পরীর দেশের ডেবিল,পর্ব-১
শাহরিয়ার আবিদ
💎”আমার ভাবতেও অবাক লাগছে তোমরা একটা মেয়ের জন্য এতগুলো ছেলে মারামারি করতেছ তোমাদের বুদ্ধি শুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে,লজ্জা করে না তোমাদের? “-প্রধান শিক্ষক বলতেছিলেন কথা গুলো।
প্রধান শিক্ষকের রুমের মধ্যে পাঁচজন ছেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের থেকে হাত পাঁচেক দূরে আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সে ও ঐ পাঁচটা ছেলের মত মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
যে ছেলেটা একলা দাঁড়িয়ে ছিল তাকে উদ্দেশ্য করে স্যার বলল – এই যে তুমি, তোমাকে তো আমি অনেক ভালো ছেলে মনে করতাম৷ আর তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারো না। আর এখন দেখছি নেতা হয়ে গেছ। পাঁচটা ছেলেকে একলা মারলে। তুমি মারলে কিভাবে? তোমাকে তো দেখে মনে হয় না যে তুমি মারামারি করতে পারো।(স্যার)
-এবারের মত ছেড়ে দিলাম তোমাদের সামনে বার এধরনের কিছু হলে কলেজ থেকে তোমাদের বহিষ্কার করব। কথাটা মনে রেখো। যাও এখন নিজেদের ক্লাসে৷ ( সবাইকে উদ্দেশ্য করে স্যার বলল)
সবাই যে যার মত ক্লাসে চলে গেল। আর একটা ক্লাসের পর কলেজ ছুটি হয়ে যাবে। ক্লাসে কোনো রকম মন বসাতে পারল না একা থাকা ছেলেটা। যাই হোক ক্লাসটা কোনো রকম শেষ হল। যথারীতি কলেজ ছুটি হয়ে গেল। ছেলেটাও চলে যাচ্ছে তবে যেতে যেতে কি যেন ভাবছিল। সে একমনে হাঁটছিল আর কি যেন ভাবতেছিল। তার ভাবনার ইতি ঘটে তার বন্দু সাইমনের ডাকে,,,,
– হেই আবিদ। ( সাইমন)
পেছনে ফিরে থাকাল তার বন্ধু সাইমন এদিকেই আসছে,,
– আজকে কি হল তোর, গ্রিফের দলটাকে এভাবে মারলি কেন? (সাইমন)
-তো কি করব বল? রোজ রোজ তাদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। ওরা সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। কলেজে চুপচাপ থাকি, কারো সাথে ঝগড়া করি না বলে এটা ভেবেছে যে তারা যাই করবে তা সহ্য করে যাবো। ওদের দলটার যন্ত্রণায় এক্কেবারে অতিষ্ট হয়ে গেছি৷ তাই আজ বেটা দের উচিত শিক্ষা দিয়েছি। এই জন্মে রাফার দিকে চোখ তুলে থাকাবে না। (আবিদ)
-হুম তা যা বলেছিস। আমিও এক্কেবারে হাঁপিয়ে ওঠে ছিলাম ওদের যন্ত্রণায়। তবে আমার মনে হয় তোর এভাবে মারাটা ঠিক হয়নি। মারটা বেশি হয়ে গেছে। (সাইমন)
– বেশি হলে হোক। এটা ওদের প্রাপ্য ছিল। (আবিদ)
-আচ্ছা রাফা কোথায় দেখছিনা যে। ওকে কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় ও তো দেখলাম না। এখনো তোর সাথেও নেই৷ আমার গণিতের নোট খাতাটা ওর কাছে। এখন কি করি? কোনো বিপদে পড়ল নাতো? ( সাইমন)
– অসুবিধে নেই৷ কোথাও গেছে হয়ত৷ কিছু হলেও সামলে নিতে পারবে। ভুলে যাস না আমরা স্ট্রেন্জ। (আবিদ)
– হুম চল বাড়ি যেতে হবে দেরি হলে বাসার সবাই চিন্তা করবে। (সাইমন)
– হ্যা চল। কিন্তু রাফা,,,,, (আবিদ)
– ও চলে আসবে। (সাইমন)
আবিদ আর কিছু বলেনি চুপচাপ হাঁটা শুরু করল৷
(আবিদ, সাইমন আর রাফা তিনজন ছোটবেলা থেকে বন্ধু। তাদের তিনজনের বাবা ব্যবসায়িক পার্টনার। তাই সে সুত্রে তারা ছোট থেকেই বন্ধু। বলা চলে তারা সবাই এক পরিবারের। কিন্তু তারা তিনজন স্বাভাবিক মানুষের মত নই৷ এদের তিনজনের মধ্যে অদ্ভুদ ধরনের শক্তি রয়েছে। ওদের তিনজনের কাছে অদ্ভুদ ক্ষমতা রয়েছে।
তাদের এই অদ্ভুদ ক্ষমতার কারণ তাদের বাবারা৷ অনেক আগের কথা তাদের বাবাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ তো সেদিন তাদের সবাইকে কোলে নিয়ে তাদের বাবারা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। ঠিক তখনি তাদের থেকে কিছুটা দূরে গোলাকার চাকতির মত কি একটা যেন উড়ে এসে পরে। চাকতিটা জ্বলজ্বল করছিল। সেটা দেখে তারা চাকতিটার কাছে যায়। চাকতিটা নাকি মানুষের ছোঁয়া পাওয়ার পর আলোকরশ্মি ছড়ায় সে রশ্মি গুলো আবিদ, সাইমন আর রাফার শরীরে ঢোকে পড়ে৷ তারপর তাদের তিনজনের তিনদিন পর্যন্ত কোনো জ্ঞান ছিলনা। তিনদিন পর আবিদ, রাফা আর সাইমনের জ্ঞান ফিরে৷ এর কয়েকবছর পর থেকে তাদের মধ্যে তাদের অদ্ভূদ ক্ষমতাগুলো একটু একটু করে প্রকাশ পেতে থাকে। এই কথাগুলো তাদের আশেপাশের লোকজন জানতে পারে। তারা এদের নিয়ে মন্তব্য করতে থাকে। তার জন্য বাবা মারা স্বিদ্ধান্ত নেয়। সেখান থেকে তারা অন্য কোথাও চলে যাবে। তাই তারা নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন এ চলে আসে৷ সেখানে আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করে৷ আবিদরা কলেজে পড়ে৷ তারা তাদের এই অদ্ভুদ ক্ষমতার কতা জানে। তাই তারা তেমন একটা কারো সাথে মিশে না। সব সময় নিজেদের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে।)
আবিদ আর সাইমন হাঁটছে৷ আজকে যে আবিদ মারামারি করেছে একথা বাসায় জানানো যাবে না। জানালে তাদের মা বাবারা রাগ করবে। কিন্তু এটা তার করার ও কিছু ছিল না৷ গ্রিফের দলের ছেলেরা তাদের তিনজনকে সব সময় ডিস্টার্ব করে। তাই আজ বাধ্য হয়ে আবিদ এটা করল। দুজনে প্রায় বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে৷ আর ৫ মিনিট পর তাদের বাসায় পৌঁছে যাবে। তখন পেছন থেকে রাফার ডাক
– এই আবিদ, সাইমন দাঁড়া। (রাফা)
– কিরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি?(আবিদ পেছনে ফিরে কথাটা বলল)
-কোথায় ছিলি বল?(আবিদের সাথে তাল মিলিয়ে বলল সাইমন)
-গ্রিফের পেছন পেছন গিয়েছিলাম। শয়তানটা আজকে মার খাওয়ার পর শিক্ষা হয়নি। ও আবার কাল আমাদের সাথে ভেজাল করার প্ল্যান করছিল। আবিদ তোকে মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদের এসব কথা শোনার জন্য ওদের পেছন পেছন গিয়েছিলাম। আসল কথা শুনে ফেলেছি তাই আর দেরি না করে চলে এলাম। মনে করেছি তোরা বাসায় পৌঁছে গেছিস? (রাফা)
– ভালোই করেছিস শুনে। কিছু একটা করতে হবে৷ ওদের সাথে ভেজালে জড়ানো যাবে না৷ (সাইমন চিন্তিত হয়ে বলল)
-একটা কাজ করতে পারি আমরা কিছু দিনের জন্য বেড়াতে গেলে কেমন হয়। (আবিদ)
-আমি রাজি।(সাইমন)
-আমিও এটাই ভাবছিলাম।(রাফা)
-আচ্ছা চল বাসায় অনেক দেরি হয়ে গেছে। (সাইমন)
– শোন বাসায় এগুলো নিয়ে কোনো কথা হবে না। বলবি আমরা কিছুদিনের জন্য বাইরে ঘুরতে যাবো। (আবিদ)
-হ্যা। (সাইমন, রাফা)
তারপর তিনজনেই আবার তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল৷
তিনজনই তাদের বাড়িতে পৌঁছে গেল৷ তারা তিনজনের বাড়ি পাশা পাশি।
আবিদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেল। খেয়ে তার রুমে চলে এল৷ এখন সে ভাবছে তার বাবা মাকে কি বলে রাজি করাবে? আর কোথায় বা যাবে বলবে? সে এমনিতেও দূরে কোথাও বেড়াতে গিয়েছে তা অনেকদিন হয়। সে ভেবে পাচ্ছে না কোথায় বেড়াতে যাবে। কারণ তাকে তার মাবাবা সহজে কোথাও যেতে দেয় না। (যেতে না দেয়ার কারণ ইতিমধ্যেই আপনারাই জেনেছেন) তাই তার এমন একটা জায়গার কথা বলতে হবে যাতে তারা তিনজন যেতে পারে আর তাদের মা বাবা যেন অমত না করে।
কিছুক্ষণ পর আবিদের মনে পড়ল৷ তার ফুফুর কথা। তার ফুফু তো অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে থাকে৷ সেখানে সে কখনো যায়নি। তবে তার ছোট বোন গিয়েছিল। তার থেকে শুনেছে তার ফুফুর বাড়িটা নাকি অনেক সুন্দর আর বড়। তার ফুফুর বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্র রয়েছে আবার তার বিপরীত দিকে নাকি আরো কিছু জঙ্গল রয়েছে। আবিদ মনে মনে ভাবল যদি তারা সে ফুফুর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলে মন্দ হয় না৷ কিন্তু এখন বড় সমস্যা হলো তাদের মা বাবাকে রাজি করাতে হবে। এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করল মা। কোনো রকমে মানিয়ে নিবে। আজকে মারামারি করে ক্লান্ত লাগছে আবিদের তাই ঘুমিয়ে পড়ল। দুপুরের সময়টায় সে সাধারণত গুমোয় না।
আবিদের ঘুম ভাঙে সাইমনের ডাকে। আবিদ ঘুম থেকে উঠেই দেখে সাইমন তাকে ডাকতেছে৷
-কিরে উঠ আর কতক্ষন ঘুমাবি?(সাইমন)
-আরে ঘুমালাম কোথায় তুই এসেই তো ঘুমটা ভেঙে দিলি৷ তুই কোনো কাজের না৷ তোর ভাঙা, নষ্ট করা। আহ কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম দিলিতো শেষ করে৷ (আবিদ)
-কি স্বপ্ন কাকে নিয়ে? (সাইমন)
– তোর ভাবিকে নিয়ে মানে আমার বউ কি নিয়ে। (আবিদ)
– ভাবিটা কে রে বল না। দেখতে কেমন ? (সাইমন)
-পুরাই পরী বুঝলী সাদা ড্রেস পড়া। টানা টানা চোখ, আর কোপা বাঁধা চুল। বাদ দে ওসব তোকে বলে লাভ নেই৷ তুই এখনো ছোট বুঝবি না৷ (আবিদ)
-কি বললি? (সাইমন)
-আরে কিছু না। তোর বাসায় বলেছিস ঘুরতে যাওয়ার কথা। আর রাফার কি খবর?
-আমি বলেছি, রাফাও বলেছে। আমাদের বাসা থেকে রাজি আছে। তুই বলেছিস? (সাইমন)
-এখনো না। আর হ্যা, আমি ভাবছি সিডনিতে যাবো। আমার ফুফির ওখানে। (আবিদ)
-সত্যি আমার অনেক আগে থেকে ইচ্ছা ছিল সিড়নিতে যাওয়ার। (সাইমন)
আবিদ শোয়া থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নাস্তা করতে চলে যায় সাথে সাইমনও। সেখানে আবিদ মা বাবাকে সিড়নিতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে৷ প্রথমে রাজি না হলে পরে ছেলের জোড়াজুড়ি তে রাজি হয়ে যায়৷ আবিদরা জানাই তাদের পাসপোর্ট সব ঠিকঠাক আছে৷ আর আবিদের বাবা জানাই তার এক বন্ধু অস্ট্রেলিয়া এমবাসিতে কাজ করে। সে টিকেট জোগাড় করে রাখবে৷ আর বাকি যা কাজ সে ঠিকটাক করে দেবে। সব কাজ করে ফেলল। তাদের ফ্লাইট আগামীকাল রাত ৯.০০ টাই। আবিদের বাবা ব্যবসায়িক কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় আসা যাওয়া তাই তাদের তেমন কোনো অসুবিধে হচ্ছে না।
খবরটা রাফাকে জানানো হল। তারা তিনজন সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে তৈরি হয়ে থাকল। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ তারা পাড়ি দিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। তারা সিডনি বিমান বন্দরে পৌঁছাতে রাত অনেক হয়ে গেছে তারা যখন আবিদের ফুফির বাসায় পৌঁছালো তখন প্রায় সকালের হয়ে এসেছে৷ আর যখন তারা ফুফির বাসায় যায় তখন তাদের নিজেদের রুম দেখিয়ে দেয় জ্যাক৷ (জ্যাক হলো ফুফির কর্মচারী)৷ আবিদ তার রুমটা ভালো করে দেখছিল৷ রুমের জানালার কাছে গিয়ে পর্দাটা সরিয়ে সে পূর্ব আকাশটা দেখছিল আর সূর্য উঠার দৃশ্যটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল৷ আর ঐ দিকটায় ছিল জঙ্গল তার পর কিছুটা নদীর মত। সে সূর্য ওঠার অপেক্ষা করছিল ঠিক তখনি জঙ্গলের মাঝে হঠাৎ একটা জায়গায় আলোকিত হয়ে উঠে। সে আদৌ বুঝতে পারেনি আলোটা কিসের? আর আকস্মিক এমন আলোকিত হওয়ার মানে কি? আলোটা স্বাভাবিক আলোর চেয়ে তেজস্ক্রিয়তা বেশি।
আপনারা কেউ বলতে পারবেন আলোটা কিসের? কেন আলোকিত হল? দেখি আপনারা পারেন কি না?
(এটা এই সিরিজের প্রথম গল্প। প্রথম পর্ব হিসেবে তেমন কোনো রহস্য কিছু দেই নি। আশা করি সামনের পর্বগুলোতে রহস্যে, রোমাঞ্চে ভরপুর থাকবে। )
-চলবে…..