপন করবে।আর মেয়েরা হবে লজ্জাশীল,সুশীল। কিন্তু ওয়াজিহা যেন তার একেবারেই বিপরীত।পোশাকে অবশ্য শালীনতা মোটামুটি আছে তবে আচরণটা একটু নয় বরং অনেকটাই বেপরোয়া!

”মিস.খান বসুন নয়তো ভালোভাবে দাঁড়ান।বেয়াদবের মতো চেয়ারের ওপর পা দিয়ে মাস্তানি করতে আপনাকে ডাকা হয়নি।এটা ভার্সিটি, আপনার বাড়ি নয়!”

”ঠিক তেমনি এটা আপনার বাড়ি না যে আপনি একটি মেয়েকে হ্যারাস করবেন।আপনি একজন টিচার হয়ে কিভাবে পারলেন র্যাগ করা ছেলেগুলোর হয়ে কথা বলে তানিশাকে অপমান করতে!আর দ্বিতীয় কথা আমার নাম জাস্ট ওয়াজিহা,আমাকে মিস.খান ভুলেও আর ডাকবেন না।”

ওয়াজিহার ব্যবহার এবার রাগের চরম মাত্রায় পৌঁছে দেয় জুনায়েদ ইফতেখার চৌধুরীকে।সে এই ভার্সিটি থেকেই ফার্স্ট ক্লাসে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে।এখন গেস্ট টিচার হিসেবে চার মাসের জন্য এখানে আছে সে।চারমাস পর তার চাকরিটা পার্মানেন্ট করাও হতে পারে।জুনায়েদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে ওঠে।

”আপনারা মেয়েরা যাচ্ছে তাই পোশাক পড়ে আসবেন আর ছেলেরা আপনাদের ইভটিজিং করলেই দোষ! ইসলাম মেয়েদের পর্দায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আপনার ফ্রেন্ডের পোশাক দেখেছিলেন?”

”ওহ তাই আমি তো একদমই জানতাম না। ইসলাম কি শুধু মেয়েদের জন্য? ইসলামে ছেলেদেরও তো বলা হয়েছে নন-মাহরাম মেয়েদের দিকে তাকানো হারাম।সেখানে আপনারা তো তাকিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না,ফিগার কত,এই কত,সেই কত সব কিছু নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।আর…”

”জাস্ট স্টপ ইট।বের হও আমার কেবিন থেকে। লজ্জাশীলতা ল মাত্র নেই যেই মেয়ের মাঝে তার বন্ধুরা কেমন হবে জানাই আছে আমার।গেট লস্ট ফর্ম দিস অফিস রুম।”

”আমি তো যাবই তবে শুনে রাখুন পক্ষপাত্তিত্ব করে আজ ভুল করলেন।তানিশার জায়গায় কাল আপনার বোনও থাকতে পারে।জায়ফা তো আপনারই বোনই না?”

”ইউ..”

জুনায়েদের আর কোনো কথা না শুনেই ওয়াজিহা বেরিয়ে আসে অফিস রুম থেকে। তানিশা এখানে দাঁড়িয়ে এখনো কাঁদছে।রাব্বি,সিহাব ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।তবে পারছে না। ওয়াজিহাকে অফিস রুম থেকে বের হতে দেখেই ওখানে ছুটে আসে তানিশা।

”ওয়াজিহা শুধু শুধু আমার জন্য ঝামেলায় না জড়ালেই পারতি!”

”একদম চুপ থাকবি তুই।কথার বেলায় তো ষোলো আনা।কষে চারটা চড় লাগাতে পারিসনি ওই হারামী সিনিয়রগুলোকে!আর শোন এই ব্যাপার এখন জাস্ট তোর নেই। আমারও!”

”মানে?”

সিহাবের কথায় ওয়াজিহা কিছু একটা ভেবে হাসে।তারপর বলে-

”সিহাব ,রাব্বি র্যাগ করতে পারবি?”

”মা..মানে?

রাব্বি ঘাবড়ে যাওয়ায় তোতলামি শুরু করেছে। ওয়াজিহা ধমক দেয়।রাব্বি কপাল বেয়ে পড়া ঘাম মুছে নেয়। মনোযোগ দিয়ে শোনে ওয়াজিহার কথাগুলো।মেয়েটা এত রিস্কি কাজ কিভাবে ওদের দিচ্ছে ভাবতেই হাত-পা কাপাকাপি রাব্বির। সেনাবাহিনীর পরিবারে জন্ম রাব্বি।বাপ,ভাইয়েরা,চাচা,দাদা সব সেনাবাহিনী ওর পরিবারে।তবে ওকে নেয়নি।একেই রোগা তারওপর কালার ব্লাইন্ডনেস আছে নাকি কি বলে। সেনাবাহিনীর পরিবার হওয়ায় অনেকটাই নিয়ম শৃঙ্খলায় ঘেরা হলেও কিভাবে যেন ওয়াজিহার সাথে ওর বন্ধুত্বটা হয়ে গেল আরো বেশ কয়েকবছর আগে।
শুধু পরিবারের মানুষগুলোই বোঝে না ওদের বন্ধুত্বটা।হাহ..

বিকেলে আজিমপুরে এক মোড়ে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিহাব, রাব্বি, ওয়াজিহা আর তানিশা। দুইটা বাইক।স্কুল হয়তো ছুটি হয়েছে।তাইতো স্কুলের ছেলেমেয়েগুলো গল্প করতে করতে যাচ্ছে। ওয়াজিহা তানিশাকে নিয়ে ওখান থেকে সরে আসার পূর্বে সিহাবকে ইশারা দেয়।ইশারা বুঝেই সিহাব বাঁকা হেসে মাথা নাড়ায়।

”উফফ মাইরি কি লাগছে?ও মেয়ে এদিকে একটু আসো তো প্রেমালাপ করি কিছু!”

সিহাবের কথায় ওদের সামনে দিয়ে যাওয়া দুইটা মেয়ে পায়ের গতি বাড়ায়।সিহাব তা বুঝতে পেরে বলে-

”ও দুটি ঝুঁটি একটু আমাদেরও মনটা শান্তি করে দিয়ে যাও।কি লাগছে তোমায়!”

সিহাব চোখের সানগ্লাসটা খুলে এদিক ওদিক তাকায়।মাস্ক পড়া ওদের মুখে।বাইকটাও এমন জায়গায় পার্ক করেছে যে নাম্বার প্লেট দেখা পসিবল না।মেয়ে দুটো চলে গেছে।দুটি ঝুঁটি করা মেয়েটা যে কাঁদছিলো ওয়াজিহা তা লক্ষ্য করেছে।সে কাউকে কাঁদাতে চায়নি তবে পুরুষরা তো মা,বোন,মেয়ের ওপর আঘাত না এলে অন্যদের মা,বোন,মেয়ের সম্মানের দিকটা বোঝে না।

”দোস্ত মেয়েটা মনে হয় কাঁদছিলো।খারাপ তো নিশ্চিত অনেক লেগেছে।আচ্ছা এই মেয়েটা কে রে?তুই ওর সাথে এমন করলি কেন?”

”কালকে বুঝতে পারবি।চল ওই দুই বলদের কাছে যাই ”

ওয়াজিহা আর তানিশাকে আসতে দেখেই রাব্বি বলে ওঠে-

”এই এলাকার মানুষগুলো কেরকম জানি!দেখছে একটা মেয়েকে র্যাগ করা হচ্ছে তবুও এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলো না। বরং কিছু দেখেনি এরকম ভাবে সবাই নিজ গন্তব্যে চলে গেল।আর ওয়াজিহা তোর কি দরকার ছিল মেয়েটাকে র্যাগ দেওয়ার?”

”এই এলাকা নয় শুধু বরং অধিকাংশ মানুষই এমন।অন্যায় যতদিন নিজের সাথে না হয় ততদিন চুপ থাকাকেই শ্রেয়ভাবে।আর প্রয়োজনের কথা বললি না?তা কালই বুঝতে পারবি কেন এবং কি প্রয়োজনে এমনটা করলাম!”

ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে এক পুরুষ।তার মুখে কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের হাসি।বহু সময়ের ব্যবধানে সে ফিরে পেতে চলে তার আমানত।বহু বছর পুরনো সেই আমানত।তার অন্ধকার কালো জগৎ থেকে বহুদূরে আলোকিত জগৎ এর উজ্জ্বল নক্ষত্র তার আমানত।তবে তাকে ফিরতে হবে এই অন্ধকার জগতে।রাজত্ব করতে হবে অন্ধকারে থেকে আলোর জগৎকে!

”ওসমান,আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর আমার রাজ্যের উত্তরাধিকার তার ভার নেবে!”

ওসমান নামক লোকটা কালো পোশাকধারী।হয়তো বডিগার্ড।বুকের বাম পাশে আইডি কার্ড আটকানো।ওসমান মালেক।লোকটার মুখমন্ডল স্বাভাবিক না হয়তো চিন্তিত। ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার কে হবে তা ভেবেই।এতবছরের প্রয়াসে কি সে আদৌ জীবিত থাকাকালীন তাদের নতুন উত্তরাধিকার দেখতে পারবে!

”ওসমান গাড়ি বের করতে বলো।আমি বাংলাদেশে ব্যাক করবো!আমার যে এখন ওখানে যেতেই হবে।কার্য কিছু সাধন করা এখনো যে বাকি!”

”জ্বি স্যার” ”হ্যালো,ম্যান্ডেলা কার রেডি রেখো!”

ব্লুটুথ মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছে দেয় ওসমান।আর স্যারের নির্দেশনা পাওয়ার পূর্বেই আজকে রাতের টিকিটের ব্যবস্থায় করে নেয় লোক লাগিয়ে।বহু বছরের সেবা যে সে দান করছে ওনার স্যারকে!কে এই স্যার?

চলবে?

#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ১
#বর্ষা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here