তুমি রবে নীরবে পর্ব ২

তুমি রবে নীরবে
পর্ব ২
অপরাজিতা টুয়া

লিফট দিয়ে নিচে নেমে এসেই পকেট থেকে ফোন বার করে সায়ন্তি কে ফোন করলো বাবাই, কোথায় তুই? জন্মদিনটা ও ভুলে গেছিস নাকি? ক্যান্টিনের সামনে আয় এক্ষুনি বলেই ফোন টা কেটে দিয়ে হন হন করে হসপিটালের ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেলো ও। কিছুতেই স্নেহা কে সহ্য করতে পারছেনা যেনো, আর মেয়েটাও অদ্ভুত, এত খারাপ ব্যবহার করে সব সময়, তাও কোনো বিকার নেই, বার বার একই কাজ করে যেতে থাকে। কবে যে এই সব থেকে মুক্তি পাবে ও, এই সব কিছুর জন্য আসলে সায়ন্তি ই দায়ী, তখন পই পই করে বাবাই বলে ছিলো চল বিয়ে করে নি, কিছুতেই রাজি হয়নি ও, বাবা অসুস্থ, ভাই, বোন দের দেখতে হবে কত অজুহাত ছিল ওর কাছে।
যদি তখন রেজিস্ট্রি টুকু অন্তত করে নিতে রাজি হতো সায়ন্তি, তাহলেও এই মেয়েটা কে বিয়ে করতে হোত না বাবাই কে, মনে মনে প্রবল রাগ হচ্ছিলো ওর। যদিও সেই জীবনের শুরু থেকেই যে স্নেহার সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, জানতো বাবাই, যখন কলকাতায় মেডিক্যাল পড়তে আসে তখন বাপি বলেই দিয়েছিলো ওকে, যাই করো না কেনো, এমন কিছু করোনা, যাতে আমার দেওয়া কথা রাখতে না পারি। তখন তো আর সায়ন্তি কে চিনতো না ও, তাই বাপির কথায় কোনো অমত করেনি। কিন্তু এখানে এসেই ক্লাস মেট সায়ন্তি কে দেখে ওর সব টাই গোলমাল হয়ে গেলো।
তবে সব টাই যে ওর দোষ তাও নয়, সায়ন্তি ওর সঙ্গে দিনের পর দিন ইচ্ছা করেই আরও বেশি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তখন কিন্তু বাবাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল স্নেহার কথা ভেবে নিজেকে ঠিক রাখার কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি আর। অথচ যখন বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে চাপ আসতে শুরু হলো বাবাইয়ের, তখন সায়ন্তি কিছুতেই বিয়ে করে নিতে চাইলো না। প্রথমে রাজী হয়েও পরে পিছিয়ে গেলো কেনো এখনও বাবাই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। ক্যান্টিনের টেবিলে বসে বসে ভাবছিলো ও, এখনও সায়ন্তি এসে পৌঁছাল না, খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছিলো বাবাই এর, রাগ ক্রমশ বাড়ছিলো।
দুপুরে বাড়ি গিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসে গিয়েছিলো ও, প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিলো, স্নেহা যে আবার ওর জন্মদিন মনে করে বিরিয়ানি বানাবে, ওর মনেই হয়নি একদম, থালায় বিরিয়ানি দেখেই মাথাটা কেমন যেনো আরো গরম হয়ে গিয়েছিল তখন, স্নেহার এই কেয়ারিং ব্যাপার টাই নিতে পারছে না ও, সায়ন্তি আসছে না, আর আরও বেশি করে বিরিয়ানি টা মনে পড়ে যাচ্ছে এখন। সায়ন্তি একটা গোলাপের তোড়া হাতে ঢুকলো, হ্যাপি বার্থডে, বলে এগিয়ে দিলো ওর দিকে, মুহূর্তে জমা রাগ টা গলে জল হয়ে গেলো বাবাই এর। কি খাবি বল, বলে অর্ডার দিতে গেলো বাবাই, অর্ডার দিয়ে ফেরত আসার পর জানতে চাইলো সায়ন্তি, কি হয়েছে, বউ বাড়িতে রান্না করেনি আজ? খুব জরুরী, এখনই ওই মেয়েটা কে নিয়ে জানতে চাওয়া, কড়া চোখে সায়ন্তির দিকে তাকাল বাবাই।
আচ্ছা, ছেড়ে দে, অন্য কথায় চলে গেলো সায়ন্তি, খাওয়া দাওয়া সেরে, দুজনে গেলো সিনেমা দেখতে, রাতে ট্রিট দিবি তো বন্ধুদের, হল থেকে বেরিয়ে বললো সায়ন্তি। চল হয়ে যাক, সায়ন্তি চাইলে না বলতে পারেনা ও, ফোন করে ওর সব বন্ধুদের ডাকলো সায়ন্তি, বন্ধুদেরও খাওয়ালো রাতে, সব সেরে, সায়ন্তি কে পৌঁছে দিয়ে যখন ফ্ল্যাটে ফিরলো, তখন দেখলো তলার গেট বন্ধ করে দিয়েছে দারোয়ান। মানে এগারোটা বেজে গিয়েছে, এগারোটায় গেট বন্ধ হয় ওদের কমপ্লেক্সে,মোবাইল টা বার করে দারোয়ান কে ফোন করতে গিয়ে দেখলো সেটা বন্ধ। এতক্ষনে মনে পড়লো, দুপুরে সায়ন্তি কে ফোন করার পরই রাগের মাথায় বন্ধ করে দিয়েছিল সেটা।
অন্ করে দেখলো মামনির গোটা দশেক মিসড কল, আর সাথে মায়েরও। মানে দুজনেই সম্ভবত ওকে জন্মদিনের জন্যই ফোন করেছিলো, এত ক্ষণে তো টেন্সড হয়ে গেছে দুজনেই নিশ্চয়ই, গেট থেকেই মা, আর মামনি কে পর পর ফোন করলো ও। জন্মদিনের আশীর্বাদ ছাপিয়ে গিয়ে প্রবল বকুনি শুনে, সিকিউরিটি কে ডাকিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকলো । সব সময় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে ও, যাতে বেল দিয়ে স্নেহাকে ডাকতে না হয়। ঘরে ঢুকেই দেখলো চিন্তিত মুখে সোফায় বসে আছে স্নেহা, সকালের এত খারাপ ব্যাবহারের পরেও মুখে কোনো ভাবান্তর নেই, ওকে দেখেই বললো, ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার বাড়ছি, আবার মাথা টা গরম হয়ে গেলো তৎক্ষণাৎ। খেয়ে এসেছি, খাবোনা বলেই ঘরে ঢুকে পড়লো বাবাই।
ড্রেস চেঞ্জ করতে করতেই আড় চোখে দেখলো স্নেহা র মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছে, বেচারা ওর জন্য খাবার নিয়ে বসেছিলো নিশ্চয়ই। একটু যেনো খারাপ লাগলো কোথাও,নাহ! কিসের খারাপ লাগা,ও তো সব বলে দিয়েছে ফুল শয্যার রাতেই, কোনো কিছুই লুকায়নি তো, নিজেকে শক্ত করলো ও। একটুও দুর্বল হতে পারব না, স্নেহা কে কোনো দিনই স্ত্রীর জায়গা দেওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে, জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যায়না, টাওয়েল টা নিয়ে বাথ রুমে ঢুকে গেলো বাবাই।
ফিরে এসে দেখলো, স্নেহা সব গুছিয়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখছে, তার মানে ও কি নিজেও খেলনা, আমি তো না খেয়ে নেই, বাইরে থেকে খেয়েই এসেছি, ওর না খেয়ে থাকার কি আছে তাহলে, একবার কি খেয়ে নিতে বলা উচিত, না, খিদে পেলেই খাবে নিশ্চয়ই, অনন্তকাল কেউ না খেয়ে থাকেনা, ভাবতে ভাবতেই লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ও। মাথা টা দপ দপ করছে, কিছুতেই ঘুম আসছে না, সকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো এক এক করে ফিরে আসছে মনে, কেনো যেনো এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, বিরিয়ানি টা ওই ভাবে ছুঁড়ে ফেলে ভালো করিনি একদম, যতই হোক আমার জন্মদিন টা মনে ছিলো তো, নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট করেই বানিয়েছিল, অথচ সায়ন্তি কে তো ফোন না করলে ওর মনেই পড়তো না হয়তো, একগোছা গোলাপ দিয়েই দায় সারলো কেমন। আজ পর্যন্ত কোনোদিনও এক সঙ্গে খেতে গেলে বিল ওকেই মেটাতে হয়েছে সব সময়, অথচ ও তো নিজেও রোজগার করে, ভাবতে গিয়ে কিরকম চমকে উঠলো বাবাই, ইসস এসব কি ভাবছি আমি, আমিই তো খেতে ডাকলাম ওকে, রাতে ট্রিট দিতে রাজিও নিজেই হয়েছি, তাহলে ওকে দোষারোপ করছি কেনো, আর হটাৎ স্নেহার সঙ্গেই কেনো তুলনা করে ফেললাম ওকে, মাথাটা আরও বেশি করে ব্যথা করতে শুরু করলো, বিছানার পাশের টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে একটা ওষুধ তুলে নিল বাবাই, ওষুধ না খেলে কমবে না আর যন্ত্রণাটা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here