প্রেমময়_বসন্তের_আগমন #পর্বঃ৩ #বর্ষা

#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ৩
#বর্ষা

বিকালের সৌন্দর্যতা যেন ভাবিয়ে তুলছে ওয়াজিহাকে বারবার।আজ একটু ভালো ব্যবহারের শেষে চরম অপমান পেল যে সে জুনায়েদ ইফতেখার চৌধুরী স্যারের থেকে। ওয়াজিহা কর্তৃপক্ষকে গিয়ে নিজের নাম বলেছিলো যে সে পুলিশ ডেকেছিলো। কর্তৃপক্ষের একাংশ শুরু থেকেই ওকে চরম অপছন্দ করতো।তাইতো অপমান করার সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।তার সাথে যুক্ত জুনায়েদের খারাপ ব্যবহার। কেননা সে শুনে ফেলেছিলো ওয়াজিহাকে বলা ওর বন্ধুদের কথোপকথন।তাইতো পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে অনবগত থেকেই যাচ্ছে ভাষায় অপমান করেছে সে ওয়াজিহাকে। ওয়াজিহা নাকি মেয়ে জাতির কলঙ্ক কেননা একজন নারী কখনো অপর নারীকে অপমান করতে পারে না!আরো নানা কথা।

ওয়াজিহা ভাবছে,সেদিন তো তানিশাকে যখন র্যাগ করা হয়েছিলো সেদিনও তো সেখানে সিনিয়র হারামীগুলোর সাথে কয়েকজন রমনীও ছিল।তাহলে সেদিন কেন জুনায়েদ ওদেরকে মেয়ে জাতির কলঙ্ক বলেনি। চাঁপা কষ্টটাকে আর প্রাধান্য দেয় না ওয়াজিহা।দিয়েই লাভ কি! ছোটবেলা থেকে কম তো অপমানিত হয়নি।তবে এখন সে লড়তে শিখে গেছে। বাঁচতে শিখে গেছে।

মনটাকে ভালো করতেই পার্কে বসে থাকা এখন আর‌। বন্ধুগুলো আজকাল বড্ড অচেনা আচরণ করে ওর সাথে।যেন চিনেও চেনে না ওরা ওয়াজিহাকে।এইতো কাল বিকালে একা একাই কই কই যেন ওরা বাইকে ঘুরলো। ওদেরকে ফিরতে দেখেছে ওয়াজিহা।রাব্বি অবশ্য ওদের সাথে ছিল না কেননা ওর যে সন্ধ্যা আটটার পর বাড়ি থেকে বের হওয়া পরিবার থেকে নিষিদ্ধ।

ওয়াজিহা তার থেকে একটু দূরে দেখতে পায় এক শক্তপোক্ত দেহের পুরুষকে।কেমন যেন চেনাচেনা লাগে তার।মাথাটা হঠাৎ করেই ধরে আসে।তবে এবার আর জ্ঞান থাকে না বরং অজ্ঞান হয়ে যায় সে।চারপাশের কেউ তাকে খেয়াল না করলেও ঐ শক্তপোক্ত দেহের লোকটা ছুটে এসে কোলে তুলে নেয় ওয়াজিহাকে।গাড়িতে তুলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছোটে।

জ্ঞান ফিরতেই ওয়াজিহা নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে।চমকে বেড থেকে উঠতে নিতেই দেখতে পায় হাতে ক্যানোলা লাগানো।পাশেই স্যালাইনের ব্যাগটা ঝুলছে। ওয়াজিহা চিন্তিত হয়ে নিজের ফোনটা খুঁজতে নিলেই বামপাশে বেডের ওপরই তার ফোন পেয়ে যায় সে।সন্ধ্যা সাতটা বাজে।শীতকালে এই সাতটা মানেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।তবে শহরাঞ্চলে আবহাওয়া যেমনই হোক কৃত্রিম লাইটের ব্যবস্থা সর্বত্রই আছে বলা যায়।

ওয়াজিহা ক্যানোলা খুলতে নিবে এমন সময়ই এক এপ্রোন পড়া ব্যক্তি এক লোকের সাথে কথা বলতে বলতে ঢোকে।এপ্রোন পড়া লোকটা অপরিচিত হলেও পাশের লোকটা হলো সেই লোক যাকে পার্কে দেখেছিলো ওয়াজিহা।

”তা কেমন ফিল করছেন এখন মিস?”

এপ্রোন পড়া লোকটার কথায় ওয়াজিহার ভাবনাচ্যুত হয়।লোকটার আইডি কার্ডে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সে। তাসকিন তালুকদার রাফিন। নিউরোলজিস্ট।

”আইডি দেখা হলে উত্তরটা তো দেবেন নাকি?”

নিউরোলজিস্ট রাফিনের কথায় ওয়াজিহা লজ্জা পায়। কেননা লোকটা তাকে পর্যবেক্ষণ করেছে।নয়তো দেখতে পারতো না তো। ওয়াজিহা মুচকি হেসে বলে,

”আমি ভালো অনুভব করছি।তবে দয়া করে বলবেন আমার কি হয়েছিলো আর আমাকে এখানে কে এনেছে?”

”আমি প্রিতম ওয়াহেদ।আমিই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। কেননা তুমি পার্কে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলে!”

পার্কের লোকটার মুখে কথাগুলো শোনে ওয়াজিহা। প্রথমে লজ্জা না পেলেও একটু ভাবতে সে প্রচন্ড লজ্জা পেতে থাকে কেননা তাকে তো লোকটা কোলে করেই এনেছে হয়তো।ইশ,কি লজ্জা এবং অস্বস্তিকর!

”ধন্যবাদ”

ওয়াজিহা ধন্যবাদ বলে কিছুসময় চুপ থেকে নিউরোলজিস্ট রাফিনের উদ্দেশ্যে বলে,

”আমি এখন ঠিক আছি।আমার যেতে হবে!”

”আমি পৌঁছে দেই তোমায়,চল!”

ওয়াজিহা অবাক হয়।প্রিতম ওয়াহেদ কি ওকে আদেশ করলো! ওয়াজিহা কিছু বলে না।সে এটাও ভেবে দেখে না জাস্ট অজ্ঞান হওয়ার কারণে কেন একজন নিউরোলজিস্টকে তার কেবিনে আনা হবে।তবে রাফিনকে দেখে যে ওর ভালো লাগেনি তেমনটা নয়।

”আচ্ছা মিস আমি চলি..নিজের খেয়াল রাখবেন..আর যেখানে সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়বেন না কিন্তু!”

রাফিন নার্স ডেকে ক্যানোলা খুলে দিতে বলে চলে যায়।স্যালাইন শেষ হয়েছে দেওয়া।হাতে ব্যথা হয়েছে প্রচন্ড ওয়াজিহার।তার ইচ্ছা হচ্ছে হাতটা ফেলে দিতে।তবে তা যে পসিবল না। প্রিতম ওয়াহেদের পাশের সিটেই ওয়াজিহা বসে।গাড়ি চলতে শুরু করেছে।ড্রাইভার ড্রাইভ করছে।আর মাঝবয়সী প্রিতম ওয়াহেদ কিছু নিয়ে হাঁসফাঁস করছে।তারপর বলেই ফেললো-

”ওয়াজিহা, কখনো কারো পরিবর্তনশীলতাকে নিয়ে এতো ভেবো না যে তুমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলো।”

ওয়াজিহা চমকায়। চরম পর্যায়ে চমকায়। কেননা সে তো তার নামটা এখনো বলেনি ওনাদের।তাহলে…? ওয়াজিহা কিছু প্রশ্ন করতে নেওয়ার পূর্বেই ড্রাইভার বলে ওঠে,

”স্যার গন্তব্যে চলে এসেছি।”

ওয়াজিহা আর কথা বাড়ায় না ধন্যবাদ বলে নেমে আসে গাড়ি থেকে। মাঝবয়সী প্রিতম ওয়াহেদ খান বাড়ির সামনের পোড়া বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে।কয়েক ফোঁটা অশ্রুও হয়তো বিসর্জন করে।তারপর ড্রাইভারকে বলে চলে যায় ওইখান থেকে।তবে যাওয়ার পূর্বে ওয়াজিহাকে দেখতে একবার তাকিয়েছে সে খান বাড়ির গেট দিয়ে। বেশিদূর যায়না।এক গলি গিয়েই একটা আটতলা ভবনের সামনে গাড়ি ব্রেক কষে।এই দারোয়ান গেট খুলতেই সাদা গাড়িটা ঢুকে যায় গেট দিয়ে!

” আপনার কৌতুহলী দৃষ্টিটা আমার অনেক ভালো লাগে কেন জানি! আপনারও কি আমাকে ভালো লাগে?আই মিন আপনি কি আমার বেবির মা হবেন?”

জুনায়েদ ইফতেখার চৌধুরীর মতো একজন মানুষ কিশোরী এক রমনীর সামনে নিজের ভালোবাসা উপস্থাপন করেছে।কিশোরীর চোখ দিয়ে আনন্দের বন্যা বইছে।দুই বছরের অপেক্ষার ফলাফল।মেয়েটা এখনো নিউ টেনের শিক্ষার্থী। ক্লাস এইট থেকেই পাগল ছিল জুনায়েদ স্যারের জন্য।হাই সেকশনের ক্লাস নিতো জুনায়েদ।বেশি না মাত্র তিনটা ক্লাস নিতো একদিনে সে।মেয়েটা পরীক্ষার হলে অব্দি একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকতো। ভালোবাসার কথা প্রকাশও করেছিলো।তবে জুনায়েদ ফিরিয়ে দিয়েছিলো কেননা মেয়েটা যে গুনে গুনে পনেরো বছরের ছোটো ওর।সমাজ যে এ সম্পর্ক মানবে না।কথা উঠবে,প্রশ্ন উঠবে জুনায়েদের শিক্ষা নিয়ে!তবে মেয়েটা তাকে শুধু একটা প্রশ্নই জিজ্ঞেস করেছিলো যখন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো জুনায়েদ।

”আচ্ছা আমাদের হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হযরত আয়শা (রাঃ) বিয়ে করেন তাদের বয়সের পার্থক্য কত ছিল?”

জুনায়েদ তবুও ফিরিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটাকে।মেয়েটা নিজের চরম ছ্যাচড়ামো এবং ভালোবাসার প্রতিদানে বারবার পেয়েছিলো অবহেলা।তবুও প্রাপ্ত বয়স্কা তরুণীদের মতো ছেড়ে না গিয়ে আগলে রেখেছিল নামহীন সম্পর্কটাকে।জুনায়েদ তো স্কুলও ছেড়ে দিয়েছিলো। কতশত বার অন্যের রাগ মেয়েটার ওপর মিটিয়েছে তবুও মেয়েটা অভিমান করা সত্ত্বেও বারবার ফিরে এসেছে।

প্রতিদানে আজ জুনায়েদ নিজেই প্রপোজ করেছে তাকে। বিয়ের প্রপোজাল।পরিবার নিয়ে দেখতে গিয়েছে ওকে।জায়মা অবাক কেননা মেয়েটা তার থেকেও ছোট কেননা সামনেই জায়মা এসএসসি দিবে।আর এই মেয়েটা নিউ টেনের স্টুডেন্ট!

চলবে?

পূর্ববর্তী পর্বঃ
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/925507619171011/?mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here