প্রার্থনায়_তুৃমি #পর্ব-৯

#প্রার্থনায়_তুৃমি
#পর্ব-৯
#Tahmina_Akther

৯.

ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মায়ার সামনে। ঠিক কতকাল পর এই মুখশ্রী দেখতে পেলো সে! বহুকাল পর মায়াকে ফিরে পেয়ে নিশু আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো।
চট করে মায়াকে তার বুকের মাঝে চেপে ধরলো। আবার, বুকের বাঁধন থেকে মুক্ত করে মুখখানা আঁজলায় ভরে সারা মুখে চুম্বনে ভড়িয়ে তুললো।

অরুণিমা হঠাৎ করেই অপরিচিত পুরুষের কাছ থেকে এরকম আক্রমনাত্মক আচরণে বেশ ভড়কে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে জোড় করে ওই লোকের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে বেশ জোড়েই থাপ্পড় মেরে বসে লোকটির গালে। এরপর,দৌঁড়ে গিয়ে আয়মানের বাহুডোরে আশ্রয় নেয়।

নিশু, সে তো অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ওর মায়া ওকে থাপ্পড় মেরেছে, আবার ওই লোকটির বাহুতে কেমন গুটিশুটি মেরে আছে, কিন্তু কেন? নিশু, তারপরও অরুণিমার কাছে এগিয়ে যেয়ে বলছে,

– মায়া, কি হয়েছে তোমার? তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো না? এই লোকের কাছে গিয়েছো, কেন তুমি? আমার কাছে এসো ঠিক কতদিন পর তোমাকে খুঁজে পেয়েছি আমি ?

– কে মায়া?আমি অরুণিমা। আপনি কোন সাহসে আমাকে স্পর্শ করলেন? আয়মান, তুমি কিছু বলছো না কেন এই লোকটাকে?

– আচ্ছা, আমি কথা বলছি। তুমি একটু উপরের ঘরে যাও, প্লিজ।

আয়মানের কথা শুনে নিশুর দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আয়মানকে হুম বলে চলে গেলো অরুণিমা।

অরুণিমার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আয়মান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশু এবং রকিকে সোফায় বসতে ইশারা করলো।

নিশু যেন আয়মানের ইশারা দেখতে পায়নি। তার মাথায় শুধু একটি কথায় ঘুরছে, ওর মায়া ওকে চিনতে পারছে না নাকি না চেনার ভান করছে!

আয়মানের কথায় ভাবনার ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো নিশু।

-আরে রকি তুমি এখানে হঠাৎ করেই এলে। আর ওনাকে (ইশারা করে নিশুকে দেখিয়ে) তুমিই নিয়ে এসেছো?

– জি স্যার, আসলে উনি হচ্ছেন আমার বড় ফুপির ছেলে।

– উনার নাম ইশফাক রহমান নিশু, তাইতো?

– স্যার,আপনি কিভাবে চেনেন নিশু ভাইকে?

– আমার কিছুদিন আগে ছোট্ট একটি এক্সিডেন্ট হয়েছিলো না, সেদিন মি. নিশু আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়;তাই না নিশু সাহেব?

– জি, আমিই ওই দিন আপনাকে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিলাম।

– আপনি কি কোনোভাবে অরুণিমার পরিচিত?

– ভাইয়ার পরিচিত মানে! মায়া ভাবি হচ্ছে ভাইয়ার হবু স্ত্রী। কিন্তু, ভাবি কেন এরকম আচরণ করলো ভাইয়ার সাথে, এটাই মাথাতে ঢুকছে না!ভাবিকে আপনাদের বাড়িতে কে নিয়ে এসেছে স্যার? আয়মানের প্রশ্ন শুনে হতভম্ব কন্ঠে উত্তর দেয় রকি

– আমার মা রোকেয়া মির্জা এনেছে অরুণিমাকে। মা ওকে বেশ ইনজুরড অবস্থায় পেয়েছিলো মিরসরাই হাইওয়েতে। পরে ওকে এখানকার এক হসপিটালে রেখেছিলো প্রায় ছ’মাস। ও ধীরে ধীরে সুস্থ হয় ঠিকই তবে ওর পুরোনো স্মৃতিরকিছুই মনে নেই।

– মনে নেই মানে! কি বলতে চাইছেন আপনি?মায়া আমাকে, তার পরিবারের সবাইকে এবং সব পুরনো স্মৃতি ভুলে গেছে। আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করবো!
অবিশ্বাস্য, রাগান্বিত কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো নিশু।

-আপনি যে অরুণিমার সত্যিকারের পরিচিত বা তার ফিয়ন্সে ছিলেন, আমি ঠিক যেভাবে বিশ্বাস করেছি ঠিক সেভাবে আপনাকেও বিশ্বাস করতে হবে ও আপনাকে বা ওর পুরনো স্মৃতি, কিছুই ওর মনে নেই।

নিশু মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো; ওকে দেখতে এখন প্রায় ভিটেমাটি হারানো ব্যক্তির মতো লাগছে। যার সবকিছু হারিয়ে গেছে কালগর্ভে।

নিশু ওর মোবাইল বের করে কিছু একটা করলো। তারপর, মোবাইলটি মেলে ধরলো আয়মানের চোখের সামনে।

আয়মান দেখতে পেলো লাল জামদানী পরনে অরুণিমা বসে আছে সোফায় মাথা নিচু করে আর নিশু তাকিয়ে আছে অরুণিমার দিকে।
এই ছবিটিতে নিশুকে অরুণিমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করেই আয়মানের মন কেমন করে যেন উঠলো!

নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে আয়মান নিশুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– দেখুন নিশু, অরুণিমার পরিবারের খোঁজ পাওয়ার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা খোঁজ পাইনি। তাই মা ওকে রেখে দেয় নিজের কাছে। অরুণিমা ওর নাম এটাই ওর পরিচয় সে মেনে নিয়েছে। তবে, সে তার পরিবারকে ফিরে পেতে চায়। এখন যেহেতু আপনার খোঁজ পেয়েছি আশা করছি আপনি ওকে ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন।

– হ্যা, ওকে আজই আমার সঙ্গে ঢাকায় নিয়ে যাবো। ওখানে গেলেই সবার সাথে মিলেমিশে চললে আস্তে আস্তে ওর সব মনে পরবে। হয়তো আমাকেও চিনত পারবে।

– আপনি ওকে একা নিয়ে যেতে পারবেন না নিশু?

– কেন পারবো না আমি? আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এতদিন মায়াকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন বলে। কিন্তু, আর এক মূর্হুতের জন্য আমি এখানে মায়াকে রাখবো না। তাই আজই আমি মায়াকে নিয়ে চলে যাবো। যদি ও যেতে না চায় তাহলে ওকে আমি জোর করে হলেও নিয়ে যাবো।

বেশ জোর গলায় বললো নিশু।এত তর্কের মাঝে থাকার পরও রকি তাকিয়ে আছে দেয়ালে ঝুলানো একটি ছবির দিকে; যেখানে আয়মান ও মায়া দাঁড়িয়ে আছে একে অপরের হাত জরিয়ে বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে।

রকি নিশুকে ইশারা করলো ছবিটির দিকে তাকানোর জন্য। এদিকে, আয়মান মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে নিশুকে সব সত্যি জানানোর জন্য।

————————–

ব্যালকনিতে পাতানো চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নিশু আর তার পাশের চেয়ার বসে আছে রকি। তার ঠিক পাশের দেয়ালে পিঠ ঠেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়মান।

আয়মান সবকিছুই খোলাসা করে বলেছে।কিভাবে ওর মা মায়াকে পেলো, ওর মায়ার প্রতি ভালোবাসার অনূভুতি, সর্বশেষ ওর মায়ের মারা যাবার আগে তাদের বিয়ে ।

সব কিছু জানার পর থেকে নিশু একপ্রকার নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে।রকি কি বলে তার এই ভাইটিকে সান্ত্বনা দিবে সেই ভাষাটুকু খুঁজে পাচ্ছে না?

রকি যে অফিসে চাকরি করছে সেই সেক্টরের প্রধান হচ্ছেন আয়মান মির্জা। তার তত্ত্বাবধানে সে চাকরি করে। সকালে যখন নিশুর দেওয়া ঠিকানায় দেখতে পেলো তার স্যারের বাড়ির ঠিকানা। তখন সে খুশীই হয়েছিলো এই ভেবে যাক, সেখানে যদি মায়া ভাবি থাকে ;তাহলে আর কোনো চিন্তার বিষয় নেই। হায় আফসোস, এখানে আসার পর সব উল্টো দিকে চলে যাচ্ছে। তার মায়া ভাবীর কিছুই মনে নেই, আবার সে আরেকজনের সহধর্মিণী। তাহলে, নিশু ভাই এখন কি করবে?

নিশু বেশ কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আয়মানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

– আপনার কোনো দোষ নেই। সবই আমার এই চার আঙুলের কপালের দোষ। এই ভাগ্যে বুঝি অরুণিমা নেই তবু্ও আমি শেষ চেষ্টাটুকু করতে চাই। আগামী সপ্তাহের শুরুতে আমি এসে আপনাদের দুজনকে ঢাকায় নিয়ে যাবো যেখান থেকে মায়া শৈশব থেকেই বড়ো হয়েছে। আশা করি ভালো কিছুই হবে। আমি আসছি,তাহলে আয়মান সাহেব। ভালো রাখবেন আমার মায়াকে।
চলে যাবো তবে যাওয়ার আগে একটু মায়ার মুখখানা দেখতে চাই।

নিশুর কথা শেষ হতেই আয়মান বের হয়ে গেলো অরুনিমাকে ডাক দেয়ার উদ্দেশ্য।নিশু আর রকি ব্যালকনি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে দরজা খুলে বের হয়ে চলে গেলো ড্রইংরুমের উদ্দেশ্য ।

আয়মান রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো অরুণিমা ঘুমিয়ে আছে হয়তো ঔষুধের প্রভাবে এই অবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছে।তবুও ডাকতে হবে ওকে। কারণ অরুণিমার জীবনের চরম সত্য আজ তার সামনে। না চাইলেও ওকে এর সমাধান করতে হবে।

নীচু স্বরে বারকয়েক ডাক দিতেই জেগে উঠে অরুণিমা।চোখ খুলে আয়মানকে দেখার পর অরুণিমা প্রশ্ন করে,

– কি হয়েছে? ডাকছো কেন?

– মি. নিশু চলে যাবে তবে যাওয়ার আগে সে তোমাকে একবার দেখতে চাইছে। এবং,আমিও চাই তুমি উনার সঙ্গে দেখা করো।

– কিন্তু, সে যে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলো, সেটা কি ঠিক হয়েছে বলো?

– হয়তো তোমার বিষয়টি খারাপ লেগেছে কিন্তু তার কাছে বিষয়টি অনেক বড়ো ব্যাপার। তার অনেক কাছের একজনকে সে বহুদিন পর খুঁজে পেয়েছে। তাহলে তার এই আচরণ করার মাঝে খারাপের কি আছে?
বরং, তুমি সব ভুলে গেছো বলেই তুমি তাকে চিনতে পারছো না।এবং, তার আচরণও তুমি স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছো না?

অরুণিমা মাথা নিচু করে আয়মানের কথা গুলো শুনেছিলো। আয়মান এগিয়ে এসে অরুণিমার পাশে বসলো।ওর দু’হাত দিয়ে অরুণিমার মুখটা উঁচু করে অরুণিমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

– সেদিন তুমি আমাকে যে স্কেইচ দেখালে সেই স্কেইচের মানুষটি কিন্তু নিশু। সেদিন হসপিটালে কিন্তু তুমি উনাকে দেখে বলেছিলে তোমার পরিচিত হয়তো সে। তাহলে, আজ যখন সে তোমার পরিচয় নিয়ে তোমার সামনে এসেছে, তোমার উচিত নয় কি এই পরিস্থিতি সামলানো?

-আমি কি ভাবে ভুলে গেলাম এই চেহারা তো আমি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতাম।তার চেহারা আকার জন্যই তো আমি স্কেইচ আর্ট শিখলাম। তাহলে, আজ যখন সে আমার সামনে এলো তখন আমি কেন বারবার পিছু হটে যাচ্ছি? মনে মনে কথাগুলো ভাবছে অরুণিমা।

– চলো আমি যাবো উনার সামনে। জানতে চাইবো তার সাথে আমার কি সম্পর্ক? কি আমার পরিচয়?

আয়মান যেন অরুণিমার মুখ থেকে এই কথাটি শুনতে চেয়েছিলো। তবে ভয় হচ্ছে, যদি তার অরুণিমার সব মনে পড়ে, তখন কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে নিশুর কাছে?

***********************

বাইরে আজও বৃষ্টি হচ্ছে ;আজ যেন প্রকৃতি কোনো কারণে ভীষণ রকমের রেগে আছে। বাতাসের তোড়ে গাছপালা যেন ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। প্রকৃতির মতোই আজ আমার হৃদয়ের অবস্থা। আজ আমার অবস্থানে আমি ভীষণ রকমের দ্বিধাহীনতায় ভুগছি। গতকাল সন্ধ্যায় চলে যায় নিশু এবং রকি। যাওয়ার আগে আমাকে কিছুই বলেনি শুধু পলকহীন চোখে তাকিয়ে ছিলো। তবে, একটি মোবাইল, ডায়েরি আর কিছু প্রিন্টেড ছবি আমাকে দিয়ে গেছে।
উনারা চলে যাওয়ার পর পর আমি সেই প্রিন্টেড ছবিগুলো দেখি।একটি ছবিতে আমি আর নিশু বেশ পাশাপাশি বসে আছি। আরেকটি ছবিতে আমি মাথা নিচু করে আছে আর নিশু তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তৃতীয় ছবিটিতে আমরা একে অপরকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছি।

এবার আমি চোখ তুলে তাকিয়ে ছিলাম আয়মানের দিকে সে বোধহয় আমার দিকে আগে থেকই তাকিয়ে ছিল। আমাকে ইশারা করল ডায়েরি পড়ার জন্য।

আমি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে প্রথম পাতা উল্টিয়ে দেখলাম আমার এক হাস্যজ্জ্বল ছবি, ছবির নিচে লেখা এই ছবিতে তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি, সবসময় হাসিখুশিতে থাকবে। তোমাকে হাসতে দেখলেই আমার মন ভালো হয়ে যাবে।

এরপর টানা একঘন্টা ডায়েরিটা পড়ে শেষ করলাম। সর্বশেষ লেখাগুলো ছিলো,

-অংকন, নামক একজনের ভুলের জন্যই আমি মায়ার থেকে আজ বহু দূরে। আমার জীবনের শেষ চাওয়া হলো,আমি যেন মৃত্যুর আগে একবার হলেও যেন মায়ার দেখা পাই।

ডায়েরিটা রেখে দিলাম আল্লাহ আমায় এ কোন পরীক্ষায় ফেলেছে আমি জানি না? এতদিন আল্লাহর কাছে শুধু পরিবারকে যেন ফিরে পাই সেই দোয়া করেছি কিন্তু এখন জানতে পারলাম আমার কোনো পরিবার নেই আমি এতিম যে কি না চাচা চাচীর কাছে বড় হয়েছি। তাদের ছেলের ভুলের জন্য নিশু নামক ব্যক্তিটা আমাকে হারিয়ে প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন।
কিন্তু, আমার কি করা উচিত আমি যে আয়মানকে অনেক ভালোবাসি। মামনির করা আদেশ তখন আমি পালন করেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমি যে তাকে ভালোবাসি তাকে ছাড়া আমার অন্য কাউকে চাই না?

কাধে কারো স্পর্শ পেলাম! এই স্পর্শ আমার বহু চেনা। আয়মান আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, আমার পিঠ ঠেকে আছে ওর বুকে। ওর থুঁতনি আমার কাঁধে ঠেকিয়ে বললো,

– অরুণিমা, কি ভাবছো তুমি?

– ভাবছি, একজনের অপরাধে আজ আমাদের তিনজনের জীবন এক গোলকধাঁধায় পড়ে আছে। নিশু সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি আর তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো।

– আচ্ছা, অরুণিমা এমন তো হতে পারে তোমার এক্সিডেন্টের আগে তুমি এই নিশু নামক মানুষটাকে ভালোবাসতে?

আয়মানের কথা শুনে আমি যেন আরও দ্বিধায় পড়ে গেলাম। অরুণিমার মুখের অভিব্যক্তি দেখে আয়মান প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলছে,

-অরুণিমা, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে নিশু আসবে, আমাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য । সেখানে তোমার পরিবারের সাথে দেখা হলে দেখবে তোমার সব মনে পড়বে।

– আমার সব মনে পড়বে?

আয়মান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।

– কিন্তু, আয়মান আমি যদি তোমাকে ভুলে যাই? তোমাকে আমি ভুলতে চাই না ;আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। তুমি উনাকে কল করে বলে দিবে এখানে যেন না আসে।

– কিন্তু, আমি চাই তুমি সেখানে যাও। আর আমিও তো যাব পাগলি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আরিফের কথা মনে আছে তোমার। সে বলছিলো যদি তোমার সব মনে পড়ে যায় তাও তুমি তোমার এই বর্তমানকে ভুলবে না, বুঝলে?

-আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আমি এখন একটু একা থাকতে চাই। তুমি চলে যাও এখান থেকে। বেশ জোড়েই কথাগুলো বলল অরুণিমা। আয়মান আর কথা বাড়ায়নি চলে যায় রুম থেকে।
আয়মান চলে যেতেই ডুকরে কেঁদে উঠে অরুনিমা।

এদিকে

আয়মান চলে এসেছে ছাঁদে। আজ রাতের আকাশের বুকে চাঁদ উঠেনি, নেই তারাদের আনাগোনা। চারিদিকে আজ নিকষ কালো আঁধার।

– মা তোমাকে আমি বলেছিলাম, কখনো যদি অরুণিমা সব ফিরে পায় তবে আমাকে ভুলে যাবে। তাই আমার জীবনের সঙ্গে অরুণিমার জীবন জড়াতে চাইনি। কিন্তু, তোমার জেদের কারনে আমাদের এক হতে হলো। সব ভালো চলছিলো কিন্তু অরুণিমার অতীত এসে ওর দরজায় কড়া নাড়ছে তাতে অরুণিমা হাজার চাইলেও সাড়া না দিয়ে পারবে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি ও ঢাকায় যাবার পর সুস্থ হয়। এরপর, ও যা সিদ্ধান্ত নিবে, আমি তাই মেনে নিবো। ওর ওপর কোনো জোর করবো না। আমাদের ভালোবাসার খুনসুটি স্মৃতি নিয়ে না-হয় বাকি জীবন কাটিয়ে দিবো। কথা গুলো বলছে আর চোখের পানি মুছছে আয়মান।

সোফায় পা উঠিয়ে বসে আছে নিশু। কিছুক্ষণ পর পর গ্লাস থেকে কি যেন পান করছে? তার সামনের ছোট টেবিলের উপর রাখা আছে একটি মদের বোতল, সিগারেট আর মায়ার কিছু ছবি।

বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর সোফা থেকে নেমে একটি ঝুড়ি সামনে নিয়ে বসলো। এবার ওর পকেট থেকে লাইটার বের করে টেবিলে রাখা ছবিগুলো হাতে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো।

আঁধার কালো রুমটিতে একাংশ যেন আগুনের লাল আভায় আলোকিত হয়ে আছে। নিশু ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো অপেক্ষা করছে,পুড়ে ছাঁই হওয়া পর্যন্তু?

দরজা ঠেলে কে যেন প্রবেশ করলো, নিশু বুঝতে পারলো ওর মা এসেছে। এখন, ওর মা আগে লাইট অন করবে যা এই মূহুর্তে নিশুর কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর!

সত্যিই ওর মা লাইট অন করলো। পুরো রুম জুড়ে আলো ছড়িয়ে পরেছে। উনার নজরে এলো ছেলের টেবিলের উপর রাখা বোতল আর সিগারেটের উপর। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন এবং প্রশ্ন করলেন,

– আচ্ছা, নিশু তুই এইসব ছাইপাঁশ কবে থেকে খাচ্ছিস?

– আজ থেকে মা;কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে আজ আমি অন্যের বাহুতে দেখে এসেছি।

– তুই কি মায়ার কথা বলছিস, নিশু?

– হ্যা,মা আমি মায়ার কথা বলছি। সে চট্টগ্রাম আছে তার স্বামীর কাছে। যেই মহিলা ওকে আশ্রয় দিয়েছিল তারই ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। উনি হয়তো বুঝতে পেরেছে এতো মিষ্টি একটা মেয়ে হাত ছাড়া করা যাবে না। আর উনার ছেলে মানে মায়ার স্বামী সে তো মায়াকে অনেক ভালোবাসে। ওকে কাল যখন দেখলাম না, ওর চেহারায় একটা আত্মাতৃপ্তি দেখতে পেয়েছিলাম আমি, জানো?

– মায়ার স্বামী কি তোর থেকে বেশি ভালোবাসে মায়াকে?

– হয়তো! তা নাহলে কেন আল্লাহ আমার বুকের বা পাঁজরের হাড় দিয়ে ওকে বানালেন না। যদি বানাতো মায়া আমার বুকের ঠিক এইপাশের (বাঁ পাশ দেখিয়ে) মালিক হতো মা। কিন্তু, সে আমার নেই, সে কখনোই আমার হবার ছিলো না। কোনো না কোনোভাবে সে ওই আয়মানের স্ত্রী হতো। আচ্ছা, মা মায়া যদি আমার না হওয়ার কথা ছিলো তবে আল্লাহ কেন মায়ার প্রতি আমার বুকে এত ভালোবাসা সৃষ্টি করলো, বলো তো?

নিশুর মা কোনো কথার জবাব দিতে পারেন নি। কারণ, তিনি যে তার নাড়ি ছেঁড়া মানিককে হাহাকার করতে দেখছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here