পরিণীতা,পর্ব ১৬,১৭

পরিণীতা,পর্ব ১৬,১৭
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৬

৩১.
পরী অর্ণব দুজনে ই ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে টেবিলে যায়। পরী বার বার বলতে চাচ্ছে পরীর অতীতের কথা কিন্তু সাহস হয়ে উঠছে না। সবার সামনে নিয়ে যাওয়ার আগে ই সব টা জানাতে চায় অর্ণবকে। এবার সাহস করে বলে ই উঠলো,

–আপনাকে আমার সম্পর্কে কিছু বলার আছে।

–খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না পরী।।।

–কিন্তু আমি বলতে চাই, কথাগুলো জানা আপনার প্রয়োজন।

–পরী এখন খেয়ে দ্রুত রেডি হয়ে নেও, আব্বু অনেক বার কল দিয়েচ্ছে আমাদের যেতে হবে কথা পরে ও শুনতে পারবো।।।

পরীর বেশ রাগ হচ্ছে এই কথাটা যখন ই বলতে যায় তখন ই অর্ণব বলতে দেয় না। অর্ণব নাস্তা করা শেষে উঠে চলে যায়। পরীকে ও দ্রুত রুমে আসতে বলে। টেনশনে পরীর সারা রাত ঘুম আসেনি। যে করে ই হক আজকে অর্ণবকে সবটা বলতে হবে।

—-
গাড়ি চলছে আপন গতিতে অর্ণব ড্রাইভ করছে আর পরীর দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে।

–শুনোন

–বলো টিয়াপাখি

–আমার কথাগুলো শুনলল এই ডাক তো দূরের কথা আমাকে এখন ই রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যাবেন।

–কী কথা টিয়াপাখি

–আমি অতীতে কাউকে ভালোবাসতাম।

–হুম তো, চলে যেতে চাও নাকি তার কাছে।

–নাহ।

–তাহলে আর কোনো কথা বলো না। আর কিছু শুনতে চাইনা। তোমার অতীত কে ছিলো কী হয়েছে এসব আমি শুনতে চাই না। বিয়ের পর তুমি আমার এটা ই জানি।

–আমাকে বলতে দেন প্লিজ।

–পরী আমি আর কিছু শুনতে চাই না তোমাকে বললাম তো।

বেশ রাগ দেখিয়ে অর্ণব কথাটা বললো, অর্ণব এর এমন অবস্থা দেখে পরী আর কিছু বললো না।
অর্ণব এর এমন ব্যবহারে পরী কান্না করে দিলো, কান্না করতে করতে বললো
এসব কারণ ই একদিন আপনাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।

পরীর এমন কথা শুনে সাথে সাথে গাড়ী থামিয়ে দেয় অর্ণব। গাড়ি সাইড করে, নেমে পরীর কাছে আসে।
চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে কপালে ঠোঁট দুটো ছুয়ে দেয়। পরী এক হাত দিয়ে অর্নব এর শার্টের কলার শক্ত করে ধরে।

–পরী তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না, তোমার অতীত যা ই থাকোক আমি তোমাকে কখনো ছাড়ছি না। যখন প্রয়োজন পরবে আমি নিজে তোমাকে এসে জিজ্ঞেস করবো কী ছিলো তোমার অতীতে।

–পরে কী আমাকে ভুলে যাবেন।

পরীর এমন প্রশ্ন অর্ণব হাসে,

–তোমাকে ভুলতে হলে আমাকে আগে ভুলতে হবে টিয়াপাখি। তোমার সাথে আমার ভুলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক না, চাইলে ও আমরা কেউ ই এই সম্পর্ক ভুলতে পারবো না। পবিত্র বন্ধ আবদ্ধ দুজন।
বাসায় গিয়ে অনেক আদর করবো কষ্ট কী মনে রাখতে দিবো না, এখন কান্না না করে বসো টিয়াপাখি তুমি কান্না করলে আমি ড্রাইভ করতে পারবো না।

অর্ণব আবার নিজের যায়গায় বসে ড্রাইভ করছে এক হাতে। অন্য হাতে পরীর হাতটি শক্ত করে ধরে আছে।

৩২.
সকাল থেকে রান্নায় ব্যস্ত অনিতা বেগম। ছেলে কতোদিন পর আসতে চেয়েছে। হয়তো জন্ম দেইনি তাই কী আমাকে মা বলে ডাকা যায় না। মানুষ করতে চেয়েছি তো ছোট বেলা, অর্ণব প্রথম প্রথম মেনে নিলে ও সমাজ আমাকে কিন্তু অর্ণব এর মা হিসেবে মেনে নেয়নি। বার বার আগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমি অর্ণব এর সৎ মা। তাই তো আমার ছেলে আমার থেকে দূরে।

কথাগুলো ইরাকে শুনাচ্ছে অনিতা বেগম। কাজ করাচ্ছে সকাল থেকে অনেক। ইরা এসব কাজে অবস্তু না তাও শাশুড়ীর মন রক্ষায় করতে হচ্ছে। মনে চাচ্ছে এখন ই রুমে চলে যায়। তারপর সকাল থেকে শাড়ি পড়িয়ে রেখেছে। অসহ্য কর লাগছে ইরার কাছে।।।

অর্ণব এর কতো গুনগান। অথচ আদির কথা একবার ও বলেনি। শুনলাম তো সৎ ছেলে তারপর এতো মায়া আসে কোথা থেকে কে জানে। কথাগুলো মনে মনে বললো ইরা।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে ই পরীর চিনতে কষ্ট হয় না এটা আদির বাসা। তারমানে কী আদি অর্ণব দুই ভাই। কী করে যাবে বাসার ভিতরে, সবাই তো পরীকে চিনি।।।
আমি ভেতরে যাবো না, কথাটা বলে ই সাথে সাথে জ্ঞান হারায় পরী।
অর্ণব পরীকে এমন অবস্থা হতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়।

–টিয়াপাখি এই টিয়াপাখি বার কয়েক ডাকলে ও পরীর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে দ্রুত কো্লে তুলে নেয়।।।

পরীকে কোলে নিয়ে ই, ভেতরে ডুকে। অর্ণব পরীকে নিয়ে ভেতরে ডুকার সাথে সাথে বাসার সবাই আসে।
অর্ণব পরীকে নিয়ে সোফায় শুয়ায়। অনিতা চৌধুরী পরীকে দেখে ই চিনি ফেলে। তাই সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে।

–এই মেয়েকে কোথা থেকে নিয়ে আসলি অর্ণব।

–আমি বিয়ে করেছি মা পরী চৌধুরী বাড়ির বড় বউ।

কথাটা বলার সাথে সাথে অনিতা চৌধুরী চিৎকার দিয়ে বলে এক মেয়ে দুই ভাইয়ের বউ হয় কীভাবে।

চলবে

পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৭

৩৩.
মায়ের এমন ব্যবহারের জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলো না অর্ণব। কিন্তু মায়ের কথাকে উপেক্ষা করে পরীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরীকে নিজের রুমে নিয়ে শুয়ে দিয়েছে।

অনিতা চৌধুরী ও ছিলের পেছনে দৌড়ে রুমে ডুকে।

–অর্ণব তুই আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস।

–আপনি কী চাচ্ছেন আমি এই বাসা থেকে চলে যাই।

কথাটা শুনে ই চুপ করে যায় অনিতা।

–বাবা আমার কথাটা শুন এই মেয়ে কয়েকদিন আগে এসে বলেছিলো অ নাকি আদির বিয়ে করা বউ, বাচ্চা ও নাকি পেটে। এই মেয়ে মিথ্যেবাদী আদিকে না পেরে তোকে ফাসিয়েছে। বের করে দে তুই ওকে এ বাসা থেকে।

–অহ্ আচ্ছা, শুনেন আমি এতোটা বোকা না আপনার কথা শুনে আমি আমার বউকে বের করে দিবো। পরীর সুস্থ হক তার মুখ থেকে ই সব কিছু শুনবো তারপর দেখা যাবে কী হয়।এখন আপনি আমার রুম থেকে যেতে পারেন।

অর্ণব এর এমন ব্যবহারে অনিতা চৌধুরী একমুহূর্তের জন্য ও দাড়ালো না চলে গেলো। যতই অনিতা চৌধুরী কথা বিশ্বাস না করুক না কেনো তারপর ও না চাওয়া শর্তে একটা অবিশ্বাস কাজ করছে পরীর প্রতি।

এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে পরীর কথাগুলো যদি ঐ টাইমে শুনতো তাহলে এখন আর এমন হতো না। এতো টেনশন আর নিতে পরছে না।।।

অর্ণব পরীকে অনেক আগে থেকে ই পছন্দ করতো। পরীর স্কুল লাইফ থেকে ই কিন্তু বলতে পারতো না। এক গাদা চিঠি লিখেছে পরীর জন্য কিন্তু একদিন ও দিতে পারেনি।।রাস্তা মোড়ে দাড়িয়ে শুধু দেখতো, সাদা ড্রেস পড়া মেয়েটি হাসিতে মগ্ন থাকতো। এতোটা ভালো লাগা কাজ করতো যা বলে বুঝানো সম্ভব না। পরীকে সাধারণের মধ্যে অসাধারণ লাগতো। যখন জানতে পারলো মেয়েটা এতিম তখন আরো বেশি মায়া কাজ করতে থাকে।

বেশকয়েদিন গোলাপ নিয়ে গিয়েছিলো প্রপোজ করার জন্য কিন্তু ঐ সাহস টা হয়ে উঠেনি। যখন পরী কলেজে এডমিশন নেয় পড়ে জানতে পারলাম পরী আদির সাথে সম্পর্ক। আমি চেয়েছিলাম ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা তাই তো দূরে সরে এসেছিলাম। কিন্তু আদিকে বিয়ে করেছে কিনা তা জানা হয়ে উঠেনি। এতো বছর পর যখন আমার ভালোবাসা আমার চোখের সামনে আসলো, খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু পরীর অজানা প্রত্যেকটা কষ্ট আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো তাই চেষ্টা করেছি সব সময় খুশি রাখার।

৩৪.

অর্ণব….

ডাকটা শুনে ই পিছনে তাকাতে দেখলাম পরী। চোখ মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এখন ই কেদে ফেলবে। আমি কোনো মতে ই চাইনা পরীকে অবিশ্বাস করতে। তাই টেনে আমার কাছে এনে বসালাম। আলতো করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে কপালে চুমু খেয়ে, মুখটা উপরে তোলতে ই দেখলাম কান্না করছে।

–অর্ণব এতোক্ষণ অনেক কিছু হয়ে গেছে তাই না। তাও আপনি আমাকে এভাবে কাছে টেনে নিচ্ছেন কেনো।

–টিয়াপাখি আমি চাইনা তোমাকে অবিশ্বাস করতে, ভুল বুঝতে, কী হয়েছে আমাকে এখন বলো। আমি এখন সব কিছু শুনতে চাই।

—আমার সব কথা কী আপনার বিশ্বাস হবে।

–অন্ধের মতো বিনা সার্থে যাকে ভালোবেসে গেছি তাকে যদি বিশ্বাস না করি তাহলে আমার ভালোবাসা ই বৃথা।

পরী অর্ণব কে প্রথম দিন থেকে শেষ অব্দি যা হয়েছে সব কিছু বলেছে। আদি যে পরীকে থ্রেড করেছে অর্ণবকে নিয়ে তা ও বলেছে।।।

অর্ণব একমুহূর্ত ও বসে না থেকে বাবা মাকে ডেকে আনে। সবগুলো বিষয় খুলে বলে।

–আশা করি মা এর পর আমার বউ নিয়ে তোমাদের কোনো আপত্তি নেই।

অনিতা চৌধুরী পরীর কাছে গিয়ে। আদর করে অনেকক্ষন। আমার ছোট ছেলের হয়ে আমি মাফ চাইছি মা তোর কাছে। মাফ করে দে।আমার আদি এমন কাজ করবে আমি স্বপ্নে ও ভাবতে পারি না।

–মা আমি আগের সব ভুলে যেতে চাই, আবার নতুন করে বাঁচতে চাই।

–হুম এখন একটু রেস্টনে।
অর্ণব আমি যাচ্ছি তোরা রেস্টনে। পরে আবার কথা হবে। আর তোকে জানিয়ে রাখি ইরা এখন এবাসায় ই আছে। কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডাকিস।

অর্ণব এর আব্বু আম্মু চলে যায়। এতোক্ষণ পরে একটু শান্তি লাগছে, পরীকে কাছে টেনে নেয়। অভয় দিয়।

–পরী আমি একটু বাহিরে যাবো, তুমি সাবধানে থেকো।

–কখন আসবেন।

–তা বলতে পারি না।
তুমি ভয় পেলে বাবার রুমে যেতে পারো।

–না সমস্যা নেই।

অর্ণব পরীর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। পরী ফ্রেশ হয়ে একটা শাড়ি পড়ে বাহিরে বের হয়। রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ইরার মুখোমুখি হয়।

–আমার সংসারটা ভাঙ্গার জন্য চলে এসেছিস তুই, ছোট বেলা তো মা বাবাকে খেয়েছিস এখন আমার সংসারটা খেতে এসেছিস

–চোখ নামিয়ে কথা বল। আমি সম্পর্কে তোর বড় জ্যা।নিজের স্বামীকে তো নিজের কাছে রাখতে পারিস না অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেয়। আসলে মানুষের চরিত্রে দোষ থাকলে যা হয়।

কথাটা বলে ই পাশ কেটে চলে যেতে নিলে ইরা টান দিয়ে হাত ধরে ফেলে….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here