প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-২৭

প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-২৭
#ফাবিহা_নওশীন

||

“রুহানি,চলো বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে আমাদের সব সমস্যার সমাধান।”
রুহানি ফালাকের কথা শুনে চমকে উঠল। ধীরে ধীরে ফালাকের মুখের দিকে তাকাল। ফালাককে দেখে মনে হচ্ছে না মজা করছে। ওর মুখ দেখেই মনে হচ্ছে সিরিয়াস মুডে আছে।

রুহানি আমতা আমতা করে বলল,
“কি বলছো?”

রুহানি সরে যেতে চাইলে ফালাক ওর দুবাহু চেপে ধরে বলল,
“বিয়ের কথা শুনে ভয় পাচ্ছো কেন? বিয়ে করতে চাও না আমাকে হাহ?”

রুহানি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। তারপর নিচু সুরে বলল,
“অবশ্যই চাই, কিন্তু সিচুয়েশন তো দেখছো। হুট করে বিয়ে করা যায় না-কি?”

ফালাক হালকা হাসল। হেসে বলল,
“সিচুয়েশনের দিকে চেয়ে থাকলে এ জীবনে আর বিয়ে করা হবে না। তোমার ফ্যামিলি আমাকে যে ট্রাপে ফাসিয়েছে তাতে তো নয়ই।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“আমার ফ্যামিলি ট্রাপ কষেছে? কি করেছে আমার ফ্যামিলি?”

“তোমার মা আমাকে সাতদিনের সময় দেয়নি? সাত দিন! সিরিয়াসলি? সাত দিন কি যথেষ্ট ছিল? উনারা জানেন না আমার বাড়ির আবহাওয়া কেমন? জাস্ট দেখানোর জন্য আমাকে সাতদিনের সময় দিয়েছে। মন থেকে চাইছেন আহিলের সাথে বিয়ে দিতে।”

রুহানি রেগেমেগে বলল,
“তোমার মা-ও তো রাজি হচ্ছে না। সেটা তোমার চোখে পড়ছে না? ”

ফালাক শক্ত কন্ঠে বলল,
“তোমার ফ্যামিলি আমার ফ্যামিলি কেউ চাইছে না আমাদের সম্পর্কটা থাকুক। আর আমি এই সম্পর্ক রাখার জন্য, একটা নাম দেওয়ার জন্য সব করতে পারি।”

রুহানি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“কি করতে চাইছো তুমি?”

ফালাক রুহানির চোখে চোখ রেখে বলল,
“যদি বলি অলরেডি চাওয়া পূরণ করে ফেলেছি।”

রুহানি বুঝতে পারছে না কোন চাওয়া, কখন, কিভাবে পূরণ করেছে। কিছুই না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল,
“কিসের চাওয়া? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

ফালাক রুহানিকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেল। নিজের চুলে হাত বুলিয়ে রুহানির দিকে ঘুরে বলল,
“তোমাকে আজ বউ সাজালাম কেন? কেন বউ সাজে দেখতে চাইলাম? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।”

রুহানি সেটাও জানে না কেন? তাই প্রশ্ন করল,
“কেন?”

ফালাক রুহানির একদম কাছে এসে দাঁড়াল।
তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছি। তুমি আইননুসারে আমার স্ত্রী।”

রুহানি কপাল কুঁচকে বিস্ময় নিয়ে বলল,
“কিহ!”

ফালাক উচ্চস্বরে বলল,
“হ্যাঁ। বিয়ে করেছি আমি তোমাকে।”

রুহানি দু’পা পিছিয়ে বলল,
“মজা করছো তাই না?”

“তোমার কি মনে হচ্ছে আমি মজা করার মুডে আছি? আমি সিরিয়াস, আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছি। তুমি চাইলে প্রুভও দেখাতে পারি।”

রুহানি অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে। ফালাক কি বলছে আদৌও ওর মাথায় ঢুকছে না।
“কিসের প্রুভ? আর আমি বিয়ে করেছি আমিই জানি না? ফাজলামো করছো আমার সাথে?”

ফালাক সোজাসাপটা বলতে পারছে না। থেমে থেমে বলল,
“বিয়েটা তোমার অজান্তেই হয়েছে। আমি সেদিন কিছু পেপারে তোমার সাইন লাগবে বলে কাবিননামায় তোমার সাইন করিয়ে নিয়েছি।”

রুহানির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চোখে পানি এসে পড়েছে। ফালাকের কলার চেপে ধরে বলল,
“বুঝতে পারছো কি বলছো তুমি? তুমি মিথ্যা বলছো তাই না? আমার সাথে তুমি কখনো এমন করতে পারো না। কিছুতেই আমাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করতে পারো না। আমি বিশ্বাস করি না।”

ফালাক নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমি এটাই করেছি। আর আমি ভুল কিছু করিনি। তোমাকে বলেছি না তোমার এতটা কাছে আমি কাউকে সহ্য করব না? তাই তোমাকে নিজের করে নিয়েছি। আমি কিচ্ছু ভুল করিনি। যা আমার আমি তাই অধিকার করে নিয়েছি। তোমার যদি মনে হয় আমি অন্যায় করেছি তাহলে করেছি। এর জন্য তুমি আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেও আমার আপত্তি নেই।”

রুহানি মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ফালাক ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে। এই বিয়ের কথা জানাজানি হলে তুফান শুরু হয়ে যাবে। ওর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
ফালাক আলমারি থেকে একটা পেপার এনে রুহানির সামনে ধরল। রুহানি দ্রুত পেপারটা দেখল। ওর নাম স্বাক্ষরের জায়গায় জ্বলজ্বল করছে।
“তোমার একাউন্ট চেক করোনি। দেনমোহরের টাকা সেদিনই শোধ করে দিয়েছি।”

রুহানি রাগে,ক্ষোভে পেপার ছিড়ে ফেলে বলল,
“এটা কোন বিয়ে না। এভাবে কখনো বিয়ে হয় না। আমি এই বিয়ে মানি না।”

রুহানি চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়াল। ফালাকের দিকে তাকাল।
“পেপার ছিড়ে ফেললেই একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না, তুমি অস্বীকার করতে পারবে না। মেনে নেও তুমি বিবাহিত। ফালাকের স্ত্রী।”

“অন্যভাবে হলে খুশি খুশি মেনে নিতাম কিন্তু তুমি যে ওয়ে ব্যবহার করেছো তাতে আমি কিছুতেই মানব না।”

রুহানি চোখের পানি মুছতে মুছতে চোখ শক্ত করে ফালাকের দিকে চেয়ে দরজার দিকে যাচ্ছে। ফালাক ওকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে রুহানি আরও রেগে যায়।
“খবরদার, আমাকে ছুবে না। একদম ছুবে না।”

ফালাক জোর করে রুহানিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“একশোবার ছুতে পারি। তুমি আমার বিয়ে করা বউ। অধিকার আছে।”

রুহানি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াল। ফালাক পেছনে থেকে রুহানিকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,
“রুহানি মাফ করে দেও। এছাড়া আমার উপায় ছিল না।”

রুহানি ফালাককে ধাক্কা মারল। কিন্তু ফালাক ওকে ছাড়ল না। জোর করেই শক্ত করে ধরে রাখল। ঘাড়ে, গলায় উষ্ণ ছোঁয়া দিচ্ছে। রুহানি ছোটার জন্য ছটফট করছে। ফালাক রুহানিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। রুহানি ভয়ানক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রাগে ফুসফুস করছে। কিন্তু ফালাক পাত্তা না দিয়ে মুচকি হাসল। এক হাতে ওর দু’হাত চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলাল। রুহানি প্রথমে বাঁধা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও পরে শান্ত হয়ে গেল। ফালাকের আহবানে সাড়া দিল। ফালাক ওর হাত ছেড়ে দিল। রুহানি দু’হাতে ফালাককে নিজের সাথে আলিঙ্গন করে নিল গভীর থেকে গভীর ভাবে। ফালাক রুহানির সম্মতিতেই নিজের অধিকার আদায় করে নিল।

চলবে…..

(ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত আছি তাই ছোট করে দিলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here