তুমি রবে নীরবে,পর্ব ১০,১১
অপরাজিতা টুয়া
পর্ব ১০
অন্য দিন এই সময়ে বাবাই বাড়িতে ফিরে আসে, আজ এত দেরি হচ্ছে, কয়েকদিন আগেই জ্বর থেকে উঠেছে, শরীর খারাপ হলো না তো, খুব চিন্তা হচ্ছে স্নেহার।
কিন্তু আজ পর্যন্ত বাবাই কে ফোন করেনি ও, যদি করলে রেগে যায়, তাই ভয় লাগছিলো, মনস্থির করতে পারছেনা ও, একবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো, আবার ঘরে ঢুকে মোবাইল টা হাতে তুলে নিলো, যা হয় হবে, একটা ফোনই তো, বড়ো জোর একটু রাগ করবে, সেগুলো এতদিনে অভ্যাস হয়ে গেছে, মনে মনে ভেবে সবে ডায়াল করতে যাচ্ছে, এমন সময় দরজার বেল টা বেজে উঠলো, দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো স্নেহা।
দরজা টা খুলেই চমকে গেলো একদম, সামনেই মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাবাই, পরনের সাদা শার্ট টা রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে, নিজের অজান্তেই স্নেহার গলা দিয়ে একটা কষ্টের আওয়াজ বেরিয়ে এলো,
ইসস, কি করে হলো এরকম, কি হয়েছে তোমার, প্রায় কেঁদে ফেললো স্নেহা।
আজ কিন্তু স্নেহার প্রশ্নে রেগে গেলনা,
আরে, সরে যাও বাড়িতে ঢুকতে দাও আগে, কিছু হয়নি ভয় পাওয়ার মতো স্নেহার দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকাল বাবাই।
স্নেহা তাড়াতাড়ি সরে এলো দরজা থেকে, টাওয়েল টা বাথরুমে দিয়ে বললো,
যাও আগে শার্ট টা চেঞ্জ করো, ভিজে গেছে একদম, অনেক রক্ত বেরিয়েছে তো, কি করবো এখন।
কিছু করতে হবে না, যা করার আমিই করে এসেছি হসপিটাল থেকে, তুমি ভাত দাও, বলেই বাথরুমে ঢুকে গেলো বাবাই।
খেয়ে দেয়ে খাটে শুয়েছিল বাবাই, নিজে খেতে খেতে লক্ষ করছিলো স্নেহা, খুব মন টা খারাপ লাগছে, দু এক গ্রাস খেয়েই উঠে পড়লো আজ, ভালো লাগছে না আর খেতে, সব কিছু গুছিয়ে রেখে ঘরে ঢুকে এলো স্নেহা, সাধারণত ও দুপুরে ঢোকেনা এঘরে, বাবাই আবার বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাইরেই বসে থাকে, আজ একটু ইচ্ছা করছিল কাছে বসতে।
যেহেতু দরজা খোলার পর বাবাই ভালো ভাবেই কথা বলেছে, সেই জন্যই মন টা ভালো আছে ভেবেই ঘরে ঢুকলো স্নেহা।
ঘরে ঢুকতেই বাবাই চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো,
এখন কেমন লাগছে, আস্তে করে বললো স্নেহা,
ঠিক আছি, কোনো অসুবিধা নেই, শুধু ব্যথা আছে মাথায় আর কিছু না, বসো না এখানে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি কথা বলা যায়, বলেই ওর পাশে হাত দিয়ে দেখিয়ে খাটে বসতে বললো বাবাই।
অবাক হয়ে গেলো স্নেহা, বাবাই ওকে নিজে থেকে ওর পাশে বসতে বলছে, ও যেনো নিজের কানকেও বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। পাশে বসে আবার আগের প্রশ্ন টাই করলো,
কি করে হলো?
অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেছি, অল্প একটু ফেটে গেছে কপাল টা, দু এক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
কেমন যেনো কথা গুলো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না স্নেহার।
আজ আর বেরোবো না, নিজে থেকেই বললো বাবাই,
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও একটু, বলেই বেরিয়ে গেলো স্নেহা।
স্নেহা বেরিয়ে যাবার পর চুপ করে শুয়ে ছিলো বাবাই। স্নেহা কি ওর কথা বিশ্বাস করলো না, চোখ মুখ দেখে সেরকমই মনে হলো ওর। মিথ্যে কথা বলা আসলে বেশ কঠিন, কিন্তু সত্যি টা জানলে ওর খারাপ লাগবে, সেটা বলা যাবেনা কিছুতেই। এমনিতেই বেচারি ভয় পেয়ে গেছে, তারপর এই ঘটনা শুনলে আরও ভয় পেয়ে যাবে, সারাদিন একা থাকে ফ্ল্যাটে, অহেতুক টেনশন করবে আরও ওকে নিয়ে, নাহ!! আর ওর চিন্তা বাড়াতে চায়না বাবাই। ইসস, সকালে যদি সায়ন্তি র ফোন পেয়ে ও না যেতো তাহলে এত কিছু ঘটনা ঘটে যেতনা।
গিয়েই দেখলো, দু তিনটে লোকের সঙ্গে তর্কাতর্কি হচ্ছিলো সায়ন্তির, ও নাকি তাদের কাছে সুদে টাকা ধার করেছিলো, এখন দিতে না পারায় ওরা হসপিটাল অবধি চলে এসেছে।
ও দিয়ে দেবে কিছুদিন সময় দিন, লোকগুলো শুনতে রাজি ছিলনা,
আপনিই দিয়ে দিন না টাকা টা, অত দরদ যদি ওর প্রতি, শেষ পর্যন্ত তাই দেবে বলে রাজি হয়ে গেলো ও।
সায়ন্তি দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো, ওর খুব খারাপ লেগেছিলো, টাকাটা সামনের এটিএম থেকে তুলে নিয়ে লোকটাকে দিতে আসছিলো যখন, তখন লোকগুলো হটাৎ করেই খুব নোংরা গালাগালি করলো সায়ন্তিকে, শুনতে পেলো ও, সঙ্গে সঙ্গে ধৈর্য্য হারালো বাবাই, কোনো কিছু না ভেবেই সামনের লোকটার মুখে একটা ঘুষি চালিয়ে দিল, আরও দুটো লোক সঙ্গে ছিলো, ওরা পাশে পড়ে থাকা একটা বাঁশ দিয়ে ওর মাথায় মেরে দিলো হটাৎ, দিয়েই টাকা গুলো ওর হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে।
বন্ধুরা কয়েকজন দেখতে পেয়েছিল, ব্যান্ডেজ বাঁধার পর সবাই থানায় যেতে চাইছিলো, কিন্তু সায়ন্তি কেনো যেনো কিছুতেই রাজি হলো না, ও আর এই ব্যাপার টা কে নিয়ে জটিলতা বাড়াতে চায়না একদম।
মেয়েদের অনেক সমস্যা, টাকা পেয়ে গিয়েছে মানে আর আসবেনা, থানায় গিয়ে আর ঝামেলা বাড়াতে চাইনা প্লিজ, তোকে ডাকা আমার উচিত হয়নি, আমি বুঝতেই পারিনি এরকম কিছু হয়ে যাবে, কাঁদতে কাঁদতেই বলছিলো বাবাই কে।
ছেড়ে দে, আর থানায় যাবনা, বন্ধুদের কে বলেই বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল বাবাই,
ওর যেনো শুধুই মনে হচ্ছিলো টাকাটা নেওয়ার জন্যই ওকে ডেকে পাঠিয়েছিল সায়ন্তি। নিজের প্রয়োজন মিটে যেতেই আর থানায় যেতে চাইলোনা, বাবাই এর মাথা ফাটাটার কোনো গুরুত্বই ছিলো না ওর কাছে। ভীষণ বিরক্তিকর লাগছে ক্রমশ ব্যাপারগুলো, নিজের বোকামির জন্য নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে এখন, সব বুঝেও নিজেকে সরাতে পারছে না ও, এবার থেকে শক্ত হতে হবে, নিজের কাছে নিজেই প্রমিজ করলো বাবাই।
এতো টাকার দরকার কেনো হয় ও বুঝতে পারেনা কিছুতেই, বাবাই তো এমনই অনেক হেল্প করে, ওর নিজেরও রোজগার আছে, তার পরেও যে কেনো সুদে টাকা ধার করতে হয় কে জানে।
এই কথা গুলো স্নেহা কে বলতে পারবে না ও, এ মাসে অনেক টাকা বেরিয়ে গেলো, একটু চাপ হয়ে গেলো, এই টাকাটা ওর হিসাবের মধ্যে ছিলনা। স্নেহা একটু কম দিলেও চালিয়ে নেবে, ওকে কিছু বলবেনা, মনে মনে ভেবে নিলো ও।
চলবে
তুমি রবে নীরবে
পর্ব ১১
গাছে জল দেওয়ার পর্ব শেষ করে ব্যালকনি তে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো স্নেহা।
দিদি, দিদি ডাক শুনে নিচে তাকিয়ে দেখলো রাজু।
কি রে? কিছু বলবি?
তোমার ব্যাগ টা ফেলো তো।
নিজের সুবিধার জন্য ব্যালকনি তে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখে স্নেহা, অনেক সময় সবজিওলার কাছ থেকে কিছু নেবার হলে ওপর থেকে ব্যাগ টা নিচে ঝুলিয়ে দেয় ও,এখানে অনেক ফ্ল্যাটেই এই ভাবেই বাজার করে সবাই।
ব্যাগ টা ফেলতেই একটা কলমি শাকের আঁটি ঢুকিয়ে দিলো রাজু, এগুলো ওর মা পেছনের ঝিল থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করে জানে স্নেহা, মাঝে মাঝেই এটা সেটা জিনিস ও দিয়ে যায় এই ভাবেই, অনেক কিছু হয়ত ওরা দিতে পারে না, কিন্তু এই ছোটো ছোটো জিনিস গুলোর মধ্যে যে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে, সেটা স্নেহার খুব ভালো লাগে, তাই ও কোনো দিনও পয়সার কথা বলে রাজু কে ছোটো করতে চায়না।
বাহ্! কি টাটকা রে,
হ্যাঁ, গো দিদি, এই মাত্র তুললো তো মা, বললো স্নেহা দিদিকে দিয়ে আয়, তাই তো এলাম, বলেই চলে গেলো ও।
ব্যালকনি তে দাঁড়িয়েই স্নেহা দেখতে পেলো বাবাই বিছানায় উঠে বসেছে, কলমি শাকের আঁটি টা রান্না ঘরে রেখে, চা নিয়ে বেড সাইড টেবিলের ওপর রাখলো কাপ টা। বাবাই দু হাতে মাথা চেপে বসে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ব্যাথা আছে এখনও, এই অবস্থায় হসপিটালে যাওয়া ঠিক নয়, কিন্তু বলতে গেলেই আবার কি বলবে কে জানে।
ও কি বলে দেখবে একটু, গত কয়েকদিনের বাবাই এর ব্যবহারের কথা মনে করে একটু সাহস পাচ্ছে স্নেহা।
আজ না গেলেই তো ভালো হতো,
বাবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, কোনো কথা না বলেই চায়ের কাপ টা হাতে তুলে নিলো। আর কিছু বললো না স্নেহা, আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ও।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্নেহার চলে যাওয়া দেখছিলো বাবাই। খুব একটা ভুল কিছু বলেনি স্নেহা নিজেও বুঝতে পারছে সেটা, ঘুম থেকে উঠে বসতে গিয়েই টের পেয়েছিল, একদম ভারী হয়ে আছে মাথাটা। এই অবস্থায় অতক্ষণ ডিউটি করতে পারবে কিনা বুঝে উঠতে পারছেনা, সত্যিই মনে হচ্ছে আজ বাড়িতে থাকাই ভালো।
আজ পর্যন্ত স্নেহা কখনো কোনো রিকোয়েস্ট করেনি ওকে, সব সময় চুপ করেই থাকে, ওর কথা টাও রাখতে ইচ্ছে করছে, আর যা বলেছে সেটা যে ওর ভালোর জন্যই সেটাও তো অস্বীকার করার জায়গা নেই, খানিকক্ষন ভেবে, ঠিক করে নিলো ও, ফোন করে বলে দিলো আজ আসছি না।
অনেকেই তো জানে গতকালের ঘটনা, তাই আর কারণ কেউই জানতে চাইলোনা নতুন করে। চা শেষ করে আবার শুয়ে পড়লো ও, আজ আর কোনো তাড়া নেই।
ব্রেকফাস্ট রেডী করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকালো স্নেহা, সাড়ে আটটা বেজে গেছে, এখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেনি বাবাই, তবে কি ও আজ যাবে না বলেই ভেবেছে শেষ পর্যন্ত, স্নেহার অনুরোধ কি রাখবে এই প্রথম বার, নাহ! এতো টা আশা করেনা, গ্যাস টা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে এলো ও।
অন্যদিন ড্রেস করে ডাইনিং টেবিলে এসে ব্রেকফাস্ট করে বাবাই, আজ ওঠেনি, এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে খাবার,এই সব ব্যাপারে, ভীষণ পাংকচুআল স্নেহা, ছোটো থেকেই ওর বাবা ভীষণ সময় মেনে চলতেন সব ব্যাপারে, এটা ওর ছোটবেলার অভ্যাস।
খাবার এনে দেবো এখানে?
দাও, উঠে বসলো বাবাই। তারমানে সত্যিই বোধহয় আর বেরোবে না আজকে, খুব আনন্দ হলো, খাবারের থালা টা খাটে রেখে বেরিয়ে গেলো স্নেহা।
কাজ করতে করতেই টুয়া ফোন করলো,
তোর দাদা ভাই বাড়িতে আছে, আজ কথা বলবো না, বলার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন টা রেখে দিল টুয়া।
বাবাই থাকলে ওরা কথা বলেনা, নিজেদের গল্পের ব্যাঘাত ঘটে, স্নেহা বড্ড ব্যস্ত থাকে টুয়া জানে, ওকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, ফোন রেখে দিল বলে রাগ করবে না, নিজের কাজে মন দিলো স্নেহা।
আজ একটু অন্যরকম কিছু করতে ইচ্ছা করছে, বাবাই বাড়িতে আছে তাই, কিন্তু জন্মদিনের কথা মনে পড়ায় থমকে গেলো ও, বেশি কেয়ার দেখতে গেলে যদি আবার হিতে বিপরীত হয়,তার চেয়ে যা প্রতিদিন করে সেই রকমই করবে ভেবে নিলো।
বাবাই কি সত্যিই একটু একটু পাল্টাচ্ছে, মা আর মামনি তো সব সময় বলে সময় নাকি সব কিছু ঠিক করে দেয়, ওদের সম্পর্ক টা কি কোনো দিনও আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক হবে, বন্ধুদের গল্প শোনে আর ভাবে, ওর সঙ্গেই কেনো এমন হলো, ও তো কখনো কারো খারাপ চায়নি ।
এমনকি যখন প্রথমে বাবাই বিয়েটা করতে চায়নি, তখনও খুব কষ্ট হলেও ও ভেবেছিলো, হতেই পারে অন্য কাউকে পছন্দ, ওদের বাড়ি থেকেই শুধু বিয়ের কথা বলা ছিলো, ওরা নিজেরা তো কোনোদিনও এই বিষয়ে একটাও কথা বলেনি। বাবাই তো এমনিও হোস্টেলে থাকতো, এলেও খুব বেশি কথা বলতো না ওর সঙ্গে, তাই ওকে দেওয়া কোনো কথা রাখেনি এমনতো নয়, শুধু নিজের পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে চেয়েছে, এতে স্নেহা বাবাই এর খুব বেশি দোষ খুঁজে পায়নি।
ও নিজেকে মোটামুটি শক্ত করেই নিয়েছিলো, যদিও নিজে কোনো দিনও অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারতো না ও, তবু সেই সময় কাউকে ওর মনের অবস্থা বুঝতে দিতে ও চায়নি। কেনো তারপর আবার বাবাই মত পাল্টালো ও জানেনা, সম্ভবত, বাপির অসুস্থতাই এর কারণ, তবু বাবাই নিজে থেকেই রাজি হয়েছে শুনে স্নেহা আর আপত্তি করেনি, ও তো ওর জীবনের সব চেয়ে কাছের জায়গাটা বাবাই কেই দিয়ে এসেছে সব সময়।
কিন্তু ভুল ভেঙে ছিলো তখন থেকেই, যখন ও বিয়ের সময় বাবাই এর বিরক্ত মুখটা দেখতে পাচ্ছিলো বার বার, কিন্তু সেই মুহূর্তে আর কিছুই করার ছিলো না, তারপর তো ফুলশয্যার দিন সব টাই বলে দিলো বাবাই, সেই থেকেই সব কিছুই যে সহজে হবে না ওর ভবিষ্যত জীবনে বুঝেই গিয়েছিলো স্নেহা।
দুপুরে খেয়ে উঠে, এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যেনো সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল স্নেহা, উঠে দেখলো পাঁচ টা বেজে গেছে। বাবাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,
ইস, এতক্ষন ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম, ওকে তো চা দেওয়াই হলোনা, ধড়মড় করে উঠে বসলো স্নেহা। রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো, চারদিকে ছড়ানো চা পাতা, গ্যাসের ওপর পড়ে থাকা দুধ, কি করে হলো! ভাবতে ভাবতেই পেছনে এসে দাঁড়ালো বাবাই।
চা করে নিয়েছি, তোমার টা ওই ফ্লাস্কে রেখেছি দেখো, যদিও খেতে খুব জঘন্য হয়েছে, তাও, তুমি ঘুমিয়েছিলে, তাই আর ডাকলাম না। তোমার রান্নাঘর টা খুব নোংরা করে ফেলেছি, আসলে প্রথম বার করলাম তো, বাবাই এর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল স্নেহা।
রান্নাঘরের অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ, চারদিকে তাকিয়ে দেখলো স্নেহা, তবু বেচারা প্রথম বার কিছু করেছে, আর ওর জন্যেও করে রেখেছে ভেবেই হাসি পাচ্ছিলো ওর।
আমি চা খেয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছি, করুন মুখে বললো বাবাই,
থাক, আমি করে নিচ্ছি, তুমি যাও, বাবাই বেরিয়ে যেতেই , রান্নাঘরে দাঁড়িয়েই চা টা একটা কাপে ঢেলে মুখে দিয়েই হেসে ফেললো স্নেহা, ইস সত্যিই খুব বাজে খেতে, কিন্তু বলা যাবেনা সেটা, বেচারা খুব দুঃখ পাবে, কত কষ্ট করে বানিয়েছে প্রথম বার।
চলবে