তোর_মনের_অরণ্যে,২৮,২৯

তোর_মনের_অরণ্যে,২৮,২৯
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৮.
আরহান সোহা কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আজ দুইজনের চোখের পানি বাধ মানছে না। সোহার হাতে ধরা আছে এখনও সেই ছবিটা। আরহান যেনো আজ তার হারিয়ে যাওয়া কোনো মহা মূল্যবান জিনিষ খুঁজে পেয়ে গেছে সেই রকম অবস্থা। তখন আরহান সোহার মুখে থেকে “মাম” শব্দটা শুনেই আরহান থমকে গেছিলো । সোহার আর তার কাছে থাকা ছবিটার মধ্যে যে কোনও কানেকশন আছে সেটা আগে বুঝে গেছিলো আর সোহার মুখে থেকে মাম শুনেই আরহানের ভিতরটা ধক করে উঠেছিলো। মাম এই শব্দের সাথে ভীষণ ভাবে পরিচিত ছিলো। আর আজ সেই শব্দ টা কানে আসতে আরহানের মনে থাকা সব সন্দেহ উড়ে গেছে তার আর বুঝতে বাকি নেই সোহাকে কেনো তার খুব নিজের মনে হতো কেনো তার আত্মার সাথে মিল পেতো। এতদিন পর এসে আরহান তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। তবে তার পর দুজনের মুখে কোনো কথা বের হয়নি। আরহান সোহাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে নিয়েছিলো তারপরই দুজন নিঃশব্দে কান্না শুরু করে। আরহান এটাও বুঝে যায় যে সোহা আগের থেকেই তাকে হয়তো চিনতো বা হয়তো তার ব্যাপারে জানতো।

-“সোহা এইসব কি ভাবে? আই মিন করে সম্ভব হলো? আরহান সোহার মুখ টা তার দুহাতের মধ্যে তুলে ধরে বলে ওঠে।

-” সব কিছুই জানতে পারবে খুব তাড়াতাড়ি ভাইয়া।শুধু এখনও সঠিক সময় আসেনি। সোহা কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে।

-” কেনো এমন হলো বলতো আমাদের সাথে? এমনটা না হলেও পারতো। আজ প্রায় কুড়ি বছর পর তোকে পেলাম আমি। আরহান মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-“তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে ভাইয়া । এখন সময় আসেনি কিছু বলার। তবে সেটার বেশি বাকি ও নেই। সোহা সোজা হয়ে বসে বলে ওঠে।

-” হুম আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সব কিছু জানার জন্য। আরহান বলে ওঠে।

আরহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর সোহা আরহানের এক হাত জড়িয়ে বসে আছে। আজ সোহাও আরহানের মত খুশি আর দুটো কেউ নেই মনে হয়। তাদের গাড়ি চৌধুরী ম্যানসনের সামনে আসতেই সোহা সোজা হয়ে বসে আরহানের দিকে তাকায়।

-“এখন থেকেই নিজের মন কে শক্ত করতে শুরু করো। সামনে এমন অনেক কিছুই ঘটবে যার জন্য তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বলেই সোহা গাড়ি থেকে নেমে যায়।

আরহান গাড়িতে বসে থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহার যাওয়ার দিকে। তার মনে থেকে সোহাকে সেই প্রশ্নটা ক্লিয়ার হয়ে গেলেও এর সাথে সাথে আরো অনেক প্রশ্ন তার মাথায় এসে চেপে বসেছে। যার প্রশ্ন একমাত্র দিতে পারবে সোহা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসি মুখে গাড়ি স্টার্ট দিয়েই বেরিয়ে যায় আরহান।

————

সোহা নিজের রুমে ঢুকতে না ঢুকতে দেখতে পায় আমন তার রুমের মধ্যে পায়চারি করছে মুখে ফুটে আছে চিন্তার ছাপ। সোহা রুমে আসতেই আমন সোহার দিকে এগিয়ে এসে একটানে সোহাকে নিজের বুকের উপর ফেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। প্রথমেই সোহা আমনের এমন কাজে হকচকিয়ে গেলেও বুঝতে পারে আমন তাকে নিয়ে আজকের ঘটনার জন্য চিন্তিত হয়ে ছিল ভাবতেই তার মুখে হালকা হাসি ফুটে ওঠে। না সে এই ছেলে কে দিয়ে বড্ড পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছে এতটাও বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না তার এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তোর মনে হয়। সোহা তার মনে ভেবে হালকা হেসে আমনের পিঠে হাত রাখে। সাথে আরো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে নেয় আমন। মনে হচ্ছে একেবারে তার নিজের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেবে।

-“এই তুমি ঠিক আছোতো? তোমার কিছু হয়নিতো? কেনো আজ একা একা গেলে আমাকেও বলতে পারতে আমিও তোমার সাথে যেতাম। আমন একসাথে প্রশ্ন করে ওঠে।

আমনের প্রশ্ন শুনে সোহা হেসে ওঠে। আমনের কথা গুলো তার মনে প্রশান্তি বইয়ে দিচ্ছে। আজ এমনিতেও সে খুব খুশি আর তার উপর তার জন্য আমনের এমন চিন্তিত ভাব তাকে নিয়ে করা পাগলামি সব কিছুই তাকে আরো বেশি বেশি করে মনের শান্তির জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে।

-“আমি একদম ঠিক আছি মিস্টার চৌধুরী। সোহা আমনকে আশ্বস্ত করতে বলে ওঠে।

-” বললেই হলো ঠিক আছো। তুমি নাকি রোডের উপর পড়ে গেছিলে। তুমি এমন কেনো? সব দিকেই খেয়াল আছে শুধুমাত্র নিজের দিকে নেই কেনো শুনি? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি হতো বলো তো? আমন উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা দেখুন আমি একদম ঠিক আছি।

-“তোমার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া আছে আর তারপরেও বলছ তোমার কিছু হয়নি।

-“আরে এটাতো সামান্য চোট মাত্র। আর আপনি তো জানেন আমাদের এইসব কিছু হয়না আমরা অভ্যস্ত এইসবে।

-” আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তাহলে…

আমনকে পুরোটা বলতে না দিয়েই সোহা বলে ওঠে।
-” কিছুই হতো না। ভাইয়া ছিল সেই আমাকে আজকে সেভ করে নিয়েছে।

সোহার কথা শুনে আমন তার বুকের থেকে সোহার মাথাটা তুলে ধরে নিজের সামনে। সোহার মুখের দিকে দেখে নিয়ে সোহার চোখে চোখ রাখে।

-” কে ভাইয়া? কোন ভাইয়া তোমাকে সেভ করেছে? কোন ভাইয়ার কথা বলছো তুমি?

-” আন্নি ভাইয়া ।

-“আন্নি মানে আরহান? ও তোমাকে সেভ করেছে?

-” হ্যাঁ ।

-“আচ্ছা তুমি আরহানের নাম আন্নি সেটা জানলে কি করে? ওহ সেদিন সকালেই মম ওকে ওই নামেই ডেকেছিল তখনতো তুমি ওখানেই ছিলে তাইনা। আমিও কেমন ভুলে গেছি দেখো। আমন হেসে বলে ওঠে ।

সোহা আমনের কথা গুলো শুনে চুপচাপ আমনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমন কত সহজেই বলে দিলো কিন্তু সেতো এই নাম আগের থেকেই জানে বলতে গেলে ছোটো থেকেই জানতো এই নাম টাকে। কিন্তু নামের মালিক কে চিনত না কিন্তু এখন সে নাম আর নামের মালিক দুজনকেই চেনে। তার জীবনে যে অনেক না বলা কথা রয়ে গেছে। যে গুলো কেউ জানে না এমনকি আমনও না। আর সে কোনো মিথ্যা দিয়ে কোনো সম্পর্কের শুরু করতে চায়না। সোহা এটাও জানে আগের দিন রাতে তাকে রুমে নামাজরত অবস্থায় আমন দেখে নিয়েছিল কিন্তু এই নিয়ে তাকে কোনো প্রশ্ন ও করেনি। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর গুলো তো আমনের জানার দরকার আছে কোনো সম্পর্ক মিথ্যে ভিত্তি দিয়ে শুরু করা যায় না। আর যাইহোক মিথ্যে দিয়ে শুরু করা সম্পর্ক বেশি দিন টিকে না একদিন না একদিন সব কিছুই সামনে আসবে। তাই সে কিছুতেই এমন করতে চায়না।

আমন সোহাকে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে। কেমন ঘোর লাগা চোখে দেখছে তাকে।

-“কি ব্যাপার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আমার? উম পড়তেই পারো পা স্লিপ কেটে আমার প্রেমে। ছেলেটাতো খারাপ না তাইনা। দেখতে শুনতে বেশ হ্যান্ডসামও আছে। আমন দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।

আমনের কথা শুনে সোহার ঘোর কেটে যায়। সোহা ভ্রু কুঁচকে আমনের দিকে তাকায় দেখে কেমন ফিচেল হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে ।

-“কি বললে নাতো? আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলে বুঝি? হুম খেতেই পারো। আমি তোমাকে তুলব না যতো ইচ্ছা হাবুডুবু খাও আমিতো তোমারই তাইনা তাই যা ইচ্ছে করতে পারো। আমন বলে উঠে এক চোখ টিপে ঠোঁট কামড়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহা আমনের বলা” আমিতো তোমারই “বলা কথাটা শুনে তার বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে কেমন একটা অনুভূতি বয়ে যায় তার মধ্যে। তবুও নিজেকে সামলে নেয়।

-“হয়ে গেছে আপনার? নাকি আরো কিছু বাকি আছে? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

আমন একবার সোহাকে ভালো করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নেয়। আমনের চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। ঠোঁট কামড়ে রেখে সোহার চোখে চোখ রাখে।

-” বাকি তো অনেক কিছু আছে? আমি বললেই কি হয়ে যাবে নাকি?

-” এই আপনি এখন যান তো এখান থেকে। অসভ্য কোথাকার। সোহা মৃদু ধমক দিয়ে বলে ওঠে।

আমন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোহাকে কাছে টেনে নিয়ে তার কপালে কেটে যাওয়া অংশে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমনের যাওয়ার দিকে সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কপালে কেটে যাওয়া জায়গায় আমনের ঠোঁটের স্পর্শের উপর নিজের হাত রেখে আমনের স্পর্শ কে অনুভব করতে থাকে। না সে একেবারেই নিশ্চিত এই ছেলে তাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে। আর তাকে ঘোরাবে না এবার তার মনের কথা বলে দেবে তার মন কে। মনে মনে ভেবে নেয় সোহা।

————

আমন ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূরে ওই আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হালকা মৃদু হাওয়া দিচ্ছে চারিদিকে আলো আধারি পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। সারাদিনের মাঝে মাঝে হওয়া বৃষ্টির আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়ে এখন আকাশের ঝকঝকে চাঁদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। সোহার জন্য এখানে অপেক্ষা করছে সে। ম্যাডাম তাকে ছাদে আসতে বলে কোথায় যে হারিয়ে গেছে বুঝতেই পারে না। তাই একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ এর মোহনীয় রূপ উপভোগ করছে।

-“খুব সুন্দর পরিবেশ তাইনা।

পাশে কারোর উপস্থিতি পেয়ে আমন মাথা ঘুরিয়ে দেখে সোহা এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সে এতই প্রকৃতি উপভোগ করতে ব্যস্ত ছিল যে সোহা কখন এসেছে বুঝতেই পারিনি।

-“হুম অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য। একদম মোহনীয়।

সোহা আমনের ঘোর লাগা কন্ঠ শুনে পাশে তাকাতেই দেখে আমন তার দিকে তাকিয়ে আছে।

-” আমার আপনাকে কিছু বলার আছে আমন। আমার মনে হয় কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে সবটা জেনে বুঝে নেওয়া উচিত। সোহা বলে ওঠে।

আমন সোহার মুখে এই প্রথমবারের মতো নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে তারপরে আবারো চমকে যায় সোহার পরের কথা গুলো শুনে।

-” আমি চাইনা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো মিথ্যে থাকুক। আপনি আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানেন না বলতে গেলেই কিছুই জানেন আমার সম্পর্কে। তাই আমার মনে হয় আগেই আপনার আমার ব্যাপারে সব কিছু জেনে নেওয়া উচিত তারপরেই আগে যাওয়া। সোহা বলে ওঠে।

এদিকে আমন সোহার কথা শেষ হতে না হতেই সোহার কোমরে হাত রেখে একটানে নিজের বুকের উপর ফেলে। মুখের উপরে ছড়িয়ে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ঘোর লাগা চোখে সোহার দিকে তাকায়।

-“আমার তোমার ব্যাপার নিয়ে যতোটুকু জানার
সেটা আমি জানি এর থেকে বেশি আমার কিছু জানার দরকার নেই আগেও তোমাকে বলেছি আর আবারো বলছি তোমার ব্যাপারে বাকি কথা আমার জানার দরকার নেই। এতে আমার ভালোবাসা এক পরিমাণ ও কমবে না আর। তাই তোমার বাহ্যিক কোনো কিছুর উপরে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এক দৃষ্টিতে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“তবে হ্যাঁ তুমি যদি তোমার দিকে থেকে ক্লিয়ার থাকার জন্য বা আমার কাছে তোমার কথা গুলো শেয়ার করার জন্য বলতে চাও বলতে পারো আমি শুনবো। আমন হেসে বলে ওঠে ।

সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমনের দিকে। আমনের কথা গুলো তাকে এত বেশি প্রশান্তি দেয় যা প্রকাশ করার বাইরে। এই ছেলে কেনো তাকে এত ভালোবাসে সেটা বোঝে না সোহা। তবে হ্যাঁ সে নিজেও এই পাগল ছেলের পাগলামিতে প্রেমে পড়েছে। ভালোবাসে সে এই ছেলে কে।

চলবে….. ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৯.
-“আপনি যদি কখনো জানতে পারেন আমি অন্য কেউ তখন কি করবেন? সোহা দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠে।

আমন সোহার কথাটা শুনেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় সোহার দিকে ।

-” আমি যে হিন্দু পরিবারে থেকেও হিন্দু নই মুসলিম সেটা বোধহয় আপনি জানেন তাইনা? সোহা সেই একইরকম ভাবে বলে ওঠে।

সোহার এই কথা শুনে আমন খানিকটা থমকে যায়। সোহা কিভাবে বুঝতে পারলো? এটাই ভাবছে আমন।

-” আগের দিন আপনি আমাকে রুমের মধ্যে নামাজ পড়তে দেখেছেন তাহলে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না যে? সোহা এবার সরাসরি আমনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

আমনের মনে থাকা সন্দেহ এবার দৃঢ় রূপ নিয়েছে সোহা যে বুঝতে পেরে গেছে সে তাকে নামাজ পড়তে দেখেছে। আমন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে।

-“তোমাকে নামাজ পড়তে দেখে আমি চমকে গেছিলাম ঠিকই। একটু বিচলিত হয়েছিলাম তোমাকে নামাজ পড়তে দেখে কিন্তু এটা নিয়ে আমার মনে তোমাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। আমি ভেবেছি যে তুমি কখনো হয়তো তোমার ধর্ম চেঞ্জ করে নিয়েছ। আর তাছাড়াও তুমি কোন ধর্মের সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। এটা আমি আগেও বলেছি আজও বললাম। আমন দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে সোহার চোখে চোখ রেখে।

-“আর যদি এখন এটা জানতে পারেন যে আমি জন্ম থেকেই মুসলিম বা আরো ভালো এটা বলা আমি বংশ পরম্পরা মুসলিম? সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আমন একটু থমকে যায়। আজ প্রথম থেকেই সোহাকে অন্য রকম লাগছে কি হয়েছে। কিন্তু নিজের মনের ভাব বাইরে একদম পড়তে দিচ্ছে না নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।

-“তুমি আমার কাছে তুমি সোহা। ব্যস এর আগে পিছে কি আছে না আছে এটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। হ্যাঁ এটা বলতে পারো যদি তোমার লাইফে অন্য কেউ থাকতো তাহলে হয়তো আমি থাকতাম না কারণ তৃতীয় ব্যাক্তি হিসাবে আমি কখনই ঝামেলা ক্রিয়েট করতে যেতাম না। আর যদি তোমার বিয়েও হয়ে যেতো একটা বা ডিভোর্সী হতে তাহলেও আমার কোনো অসুবিধা ছিল না। কারণ আমার কাছে ইম্পোর্টেন্ট। আমন দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে।

সোহা চুপ করে আমনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই ছেলের প্রতি কথায় সে ভীষণ ভাবে আহত হয়। প্রত্যেকটা কথা তার মন ছুয়ে যায়। তাকে এত কেনো মুগ্ধ করে সোহা বুঝতে পারেনা।

-“আপনি আমার ব্যাপারে কিছু জানতে না চাইলেও আমি বলতে চাই। আমি চাইনা কোনো সম্পর্কে যাওয়ার আগে আমার ব্যাপারে কোনও অজানা তথ্য থাক আমি….

এটুকু বলতেই আমন সোহাকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কষে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। আমনের এমন কাজে সোহা হকচকিয়ে যায়। হটাৎ করে আমনের এমন ব্যবহার চমকে দেয় সোহা বুঝতে পারেনা এমন করার কারণ। আমন সোহার মুখটা তার দুহাতের মধ্যে তুলে ধরে সোহার কপালে ওষ্ঠ ছুইয়ে দেয় গভীর ভাবে। আমনের এমন গভীর স্পর্শে সোহা চোখ বন্ধ করে নেয়।

-“তুমি তুমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছো তুমি তুমি আমার হতে রাজি আছো। আমি ভাবতে পারছি না শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে পেলাম। আমন উৎসাহে বলে উঠে আবারো সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

সোহা আমনের উৎসাহ দেখে কেমন পাগলামিতে মেতে উঠেছে শুধুমাত্র তার এই কথাটাই এত খুশি হয়ে গেছে আর সে যদি এখন বলে তাকে ভালোবাসে তাহলে তো মনে হয় এখনই সাইলেন্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে এই ছেলের। সে কি বলতে যাচ্ছিলো আর এই ছেলে তার একটা কথা শুনেই লাফাতে শুরু করেছে তাকে বলতেই দিলো না কথা গুলো। তবে আমন যে তার কথা শুনতে এমনিতেও ইচ্ছুক নয় সেটা বুঝতে পারছে। শুধু সে বলতে চাইছিল বলেই শুনতে চাইছিল। আর এখন তো মনেই হয়না এই খুশির মুহূর্ত ছেড়ে আর কোনো কথা শুনতে পাবে বলে। আর সোহাও চাইছেনা এই মুহূর্তে তার কথা গুলো শুনিয়ে একটা থমথমে পরিবেশ তৈরী করতে সে আমনের এই খুশিটাকে নষ্ট করতে চায়না। তাই সোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের হাত টাও আমনের পিঠের উপর রাখে সাথে সাথে আমন আর শক্ত করে জড়িয়ে নেয় সোহাকে।

কতক্ষণ তাঁরা এই ভাবে একে অপরের সাথে জড়িয়ে ছিল জানে না তাদের সময়ের কোনো জ্ঞান ছিলোনা। তারা দুজন একে অপরের সাথে মিশে থেকে একে অপরকে অনুভব করতে ব্যস্ত ছিল। আজ যেনো তাদের দুজনের বাঁধ ভেঙে গেছে সাথে মনের ঘরের তালা বন্ধ হয়ে থাকা অনুভূতি গুলো ডানা মেলে দিয়েছে। চারিদিকে জ্যোৎস্না রাত চাঁদের আলোয় চারিদিকে ছাড়িয়ে আছে। মৃদু হাওয়া বইছে সাথে গার্ডেন সাইটের আলোর ছিটে চারদিকে আলোকিত করে রেখেছে। এমন মোহনীয় পরিবেশে তারা দুজন ও নিজেদের মধ্যে মোহিত হয়ে আছে। আজ যেনো আর কোনো বাধা মানতে চাইছেননা এত প্রতীক্ষার পর তারা এক হয়েছে। বিশেষ করে আমনের সেতো সোহার ভালোবাসার সাগরে দিনরাত ডুবে ছিল দিনে রাতে জেগে স্বপ্নে সব সময়ে সে সোহাকে নিজের সামনে কল্পনা করতো। আজ শেষ পর্যন্ত তার প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে সোহাকে। সে নিজের করে পেয়েছে সে আগেই সোহার মনের কথা বুঝতে পেরেছিল আর আজকে সোহার ওই টুকু কথায় তার জন্য যথেষ্ঠ ছিল তার আর কিছু জানার নেই।

কতক্ষণ এই ভাবে সময় কেটে গেছে জানা নেই তবে তাদের সুন্দর মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটে যায় ফোনের শব্দে। সশব্দে ফোনের রিং বেজে ওঠে। এতেও তাদের যেনো ঘোর কাটে না। একবার কেটে গিয়ে আবারো বাজতে থাকে। সোহা ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে ফোনের শব্দে তার পকেটে থাকা বাজছে। এদিকে সোহা ধ্যানে ফিরলেও আমন এখনও একই ভাবে কষে জড়িয়ে রেখেছে সোহাকে। সোহা নিজেকে আমনের থেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারেনা। শেষে আমন কে ধাক্কা দিতে শুরু করে।

-“উম প্লিজ এত নড়োনা তো একটু চুপ করে আমার বুকের মাঝে থাকো আমার বুকটা কে একটু শান্তি দাও এতদিন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছ। আমন ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে।

-” আরে ছাড়ুনতো আমায় ফোন বাজছে। সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে ওঠে।

-“বাজুক ফোন বেজে বেজে কেটে যাক। চার্জ শেষ হয়ে ফোন সুইসাইড করে নিক তবুও এই ভাবে থাকো ধানী লঙ্কা। আমন বলে ওঠে ।

সোহা বুঝতে পারে এইভাবে কাজ হবে না। আমন এখন অন্য জগতে বিচরণ করছে। তাই সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে অন্য টেকনিক ইউজ করে।

-” মন। সোহা মোহনীয় কন্ঠে ডেকে ওঠে।

ব্যস এটুকুই ছিল আমন কে কাবু করার জন্য। আমন সোহার মুখে এই ডাক শুনে চমকে ওঠে। সাথে সাথে তার হাত আলগা হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সোহার মুখের দিকে। আর এই সুযোগে সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আমনের থেকে। আর হটাৎ করে আমন সোহাকে তার থেকে এই ভাবে দূরে সরে যেতেই ভ্রু কুঁচকে নেয় । সোহা এক পলক আমনকে দেখে নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে। ততক্ষণে ফোন কেটে গেছে আকাশ কল করেছিলো এটা দেখেই সোহা সাথে সাথে রিং ব্যাক করে। আর এদিকে আমন এখনও গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে । প্রথমত আজকে সে এতগুলো ঝটকা একসাথে খেয়েছে যে ঘোর কেটে বেরোতে পারছে না প্রথমে সোহার তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়া। আর এখন তাকে মন বলে ডাকা সবটাই তাকে মোহিত করে তুলছে। তবে সোহাকে তার থেকে দূরে যেতে দেখে তার ভালো লাগেনি। আরে বাবা সবেতো তার কাছে ধরা দিয়েছিলো আর আবারো দূরে গেলো তার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ফোন টাকে আর যে ফোন করেছে তাকেই তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে। আর সোহাযে তার সাথে ছল করেছে সেটাও ধরতে পারে। তার থেকে ছাড়া পেতেই তার নাম ধরে ডেকেছে তার দুর্বলতার কাজে লাগিয়ে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। সোহা কথা বলে ফোন রাখতেই দেখে আমন এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে সেই একইভাবে।

-“এটা কি হলো? আমন নারাজ হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” কি হলো কিছুই হলোনা শুধু একটু টেকনিক ইউজ করলাম। নিঞ্জা টেকনিক বুঝতে পারলেন। সোহা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-“এটা কিন্তু ঠিক হলোনা একদম। আমন চোখ মুখ বাচ্চাদের মত করে বলে ওঠে।

-” এটাই ঠিক হয়েছে। এখন চলুন কাজ আছে। বলেই সোহা হাঁটা দেয়।

-” আমিও দেখে নেবো তোমাকে ধানী লঙ্কা। এই আমনের হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই। আমন বলে ওঠে ।

-” সেটা আমিও জানি। তাই বেশি কথা না বলে আসুন। আর নাহলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যান। সোহা না ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে ওঠে।

আমন সোহার কথা শুনে হেসে ফেলে এই মেয়ের তেজ যাবে না। নিজের মনে বলে দৌড় দেয় নিচের দিকে।

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here