পরীর দেশের ডেবিল,পর্ব-২

পরীর দেশের ডেবিল,পর্ব-২
শাহরিয়ার আবিদ

💎 – সকাল হবে হবে এমন অবস্থা তিন স্ট্রেন্জ আর সাথে আবিদের আন্কেল বড় একটা বাড়ির সামনে এসে থামল তাদের গাড়িটা। আন্কেল (ফুফির জামাই) তাদের সবাই কে নামতে বললেন তিনি জানাল তারা পৌঁছে গেছে৷ সবাই নামল। আন্কেল গিয়ে গার্ডকে তাদের লাগেজ গুলো নিয়ে আসতে বলল। আন্কেল সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকল। স্ট্রেন্জরা দেখে ফুফু মিসেস খান তাদের আসার অপেক্ষা করছিল৷ তাদের দেখে এগিয়ে আসল–

-আরে বাহ সৈন্য বাহিনী এসেচ দেখি। তা আসতে কোনো অসুবিধে হয় নি তো তোমাদের ? (ফুফু)

-না না। কোনো অসুবিধে হয় নি। (স্ট্রেন্জরা উত্তর দিল)
(স্ট্রেন্জ বলতে আবিদ, সাইমন আর রাফাকে বোঝানো হয়েছে)

-ঠিক আছে তাহলে এবার সবাই ফ্রেশ হয়ে আসো। কিছু খাবে। (ফুফি)

ফুফি বলল – জ্যাক তুমি ওদের রুম গুলো দেখিয়ে দাও। জ্যাক ফুফির বাসায় কাজ করে। জ্যাক তিনজনকে রুম দেখিয়ে দিল৷ যে যার রুমে গেল সবাই ফ্রেশ হয়ে, জামা কাপড় বলিয়ে নিচে নামল। সাইমন আর রাফা নেমে গেল। কিন্তু আবিদের একটু আসতে দেরি হচ্ছে। শেষে আবিদ নামল। নিচে নেমে দেখে সবাই টেবিলে বসে তার আসার অপেক্ষা করছে৷
-কিরে এতক্ষণ কি করছিলি? (সাইমন)
-আমি জানি মেয়েদের একটু দেরি হয়। কিন্তু তোর দেরি হল কেন? (রাফা)
-হয়েছে হয়েছে এখন খাওয়া শুরু কথা বলার অনেক সময় পাবে। (আন্কেল মি.খান ফুফুর জামাই)
আর কেউ কিছু বলেনি । সবাই খেতে শুরু করল৷ আবিদ একটা পিজ্জা নিল সাথে একটা কোল্ড ড্রিংকস নিল। আবিদ কি যেন ভাবছে? তার মনোযোগ এখানে নেই। বিষয়টা রাফার নজর এড়ালো না। সাইমন তো গোগ্রাসে গিলছে। তাই তো তাকে সবাই পেটু ডাকে। সে একাই তিনটা বার্গার গোটা একটা পিজ্জা দুটো কোল্ড ড্রিংকস সে সাবাড় করে দিয়েছে৷ এখন আবার আপেল খেতে শুরু করল৷ আর বাকি সবাই ঠিক আছে।

খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল৷ আসলে এত দূর জার্নি করা আসাতে তারা দূর্বল হয়ে পড়েছে তার উপর কাল রাতে ঘুমোয় নি৷ তাই সোজা রুমে গিয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ল।

আবিদের যখন ঘুম ভাঙল তখন প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছে। সে আর কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে তারপর উঠে গেল৷ উঠে গিয়ে গোসল করে, মুখ, হাত দুয়ে নিচে নামল। নিচে কাউকে পেল না৷ হয়ত সাইমন আর রাফা এখনো ঘুমে ৷ তখন তার থেকে সকালের ঘটনায় কথা মনে পড়ল৷ ওরা যখন আসে জ্যাক রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। তখন সে রুমের চারপাশটা ভালো করে দেখছিল। তখন সে তার রুমের জানালার পর্দাটা সরিয়ে বাইরের সকালের সূর্যটা দেখছিল। সে পাশটা ছিল জঙ্গল ধরনের৷ সে সকালের সূর্যটা দেখার জন্য তাকিয়ে ছিল।

তখনি জঙ্গলের মাঝের ঘনদিকটা আলোকিত হয়ে উঠে হঠাৎ। আবিদ বুঝতে পারেনা হঠাৎ এমনধরনের কান্ড দেখে আবিদ ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে যাই। আবিদ এতক্ষণ বিষয়টা নিয়ে ভাবছিল৷ কিন্তু ওখানে কি হল আবিদ এখনো তা বুঝতে পারল না। আসলে ঐখানটায় কি হয়েছিল? আবিদ ভাবছে ওখানে একবার যেতে পারলে ভালো হয়। আবিদের আবার একটা অভ্যাস তার কোনো কিছ জানার ইচ্ছা করলে সে না জেনে থাকতে পারে৷ সে বিষয়টা সম্পর্কে যতক্ষণ পর্যন্ত সে জানবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে শান্তি পাবে না৷

এখন আবিদ একলা নিচে বসে আছে। তার ফুফি ওঠেছে অনেক আগে। এখন শুধু সে আর তার ফুফি জেগে আছে বাকি সবাই ঘুমে। তার ফুফি কিছুক্ষণ পর তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে এল৷ খেতে খেতে

-বাড়ির সবাই কেমন আছে?(ফুফি)

-ভালো আছে। আচ্ছা সাজিদ ভাইয়া কোথায়? ( আবিদ)
(সাজিদ হলো আবিদের ফুফাত ভাই।)
-ও মেলবোর্নে। পরীক্ষা চলতেছে৷ পরীক্ষা শেষ হলো বাড়িতে চলে আসবে৷ (ফুফি)

-ও।
তারপর আর কিছু বলল না কেউ আবিদ খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আসলে তার ফুফির রান্না অনেক মজা৷ পেট পুরে খেল৷

আবিদের মনে সকালে ব্যাপারটা নিয়ে এখনো খুঁত যায়নি। তাই সে ভাবল ওরা সবাই ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ও একবার ওদিকটা থেকে ঘুরে এলে ভালো হত৷ যে বলা সে কাজ, তার ফুফির কাছ থেকে সাজিদের সাইকেলটা নিল৷ বলল কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসবে৷ তার ফুফি তাকে যেতে মানা করেছিল। কিন্তু কে শুনে কার কথা৷

আবিদ সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল৷ কাল যে জায়গাটায় আলোকিত হয়ে গেছিলো সে জায়গাটায় যাচ্ছে আবিদ।

আবিদ অল্প কিছুক্ষণ সাইকেল চালিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করেছে। জঙ্গলটা ফুফির বাসার চেয়ে বেশি দূর নয়। আবিদ এখানে আগে কখনো আসে নি। তবে কাল রাতের আঁধারে যতদূর দেখেছে সে অনুযায়ী এগোতে থাকল। তার এখনো মনে আছে যে জায়গাটা আলোকিত হয়েছিল আকস্মিক ঐ জায়গাটা নদীর কাছেই ছিল।

আবিদ আপাতত সেখানটাই গিয়ে দেখতে চাই৷ ওখানটায় আসলে হয়েছিল কি? আর হটাৎ এমন আলোকিত হওয়ার রহস্যটা জানতে। আবিদ সাইকেল চালিয়ে বেশখানিকটা জঙ্গলের ভিতরে চলে গেছে।

সে এখনো সাইকেল চালাচ্চে। রুম থেকে যতটা কাছে আর সহজ মনে হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তা কিন্তু নই৷ দূর তো বটেই তার উপর এখানের পথটা তেমন একটা সুবিধার নই। এবার তার মনে হচ্ছে সে জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে এসেছে । সাইকেল চালাচ্ছে খুব সাবধানে।

এদিকটায় আর সাইকেল চালানোর মত অবস্থা নেই ঘন জঙ্গল তার পরেও কৌতুহলী মন এত দূর আসার পর থেমে থাকাটা মানতে চাইনা। সে একটা জায়গায় সাইকেল টা রেখে তালা মেরে রেখে হাঁটা শুরু করল। কিছুক্ষণ নিরবে হাঁটল আশেপাশেও লক্ষ্য রাখছে কোন সময় আবার বন্য প্রাণী আক্রমণ করে বসলে৷

আবিদ সামনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এক্কেবারে হাঁটা থামিয়ে দিল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একচুল ও নড়ছে না। কারণ সামনে সাপ এক থেকে দেড় হাত লম্বা৷ সাপদের একটা স্বভাব তাদের যদি কেউ বিরক্ত না করে তাহলে তারা আর কাউকে ছোঁবল মারে না। আবিদ তাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাপটা তার দিকে ফনা তুলে আছে যদি বিপদের সম্ভাবনা দেখে তাহলেই ছোবল মারবে। আবিদের নড়াচড়া বন্ধ এখন নড়াচড়া করলেই বিপদে পড়তে হবে। এভাবে প্রায় মিনিট সাতেক দাঁড়িয়ে ছিল। তারপরেই সাপটা আপনাআপনি চলে গেল। আবিদ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আবিদের আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা আছে নাকি৷

আবিদ চারপাশে যখন দেখতেছিল তখনি তার চোখ যায় একটা গাছের দিকে৷ আবিদের মনে হচ্ছে গাছের পেছনে কেউ একজন লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখতেছিল।

-কে ওখানে? (আবিদ)
– কে ওখানে? দয়া করে সামনে আসুন। (আবিদ আবার গাছের দিকে লক্ষ্য করে বলল)

না এবারো কোনে উত্তর মেলেনি৷ আবিদ ভাবল কেউ নেই৷ সামনে এগোনোর কতা চিন্তা করছিল৷ তখন সে একটা শব্দ শুনতে পাই। শব্দটা কেউ শুকনো ডাল মাড়ালে যেমন আওয়াজ হয় আওয়াজ ঠিক তেমনি৷ আওয়াজটা এসেছে গাছটার পেছন দিক থেকে৷ আবিদ দৌঁড়ে গাছটার কাছে গেল৷ গাছটার কাছে যেতেই দেখতে পেল। ওদিকে একটা মেয়ে দৌঁড়ে চলে যাচ্ছে। আবিদ এবার বুঝতে পারল আওয়াজটা কিসের। আর মেয়েটা তাকে এতক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে আবিদকেই দেখছিল।

মেয়েটা কে আর এ জঙ্গলেই কি করছে? আবিদ কিছুই বুঝতে পারছে না৷ এত ভাবাভাবি বাদ দিয়ে আবিদ ও মেয়েটার পিছনে দৌঁড় দিল৷ মেয়েটার পিছে পিছে দৌঁড়াচ্ছে৷ একটা সময় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একটা গোল আলোকরশ্মির ভেতরে ঢুকে গেল আবিদ আলোকরশ্নিটার দিকে তাকাতেই আবিদের চোখ ধাঁধিয়ে এল। কিছুক্ষণ পর আলোক রশ্মিটা চলে গেলে আবিদ চোখ খুলে তারপর সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

কেউ কি বলতে পারবেন- মেয়েটি কে? আর জঙ্গলে কি করছিল? আবিদ কি ফিরে আসতে পারবে? মেয়েটি কোথায় উধাও হয়ে গেল?

-চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here