তোকে ঘিরে,Part_34,35,36
Ariyana Nur
part-34
আজ আফরার এন্গেজমেন্ট।কিছুক্ষন আগেই ইহানরা আফরাদের বাড়িতে চলে এসেছে।ইহান এক কোনে চুপ করে বসে আছে।আর তার পাশে বসে আরহাম ছটফট করছে।করবেই না কেন,আসার পর থেকে তো কাউকেই এক নজরের জন্য দেখতে পায়নি।না দেখা মিলেছে মেয়ের না মেয়ের মায়ের।আরহাম কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে কারো দেখা না পেয়ে মুখ লটকিয়ে বসে রইলো।
আরহামকে মুখ লটকিয়ে বসে থাকতে দেখে ইহান ফিসফিস করে বলল….
—কিরে চেহারার এমন বারোটা বাজিয়ে বসে আছিস কেনো???তুই আমার বিয়েতে এসেছিস।কোন মরা বাড়িতে না।একটু তো মুখে হাসি রাখ।
আরহাম চোখ রাঙ্গিয়ে রাগি গলায় বলল…
—শালা একে তো আমাকে জোর করে এখানে নিজের সাথে বসিয়ে রেখেছিস।তার উপর আবার বড় বড় কথা।একবার এখান থেকে যেয়ে নেই তোর খবর আছে।
—আরে চেতোস কেন???দেখ এতো মুরব্বির সামনে যদি আমি একা বসে থাকি তাহলে কেমন দেখায়।তাইতো তোকে আমার সাথে বসিয়ে রেখেছি।দেখ আমার সাথে চুপ করে বসে থাক।তাহলে তোর ও নতুন জামাই নতুন জামাই ফিলিংস হবে।😁
—তোকে আমি…..
শুধু নতুন শশুর বাড়ি দেখে বেচে গেলি।তা না হলে তোর দাত কেলানি আমি বন্ধ করতাম।
—আরে আমি তো ভালো বুদ্ধি দিলাম।
—তোর বুদ্ধি তোর কাছেই রাখ।আমার ওতো নতুন জামাই এর ফিলিংস এর দরকার নেই।😡
______________________________
আফরা কে আজ মানহা আর মিষ্টি মিলে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে।আফরাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে মানহা বলল….
—তুই একবার দেখে নে সব ঠিক আছে কিনা।
আফরা আয়নার দিকে তাকিয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো।ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মানহা ধাক্কা দিয়ে বলল…
—কিরে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো।
—ক্রাস খাইছিরে….
—কি তুই নিজে নিজের উপর ক্রাস খাইছোস🙄
—আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতাম।
মানহা ওর দিকে চোখ বড় বড় করে বলল….
—পাগল হইছোস???মাথা পুরা গেছে তোর…
—আরে পাগল হবো কেনো।আমি সত্যি বলছি।
—তুই ছেলে হলে নিজেরে নিজে কেমনে বিয়া করতি(অবাক হয়ে)
—ঐ কি বলিস এগুলো গজবওয়ালা কথা বার্তা।
—তুই তো মাএ বললি।
—আরে আমি আমারে বিয়া করার কথা কমু ক্যান।আমি তো তোর কথা বলতাছি।কফি কালার ড্রেসটাতে তোরে যা লাগতাছে না।সত্যি বলছি যদি আমি ছেলে হতাম তাহলে তোরে আজ উঠাইয়া নিয়া বিয়া করতাম।
—পাম মারা বন্ধ কর।দিনদিন এমনেই মটু হইয়া যাইতাছি।এতো পাম মারলে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তারপর বের হতে হবে।
—আরে…. ভাইয়া আজকে তোরে দেখলে আবার প্রেমে পরে যাবে।
—হা.হা.হা ভেরিরর ফানিইই….
মিষ্টি একটা এম্বুলেন্স খবর দাও তো।
আফরা অবাক হয়ে বলল…
—ঐ এম্বুলেন্স দিয়া কি করবি???
—তোরে দেখার পর তো আমাদের দুলা মিয়া তো ফিট হয়ে যাবে।তারে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে না।তাই….আগেই খবর দিয়া রাখতাছি।
—তার মানে আমাকে অনেক সুন্দর লাগতাছে😍
—জ্বি…না….
এমন পেত্নী দেখলে যে কেউই ফিট হইবো।তার উপর আবার তার ঘাড়ের উপর যদি চড়ে তাহলে তো সে শেষ।
আফরা রেগে মানহাকে মারতে মারতে বলল….
—শয়তান,বান্দর,কুওী তুই জীবনেও ঠিক হবি না।
মানহা ওকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল….
—লাগতে আসার আগে মনে ছিলো না।এখন এমন করো কেন।
দুজনের মধ্যে লেগে গেলো মারামারি।মিষ্টি ওদের এই খুনসুটি দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।আর ওদের এই খুনসুটি গুলো ভিডিও করছে।
_____________________________
আরহাম গাল ফুলিয়ে বসে আছে।ইহান এটা সেটা বলছে কিন্তু ও কোন কথাই বলছে না।হঠাৎ কেউ হাত দিয়ে আরহামের চোখ আটকালো।আরহামের তার ছোয়া পেয়েই ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি চলে এলো।আরহাম তার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল….
—এতোক্ষনে আমার মামুনির তার পাপার কথা মনে পরেছে??
তুর চোখ ছেড়ে দিয়ে আরহামের সামনে এসে কোমরে হাত রেখে বলল….
—ওহ পাপা তুমি কিভাবে বুঝে যাও আমি তোমার চোখ আটকিয়েছি???
আরহাম মুচকি হেসে তুর কে নিজের কোলে বসিয়ে ওকে আদর দিয়ে বলল….
—আমি আমার মামুনির ছোয়া চিনবো না এটা কি হতে পারে।আমার মামুনি যে আমার সব।তাকে কি করে না চিনি।আজ কিন্তু আমার প্রিন্সেন্সকে মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগছে।
তুর আরহামকে আদর দিয়ে বলল….
—তোমাকেও আজ মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগছে।
—সত্যি….
—হুম…সত্যি….
—ধন্যবাদ মা…(আদর দিয়ে)
তুর গাল ফুলিয়ে বলল….
—ধন্যবাদে কাজ হবে না।তুমি বলেছো কাল আসবে।কিন্তু আসো নি।তাই আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।
আরহাম ইনোসেন্ট ফেস করে বলল….
—আমার কোন দোষ নেই মা।সব দোষ তোমার আঙ্কেলের।তোমার এই আঙ্কেল আমাকে কাল আসতে দেয়নি।
তুর রাগি চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তুর ইহানের দিকে তাকিয়ে জোরে বলল….
—পাপা… পাপা… এই সেই লোক যে আমাকে কিড্….
আর কিছু বলার আগে আরহাম তুর এর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল…
—মা কিছু বলো না এটা তোমার ভালো আঙ্কেল।এখন চুপ থাকো পরে আমি তোমাকে সব বলবো।
তুর ভালো মেয়ের মত পাপার কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।
আরহাম তুর এর মুখ থেকে হাত সরাতেই দেখে সবাই ওদের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।একজন সন্দেহ্ দৃষ্টিতে তুর এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—কি বলছিলে তুমি???কি করেছে এই আঙ্কেল???
তুর ফট করেই আরহামের হাত ধরে বলল…
—পাপা এই সেই আঙ্কেল যে আমাকে সেদিন কিটকেট চকলেট কিনে দেয় নি।
তুর এর কথা সুনে আরহাম একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে তুর এর মাথায় হাত রেখে বলল…
—পাপা তোমাকে অনেকগুলো চকলেট কিনে দেবো।হ্যাপি…
তুর খুশি হয়ে ওকে পাপা বলে চলে গেলো।তুর চলে যেতেই ইহান একটা বড় নিশ্বাস নিলো।এতোক্ষন তার জানটা মনে হয় কেউ আটকিয়ে রেখেছিলো।ইহান তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো। তুর না আবার সবার সামনে কিডনাপের কথা বলে দেয়।তাহলে তো ওর খবরি ছিলো।তুর এর মুখে ওতোটুকু কথা শুনেই মানুষ যেভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো,পুরো কথা শুনলে তো মনে হয় সাথে সাথেই গন ধোলাই দেয়া শুরু করতো।ইহান সোফায় হেলান দিয়ে বসে ফিসফিস করে বলল….
—তুই আজ সামনে না থাকলে তোর মেয়ে তো আজ আমারে গন ধোলাই খাওয়াই তো।
আরহাম রেগে বলল….
—ঐটাই ঠিক ছিল তোর জন্য।
—তুই আমার সাথে এমন কেনো করছিস???🙄
—চুপ থাক।তা না হলে এবার সত্যিই আমার মেয়েকে দিয়ে তোরে গন ধোলাই খাওয়াবো।তারপর জেলে গিয়ে বিয়ের স্বাদ মিটাইছ।
ইহান বুঝতে পারলো আবহাওয়া খারাপ তাই চুপ করে বসে রইলো।
__________________________
একটু আগেই ইহান আর আফরার আংটি বদল হয়ে গেছে।বড়দের দোয়া নিয়ে তারা এক কোনে দাড়িয়ে আছে।নিধি ওদেরকে আলাদা কথা বলার জন্য অন্য যায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আরহামকে এক কোনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে ডাক দিয়ে বলল….
—ভাইয়া এখানে একা দাড়িয়ে না থেকে আমাদের সাথে চলো।
আরহাম মুচকি হেসে ওদের পিছে পিছে যেতে লাগলো।
নিধি ওদেরকে একটা রুমের দরজার সামনে দাড় করাতেই দরজা খুলে কেউ ঝড়ের গতিতে আফরাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।ইহান আর আরহাম অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো।
(আরে মুখ বন্ধ করেন তা না হলে মশা ঢুকবে)
Nur❤
চলবে
তোকে ঘিরে
Part 35
Ariyana Nur
মানুষ মরনর্শীল।এই দুনিয়াতে কেউ হাজার বছর বেচে থাকে না।একদিন না একদিন সবাইকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে যেতেই হবে।এটা জানা সত্যেও মিত্যুর খবর শুনলে আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না।আর যদি লোকটি নিজের প্রিয় মানুষ হয়??তখন….???
আকাশের চাদটা আজ মেঘে ঢাকা।একটু পর পর বিজ্লি চম্কাচ্ছে।চারোদিকে মিদূ ঝড়ো হাওয়া বইছে।দেখেই মনে হচ্ছে যে কোন সময় হুট করেই ঝড় সুরু হয়ে যাবে।
খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপর সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে মানহা।দেখে মনে হচ্ছে কারো পথ চেয়ে বসে আছে।এদিকে আবহাওয়া যে এই অবস্থা সেদিকে তার খবর নেই।থাকবেই কি ভাবে নিজেই তো নিজের মধ্যে নেই।
একটু পর বৃষ্টির ফোটা ওর শরীরে পরলে ওর ধ্যান ভাঙ্গে।সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাই ডুকরে কেদে উঠে।মানহার মনে চাচ্ছে আজ চিৎকার করে কান্না করতে।কিন্তু কেনো যেনো পারছে না।বিবেক বাধা দিচ্ছে।মন আর বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে এক সময় মানহা চিৎকার করে কাদতে লাগলো।বৃষ্টির পানিতে ওর চোখের পানিগুলো ধুয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।মানহা কান্না করছে আর চিৎকার করে বলছে…..
—কেনো চলে গেলে তুমিমমমম…..
কেনো আমাকে একা ফেলে চলে গেলে।কেন?কেন?কেন?দেখো আমি পারছিনা তোমাকে ছাড়া থাকতে।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ….
আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও।আমি যে আর পারছিনা নিজেকে সামলিয়ে রাখতে।আমার সাথে তুমি কিভাবে এমন করতে পারলে।কিভাবে???চলে আসো প্লিজ চলে আসো।মানহা কান্না করছে আর হাত দিয়ে মাটিতে বাড়ি মারছে।
মানহাকে মিষ্টি এভাবে কান্না করতে দেখে দৌড়ে মানহার কাছে এসে ওকে জরিয়ে ধরে বলল….
—ভাবি প্লিজ শান্ত হও।তুমি এভাবে ভেঙ্গে পরলে আমাদের কি হবে???শান্ত হও তুমি।
মানহা মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল…..
—মিষ্টি আমি যে আর পারছিনা….
আমার জানো অনেক কষ্ট হচ্ছে।কি করে তোমাকে আমার কষ্টের কথা বুঝাবো।বলো….কি করে….??
ওকে এনে দাও না প্লিজ ওকে এনে দাও।
মানহা বাচ্চাদের মতো মিষ্টির কাছে অবদার করছে।মিষ্টি মানহাকে এভাবে কান্না করতে দেখে নিজেকে সামলিয়ে রাখতে না পেরে সেও মানহাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।
____________________________
ক্লান্ত শরীরে ইহান বাসায় এসে বিছানায় গা বিছিয়ে দিল।একটু পর আফরা হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ইহান কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।আফরা গুটি গুটি পায়ে ইহান এর মাথার সামনে দাড়িয়ে বলল….
—তোমার জুস….
ইহান কপাল থেকে হাত সরিয়ে আফরার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে কান্ত শরীর নিয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসে আফরার হাত থেকে জুসের গ্লাসটা নিয়ে বলল….
—তুমি ঠিক আছো???
আফরা ইহান এর পাশে বসে ওর কাধে হেলান দিয়ে বলল….
—আমার আবার কি হবে।যা হবার তা তো আমার জন্যই হচ্ছে😔
ইহান লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে আফরাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল….
—মানহার সাথে কথা বলেছিলে???
আফরা ছলছল চোখে বলল….
—আমার ওর সাথে কথা বলতে গেলে নিজেকে সব চেয়ে বেশি আপরাধী মনে হয়।কিভাবে বলবো আমি ওর সাথে কথা???
—তুমি কথা না বললে যে ও আরো কষ্ট পাবে।
—এমনেই কি কম কষ্ট পাচ্ছে।আর আমি ওর সামনে কোন মুখ নিয়ে দাড়িয়ে ওকে সান্তনা দিব বলতে পারো???
ইহান কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো।কি বলে সান্তনা দিবে আফরাকে সেই ভাষাই তো ওর কাছে নেই।আর আফরা যেভাবে নিজেকে দোষী করছে।সেভাবে প্রতি নিয়োত ইহানও নিজেকে দোষী সাভস্থ করে।
__________________________
নিধি আনমনে ব্যালকানিতে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহাব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে নিধি রুমে নেই।ব্যালকানির দিকে তাকাতেই দেখে ব্যালকানির দরজা খোলা।মাহাব গুটি গুটি পায়ে নিধির সামনে দাড়িয়ে বলল….
—এখানে কি করছো???
—এমনেই দাড়িয়ে আছি ভালো লাগছেনা।
মাহাব নিধিকে ধরে রুমে এনে বেডে বসিয়ে ওর হাত ধরে বলল…..
—দেখো তোমার এই অবস্থায় সব সময় হাসি খুশি থাকতে হবে।তুমি এভাবে মন খারাপ করে থাকলে যে আমাদের বেবির ক্ষতি হবে।
—কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখি বল??আল্লাহ্ দেখো আমাদের কোন পরিক্ষায় ফেলেছে।এতো বছর পর আমাদের কোল জুরে আল্লাহ্ একজনকে পাঠাচ্ছে এই খবর শুনে সব থেকে মানহা বেশি খুশি হতো।কিন্তু আমি এখন অব্দি ওকে বলতেই পারলাম না ও ফুপিমনি হতে যাচ্ছে।এই একটা জিনিস আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আমি কোন ভাবেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা।(কান্না করতে করতে নিধি কথা গুলো বলল)
মাহাব ওকে সান্তনা দিয়ে বলল….
—জানি না আল্লাহ্ আমাদের সাথে এমন কেনো করছে।নিশ্চই এর পিছনে কোন ভালো কারন আছে।অথবা আমাদের ভাগ্যেই এমন ছিলো।আর যা হয়ে গেছে তো আর বদলাতে পারবোনা।আমাদের বাস্তবতা কঠিন হলেও মেনে নিতে হবে।এ ছাড়া আমাদের তো কিছু করার নেই।
—তাই তো পারছিনা।
মাহাব নিধির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল….
—আর কোন কথা নয়।এবার চুপ করে শুয়ে থাকো।তা না হলে তোমার শরীর খারাপ করবে।তোমার জন্য না হয় বেবীর জন্য।প্লিজ….
নিধিও কোন কথা না বলে চুপ করে শুয়ে রইলো।মাহাব নিধির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।এক সময় নিধি আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে পারি দিল।
নিধি ঘুমিয়ে গেলে মাহাব নিধির শরীরে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে ব্যালকানিতে গিয়ে দাড়ালো।নিজেকে সবার সামনে স্টং দেখালেও ভিতরে যে সেও দুমরে মুচরে যাচ্ছে।
______________________________
মা খাবারের প্লেট নিয়ে মানহার রুমে বসে আছে।
মানহাকে তখন অনেক কষ্ট করে মিষ্টি বুজিয়ে রুমে এনে ওয়াশরুমে পাটিয়েছে।মা মিষ্টিকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। তার এই ছোট্ট মেয়েটা যাকে দেড় মাসে আগে নিজে বকে বকে সব কিছু করে দিতো সে এই দেড় মাসে কিভাবে এতো পাল্টে গেলো।তার এই ছোট্ট মেয়ে একেবারে বড়দের মত ওদের আর ওদের সংসারটা সামলাচ্ছে।মানুষ এতো পরিবর্তন এতো তারাতারি কি করে হতে পারে???নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে নিজের মনই উওর দিলো পরিস্থিতি….
হ্যা পরিস্থিতি মানুষকে সব করতে সক্ষম করে।দূর্বল কে শক্তিশালী এবং ভিতূকে সাহসী।
মানহা ওয়াশরুম থেকে বের হলে মা মানহাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে ওকে ঘুম পারিয়ে দিল।মানহার শরীরে হালকা জ্বর দেখে নিজে ওর পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
এই দেড় মাসে সবার জীবনটাই উলোট পালোট হয়ে গেছে।সব থেকে বেশি উলোট পালোট হয়েছে মানহার জীবন।সে তো জিন্দা লাশ হয়ে বেচে আছে।
দেড় মাস আগে…..
চলবে.
তোকে ঘিরে
Part 36
Ariyana Nur
দেড় মাস আগে……..
সেদিন নিধি ওদেরকে একটা রুমের দরজার সামনে দাড় করাতেই দরজা খুলে কেউ ঝড়ের গতিতে আফরাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।ইহান আর আরহাম অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো।নিধি সামনে তাকিয়ে রেগে বলল…..
—এনা এটা কোন ধরনের মজা???তুমি ওর গলায় ছুরি ধরেছো কেন???দেখো আফরা কিন্তু তোমার ছোট।তাই এমন মজা করা বাদ দাও।
(এনা কালকে মজা করে বলেছে,আফরার বর এর কাছ থেকে টাকা খসাবে। দরকার পরলে আফরার গলায় ছুরি ধরবে।আরহাম তখন মানহার সাথে কথা বলছিল।মানহা কিছু বলতে নিলে আরহাম ওকে থাকিয়ে দেয়।সবাই মজার ছলে বলেছে বলে চুপ করে থাকে।তাই নিধি এই কথাগুলো বলল)
এলিঃআরে চুপ থাকো তো।শুধু কেচকেচ করছো।মাই ডিয়ার ভাবি তোমার সাথে পরে কথা বলছি।আগে এই দুই হ্যান্ডস্যাম এর সাথে কথা বলে নেই।
আরহামঃকি তামাশা শুরু করলেন আপনি???এটা কোন ধরনের মজা???আর আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আমরা আপনার ছোট বোনদের হাজব্যেন্ড???
এলিঃআরে…এতো কথা কেনো বলো তুমি।ভিতরে তো তাকিয়ে দেখো।তাহলেই তোমার পকপক বন্ধ হবে।
এলি আফরাকে এমন ভাবে ধরেছে যে বেচারি কথা বলতেই পারছে না।এলি ওকে নিয়ে সরে দাড়াতেই ভিতর দিকে তাকিয়ে আরহামের প্রানটা আটকে গেলো।কেননা একজন তুর এর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে।আর সাইডে মানহা আর মিষ্টি জড়োসড়ো হয়ে চোখের পানি ফেলছে।আর পিছন থেকে দুজন ওদের দিকে পিস্তল তাক করে রয়েছে।
ইহান রেগে বলল….
—কে তোমরা??তোমাদের সাহস তো কম না আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের পরিবারের লোকদের দিকে পিস্তল ধরে রেখেছো???
পিছন থেকে দুজন লোক এসে ওদের দিকে পিস্তল তাক করে বলল…..
—আমরা কে তা না হয় বস আপনাদের কেই বলবে।এবার চুপচাপ আমাদের কাজ করতে দিন।তা না হলে আপনাদের পুরো পরিবার আজ শেষ।
আরহামঃ তোমাদের বস কে???আর আমাদের কাছেই বা তোমরা কি চাও???
—সেটা না হয় আপনারাই জিগ্যেস করে নিবেন।এবার আপনারা দুজন আমাদের সাথে চলুন।
তা না হলে আপনাদের পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিব।
ওদের আর বুঝতে বাকি নেই যে,তারা ফুল প্লান করে এখানে এসেছে।আর এসবের পিছে এনা আছে।ঘরের শক্র না থাকলেতো আর অন্য শক্র এতো সহজে ঘরে ঢুকতে পারে না। আরহাম ইহানকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করল।তারপর লোকদেরকে বলল…
আরহামঃঠিক আছে।তোমাদের সাথে যেতে আমরা রাজি।কিন্তু শর্ত হল আমাদের পরিবারের লোকদের কিছু করতে পারবেন না।
তুর চিৎকার দিয়ে বলল….
—পাপা….
তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।
আরহাম ছলছল চোখে তুর এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—ভয় পেওনা মা।পাপা ঠিক তোমার কাছে চলে আসবে।
আরহাম মানহার দিকে তাকিয়ে দেখে ও আরহামের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।ওর ওই চোখ যে আজ হাজার কথা বলছে আর আছে ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়।আরহাম চোখ দিয়ে ইশারা করে মানহাকে বলল….
—ভয় পেওনা।কথা দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ তোমার কাছে ফিরে আসবো।
____________________________
হাসিখুশি হৈ-হৈলৌর এর বাড়ি মুহূর্তের মধ্যেই নিস্তব্দ হয়ে গেলো।সবার চোখেই পানি।সবাই কান্না করছে আর আল্লাহ্ কে স্বরন করছে।মানহা তুর কে বুকে জরিয়ে চোখের পানি ফেলছে।ও মন কেমন কু ডাকছে।বার বার মনে হচ্ছে আরহাম মনে হয় আর ওর কাছে ফিরে আসবে না।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।আরহাম আর ইহানের দুপাশে দুজন পিস্তল তাক করে বসে আছে।ওরা কোথায় যাচ্ছে কিছুই জানে না।পাশের লোকদেরও চেনার ও গতি নেই।কেননা সবাই মাক্স দিয়ে চেহারা ঢেকে রেখেছে।আরহাম সুযোগ বুঝে পাশের লোকের হাত থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে তার মাথায় পিস্তল তাক করে বলল….
—গাড়ি থামাতে বল।তা না হলে তোকে শুট করে দিব।
লোকটা ভয়ে ভয়ে গাড়ি থামাতে বললেই গাড়ি থামিয়ে দিল।
আরহামঃএবার ইহানকে গাড়ি থেকে নামা।
ইহানঃপাগল হয়েছিস???আমি নামবো কেন???(অবাক হয়ে)
—বেশি কথা বলিস না।যা বলছি তা কর।
—দেখ আমি কোথাও যাবো না তোকে ছাড়া।
—দেখ মটু পাগলামি করিস না।ওখানে আমাদের সাথে কি হবে কেউ জানি না।বেচে ফিরবো নাকি তারো খবর নেই।তাই তুই চলে যা।পারবি না আমার পরিবারটা কে আগলে রাখতে।
ইহান রেগে বলল….
—তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস।যেতে হলে তুই ফিরে যা আমি এখানে থাকি।তা না হলে দুজন এক সাথেই যাবো।
—সরি…রে তোর কথা মানতে পারলাম না।আরহাম লোকটার মাথায় পিস্তল চেপে ধরে বলল….
—ওকে গাড়ির থেকে বের কর তা না হলে তুই শেষ।
লোকটা বাধ্য হয়ে নিজের লোক দিয়ে ইহান কে জোর করে গাড়ির থেকে বের করে গাড়ি নিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে গেলো।
আর ইহান মাঝরাস্তায় বসে পাগলের মত আরহাম এর জন্য কান্না করতে লাগলো।
_____________________________
দেখতে দেখতে ১০দিন কেটে গেলো।কিন্তু আরহামের কোন খবর পাওয়া যায়নি।ইহান নানান ভাবে আরহামের খোজ নেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।
দুদিন পর পুলিশ একটা পচাগলা লাশ পেয়ে জানায় সেটা আরহামের লাশ।পুলিশের কথা শুনে বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেলো।সবাই ভেঙ্গে পরেছে।এতোদিন মনকে সান্তনা দিয়ে আরহামের পথ চেয়ে ছিলো সবাই। তাও যেন আজ মিথ্যে হয়ে গেলো।
মানহা এক কোনে চুপ করে মূর্তির মত বসে আছে।চোখগুলো লাল হয়ে আছে।কিন্তু চোখে বিন্দু মাএ ও পানি নেই।কথায় আছে না অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়।ওর অবস্থাও তাই হয়েছে।
প্রতিবেশি এক মহিলা মানহাকে দেখে বলল…
—কেমন মেয়েরে বাবা স্বামী মেরেছে কিন্তু চোখ মুখে কান্নার ছিটে ফোটাও নেই।
কথাটা শুনে মানহা মহিলার দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল….
—চুপ করো সবাই…..
মানহার চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে রইলো।মানহা অবার চিৎকার করে বলল….
—কান্না কেনো করছো তোমরা??? কেউ কান্না করবে না।কার না কার লাশ দেখে তোমরা মরা কান্না জুরে দিলে।আর ভাবলে ওটা উনার লাশ।কিছুই হয়নি উনার।উনি ঠিক আছেন।উনি আমাকে কথা দিয়েছেন আমার কাছে ফিরে আসবে তার মানে আসবে।আর যদি কাউকে উনাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে বা কান্না করতে দেখি তাহলে আমি সবাইকে খুন করে ফেলবো।কিছু হয়নি উনার কিছু না।কথা গুলো বলতে বলতে মানহা অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো।
যত দিন যেতে লাগলো সবাই ততো পরিবর্তন হতে লাগলো।মানহা তো মরার মত বেচে আছে।আর তুর….
তার কথা আর কি বলবো!!!সে তো পুরোই চেন্জ হয়ে গেছে।না কারো সাথে কথা বলে না ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে।সবসময় একা একা কিছু বিরবির করে আর আরহাম এর রুমে পরে থাকে।ওর মনে হয় ওর পাপার রুমেই ওর পাপা আছে।খাওয়া দাওয়া ঘুম সব ওর আরহামের রুমে।রাতে আরহামের বেডে আরহামের ফটো ফ্রেম জরিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
আর এদিকে মানহা মেয়ের এতো পরিবর্তন দেখে নিজে আরো ভেঙ্গে পরছে।যেখানে ওর স্টং থাকতে হবে সবাইকে সামলাতে হবে সেখানে ওকেই সবাই সামলাচ্ছে।কিসের থেকে কি হয়ে গেলো??একটা দমকো হাওয়া এসে ওদের সবার জীবনটাই এলোমেলো করে দিল।
আরহামদের কে বা কারা কিডন্যাপ করলো???কেনো করলো আজ পযর্ন্ত কিছুই কেউ জানতে পারে নি।
এদিকে এলিকেও ওরা খুজে পায়নি।সেও নিখোজ হয়ে গেছে।
_____________________________
বর্তমান…….
কেটে গেলো আরো দুদিন।
এশারের নামাজ পরে মানহা ব্যালকানিতে হাটু গেড়ে বসে ফোনের দিকে আরহামের হাস্যজ্বল একটা ছবির দিকে এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে।একটু পর ছবির দিকে তাকিয়ে অনমনে বলতে লাগলো….
—জানো আমার জীবনে তুমি আসার আগে আমার বাপ ভাই ছাড়া ছেলেদের আমি দেখতে পারতাম না।কেনো জেনো তাদের সয্য হতো না।প্রথম প্রথম তো তাওহিদ ভাইয়ার সাথেও অনেক খারাপ ব্যবহার করতাম।তার পরে ধীরে ধীরে জীবনের মোর ঘুরতে লাগলো।
প্রথমে আমি তোমাকে তুর এর জন্য মেনে নিয়েছি।তারপর আস্তে আস্তে ভালো লাগা থেকে তোমার মায়ায় জরিয়েছি।কিন্তু কখনো ভাবিনি তোমাকে ছাড়া যে আমার চলবে না।তোমার সাথে যে এভাবে জরিয়ে যাবো তা কল্পনাও করিনি।
আমি আগে বলতাম, মানুষ কি পাগল???কি করে একজনের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেয়???তাদের কি নিজের জন্য মায়া হয় না???নিজের কোন দাম নেই তাদের আবেগ এর কাছে???
কিন্তু তোমাকে হাড়িয়ে আজ আমি বুঝতে পারছি,তারা পাগল না।নিজের কাছের মানুষটাকে হারানোর যন্তনা যে কি যারা না হারাবে তারা কখনো এই কষ্টটা বুঝতে পারবে না।তাই তো তারা নিজের কাছের মানুষটাকে হারানোর যন্তনা সয্য করতে না পেরে আত্যহত্যার মত একটা জঘন্য রাস্তা বেছে নেয়।
তুমি জানো… আমার মন বলে তুমি ফিরে আসবে আমার কাছে আর বিবেক বলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে।যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব না।বিবেক আর মন যুদ্ধ করতে করতে এক সময় আমি হাপিয়ে যাই।তখন ইচ্ছে করে আমিও তোমার কাছে চলে যাই।আত্যহত্যার মত জঘন্য রাস্তাটাই বেছে নেই।কিন্ত তখনি মনে পরে আত্যহত্যা করলে তো পরকালেও তোমাকে পাবো না।আল্লাহ্ জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাকে মাফ করবেন না।তাইতো আল্লাহ্ উপর ভরসা করে তোমার পথ চেয়ে এখনো বসে আছি।আর আল্লাহ্ এর কাছে আমার প্রতি দোয়ায় তোমাকেই চাচ্ছি।যাতে তিনি সুস্থ সালামত তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনেন।তুমিতো আমাকে কথা দিয়েছিলে আমার কাছে ফিরে আসবে। তোমার কথা রাখতে ফিরে আসো না প্লিজ….ফিরে আসো আমার কাছে।মানহা কথা গুলো বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।
বাস্থবতা এতো কঠিন কেনো???কেউ কি এতো সহজেই নিজের কাছের মানুষটাকে ভুলে বাস্থবতা মেনে নিতে পারে???
চলবে