ডাকিনী বউ,৬ষ্ঠ পর্ব

ডাকিনী বউ,৬ষ্ঠ পর্ব
লেখক:মাসুদ রানা

লোকটার মৃত লাশটা দেখে মনে হচ্ছিলো যে লোকটার উপর কেউ তার বহুদিনের ক্ষোভ আর রাগ ঝেড়েছে। হয়তো কোন পুরোনো প্রতিশোধ নিয়েছে! কিন্তু ইয়েজেরিনেরতো আর এই বৃদ্ধের উপর কোন ক্ষোভ ছিলো না! তাহলে লোকটাকে কে খুন করেছে?! তাহলে কি এই বাড়িতে ইয়েজেরিনের চেয়েও ভয়ংকর আর নির্মম কেউ রয়েছে?! কিন্তু কে সে?! আর কি চায় এখানে?!
নাকি সে আর অন্য কেউ না! ইয়েজেরিন নিজেই এইসব কাজ করে আবার আমার সাথে ছলনা করছে!! কিন্তু ইয়েজেরিন শুধু শুধু একটা বৃদ্ধ লোককে খুন করতে যাবে কেনো?! তাও আবার তার রক্ত মাংস না খেয়ে লাশটা ফেলে যাবে কেনো!! চিন্তায় পড়ে গেলাম বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু আমার যতটুকু মনে হচ্ছিলো ইয়েজেরিন এই কাজটা করেনি! হয়তো অন্য কেউ কাজটা করেছে! যার সাথে ইয়েজেরিনের কোন সম্পর্কই নেই। গ্রামের লোকেরা বলাবলি করছিলো যে এটা হয়তো কোন বন্য নেকড়ের কাজ। আসলে গ্রামটা যেহেতু বনের খুব কাছেই তাই এখানে নেকড়ে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম যে নেকড়েরা কি করে এতোটা অদ্ভুতভাবে মানুষের চোখ উপরে, হাত ছিড়ে নিয়ে যেতে পারে!! যদি সত্যিই কোন নেকড়ে এই কাজ করতো তাহলে সেও এই লোকটিকে এইভাবে ফেলে রেখে চলে যেতো না। পুরো শরীর ছিড়ে খেয়ে এরপরে চলে যেতো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না। অবশেষে ভাবলাম লোকটাতো আর আমার আপন কেউ না! তার সম্পর্কে ভেবে শুধু শুধু মাথাটা নষ্ট করার কোন মানেই হয় না! এরপর চুপচাপ আবার নিজের ঘরে চলে আসলাম। আমি ঘরে ঢুকতেই ইয়েজেরিন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে আমায় প্রশ্ন করলো:
-কি হয়েছে?! বাহিরে এতো শব্দ কিসের?
.
এরপর আমি ইয়েজেরিনকে বাহিরের সব ঘটনা খুলে বললাম। ইয়েজেরিন আমার কথাশুনে আৎকে উঠলো। এরপর বললো:-
-এটা কি করে হতে পারে?! একটা বৃদ্ধ লোকের চোখ আর হাত নিয়ে কার কী লাভ হতে পারে?! (ইয়েজেরিন)
-সেটাতো আমিও ভাবছি ইয়েজেরিন! লোকেরা বলছিলো এটা নাকি কোন নেকড়ের কাজ। (আমি)
.
এরপর ইয়েজেরিন কিছুটা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চুপচাপ কি যেনো ভাবছিলো! আমি এতোটুকু নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে এই কাজটা আর যেই করুক ইয়েজেরিন করেনি। এরপর আমি আর ইয়েজেরিন আবার উঠানে যাই লাশটা দেখতে। কিছুক্ষন পর সেখানে পুলিশও চলে আসে। পুলিশেরা লাশটা কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করে এরপর আমাদের নিশ্চিতভাবে জানায় যে লোকটা কিভাবে মারা গিয়েছিলো! পুলিশ বলে, “নিঃসন্দেহে এটা কোন নেকড়ের কাজ। এই বৃদ্ধ লোকটার শরীরে আমরা অনেকগুলো ধারালো নোখের দাগ পেয়েছি। নোখের দাগগুলো স্পষ্টভাবেই কোন মানুষের না। এইরকম নোখের দাগ শুধু নেকড়েদেরই হয়। আর ঘটনাটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না! আপনারাও জানেন এখানে প্রায়ই নেকড়ে দ্বারা মানুষ খুন হয়ে থাকে। লাশটার দাফন কাজ শেষ করে দিন আপনারা। আর সবাই সতর্কভাবে থাকবেন।”
.
পুলিশের কথাগুলো শোনার পর মনে হলো যে আসলেই ঘটনাটা স্বাভাবিক। এর আগেওতো নেকড়েরা এই ভাবে মানুষকে খুন করে তাদের প্রিয় অংশগুলো ছিড়ে নিয়ে যেতো। ঘটনাটাকে সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিলো। আমিও।
এরপরে লোকটার ছেলে এবং আরো কিছু আত্মীয়স্বজন মিলে লাশটাকে দাফন করে দেয়। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। বৃদ্ধের হঠাৎ মৃত্যূতে বাড়িতে এক শোকের ছায়া নেমে আসে। সবাই চুপচাপ থাকতো সারাদিন। সেই বাচ্চা মেয়েটাতো মনে হয় আরো বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। সে সারাদিন ইয়েজেরিনকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতো। এরপরের ২ দিন আমাদের ভালোভাবেই কাটে। কিন্তু বিপদ ঘটে আবার ৩য় দিন। ৩য় দিন রাতে আমি আর ইয়েজেরিন আবার একে অন্যের হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো মধ্যরাতে কারো জোড়ে চিৎকারের শব্দে! চিৎকারের শব্দ শুনে আমি আর ইয়েজেরিন দুজনেই দ্রুত ঘরের বাহিরে যাই। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার গাঁ ভয়ে শিহরে উঠলো! শরীর পুরো ঠান্ডা হয়ে গেলো! দেখলাম , বাড়ির উঠানে এই বাড়িরই ছোট ছেলের বউ এর ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে রয়েছে। লাশের শরীরে কোন কাপড় ছিলো না। পুরো লাশ রক্তে ভরা ছিলো। এই মহিলাটিকেও ঠিক একইভাবে বৃদ্ধের মতো খুন করা হয়েছে! মহিলাটির চোখদুটো উপড়ে ফেলা হয়েছিলো আর হাত দুটো কেউ ছিড়ে নিয়ে গিয়েছিলো। এছাড়াও মহিলাটির জিহ্বাও অনেকটা কাটা ছিলো। হঠাৎ এই ভয়ংকর লাশ দেখে আমার পুরো শরীরের রক্ত জমে ঠান্ডা হয়ে যায়। এর আগে আমি ২৩ জনকে খুন করেছি। তাদের লাশ আমার সামনেই ইয়েজেরিন ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছিলো। কিন্তু তখন আমার বিন্দুমাত্রও ভয় করেনি।
কিন্তু এখন এই লাশটা দেখে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। সেদিন সেই বৃদ্ধের লাশটা দেখেও কেমন যেনো ভয় করেছিলো! এই মহিলাটির লাশটিকে দেখে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো মহিলাটিকে খুন করার আগে বা পরে কেউ ধর্ষন করেছে! এবার যেনো সবকিছু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। গত কয়দিন আগে সেই বৃদ্ধের খুনের সাথে এই খুনটার কেমন যেনো একটা মিল খুজে পেলাম। এতটুকু বুঝতে পারলাম যে কেউ তার পুরোনো প্রতিশোধ নিচ্ছে এই বাড়ির মানুষদের থেকে। কিন্তু কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে আর কেই বা এই প্রতিশোধ নিচ্ছে তা বুঝতে পারছিলাম না! এরপরে আবার লাশটা দেখতে মানুষ এসে ভরে গেলো। কিছুক্ষন পর আবার পুলিশ আসলো। পুলিশ পর্যবেক্ষন করে আবার সেই একই কথা বললো। লাশটার শরীরে নাকি অনেকগুলো ভয়ংকর নোখের দাগ পাওয়া গেছে! দাগগুলো নাকি নেকড়ের নোখের দাগ! তবে বুঝলাম পুলিশ এবার ঘটনাটাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি! তারাও আগের খুনের সাথে এই খুনের মিল খুজে পেলো। তারাও বুঝলো যে একটা নেকড়ের পক্ষে রোজ রোজ এসে এইভাবে খুন করা সম্ভব না! আর পুলিশের একটা কথা শুনে আমি পুরো আৎকে চমকে উঠলাম! আমার ধারণাই ঠিক ছিলো! মহিলাটিকে খুন করার আগে ধর্ষন করা হয়েছিলো!! এবারতো নিশ্চিত হওয়া গেলো এটা কোন নেকড়ের কাজ না! একটা পুরুষের কাজ!! কিন্তু কে সে?!
আর সে কেনো এই নির্মমতা করে যাচ্ছে? উত্তরগুলো কিছুতেই মাথায় আসছিলো না। আমি ভাবছিলাম এর পরে কি সে তাহলে পরিবারের বাকি সদস্যদেরো মেরে ফেলবে?! কিন্তু এখন আর বেঁচেই বা আছে কে কে?! সেই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বৃদ্ধার প্রান এখন যায় যায়। আর নিজের বাবা আর স্ত্রীকে হঠাৎ এই অস্বাভাবিক ভাবে খুন হতে দেখে বাড়ির সেই মধ্যবয়স্ক লোকটি প্রায় মানসিক ভাবে অসুস্হ্য হয়ে পড়েছিলো! বাকি ছিলো সেই বাচ্চা মেয়েটা অর্থাৎ মুশকান। সে এই বিষয়গুলো কিছুই বুঝতে পারছিলো না। সে এতোসব জিনিসের মধ্যে শুধু একটু ভালোবাসা খুচ্ছিলো। যেটা ইয়েজেরিন তাকে ভালোভাবেই দিচ্ছিলো। তাহলে কি সেই ভয়ংকর খুনিটা বাড়ির এই বাকি সদস্যদেরো খুন করে ফেলবে?! এরপরে কি সে আমাকেও খুন করে ফেলবে?! মাত্র ইয়েজেরিনের নির্মমতা থেকে বেঁচেছি আমি। এখন আবার কোন নতুন অভিশাপে জড়িয়ে পড়ছি আমি!! ইয়েজেরিনের কাছে জানতে চাইলাম যে, সেতো অলৌকিক শক্তির অধিকারী। সে কি তার অলৌকিক শক্তির বলে কোনভাবে জানতে পারবে যে এই খুনগুলো কে করেছে! কিন্তু ইয়েজেরিন বললো, সে এটা জানতে অপারক।কারণ সে তার অলৌকিক শক্তিগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এরপর আমি আর কিছু বললাম না।আমাকে যে করেই হোক এই পরিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচাতেই হবে।
কিন্তু এর উপায়ো আমার জানা নেই! এইদিকে পুলিশও এই রহস্যের কোন সমাধান করতে পারেনি। শুধুমাত্র বাড়ির সদস্যদের একটু নিরাপত্তাটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো তারা! এইদিকে সেই বনের সাধুও আর আমার কোন খোজ নিতে আর এলো না! হয়তো সেই সাধু আমাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারতো! আমি একবার ভাবলাম রাতে সেই বনে আবার যাবো সাধুর সাথে দেখা করতে। কিন্তু সে তো বলেছিলো যে সময় হলে সেই আমাকে সাহায্য করতে আসবে। আমি এতোসব রহস্যের মাঝে ইয়েজেরিনকে আবার তার পৃথিবীতে পাঠানোর কথাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আসলে ইয়েজেরিন আমার সাথে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলো। আমার জীবনে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করছিলো না। তাই তাকে নিয়ে আর আমি বেশিকিছু ভাবছিলাম না! ধীরে ধীরে আবার বাড়িটার পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেলো। সবার মনে হচ্ছিলো যে খুনির প্রতিশোধ মনে হয় নেওয়া শেষ। তাই পুলিশেরাও তাদের নিরাপত্তা সড়িয়ে নিলো।আমার মনে হচ্ছিলো সেই বৃদ্ধা বা তার ছেলে এই খুন গুলোর বিষয়ে কিছু একটা জানে। কেউ যদি সত্যিই তাদের উপর থেকে প্রতিশোধ নিতে এখানে আসে তাহলে এই বিষয় সম্পর্কেও তারা কিছু জানবে !! এরপর আমি একদিন সেই লোকটা আর বৃদ্ধার কাছে গেলাম! তাদের কাছে জানতে চাইলাম যে, আসলেই কি এই পরিবার কোন দিন কোন বড় পাপ করেছিলো!! যার শাস্তি এখন কেউ তাদের এসে দিয়ে যাচ্ছে?! তারা আমার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায়। আর কিছুটা রেগে উত্তর দেয় যে, তারা কেনো কোন পাপ করতে যাবে?! হয়তো কেউ তাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এসব করছে!! এর বেশি কিছু তারা আমায় বললো না। আমি বুঝতে পারছিলাম যে তারা কিছু একটা আমার থেকে লুকাচ্ছে। কিন্তু সাহস করে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না কারণ এটা একান্তই তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এটা নিয়ে বেশি কিছু বলার অধিকার আমার নেই। এরপর আবার আমি ঘরে ফিরে আসি। সেদিন রাত্রে বেলা আমার কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো আজ রাতে সেই খুনিটা আবার জেগে উঠবে আবার এই বাড়ির অন্য কোন সদস্যকে খুন করে ফেলবে। তাই আমি ঘরের বাহিরে বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম! হঠাৎ ইয়েজেরিন আমার কাছে এসে আমায় বললো, অনেক রাত হয়ে গেছে! এখন আমাদের ঘুমাতে হবে! কিন্তু আমি ইয়েজেরিনকে বললাম, সে যেনো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আমার ঘুমাতে একটু দেরী হবে! কিন্তু সে কিছুতেই আমার কথা শুনলো না। আমাকে অনেকটা জোর করেই বিছানায় নিয়ে গেলো। আমার হাতে হাত রেখে না শুলে নাকি রাতে তার ঘুমই হয়না। বাড়িতে এতোসব কান্ড ঘটে গেছে! এই সময়ে তার এই রোমান্টিকতা বড্ড বেমানান লাগে আমার কাছে! তাও বাধ্য হয়েই হাতে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম তার সাথে। আমার কাছে ঘুম থেকে উঠা মানেই যেনো এক ভয়ংকর সকাল! আজো ভয়ংকর ভাবেই ঘুমটা ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে আবার বাহিরে মানুষের চেচামেচির শব্দে আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে এবার হয়তো বাড়ির ৩য় খুনটাও করা হয়ে গেছে! আমার পাশে দেখলাম আজো ইয়েজেরিন ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘরের বাহিরে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসলাম কে মারা গেছে দেখতে! ঘর থেকে বেরিয়েই দেখলাম উঠান থেকে সবাই আমার দিকে দু’তালায় অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে! আমিও বেশ অবাক হলাম এটা ভেবে যে, এরা আমায় এভাবে দেখছে কেনো? পরক্ষনেই বুঝলাম যে এরা আমায় দেখছে না! এরা দেখছে আমার মাথার উপরে ঝুলন্ত একটা লাশকে। হঠাৎ আমার কাধে টপটপ করে রক্তের ফুটো পড়তে শুরু করলো। রক্ত দেখে আমি হঠাৎ আতকে উঠলাম! রক্ত কোথা থেকে পড়ছে?! এরপর আমি ভয়ে ভয়ে আমার মাথার উপরে তাকালাম। দেখলাম আমার ঘরের দরজার উপরের ছাদের একটা রডের সাথে আমাদের বাড়ির সেই বৃদ্ধার ছেলের রক্তেমাখা লাশটা ঝুলছে। হঠাৎ লাশটা দেখে আমি ভয়ে আতকে দু’পা পিছিয়ে গেলাম। এতো কাছ থেকে লাশটার চেহারা দেখে ভয়ে আমার শরীর প্রায় অবশ হয়ে যেতে লাগলো। খুনি আজ লাশটার গলায় একটা গামছা পেচিয়ে লাশটাকে রডের সাথে বেধে রেখেছে। আগের দু’টো লাশের মতোই এই লাশেরো দুটো চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। লাশটার দুটো হাত কেউ ছিড়ে নিয়ে গেছে। কাধের পাশ থেকে তাই তখনো রক্ত ঝড়ছিলো! এবার যেনো স্পষ্ট কোন ভয়ংকর নেকড়ের নোখের দাগ তার শরীরে দেখতে পেলাম। এই লাশটাও সম্পূর্ন নগ্ন অবস্হায় এখানে ঝুলেছিলো।এই লাশটা দেখতে আগের দুটো লাশ থেকে বেশি ভয়ানক ছিলো। কারণ এর হৃদপিন্ড বুক ছিদ্র করে বের করে নেওয়া ছিলো। এর পেট ছিড়ে নাড়িভুড়ি গুলো পেটের বাহিরে বেরিয়ে ছিলো। আর লাশটার লজ্জাস্হানও সম্পুর্ন নষ্ট করা হয়েছিলো।এইসব দেখে ভয়ে আমি দ্রুত আবার ঘরে গিয়ে ইয়েজেরিনকে ঘুম থেকে তুলে উঠানে গিয়ে বাকি লোকগুলোর সাথে দাঁড়িয়ে থাকি। ইয়েজেরিনো এই ভয়ংকর লাশের চেহারা দেখে প্রথমে আৎকে উঠে! এইদিকে আমার হাত-পা জমে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো! এরপর সেই বৃদ্ধাও মরাকান্না শুরু করে দেয়। বৃদ্ধা নিজের চোখের সামনে হঠাৎ নিজের আপন ৩ জনের মৃত্যুতে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো। লাশটা এতোটাই বিছ্রি আর ভয়ংকর দেখতে ছিলো যে কেউ লাশটার দিকে একবার তাকালে আর ২য় বার তাকানোর সাহস পাবে না। এরপর আবার সেই পুলিশ আসে এবং লাশটাকে উপর থেকে নিচে নামায় এবং এরপর লাশটার ময়লাতদন্তের জন্যে গাড়িতে করে নিয়ে যায়! এরপর ধীরে ধীরে বাড়িটা প্রায় মানুষ শুন্য হয়ে পড়ে। সেই বৃদ্ধাটা প্রায় পাগলের মতো হয়ে নিজের ঘরে গিয়ে একা বসে থাকে। আমারো দু’তালায় যাওয়ার সাহস হচ্ছিলো না তাই চুপচাপ উঠানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যাঁ হয়ে গেলো। এখন পুরো বাড়িতে শুধু আমি,ইয়েজেরিন,মূশকান আর সেই বৃদ্ধা মহিলাটি রয়েছি।ইয়েজেরিন কিছুতেই ভয় পায় না। সন্ধ্যাঁ হতেই সে মুশকানকে নিয়ে আবার দুতলার ঘরটাতে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় তার নাকি খুব ঘুম পেয়েছে। তাই এখন সে আর মুশকান উপরে গিয়ে ঘুমাবে! এরপর তারা চলে যায়। আমি একাই উঠানে থেকে যাই। এরপর হঠাৎ পাশ থেকে সেই বৃদ্ধা মহিলাটির কান্নার কন্ঠ শুনতে পেলাম। মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো, “আমি বলেছিলাম তাদের এতো পাপ করিস নে! কেউ তখন আমার কথা শুনেনি! আমি জান্তাম পাপের শাস্তী একদিন এভাবেই হবে! সে আবার ফিরে এসেছে! সে কাউকে ছাড়বে না!” আমি মহিলাটির কথা শুনে চমকে উঠলাম! কি বলছেন মহিলাটি এসব! কে ফিরে এসেছে?! তার মানে মহিলাটি এই পরিবারের সকল পাপের কথা এবং কে এই খুন গুলো করেছে তাকে চেনে! এরপর আমি সেই বৃদ্ধা মহিলাটির ঘরে গেলাম এই খুনীর রহস্য জানতে। মহিলাটি প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে বাধ্য হয়েই সে সব ঘটনা আমায় খুলে বলে ! মহিলাটি যা বললো তা শুনে আমি পুরোই অবাক হয়ে গেলাম!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here