পরিণীতা,পর্ব ৪,৫
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৪
৮.
পরিণীতা তুই খুব বোকা রে আমার প্লানিং এর কিছু ই বুঝলি না। বলে ই অট্টহাসি দিলো ইরা। আদির নম্বর থেকে মেসেজ দিলাম তুই দ্রুত আসবি আমি জানি
–কী বলছো আপু।
–হে, তুই কী তোর প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট টা একবার ও দেখেছিলি।
–আপন বোন না হতে পারো তাওআপু বড় বোন নাকি মায়ের মতো থাকে। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করতাম। তাই রিপোর্টটা খুলে দেখায় প্রয়োজন মনে করিনি।
ইরা আবার হাসতে শুরু করলো। পরিণীতা শুধু তাকিয়ে দেখছে। কী বলছে এসব ইরা।
–দেখ পরী আমার আদিকে দরকার ছিলো পেয়ে গেছি এখন তুই আমার কোনো শত্রু না তাই তোর ভুল ধারণাটা ভাঙ্গা প্রয়োজন। আদি আমার শুধু আমার আদি আর আমার মধ্যে যে আসবে তার ও আমি তোর মতো অবস্থা করবো। সে আমার যে ই হক
–কী বলছো আপু এসব।
–শুন। আদি তোকে কখনো স্পর্শ করনি। কারণ যেদিন রাতে তুই আর আদি পার্টির পর দুজনে ই আমার সাথে ছিলি, আমাদের বাগান বাড়িতে। আমি আদিকে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে ছিলাম তুই অন্য রুমে ছিলি। ঐদিন কী হয়েছিলো তোর মনে নেই কারন তুই ড্রিংকস করে ছিলি আদি না। তুই পাগলামও করতেছিলি আমি আদিকে বুঝিয়ে আমার রুমে নিয়ে যাই।
–তাহলে তুমি ই তো বললে আমি প্রেগন্যান্ট।
–তুই তো বোকা তোকে আমি যা বুঝাতাম তাই ই বুঝতি। ঐদিন আদি আমাকে কল দিয়ে ছিলো তুই নাকি ড্রিংকস করেছিস। ঐ সুযোগে আমি ও আদির সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাই তাই আদিকে আমাদের বাগান বাড়িতে তোকে নিয়ে আসতে বলি। আমি জানি তোর রাতের কথা মনে থাকবে না তাই আদির কাছে তোকে খারাপ প্রণাম করার জন্য এসব করি। আমার প্লানিং অনুযায়ী কাজ হয়ে যায় আর আদি আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। তোকে খারাপ ভাবে তাই তো আদি বার বার এক কথা ই বলে তোকে স্পর্শ করেনি।
পরিণীতার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে এসব শুনে। সত্যি ই মানুষ নিজের স্বার্থে জন্য অনেক কিছু করতে পারে। ইরাকে না দেখলে পরিণতা হয়তো বা বুঝতো না।
–আদি আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলো??
–হাসালি আমার কী মনে হয় জানিস তোদের ভালোবাসা সত্যি ছিলো না। এটা ভালোবাসা ছিলোনা ক্ষনিকের মোহ ছিলো।
–হে হয়তো বা আপু।
–আসলে পরী তোর আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই জানিস তো। কেউ আমার সাথে এমন আচর করলে আমি কখনো তার চোখের সামনে যেতাম না।
–হে ইরা আপু সত্যি বলেছো আমার আত্মাসম্মান নেই। একবার কাউকে মন থেকে ভালোবেসে দেখো আত্মসম্মান কী বুঝবে না। সে অবহেলা করলে পৃথিবীটা তোমার কাছে নরক সমতুল্য মনে হবে। এই যে ইরা আপু আমি কষ্ট পেলাম তো কী হয়েছে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। এখন থেকে পরিণতা আর বোকা থাকবে না।
কথাটা বলে আর একমুহূর্তে জন্য ও পরী দাঁড়ালো না।
৯
বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাচি চাপ দিতো অনেক। পরিণীতা বাবা মা না থাকায় “” বসে বসে অন্য ধ্বংস করিস কথাটা শুনতে হতো সব সময়। তাই আদিকে বললে বিয়ে করে নেয়। কোনো রেজিষ্ট্রি হয়নি। কথা ছিলো যখন সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবে তখন রেজিষ্ট্রি করে নিবে। তাও ঐদিন ডিভোর্স পেপার দিয়েছে যদি কখনো কোনো সমস্যা করি।
কয়েকদিন আগে পরিণীতা আদির সঙ্গে একটা পার্টিতে গিয়েছিলো। বন্ধুদের পালায় পড়ে ড্রিংকস করেছিলো। পরিণীতার ড্রিংকস করার পর থেকে আর কিছু মনে ছিলো না।যার ফলে যেভাবে পারে ইরা ভুল বুঝিয়ে ছিলো।
হঠাৎ একদিন শরির খারাপ করেছিলো । পরিণীতার শরির খারাপ দেখে ইরা একগ্লাস শরবত এনে দিয়েছিলো পরিণীতা না খেতে চাইলে ও জোর করে খাইয়ে দেয় ইরা। এর পর থেকে ই বমি শুরু হয়। ডক্টর এর কাছে ইরা নিয়ে যায়। আর ইরার প্লান অনুযায়ী প্রেগন্যান্ট বলে। মিথ্যে রিপোর্ট দেয়।।।
প্রেগ্ন্যাসির বিষয়ে এতো বেশি ধরনা ছিলোনা পরিনীতার তাই হালকা বমি হওয়া থেকে ই বিশ্বাস করেছিলো বাচ্চার মা হতে চলেছে।।।
বিয়ের পর থেকে আদির অবহেলা বেড়ে ই চলছিলো।। যতদিন যাচ্ছিলো আদি পরীকপ বিরক্তি ভাবতো।। আদি কখনো পরীকে স্পর্শ করেনি, এমনি কী বিয়ের পর ও না। বলেছিলো সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করার পর সব হবে, আবার নতুন করে বিয়ে, বাসর হানিমুন। এখন সব ই হবে শুধু পরীর নামক মানুষটার জায়গায় ইরা নামক আদির ভালোবাসা থাকবে।
ইরা সত্যি ই বলেছে আদি কখনো পরীকে ভালো ই বাসতো না। সব ক্ষনিকের মোহ ছিলো।।। নারীর স্পর্শে এলে কী সব পুরুষ ই মোমের মতো গলে যায় প্রশ্ন টা বার বা মাথায় ঘুরপাকা খাচ্ছে।।।।।।
আদির প্রতি আজ থেকে পরিণীতার কাছে কোনো ভালোবাসা নেই। নিতান্ত ই আদি একটি ঘৃণা হয়ে থাকবে।।।
কল্পনার জগৎ থেকে বের হয় রিক্সাওয়ালার ডাকে।
–চইলা আইছি। নামবেন না।
পরী নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে অফিসে ডুকে। ডুকতে ই রবিন এসে সামনে দাড়ায়।
–ম্যাম আজকে আপনার খবর আছে। স্যার অনেক রেগে আছে। একদিন আমি স্যারের কথার অবাধ্য হয়েছিলাম। রেগে গিয়ে এমন এক থাপ্পড় দিয়ে ছিলো আমার নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে গেছিলো। পরে আবার স্যার মাফ চেয়ে নিয়েছেন। তাও রেগে থাকলে স্যার কী করেন নিজে ও বলতে পারেন না।
–এতো রাগি উনি দেখতে তো দেখা যায় না।
–আপনাকে অনেক খুজেছে মনে হয়। কারণ আপনাকে না পেয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে ছিলো এখন মাত্র আসলো দেখেন ঘড়িতে কয়টা বাজে।
–চারটা অলরেডি বেজে গেছে। সব স্টাফরা চলে গেছে। শুধু আমি আর স্যার আছি।
–আরে স্যারকে আমি ভয় পাই না। তোমার স্যার আগুন হলে আমি পানি।
এটা বলে ই দেখি অর্ণব রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। দেখে আমার অনেক ভয় লাগছে।
–রবিন তুমি বাসায় চলে যাও।
এটা বলার সাথে সাথে রবিন অফিস থেকে বের হয়ে যায়। আল্লাহ অনেক রেগে আছে এখন আমার কী হবে।
চলবে।
পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৫
১০.
ইলা আপু আর অর্ণব এর সামনে চুপটি করে মাথা নিচু করে বসে আছি।
–পরী তুমি কোথায় যাও হুটহাট না বলে। এতে আমাদের টেনশন হয় বুঝো তুমি।
–আপু সরি আর কখনো এমন হবে না।
–হে আমাকে তো যা ইচ্ছা বুঝ দিতে পারো কিন্তু অর্ণবকে কী দিয়ে বুঝ দিবে।
আমি অর্ণবকে কী বলবো। অর্ণব এর মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। আমার ভাবনা ছেদ করে ইলা আপু বলে উঠলো,
–অর্ণব আম্মু কল দিয়েছিলো আমাদেরকে গ্রামে যেতে হবে।
–যাও তুমি আমি যাবো না।
–আরে পরীর উপর এখন ও রেগে আছিস কেনো ছোট্ট মেয়ে এতোকিছু বুঝে উঠতে পারেনি।
–কেনো পারবে না আপু, অনেকটা বড় হয়েছে। আমি কতোটা খুজেছি ওকে তার কোনো হিসাব নাই। অফিসে গিয়ে ই উধাও হয়ে গেছে কাউকে কিছু না বলে।
–সরি আপু উনাকে বলে দেও আর কখনো না বলে কোথাও যাবো না।
— জিজ্ঞেস করো তো আপু নিজের মুখে কী পচনধরা যে তোমাকে বলতে পারছে আমাকে বলতে পারে না।
–আমার মুখে পচন ধরলে কী আপনি খুশি নাকি।
–হে মসজিদে সিন্নি দিবো।
–হে আমাকে কেউ ভালোবাসে না জানি আমি এতিম তো। এতিমকে কেউ ভালোবাসে না।
এটা বলে ই পরী নিজের রুমে চলে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছে পরীর। অল্পতে ই কষ্ট পায় পরী কান্না ও আসে অনেক। চুপচাপ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। অর্ণব এর এনে দেওয়া জামাগুলো থেকে একটা জামা পড়ে নেয়। অর্ণব এর পছন্দ আসছে বলতে হবে।
–হে না হয় কী আপনাকে পছন্দ করি।
পিছনে ঘুরে অর্ণব কে দেখতে পায় পরিণীতা।
–কারো রুমে নক না করে ডুকতে হয় না জানেন না।
–আগে জানতাম না। এখন জানলাম। আপনার কাছ থেকে তো অনেক কিছু শিক্ষলাম। প্রাইভেট পড়াবেন আমাকে।
–এমন ষাড়ের মতো ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর কোনো ইচ্ছা ই না।
পরিণীতার এমন কথায় অর্ণব রেগে গিয়ে পরিণীতার অনেকটা কাছে চলে আসে।
–কে ষাড়ের মতো।
–যাকে বলছি সে।
–কাকে বলেছেন।
অর্ণব পরিণীতার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। পরিনীতা পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালে আটকে গেছে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে কেনো। অর্ণব একনজরে পরিণীতার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণ কথা বললে ও এখন দুজনে ই চুপ। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।
অর্ণবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পরিনীতা ফোন এর কাছে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আদি আর ইরার অনেকগুলো পিক। দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব ভালো ই মুহুর্তে কাটাচ্ছে আদি ইরা। আদির প্রতি ঘৃণা চলে এসেছে, এই পিকগুলো আগে দেখলে আমি হয়তো অনেক কান্না করতাম। কিন্তু এখন একটু ও খারাপ লাগতেছে না।
–কী দেখছেন ফোনে এতো মনোযোগ দিয়ে।
–কিছু না।
–রেডি হয়ে নেও আপুদের বাসায় যাবো। একটু পরে ই বেরিয়ে যাবো। আরেক বার যেনো বলার প্রয়োজন হয় না।।।
এটা বলে ই অর্ণব চলে যায়।।
হঠাৎ করে কেনো গ্রামে যাবে বুঝতেছিনা। যাই হক আমি যেহেতু তাদের বলতে গেলে আশ্রিতা ই। তাদের ইচ্ছে ই আমার ইচ্ছে। একটা দৈর্ঘ শ্বাস ফেলে পরিণতা ও নিজের ব্যাগ ঘুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
১১.
ইলা পরীকে নিয়ে পেছনে বসে অর্ণব সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে পড়ে।।। অর্ণব ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।
–আপু আপনার ভাই এতো কার সাথে কথা বলে।
–জানিনা তো।
–এতো কথা কার সাথে আর বলবে রিলেশন করে হয়তো। দেখে তো এমন মনে হয় না। সামনে থেকে দেখে কাউকে ই চরিত্র বিচার করা যায় না। যেমন আমি আদিকে চিন্তে পারিনি। কথাগুলো মনে মনে বললো পরী।
ইলা আপু ফোন নিয়ে ব্যস্ত। অর্ণব কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত পরিণতা বেশ নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে। তাই ঘুমানোর চেষ্টা করছে।।।।
নিজেকে হাওয়াতে ভাসছি এমন অনুভব হলো ভাবলাম স্বপ্ন দেখতেছি কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম আমি অর্ণব এর কোলে কারণ এমন পারফিউমের গন্ধ আমি ঐসময় অর্নব এর কাছ থেকে পেয়েছি।
–আরে আরে এতো নাড়াচাড়া করছো কেনো।
–আপনি আমাকে কোলে নিলেন কেনো।
—দাড়াও কোল থেকে নামিয়ে নেই তারপর বলি সব।
–নামান আমি হেটে ই যেতে পারি।
–চলে এসেছি। তোমার হেটে যেতে হবে না।
–তাহলে নামাচ্ছে না কেনো।
–এই এতো নামান নামান করতেছো কেনো। কতক্ষণ ডাকলাম। ঘুম থেকে উঠোনি এখন কেনো এতো নাড়াচাড়া করছো।
হে আল্লাহ কোথায় আনলা আমাকে এরা যদি আমাকে বিক্রি করে দেয়। যদি পাচারকারি হয়ে থাকে। মানুষকে এতো দ্রুত বিশ্বাস করা কী আমার ঠিক হচ্ছে। এখানকার পরিবেশ কেমন জানি বড্ড ভয় করছে যে।
চলবে