তোর_মনের_অরণ্যে,৩০,৩১

তোর_মনের_অরণ্যে,৩০,৩১
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩০.
সোহা আমন রাতের আঁধারে এসে পৌঁছায় সোহার বাংলোতে। বাইক পার্কিং করে মাথায় থেকে হেলমেট খোলার পর সোহা বুঝতে পারে পিছন থেকে আমন এখনও তাকে জড়িয়ে রেখেছে। তার তাকে ছাড়ার বা নামার কোনো নাম গন্ধ নয়। আমনের এমন কাজে সোহার ভ্রু কুঁচকে যায় । সোহা নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারেনা।

-“এনার্জি শেষ? আমন র্তীযক ভাবে বলে ওঠে।

-” বেশি কথা না বলে এখন নমুন। সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে ধানী লঙ্কা এত হাইপার হচ্ছো কেনো। আমার সুখ তোমার একটু ও সহ্য হয়না বুঝতে পারছি। বলেই আমন নেমে যায়।

এদিকে সোহা আমনের কথা শুনে মুচকি হাসে তবে সেটা আমনের চোখের আড়ালে। আমন তার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মুখটা কে লটকিয়ে রেখেছে। সোহা হেসে নিয়ে আমনকে ইশারা করে বাড়ির ভিতর চলে যায়।
রুমের মধ্যে যেতেই দেখে সানি অ্যাস আর আকাশ নীহার চেয়ার নিয়ে একটু ছেড়ে ছেড়ে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করছে যদি ও গল্প করছে বলা ভুল নিজেদের মধ্যে প্রেমালাপ করছে 0সব সময়ে তাদের কে অন ডিউটি থাকতে হয় তাই তারা এই ভাবেই তাদের প্রেম পর্ব সেরে নেয়। । আর তাদের থেকে কিছু দূরেই হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে সকালের সেই লোকটিকে।
সোহাকে রুমে ঢুকতে আকাশ সানি অ্যাস নীহার নিজেদের গল্প ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
আমন রুমে এসে ওদের চার জনের দিকে কটমট করে তাকায়। কিন্তু তারা আমনের এমন তাকানোর মানে বুঝতে পারেনা তবে সোহার বিষয়টা চোখে পড়তে মিট মিট করে হাসে। সোহা একপলক সবাইকে দেখে নিয়ে লোকটির সামনে গিয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে। লোকটি সেন্সলেস হয়ে আছে। আকাশ এগিয়ে গিয়ে পানি মারতে লোকটি হুড়মুড় করে চোখ খুলে তাকায়। সামনে তাকাতে দেখে সকালের সেই মেয়েটা বসে আছে যেই তাকে গুলি করেছিলো।

-“কি ঘুম ভাঙলো তবে? সোহা সোজা হয়ে বসে মাথায় গান রাব করতে করতে বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে লোকটি ঢোক গিলতে শুরু করে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে।

-” তোদের বস কে? ওই গোডাউনের মালিক কে? সোহা শান্ত শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

-“আআ আমি জানি না।

-” তাহলে ওখানে কার হয়ে কাজ করতি? বস কে না জেনে শুনেই কাজ হতো? সোহা কঠিন তীক্ষ্ণ আওয়াজ তুলে বলে ওঠে।

-” আআমি আআমি।

সপাটে গালে একটা থাপ্পড় পড়ে গালের উপরে। ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে তাকায় লোকটি সোহার দিকে।

-” ভালোই ভালোই মুখ খুলবি নাকি আমাকে অন্য পথ অবলম্বন করতে হয়ে। হাতে থাকা গান টা নিয়ে লোকটির মুখে বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে।

-“বলছি বলছি ।

সোহা একবার ওদের বাকিদের দেখে নিয়ে আবারো সোহা লোকটির মুখের দিকে তাকায়।

-“আমরা টিম হিসাবে কাজ করি আমাদের কাজ শুধু মাল সাপ্লাই করা। আমাদের একটা পুরো র‌্যাকেট কাজ করে। কয়েকদিন আগেই আমাদের বস এর সাথে থাকা আরও একজন বস মানে আমাদের দ্বিতীয় বস ধরা পড়ে গেছিলো কিন্তু তার পর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই কিছুদিন আমাদের কাজ বন্ধ ছিলো। আমরা তখন গা ঢাকা দিয়েছিলাম। এখন আবারও কাজ শুরু হয়েছে…

-“ভাই আবারো দ্বিতীয় বস? আকাশ কথার মাঝে বলে ওঠে।

আকাশের কথায় সবাই ওর দিকে ফিরে তাকায়। সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই আকাশ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে যায়। সোহা আবারো ঘুরে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলতে ইশারা করতে আবারো কথা বলতে শুরু করে।

-” দ্বিতীয় বস কে পাওয়া না যেতে আমাদের অনেক লস হয়েছিলো শুধু তাইনা অনেক অনেক ডিল ও হাত ছাড়া হয়ে গেছিলো । এর জন্য আমাদের বস খুব রেগে ছিলেন দ্বিতীয় বস কে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে ছিল কারণ রিসেন্ট ডিল এর সমস্ত পেপার ওনার কাছেই ছিল। কিন্তু পরে খবর আসে তাকে কেউ মেরে গুম করে দিয়েছে শুধু তাই নয় বস এর ছেলেদের ও খুঁজে পাওয়া যায়নি আর।

এই কথা শুনতেই সোহার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে এবার বাকিদের দিকে তাকায় তাদের ও মুখ ভঙ্গি একই রকম।

-“দ্বিতীয় বস এর নাম জানিস চিনিস তাকে? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ দেখেছি একবার।

সোহা নিজের পকেটে থেকে ফোন বের করে জলদি কিছু কাজ করতে থাকে তারপর ফোনটা ঘুরিয়ে লোকটার সামনে ধরে। আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লোকটির মুখের দিকে দেখতে থাকে। হ্যাঁ লোকটি ফোনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তে থাকে।

-” হ্যাঁ হ্যাঁ এই আমাদের দ্বিতীয় বস ছিলেন।

সোহা এবার বাঁকা হাসে। সে বাকিদের দিকেও নিজের ফোন ঘুরিয়ে দেয়। বাকিরা প্রথমে একটু চমকে গেলেও তাদের মুখে হাসি ফোটে। কারণ এটা আর কেউ ছিলোনা রাঘব রাঠোর ছিল তবে বস রূপে।

-” আর তোদের বস এর নাম কি? সোহা জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“আমাদের বস একজন নয় দুই জন একজন ম্যাডাম আর একজন স্যার আছেন।

সোহার মুখ জুড়ে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। আমন এতক্ষণ চুপ করে সবটা দেখছিল কিন্তু এখন সোহার হাসি দেখেই তার ভ্রু কুঁচকে আসে।

-“নাম কি তাদের? দেখেছিস কখনো?

-“হ্যাঁ স্যার কে চিনি দেখেছি। কিন্তু ম্যাডাম কখনো সম্মুখে আসেনি সব সময়ে তার মুখ ঢাকা ছিল। তবে আমার মনে স্যার ম্যাডাম হাজবেন্ট ওয়াইফ। তাদের দেখে আমার এটাই মনে হয়েছে। ম্যাডাম স্যার কে বেশির ভাগ “ইম”বলে ডাকতেন। এছাড়া স্যার এর নাম জানা নেই। আর ম্যাডাম কে আমরা এস এম হিসাবে চিনি।

নাম দুটো শুনতেই প্রথম ভ্রু কুঁচকে আসে আমনের সে নিজের মনে নাম দুটো বারবার আওড়িয়ে নেয় । তারপর হুট করেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে সোহা সোজা বসে লোকটির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। আকাশ সানি নীহার অ্যাস তারাও ভ্রু কুঁচকে আছে। সোহা কিছুক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়িয়ে যায়।

-“একে বেঁধে রাখ। বলে সোহা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

সোহা রুম থেকে বেরিয়ে দেখে কিছুটা দূরে আমন ফোনে কিছু একটা করছে খুব গভীর মনোযোগ দিয়েই। আমন কখন বাইরে চলে এসেছে সোহা খেয়াল করিনি। তবে ফোনে অফিসের কিছু কাজ করছে ভেবে আর মাথা ঘামায় না সোহা। আমনের দিকে এগিয়ে যায়।

-“চলো যাওয়া যাক এবার। সোহা বলে ওঠে।

-” হু । হ্যাঁ চলো। আমন কিছুটা চমকে গিয়ে বলে ওঠে।

সোহা যদিও বেশি কিছু খেয়াল করেনা। দুইজন একসাথে বেরিয়ে আসে পার্কিং এর কাছে আসতেই হুট করে সোহা গিয়েই আগের থেকে বাইকের পিছনে গিয়ে বসে যায় । আমন ভ্রু কুঁচকে তাকাতে সোহা বাঁকা হেসে বাইকের চাবি নিয়ে ছুড়ে দেয় আমনের দিকে ইশারায় বোঝায় তাকে বাইক ড্রাইভ করার জন্য। আমন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই এগিয়ে যায়। বাইকে বসে স্টার্ট দিতেই সোহা পিছন থেকে আমনকে জড়িয়ে ধরে। ঠিক যেমন আমন সোহার পিছনে বসে নিজের সাথে জড়িয়ে নিতো। সোহার কাজ দেখে আমন মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে সোহার তাকে জড়িয়ে ধরা হাতের উপর হাত রাখে আর এক হাত দিয়েই বাইক চালাতে শুরু করে। আগে পিছনে বসে এই মুহূর্ত টা কে আমন উপভোগ করতো আর আজ সোহা উপভোগ করছে। আমন মাঝে মাঝে একবার করে মিররে সোহার মুখ দেখে। যদি রাতের অন্ধকারে তেমন একটা বোঝা যাচ্ছে না তবুও মনের শান্তি।

আমন সোহা নিজের মত করে সময় টাকে উপভোগ করছিলো তাদের মধ্যে কোনো কথা নেই কিন্তু মনের অনুভূতি তারা একে অপরকে ব্যক্ত করে চলছিলো একে অপরের সাথে এই ভাবে থেকে। আমনের আয়নায় চোখ পড়তে তার ভ্রু কুঁচকে যায়। পিছন থেকে একটা বাইক তাদের দিকে তেড়ে আসছে পিছনের ব্যাক্তির হাতে ধারালো ছুরি আছে যেটা সোহার দিকে তাক করে রেখেছে। আমন দ্রুত বাইক সাইড করতে ছুরিটা সোহার হাতের উপর থেকে হালকা ভাবে আঘাত লেগে চলে যায়। না হলে এতক্ষণে সোহাকেই বিশ্রী ভাবে আঘাত করে দিত এটা ভাবতেই আমন এর চোখ মুখ কঠিন থেকে কঠিন রূপ নেয়। হটাৎ এমন আক্রমণে সোহা চমকে গেছে বাহুর আঘাতের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে। ওদিকে ততক্ষণে সামনে থেকে আরো একটা বাইক তাদের দিকে আবারো ছুটে আসে। আমন এক হাত পিছন বাড়িয়ে সোহাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বাইক সোজা রেখে এগিয়ে যায় সামনের বাইক একদম কাছে আঘাত করতে নিতেই আমন এক পা দিয়ে লাথি মারে সাথে সাথে বাইক ছিটকে পড়ে যায়। আমন কিছুটা সামনে গিয়েই বাইক স্ট্যান্ড করায়। রাস্তায় পড়া লোক গুলো কে একবার দেখে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে সোহাকে সামনে এনে হাতের ক্ষত দেখতে থাকে। সোহা শুধু আমনের প্রতিক্রিয়া দেখে যাচ্ছে হঠাৎ করেই এমন শান্ত সৃষ্ট ছেলে কেমন কঠিন রূপ ধারণ করেছে। সোহার অন্য দিকে কোনো ধ্যান নেই সে শুধু এক ভাবে আমনকে দেখে যাচ্ছে। আমন সোহার হাত দেখছে ক্ষত থেকে রক্ত পড়ছে। আমন পকেট থেকে রুমাল বের করে সোহার হাতে বেঁধে দেয়। ততক্ষণে ওদের চারদিকে থেকে ঘিরে নিয়েছে। সোহা শুধু চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নেয়। তবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আমন সোহার হাতের ক্ষতের উপর রুমাল বেঁধে দিয়ে এবার চারিদিকে দেখে। তার চোখ এবার রাগে কঠিন থেকে কঠিন রূপ নিয়েছে যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে। শান্ত সৃষ্ট মানুষ গুলো হটাৎ করেই রেগে গেলে তান্ডব শুরু হয়ে যায়। এখন সেই অবস্থা আমনের। আমন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে গায়ের থেকে কোট খুলতে থাকে। ওদের মধ্যে একটা লোক ছুরি হাতে নিয়ে ওদের দিকে তেড়ে আসে। আমন কোট খুলে সোহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে ফেলে লোকটার। হাত মুড়িয়ে ধরতে হাত থেকে ছুরি টা পড়ে যায়। আমন হাত ধরে রেখে লাথি মারে। সাথে সাথে দূরে ছিটকে পড়ে যায় বাকিরা ও একে একে এগিয়ে আসে আর আমন তাদের পিটাই করতে থাকে। পিছন থেকে একজন সোহাকে আঘাত করতে আসতে আমন তার হাতে ধরে থাকা লোকটার থেকে ছুরি টা নিয়ে ছুড়ে মারে সাথে সাথে হাতে লেগে পড়ে যায়। সোহা চমকে পিছন দেখতেই দেখতে পায় একটা লোক তাকে মারতে আসছিল।

এর মধ্যেই ওখানে আকাশ সানি নীহার অ্যাস ও এসে হাজির হয়ে যায়। ওরা বাইক থামিয়ে সোহার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অ্যাস তো তার ভাইকে এমন হিংস্র ভাবে ধোলাই করতে দেখে চোখ বড় বড় করে দেখতে থাকে। এর আগে সে তার ভাইয়ের এমন রূপ দেখেনি। সে সব সময়ে তার ভাই শান্ত সৃষ্ট ভাবে দেখে এসেছে। বাকিরাও অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে। আর সোহাতো শুধু আমনকে দেখে যাচ্ছে। এই ছেলে যে এত হিংস্র রূপ ধরতে পারে সেটা সোহার জানা ছিল না। এমনি এমনি যে সে স্পাই এর সিনিয়র অফিসার হয়নি তার এই ছুপা গুণ যে আছে। সেটা সে সব সময়ে দেখায় না। বুঝতে পারে সোহা। আমন সব কটা কে মেরে শুইয়ে দিয়েছে । ইতি মধ্যেই ওখানে বেশকিছু অফিসার চলে আসে। সোহারা অবাক হয়ে দেখতে থাকে সব সিভিল ড্রেসে আছে তবে তারা সবাই এসেই আমন এর সাথে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনা এই লোক গুলো এখানে কি করে এলো আর কে খবর দিলো। আমন ওদের ইশারা করতে ওখানে পড়ে থাকা লোক গুলোকে তুলে নিয়ে যায়। আমন এবার সোহার দিকে এগিয়ে এসে বাইকে উঠে বসে সোহাকে ইশারা করে। আমনের মুখ এখন কঠিন হয়ে আছে সোহা শুধু দেখতে বাইকে উঠে বসে কোনো কথা বলে না আর তার এখনও অবাকের রেস কাটেনি। আর বাকিরাও চুপ করে থেকে বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

চলবে…… ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩১.
আমন বাড়িতে আসার পর সোজা সোহাকে রুমে নিয়ে চলে আসে। এখন রাত প্রায় আড়াইটে বাজতে চলেছে বাড়িতে আভা চৌধুরী আর সম্রাট চৌধুরী ঘুমিয়ে গেছে। আমন সোহাকে সোহার রুমে এসে সোহাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ফার্স্ট এড বক্স এনে সোহার জ্যাকেট খুলে দেয়। জ্যাকেটটা খুলে পাশে রাখার সময় আমন একবার সোহার মুখের দিকে তাকায় দেখে সোহা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমন চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়ে ।ক্ষততে মেডিসিন লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সোহা এক ভাবে আমনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমনের চোখ মুখ কেমন একটা গম্ভীর ভাব হয়ে আছে। সোহা বুঝতেই পারেনা এত শান্ত একটা ছেলে এতোটা গম্ভীর আর এতটা রুড কি করে হতে পারে। আজকে সে পুরো সময়ে বিস্মিত হয়ে ছিল তার একবারও আজকের যে আক্রমণ টা হলো তাতে তার ভ্রুক্ষেপ হয়নি। তবে আজ সে আমনের এই প্রতিক্রিয়ার জন্য বিচলিত হয়ে পড়েছে। আমন নিঃশব্দে সোহার ক্ষতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় কোনো কথা ছাড়াই। আর সোহা এক মনে তাকিয়ে থাকে আমনের যাওয়ার দিকে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আবারো আমন রুমে আসে। সোহা তখনও একভাবে রুমের বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল তাই আমনকে আসতে দেখে তার দৃষ্টি আমনের উপর আটকে যায়। রুমে ঢুকতে আমনের চোখ সোহার উপরে। আমন পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে সোহার সামনে এক হাঁটু মুড়ে বসে তার পায়ের উপর সোহার বাম হাতটা টেনে নেয়। সোহা ভ্রু কুঁচকে তাকায় আমনের দিকে আমন কি করতে চলেছে সেটা বোঝার চেষ্টা চালায়। আমন পকেট থেকে একটা বক্স বের করে এক হাতে কৌশলে ওপেন করে। তার থেকে একটা প্ল্যাটিনাম এর লাভ সেপ এর ব্রেসলেট বের করে আনে। যেটা প্ল্যাটিনামের চেন এর উপরে ডায়মন্ড বসানো মাঝে “এস” আর “এম”এর লোগো বানানো আর এর দুই পাশে দুটো বড় লাভ সেপ এর লাইট পিঙ্ক ডায়মন্ড বসানো। নিচের দিকে দুটো লেস ঝুলছে যার সাহায্যে হাতের পরিমাপ মতো পরা যায়। এই লেস এর দুটোর শেষে ও দুটো একই লাভ সেপ ডায়মন্ড পাথর বসানো আছে তবে সেটা একটু ছোটো।

আমন ওটা হাতে নিয়ে সোহার পরিয়ে দিতে দিতে সোহার ভ্রু কুঁচকে রাখা মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-“এটা আমি বানিয়ে ছিলাম তোমার জন্য। যেদিন তুমি তোমার অনুভূতি প্রকাশ করবে আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে সেদিনই তোমাকে পরিয়ে দেবো বলে রেখেছিলাম । আজকে যদি ও তুমি কথার মাঝে বলে ফেলেছিলে। আর তাই আজকেই আমি তোমাকে এটা দিয়ে দিলাম।।

সোহা একভাবে তাকিয়ে আছে আমনের দিকে আমন এর কন্ঠ এখনও কিছুটা শীতল হয়ে আছে।

-“এটা কখনো হাত থেকে খুলবে না। কখনো না মানে কখনই না। এটা আমার ভালোবাসার একটা চিহ্ন তাই আমি তোমার কাছে না থাকলেও আমার কথা তোমাকে সব সময়ে মনে করাবে। আমন সোহার চোখের দিকে তাকিয়ে আদেশ ভঙ্গিতে বলে ওঠে।

সোহা কোনো কথা না বলেই আমনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। আমন ঠোঁট এলিয়ে হেসে সোহার হাতের পিঠে তার অধর স্পর্শ করে। সোহা আবেগে চোখ বুজে নেয়। আমন উঠে দাঁড়িয়ে হুট করে বাম হাত টান দিয়ে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে সতর্কতার সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। মাথা নিচু করে সোহার কপালে অধর ছুইয়ে গভীর স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। সোহা অনুভব করে আমনের হার্টবিট প্রচণ্ড গতিতে ছুটছে। সোহা বুঝতে পারে আজকের ঘটনার জন্য আমন এখনও বিচলিত হয়ে আছে তাকে নিয়ে তাই এখনও স্বাভাবিক হতে পারছে না। সোহা আমনের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।

-“মন। সোহা মোহনীয় কন্ঠে ডেকে ওঠে।

সোহার ডাকে আমন দু হাতে সোহার মুখটা তুলে ধরে তার সামনে একই রকম জড়িয়ে রাখা অবস্থায়।

-” আমি ঠিক আছি । দেখো সামান্য একটু আঘাত পেয়েছি এতে আমার কিছুই হয়নি। আর তাছাড়া আপনিও তো ছিলেন আমাকে বাঁচানোর জন্য তাইনা? সোহা আমনকে স্বাভাবিক করতে বলে ওঠে।

-” ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি আসছি মলিন হেসে বলে ওঠে।

সোহা ও হালকা হেসে মাথা নাড়ায়। আমন সোহার কপালে চোখে মুখে দুই গালে আর ঠোঁটের কোণে নিজের অধরদ্বয় গভীর ভাবে স্পর্শ করে সোহাকে ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আমন চলে যেতে সোহা কিছু পলক তাকিয়ে থেকে নিজের হাতের দিকে তাকায়। তার হাতে আমন ব্রেসলেট পরিয়ে দিয়ে গেছে। সেখানে হেসে নিজে ও তার ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। এর মধ্যেই হুড়মুড় করে চারজন রুমে ঢুকে যায়। সোহা চোখ বড় বড় করে তাকায় তার সামনেই আকাশ সানি অ্যাস নীহার তার দিকে তাকিয়ে ক্যাবলার মতো করে হাসছে।

-“কিরে তোরা এখন এখানে কি করছিস? এখনও ঘুমাসনি কেনো? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” আর ঘুম! আজকে যা হলো তারপরেও বলিস আমার ঘুম আসবে? অ্যাস বলে বিছানার উপর গিয়ে বসে পড়ে।

-“হ্যাঁ একদমই তাই আজকে পুরো চোখের সামনে ফাইট সিন দেখলাম এতদিন আমরা এমন ফাইট সোহাকে করতে দেখেছি আর আজকে আমন দা কে। আকাশ বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ আমিও ভাই কে কখনো এই রূপে দেখিনি। আর আজকে দেখেতো আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। অ্যাস বলে ওঠে।

-“হুম এই কারণেই মিস্টার আমন রোদ চৌধুরী একজন স্পাই সিনিয়র অফিসার। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

-“মানে? সব কয়জন অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” মানে বলতে এটাই যে – আমন একজন স্পাই। আর স্পাই মানে গুপ্তচর। আর গুপ্তচরের কাজ কি সমস্ত নাড়ির খবর বের করে আনা। সমস্ত অজানা তথ্য বের করে আনা হলো তাদের কাজ। আমরা এন.এস.জি এর অফিসার হলেও আমাদের কাজ অপরাধীদের কে ধরা। আর একজন স্পাই এর কাজ কিন্তু আমাদের থেকেও কোনো অংশে কম নয় আমরা সামনে থেকে লড়াই করি আর তারা পিছন থেকে তাদের এই কাজ করার জন্য নিজেকে লুকিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয়। আর এই ক্ষেত্রে কিন্তু সব থেকে বড় পার্ট হচ্ছে কিন্তু নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা। স্পাই অফিসাররা সবার সামনে নিজেদেরকে যা দেখায় তারা কিন্তু আদেও তেমন নয়। আর এটাই এই লাইন এর সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট আর এর জন্য কিন্তু সহজেই কেউ এদের হদীস পায়না। এরাও আমাদের মত ট্রেনিং প্রাপ্ত এদের ফাইটিং স্কিল ও কম কিছু নয় এরাও সব দিক থেকে পারদর্শী। আর এদের আরো একটা প্লাস পয়েন্ট আছে এরা যেকোনো সিস্টেম চোখের পলকে হ্যাক করে ফেলতে পারে। আমরা সামনে থেকে দেশের জন্য যেমন লড়াই করি এরাও ঠিক পিছন থেকে এমন ভাবেই লড়াই করে। তাই আজ যেমন আমরা সবাই আমনের এই হিংস্র রূপ দেখলাম এটা কিন্তু ওর আসল প্রতিক্রিয়া রাগের। যেটা সে নিজের মধ্যে দমিয়ে রাখে। আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করাও কিন্তু একটা বড় আর্ট যার রাগ এত ভয়ংকর সেই রাগ কে সামলানো কিন্তু মুখের কথা নয়। সে সব সময়ে নিজেকে শান্ত সৃষ্ট কুল মাইন্ডের দেখায় নিজেকে আর রেগে গেলে তখন ও পুরো পুরি একটা হিংস্র রূপে পরিণতির হয়ে যায়। যেটা আজকে আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু আমন ওর রাগ কাউকে দেখায় না সচরাচর। তবে ওর ডিপার্টমেন্টে সবাই ওকে খুবই ভয়ংকর আর হিংস্র হিসাবে চেনে যতো টুকু আমি জানি। আর আমনের এই প্রতিভার জন্য আর তার কাজের জন্য স্পাই এর একজন সিনিয়র অফিসার হতে পেরেছে। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে একভাবে বলে ওঠে।

সোহার কথা শেষ হতে সবাই নিজের মনে ভাবতে থাকে আসলেই তাই একজন স্পাই প্রধান কাজ নিজের স্বরূপ আড়াল করা নিজেকে গুপ্ত রাখা। সেই জন্য তারা কখনই আমনের এই রূপ কখনো দেখেনি। আর আজকে যে তারা আমনের এই রূপ দেখেছে তার কারণ ও তাদের কাছে স্পষ্ট আজ সোহার উপরে হওয়া হামলার জন্য আমন এর হিংস্র রূপ বাইরে এসেছে। তার রাগী চেহারা সবাই দেখেছে। তবে সোহার মাথায় ঘুরছে অন্য কথা আমনের প্রতিক্রিয়া দেখে তার মনে হচ্ছে যে এর মধ্যে আরো এমন কিছু নিশ্চয় আছে যার জন্য আমনের এমন প্রতিক্রিয়া।

————

আমন আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলতেই নিজেকে বারান্দায় ডিভানে আবিষ্কার করে। সামনেই ল্যাপটপ অন করা আছে এখনও সে রাতে কাজ করতে করতে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেছে। উঠে বসে ল্যাপটপ এর দিকে চোখ দিতেই দেখে স্ক্রিনে একটা নোট লেখা আছে।

গুড মর্নিং মন…

নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আমি কেনো এইভাবে নোট লিখে রাখলাম আপনার জন্য। আসলেই আমি বাড়িতেই নেই আমাকে সকালেই বেরিয়ে যেতে হয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না আমি সেফ আছি আর আমার সাথে বাকি চারজন ও আছে। আসলেই সকালেই আর্জেন্ট কল আসে হাই কমিশনারের থেকে তাই বেরিয়ে যেতে হয়েছে। আপনাকে বলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন। আর মনে হলো আপনি ভোরের দিকে ঘুমিয়েছেন তাই আর আপনাকে ডাকলাম না নোট ছেড়ে গেলাম। আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো নিজের কাজ শেষ করে এখানে এখনও আমার অনেক কাজ বাকি আছে। সাথে আপনার সাথে ও অনেক হিসাব নিকেশ মেটানোর আছে তাই ফিরতে তো আমাকে হবে। ভালো থাকবেন।
ওহ হ্যাঁ আরো একটা কথা ছিল আপনাকে ঘুমিয়ে থাকলে একদম বাচ্চাদের মতো লাগে স্নিগ্ধ ওই মুখটা আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আর এই বিশেষ কারণের জন্য বিশেষ করে আপনার ঘুম ভাঙতে ইচ্ছে করেনি।❤️

ধানী লঙ্কা…❤️

নোটটা পড়তেই আমনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সোহার শেষের কথাটা পড়ে তার হাসিটা আরো বেশি প্রশস্ত হয়ে যায় কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নোটটার দিকে। তারপরেই আস্তে আস্তে আবারো তার মুখ গম্ভীর কঠিন হয়ে ওঠে।

চলবে…. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here