তোকে ঘিরে,Part_13,14,15
Ariyana Nur
part-13
নিধি কোমরে আঁচল গুজে কাজে লেগেছে।কেননা এতোদিন পরে তার আদরের ননদিনী তার বাসায় আসছে।তাও আবার বর নিয়ে।এইটু তো বাড়ির চেহারা পাল্টাতেই হবে।নিধি কাজ করছে সাথে খাতা কলম নিয়ে নিয়েছে বাজারের লিষ্ট করার জন্য।একটা করে মনে করছে আর খাতায় লিখে রাখছে।মাহাব ওর কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে।যা নিধির চোখ থেকে আড়াল হলো না।নিধি বিরক্ত হয়ে বলল…
—তুমি কি দাত বের করে হাসবে নাকি মনে করবে কি বাদ পরে গেছে লিষ্ট করতে???
মাহাব অবাক হয়ে বলল….
—আমি কোথায় দাত বের করে হাসছি।আর তুমি এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেন???ওরা আজ আসছে না কাল আসবে।
—তা আমি জানি।কাল আমি এতো কিছু করতে পারবো না।কাল যদি আমি কাজই করি তাহলে আমার মিষ্টি ননদিনীর সাথে গল্প করবো কিভাবে???আর এবার আসলে আমি কিন্তু ওকে এক মাসের আগেও যেতে দিব না।আর এবার কিন্তু ওর হয়ে আমার কাছে সাফাই গাইতে আসবে না।ওর কাজ আছে,তুর এর স্কুল আছে এটা সেটা বলে।
—ঠিক আছে ঠিক আছে।এবার আমি তোমাদের ননদ ভাবীর মাঝে কোন কথা বলবো না।এবার খুশি।
—দেখেছো সকাল থেকে এতো কিছু লিষ্ট করছি কি লাগবে আর বুড়ির চকলেট আর আইসক্রিম এর কথা একবারো মনে হল না।
তুমি কেমন ভাই যে,একবারো এগুলোর কথা মনে করলে না।(ধমক দিয়ে )
—আশ্চর্য আমার সাথে এমন করছো কেন।আমি কি জানি।সবতো তুমিই করছো।
নিধি রাগ দেখিয়ে বলল….
—ধুর…তোমার সাথে কথা বলতে গেলে আমার দেরি হয়ে যাবে।তারাতারি রেডি হয়ে বাজারে যাও।আর সব ভালো আর টাটকা টা আনবে।না হলে তোমার খাবার বন্ধ।
—ওকে মহারানী….
আপনার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।
নিধি মাহাবের কথা শুনে মুচকি হেসে কাজে চলে গেলো।
আর মাহাব মনে মনে বলছে….
—আল্লাহ এর কাছে হাজার শুকরিয়া তিনি তোমার মত একজনকে আমার জীবনসঙ্গীনী করে দিয়েছেন।থ্যাক্স মা….এমন একজনকে আমার জন্য বেছে আনার জন্য যে আমার আগেই আমার পরিবারের জন্য ভাবে।
সব ননদ ভাবীর সম্পর্কে রেশারেশী আর ঝামেলা থাকে না।কিছু কিছু ননদ ভাবীর সম্পর্ক অনেক মধুর হয়।
_____________________________
আরহাম আর তুর সর্পিং এ এসেছে।কাল তুর মামা বাড়ি যাবে তাই আরহাম তুরকে ঘুরতে যাবার কথা বলে সর্পিং এ নিয়ে এসেছে।কিন্তু তাতে আরহাম পরেছে আরেক বিপদে।তুর কোন ড্রেস এর মাপ দিচ্ছে না।গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আরহাম ওনেক বুঝিয়েও কোন কাজ হয়নি।ওর এক কথা মাম্মাম কে না বলে ড্রেস কিনলে মাম্মাম রাগ করবে।আরহাম তুর কে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফোন দিল।দু বার রিং বাজতেই মিষ্টি ফোন রিসিভ করে সালাম দিল।আরহাম সালামের উওর নিয়ে বলল….
—তোর ভাবী কই??
—কেন মিস করছো বুঝি???
—কানের নিচে লাগাবো একটা।ওকে ফোন দে তারাতারি।
মিষ্টি ফোন লাইনে রেখেই জোরে চিৎকার দিয়ে বলল….
—ভাবী….তারাতারি এদিকে এসো।
আরহাম সাথে সাথেই কান থেকে ফোন সরিয়ে বলল….
—ফাজিল মেয়ে আমার কানটা শেষ করলো।বাসায় গিয়ে তোর খবর নিব আমি।
মানহা কাজ করছিল মিষ্টির ডাকে তারাতারি এসে বলল….
—কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেন???
মিষ্টি ফোনটা মানহার হাতে দিয়ে বলল….
—তোমার মজনু ফোন করেছে।
—মানে???(অবাক হয়ে)
—কথা বলো তাহলেই বুঝতে পারবে।ভাইয়া লাইনে আছে।
মানহা ফোন ধরে সালাম দিল।আরহাম সালামের জবাব দিয়ে বলল….
—তুমি আমার মেয়েকে কেন বলেছ আমার দেয়া ড্রেস না নিতে???
আরহাম এর এমন কথা শুনে মানহা অবাক হয়ে বলল….
—এ কথা আমি কখন বললাম???
—না বললে এখন তুরকে বলে দাও আমি যা কিনে দিচ্ছি তা নিতে।
—শুধু শুধু কেন টা….
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়েই আরহাম বলল….
—আমার আর আমার মেয়ের মাঝে তুমি নাক না গলালেই খুশি হব।এখন তোমাকে যা বলছি তা কর।(রেগে)
—আরে এতো রেগে যাচ্ছেন কেন।আপনি ওর কাছে ফোন দিন আমি বলে দিচ্ছি।
তুরঃমাম্মাম জানো পাপা না আমাকে ড্রেস কিনে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু আমি নেই নি।আমি ভালো করেছিনা মাম্মাম।
মানহা মুচকি হেসে বলল….
—হ্যা মা ভালো করেছো।কিন্তু এখন পাপা যা বলছে তা শুনো।পাপা তোমাকে আদর করে ড্রেস কিনে দিতে চাচ্ছে এখন তুমি যদি না নেও তাহলে পাপার মন খারাপ হবে।তুমি কি চাও তোমার পাপার মন খারাপ হোক।
—না না আমি চাই না পাপার মন খারাপ হোক।
—এই তো আমার গুড র্গাল।এবার পাপা যা বলে তা শুনো।আর একদম দুষ্টিমি করবে না আর পাপাকে জালাবে না।
—ওকে মাম্মাম
মানহা তুর এর সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিল।
মিষ্টি তুরকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল….
চুরাকে দিল তোমহারা….
ভাইয়া লে গেয়ি….
মানহা ওকে কিছু না বলেই চোখ রাঙ্গিয়ে চলে গেলো।
এদিকে তো আরহামের দিল মে লাড্ডু ফুটছে।কেননা আজকে প্রথম মানহা তুর এর কাছে বলেছে,তোমার পাপা।এতোটুক শুনেই আরহাম যেন বড় কিছু পেয়ে গেছে।
আরহাম জানে না ওদের সম্পর্ক টা আদো অন্য সবার মত হবে কিনা।তারপরেও আল্লাহ্ এর কাছে দোয়া করে যাতে ওদের সম্পর্ক টা সাভাবিক হয়ে যায়।কেননা একমাএ দোয়াই মানুষের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে।আর আল্লাহ চাইলে কতক্ষন।
তুর আর আরহাম ইচ্ছেমত সপিং করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হল।রিস্কায় বসে বসে আরহাম আর তুর গল্প করতে করতে বাসায় যাচ্ছে।
—মামুনি তোমাকে একটা কথা জিগ্গেস করব???
—কি কথা পাপা???
—তুমি যে আমাকে ঐ দিন রাতে খাইয়ে দিয়েছিলে আর এতোগুলো সুন্দর সুন্দর কথা বলেছিলে সেগুলো কার কাছ থেকে শিখেছো???
তুর কিছু ভেবে বলল….
—কোন দিন পাপা যেদিন থেকে তুমি আমাদের বাড়িতে থাক সেদিন??
—হুম…মা সেদিন।
তুর আবার একটু ভেবে বলল….
—ওওওও…..
সেদিন আমি যা বলেছি সব তো মাম্মাম আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল।আর মাম্মাম তো এটাও বলে দিয়েছিল যদি তুমি খেতে না চাও তাহলে আমি যেন তোমাকে খাইয়ে দেই।আমি যদি তোমাকে খাবার খাওয়াতে পারি তাহলে মাম্মাম আমাকে অনেক গুলো চকলেট দিবে।আর আমি পেরেছি বলে মাম্মাম আমাকে অনেকগুলো চকলেটও দিয়েছিল।
তুর এর কথা শুনে আরহামের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
ও যা মনে করেছে তাই হয়েছে।এতোদিন ওনেকবার তুর কে জিগ্গেস করতে চেয়েছিল।কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পারেনি।
ফ্লাসব্যাক…….
সেদিন মানহা মা এর মুখে শুনেছে যে,আরহাম সারাদিন ধরে না খেয়ে বসে আছে।এটা শুনে মানহার অনেক খারাপ লেগেছে কেননা ওর জন্যই আজ বাড়িতে এতো কিছু হয়ে গেল তার উপরে আবার আরহাম না খেয়ে বসে আছে।তাই মানহা তুরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আরহাম এর কাছে পাঠায়।
দরজায় টোকা পরার শব্দে বিরক্ত হয়ে আরহাম পিছনে তাকিয়ে দেখে তুর কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে।আরহাম তুরকে দেখে ওর সামনে গিয়ে হাটু গেরে বসে বলল….
—কি হয়েছে মামুনি….
তুমি এখানে কেন???
—আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে….
—তুমি রাতে কিছু খাওনি???
তুর ঠোট উল্টিয়ে বলল….
—খেয়েছি তো…তারপরেও ক্ষুধা লেগেছে।
আরহাম মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…
—তাহলে তুমি এখানে কেন???ক্ষুধা লেগেছে গিয়ে কিছু খেয়ে নাও।
—কি করে খাব সবাই ঘুমাচ্ছে।কে আমাকে খাইয়ে দিবে???তুমি কি আমাকে খাইয়ে দিবে???
আরহাম কিছু একটা ভেবে বলল…
—ঠিক আছে।আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিব।
চলবে
তোকে ঘিরে
Ariyana Nur
Part 14
তুর আজ বায়না ধরেছে সে,তার পাপার সাথে ঘুমাবে।মানহা কোন মতেই তুর কে রাজি করাতে পারছেনা যে,তুর যেন ওর সাথে ঘুমায়।
মানহাঃ তুর তুমি কিন্তু বড্ড বারাবারি করছো।পাপার সাথে তো সারাদিন ঘুরেছো তাহলে এমন করছো কেন???দেখো মা এমন করে না। মাম্মাম তোমাকে আজ নতুন গল্প শুনাবো।
তুরঃ না আমি তোমার গল্প শুনবো না।আমি পাপার গল্পই শুনবো।আর পাপার সাথেই ঘুমাবো।
মিষ্টিঃভাবী এক কাজ করলে হয় না।আমি মার কাছে গিয়ে ঘুমাই ভাইয়া না হয় এখানে এসে তোমাদের সাথে ঘুমাক।আথবা তোমরা ভাইয়ার রুমে চলে যাও।
মানহা রাগি চোখে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল….
—ধন্যবাদ এতো বাজে আইডিয়া দেওয়ার জন্য।এখন চুপ করে এখানে শুয়ে থাকো তা না হলে তোমাকে পেকেট করে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিব।
মিষ্টি খুশি হয়ে বলল….
—সত্যি বলছো তুমি আমাকে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিবে।
মানহা মিষ্টির কানমলা দিয়ে বলল….
—পাজি মেয়ে তোমার শশুরবাড়ি যাওয়ার ভুত আমি ঘাড় থেকে নামাচ্ছি।
—আহ্…ভাবি লাগছে আমার।আমি কি আগে বলেছি না কি।তুমি বললে তাই তো আমি বললাম।
—তা তো দেখতেই পাচ্ছি।শশুরবাড়ি যাওয়ার কথা শুনলে তুমি কেমন পাগল হয়ে যাও।আর একটা কথা কাল খুলে শুনে রাখুন আপনার পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগে আপনাকে ছাদনা তলা পাঠাচ্ছি না।বুঝলেন মাই সুইট বেহেনা….
—তাহলে তো আমি বুড়ি হয়ে যাব।তখন আমাকে কেউ বিয়ে করবে না।(গাল ফুলিয়ে)
মানহা মিষ্টির গাল টেনে দিয়ে বলল….
—ওলে…রাগ করেনা।কে বলেছে কেউ বিয়ে করবে না। তোমার হিরো তুমি বুড়ি হয়ে গেলেও বিয়ে করবে।
—ধুর বুড়ি হয়ে গেলে কি ছবি সুন্দর আসবে।এফ বি তে পিক দিলে তো লাইকই পাবো না।(গাল ফুলিয়ে )
—আল্লাহ্ রক্ষা করো।এই পাগল নিয়ে আমরা কোথায় যাবো।
ওদের এই খুনশুটির মাঝে তুর যে কখন বিছানা থেকে নেমে রুমের বাইরে চলে গেছে ওরা বলতেই পারে না।
আরহাম বিছানায় বসে বসে কাজ করছে এমন সময় তুর ওর সামনে গিয়ে কান্না করতে লাগলো।আরহাম তুরকে ওর সামনে দাড়িয়ে কান্না করতে দেখে তারাতারি ওকে ওর কোলে বসিয়ে বলল….
—কি হয়েছে মামুমি???তুমি কান্না করছো কেন???
তুর কান্না করতে করতে বলল…
—মাম্মাম পচা….
—মামুনি তুমি না ভালো মেয়ে….
ভালো মেয়ে কি মাম্মাম কে পচা বলে….
—তাহলে মাম্মাম আমাকে তোমার কাছে আসতে দেয় নি কেন???
—কি হয়েছে আমার মামুনির???সে কি আমাকে বলবে….
—আমি মাম্মাম কে বলেছি তোমার কাছে গল্প শুনবো আর ঘুমাবো তাই আমাকে বকা দিয়েছে।
—এত্তো বড় সাহস আমার মামুনিকে বকা দিয়েছে।আমি তোমার মাম্মাম কে বকে দিব।
—সত্যি বকে দিবে।(খুশি হয়ে)
—হুম…এবার কান্না বন্ধ কর।আর বলো কি গল্প শুনবে??আজ আমি আমার মামুনিকে নতুন একটা গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিব।
তুর খুশি হয়ে আরহামে গলা জরিয়ে ধরে বলল….
—তুমি আমার অনেক… ভালো পাপা।
____________________________
ঘরির কাটায় রাত ১২টা বাজে।মানহা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।কিছুতেই ওর চোখে ঘুম আসছে না।আসবে কিভাবে তার কলিজা,চাদের কনা তো আর আজ তার কাছে ঘুমোয় নি।
তখন ওদের খুনশুটির মাঝে যখন ওদের খেয়াল হলো তুর বিছানায় নেই তখন মিষ্টি আরহামের রুমে তুরকে খুজতে গিয়ে দেখে তুর আরহামের গলা ধরে শুয়ে রয়েছে। আর আরহাম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গল্প বলছে।মিষ্টি তুরকে নিয়ে আসতে চাইলে আরহাম ওকে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।আর বলে আমার মেয়েকে আজ যে আমার কাছ থেকে নিতে আসবে তাকে আজ সারারাত বাড়ির বাহিরে রাখবো।আর এদিকে তুর আরহামের কথা শুন খিলখিল করে হাসছে।
মানহা শোয়া থেকে উঠে মিষ্টিকে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল কেননা সে ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে।
মানহাঃধুর….মরার ঘুম ও আজ মনে হয় বেড়াতে গেছে।কিছুতেই ঘুম আসছে না।ফাজিলটাকে কালকে পেয়ে নেই।আমাকে না বলে পাপার কাছে যাওয়ার মজা বুঝাবো ওকে।
মানহা একা একা বিরবির করে বকর বকর করছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।মানহা গিয়ে দরজা খুলে দেখে আরহাম তুরকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর তুর আরহামের কোলে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
আরহামঃ সরি এতো রাতে তোমার ঘুমের ডিস্টাব করার জন্য।
মানহাঃনা না সম্যসা নেই।আর আমি ঘুমিয়ে ছিলাম না।
—ও কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়েছে। যখন গভীর ঘুমালো তখন নিয়ে এলাম।
—কেন নিয়ে এসেছেন কেন???আপনার মেয়েকে যে আনতে যাবে তাকে না আপনি বাড়ির বাহিরে রাখবেন।তাহলে দিয়ে যাচ্ছেন কেন???জালাচ্ছে বুঝি আপনাকে???
মানহার আভিমানি কথা শুনে আরহাম মুচকি হেসে বলল…
—আমার মেয়ে মত পচা না যে আমাকে জালাবে। আর জালালেও সম্যসা নেই আমি সয্য করে নিতাম।
—তাহলে নিয়ে এলেন কেন???
—তোমার জন্য।তোমার যে ওকে ছাড়া ঘুম আসবে না তা আমার ভালো করেই জানা আছে।এবার ওকে নিয়ে ঠিক মত শুইয়ে দাও।নাড়াচাড়া করছে জেগে গেলে সমস্যা হতে পারে।
মানহা তুরকে আরহামের কাছ থেকে নিয়ে আসার সময় আরহাম বলল….
—শোনো….
মানহা ঘুরে দাড়াতেই আরহাম সাইড থেকে একটা সর্পিং ব্যগ ওর হাতের সামনে ধরে বলল…
—এটা তোমার।ওনেক খুজে মা মেয়ের এক রকম ড্রেস এনেছি।গ্রহন করলে খুশি হব।আর কালকে যদি পরো তাহলে আরো খুশি হব।
মানহা কিছু না বলে চুপ করে দিয়ে দাড়িয়ে আছে।ও পরেছে ফেসাদে।একবার মন বলছে নিতে আরেকবার বলছে নিলে বাড়ির সবাই কি ভাববে।যদিও জানে বাড়ির সবাই অন্য রকম।তারপরেও নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে।
মানহাকে এমন দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরহাম বলল….
—সম্যসা নেই সবার জন্যই এনেছি।আর তোমার জন্যও ।আর আমার বাড়ির মানুষ কেমন তা তো মনে হয় না আমার তোমাকে বলতে হবে।তোমার ইচ্ছে হলেই ড্রেস টা পরো না হয় কাবাডের এক কোনায় রেখে দিয়।
আরহাম মানহার হাতে ব্যগটি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
_______________________________
সকাল থেকেই মানহা আর তুর উঠে পরে লেগেছে কি রেখে কি করবে।আর ঐদিকে নিধি তো বার বার ফোন করে জিগ্গেস করছে ওরা কখন আসবে।
মিষ্টির একটা জরুরী ক্লাস আছে তার জন্য মা আর মিষ্টি পরে যাবে।মানহা ওদের নিয়ে এক সাথেই যেতে চেয়েছিল কিন্তু মা ওকে বুঝিয়ে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আরহাম রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু মানহা আর তুর এর আসার খবর নেই।মিষ্টি এসে আরহামকে পর্যব্যেক্ষন করে বলল….
—বাহ্…বাহ্….তুমি দেখি সেজে কেজে একেবারে দুলা হয়ে বসে আছো।
আরহাম ওকে ধমক দিয়ে বলল…
—চোখে চশমা পড়ে দেখ আমি কোথায় সেজেছি।
—আরে রাগছো কেন???আজ তো তোমাকে পুরো নতুন জামাই লাগছে এই সাজে।একটু ভেবে আবার বলল….
—কিন্তু এই রাগি চেহারাটা মানাচ্ছে না।আরে ভাই নতুন জামাই চেহারায় একটু লাজুক লাজুক ভাব থাকবে।তা না কেমন গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
—টমেটো তুই আমার সামনে থেকে সর।আমার মাথা গরম করিস না।আর দেখ ওদের আর কতোক্ষন লাগবে।সেই কখন থেকে বসে আছি।
মিষ্টি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল….
—আমি পারবো না।নিজে গিয়ে দেখে আসো।
আরহাম বিরক্ত হয়ে মানহার রুমের দরজার সামনে এসে দা হা করে সামনে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
কেননা মানহা আরহামের দেওয়া ড্রেস টা পরেছে।মানহা তুর এর সামনে হাটু গেড়ে বসে তুর এর ঠোট লিপস্টিক দিয়ে দিচ্ছে।এক রকম ড্রেসে মা মেয়েকে ওনেক সুন্দর লাগছে।আর আরহামের চোখ সেদিকেই আটকে রয়েছে।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।মিষ্টি আর আরহামের সম্পর্কটা কেমন লাগছে???ভাই বোনের সম্পর্ক কি এমনি হয়???ধন্যবাদ)
তোকে ঘিরে
Part_15
Ariyana Nur
—পাপা তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন???
তুর আরহাম কে দারজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাটা বলল।তুর এর কথায় আরহামের হুস আসে।সে নিজেকে সামলিয়ে বলে….
—তোমাদের হয়েছে???আর কতক্ষন লাগবে???
তুর আরহামের সামনে গিয়ে বলল….
— পাপা আমি রেডি।দেখতো আমাকে কেমন লাগছে???
আরহাম তুর এর সামনে হাটু গেড়ে বসে ওকে আদর দিয়ে বলল….
— মাশাল্লাহ্…. আমার মামুনিকে পুরো পরির মত লাগছে।
(আচ্ছা পরি দেখতে নাকি অনেক কুৎসিত???ওরা নাকি রূপ নিয়ে থাকে???তাহলে সবাই বলে কেন পরির মত সুন্দর???🤔🤔)
—আর মাম্মাম কে???
তুর এর কথা শুনে আরহাম মানহার দিকে এক পলক তাকিয়ে তুর কে বলল….
—তারাতারি চলো মা।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।আর তোমার হয়েছে???(মানহা কে উদ্দেশ্য করে)
মানহাঃ আপনারা একটু বসুন আমি বরকাটা পরে আসছি।
আরহামঃ ঠিক আছে।তারাতারি আসো।
_________________________
কলিং বেলের শব্দ শুনে নিধি তারাতারি দরজা খোললো।দরজার খোলার সাথে সাথেই তুর মামিমা…বলে চিৎকার দিয়ে নিধি কে জরিয়ে ধরলো।নিধিও তুর কে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
মানহাঃআমাকে তো কেউ চোখেই দেখে না।আমি কি এতোই পর হয়ে গেছি না কি???
মানহার আভিমানী কথা শুনে নিধি তুরকে ছেড়ে দিয়ে মানহার সামনে গিয়ে ওর কানমলা দিয়ে বলল….
—কি বলেছো আরেক বার বলো তো।
—আহ্ ভাবিমা লাগছে আমার।আমি এতোদিন পরে আসলাম আর তুমি আমাকে কানমলা দিচ্ছ।আমার সাথে যে আরো কেউ আছে সেদিকে তোমার খবর আছে।অন্তত তার সামনে আমার মান সম্মান প্লাস্টিক করো না।
নিধি মানহার কান ছেড়ে দিয়ে বলল…
—পরে এর হিসাব নিব।
আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলল….
—কেমন আছেন ভাইয়া???আর বাহিরে কেন ভিতরে আসুন।
আরহামঃ আসসালামু আলাইকুম??কেমন আছেন ভাবি???
—জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।
নিধি ওদের কে বসিয়ে একটু কথা বলে নাস্তার ব্যবস্তা করতে চলে গেল।
মানহা গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে আছে।কেননা এখানে এসেছে সকালে আর এখন দুপুর হয়ে গেছে।কিন্তু এখন পযর্ন্ত মাহাব এর দেখা মিলে নি।মাহাব ফোন করে বলে দিয়েছে ও একটা জরুরী কাজে আটকে গেছে।তার জন্য বাড়িতে আসতে দেরি হবে।আবার এদিকে মিষ্টি ফোন করে বলেছে তারা আজ না কালকে আসবে।সব মিলিয়ে ও পুরো বম হয়ে বসে আছে।যে কোন সময় ফেটে যেতে পারে।আরহাম অপর সাইডের সোফায় বসে মানহার কাহিনি দেখে মিটমিট করে হাসছে।মানহা তা লক্ষ্য করে দাতে দাত চেপে বলল….
—এতো হাসছেন কেন???দেইখেন হাসির ঠেলায় যেন দাত পরে পা না কেটে যায়।
আরহাম মানহার কথা শুনে কতোক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হাসতে লাগলো।আর মানহা আরো পাউরুটির মত ফুলতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর মাহাব বাড়িতে আসলো।মাহাবকে দেখে তুর মামা বলে দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে দাড়ালো।মাহাব তুরকে কোলে নিতেই তুর মাহাব এর গলা জরিয়ে ধরে বলল…..
—মামা….কেমন আছো তুমি???
—এতোক্ষন ভালো ছিলাম ।এখন তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।তুমি কেমন আছো মা….(আদর দিয়ে)
—আমি অনেককক ভালো আছি।আমার চকলেট কোথায়???
—আমি কি আমার মা এর চকলেটের কথা ভুলতে পারি।মাহাব তুর এর হাতে একটা ব্যগ ধরিয়ে দিয়ে বলল….
—এখানে তোমার চকলেট আছে।একা কিন্তু খেয়োনা।মাম্মাম কে দিয়ে খেয়ো।তা না হলে মাম্মাম রাগ করবে।
—এমা…তুমি জানো না মাম্মাম গাল ফুলিয়ে বসে আছে।(অবাক হয়ে)
—সত্যি(অবাক হওয়ার ভান করে)
আমি তো জানতামি না।আচ্ছা তুমি মামার রুমে গিয়ে দেখো খেলনা আছে তা দিয়ে খেলতে থাকো।এদিকে আমি তোমার মাম্মাম এর রাগ ভাঙ্গিয়ে আসি।
—ওকে মামা…
আরহাম মাহাব কে দেখে উঠে মাহাব এর সামনে এসে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল।মাহাব ও সালামের জবাব দিয়ে হাত মিলিয়ে বলল….
—কেমন আছো???
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আপনি কেমন আছেন???
— আলহামদুলিল্লাহ্….
তা আসতে কোন সম্যসা হয়নি তো….
—না না কোন সম্যসা হয়নি।
—তা আমাদের বুড়ি কোথায়???শুনলাম সে নাকি গাল ফুলিয়েছে???
আরহাম মুচকি হেসে ইশারায় মানহাকে দেখিয়ে দিল।
মাহাব মানহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত রেখে বলল….
—আমার বুড়ি কি আমার সাথে রাগ করেছে???কথা বলবে না আমার সাথে???সরিরে….জরুরী একটা কাজ পরে যাওয়ার জন্য যেতে হয়েছে।তা না হলে আমি একটুও যেতাম না।
মানহা আরহামের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।আর মাহাব এদিকে মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
একটু পর মানহা আরহামকে ছেড়ে দিয়ে নাক টেনে বলল….
—আমি রাগ করেছি তোমার সাথে।
মাহাব মুচকি হেসে বলল….
—তা কি করলে আমার বুড়ির রাগ ভাঙ্গবে???
—আমাকে অনেকগুলো চকলেট আর আইসক্রীম কিনে দিতে হবে।
—তাহলেই রাগ ভাঙ্গবে???
—হুম….
—ওকে তাহলে পেয়ে যাবে।
মানহা খুশি হয়ে আরহামকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আমার বেস্ট ভাইয়া…..
আরহাম মানহার মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—পাগলী একটা….
(আজ ভাই নাই দেইখা….তা না হলে আমিও মানহার মত রাগ করলেই চকলেট পেতাম😔😔আর এদিকে আমার ভাই আমার জন্য চকলেট কিনতে কিনতে ফকির হতো🙃🙃)
________________________
রাতের বেলা খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে শুধু মানহা নেই।নিধি তুরক খাইয়ে দিচ্ছে।আর মাহাব আর আরহাম বসে বসে কথা বলছে।
মাহাবঃনিধি মানহা কোথায়???ও খাবে না???
নিধিঃএতোক্ষন তো আমার সাথেই কাজ করছিলো।তোমরা আসার আগেই চলে গেলো।ডাক দিলাম কোন কথা তো বলল না।তোমরা বস আমি দেখে আসছি।(তুর এর মুখে খাবার দিতে দিতে)
আরহামঃভাবি আপনি কষ্ট করে কেন উঠতে যাবেন।তাছাড়া আপনি তুর কে খাইয়ে দিচ্ছেন।আপনি বরং ওকে খাইয়ে দিন আমি ওকে ডেকে আনছি।
মাহাবঃতুমি বস আমি দেখছি।
আরহামঃনা না আপনি বসুন।আমি ওকে ঢেকে নিয়ে আসছি।
আরহাম খাবার টেবিল থেকে উঠে যেতে নিলেই দেখে মানহা আসছে।মানহাকে দেখে ও আবার চেয়ারে বসে পরে।
মানহা এসে মাহাব এর পাশে বসে বলল….
—ভাইয়া দেখো আমার না হাত নেই।
মানহার কথা শুনে আরহাম ওর দিকে অবাক হয়ে তাকায়।মানহাকে ভালো ভাবে পর্য্যবেক্ষন করে দেখে মানহা আরহামের একটা জেকেট পরে হাত দুটো জেকেটে ভিতরে ঢুকিয়ে রেখেছে।আর এদিকে জেকেটের হাতা দুটো নিজে নড়েচড়ে নাড়িয়ে দেখাচ্ছে।
নিধিঃশুরু হয়ে গেছে ছেলেমানুষী।তা এতোক্ষন কি এই করতে গিয়েছিলেন???
মানহাঃকথা বলো না আর।আমাকে ধন্যবাদ দাও তোমার গুছানো কাপড় এবার নষ্ট করিনি।(গাল ফুলিয়ে )
মানহা খাবার টেবিলে গুছিয়ে দিয়ে নিধির রুমে যায় মাহাব এর জেকেট খুজতে।কিন্তু অনেক খুজেও মাহাব এর একটা জেকেট ও সামনে পায়নি।আর এদিকে নিধি বার বার ডাকছে খাবার খেতে তাই সামনে আরহাম এর যে জেকেট ছিলো সেটা পরেই এসে পরে।
নিধিঃ তুমি বুড়ি ছোটই রয়ে গেলে।বললেই তো হয় তোমার ভাইয়াকে খাবার খাইয়ে দেওয়ার কথা।
মানহাঃ বলবো কেন???এতোদিন নিজের হাতে খেয়েছিনা।আজ ভাইয়া খাইয়ে দিবে।
নিধিঃ পাগলী…..
মাহাবঃ হয়েছে এবার তোমরা থামো।আয় বুড়ি আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।
মাহাব মানহাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর মানহা ছোট বাচ্চাদের মত খাচ্ছেে আর দুজন মিলে খুনশুটি করছে।এদিকে ওদের ভাই বোনের কাহিনী দেখে নিধি আর আরহাম মিটমিট করে হাসছে।
ভাই বোনদের সম্পর্কই।খুনশুটি আর ঝগড়ার মাঝেই তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
চলবে