#প্রার্থনায়_তুমি
#পর্ব-০৬
#Tahmina_Akther
৬.
আয়মান নিষ্পলক চাহনিতে চেয়ে আছে ওর মায়ের কবরের দিকে। আজ দুইটা দিন ওর মা ওকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।মায়ের সাথে কাটানো শেষ স্মৃতিটুকু বারবার মনের দৃশ্যপটে ভেসে উঠছে আয়মানের।
অরুণিমার সাথে নিজের ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হবার পর ওর মা যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছিল। এর আগে কখনো এত খুশি হতে দেখেনি ওর মা’কে ।বিয়ে সম্পন্ন হবার পর ওর মা অরণিমার হাত আয়মানের হাতের উপরে রেখে বলেছিল,
– আরু, আজ থেকে তোরা দুজন একে অপরের পরিপূরক। আমার ছেলেটাকে কখনো কোনো কষ্ট দিস না। দেখবি ও তোকে রানীর মতো করে রাখবে।আর তুই আয়মান, আমার আরুকে কোনোপ্রকার জ্বালাতন করবি না। নইলে আমি তোর কান মলে দিব। জানিস না তোদের দুটোকে এক করতে পেরে আমার কি আনন্দ লাগছে বলে,তোদেরকে বলে বোঝাতে পারব না?
– আচ্ছা, মা।তোমার আরুর খেয়াল রাখব। এখন তুমি ঘুমিয়ে পড়ো সকালে নাহয় তোমার বাকি কথাগুলো শুনব আমরা। ডক্টর কিন্তু বলেছে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে।
সেদিন আমার মা সত্যি ঘুমিয়ে পরেছিলেন। এই ঘুম থেকে আর জাগানো যায়নি আমার মা’কে।
আমি যদি জানতে পারতাম আমার মা আর কখনো জেগে উঠবে না, আর কখনো বলবে না আয়মান কি করিস বাবা?বাড়িতে কবে আসবি? এই কথা গুলো আর কখনো শুনবো না মায়ের মুখ থেকে তবে সেদিন মা’কে আমি ঘুমাতেই দিতাম না।
মা ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমি সোফায় বসে থাকি। অরুণিমা মায়ের পাশেই শুয়ে পরে।মায়ের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না দেখার জন্য বসে ছিলাম সারারাত কিন্তু বসে থাকতে থাকতে কখন যে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝে উঠতে পারিনি!
সকালে অরুণিমার কান্নায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। অরুণিমার কান্না দেখেই অজানা আশংকায় আমার বুক কেঁপে উঠে।আমি মায়ের পাশে গিয়ে বসলাম। মায়ের দিকে তাকাতেই মায়ের ফ্যাকাশে মুখখানি দেখতে পেলাম। মায়ের হাত ধরতেই অনুভব করলাম মায়ের হাত বরফের ন্যায় শীতল হয়ে আছে। আমি যেন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না?অরুণিমার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ও কাঁদছে। এবার বুয়াকে দেখলাম সেও কাঁদছে। আমি মা’কে বারকয়েক ডাক দিলাম কিন্তু আমার মায়ের কোনো সাড়া নেই। একবারও বলল না আয়মান এত ডাকছিস কেন,বাবা?
সেদিন দুপুরেই মা’কে বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়। আত্মীয় যারা এসেছিল তারাও এই দুইদিনের মধ্যে যার যার বাড়িতে চলে গেছে। বাড়িতে শুধু আমি আর অরুণিমা। মায়ের অনুপস্থিতি যেন বার বার আমাকে বলছে তুমি এতিম হয়ে গেছো আয়মান, তুমি এতিম হয়ে গেছো?কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আয়মান হু হু করে কেঁদে উঠলো।
বেশ কিছু সময় পর আয়মান নিজের কাঁধে কারো স্পর্শ পেলো। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো অরুণিমা দাঁড়িয়ে আছে।আয়মান,অরুণিমার কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবারও ওর মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অরুণিমা খুবই সন্তর্পনে ওর চোখের পানিটুকু মুছে ফেললো। তারপর মনে মনে পরকালের যাত্রী ওর মামনিকে উদ্দেশ্য করে বলছে,
-মামনি, তুমি কি আমাদের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারছো না?দেখো না তোমার এই পাগল ছেলেটি তোমার জন্য কত কষ্ট পাচ্ছে?
মিনিট পাঁচেক অতিক্রম হবার পর অরুণিমা আয়মানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– বাড়িতে আসুন কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে আসবে। সারাদিন তো না খেয়ে ছিলেন। এভাবে চলতে থাকলে আপনি অসুস্থ হয়ে পরবেন?
-অরুণিমা, যেই বাড়িতে আমার মা নেই সেই বাড়িতে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। আর,খাওয়ার কথা বলছো?কই আমি যে আজ দু’দিন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করি না;মা’তো একবারও বলল না, আয়মান বাবা খেয়ে নে?
– আপনি তো বুঝদার মানুষ। এই দুনিয়া থেকে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। আপনি আমি কেউ থাকব না এই পৃথিবীতে। মামনির জন্য কান্না করলে কোনো লাভ হবে না বরং মামনির আত্মা কষ্ট পাবে। তারচেয়ে, আপনি নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন মামনি যেন পরকালে ভালো থাকে। বাড়িতে আসুন আমিও না খেয়ে আছি মামনি কিন্তু আপনাকে বলেছিল আমার খেয়াল রাখতে, মনে আছে?
– হ্যা, মনে আছে। কান্না চেপে রেখে উত্তর দেয় আয়মান।
-তাহলে চলুন। আপনি যদি এভাবে থাকেন তাহলে মামনির আত্মা কষ্ট পাবে।
আয়মান উঠে দাঁড়ালো ওর মায়ের কবরে হাত ছুঁইয়ে ধীর পায়ে হেঁটে কবরস্থানের বাইরে চলে এলো।অরুণিমা আয়মানের পিছু পিছু হাঁটছে।অরণিমা আসার সময় গাড়ি সাথে করে নিয়ে এসেছিল।এখন, সেই গাড়ি দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো দু’জন ।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর আয়মান গোসল সেড়ে মসজিদে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করলো।তার মায়ের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করলো।নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে আসার পর আয়মান দেখলো অরুণিমা বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। হয়তো ওর আশায় বসে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো আয়মান।
আয়মানকে টেবিলের কাছে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো অরুণিমা। আয়মানকে চেয়ারে বসতে বলে অরুণিমা উঠে চলে গেল কিচেনে। গরম ভাত, ডাল, মুরগির ঝাল মাংসের বাটি এনে আয়মানের সামনে রাখলো অরুণিমা।
আয়মান তাকিয়ে আছে মাংসের বাটির দিকে,একেবারে ওর মায়ের হাতের রান্নার মতো দেখাচ্ছে।
– এই তরকারি কে রান্না করেছে অরুণিমা? আয়মান বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
– আমি রান্না করেছি। আমি জানি আপনার খুব পছন্দের খাবার। মামনি প্রায়ই বলত আপনি এভাবে মুরগীর মাংস রান্না করলে খেতে পছন্দ করেন। মামনি যখন রান্না করতো তখন আমি মামনির পাশে দাঁড়িয়ে দেখতাম কিভাবে মামনি রান্না করে। ধীরে ধীরে এই রান্নার প্রস্তুত প্রণালী রপ্ত করেছি। আজ রান্না করলাম আপনার জন্য; খেয়ে দেখুন তো কেমন হয়েছে?
নীচু স্বরে কথাগুলো বললো অরুণিমা। আয়মানের চোখদুটো আবারও ঝাপসা হয়ে এসেছে। কান্না সংবরণ করার জন্য এখান থেকে যেতে হবে ওর। তাই আয়মান অরুণিমাকে বলছে,
– আমার কিছু খেতে ভালো লাগছে না।তুমি খেয়ে নেও।
– আমি ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেই,আপনাকে?
অরুণিমার মুখে এমন কথা শুনে আয়মান কেমন করে যেন তাকালো অরুণিমার দিকে? হয়তো, নিজের প্রতি যত্নশীল আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে?
আয়মান, অরুণিমার দিকে তাকিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
অরুণিমা প্লেটে ভাত নিয়ে মাংসের তরকারি দিয়ে মাখিয়ে ছোট ছোট লোকমা তুলে আয়মানকে খাইয়ে দিচ্ছে। আয়মান যখন মাংসের তরকারি খেয়েছে তখন ওর মনে হয়েছে সত্যি যেন ওর মায়ের হাতের রান্না! কিভাবে একজনের হাতের রান্না আরেকজনের সাথে হুবহু মিলে!
আয়মানের খাওয়া শেষ হয়ে এলে অরুণিমাও সেই প্লেটে খাবার নিয়ে খেয়ে নেয়।আয়মান চেয়ারে বসে ছিল যখন অরুণিমা খাবার খাচ্ছিল।আয়মান অরুণিমার দিকে তাকিয়ে মন মনে বলছে,
– কেউ অভিনয় তোমার থেকে শিখুক অরুণিমা? আমার যাতে মন খারাপ না হয় তুমি তোমার কষ্ট গুলো মনের মাঝে দাবিয়ে রেখেছো। তুমি যে রাত হলে মায়ের রুমে বসে মায়ের ছবি হাতে নিয়ে কাঁন্না করো আমি তা দেখেছি? মা তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। যখন তুমি সব হারিয়ে আমার মাকে মামনি হিসেবে পেলে আজ সেই মামনি তোমার কাছে নেই। তোমার হয়তো ঠিক আমার মতোই কষ্ট হচ্ছে। মা তো আমাদের দুজনকে এতিম বানিয়ে চলে গেলেন।আচ্ছা, মা কি সত্যি বুঝতে পেরেছিলেন তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাবেন? তা না হলে কেনই বা মা আমাদের বিয়ে রাতারাতি করালেন?
*********************
আয়মান অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছে অরুণিমার আশায়। আয়মান দাঁড়িয়ে আছে একটি আর্ট শেখানো কোচিং সেন্টারের সামনে। বেশ কিছুদিন ধরেই অরণিমা বলছে সে স্কেচ আর্ট শিখতে চায়। তাই তো অরুণিমাকে এখানে ভর্তি করিয়ে দেয় আয়মান। হয়তো আরও কিছুসময় পর বের হয়ে আসবে অরুণিমা। কিছু সময় পার হবার পর আয়মান দেখলো অরুণিমা গেট দিয়ে বের হয়ে আসছে।
আমি খানিকটা পথ এগিয়ে গেলাম। অরুণিমা আমাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে ওর হাত ধরার জন্য। অরুণিমা প্রায়ই কোচিং থেকে বের হয়ে আমার হাত ধরবে আর আমি যদি হাত ধরতে মানা করি তাহলে ও বলে,
– আপনার হাত তো ধরছি না। আমার স্বামীর হাত ধরছি আপনার কোনো সমস্যা আছে?
ওর কথা শুনে আমি না হেসে পারি না। সে আমার হাত ধরছে না তার স্বামীর হাত ধরছে কিন্তু স্বামীটাই তো আমি,তাই-না? তারপরও, ওর ছোটখাটো ভালোবাসা গুলো আমি দারুণ উপভোগ করি।
অরুণিমার হাত ধরে রাস্তা পার হলাম।তারপর,পার্কিয়ে রাখা আমাদের কারের ডোর খুলে ওকে বসিয়ে দিলাম কারের ফ্রন্ট সিটে। ঘুরে এসে আমিও বসে পরলাম ড্রাইভিং সিটে, উদ্দেশ্য কাজরী দেউরী শিশু পার্ক।বহুদিন হলো ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাই না।
বাড়ির পথে না যেয়ে আমাকে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে অরুণিমা আমাকে প্রশ্ন করছে,
– এই আমরা কোথায় যাচ্ছি? তুমি না মাত্রই অফিস থেকে এলে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য !এখন, আবার কোথায় যাচ্ছো?এত ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোথাও যাবার দরকার নেই তোমার।
– অরুণিমা, তোমাকে আমি কখনো বলেছি যে তোমাকে নিয়ে যেতে এলে আমার কষ্ট হয়?
বরং আমার অনেক ভালো লাগে। জানো না সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হই আর সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে তোমাকে দেখি।কাজের এই সময়টুকুতে তোমাকে বড্ড মিস করি বৌ।তাই তো তোমাকে সাথে করে বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য প্রতিদিন আসি যেন সন্ধ্যার পর নয় বরং বিকালে তোমার এই শান্ত মুখটা দেখতে পারি। তোমার হাসি মাখা চেহারা দেখলেই আমার সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে যায়।
– হয়েছে আমি বুঝতে পেরেছি। এখন বলো না আমার কোথায় যাচ্ছি?
– গেলে দেখতে পারবে।
ব্যস, এরপর থেকে আমার বৌ মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। থাকুক চুপ করে এমনিতেই ওখানে গেলে খুশিতে ওর কথার ফুলঝুরি ছুঁটবে।
পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে স্থলে। অরুণিমা যখন দেখলো আমরা শিশুপার্ক এসেছি সে আমার আগেই নেমে পরলো। আমি ওর পেছনে পেছনে হেঁটে চলেছি। দু’জনের দুটো টিকিট নিয়ে পার্কের ভেতরে প্রবেশ করলাম আমরা।
আপনারা হয়তো ভাবছেন।আমরা কেন শিশুপার্ক এলাম?কারনটা হচ্ছে, অরুণিমা। মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আজ দীর্ঘ ছ’মাস। এই ছ’মাস আমাদের দু’জনের জীবনে অনেক কিছু বদলেছে। বদলেছে আমাদের দু’জনের সর্ম্পকের ধাপ। মা চলে যাওয়ার পর অরুণিমা আমাকে সামলেছে। মায়ের চলে যাওয়ার শোক ভুলে সামনের দিকে অগ্রসর হবার জন্য ও আমাকে নানান ভাবে বুঝিয়েছে।
কিন্তু, ও আমাকে সামলাতে পারলেও নিজেকে পারেনি।আমি শোক কাটিয়ে উঠলেও অরুণিমা পারেনি। প্রায় রাতেই সে মায়ের জন্য কান্না করতো। তাই ওর মন ভালো করার জন্য একদিন আমি অরুণিমাকে এই শিশু পার্কে নিয়ে এলাম । ও এখানে এসে ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখতো আবার কিছু বাচ্চাদের সাথে দোলনায় বা রাইডিংয়ে চড়তো। অরুণিমা ধীরে ধীরে মায়ের শোক কাটিয়ে উঠলো। তবে পুরোপুরি পারেনি। কে পারে তাদের মায়ের স্মৃতি ভুলে যেতে আমি বা অরুণিমা কেউ পারেনি হয়তোবা আমরা মন থেকে চাইনি বলে?
সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে বের হয়ে চলে গেলাম রেষ্টুরেন্টে। সেখান থেকে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ির পথে রওয়ানা হলাম আমরা।
বাড়িতে পৌঁছেতে অরুণিমা আগে গোসল সেড়ে ফেললো।আমার ধারণা ওর এটা একটা বাজে স্বভাব । কারণ ও বাইরে থেকে যত রাতেই আসুক না কেন ও গোসল করবেই!
গোসল শেষে চলে গেলো কিচেনে হয়তো চা বানাবে? কারণ, এখন ওর স্কেইচ আর্টের সময়। আর এই সময়টাতে অরুণিমা আগে চা খেয়ে তারপর স্কেইচ আর্টের প্র্যাকটিস করে। আমাকে এককাপ চা দিয়ে ও চলে গেলো পাশের রুমে যেখানে ও স্কেইচের প্র্যাকট্রিস করে। আমি ততক্ষণে নাহয় আমার অফিসের কিছু কাজ কমপ্লিট করে ফেলি।
প্রায় দু’ঘন্টা ধরে কাজ করার ফলে আমার ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। সব কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে চলে এলাম আমাদের রুমে। রুমে এসে দেখি অরুণিমা নেই।ও তো প্রতিদিন এইসময় ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে আজ এখনোও ঘুমায় নি, কেন? মনে পড়লো ওর স্কেইচের কথা তাই চললাম অরুণিমার প্র্যাকটিস রুমের দিকে।
গিয়ে দেখি রুমের দরজা খোলা;ভেতরে যেতে দেখলাম লাল রঙের ফতুয়া,কালো রঙা স্কার্ট পড়নে অরুণিমাকে ষোড়শি কিশোরী ন্যায় দেখা যাচ্ছে।
ও চোখ বন্ধ করে কি যেন আঁকছিলো?
তাই আমি পা টিপে টিপে ওর কাছে গেলাম যেন ও আমার উপস্থিতি টের না পায়। ও হয়তো এতই মনোযোগ দিয়ে আঁকছিলো আমার উপস্থিতি ও টের পায়নি। ওর খুব কাছে গিয়ে আলতো করে ওর ফোলা গালে টুপ করে চুমু দিলাম।
আর অমনি আমার বৌ দিলো কান ফাটানো চিৎকার। বাবারে এক চুমু দিতে গিয়ে আমার না আবার কান বয়রা হয়ে যায়।
– আহ,অরুনিমা এত জোরে কেউ চিৎকার করে আমি আর কানেই শুনতে পাবো না বৌ। একটা না হয় চুমু দিয়েছি তোমায় আর তুমি এভাবে চিৎকার দিতে পারলে!
– আর আপনি যে এভাবে চোরে মতো আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে চুমু দিবেন আমি কি জানি নাকি? এসেছেন যখন একটু বললেও তো পারতেন। আমি তো মনে করেছি কে না কে এলো?
অরুনিমার কোমর জরিয়ে কাছে টেনে নিলো আয়মান।অরুণিমার কপালে ছড়িয়ে থাকা ছোট জুলফিগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে আয়মান বলছে,
– কার এত সাহস আমার বাড়িতে ঢুকে আমার রুমে এসে আমার বৌয়ের গালে চুমু খাবে!
কথাটি বলেই আয়মান টুকুস করে আরও একটি চুমু দিলো অরুণিমার গালে।আয়মানের এরকম কাজে লজ্জা পেলেও পরক্ষণে হেসে ফেললো অরুণিমা। ওর হাসি দেখে আয়মানও হেসে ফেললো।
হাসির ফাঁকে আয়মানের নজরে পরলো একটি ছেলের মুখের স্কেইচের উপর। আয়মান অরুণিমাকে ছেড়ে দিয়ে স্কেইচ বোর্ডের সামনে চলে যায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটি দেখছে আয়মান।
আয়মানের পাশে এসে দাঁড়ায় অরুণিমা।ঠিক তখনই আয়মান অরুণিমাকে প্রশ্ন করে,
– এই ছেলেটি কে অরুণিমা? আমাদের পরিচিত মনে হচ্ছে না।ও কি তোমাদের স্কেইচ মডেল?
– না, এই স্কেইচের ছেলেটা আমাদের মডেল না। বেশ কিছু মাস ধরেই এই ছেলেকে আমি স্বপ্নে দেখি। জানো না স্বপ্নগুলো যেন জীবন্ত মনে হয়। তাই তো আমি স্কেইচ শিখতে চাইলাম। আর দেখো আমি একেঁ ফেললাম। শুধু এই ছেলেটি নয় আরও কয়েকজনের স্কেইচ আমি এঁকেছি তবে এতটা সুন্দর হয়নি এই স্কেইচটার মতো। বলেই মন খারাপ করে ফেললো অরুণিমা।
অরুণিমার মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর আয়মান ভেতরে ভেতরে অজানা আতংকে কেঁপে উঠছিলো বারবার। এখন হয়তো অরুণিমা শুধু চেহারা গুলো মনে করতে পারছে ; সামনের দিকে হয়তো ওর পুরনো সব স্মৃতি মনে পরবে। তখন যদি অরুণিমা ওকে ছেড়ে চলে যায় তবে আয়মান কিভাবে বাঁচবে?
অরুণিমা খেয়াল করে দেখলো আয়মান কি যেন ভাবছে।অরুণিমা বুঝতে পারল কি নিয়ে ভাবছে আয়মান। তাই আয়মানকে সান্ত্বনা দিতে অরুণিমা বললো,
– তুমি হয়তো ভাবছো আমার অতীতের সব স্মৃতি মনে পরলে আমি চলে যাবো, তাই না?
তুমি শুধু শুধু ভাবছো আমি কখনোই আমার এই পাগলটাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না বুঝলে?
আয়মান অরুণিমার কথা শুনে আস্বস্ত হলো কি না কে জানে? আয়মান, অরুণিমার হাত ধরে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরলো। বেশ জোরে চেপে ধরেছে অরুণিমাকে, যেন একটু ছেড়ে দিলেই কেউ এসে নিয়ে যাবে ওর প্রানপ্রিয়
বৌটাকে।
#চলবে