তুমি রবে নীরবে
পর্ব ২০,২১
অপরাজিতা টুয়া
পর্ব ২০
মাঝরাতে ফোনের আওয়াজে চমকে খাটে উঠে বসলো স্নেহা, এই মাঝরাতের ফোনগুলোকে বড় ভয় পায় ও, আজ পর্যন্ত যখনই এত রাতে ফোন এসেছে কিছু খারাপই হয়েছে সব সময়। হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে তুলেই দেখলো টুয়া, ফোন ধরে হ্যালো বলতে গিয়েই গলাটা কেঁপে গেলো একটু,
বাপি চলে গেলো স্নেহা, শুনেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো স্নেহার।
দুবার হ্যালো হ্যালো বলে কেটে দিলো টুয়া, স্নেহা নির্বাক হয়ে বসেছিলো, কথাগুলো ঠিক যেনো বুঝে উঠতে পারছে না ও, কি বললো টুয়া, বাপি নেই!! ওর প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে কেউ নেই হয়ে গেলো এই প্রথম, সেই ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছে স্নেহা, বাপি আর বাবার মধ্যে তো ফারাক দেখেনি ও কোনোদিনও, বাপি তো ওর শ্বশুর নয় বাবাই।
কি হয়েছে? কার ফোন? এরকম ভাবে বসে আছো কেনো?
বাবাই এর বলা কথাগুলো যেনো স্পর্শই করছে না ওকে, খানিকক্ষন শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খুব অদ্ভুত স্বরে বললো
বাপি চলে গেছে আমাদের ছেড়ে আর কোনোদিনও ফিরবে না, চমকে উঠলো বাবাই।
বাড়ি ভর্তি লোকজন, ওর বাবা, মাও এখানে চলে এসেছে। মামনিকে সামলাতে হচ্ছে আবার বাড়িতে আসা লোকজনদের সঙ্গেও কথা বলতে হচ্ছে, সব কিছু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো স্নেহা।
মামনি সকাল থেকে কিছুই খায়নি, স্নেহারা ভোরের ফ্লাইটে এসেছে এখানে, এসে থেকেই একই ভাবে মামনি কে বসে থাকতে দেখেছে স্নেহা, এইমুহুর্তে ওর ওপর এত দায়িত্ব যে নিজের শোক করার মতো সময় ওর নেই। তাও টুয়া অনেকটাই শক্ত আছে তাই রক্ষ্যে।
বাপিকে চুল্লি তে ঢুকিয়ে দেবার পর চুপ করে বসে ছিলো বাবাই, সবাই বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে আছে, অনেকেই ওর পাশে এসে বসছে, কিন্তু ও যেনো একদম একা হয়ে গেছে এই মুহূর্তে। বাপির সঙ্গে কতদিন কথা বলেনি ও! এখন খুব আফসোস হচ্ছে, ইস, ও যদি একটুও বুঝতে পারতো, তাহলে সব মিটিয়ে নিতো, আবার যদি পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতো সময়ের কাঁটাটা কে, শুরু থেকে শুরু করতে পারতো যদি, তাহলে সব ভুলগুলো ঠিক করে নিতো এইবার। ছট ফট করছে মনের ভেতরটা, আর কিছুই করার নেই!!
সব কিছু মিটিয়ে বাবাই এর খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো স্নেহা, অনেক রাত হয়েছে, বাড়ি এখন শান্ত, সবাই মোটামুটি চলে গেছে, মা আর টুয়া আছে মামনির সঙ্গে। বাবাই শ্মশান থেকে ফিরে চুপ করে মাথা নিচু করে বসেছিলো খাটে, খাবারটা সামনে রাখলো স্নেহা।
খেয়ে নাও, সকাল থেকে কিছু খাওনি।
ইচ্ছে করছে না, মাথা নিচু রেখেই বললো বাবাই।
স্নেহার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, বাবাই কে এতটা বিধস্ত ও দেখেনি আগে, আস্তে করে ওর মাথায় হাতটা রাখলো স্নেহা। আচমকাই ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো বাবাই।
শুধু আমার জন্য এত তাড়াতাড়ি চলে গেলো বাপি, আমি যদি তখন বিয়ে নিয়ে এত জেদ না দেখাতাম, বাপির স্ট্রোক ও হতো না, ঐটাই সব গন্ডগোল হয়ে গেলো, তখন যদি আমি একটুও বুঝতে পারতাম বাপি আর বেশিদিন থাকবেনা!! হাউ হাউ করে কাঁদছিলো বাবাই।
অনেক কিছুই আমরা অনেক পরে বুঝতে পারি, তখন আফসোস করলেও আর সেই সময় টাকে ফিরে পেতে পারিনা, তাই যেকোনো কিছু করার আগে অনেক ভাবা উচিত, যারা নেই, তারা আর ফেরেনা, কিন্তু যারা আছে, তাদের কে আর হারিয়ে যেতে দিওনা কোনোদিনও, বাবাই এর চোখের দিকে তাকালো স্নেহা।
তারাও কি হারিয়ে যাচ্ছে স্নেহা!! আমি কি বড্ড বেশি দেরি করে ফেললাম, তাদের আটকাতে!! না, কোনোদিনও দেবোনা আর, স্নেহার বুকে মুখ গুঁজে দিলো ও, এর থেকে শান্তির জায়গা আর নেই কোথাও।
জানোতো, আমার খুব ইচ্ছা করতো বাপি কে ফোন করতে, কিন্তু আমি নিজেই নিজের চারদিকে একটা দেওয়াল তুলে দিয়েছিলাম, ভাঙতে চেষ্টা করেছি কতবার, কিন্তু পারিনি শেষ পর্যন্ত। মা আর মামনি যদি নিজে থেকে ফোন না করতো, আমি ওদের সঙ্গেও কথা বলতে পারতাম না কোনোদিনও।
আমি ভেবেছিলাম তুমি কথা বলতে চাও না, তাই তোমাকে কোনোদিনও জোর করিনি, তুমি যদি একবার আমাকেও বলতে!! আমিই কথা বলিয়ে দিতাম বাপির সঙ্গে।
তোমাকেই তো কত কথা বলতে চেয়েছি কতবার, সেটাও তো পারিনি, কতদিন বলতে চেয়েছি, কিন্তু বলে উঠতে পারিনি, আজও না বললে দেরি হয়ে যাবে বোধহয়!! আমি আর কাউকে হারাতে চাইনা, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি স্নেহা, বিশ্বাস করো, তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না আর কোনোদিনও। আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ, যা যা বলেছিলাম, যা করেছিলাম, সব কিছুর জন্য অনেকবার ক্ষমা চাইতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি, আজ চাইছি, পারবেনা ক্ষমা করে দিতে, সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে? শক্ত করে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো ও।
পুরনো কোনো কথা নতুন করে আর মনে করতে চাইনা, অনেকদিন আগেই সেসব ভুলে গেছি আমি, আর তুমি মুখে না বললেও আমি জানি, তুমি অনেকদিন আগেই শুরু করতে চেয়েছ সব কিছু নতুন করে, কিন্তু আমি তোমার মুখ থেকে একবার অন্তত শুনতে চেয়েছিলাম শুধু। ভুল রাস্তায় যতদূরই চলে যাই না কেনো আমরা, যদি নিজে থেকে রিয়েলাইজ করে ফিরতে চাই, তাহলে যে কোনো সময় আবার ঠিক রাস্তায় ফিরতে পারি তাইনা!!
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো বাবাই এর, পাশেই স্নেহা ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছিলো, স্নেহার মাথায় হাত রেখে, কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো ও, এতদিনের না বলতে পারা কথাগুলো আজ বলতে পেরে খুব শান্তি হচ্ছিলো। আজ সারাদিন বেচারীর খুব ধকল গেছে, কাল রাত থেকে যা গেলো, ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই খারাপ লাগাটা ফিরে এলো আবার। জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে হবে এবার, বাপির হটাৎ চলে যাওয়া অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেলো, এক ধাক্কায় ওকে অনেকটাই বড় করে দিয়েছে যেনো!!
বাড়িতে এসে বাপি কে আর কোনোদিনও দেখতে পাবেনা এটা মনে হতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। ও কতো কষ্ট দিয়েছে সবাই কে একদিন, এখন আফসোস হচ্ছে খুব। আজ প্রায় বছর খানেক হতে চললো বিয়ের, মানে বিয়ের পর থেকে মায়ের অসুস্থতায় এক বার মাত্র আসা ছাড়া আর বাড়িই আসেনি ও!!, এটা মনে হতেই মন টা আরো খারাপ লাগলো।
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো বাবাই, বারান্দার একদম শেষ প্রান্তে মামনি দাঁড়িয়ে আছে, রেলিং এ হেলান দিয়ে, সামনে এগিয়ে গেলো ও। পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই ফিরে তাকালো মামনি,
ঘুমোস নি?
তুমিও তো জেগে আছো।
ঘুম আসছে না, কাল পর্যন্ত যে মানুষটা ছিলো, আজ সে নেই হয়ে গেলো বল!! কিছুতেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছি না। তোকে খুব দেখতে চাইতো সব সময়, তোর সঙ্গে ফোনে কি কথা হয় জিজ্ঞেস করতো আমাকে।
মামনি, তোমার কি মনে হয়, বাপি আমার জন্যই এত তাড়াতাড়ি চলে গেলো?
ধুর বোকা!! তুই জানিস না তোর বাপি তোকে কতটা ভালোবাসতো, শুধু মানুষটার কঠিন ব্যবহার টাই দেখেছিস, লুকিয়ে রাখা ভেতরটা দেখিস নি কোনোদিনও। স্নেহা খুব ভালো মেয়ে, তুই বুঝবি আস্তে আস্তে, তোর বাপি তোর খারাপ চায়নি কখনো।
মামনি, বিশ্বাস করো আমিও বাপির কাছে আসতে চেয়েছি, কিন্তু কিছুতেই নিজের অস্বস্তি কাটিয়ে ফোন করে সরি বলতে পারিনি, বাপি কে বলতে পারিনি, কিন্তু তোমাকে বলছি, আমি জানি তোমরা আমার খারাপ চাওনি, স্নেহা সত্যিই খুব ভালো, ওর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।
তোরা ভালো আছিস এটা জেনে ওপর থেকেই বাপি খুশি হবে খুব, বাবাই কে জড়িয়ে ধরলো মামনি।
চলবে
তুমি রবে নীরবে
পর্ব ২১
এতকিছু দায়িত্ব কোনোদিনও সামলায়নি বাবাই, একদম হিমশিম খাচ্ছিলো ও। ব্যাংক, বাজার, শ্রাদ্ধের কাজকর্ম সব দায়িত্ব ওর ওপরেই এসে পড়েছে। এতো কিছু কিভাবে করবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না, কোনো দিনও ও সংসারের কোনো ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি, কলকাতাতেও সব দায়িত্ব স্নেহাই নিয়ে নিয়েছে মোটামুটি, ওর ভাবনার মধ্যেই স্নেহা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
তুমি উঠে পড়েছো? ভালোই হয়েছে, জয় দা কে আসতে বলেছি, তোমার সঙ্গে থাকবে একটু, না হলে তো তুমি বিপদে পড়ে যাবে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো বাবাই।
স্নেহা যে কি করে সব বুঝে ফেলে কে জানে, কিন্তু জয় এর সঙ্গে কিভাবে কথা শুরু করবে, সেটা ভেবেই একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর।
জয় ওর একসময়ের প্রিয় বন্ধু ছিলো, ওদের বাড়িতে আসতে আসতেই টুয়ার সঙ্গে প্রেম ওর, বাবাই এরও খুব বেশি আপত্তি ছিলো না কোনোদিনই। ও একসময় প্রশ্রয় দিয়েই এসেছিলো ব্যাপারটাকে। বাপি যখন আপত্তি জানিয়েছিল তখন বন্ধুর পাশেই দাঁড়িয়েছিলো ও।
কিন্তু তাল কাটলো, সায়ন্তির কথা জানার পর, ও বা টুয়া কেউই ওর সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনা এখন। তাই জয় কে ডাকতে একটু ইতস্তত করছিলো ও, বুঝতে পারছিলো না কিভাবে কথা বলবে ওর সঙ্গে।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এসবই ভাবছিলো ও, জয় ঘরে ঢুকে এলো।
এসো জয় দা, তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি আমরা, বাবাই কিছু বলার আগেই স্নেহা বলে উঠলো।
হ্যাঁ, বল কি করতে হবে খুব সহজ ভঙ্গিতে কথা গুলো বললো জয়, অস্বস্তি টা একটু একটু কাটছিল বাবাই এর।
যাও, তোমরা বেরিয়ে পড়, আর দেরি করো না,
জয় কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাবাই। সব কাজকর্ম সেরে ফেরার পথে জয় কে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবে ভেবেই রেখেছে ও, নাহলে আবার ওকে ফিরতে হবে বাসে।
জয় কে নামিয়েই বেরিয়ে আসছিলো ও
ঘরে ঢুকবি না? মায়ের সঙ্গে দেখা করে যা,
সত্যিই অনেকদিন দেখা হয়নি কাকিমার সঙ্গে, আর টুয়ার হবু শ্বশুরবাড়ি ও বটে, তাই ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলো বাবাই।
মা বাবাই এসেছে, চা করো,
শুনেই কাকিমা এগিয়ে এলেন। দু এক কথার পর কাকিমা চলে যেতেই বাবাই নিজে থেকেই কথা বলতে চাইলো আজ, নাহ! আর কোনো বৈরিতা ও রাখতে চায়না কারও সঙ্গে, বিশেষ করে টুয়ার বিয়ের দায়িত্ব এখন ওরই, বাপি শুধু রেজিস্ট্রি করেই গেছেন, কিন্তু অনেক কিছু কাজ এখন ওকেই করতে হবে।
তোকে কিছু বলার ছিলো জয়, তুই আমার ওপর রেগে আছিস আমি জানি সেটা, কিছুদিন থেকেই তোকে বলবো ভাবছিলাম, কিন্তু হয়ে উঠছিলো না আর, ইতস্তত করছিলো বাবাই।
তুই যদি আমাকে সরি বলতে চাস, তাহলে তার কোনো দরকার নেই, আমি এটুকুই বলতে পারি, একসময় সত্যি তোর ওপর রাগ হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এই মুহূর্তে আর সেসব কিছু নেই, তাই এই প্রসঙ্গে আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন নেই, বাবাই এর ইতস্তত ভাব লক্ষ করেই বললো জয়।
স্বস্তির শ্বাস ফেললো বাবাই, এত সহজেই যে জয় মিটিয়ে ফেলবে ব্যাপারটা ও একটুও আশা করেনি।
ভাগ্যিস জয় ছিলো, না হলে এত কিছু ওর একার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হতো না জানে বাবাই, স্নেহা কে একটা থ্যাংকস জানাতে হবে, ও জয় কে ডেকে না আনলে নিজে থেকে কিছুতেই জয় এর সঙ্গে কথা বলতে পারতো না , ফিরে এসে খাটে শুয়ে ভাবছিলো ও।
দুপুরে খেয়ে উঠে মোবাইলে সায়ন্তির মিসড কল দেখলো, এত দিন পরে!! একটু অবাকই লাগলো, কতদিন হলো, ফোন করেনি সায়ন্তি, নিজেই মনে করতে পারছিল না আর, প্রায় মাস পাঁচেক তো নিশ্চয়ই!! কিন্তু রিং ব্যাক করার আর প্রয়োজন মনে করলো না এই মুহূর্তে, খুব জরুরী হলে আবার করবে নিশ্চয়ই।
সারাদিনে এতটাই ব্যস্ততা ছিলো যে ফোনের কথা ভুলেই গিয়েছিল ও। আর ও জানেই আপাতত ওর কোনো প্রয়োজন নেই, তাই ফোন করে থাকলেও এমনই করেছে হয়ত।
মামনি কিছুতেই খাওয়া দাওয়া করতে চাইছে না, তাই মনটা খারাপ হয়েছিলো, স্নেহাকে রেখে যাবার কথা বললেও মামনির প্রবল আপত্তি তাতে। মামনির ধারণা ওর খুব অসুবিধা হবে স্নেহা না থাকলে, সেটা অবশ্য নিজেও জানে বাবাই, কিন্তু এই মুহূর্তে অন্য কিছু সমাধান ভাবতে পারছিলো না ও।
শেষে মা আর জয় দুজনেই বললো কোনো অসুবিধা হবেনা, ওরাও চাইছিলো বাবাই স্নেহাকে নিয়েই যাক, তাই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলো ও।
ও শুয়ে পড়েছিলো, স্নেহা ঘরে ঢুকলো,তক্ষুনি ফোন টা বেজে উঠলো, সায়ন্তির ফোন, স্নেহা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো, কিন্তু এই মুহুর্তে স্নেহার সঙ্গে ওর যা সম্পর্ক, ফোন ধরলেও স্নেহা কিছু মনে করবে না জানেই ও, কিন্তু ওর নিজেরই আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, সারাদিন খুব ধকল গেছে, ফোনটা বন্ধ করে, স্নেহাকে টেবিলে রেখে দিতে বললো ও।
মাস দুয়েক আগে ওর ভাইয়ের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনার কথা জানার পর থেকেই আরও বিরক্ত লাগছে ওর, যদিও ও বুঝতে দেয়নি সেটা, কিন্তু ও এত হেল্প করে অথচ ওকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না, এটা ওর কাছে যথেষ্ট অপমানজনক বলে মনে হয়েছে।
সায়ন্তি নিশ্চয়ই বোঝেনি যে ও জেনে ফেলেছে, তাই ওকে ফোন করছে, ও কিছু নিজে থেকে জিজ্ঞেস করবে না ভেবেই নিয়েছে মনে মনে,
লাইট টা নিভিয়ে দাও স্নেহা, খুব ক্লান্ত লাগছে বলেই শুয়ে পড়লো বাবাই।
স্নেহা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো, ঘুম আসছে না, একটা মানুষের চলে যাওয়া, কতগুলো মানুষ কে কাছাকাছি নিয়ে এলো আজ, অথচ বাপি সেটা দেখে যেতে পারলো না। জয়দার সঙ্গে বাবাই এর সম্পর্ক টা খারাপ হবার পেছনে কারণ যে ও নিজেই, সেটা জানে স্নেহা, জয় ওকে খুব ভালোবাসে, বাবাই এর বিয়ে ভেঙে দেওয়াটা একদম সমর্থন করেনি। আর খানিকটা ভুল তো ওর নিজেরও হয়েছে, ওই তো প্রতিদিন টুয়া কে ফোনে সব বলেছে, আর ওরা দুজনেই আরও বেশি করে ক্ষুব্ধ হয়েছে বাবাই এর ওপর।
আজ মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিলো, জয় দা কে ডেকে নেবে, এর থেকে বেশী সহজ সুযোগ আর কোনো দিনও আসবে না, ওদের দুজনকে আবার আগের মত কথা বলতে দেখে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো স্নেহার।
মামনির সঙ্গে বাবাই এর কথা হয়ে গিয়েছে আবার আগের মতো, জানে ও, কাল যখন বাবাই ওর কপালে হাত রাখলো, ঘুম টা ভেঙে গিয়েছিলো তখুনি। বাবাই বেরিয়ে যাবার পর ফিরছে না দেখে ও উঠছিলো, দরজা দিয়ে বেরিয়ে দেখলো মা ছেলে কথা বলছে, ও আর ওদের কথার মধ্যে ঢুকতে চায়নি, ওদের দুজনের সম্পর্ক টা ভালো হয়ে যাচ্ছে দেখে,ও ও শান্তি পেয়েছিলো।
জীবনটা আস্তে আস্তে সহজ হয়ে আসছে ক্রমশ, কিন্তু অনেক বড় মূল্যের বিনিময়ে, মনটা তাই অশান্ত লাগছে বড়ই। বাবাই কে একা ফিরে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না আর, ও খুব ডিপ্রেসড হয়ে আছে, কিন্তু মামনি কে ফেলেও তো যেতে পারবে না ও। টুয়া অবশ্য বারবার চলে যেতে বলছে ওকে, জয় দা আছে কোনো অসুবিধা হবে না ওদের। কি করা উচিৎ, বুঝতে পারছে না স্নেহা। মামনি কে সঙ্গে নিয়ে গেলে কেমন হতো, টুয়া নাহয় কিছুদিন মায়ের কাছেই থাকতো, জয় দা আছে মানে ওর কোনো অসুবিধা হবে না, কাল সকালেই বাবাই এর সঙ্গে কথা বলতে হবে ঠিক করলো ও।
চলবে