প্রেমময়_বসন্তের_আগমন #পর্বঃ১০

#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ১০
#বর্ষা
ওসমান মালেক আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা গাজীপুরে এসেছেন। কেননা ওই লোকটা অর্থাৎ তওয়ব আলীর অফিস গাজীপুর। একটু ঘোরাঘুরির পরই অফিসের সন্ধান পেয়ে যান তারা।গভীর রাতের অপেক্ষায় থাকেন।রাত্রি গভীর হতেই পেছনের দেয়াল টপকে তওয়ব আলীর বলা স্থানে চলে যান ওনারা। সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যেতে একটু কষ্ট হয়েছে বটে ওনাদের।তবে উক্ত স্থানে গিয়ে নীল রঙা এক খাম পান তারা।ওতে লেখা-

শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি,

উপযুক্ত সময় উপযুক্ত কাজটি করতে হয়। নয়তো দেরি হয়ে যায়।এই যে দেখুন আপনারা রাত্রি গভীর হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিঠিটা পেলেন না।তবে ভাববেন না,প্রিতম ওয়াহেদ উরফে প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার এক্সিডেন্টের পেছনে যারা বা যে দায়ী সবাই শাস্তি পাবে!

আর লিখলাম না।এখন থেকে একটু সময় সচেতন হোন!

ইতি,
আপনাদের যা মনে হয় ভেবে নিবেন!

ওসমান মালেকের রাগে শরীর কাঁপছে।কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তো তারা আসতে দেখেনি এই কোম্পানিতে!তবে ওসমান মালেক বুঝেছেন এ ব্যক্তি তাদের ওপর সুক্ষ্ণ নজর রাখছে।তাইতো তাদের পরবর্তী চাল দিতে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ওসমান মালেক এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা আবারো সাবধানতা অবলম্বন করে বাইরে চলে আসে।

ওসমান মালেকের কয়েকজন লোক বাইরেও ছিল।ওনারা বাইরে আসতেই গাড়িতে করে চলে যান।আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে কালো পোশাকধারী কেউ‌।হাতে চিঠির কাগজ। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,

”পাপাই যে কিভাবে তোমাদেরকে তার গার্ড হিসেবে রেখেছে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।এরা এতো বোকা কেন? তোমাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে আদৌ এই ঘটনার সুরাহা হবে বলে মনে হয় না।এবার যা হবে সব আমিই করবো।”

কন্ঠটা মেয়েদের!কে এই মেয়ে?তবে বোঝা যাচ্ছে এই মেয়েই প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার কন্যা।মির্জা এতো সেই মির্জা বংশ যাদের ভিলা খান ভিলার সামনে।এই প্রিতম ওয়াহেদ মির্জা সেই মির্জা বংশের একজন যেই মির্জা বংশ সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুবরণ করেছিল।লাশ নিখোঁজ ছিল মাত্র দুজনের।এ বাড়ির প্রিন্সেস এবং সে বাড়ির রাজার!রানী, মহারাজা, মহারানী,রাজার দুই ভাই এবং তাদের ভাইয়ের বউ সন্তানেরা সবাই সেদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলো। কেননা লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। লাশগুলো ছাই হয়ে যায়নি কেননা অগ্নিকাণ্ড অতটাও বড় ঘটেনি কেননা মির্জা ভিলায় আগুন লাগার সাথে সাথে উপর থেকে পানি নিক্ষেপণের ব্যবস্থা ছিলো।যা হয়তো সন্ত্রাসবাদীরা খেয়ালে রাখেনি।

ওসমান মালেক হসপিটালে বসে আছেন।ঘুম পাচ্ছে তার। হঠাৎ এ ঘুমের কারণ অজানা তার নিকট।তিনি অন্যান্য গার্ডদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টায় ব্যর্থ হন কেননা সবাইকে এক্টিভ দেখালেও কেউ রেসপন্স করছে না। কিছুক্ষণের মাঝে তিনিও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।

ওসমান মালেক ঘুমিয়ে পড়তেই দুজন নর-নারী প্রবেশ করে প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার কেবিনে। পুরুষটি আগলে রেখেছে রমনীটিকে।রমনীটি হয়তো কাঁদছে।তাইতো প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার হাত ধরার সাথে সাথেই তার কান্নার তীব্রতা আরো বাড়ে। অশ্রু গড়িয়ে পড়ে প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার হাতে। প্রিতম ওয়াহেদ মির্জা অক্সিজেন মাস্ক খুলে উঠে বসেন এবং বলেন,

”বেটা তুমি কাঁদছো কেন?তোমার কথাতেই তো আমার পার্সোনাল গাড়িতে আমার পরিবর্তে আমার ড্রাইভারের এক্সিডেন্ট হলেও সেখানে আমি নিজেকে প্রেজেন্ট করেছি!এমনকি আমার বডিগার্ডরাও জানে না যে আমি সুস্থ!তাহলে তুমি কাঁদছো কেন বেটা?”

রমনীটি কান্নার গতি কমায়। আঁটকে আঁটকে বলে,

”পাপাই ড্রাইভার আংকেলের পরিবর্তে যদি তুমি থাকতে! তাহলে তো তুমিও এখন তার মতো কোমায় ঘুমিয়ে থাকতে!”

পুরুষটি রমনীকে জড়িয়ে ধরেই রেখেছে। প্রিতম ওয়াহেদ মির্জা মুচকি হাসেন।বলেন,

”পিয়াস তো দেখছি ভালোই আগলে রেখেছে আমার মেয়েকে।”

পুরুষটি অর্থাৎ পিয়াস গম্ভীরভাবে বলে,

”জানো বাবাই তোমার ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে আমার থেকে কতকিছু লুকিয়ে রেখেছে।এখনো অব্দি জানায়নি।এমনকি আমি তো জানতামই না যে তুমি সুস্থ যদি না আজ তোমায় দেখতে আসতাম।”

রমনীটি ন্যাকা রাগ দেখিয়ে বলে,

”আমার পাপাইয়ের কাছে তুমি আমার নামে বিচার দিচ্ছো ভাই!”

”ওই আমি তোর কোন জন্মের ভাই হই!একদম ভাই ডাকবি না।”

”হাজার বার ডাকবো!”

প্রিতম ওয়াহেদ মির্জা ছেলে-মেয়ের খুনসুটিতে হাসেন।আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বেও তো এভাবেই লড়তো এই দুজন।হয়তো সম্পর্ক ছিল না রক্তের তবে সম্পর্ক ছিল আত্মার।প্রিতম ওয়াহেদের বন্ধুর ছেলে পিয়াস।সন্ত্রাসী হামলার দিন মির্জা ভিলায় ছোটখাটো এক পিকনিকের আয়োজন হয়েছিলো।সেইদিন পিয়াসের পরিবারেরও দিহান্ত হয়েছিলো!ভাবতেই বেজার হয়ে যায় প্রিতম ওয়াহেদ মির্জার মনটা।তারপর আবারো প্রফুল্ল হোন ছেলে-মেয়ের খুনসুটিতে।

”হয়েছে, হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না তোমাদের!তা তোমাদের খোঁজ কতদূর?আর আমি শুনলাম বেটা তোমাকে কে বা কারা নাকি…!”

”পাপাই সব কথা সব জায়গায় বলতে নেই।দেয়ালেরও কান আছে।আর তুমি যা শুনেছিলে তা ঠিক শুনেছো।ভাইয়য়য়য়য়া…তো বাঁচিয়েছে আমাকে!”

”বাবাই দেখেছো ও আমাকে আবারো ভাইয়া বলছে!”

প্রিতম ওয়াহেদ মির্জা অট্ট হেসে বলেন,

”আরে বোকা ছেলে ও যে তোকে ক্ষেপাচ্ছে।আর তুইও ক্ষেপছিস!”

ভোর হতেই ওয়াজিহা ভার্সিটির উদ্দেশ্য রেডি হতে থাকে।কালরাতেই হসপিটাল থেকে অনেক বলে কয়ে ডিসচার্জ নিয়েছে সে‌।মাথায় আজ হিজাব করেছে সে।লং কুর্তি,জিন্স। মাশাআল্লাহ আজ বলাই যায়।এই প্রথমবার সে হিজাব করেছে।ফজরের নামাজও আদায় করেছে।হয়তো হেদায়েত প্রাপ্ততা ঘটেছে!

ওয়াজিহা ডাইনিং টেবিলে যেতেই মোহনা জুবায়ের পরম মমতায় খাবার বেড়ে দেন ওয়াজিহার প্লেটে। ওয়াজিহা খাবার খায় না।জাস্ট পানি খেয়ে উঠে আসে।যেই পানি রাখা ছিল রুকন খানের সামনে সেই পানি। কেননা সে দেখেছিল কেউ কিছু একটা তার খাবারে মেশাচ্ছে।তাইতো না খাওয়া।

ড্রয়িং রুমে গিয়ে খবরের কাগজে কিছু একটা খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয় ওয়াজিহা।টিভি ছাড়ে।ক্রাইম নিউজ চ্যানেলে যায়।পকেট থেকে চকলেট খেতে খেতে সংবাদ শুনতে থাকে। শিরোনামটা একবার নিজেও পড়ে নেয়। শিরোনাম:একই মাসে দ্বিতীয় ভয়াবহ খুন!খুনির নেই কোনো হদিস!

সংবাদ পাঠিকা বলতে শুরু করেন যে এবারে লাশটা ছিলো আগুনে ঝলসানো।গায়ে পোশাকের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি।খুন একজন পুরুষের হয়েছে তা বোঝা গিয়েছে‌।উচ্চতায় পাঁচ ফুট চারের কাছাকাছি হবে হয়তো।তবে লাশটিকে ঝলসানোর পূর্বে এর ওপর ভয়াবহ টর্চার করা হয়েছে যেই টর্চার ছিলো প্রেমময় অর্থাৎ প্রথমে খাইয়ে দাইয়ে তারপর টর্চার। কেননা পেটে খাবারের ট্রেসেস মিলেছে যা এখনো বিক্রিত হয়নি।

”আপু কখন ভার্সিটিতে যাবি?আমাকে নিয়ে যাবি তোর সাথে?”

রাহমির প্রশ্নে যেন দশতলা থেকে ওয়াজিহা পড়ে।প্রশ্নটা যেমন তেমন তবে আপু ডাকটা ঠাট্টা মনে হচ্ছে ওয়াজিহার।একই ভার্সিটিতে ভর্তি হলেও দুজন কখনো একসাথে যাতায়াত অব্দি করেনি, সেখানে আজ নাকি একত্রে যেতে চাইছে রাহমি ভাবা যায়!

ওয়াজিহা ঘড়িতে সময় দেখে একটু মুচড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।টিভি বন্ধ করে হাঁটা দেয় সামনের দিকে।একবার পেছনে তাকায়। ওয়াজিহাকে ফিরে তাকাতে দেখে রাহমি বুঝে যে ওয়াজিহার সাথে সে যেতে পারবে।তাইতো ওয়াজিহা বাড়ি থেকে বেরোতেই পরিবারের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে নিজেও বের হয়।তবে অবাক হয় ওয়াজিহা বাইক নিবে না শুনে। বরং সে আজ অটোতে যাবে।রাহমির মুখের হাসি মুহুর্তেই বিলীধ হয়ে যায়।

”আপু আমি কখনো অটোতে ট্রাভেল করিনি!”

”তুমি কখনো বাংলাদেশের নেচারকে দেখতে যে ট্রাভেল করেছো বলে তো আমি জানি না।তাই ইচ্ছে হলে আসো নয়তো বাড়ির গাড়ি করে যাও!”

”এই দাঁড়া আমিও যাবো তোর সাথে আপু!”

ওয়াজিহা অটোতে উঠে রিলাক্সে মোবাইল টিপতে থাকে।এদিকটায় অটো সহজে কেন,কোন কালেই দেখা যায়নি‌।আজ হঠাৎ অটো দেখে ওয়াজিহা উঠে বসে। অবশ্য এটা হয়তো কেউ তার জন্যই পাঠিয়েছে তার জীবন রক্ষার্থে। ওয়াজিহা মোবাইল টিপার ফাঁকে তাকায় রাহমির দিকে।মনে পড়ে যায় সকালের ঘটনা। ওয়াজিহা মর্নিং ওয়াক থেকে তখন ফিরেছে।তখন সে দেখতে পায়-

রাহমি গেরেজ থেকে বেরোচ্ছে।ওকে বেরোতে দেখেই রুকন খান এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করেন।

”কাজ হয়েছে?”

”হুম হয়েছে।আজ আমি ওর সাথে এই বাইকে যাবো।কিছুটা গিয়েই বলবো আমার ভালো লাগছে না তুই যা।এভাবে ওর অনেকক্ষণ সময় নষ্ট করবো।”

”তাহলে কি হবে?”

”যখন ওর লেট হবে ও দ্রুত বাইক চালাবে।আর তখনই তারের বাকি অংশও ছিঁড়ে যাবে।আর বাইকের ব্রেক ফেল হয়ে এক্সিডেন্ট হবে।আর তারপর যা হবে তা তো বুঝতেই পারছো!”

”হুম!”

রাহমি আর রুকন খান হাই-ফাইভ করে অট্ট হেসে বাড়িতে প্রবেশ করেন।আড়াল থেকে সবই দেখে ওয়াজিহা।নিজেও মুচকি হাসে। কেননা এরা ক্রাইম তো করে তবে তা যার সাথে করছে তার সামনেই করে।কত বোকা!

চলবে?

পূর্ববর্তী পর্ব
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/932115731843533/?mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here