দৃষ্টির অগোচরে,১৭তম_পর্ব,১৮ তম পর্ব

দৃষ্টির অগোচরে,১৭তম_পর্ব,১৮ তম পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
১৭তম_পর্ব

প্রথমে তৌহিদ স্যার যদিও বিশ্বাস করছিলেন না। কিন্তু এমন এমন প্রমাণ পেয়েছি উনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন। এর উপরে তোমার গার্ল্ফ্রেন্ড যা ভয় টা দেখিয়েছে তাকে! বেচারা বেহুশ হয়ে গেছে।
– আমার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই! কার কথা বলছেন আপনি?

নির্লিপ্তভাবেই কথাটা বলে স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধ অবাক দৃষ্টিতে নুশরাতের দিকে চেয়ে আছে। নুশরাত স্নিগ্ধের মুখে প্রশ্নটা শোনামাত্র কিছুটা চমকে উঠে। তাহলে মেয়েটা কে! কে সেদিন তৌহিদের সাথে দেখা করেছিলো। নুশরাতের ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হয়ে আসে। নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে,
– মেয়েটা বলেছিলো তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো, তোমাদের কথা কেউ জানতে পারলে তোমাদের শান্তিতে দিবে না।
– কি আবোলতাবোল বলছেন! কে এই মেয়ে! আমার কারোর সাথে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই! আর কারাই আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না!

স্নিগ্ধের বিদ্রুপের স্বরে কথাটা বললো। নুশরাত কোনো কথা বললো না। আমাদের আশেপাশে এমন অনেককিছুই হয় যা আমাদের চিন্তার সীমাতে কোনোভাবেই আটে না। এসবের রহস্যগুলো আমাদের অজানাই থেকে যায়। এই রহস্যগুলোকে এড়িয়ে গেলে সমাজের সুস্থ শ্রেণীর মানুষের কাঠামোতে আপনি নিজের জায়গাটা নিশ্চিত রাখতে পারবেন। ভুলেও যেই রহস্যের দিকে মনোনিয়োগ করলে আপনাকে সমাজের সুস্থ শ্রেণী “পাগল” নামে আখ্যা দিবে। নুশরাতের মোটেই এখন পাগল হিসেবে আখ্যায়িত হবার ইচ্ছে নেই। নুশরাত স্নিগ্ধের সাথে কথোপকথনের সেসন শেষ করলো। নুশরাত রুম থেকে বের হয়ে তৌহিদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে।
– কাম ইন

কথাটা শুনে দরজাটা ঠেলে তৌহিদের রুমে প্রবেশ করে নুশরাত। তৌহিদ তখন কিছু কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করছিলো। নুশরাত গলা খাকারি দিয়ে বলে,
– বসতে পারি?
– স্নিগ্ধের সাথে কাজ শেষ তোমার?
– হু, শরীর কেমন আছে আপনার?
– ভালো, তুমি ৬ তারিখের জন্য রেডি তো?
– একদম, আপনি রেডি তো?
– হু, এদিকের কাজ হয়ে গেছে। তুমি নিশ্চিত থাকো। এখন শুধু ৬ তারিখ আসার অপেক্ষা।
– হু, ওই মেয়েটার কোনো খোঁজ পেয়েছেন?
– না, এখনো না। তবে পালিয়ে থাকবে কতোক্ষন! ঠিক খুঁজে নিবো
– হুম, আমি আসছি তাহলে।

বলেই উঠে দাঁড়ালো নুশরাত। তার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জোট বেধে রয়েছে। উত্তরগুলো এখনো অজানা। একবার চেয়েছিলো তৌহিদকে মেয়েটির কথা জানাবে কিন্তু তৌহিদ তার কাজে ব্যস্ত, এখন জানালে বেচারা অহেতুক চিন্তাতে পরে যাবে। তাই কথাটা নিজের মাঝেই রাখলো নুশরাত। থানা থেকে বের হতেই ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো ঢাকার বুকে। বৃষ্টির পানিটা মারাত্নক ঠান্ডা। কিন্তু মন্দ লাগছে না নুশরাতের। ফাইলগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগে রয়েছে। তাই ভেজার চান্স ও নেই। নীল ছাতাটা মেলে হাটতে লাগলো নুশরাত। বৃষ্টিতে মাটির ভেজা গন্ধ নাকে লাগছে নুশরাতের। মন্দ লাগছে না__________

৬ তারিখ,
কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে স্নিগ্ধ। বিপক্ষের উকিল সাহেব ইশফাক আলম জাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
– ইউর অনার, আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় ভাব ধরা ছেলেটি একজন ভয়ংক্র খুনি। যে কিছু টাকা এবং স্বর্ণের লোভে গত ১৭ শে মে, নামকরা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি এস.এ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলতাফ হোসেনকে নৃশংসভাবে খুন করে। সেদিন তিনি বাসায় একা ছিলেন। তার স্ত্রী স্নেহা হোসেন শপিং এ গিয়েছিলেন। আলতাফ সন্ধ্যা ৭টায় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার ওর্ডার করেন। ৭.৩০ টায় ডেলিভারি বয় রুপে স্নিগ্ধ বাসায় প্রবেশ করে। ঠিক ৭.৪৫ এ স্নেহা বাসায় ফিরে আসেন। তিনি ক্রমাগত ডোর বেল দিতে থাকেন। কিন্তু আলতাফ দরজা খুলেন না। ফলে স্পেয়ার কি দিয়ে স্নেহা বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। তিনি আলতাফের নিথর শরীরটা সোফার কাছে রক্তাক্ত অবস্থা পান। পালস চেক করলে স্নেহা বুঝতে পারেন আলতাফ মৃত। স্নেহা তৎক্ষনাৎ পুলিশকে ফোন দেন। পুলিশ আলতাফের লাশের পাশে স্নিগ্ধের আইডি কার্ডটি পান। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হয়তো কার্ডটি পড়ে যায়। স্নেহা হোসেন ঘরের তালাশি করে জানান পনেরো হাজার টাকা এবং ৫ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। স্নিগ্ধ শুধু কিছু টাকা এবং স্বর্ণের লোভে এই খুনটি করেন। মাননীয় আদালতের কাছে আমার বিনীত নিবেদন, আমি স্নিগ্ধ রহমানকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
– ইউ মে প্রসিড

ইশফাক আলম এবার স্নিগ্ধের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। স্নিগ্ধ শপথ গ্রহনের পর তিনি হিনহিনে কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– ১৭ তারিখ সন্ধ্যা ৭.৩০-৭.৪৫ টার সময় আপনি কোথায় ছিলেন স্নিগ্ধ রহমান?
– আমার তখন ক্লাস শেষ হয়েছিলো। আমার ক্লাসগুলো বিকেলে থাকে। সেদিন আমার দুটো পরীক্ষা ছিলো। সব শেষ করে কলেজ থেকে বের হতে হতে আটটা বেজে গিয়েছিলো।
– আপনি তখন কলেজে ছিলেন তারমানে!
– জ্বী!
– কিন্তু টিচারদের ভাষ্য অনুযায়ী আপনার পরীক্ষা তো ৬.৩০টায় শেষ হয়ে গিয়েছিলো? তাহলে এই দেড় ঘন্টা আপনি কি করছিলেন।
– লাইব্রেরি আটটা অবধি খোলা থাকে। আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম।
– আপনি মিথ্যে বলছেন। কারণ রবিবার লাইব্রেরি অফ থাকে। আপনাদের লাইব্রেরি ম্যান ই কথাটা বলেছে। আমি বলছি আপনি কোথায় ছিলেন, আপনি তখন আলতাফের বাসায় ছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে খুন করছিলেন।
– আমি খুন করি নি।
– মিথ্যে কথা, আপনি খুন করেছেন। আপনি তখন ডেলিভারি বয়ের রুপে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। আপনার হাতে তখন সেই রেস্টুরেন্টের পিজ্জার প্যাকেট ছিলো।
– আমার সেদিন ডেলিভারির ডেট ছিলো ই না। আমি সকালেই রেস্টুরেন্টের কাজ করেছিলাম
– আপনি মিথ্যে বলছেন

স্নিগ্ধকে রীতিমতো জোর করে স্বীকার করার জন্য জোড় করতে লাগলেন ইশফাক সাহেব। তখন নুশরাত বাধ্য হয়ে বলে উঠে,
– আই অবজেক্ট ইউর অনার, মাননীয় আদালতের কাছে আমার নিবেদন, আমার মক্কেলকে এভাবে জোড় করে স্বীকার করানোর প্রচেষ্টা বন্ধ করা হোক। আমার উকিল বন্ধুর কাছে কোনো ভ্যালিড প্রমাণ নেই। তাই আমার মক্কেলকে শাস্তি দেবার আগে আমার মক্কেলের দোষটা প্রমাণ হওয়া দরকার। শুধু কিছু স্বর্ণ এবং টাকা চুরি হওয়া কিংবা তার আইডি কার্ড পাওয়া মানেই সে খুনি এইটা আমাদের ভুল ধারণা। মাননীয় আদালতের কাছে আমার নিবেদন আমার মক্কেলের নির্দোষিতা প্রমাণের সুযোগ তাকে দেওয়া হোক।
– অবজেকশন সাসটেইন্ড।
– ধন্যবাদ ইউর অনার।
– মিস নুশরাত চৌধুরী, ইউ মে প্রসিড।
– ধন্যবাদ।

নুশরাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে ইশফাক সাহেবের দিকে। তারপর বলতে থাকে,
– ইউর অনার মাননীয় আদালতের কাছে মিসেস স্নেহা হোসেনকে কাঠগড়ায় ডাকার অনুমতি চাচ্ছি।
– অনুমতি দেওয়া হলো।

স্নেহা কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ায়। আজ স্নেহাকে অন্যরকম লাগছে। এতোটা অসহায় তাকে সেদিন ও লাগে নি। খুব সাদামাটা বেশে সে এসেছে। নুশরাত তাকে দেখে মুচকি হাসি হাসলো। স্নেহার শপথ গ্রহনের পর নুশরাত তাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
– আপনার মতে আপনি ঠিক ৭.৪৫ এ বাসায় এসে পৌছান। তাই তো?
– জ্বী
– আপনি ঠিক কখন বাসায় প্রবেশ করেন?
– তখন ই
– আপনি শিওর তখন ই বাসায় প্রবেশ করেছিলেন?
– হ্যা
– তাহলে আপনি তাকে কেনো হাসপাতালে নেবার চেষ্টা করেন না? আপনি যখন পুলিশকে ফোন করেছিলো তখন রাত ৮.১৫ টা বেজেছিলো। পুলিশ বাসায় পৌছে ৮.৪৫ এ। ৭.৪৫-৮.১৫ টা এই সময়টুকু কি করছিলেন আপনি?
– আ…আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। আলতাফ তখন মৃত। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
– আচ্ছা, ভালো কথা কিন্তু ডা. স্নেহা ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী মি. আলতাফের মৃত্যু ৮-৮.৩০ টার মাঝে হয়েছে। ধরি আমার মক্কেল ৭.৩০টায় উনাকে ছুরি মেরেছিলো। ৬বার ছুরিঘাত করেছে। কিন্তু একটা আঘাত ও হার্টকে টাচ করে নি। আলতাফ সাহেবের মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর জন্য হয়েছিলো। তাহলে বলা যেয়েই পারে ৭.৪৫ টা যখন আপনি বাসায় প্রবেশ করেছিলেন তখন ও তার পালস চলছিলো। তাহলে আপনি কেনো বলেছিলেন আপনি এসে তাকে মৃত পেয়েছেন?

স্নেহা তরতর করে ঘামছে। তার কথা জড়িয়ে আসছে। নুশরাতের মুখে বাঁকা হাসি। এরপর নুশরাত বলে উঠে,
………

চলবে

দৃষ্টির অগোচরে
১৮ তম পর্ব

– আলতাফ সাহেবের মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর জন্য হয়েছিলো। তাহলে বলা যেতেই পারে, ৭.৪৫ টা যখন আপনি বাসায় প্রবেশ করেছিলেন তখন ও তার পালস চলছিলো। তাহলে আপনি কেনো বলেছিলেন আপনি এসে তাকে মৃত পেয়েছেন?

স্নেহা তরতর করে ঘামছে। তার কথা জড়িয়ে আসছে। নুশরাতের মুখে বাঁকা হাসি। এরপর নুশরাত বলে উঠে,
– কারণ আপনি চান ই সে বাঁচুক। আপনি ইচ্ছে করে তাকে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেন। আপনি খুব করে যানতেন তখন ই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আলতাফ সাহেবের বাঁচার চান্স ৫০% ছিলো। আপনি রিস্ক নেন নি। তাই নয় কি স্নেহা ম্যাডাম?
– মিথ্যে কথা, জাজ সাহেব এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। আমি কেনো তাকে মারতে চাইবো?
– আমি তো বলি নি আপনি তাকে মারতে চেয়েছেন। আপনি তাকে বাঁচাতে চান নি! যদি তা না হলো, শুধু তাই নয় আপনি তার খুনের মোটিভ ও লুকাতে চেয়েছেন। আপনি অস্বীকার করবেন যে আপনার কোনো গহনা এবং টাকা চুরি যায় নি! একটা বাচ্চাও এই প্রশ্নটা করবে যে, একটা মানুষ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছে অথচ তার আশে পাশে রক্তের দাগ নেই। এটা কি সন্দেহ জনক নয় স্নেহা ম্যাডাম?

কঠোর কন্ঠে কথাটা বলে নুশরাত। স্নেহা কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। তার কন্ঠ কাঁপছে। তার গতিবিধি অস্থির হয়ে উঠেছে। এবার নুশরাত শান্ত গলায় বলা শুরু করে,
– যদি আপনি কিছুই নাই করেন তাহলে কেনো দারোয়ানকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে বিল্ডিং এর সিসি টিভি ফুটেজ টি গায়েব করে দেন? উত্তর আছে? নেই তো। ইউর অনার আমি বলছি সেই সন্ধ্যায় কি হয়েছিলো, মিসেস স্নেহা হোসেন শপিং করে বাসায় যখন ফিরেছেন তখন দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো পান। তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে স্পেয়ার কি দিয়ে দরজাটা খুলেন। উনি ঘরে প্রবেশ করতেই দেখেন আলতাফ সাহেব ফ্লোরে কাতরাচ্ছেন। দৃশ্যটা দেখে উনি আতকে উঠেন। আরোও আতকে উঠেন যখন আলতাফ সাহেবের ঠিক সামনে শামীম সাহেবকে দেখতে পারেন তিনি। এবার শামীম সাহেবের পরিচয়টা আমি দিতে চাই মাননীয় আদালতকে।

কোর্টে থমথমে পরিবেশ। কারোর মুখে কোনো নেই। স্নেহার মুখে কথা নেই, শুধু চোখের কোনায় পানি জমছে। শেষ রক্ষাটুকু আর হলো না। নুশরাত স্নেহার তাকিয়ে বলে,
– আমার ভুল হলে কারেক্ট করে দিবেন প্লিজ। শামীম সাহেব হলো সেই ব্যাক্তি যিনি আলতাফ সাহেবের জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। কলেজের ছোট ভাই থেকে কোম্পানির এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর এই পথ টুকু শামীম সাহেব আলতাফ সাহেবের সাথেই পাড় করেছেন। কিন্তু সমস্যাটা বেধেছিলো তখন যখন শামীম সাহেবের গার্লফ্রেন্ডকে টাকার প্রভাবে জোর করে আলতাফ সাহেব বিয়ে করেন। শামীম সাহেব তাকে বাঁধা দিতে চাইলেও নিকের চাকরির মায়ায় কাজটা করতে পারেন নি। এই ঘটনাটি টা প্রতিনিয়ত ছাই চাঁপা আগুনের মতো তার হৃদয়কে জ্বালাতো। বিয়ের পর আলতাফ সাহেবের আড়ালে স্নেহা ম্যাডাম এবং শামীম সাহেবের সম্পর্ক আগের মতই চলতে থাকে। কিন্তু পরকীয়া আর যাই হোক না কেনো সমাজের চোখে ঘৃণ্য বলে মানা হয়। এবার আমি স্নেহা ম্যাডাম এবং আলতাফ সাহেবের সম্পর্কটার সম্পর্কটার উপর দৃষ্টিপাত করতে চাই। স্নেহা ম্যাডাম এবং আলতাফ সাহেবের সম্পর্কটা শুধু বিছানাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। আলতাফ সাহেবের মন চাইলে স্নেহাকে কাছে ডেকে নিতেন নয়তো ফেলানো টিস্যু পেপারের মতো ছুড়ে ফেলতেন। শামীম সাহেবের সামনেই বহুত বার স্নেহা অপধ্বস্ত হয়। এই ব্যাপারগুলো আর মেনে নিতে পারেন না শামীম সাহেব। আলতাফ সাহেবের উপর চাঁপা রাগটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সেদিন সন্ধ্যায় ডেলিভারি ম্যানের সাথে আরোও একজন মানুষ আলতাফ সাহেবের বাসায় আসে। এই বিল্ডিং এ ডেলিভারি বয়দের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু তবুও সেই ছেলেটি উপরে যায়। কারণ তার সাথে শামীম সাহেব ছিলেন। আলতাফ সাহেব এবং শামীম সাহেবের প্লান ছিলো দুই বন্ধু আড্ড দিবে, খাবে, ড্রিংক্স করবে। কারণ স্নেহা বাসায় নেই এই সুযোগ হাতছাড়া করার মানেই হয় না। আলতাফ সাহেব ভেবেছিলেন হয়তো তার বন্ধু খাবার ওর্ডার করায় ডেলিভারি বয় এসেছে। কিন্তু তা নয়, সেই ডেলিভারি বয়টি ছিলো শামীম সাহেবের ভাড়া করা কিলার। যতই হোক, ইঞ্জিনিয়ার মানুষ কসাই এর মতো খুন করতে পারেন না। ওই ছেলেটাই ছ বার আঘাত করেছিলো আলতাফ সাহেবের বুকে। যখন স্নেহা ম্যাডাম এই সিচ্যুয়েশনটা দেখেন তখন তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কি করা যায়, কাকে দোষ দেওয়া যায়! তিনি ই শামীম সাহেবকে বাঁচানোর জন্য সব প্রমাণ মুছে ফেলেন। মুচতে মুচতে রক্তও মুচে ফেলেন। যাতে একটা বিন্দুমাত্র কোনো সুতা না থাকে শামীম সাহেবের বিরুদ্ধে। তিনি শামীম সাহেবকে পালাতে সাহায্য করেন। আমার মনে হয় শামীম সাহেবের ভাড়া করা খুনি এর আগেই ভেগে যায়। ছেলেটার ছবিটা রিকোভারি করা যায় নি, ছেলেটা মাস্ক এবং কালো জ্যাকেট পড়া ছিলো। আমার মক্কেলের আইডিকার্ডটা ও সাজানো ছিলো। আমার মক্কেলকে পুলিশ এরেস্ট করেও তার কাছ থেকে কোনো টাকা কিংবা স্বর্ণ পান নি। তখন শামীম সাহেব সেই ছেলেটাকে আবার পাঠান আমার মক্কেলের মেসে। এই স্বর্ণ এবং টাকা রাখার জন্য। আমি এবং ওসি তৌহিদুর রহমান সেখানেই উপস্থিত ছিলাম। ছেলেটা এখনো পলাতক। দ্যাটস অল ইউর অনার। আমার মাননীয় আদালতের কাছে বিনীত নিবেদন, আমার মক্কেলকে সম্মানপূর্বক এই কেস থেকে বরখাস্ত করা হোক। থ্যাংক ইউ।

নুশরাত শামীম সাহেবের স্বীকারোক্তি এবং স্নেহা এবং শামীম সাহেবের সেদিনের কার্যক্রমের প্রমাণ স্বরুপ সিসিটিভি ফুটেজ, পোস্ট মর্টামের রিপোর্ট, স্নিগ্ধের অবস্থান, এবং তাদের সাক্ষ্যগুলো কোর্টে জমা করে। এবার জাজ বললেন,
– সকল সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে কোর্ট এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়েছে যে স্নিগ্ধ রহমান নির্দোষ। সে ঘটাস্থলে ছিলো না। সুতরাং কোর্ট স্নিগ্ধ রহমানকে সসম্মানে এই অভিযোগ থেকে মুক্ত করলো৷ শুধু তাই নয় শামীম রহমানকে আলতাফ হোসেনের হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হলো। এবং স্নেহা হোসেনকে প্রমাণ মিটিয়ে দেবার জন্য এবং মিথ্যে প্রমাণের দ্বারা কোর্টের সাথে জালিয়াতি করার অপরাধে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। The court is adjourned

জাজের ওর্ডারের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নুশরাত। রবিন এবং তৌহিদ কোর্টে উপস্থিত ছিলো। এতোদিন পর নুশরাতকে এতো কনফিডেন্টের সাথে কেস লড়তে দেখলো তারা। মাহিরের মৃত্যুর পর থেকে এই প্রথম নুশরাতের এই রুপ তাদের চোখে পড়েছে। কোর্ট থেকে একে একে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। নুশরাত স্নিগ্ধের কাছে গেলো। হাসি মুখে বললো,
– বলেছিলাম না তোমাকে ঠিক বাঁচিয়ে নিবো
– ধন্যবাদ ম্যাডাম। আমি আপনার ফি কিভাবে দিবো জানি না। তবে সারাটাজীবন আপনার কৃতজ্ঞ থাকবো আমি
– আরে ধূর কি যে বলো! চল আজকে পুরো পেট পুড়ে খাবো। এই কেসের চক্করে আমার খাওয়া দাওয়া লাটে উঠেছিলো। চলো

নুশরাত অনেকটা জোর করেই স্নিগ্ধকে নিয়ে খাবার খাওয়ার কথা বললো। সে জানে এতোদিন ছেলেটার উপর কম ধকল যায় নি। নুশরাত তৌহিদ এবং রবিনকে ও জোর করলো। প্রথমে তৌহিদ রাজি না হলেও নুশরাতের জোর করায় শেষমেষ ঠিক ই রাজি হয়ে যায়।

নুশরাতরা সেই রেস্টুরেন্টে যায় যেখানে স্নিগ্ধ সে রাতে খেয়েছিলো। রেস্টুরেন্টটি খুব সুন্দর। বেশ পরিপাটি করে সাজানো। একটি দেয়ালে সব কাস্টোমারদের ছবি আটকানো। খাবারও বেশ ভালো। খাবার খাওয়া শেষে তৌহিদ হাত ধোবার জন্য উঠে। ওয়াশরুমে যাবার সময়ই পা আটকে যায় তার। পাশে খেয়াল করে তাকালে তার চোখে পড়ে…..

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here