প্রার্থনায়_তুমি #পর্ব-০৮

#প্রার্থনায়_তুমি
#পর্ব-০৮
#Tahmina_Akther

৮.

আকাশে আজ সূর্য এবং মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে। কিছুক্ষণ রোদ তো কিছুক্ষণ মেঘময় পুরো আকাশ জুড়ে। বেশ কিছুসময় ধরে আকাশ মেঘলা রুপ ধারণ করেছে।

জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতির হঠাৎ রুপবদল দেখছিলো নিশু।নিশুর মামাতো ভাই রকি সে গিটারে টুংটাং সুর তুলছে। নিশু প্রায় বিরক্ত হয়ে রকির উদ্দেশ্য বলল,

– দেখ রকি, খামোখা গিটার বাজাস না তো। কতক্ষন ধরে এমন করছিস?

-ব্রো, বিরক্ত হচ্ছো কেন? দাঁড়াও এমন একটা মেঘলা দিনে তোমার জন্য বেষ্ট একটা গান আছে আমার কাছে। তুমি ওয়েট করো আমি মোবাইলটা নিয়ে আসি।

বলেই উঠে গেল রকি ওর মোবাইল নিয়ে আসার জন্য। ততক্ষণে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে আকাশ থেকে । চট্টগ্রাম শহরে এই প্রথম বৃষ্টি দেখা। ছোট মামার বাড়িতে এলে একদিকে ভালোই লাগে কারণ জানালা খুললেই দূরের এক পাহাড় দেখা যায়। কি সুন্দর ভাবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই শহরের বুকে!

এরইমাঝে গান শুনতে পেলাম। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি রকি মিউজিক প্লেয়ার মোবাইলে সঙ্গে কানেক্ট করে সোফায় গিয়ে বসলো।

ব্যাকগ্রাউন্ডে শ্রীকান্ত আচার্যের একটি গান চলছে আর আমি সে গান মন দিয়ে শুনতে লাগলাম,

আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাকেই কাছে ডেকে,
মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম।

তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে,
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।

আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।

আসলেই তো এমন বৃষ্টির দিনে এমন মনোমুগ্ধকর গান শুনলে মনে দাগ কেটে রয়!

মায়ার মুখখানি ভেসে উঠেছে আমার দৃশ্যপটে।ও যদি আজ আমার কাছে থাকতো তবে এমন আষাঢ়ের দিন গুলো হতো অন্যরকম অনূভুতির মূহুর্ত হতো।

আয়মান আজ খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা, কালো ভূনা আর লইট্টা শুটকি ভূনা খেতে চেয়েছে। তাই সব খাবারের আইটেম রান্না করতে করতে প্রায় দুটো বেজে গেলো অরুণিমার। টেবিলে সব রান্না করা খাবার গুছিয়ে রেখে রুমে চলে গেলো।

রুমে এসে দেখি আয়মান নেই তাই ব্যালকনিতে যেয়ে দেখি আয়মান বসে আছে ঠিকই তবে ওর দৃষ্টি বাইরের বৃষ্টির মাঝে।

আমি আয়মানকে ডাক দিতেই ও আমার দিকে তাকালো। ওর চোখ দেখে আমি আঁতকে উঠি কারণ চোখদুটো বেশ লাল হয়ে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসতেই ও বলতে শুরু করেছে,

– জানো, অরুণিমা গতবছর মা আমাকে ঠিক এরকম আষাঢ়ের বৃষ্টিতে কল করে বলেছিলো।

“আয়মান তুই না অনেক নিষ্ঠুর বাবা।তোর মা তোর আসার অপেক্ষায় আছি জানিস?তোকে ছাড়া ইলিশ মাছ ভাজা আর খিচুড়ি তেমন খেতে পারি না রে। কেমন যেন গলায় আঁটকে থাকে! তুই চলে আয় না ছুটি নিয়ে, তাহলে একসাথে আমরা দুজন মিলে মজা করে ইলিশ ভাজা আর খিচুড়ি খাবো “।

সেবার ব্যস্ত ছিলাম বলে আসতে পারিনি আর এবার তো মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।কাজের ব্যস্ততায় মা’কে একদমই সময় দিতে পারতাম না, জানো। বড্ড আফসোস হয় যদি জানতাম মা আমাকে রেখে এত তারাতাড়ি চলে যাবে। তাহলে মায়ের সব অপূর্ণ ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করতাম।
কথাগুলো বলতে গিয়ে আয়মানের গলা ধরে আসছিল।

আয়মানের বামহাত আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,

– যা হওয়ার তাতে তোমার, আমার বা মামনির কারোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সবারই ঠিক এইভাবে একদিন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হবে। এখন, এসো তো তোমাকে গোসল করিয়ে;খাবার খাইয়ে এরপর আমি গোসল করতে যাবো।

– আচ্ছা, অরুণিমা আমি যদি হারিয়ে যাই তোমার জীবন থেকে, ঠিক কেমন অনূভুত হবে তোমার?

আয়মানের মুখ থেকে হারিয়ে যাবার কথা শুনে আঁতকে উঠে অরুণিমা। আতংকিত কন্ঠে বলে উঠলো,

– এসব তুমি কি বলছো? তুমি জানো তোমার এক্সিডেন্টের পর থেকে এমনিতেই কেমন যেন ভয় হয় আমার? এসব কথা আর যেন না শুনি তোমার মুখ থেকে। এখন এসো জলদি, দেরি হয়ে যাচ্ছে ক’টা বাজে খেয়াল আছে তোমার?

আয়মান উঠে দাঁড়ালো আমি ওর হাত ধরে ওয়াসরুমে নিয়ে গেলাম। ওর মাথায় ব্যান্ডেজ এবং হাতে প্লাস্টার থাকায় পানি লাগানো যাবে না একসপ্তাহ। খুব সাবধানে আয়মানকে গোসল করিয়ে, কাপড় বদলে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। আমার পরনের শাড়ি ভিজে যাওয়াতে আমিও একেবারে গোসল সেড়ে বের হলাম।
আমার গোসল শেষ হলে ওযু করে যোহরের নামাজ পরে নিলাম।

এরপর দুজন মিলে লাঞ্চ করতে নিচে ডাইনিংয়ে চলে গেলাম। আয়মান তো ডানহাতে খেতে পারছে না তাই আমি একপ্লেটে দুজনের খাবার নিয়ে ওকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম এবং আমিও খাচ্ছিলাম।

খাওয়া শেষ হতেই আয়মান বসে রইলো চেয়ারে। এতবার বললাম চলে যেতে রুমে। কিন্তু সে যাবে না, আমার সব কিছু গুছানো শেষ হলে আমাকে সাথে নিয়ে তবেই রুমে যাবে তার আগে নয়।

সব গুছিয়ে চলে এলাম রুমে। আয়মানকে ঔষধ খাইয়ে ঘুমোতে বললাম। সে আমাকেও তার পাশে শুয়ে পরতে বললো, এক্সিডেন্টের পর থেকেই ওর পাশে ঘুমোতে ভয় হয়; যদি ঘুমের ঘোরে ওকে ব্যাথা দিয়ে ফেলি আমি ।আয়মান বেশ কয়েক বার ডেকেও যখন দেখালো আমি ওর পাশে ঘুমোতে আসছিনা, তখন ও রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– যদি এখন না আসো তবে আমি কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে না?

বাবারে এই মানুষটা যতটা শান্ত রেগে গেলে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। তাই ওকে আর না রাগিয়ে শুয়ে পরলাম ওর বামপাশে।
শোয়ার সাথে সাথেই টেনে নিলো ওর বুকের কাছে, কিছু বলবো তার আগেই ও বলে উঠলো,

– আর একটাও কথা বলবা না। গত দু’রাত ঠিক ভাবে ঘুমোতে পারছি না। তুমি জানো যে তোমাকে আমার বাহুডোরে না নিলে ঘুম আসে না। তারপরও, কেন এই দুদিন আমাকে ভুগিয়েছো?

– আসলে হয়েছে কি আমি ভেবেছি তুমি ব্যাথা পাবে তাই তোমার পাশে ঘুমাতে আসিনি। তুমি তো জানোই আমি ঘুমালে আমার হুস থাকে না এরমধ্যে তুমি যদি…

কথাটা আর সর্ম্পূন করতে পারিনি। তার আগেই ওর হাতের দু’আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরে চুপ বললো,

– আর একটাও কথা নয়। এখন চুপচাপ আমার বুকের বা পাশের হৃদ-স্পন্দন শুনতে থাকো। আর আমি একটু শান্তিতে তোমায় বুকে নিয়ে ঘুমাই। আমি যতক্ষণ অব্দি ঘুম থেকে জেগে না উঠবো ততক্ষণ অব্দি তুমি উঠবে না, ঠিক আছে?

আমি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। ও এবার চোখ বুজলো হয়তো ঘুমিয়ে পরবে তাই।

আমি তার মুখখানায় তাকিয়ে দেখি,তার ছোট ছোট দাড়িগুলো বেশ বড় হয়েছে। আমার আবার বদ অভ্যাস আছে ওর দাঁড়ি একটু বড় হতে দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। তাই বারবার ওর দাঁড়িতে হাত ছুঁয়ে দিচ্ছিলাম আর ও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। বেচারা তার ডান হাত দিয়ে আমার হাতও সরাতে পারছিলো না।

**************

রকি সকাল থেকেই নিশুকে অনুরোধ করছে ওর সাথে যেন ওর স্যারের বাড়িতে যায়।কিন্তু, নিশু মানা করছে বারবার। সে এসেছে এখানে মায়ার খোঁজ নিতে ;এখানে ওখানে ঘুরে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।

আজ যেন রকি প্রতিজ্ঞা করেছে নিশুকে ছাড়া সে কোথাও যাবে না।

– রকি, ভাই আমার মেজাজ খারাপ করিস না। কতবার বলব আমি এখন তোর সাথে কোথাও যেতে পারবো না। আমি এখানে এই চট্টগ্রাম শহরে এসেছি মায়ার সন্ধান পাবার জন্য । যেই গাড়ীতে করে ওই নারী মায়াকে নিয়ে এসেছে। সেই গাড়ির নাম্বার প্লেটের মাধ্যমে ঠিকানা পেয়েছি হতে পারে সেখানে আমার মায়া আছে। তুই যা, আমি নাহয় আজ সে ঠিকানায় গিয়ে একটু খোঁজ করে আসি।

রকি তার এই নিশু ভাইকে একবারেই চিনতে পারছে না। নিশু ভাই ছিল ওদের কাজিনদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুগম্ভীর, আত্মকেন্দ্রীক। তাদের সেই গুরুগম্ভীর, আত্মকেন্দ্রিক ভাইটা কি না মায়া নামক সেই মায়ামানবীকে ভালোবেসে হারানোর পর থেকেই কেমন যেন চঞ্চল হয়ে পরেছে!

রকি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, ঠিক যতদিনই লাগুক না কেন? তার এই ভাইকে সে সাহায্য করবে মায়া ভাবিকে খুঁজে বের করার জন্য।

– আচ্ছা, ভাই ঠিকানাটা দেখি তো কোন এলাকার?

নিশু ওর ব্যাগ থেকে কাগজটি বের করে দিলো রকির হাতে। রকি এবার ঠিকানার উপর চোখ বুলিয়ে দেখলো।

– আরে ব্রো, এই ঠিকানা তো আমি চিনি। যদি সত্যি ওই বাড়িতে মায়া ভাবি থাকে তাহলে তুমি নিশ্চিত থাকো ভাবিকে ঠিক আধঘন্টা পর তুমি তোমার সামনে দেখতে পাবে। এখন জলদি তৈরি হয়ে নাও। আমরা এখন ওই বাড়িতে যাবো।

হঠাৎ, করেই না পাওয়া খুশির খবর পেয়ে উত্তেজনায় নিশুর বুক অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। হয়তো, মায়াকে ফিরে পাওয়ার আশায়।

———–

আয়মানের আজ মাথা এবং হাতের ব্যান্ডেজ খুলবে তাই ওকে নিয়ে হসপিটালে এসেছি। আয়মানকে আজ বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে, হয়তো প্লাস্টার নামক জিনিস থেকে মুক্তি মিলবে তাই!
আয়মানের হাতের প্লাস্টার এবং মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে আর কিছু ঔষধ দিয়েছে একসপ্তাহ খাওয়ার জন্য। ডাক্তার দেখানো শেষ হলে বাড়ির পথে রওনা হলাম। বাড়িতে পৌঁছে আগে রান্না বান্নার কাজ শেষ করলাম।

রান্না ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো
আয়মান। দেখছে তার বঁধুকে যে পুরোদস্তুর সংসারী হয়ে উঠেছে। আয়মানের ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে কাল থেকে আবারও ওর অরুণিমাকে রেখে অফিসে যেতে হবে। উফফ, কেন যে মানুষ বৌ রেখে কাজে যায়?পরক্ষণে নিজের কথায় নিজেই হেসে উঠে আয়মান।আনমনা হয়ে আয়মান মনে মনে বলছে,

– কাজ না করলে বৌকে কি খাওয়াবে? পরে না আবার বৌ চলে যায় এই বলে যে আমার স্বামী আয় রোজগার করে না।

অরুণিমা তখন মাছ ভাজি করছিলো এমন সময় কে যেন পেছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বুকে আগলে নিলো? অরুণিমা বুঝতে পেরেছে আয়মান এসেছে। তাই, মুচকি হেঁসে আয়মানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

– কি ব্যাপার আজ হঠাৎ রান্নাঘরে পর্দাপণ হলো তোমার?

– জানো বৌ আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, কাল থেকে আমার তোমাকে ছেড়ে অফিসে যেতে হবে। সে কষ্ট একটু কম অনুভব করার জন্য তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরেছি, বিশ্বাস করো বৌ?

– একটা কাজ করুন অফিসে গিয়ে রিজাইন লেটার জমা করে আসুন।

– সত্যি বৌ!

– হু একেবারেই সত্যি, এরপর নাহয় তুমি একেবারে ভাদাইম্মা হয়ে বাড়িতে থেকো আর আমি চলে যাবো।

– যা মনে মনে ভেবেছিলাম আর তুমি তাই বললে বৌ?

– কি ভেবেছিলে তুমি?
কড়াইয়ের মাছ উল্টে দিয়ে প্রশ্ন করলো অরুণিমা।

– ভেবেছিলাম পুরুষেরা কেন ঘরে বৌ রেখে কাজ করতে বাইরে যায়।এরপর আবার নিজেই নিজেকে বলেছিলাম কাজ করে আয় রোজগার না করলে তো বৌ চলে যাবে। আমি নাহয় আমার মনের কথা তোমাকে একটু বললাম, আর তুমি চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছো বৌ। এটা একদমই ঠিক হচ্ছে না, বুঝলে তুমি? জানো যে আমি তোমায় কত ভালোবাসি আর তুমি কি না আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।

বলেই কান্না করার অভিনয় করলো আয়মান। আয়মানের কথা ও কান্নার অভিনয় দেখে হেসে ফেললো অরুণিমা। আয়মানও হেসে ফেললো অরুণিমার সাথে তাল মিলিয়ে ।

অরুণিমা চুলার গ্যাস বন্ধ করে আয়মানের খুব কাছে গিয়ে আয়মানের পায়ে ভর দিয়ে গলায় দু’হাতে পেচিয়ে জরিয়ে ধরে বললো,

– তো জনাব এতই যেহেতু ভালোবাসেন তাহলে আগে বলেননি কেন আমাকে? ভাগ্যিস মামনি বলছিল নয়তো আপনি কস্মিনকালেও বলতেন না ? আর বিয়ে দূরের কথা আপনার পাশেও আমি বসতাম না বুঝলেন।

অরুণিমার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বললো,

– তোমাকে নিয়ে তখন আমার ভয় হতো, যদি তুমি সুস্থ হবার পর আর আমাকে মনে না রাখলে?সেই যন্ত্রণা আর বিচ্ছেদ আমি সইতে পারতাম না। তাই তোমাকে আমার মনের অনুভূতি বলতে চাইনি। কিন্তু, মা যেন এক পলকে আমার জীবনের সাথে তোমার জীবন বেঁধে দিলেন। তাই তো আজ তুমি আমার বঁধু হয়ে আমার পিঞ্জিরায় বন্দী, বুঝলে?

– হুম, বুঝলাম। কিন্তু, তারপরও মনে করো আমি তোমার সাথে কাটানো সব স্মৃতি ভুলে গিয়ে আমার অতীতের সব স্মৃতি ফিরে পেলাম। তখন তুমি করবে আয়মান?

-সেদিন তোমার আয়মানের শেষদিন হবে এই পৃথিবীতে। কারন সব হারিয়ে যখন নিঃস্ব আমি ঠিক তখনি তোমায় পুঁজি করেই এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি আমি।

বলেই অরুণিমাকে ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো আয়মান। অরুণিমা আয়মানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

———

একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে বাইক থামালো রকি। নিশু ধীরগতিতে নেমে পড়লো বাইক থেকে। রকি বাইক একপাশে পার্ক করে সেই বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো,

– মামা, এই বাড়িতে কি এখন রোকেয়া মির্জা নামে কেউ আছেন?

– না, ম্যাডাম তো প্রায় সাত মাস আগেই মইরা গেছে। আপনাগো কোনো দরকার থাকলে হের পোলার লগে দেহা করতে পারবেন। যাইবেন বিতরে?

নিশু আর রকি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। এরপর রকি বললো,

– জি, মামা যদি একটু কষ্ট করে আমাদের উনার ছেলের সাথে দেখা করিয়ে দিতেন।

– আচ্ছা, আমি স্যাররে কল দিয়া কইতাছি আফনেরা বাড়ির বিতরে যান।

বলেই গেট খুলে দিলে ওরা দুজন বাড়ির ভেতরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। নিশু মনে মনে বেশ ভয় পাচ্ছে যদি এখানে মায়ার খোঁজ না পেলো। তাহলে সে কোথায় খুঁজবে মায়াকে?

কলিং বেলে চাপ দিলো রকি। বেশ কয়েকবার বেলে বাজানোর পর অবশেষে দরজা কে যেন খুলে দিলো?

নিশু সামনেই তাকাতেই বহুল প্রতিক্ষিত মায়ার মুখখানি দেখতে পেলো।
তার হৃদয়ে আজ বহুদিনের চেপে থাকা বোঝাটি যেন হালকা হয়ে এলো নিমেষেই।

আয়মান অরুণিমার পেছনে এসে দাঁড়ালো কে এসেছে দেখার জন্য ?দেখতে পেলো
সেদিন ওকে যেই ছেলেটি হসপিটালে নিয়েছিলো সে এখানে এসেছে।তবে ওদের বাড়ির ঠিকানা পেলো, কিভাবে ?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here