পরীর দেশের ডেবিল,পর্ব-১১

পরীর দেশের ডেবিল,পর্ব-১১
শাহরিয়ার আবিদ

– ” দেখল খুঁজে পুরো রাজপ্রাসাদ,
পাবে না তুমি কাউকে,
বাঁচাতে চাও যদি সবাইকে তুমি,
চলে এসো আমার অরণ্যে।”

ইতি- ডেবিল কিং।

আবিদ রাজপ্রাসাদে সবাইকে খুঁজার পর কাউকে না পেয়ে তার রুমে হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় একটা কাগজে এই মেসেজটা পায় আবিদ। আবিদ চিন্তায় পড়ে যায়।

এখন কি করবে সে? নিচে নেমে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেল। গিয়ে বাগানের মধ্যে বৈঠক খানায় গিয়ে বসল৷ তারপর এর চগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সব মনে করতে লাগলো।

প্রথমে সে রাতে এখানে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সে নিজেকে আবিষ্কার করে রুমে কাঠে। তার আগে যখন রাজকুমারীকে শয়তানগুলো আক্রমণ করেছিল তখন সে পুরো ঘর খুঁজেছিল কিন্তু রাজকুমারীকে কোথাও পাওয়া যায়নি। তখন এখানে এই রাজপ্রাসাদে কিংবা রাজপ্রাসাদের আশেপাশে কেউ ছিল না। তারপর এসে আবিদ এখানে বৈঠকখানায় ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু নিজেকে এখানে না পেয়ে সে দেখে রুমে। যখন ঘুম ভাঙ্গে বাইরে আসার পর তার সাথে কেউ কথা বলেনি। তার কোনো প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয়নি। আর তাদের চেহেরাটাও কেমন ভীত, কোনো কিছুকে ভয় পেয়েছে এমন লাগছিল। তারপর রাজকুমারী এসেই তাকেই রুমের ভেতরে নিয়ে কথা বলতে বলতে তাকে অজ্ঞান করে ফেলে৷ আর থাকে কি কথা বলেছিল এখন সেগুলোও তার মনে পড়ছে না। তাকে এটা বলা হয়েছিল, যে তার সাথে নাকি তার দুই বন্ধু দেখা করতে এসেছে। কিন্তু তারা তো দেখা করেনি৷ তারা গেল কোথায়? তাদের কেউ কি ডেবিল বন্দী করে নিয়ে গেছে নাকি? তাদের বন্ধী করে কেন নিয়ে গেল৷ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে নিয়ে যেত। রাফা আর সাইমনকে কেন?আবিদ বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখছে।

হঠাৎ করে আবিদ বৈঠক খানা থেকে উঠে দৌঁড় দিল রাজপ্রাসাদের দিকে, কারণ আবিদকে বলেছিল তার বন্ধুরা তার সাথে দেখা করার জন্য নিচে অপেক্ষা করছিল। আবিদ সেখানেই নিচের রুমে যাচ্ছে যদি কোনো কিছুর সন্ধান পায়।। ভূল করে কোনো সূত্র পেয়ে যাই।। তাই ..

রাজপ্রাসাদে গেল.. সব কিছু আগের মত ঠিকঠাক আছে, কিন্তু এখানে যদি সত্যি সাইমনরা এসে থাকে তাহলে কোন রুমে ছিল এটা বুঝা বড় কঠিন। আবিদ এদিক সেদিক চোখ বুলালো কিন্তু তার তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। এবার স্বিদ্ধান্ত নিল প্রত্যেকটা রুমে গিয়ে দেখবে কিছু না কিছুতো পাবে।।

একটু পর সে স্বিদ্ধান্তটতাও বাতিল করল। কারণ রাজপ্রাসাদের এতগুলোর কক্ষ দেখা আদৌ সম্ভব নই। তাই সে স্বিদ্ধান্তটাও বাদ দিতে হল।

এখন নিচের তলাটা পায়চারী করছে আবিদ। কি করা যায় সেটায় ভাবছে। মনে মনে ভাবল কিছুক্ষণের জন্য নাহয় গোয়েন্দা হয়ে যাওয়া যাক। পায়চারী করছে৷ তখনি তার মাথায় আসে রাফা আর সাইমন জুতা পড়ে কিন্তু ওরীদের এখানে কেউ জুতা পড়ে না৷ কথাটা মাথায় আসতেই মনের ভেতরটা খুশিতে নাড়া দিয়ে উঠল।

এবার জুতার ছাপ গুলো খুঁজার চেষ্টা করল। ওদের যখন ধরে এনেছে তাহলে নিশ্চয় চার পাঁচজনের কাঁধে করে নিয়ে এসেছে। তাই প্রথমে আবিদ রাজপ্রাসাদের মূল প্রবেশধারে চলে গেল৷ এ পথে অনেকে আসা যাওয়া করে তারপরেও চেষ্টা করে দেখা যাক। চেষ্টা করতে তে তো আর অসুবিধে নেই। আবিদ প্রথমে মূল প্রবেশধারের সামনে থেকে দেখা শুরু করল। চার পাঁচ জনের পায়ের ছাপ আগে পিছে করে। এমন ছাপ খুঁজার চেষ্টা করল। প্রথমত কিছু চোখে পড়ল না৷ কারণ গত দিনের পায়ের ছাপ যা আজ পর্যন্ত থাকা অসম্ভব। তাও কি করার অন্য কোনো উপায়ও নেই।

আবিদ আরেকটু সামনে গিয়ে দেখল। এভাবে যেতে কিছুদূর যেতেই এমন একটা ছাপ আবিদের চোখে পড়ল। তবে ছাপটা খুব অল্প অল্প বুঝা যাচ্ছে। আবিদ এই অল্প অল্প ছাপগুলো দেখেই এগিয়ে চলছে। এভাবে প্রায় ছাপটা ধরে এগুতে এগুতে এক্কেবারে রাজপ্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়াল। এর আরেকটু সামনে রাজপ্রাসাদের দরজার সামনেই একজোড়া জুতার পায়ের ছাপ জুতার ছাপগুলো দেখে মনে হচ্ছে তাদের জুতায় গ্লু জাতীয় কিছু লেগেছিল। আবিদ এবার এই ছাপটা অনুসরণ করে আসতে আসতে একটা দরজার সামনে এসে হাজির হলো। দরজাটা রাজপ্রাসাদের নিচের তলার সবচেয়ে কোণায় অবস্থিত এ কক্ষটা৷ আবিদ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। ভেতরে ঢুকতেই আবিদ অবাক হয়ে গেল।।।

ভেতরে সাইমন অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আশে পাশে কোথাও রাফা কে দেখতে পেল না। আবিদ গিয়ে সাইমনের পাশে গেল প্রথমে দেখল সাইমনে শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা, হাতের শিরাটা ধরে দেখল। না ঠিকি আছে। আবিদ বলল ” তাহলে দিন দুপুরে সাইমন ঘুমোচ্ছে কেন? আর রাফা কোথায়? রাফা কি আসে নি? না এসেছে, রাজকুমারী তো দুজনের কথা বলেছিল। ” না উহু হিােব মিলছে না। এবার গিয়ে সাইমনের জুতোর তলা দেখল। আশ্চর্য ব্যাপার জুতার তলার সাথে তো মিল নেই৷ আবিদ এবার গিয়ে বাইরের জুতার ছাপগুলো দেখল। একি এগুলো তো কোনো মেয়ের জুতার ছাপ নই। তার মানে এগুলোতো রাফার জুতার ছাপ না। তাহলে এদের সাথে কি আর কেউ আছে? নাকি রাফা ভূল করে অন্য কারো জুতা পড়ে চলে এসেছে? আবিদ বুঝতে পারল না। আবিদ আবার সাইমনের কাছে ফিরে গেল। সাইমনের ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করল। কিছুতেই উঠছে না। পাশের একটা টেবিলে পানির গ্লাস আছে তার পাশেই জগটা রাখা। আবিদ যেমাত্র জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে তখনি লক্ষ্য করল গ্লাসের তলানিতে সাদা সাদা কিছুর ঘুরি। আবিদ আঙ্গুলের মাথায় লাগিয়ে একটু করে গন্ধটা শুখে দেখল। গন্ধটা অনেকটা ঔষুধের মত। ঔষুধের কথা মনে পরতেই আবিদের এটা মনে হল ” কোনো ঘুমের ঔষুধ নই তো এটা, হ্যা এটাই ঘুমের ঔষুধ । ” এবার পড়ল আরেক চিন্তায় এখানে তো ঘুমের ঔষুধ থাকার কথা না। আর থাকলেও তা পৃথিবীর বানানো ঔষুধের মত হওয়ার কথা না।

আবিদ এবার পরিষ্কার বুঝতে এর সাথে হয়ত কোনো পৃথিবীর মানুষের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

এখন আবিদের প্রধান কাজ সাইমনকে জাগানো। কারণ তার কাছ থেকেই অনেক কিছু জানা যাবে।

সাইমনের কাছে গেল, সাইমনকে ঢাকার আগে এটা চিন্তা করল, কয়টা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ছে তাতো আবিদ জানে না। যদি ঘুম না পরিপূর্ণ না হয়। তাহলে তো সমস্যা হতে পারে। কি করা যায় এখন। আর গ্লাসের অবস্থা দেখে যা মনে হচ্ছে নিশ্চিত ৫, ৬ টা ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছে।

তাহলে এখন কি করবে। ডাকবে নাকি সাইমনে ঘুম পরিপূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করবে। ততক্ষণে যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় রাফার সাথে। আবিদের বিশ্বাস রাফাও সাইমনের সাথে এসেছে। এমনতো হতে পারে রাফাকে আটকে রেখে ওরা এদুজন দিয়ে কোনো কিছু করাতে চাই অনেকটা ব্ল্যাকমেইল এর মত। আর সেটা না হলে ওরা রাফা কে দিয়ে কিছু করাতে চাই যেখানে এদুজনের কোনো প্রয়োজন নেই তাই এদের দুজনকে এখানে এভাবে অজ্ঞান করে ফেলে গিয়েছিল। আর এখানের কাজের লোক, পাহারাদাররা কোথায়??

প্রশ্ন – রাফা কোথায়? সাইমনকে ঘুমের ঔষুধ কে খাওয়াল আর কেন খাওয়াল? এর অন্য কেউ জড়িত নেই তো??

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here