তোকে ঘিরে,39 Last_Part

তোকে ঘিরে,39 Last_Part
Ariyana Nur

মিষ্টির রুমের ব‍্যালকনিত হাটু গেরে বসে মাথা নিচু করে চোখে জল ফেলছে মানহা।আরহামের কথায় বেচারির অনেক কষ্ট পেয়েছে😭কি করে আরহাম ওকে এই কথা বলতে পারলো।এভাবে বললে ওর কি কষ্ট হয় না।

অনেকক্ষন পর মানহা নিজের পাশে কারো উপস্থিতি বুজতে পেরে ঐ অবস্থাই বলল….

—দেখো মিষ্টি নিজের ভাইয়ের হয়ে সাফাই গাইতে আসবে না।আমাকে কথাগুলো কি করে বলতে পারলো সে?? আমার কি কষ্ট হয় না।সে কি বুজতে পারছেনা আমার মনের অবস্থা।তুমি তো জানো আমি কি ভাবে নিজেকে ঠিক রেখেছি।জানো তো তোমার ভাইয়ার এখন আর আমাকে পছন্দ হয় না।পুরোনো হয়ে গেছি তো….
চলে যাব আমি থাকবোনা এখানে আর।

—যেখানেই যাও সাথে আমাকে নিয়ে যেও তাহলেই হবে।

মানহা কথাটা শুনে মাথা উঠিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে আরহাম দু’হাত দিয়ে কান ধরে হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে আছে।আরহামকে এভাবে বসে থাকতে দেখে মানহা তাড়াতাড়ি করে আরহামকে ধরে দাড় করিয়ে বলল…

—কি করছিলে??ভাইয়া না তখন বলল এভাবে বসতে ডাঃ নিষেধ করেছে তাহলে বসলে কেনো???ভুলো মন হয়ে গেছো নাকি???

—তুমি আছো না সব কিছু মনে করে রাখার জন‍্য।তুমি থাকলেই হবে।

মানহা আভিমান করে বলল……
—থাকবোনা এখানে আমি।চলে যাব।

কথাটা বলে মানহা চলে যেতে নিলে আরহাম মানহার হাত ধরে বলল…..

—তুমি চলে যাওয়ার আগে আমাকে প্লিজ শেষ করে যাও।কেননা এতোদিন অনেক কষ্টে তোমাকে ছাড়া থেকেছি।আর আমার দ্বারা সম্ভব না।আর তখনকার জন‍্য সরি।

মানহা ছলছল চোখে আরহাম এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….

—কথা বলার আগে খবর থাকে না কি বলছেন???এখন আসছে ঢং করতে ভাগেন সামনের থেকে।
কথাটা বলেই সে গট গট করে রুমে চলে গেলো।

একদিকে ইহান আরেক দিকে আরহাম বসে বসে তাদের বউ দের মান ভাঙ্গাতে ব‍্যস্ত।আর বেচারি মিষ্টি এমনি ঘুমের জন‍্য চোখে দেখছে না তার মধ‍্যে তার ভাইয়ের এই নেকামী দেখে জোর গলায় বলল….

—দুই মিনিটের মধ‍্যে আমার রুম থেকে বের না হলে আমি মাকে ডেকে আনবো।

মিষ্টির কথা শুনে আরহাম আর ইহান অসহায় ফেস করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো।তা দেখে মিষ্টি ভেংচি কেটে বলল…

—এভাবে তাকিয়ে থাকলে লাভ হবে না।আমার সুইট ভাবিদের কাদানোর আগে মনে ছিলো না।এখন ভাগো এখান থেকে।

আরহামঃতুই আমাদের সাথে এমন করছিস???

ইহানঃআমরা এখন তোর কাছে পর হয়ে গেলাম???

মিষ্টিঃহুহ…..
ঢং কতো ভাগো এখান থেকে।

বেচারারা আর কি করবে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো…..
—এদের একটা উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে।

______________________________

সারা বাড়িতে আজ খুশির আমেজ।কেননা সবাই ঠিক করেছে মানহা আর আফরার ঘোরয়া ভাবে আবার বিয়ে হবে। সাথে সবাই জানতে পেরেছে নিধি মা হতে চলেছে।এটা শুনার পর থেকে সবার খুশি দ্বিগুন হয়ে গেছে।মানহা তো পারছেনা খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে।

আরহাম আর ইহান অনেক চেষ্টা করেও তাদের বউদের মান ভাঙ্গাতে পারে নি।বেচারারা এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আরহাম যদিইও একটু মান ভাঙ্গাতে পেরেছিল কিন্তু পর মুহূর্তে আবার গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে এমন সময় আরহাম আর ইহান এক সাথে এন্টি নিল।দুজনকে দেখে মানহা আর আফরার চোখ কপালে।কেননা তারা আজ স‍্যেম শার্ট পরেছে।ওরা ওদের সামনে এসে হাটুগেড়ে বসে পরলো।

ইহান পকেট থেকে একটা রিং বের করে বলল…..

—সরি….
জীবনে যাই কিছু হয়ে যাক যত খারাপ খবরি হোক না কেন তোমাকে জানাবো।পারবে তো তুমি আমার পাশে থেকে আমার হাতটা ধরে রাখতে…..

আফরা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল….
—হুম।তুমি আমার হাতটা ধরে রাখলে আমি সব করতে পারবো।

আরহাম এবার একটা রিং বের করে বলল….

—জীবনের শেষ নিশ্বাস পযর্ন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই।আমার এলোমেলো এই জীবনটা গুছিয়ে নিতে তোমাকে চাই।বৃদ্ধ বয়সে তোমার সাহারা নিয়ে বাচতে চাই।তোমাকে রাগাতে চাই আর তোমার সেই রাগ ভাঙ্গাতে চাই।দিবে আমাকে সেই সুযোগ।

মানহা কাপাকাপা হাত বাড়িয়ে দিল।
আরহাম মানহার হাতে রিং পরাতেই সবাই হাত তালি দিতে লাগলো।মিষ্টি এসে ওদের চারজনকে এক সাথে দাড় করিয়ে ছবি তুলতে চাইলে মানহা আর আফরা ভাব নিয়ে সবে গিয়ে বলল….

মানহাঃআমরা এই টিয়াপাখিদের সাথে ছবি তুলবো না।

আফরা হাসতে হাসতে বলল….
—দেখো মিষ্টি তোমার ভাইয়ারা যেই সুন্দর টিয়াপাখি সেজেছে একটু পর যেন উড়াল না দেয় ।

ওদের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো।মা ধমক দিয়ে বলল…

—এই তোরা হাসছিস কেন???তোদের টিয়া কালার পছন্দ না বলে কি কারো পছন্দ হতে পারে না।দেখ ভালো করে আমার ছেলেদের দিকে তাকিয়ে কি সুন্দর টিয়া কালার পরে পুরো টিয়াপাখির মত লাগছে।

মা এর কথা সুনে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আরহাম ইহানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল…..
—মটু তুই আজ শেষ।

ইহান একটা শুকনো ঢোক গিলে উল্টোদিকে ভৌ দৌড় দিল।আরহাম ও ওর পিছনে ছুটলো।এদিকে ওদের কাহিনী দেখে আফরা আর মানহা চিৎকার করে বলতে লাগলো….

—উল্লু মানায়া বরা মাজা আয়া….

_________________________________

৬বছর পর…..
মানহা বেডের উপর মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।একটু পর ঝাঝালো গলায় বলল….
—ডিম খাবি নাকি মার খাবি???

৪বছরের ছোট একটা মেয়ে আধো আধো গলায় বলল…
—আমি এততাও খাবো না….

—তুই খাবি না তোর বাপ খাবে।তোর চৌদ্দ গুষ্ঠি খাবে।
তারাতারি হা কর।(ধমক দিয়ে)

বাচ্চাটি মানহার ধমক শুনে ভ‍্যা ভ‍্যা করে কাদতে লাগলো।তুর কান্না শুনে সেখানে এসে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলল…

—কি হয়েছে আমার তারা পরির???

বাচ্চাটি কান্না করতে করতে বলল…..
—মাম্মাম বকেছে….

(ওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি।বাচ্চাটি হচ্ছে মানহা আর আরহামের মেয়ে।তুর এর বোন তারা।)

তুর রাগি গলায় বলল….
—তুমি আমার পরিকে বকছো কেনো???

—আসছে বোনের হইয়া ওকালতি করতে।তোমার বোন যে ভালো।তাই তো বকতাছি।কতোক্ষন ধরে ডিম নিয়ে বসে আছি খাওনের খবর নাই।আর ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখ কি করেছে।

—তো কি হইছে ও নষ্ট করবে না তাহলে কি তুমি করবে??আর ও নষ্ট করবেই আর তুমি ঘুছাবে।সিম্পল….

—তোদের দুইটারে দেখিস আমি কি করি😡

আরহামঃখবরদার আমার মেয়েদের বকবে না।

তুর আরহামকে বলল…..

—পাপা তোমার বউকে বলে দাও আমার পরিকে যদি আরেক দিন বকে তাহলে একেবারে গাট্টি বোছকা বেধে ভাইয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিব।

আরহামঃ ওকে মা পাঠিয়ে দিও।

তারা হচ্ছে তুর এর জান।ওকে কেউ কিছু বললে তার চৌদ্দ গুঠির খবর নিয়ে ছাড়ে ও।তুর কথাগুলো বলে তারাকে কোলে নিয়ে চলে যেতে নিয়ে আবার এসে মানহার হাত থেকে ডিমটা নিয়ে চলে গেলো।আর যেতে যেতে বলল…
আমার পরিকে আমিই খাওয়াতে পারবো।হুহ….

মানহা হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।আরহাম এতোক্ষন হাসি আটকিয়ে রাখলেও তুর চলে যাওয়ার পর মানহাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আরহাম হাসতে হাসতে ওর সামনে এসে ঢপ করে বেডে বসে পরল।মানহা রেগে আরহামকে বলল….

—হাসো হাসো বেশি করে হাসো।আমি তো আর কেউ না তোমাদের।আজ মেয়ে বলছে ভাইয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে সাথে বাপও তাল মিলাচ্ছে।কবে যেন পাঠিয়েই দেয়।তার থেকে ভালো আমিই চলে যাই।আমি তো আর কারো কিছু হই না।আমি তো পর হয়ে গেছি।

মানহা চলে যেতে নিলে আরহাম মানহার হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে বলল…

—আরে পাগলি রাগছো কেনো।#তোকে_ঘিরেই তো আমার এই সব।তুই ছাড়া তো আমি নিশ্ব।ওরা যদি আমার হার্ট হয় তাহলে তুমি আমার হার্টবিট।হার্টবিট থেমে গেলে মানুষ যেমন বাচে না ঠিক তুমি চলে গেলে আমিও….

আর কিছু বরার আগেই মানহা আরহামকে থামিয়ে দিয়ে বলল…

—কতোবার বললো এসব কথা বলবে না।আমার ভালো লাগে না শুনতে।

আরহাম মুচকি হেসে মানহাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল….
—পাগলি।

দেখতে দেখতে কি ভাবে যে চোখের পলকে ৬টা বছর চলে গেলো।কেউ বুঝতেও পারলো না।সবাই আল্লাহ্ এর রহমতে সুখে আছে ভালো আছে।

মাহাব আর নিধির ৫বছরের দুটো জমজ ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখেই জীবন যাপন করছে।

আফরার একটা সাড়ে চার বছরের ছেলে আছে।সভাবে পুরো আফরা।আফরা এখন আগের মত ছেলেমানুষী করে না।পুরো পাক্কা গৃহিনী হয়ে নিজের সংসার পুরো গুছিয়ে রাখছে।

মিষ্টির ১বছর পূর্বে তার দু ভাইয়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে বাহিরে সেটেল হয়েছে।

একটু পর তুর আর তারা এসে মানহা গলা জরিয়ে ধরে আদর দিয়ে এক সাথে বলল….
—লাভ ইউ মাম্মাম…..

মানহা মেয়েদের আদর পেয়ে রাগ ভুলে তাদের আদর দিয়ে তাদের সাথে দুষ্টোমি করতে লাগলো।আরহাম ও মুচকি হেসে ওদের সাথে বসে দুষ্টোমি করতে লাগলো।
এভাবেই মান-অভিমান খুনশুটি নিয়ে চলছে সবার পরিবার।সবাই সবার প্রিয় মানুষটার সাথে ভালো থাকুক,সুস্থ থাকুক এই কামনাই রইলো।

~~~~~সমাপ্ত~~~~~

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here