পরিণীতা,পর্ব ৬,৭

পরিণীতা,পর্ব ৬,৭
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৬

১২.
আমার কোমরটা প্রায় ভেঙ্গে ই গেলো।এতো জোরে কেউ কী নিচে ফেলে দেয় নাকি।

–বেশ করেছি তোমাকে কোলে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা ই আমার নেই। আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো। আমার কী লজ্জা লাগে না।

–আপনার কোলে উঠে বসে থাকার ও কোনো ইচ্ছের আমার নেই। ষাড়মশাই। আর আমি একটা কথা ভাবতেছিলাম আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না লজ্জাবতী লতিকা।

–কী আবার ষাড় বললে।

–দেখতে যেমন তেমন ই বললাম।

–চিকনেচামিলির কথা না বলা ই ভালো।

–আপনার সাথে কথা বলার কোনো সখ ই আমার নেই।

আরে তোরা দুজন আবার শুরু করলি। ইলা আপুকে দেখে দুজন ই চুপ হয়ে গেলাম।

–আপু আমাকে রুমে এনে বেডের উপর ফেলে দেয় কোমর ভাঙলো প্রায়।

–হয়েছে কারো আর কোনো কথা নাই। অর্ণব যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে। পরী তুমি ও যাও।

–পরে দেখে নিবো চিকনেচামিলি।

পরী ভেংচি কেটে চলে গেলো। অর্ণবকে বুঝা বড় দায় মাঝেমধ্যে বেশ রাগি আবার বাচ্চাদের মতো ঝগড়া।

——————

চারদিকে সূর্যের কিরন বেশ ভালো ভাবে ছড়িয়েছে। মাটির দেওয়ালে ঘড়িটার কাটা এগারো থেকে বারোটা ছুইছুই।জানালা খুলে দিতে ই সূর্যের একগুচ্ছ আলো এসে পরীর মুখে পড়লো। পরীর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। উঠে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ই উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। একটা লং কামিজ আর লেগিংস পরে নেয়। গায়ে চাদর মুড়িয়ে বসে আছে।

অচেনা জায়গা বাহিরে বের হবে নাকি ভাবছে। ইলা আপু ও কোনো খুজ নাই। অর্ণব তো সারাক্ষণ ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।।।।।

হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বললো,

–আপনাকে ইলা আপু ডাকে।

–কোথায়??

–আমার সাথে চলেন।

আর কোনো প্রশ্ন না করে মেয়েটির পিছনে হাটতেছি। কী অদ্ভুত বাড়িটা সব মাটির তৈরি। দুতলা বাড়িটা ও মাটি আর কাঠ দিয়ে তৈরি। চারদিকে বিভিন্ন সৌন্দর্যর ছোয়া। দেখে ই বুঝা যাচ্ছে খুব সৌখিন মানুষ এবাড়ির সবাই। আমাকে নিয়ে ওদের উঠনে গেলো সবাই একটা শীতল পাটি বিছিয়ে বসে আছে এই ঠান্ডার মধ্যে। গল্প করছে সবাই, আমি আসার সাথে সাথে অর্ণব ও আসলো। দেখতে তো বেশ লাগছে। চাদর দিয়ে নিজেকে এমন ভাবে পেচিয়েছো মনে হচ্ছে নতুন বউ।হঠাৎ আমার ভাবনার ছেদ করে একজন বলে উঠলো,

–কীরে অর্ণব বিয়ে করলি আমাদের কে তো বললি না।

অর্ণব আর পরিণীতা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আরে ওদের…

–থাক না ইলা অর্ণব এর হয়ে উকালতি করে হবে না তোর। বউ তো মাশাল্লাহ।

–আরে কী বলছেন এসব আপনারা।

–অর্ণব বাবা লজ্জা পাচ্ছে। বিয়ে করেছো ভালো লজ্জা পাচ্ছো কেনো। বউ আসার সাথে সাথে আসলে যে বউকে চোখে হারাও বুঝি।

–স্টপ। কী বলছেন এগুলো। উনি আমার বউ না। ফালতু বকছেন কেনো। আর একটা বাজে কথা বললে কী করি দেখতে পাবেন।

বেশ জোরে ই অর্ণব এ কথাগুলো বললো। ইলার ফুপি কথাগুলো বলেছে। উনি তো বেশ লজ্জা পাচ্ছেন এবার। কিন্তু সবাই বড্ড হাসিখুশি তাই রাগ জিনিস টা খুব কম ই আছে। যেখানে রাগ থাকে ঐখানে সুখ জিনিসটা অল্পক্ষণ ই স্থায়ি হয়। কিন্তু অর্ণব প্রচন্ড রেগে যায় তাই ঐখান থেকে উঠে চলে যায়। পরীর ও খুব কষ্ট লাগছে। নিজেকে একটা প্রবলেম মনে হচ্ছে এখন। যেখানে ই যায় কোনো না কোনো প্রবলেম হয় ই।

–পরী প্লিজ তুমি রাগ করো না।

–আপু আপনি আমার জন্য টেনশন করবেন না।আমি ঠিক আছি। আপনার ভাইকে সামলান।

১৩.
হাফেজা বেগম ইলার মা। অর্ণব এর জন্য অনেক আইটেমের পিঠা পায়েস মিষ্টি নিয়ে ছেলের রুমে হাজির। খুব ভালোবাসে অর্ণবকে।

–বাবা আসবো।

–হে আম্মু আসো।

–দেখো তোমার পছন্দের খাবার নিয়ে এসেছি। রাগ করে থাকে না বাবা। দেখো সবাই তো আর সব কিছু বুঝে না। ফুপি না হয় ভুল করে ফেলেছে। তুমি ঐসব মনে রেখো না।

–ভালো লাগছে না আম্মু।

হাফেজা বেগম অনেক বুঝিয়ে ছেলের রাগ ভাঙ্গাতে সক্ষম হলো। অর্ণব মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশ পছন্দ করে। তাই তো অর্ণব এলে ই হাফেজা বেগম মিষ্টি জাতীয় খাবার বানাতে ব্যস্ত থাকে। ছেলেকে খাইয়ে চলে যায় হাফেজা বেগম। অর্ণব আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

যখন ই দেখবো তখন ফোন নিয়ে ব্যস্ত কী আছে ফোনে আল্লাহ ই জানে।

–আসতে পারি স্যার।

অর্ণব চোখ তুলে দরজায় তাকাতে ই দেখে পরিণীতা দাড়িয়ে আছে।

–ইচ্ছে হলে আসুন। না হয় নাই।

–হে আমার তো প্রয়োজন তাই আসতে হবে। সরি।

–প্রয়োজন ছাড়া কী আসা যায় না নাকি। আর সরি ই বা কেনো বললেন।

–এইযে আমার জন্য আপনার মন খারাপ হয়ে গেলো।

–আরে ঐ টাইমে একটু রেগে গিয়েছিলাম। আপনি কিছু মনে করবেন না।

পরিণীতা কোনো উওর না দিয়ে ই চলে গেলো। অর্ণব বুঝতে পারলো বেশ অভিমান করেছে।

—————–

“”পরী “”
ডাকটা শুনে পিছনে তাকাতে ই দেখে ইলা।

–জি আপু বলুন

–কেমন লাগছে এইখানে।

–এইতো ভালো।

–তুমি কী জানো অর্ণব আমার নিজের ভাই না।

চলবে

পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৭

১৪.
প্রত্যেকটা মানুষ এর জীবনে ই কিছু অতীত থাকে যা সবাইকে বলতে চেয়ে ও বলা যায় না।কিন্তু পরিণীতা তোমাকে আামর সব বলতে ইচ্ছে করছে কারন টা পরে বলবো। অর্ণব আমার চাচাতো ভাই। অর্ণব এর জন্মের এক বছর পর অর্ণব এর মা মারা যায়। আমার আম্মু অর্ণবকে লালন পালন করে। আমি তখন চার বছরের ছিলাম। নিজের ভাই এর মতো ই ভাবতাম। অর্ণব এর মা মারা যাওয়ার পর অর্ণব এর জন্য শুধু আমার চাচ্চু বিয়ে করে কিন্তু যা ই হক দিন শেষে সৎ মা তো সৎ ই হয়।বিয়ের পর কয়েক দিন অর্ণব এর সাথে ভালো ই ছিলো। কিন্তু ভালো টা আর বেশি দিন ভালো থাকলো না।অর্ণব এর ছোট একটা ভাই যখন পেটে আসে শুরু হয় অবহেলা। তারপর থেকে আমার আম্মু ই সব।

এটা আমাদের গ্রামের বাড়ি। অর্ণব তার বাব মায়ের কাছে যায় না। মাকে মা বলে ও ডাকে না। কিন্তু নতুন চাচি খুব করে চায় অর্ণব যেনো মায়ের মতো ই আচরণ করে। কিন্তু অর্ণব দেখতে ই পারে না ওদের কে। কোনো কাজ ছাড়া বাবার সাথে ও কথা বলে না।

অর্ণব আমাকে অনেক সম্মান করে তাই তো অফিসের সব কিছু আমার হাতে। আমাকে নিয়ে তার যত অবদার একবারে বাচ্চাদের মতো করে। কিন্তু অনেক বেশি রাগ। যা অর্ণব কন্ট্রোল করতে পারে না।আমার ভাইটার যখন মন খারাপ থাকে তখন নিজের মায়ের কবরের পাশে চলে আসে ঢাকা থেকে।

ইলা আপু কথা শুনে থ হয়ে আছি। আমি জানতাম অর্ণব মনে হয়ে ইলা আপুর আপন ভাই। যা ই হক ভাই তো।। ইলা আপু কথাগুলো বলে চলে গেলো। তার মানে অর্ণব এর আরো ভাই বোন আছে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা হবে প্রায় সন্ধ্যাতারা ফুল গাছে ডালগুকো বেশ সৌন্দর্য নিয়ে ই ছড়িয়ে আছে। অনেকগুলো কলি আছে আবার অনেকগুলো ফুল ফুটে গেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছে। তার পাশে ই হাসনাহেনা গাছে ফুলের সুভাষ ছাড়াচ্ছে। পরিণীতা একমনে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ চুলের মধ্যে টান অনুভব হতে ই হালকা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।

–আরে এতো জোরে চেচাচ্ছেন কেনো।

অর্ণবকে দেখে চুখগুলো বড় করে তাকিয়ে আছে পরিণীতা।

— অমন রসগোল্লা মতো করে তাকিয়ে আছেন কেনো। আমাকে এইখানে আশা করেননি বুঝি।

পরিণীতা মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়।

–দেখতে তো খুব ই ইনোসেন্ট। তা কজনের মাথা খেয়েছেন এ পর্যন্ত।

–আগে কজনের খেয়েছি তা জানি না। এখন আপনারটা খেতে ইচ্ছে করছে।

–তাই নাকি

এটা বলে ই অর্ণব দুই হাত দিয়ে বারান্দার গ্রিলের মধ্যে পরীর দুহাত আটকে দেয়।

–হুম ম্যাডাম প্লিজ এখন মাথাটা খান প্লিজ।

অর্ণব অনেকটুকু এগিয়ে গিয়ে এই কথাটা বললো। পরী অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু অর্ণব এর পারফিউমের গন্ধটা বেশ সুন্দর। অর্ণব এর হাতে একটা আংটি দেখা যায়। যা আদির হাতে ও দেখেছিলো। পরী শুধু আংটিটা দিকে ই তাকিয়ে আছে। খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আংটিটার দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে থেকে ভালো অনেকক্ষন। পরক্ষণেই ই মনে হলো এতো ভাবার কী আছে এই রকম আংটি তো যে কারো হতে পারে। এই আংটির চিন্তা মাথা থেকে জেরে ফেলে দিলো।।।।।।

পরীকে এভাবে ভাবতে দেখে পরীর চুলে আবার টান দেয়। এবার ভয় পেয়ে পরী অর্ণব এর দিকে তাকায়।

–আসো একটু গল্প করি। সময় যাচ্ছে না।

এই সময় ই আবার ফোন বেজে উঠলো।

–এই যে জিএফ কল দিছে। এইবার সময় যাবে।

পাল্টা কোনো উওর না অর্ণব কথা বলতে বলতে চলে যায়। পরীর ও তো একজন কথা বলার মানুষ ছিলো অনেক ভালোবাসতো তাকে, খুব তো চাইছে ভুলে যেতে কিন্তু তাও কী পাড়েছে ভুলে যেতে। দিন শেষে তো একটা ই কথা মনে পড়ে অনুভূতি গুলো বার বার জানান দিয়ে যায় ধোকাটা খুব বড়সড় আকারে ই ছিলো যা হৃদয় খুব বড় যায়গাতে ই ক্ষত করেছে। ভুল মানুষকে ভালোবেসে ভালোবাসাকে ঘৃনা করার মতো মানুষ পরী না তাও ব্যর্থর গল্পটা তো বার বার ভালোবাসা টাকে কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছে।।।।।

১৫.
পরী রুমে শুয়ে আছে। মনটা বড্ড খারাপ। আদি নামটা যে মাঝে মাঝে বড্ড পোড়ায়।খুব জোরে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে কিন্তু বার বার এই কথাটা মাথায় রাখতে হয় যে আমি কারো আশ্রিতা।

–আসবো নাকি।

অর্ণবর কন্ঠ স্বর শুনে কম্বলের ভেতর থেকে মুখ বের করে পরী।।

বেডের উপর বসে বলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো আপনার আসবেন নাকি। বেডের পাশে এসে মনে হলো আপনার যে করো রুমে ডুকতে হলে পারমিশন নিতে হয়।

–আমি এতো তেতো কেনো।

অর্ণব এর এমন প্রশ্নের কারণ পরী খুজতেছে।

–তেতো সাথে চিনি মিশান মিষ্টি লাগবে।

–হে চিনি মিশাতে ই এসেছি।

–কী।

–আমার একটা কথা রাখবেন।

–কী।

—রাখবেন তো।

–হে বলুন।

–চলুন নদীর ঘাটে যাই। ঐখানে উপরে যে বসার স্থান আছে ঐখানে বসে কথা বলি আমরা।

পরী পুনরায় কম্বলের ভেতরে ডুকে বলে যাবো না। কতক্ষণ পর অর্ণব এর কোনো শব্দ না পেয়ে পরী ভেবে ছিলো চলে গেছে। তাই কম্বল সরাতে ই অর্ণব মুখ চেপে ধরলো। কোলে তুলে নিয়ে নদীর ঘাটে চলে গেলো। বাসা থেকে মাত্র দুই মিনিট লাগে। বাসার সামনে ই নদী।

পরীকে নদীর পাড়ে এনে অর্ণব ছেড়ে দেয়।

–যাও যাও এখন বাসায় ডুকলে ই বলবো, তুমি আমার রুম থেকে ডেকে এনেছো।

–আপনি মিথ্যা বলবেন।

–আমার সাথে না বসলে তো বলবো ই।আমি যা বলি তা শুনো কিছু বলবো না।

অর্ণব আর পরীর গিয়ে বসলো। নদীর পানি কেমন চাদের আলোয় চিকচিক করছে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অল্প কুয়াশার কারনে দেখা যাচ্ছে না।

–এই শীতের মধ্যে এইখানে নিয়ে আসলেন কেনো।

–আচ্ছা তুমি বসো আমি চাদর নিয়ে আসছি।

–নাহ্ অসম্ভব আমি একা থাকবো না।

বলে ই পরী অর্ণব এর হাত জরিয়ে ধরে।। এভাবে হাত জরিয়ে ধরে পরী অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে মুহুর্তে ই হাত ছেড়ে দেয়।

–না আমাকে একা রেখে যাবেন না। আমাকে নিয়ে যান।

–নাহ তাহলে আসো দুজন এক চাদরের নিচে। তুমি অর্ধেক আমি অর্ধেক।

উপায় না পেয়ে অর্ণব এর কথায় রাজি হয়ে গেলো।

অর্ণব বসে বসে অনেক কথা বলছে। কিন্তু পরী ঘুমিয়ে পড়লো। আস্তে আস্তে মাথাটা অর্ণব এর কাধে রাখলো। স ইচ্ছাতে না। ঘুমের ঘোরে। অর্ণব পরীকে দেখে মুচকি হাসছে। এতো দ্রুত কেউ ঘুমাতে পারে নাকি।

এমন সময় পেছনে কয়েকজন মুরব্বিদের দেখতে পেলো।

–মাইয়া নিয়া তামাশা করো নাকি।

–শহরের মতো এতো ঢলাঢলি গ্রামে নিষেধ।

এতো জোরে জোরে কথা বলতেছিলো যে পরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মিনিট দুয়েক লেগে যায় ঘটনা বুঝতে।

–আপনারা ভুল বুঝছেন।

–আমাদের শিখাইতে আইসো না। যা দেখলাম তারপর আবার ভুল।

পরী ও হাত জোর করে বলতে লাগলো। কিন্তু কেউ ই কথা শুনলো না। অর্ণব উপায় না পেয়ে ইলাকে কল দেয়।

–যা হইছে আমরা সব ভুলে যাবো কিন্তু

–আরে কী করলাম আর কীসের কিন্তু।

–তোমারে এই মাইয়াকে বিয়া করতে হইবো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here