পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৮,৯

পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৮,৯
Tithee sarker
পর্ব-৮

সকালবেলা পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে শক্তির। ঘুম থেকে উঠে বিছানায় কতক্ষন চুপ করে বসে থাকে সে।ভাবতে থাকে কাল রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কি সত্যি!

আজ শুক্রবার হওয়ায় নিচে সবার কথা শোনা যাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলা দশটা বাজে।এতো বেলা হয়ে গেলো অথচ কেউ তাকে ডাকলো না একবার! ভাবতে থাকে শক্তি।

ইশ,,আজকে সে নিচে কিভাবে যাবে! বাবু, মামনী তাদের সামনে কিভাবে যাবে!সবাই জানে সবকিছু। ও তো লজ্জায় কারো সামনেই যেতে পারবে না।

বেশিক্ষণ তার বসে থাকা হলো না।নিচ থেকে মামনীর ডাক,
“কিরে শক্তি। আজ কি আর উঠবিনা।খেয়ে যা তাড়াতাড়ি লুচি তরকারি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!”

এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরও মামনী কতটা স্বাভাবিক। ওকে আসলেই অনেক ভালোবাসে মামনী।তাই এতো সহজে সবটা মেনে নিতে পারছে।এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নামে শক্তি।

না,কেউ তার দিকে আঁড়চোখেও তাকচ্ছে না।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত।মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেও খেতে বসে পরে।রক্তিমও নেই।নিশ্চয়ই বাইরে তার শখের বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

“রিদ্ধি, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!”

পীযূষ বাবুর এই কথায় সবাই ওনার দিকে নজর দেয়।

“বলো বাবা। ”

“তোমার কি কোনো পছন্দ আছে?মানে বিয়ের ব্যাপারে তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?”

ওনার এ হেনো কথা শুনে তো রিদ্ধির গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম।কাশতে কাশতে জলের গ্লাসের দিকে হাত বাড়ায়। শক্তি ওকে জল এগিয়ে দেয়।

সবাই মুটামুটি হা করে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।এরই মাঝে জয়ার ঝাঁঝালো আওয়াজ, “এটা কোন ধরনের কথা? এভাবে মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হয়?”

“মেয়ের জন্য বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে তো মেয়েকে জিজ্ঞেস করবো না।নাকি জিজ্ঞেস না করেই পাত্রপক্ষকে বলবো দেখতে আসতে?”

পীযূষ বাবুরও ঝাঁঝালো উত্তর।

এবার জয়া মিনমিন করে বলে,
“না,,,তাই বলে এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করবে তুমি! আস্তে ধীরেও তো করা যেতো।”

এরই মাঝে ড্রইংরুমে রক্তিমের প্রবেশ।বাইরে কল থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসেছে সে।শক্তি আঁড়চোখে দেখছে ওকে।সরাসরি তাকানোর সাহস নেই।বাইরে রোদ থেকে আসায় রক্তিমের ফর্সা মুখটা লালবর্ণ ধারণ করেছে।শক্তি ওকে দেখে আরেক দফায় ক্রাশ খেলো।বলতে গেলে রক্তিম শক্তির ছোটবেলার ক্রাশ।কিন্তু রক্তিম যা ব্যবহার করতো ওর সাথে!সেই দুঃখে শক্তি ওকে নিজের ক্রাশ লিষ্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে বছর কয়েক আগেই।কিন্তু কালকের ঘটনা মনে হলেই এখনো শক্তির ভয়ে আত্মা কাঁপা কাপি শুরু হয়ে যায়।

নাহ্,রক্তিমের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না।কখন কি বলে বসেন আবার।বেশরম ইনসান।

“কি হলো,আমায় দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলে কেনো?”

পীযুষ বাবু হালকা কেশে,গলা পরিস্কার করে বললেন,

“রিদ্ধির জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।ছেলে গভর্মেন্ট এমপ্লয়ি। সম্ভ্রান্ত পরিবার। তো এখন বলো রিদ্ধি তোমার কি কোনো আপত্তি আছে।যদি আপত্তি থাকে তো এখনই বলো,আর না থাকলে সামনের সপ্তাহে তারা তোমায় দেখতে আসতে চান।” (রিদ্ধির দিকে তাকিয়ে)

“এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?সবে তো মাস্টার্সে ভর্তি হলাম আমরা।ফাইনাল এক্সামের পর বিয়ে দিলে কি সমস্যা? ”

রক্তিমের কাঠকাঠ আওয়াজ।

“আমি তোমায় জিজ্ঞেস করিনি রক্তিম, তুমি বলো রিদ্ধি, তোমার কি কোনো আপত্তি আছে? ”

বসার ঘরে সবাই চুপচাপ। কি বলবে রিদ্ধি এবার। সবার ভাবনার ঘোর কাটিয়ে রিদ্ধি বলে,

“তুমি যা বলবে তাই হবে বাবা। আমার কোনো পছন্দ নেই।”

সবাই যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

“বেশ। ” এই বলে পীযূষ বাবু জয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”উপরে এসো,ওনারা সামনের সপ্তাহে রিদ্ধিকে দেখতে আসতে চান।ওনাদের সম্পর্কে তোমারও সব জানা প্রয়োজন।আর রিদ্ধি, তোমার টেবিলের উপর ছেলের সিভি রাখা আছে। টেনশন করো না,ওনারা শুধু দেখতে আসছে।দেখলেই বিয়ে হয়ে যায় না।

এই বলে তিনি উপরে চলে গেলেন আর পেছন পেছন জয়াও।

এদিকে শক্তি তো অবাক। বাড়িতে এতো বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে কেনো?রিদ্ধির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভয় বা শঙ্কা কোনো কিছুরই ছাপ নেই তার মুখে।বরং মুখটা যেনো কেমন খুশি খুশি লাগছে।ব্যাপার কি!

শক্তি রিদ্ধিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রক্তিমের আওয়াজ,
“দ্রুত রেডি হয়ে আয়।তোর নাকি ১২ টা থেকে কোচিং? পিয়া কল করেছিল আমায়।”

“কোচিং? আমার?আজ আমার কোনো ক্লাস নাই। আর পিয়াই বা আপনার কাছে ফোন করবে কেনো,ও ফোন করলে রিদ্ধি দির কাছে করবে।”

“বেশি বকবক না করে আয় তাড়াতাড়ি। ”
এই বলে রক্তিম নিজের রুমের দিকে এগোয়।

শক্তি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
“আমি যাবো না ওনার সাথে।কালকে কি কান্ডটাই হলো।প্লিজ রিদ্ধি দি।বাবু জানলে তো শেষ! ”

রিদ্ধি বললো,”যা,কিছু হবে না।ওই অজুহাত টা বাবার জন্য ছিলো। ”

এই বলে সেও মুচকি হেসে উপরে চলে গেলো।
শক্তির আর কি করা।পরেছে যবনের হাতে,খানা খেতে হবে সাথে।যেতে তো হবেই।
কিন্তু কালকে রক্তিমের করা কান্ড গুলো ভেবেই তার গায়ে কাটা দিচ্ছে।
রক্তিমের ওকে জড়িয়ে নেয়া তারপর হিসহিসিয়ে বলা যে ভালোবাসি। এসব এখনও তার হজম করতে সময় লাগবে।

পাঁচ মিনিটের মাঝে শক্তি রেডি হয়ে নিচে আসে।এসে দেখে রক্তিম বাইরে দাঁড়িয়ে।
রক্তিমের সাথে পা মিলিয়ে হাটতে থাকে শক্তি। রক্তিম তো ইয়া লম্বা। তার সাথে শক্তিকে দেখা যাচ্ছে ইট্টু।

আস্তে আস্তে বাইক চলতে শুরু করে।তবে বড়ো রাস্তায় গিয়ে গতি বাড়ে।গ্রামের রাস্তা হওয়াও আশপাশ ফাঁকা। শক্তির ইচ্ছে করছে হাত দুটো দু’দিকে মেলে দিতে।কিন্তু তার হাত দুটো দিয়ে রক্তিমকে জড়িয়ে রাখতে হয়েছে।আর হাত সরালেই মাইর।এটা খুব ভালো ভাবে জানে শক্তি।

বাইক এসে থামে তাদের উপজেলা বাজারে।মফস্বল এলাকা হওয়ায়,শুক্রবারেও অনেক দোকান পাট খোলা।রক্তিম ওকে নিয়ে যাচ্ছে একটা মোবাইল শপের দিকে।এতোক্ষণ যাবত রক্তিম কোনো কথাই বলেনি।এবার ও মুখ খোলে।দোকানের ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“লিমন,ভালো ফোন বের করো তো।”

“আরে,রক্তিম ভাইয়া,কেমন আছেন?ফোন কি আপনার জন্য?”

“এইতো আছি ভালোই।আমার জন্য না ওর জন্য। ”

“কেমন আছেন শক্তি ভা..মানে আপু?কোন মডেলের ফোন নিবেন?”

শক্তি এবার ছেলেটিকে চিনতে পারলো।এই ছেলেটাকে প্রায়ই দেখে কলেজের সামনে বসে থাকতে।আর তাকে দেখলেই দাঁত বের করে একটা ক্লোজআপ হাসি মারে।ও,,,তার মানে এটা হচ্ছে রক্তিম বাবুর চেলা।বুঝতে পারে শক্তি।
আর এইদিকে শক্তির পছন্দ অপছন্দের তোয়াক্কা না করেই ফোন,কাভার সব কিনে প্যাকিং করাতে থাকে রক্তিম। তো তাকে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো!ভাবে শক্তি। ইতিমধ্যে দোকানে আরও কাস্টমার আসায় ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের পাশে দাঁড় করায় রক্তিম।এদিকে শক্তি আঁড়চোখে দেখে যাচ্ছে রক্তিমকে।ভেতরে এক অজানা অনুভূতি।

দোকানের বাইরে এসে দাঁড়াতে শক্তির চোখ গেলো একটা ফুচকার স্টলের দিকে।যদিও খুব খেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কাকে বলবে সাথের এই রস কষ হীন গেদাল পাতার রসকে।আর কাজ নাই খেয়ে।

শক্তিকে অবাক করে দিয়ে বললো রক্তিম,

“ফুচকা খাবি?”

এই কথা শুনে শক্তি যেনো আকাশ থেকে পড়ে। রক্তিম বলছে ফুচকা খাওয়ার জন্য। যে কিনা এসব স্ট্রিট ফুড দেখতেই পারে না।শক্তি বার কয়েক চোখ পিটপিট করে,নিজেকে আস্তে করে একটা চিমটি কেটে দেখে।
নাহ্ ব্যাথা তো লাগছেই। তার মানে সে স্বপ্ন দেখছে না।মুখে বলে,

“উঁহু, খাবোনা।”

তবুও রাস্তা পাড় করে রক্তিম নিয়ে আসে ওকে ফুচকার স্টলের সামনে।ফুচকাওয়ালাকে বলে,

“মামা,এক প্লেট ফুচকা! ঝাল, টক বেশি।ডিম ছাড়া। ”

শক্তি তো অবাক। কেননা ঝাল, টক মেয়েরা বেশি খাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শক্তি যে ডিম ছাড়া ফুচকা খায় এটা ও কিভাবে জানলো??How??

শক্তি স্টলের পাশে রাখা একটি চেয়ারে বসে।আর ভাবতে থাকে রক্তিমের এতো ভালো ব্যবহারের কারণ কি!কখন যে রক্তিমের কি মনে হয় তা ওই ভালো জানে।।।।

একটু পর রক্তিম ফুচকার প্লেট এগিয়ে দেয় ওর দিকে।
ইস্তত করে সে নিয়ে নেয়।

দুটো ফুচকা মুখে দিতেই ঝালের চোটে শক্তির ঠোঁট লাল হয়ে যায়।কান দিয়ে যেনো গরম ভাপ বের হচ্ছে। তবুও সে খাওয়া বন্ধ করে না।

হঠাৎ লক্ষ করে তার সামনে বসে থাকা রক্তিমের নজর তার ঠোঁটের দিকে। এই দেখে সে টুপ করে খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

রক্তিম হালকা হেসে শক্তির মুখের সামনে পরে থাকা কিছু চুল কানের পেছনে গুজে দিয়ে বলে,

“হোয়াই সো প্রিটি?”

“কি সুন্দর হাসেন উনি!”মনে মনে ভাবে শক্তি।

কিন্তু মুখে মিনমিন করে বলে,

” বাড়ির সবার জন্য নিয়ে যাই?”

রক্তিমও আর কথা না বারিয়ে পার্সেল নিয়ে বেরিয়ে আসে।

বাইক চলেছে আবারও সেই একই গন্তব্যে। শক্তির মনে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।অন্য অনুভূতি। কি তার নাম?ভালোবাসা?????

————————————–

ড্রইংরুমে ঢুকতেই কেউ শক্তিকে পেছন থেকে টাইটলি জড়িয়ে ধরে। প্রথমে তো ওর ভয়েই আত্মা নেই।মেয়েটা এতো ভীতু।
পরে পেছনের মানুষটাকে দেখে আরো জোরে হাগ করে বলে,
“মুন্নি!!!বাদনাম!!!”

“ওহো,মেরি শাক্তি কাপুর!এই ভরদুপুরে কোথা থেকে আসা হচ্ছে? ”

“একটু বাইরে গেছিলাম, তুই কখন এলি?”

“এইতো মাত্রই।কিন্তু শুধু আমি নই।মা,দাদা সবাই এসেছে। ”

মুন্নি হলো রিদ্ধি, রক্তিমের মামাতো বোন। শক্তির সাথে ওর খুব ভালো যায়।

“কান্ড কি হয়েছে জানিস?”

“হ্যা,শুনলাম। চল তো রিদ্ধি দির ঘরে গিয়ে হামলা দেই।”

“লেটস গো বেবি।”

এই বলে হাসতে হাসতে দু’জন রিদ্ধির রুমের দিকে যায়।

(চলবে)

#পূর্ণিমা সন্ধ্যায়
পর্ব-৯

“কি ব্যাপার আমাদের আড়ালে এখানে কি চলে?”

মুন্নির এই কথায় চকিতে পেছন ফেরে রিদ্ধি। ফোনে কারো সাথে ধীর গলায় আলাপে ব্যস্ত ছিলো সে। ওদের দরজার সামনে দেখে কলটা কেটে হাসি মুখ করে বলে,

“ক,,কী আবার চ,চলবে?আয় ভেতরে আয়।”

“সেতো তুমি না চাইলেও আমরা আসবো।”

এই বলে বিছানায় উঠে বসে শক্তি আর মুন্নি।রিদ্ধি ওদের মুখের দিকে আঁড়চোখে তাকায়।দুজনের মুখেই রহস্যময় হাসি।

“এবার একটু ঝেড়ে কাশো তো,দিভাই।আর বলো ফোনে কার সাথে কথা বলছিলে?”

“কার সাথে আবার?এই তো ফে,,ফ্রেন্ড।”

“ওহ,ফ্রেন্ড,তা কি নাম ফ্রেন্ডের বলতো দেখি শক্তি। ”

মোবাইলটা ছো মেরে রিদ্ধির হাত থেকে নিয়ে বলে শক্তি,

“এতো দেখি অর্ক।তা অর্কটা কে গো রিদ্ধি দি? হুম,হুম!”

“নামটা চেনা চেনা লাগছে রে শক্তি। কোথায় যেনো শুনেছি। ”

“কোন নাম গো,মুন্নি দিদি?”ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে রুশা।

” আচ্ছা, বনু বলতো অর্ক নামটা কার?”

“উম,,মনে পড়েছে। দিভাই এর জন্য যে ছেলে দেখা হচ্ছে তার নাম অর্ক।”

এবার শক্তি, মুন্নি দুজনেই চোখ পাকিয়ে তাকায় রিদ্ধির দিকে।

শক্তি এক ভ্রূ উঁচু করে জিজ্ঞেস করে,”কী ব্যাপার?এই বেটার নাম্বার তোমার মোবাইলে কি করে?”

“আসলে বাবা বললেন কথা বলে একটু বোঝাপড়া বাড়াতে, তাই আরকি।”

“চাপা মারার আর জায়গা পাওনা!বাবু তোমায় সিভি দিলো এগারোটায়,এখন বাজে একটা।আর এরই মধ্যে তোমরা বোঝাপড়া করছো।বা বা বা,বাহ্।”

“কাহিনী কি ঝেড়ে বলো তো?” (মুন্নি)

“জানিস মুন্নি, আমার তো ডাল ম্যা কুছ কালা লাগতা হ্যা।বাবু যখন বললো যে ওকে দেখতে আসবে,পারছিলো না শুধু খুশির ঠেলায় লুঙ্গি ডান্স দিতে।”

“এমন কোনো ব্যাপার না তো।”
প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে রিদ্ধি।

“রুশা একটু বাইরে যা তো,ওর ক্লাস নেই আমরা।”

“বাহ্ রে আমিও দেখবো তোমাদের ক্লাস। ” ইনোসেন্ট মুখ করে বলে রুশা।

কপালে হাত দিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে বলে শক্তি,

“নিচে যা বনু,দেখ গিয়া ফুচকা রেখে আসছি তোর জন্য।”

এই শুনেই রুশা এক দৌড়।

“এবার বলো।”

“আগে প্রমিস কর কাউকে জানাবি না।”

“আচ্ছা, জানাবো না।এবার বলো।”

“আসলে হয়েছে কি,আমি আর অর্ক আগে থেকেই পরিচিত। ”

মিনমিন স্বরে বলে রিদ্ধি

“শুধুই পরিচিত নাকি এর বাইরে অন্য কিছু? হুম,হুম?”
জিজ্ঞেস করে মুন্নি।

“ওই আরকি দু’বছরের রিলেশন। ” একদমে বলে রিদ্ধি।

রিদ্ধির কথা শুনে তো ওদের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়।

শক্তি মুখ ফুলিয়ে বলে,”সিরিয়াসলি দি?তোমার দু’বছরের রিলেশন আর আমিই কিনা জানলাম না!”

“এহ,,পিচ্চি তুই পিচ্চির মতো থাক।তোকে কে জানাবে।”

“ডোন্ট কল আস পিচ্চি। আমরা এখন কলেজে পড়ি।” বেশ ভাব নিয়ে বলে শক্তি।

“হ্যা,তাই তো,তোমায় এখন আর পিচ্চি বলবো কেনো।ভালোই তো আমার ভাইয়ের সাথে,,,,,, ই!”

শক্তির চোখ পাকানোতে রিদ্ধি জিহ্বায় কামোড় দেয়।

“এই,এই কি বলছিলে দিভাই!” বলে মুন্নি।

“কিছু না কিছু না।এই শক্তি, ওই প্যাকেটে কিরে?”

“ফোন।”

“ওয়াও,শক্তি তোরও ফোন হয়ে গেলো।এখন তো দুইটা মিলে সারাদিন গল্প করবো।” (মুন্নি)

——————————-

বিকেলে সবাই মিলে ছাঁদে গেলো।গিয়েই দেখে রক্তিম ছাঁদে দাড়িয়ে। হাতে হয়তো সিগারেট। ওদের দেখে সেটা নিচে ফেলে দেয়।
আর এদিকে শক্তির মিনমিনে আওয়াজ,

“আমি নিচে যাই,প্লিজ। ”

রক্তিমের কাঠকাঠ আওয়াজ, “আমি কি ওকে চিমটি কেটেছি,জিজ্ঞেস কর তো মুন্নি।”

রক্তিমের কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে দেয়।

শীতের বিকেলের সৌন্দর্যটা ছাদ থেকে ভালো বোঝা যাচ্ছে। একটু পর পর উত্তুরে হিম বাতাস এসে গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। শক্তি গায়ের চাদরটা আরো ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।
ছাঁদ থেকে দূরের ফসলের মাঠ দেখা যায়। জানুয়ারি মাস হওয়ায় মাঠের সব ফসল কেটে নেয়া হয়েছে।তাই ফসলের মাঠ হয়ে আছে শূন্য। কিন্তু তাই পাশে হলুদ আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্ষের ক্ষেত।
আসলে প্রকৃতির এই মেলবন্ধনটাই সুন্দর। প্রকৃতি কখনো একেবারে রিক্ত হয় না।একটার পরিপূরক হিসেবে অন্যটাকে ঠিক দিয়ে দেয়।
ওদের সারা ছাঁদ জুড়ে বিভিন্ন ফুলের গাছ। যেগুলোর মাঝে গোলাপই বেশি।গাছ গুলো অবশ্য রক্তিমের লাগানো তবে ওর অনুপস্থিতিতে শক্তিকেই এগুলোর দেখাশোনা করতে হয়।

শক্তির পাশে দাড়িয়ে মুন্নি,রিদ্ধি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। এই যেমন রিদ্ধিকে দেখতে আসার দিন ওরা কি পরবে,কিভাবে সামনে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
শক্তি বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ চোখ ঘুরিয়ে যেই না রক্তিমের দিকে তাকিয়েছে,দেখে যে রক্তিমও সরাসরি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। শক্তি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।রক্তিমের এই চাওনিটা ইদানীং সে একদম নিতে পারে না।

এইদিকে মুন্নি ছাঁদে রীতিমতো একটা বোম ফাটায়।হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“শক্তি রে,তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি।আমার এক ফ্রেন্ড তোরে এতো পছন্দ করেছে।তোর ছবি দেখে তো রীতিমতো ক্রাশড।বলছে তোকে নাকি সামনাসামনি প্রোপজ করবে।আর তুই এক্সেপ্ট না করলে নাকি ও নিজের জীবন দিয়ে দেবে।
বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা মুন্নির।আর এদিকে রিদ্ধি বারবার ওকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে কিছু না বলার জন্য।
শক্তির তো আত্মায় কাঁপন ধরে গেছে।কারণ মুন্নির সব কথাই স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে রক্তিম। শক্তি শুধু নিজের হাত মোচড়ামোচড়ি করছে।আর রিদ্ধির দিকে অসহায় চোখে তাকাচ্ছে। যার মানে হলো” আজকে আমি শেষ”।

এদিকে রক্তিমের শীতল আওয়াজ, “ওর ছবি তোর ফ্রেন্ড দেখলো কিভাবে?”

“আসলে দাভাই,আমরা সবাই তো বড়দির বিয়েতে শাড়ি পড়ে ছবি তুলেছিলাম। ছবিগুলো সব আমার ফোনেই ছিলো।সেখান থেকেই বন্ধুদের দেখানোর সময় দেখেছে।”
মিনমিনিয়ে বলে মুন্নি। সেও বুঝতে পেরেছে যে সে ভুল মানুষের সামনে ভুল কথা বলে ফেলেছে।

শক্তির অবস্থা তো “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি” টাইপ।একটা বোম ফাটিয়ে শান্তি হচ্ছে না মুন্নির যে আরেকটা ফাটিয়ে দিলো।

কিছু দিন আগেই রক্তিমের আরেক মামাতো বোনের বিয়ে গেছে।রক্তিমের ভার্সিটিতে প্র্যাকটিকেল থাকায় সে যেতে পারেনি।কিন্তু তার কড়া হুকুম ছিলো যে,শক্তি শাড়ি পরতে পারবেনা।কিন্তু সবার চাপে পরে তাকে শাড়ি পরতেই হয়।তারও যে ইচ্ছে করছিলোনা তেমন না।তাই পরে ফেলেছিলো।যেটা রক্তিম জানতো না।

মুন্নির কথা শুনে রক্তিম কটমট করে তাকায় শক্তির দিকে। পরে দুমদাম পা ফেলে নিচে নেমে যায়।

“শক্তি তো আজ গ্যায়ি!” বলে রিদ্ধি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here