ডাকিনি বউ,৮ম পর্ব

ডাকিনি বউ,৮ম পর্ব
লেখা:Masud Rana

হঠাৎ বাড়ির দরজার সামনে সাদা কাপড় পরা একটা মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। প্রথমে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং চিন্তে পারিনি। পরে ভালো করে চেহারা দেখে চিনলাম। আরে!এটাতো সেই বনের সাধু বাবাটা। সে এখন এখানে কেনো এসেছে?! তাহলে কি সে ইয়েজেরিনকে এই দুনিয়া থেকে ধ্বংস করার উপায় জানতে পেরেছে!! আর এখন আমায় সাহায্য করতে এসেছে!!. আমি দ্রুত দৌড়ে সাধু বাবার কাছে গেলাম!! বাবার কাছে গিয়েই অবাক হয়ে বাবাকে প্রশ্ন করলাম:
-বাবা! আপনি এখন এখানে কি করে?! আপনি জানেন যে এই বাড়িতে কত ঘটনা ঘটে গেছে?! আপনার কাছ থেকে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে ৩টা খুন হয়ে গেছে! এই বাড়ির বৃদ্ধা বললো যে খুনগুলো নাকি এই বাড়ির বড় বউয়ের অশরীরী আত্মাই করছে! আর আমার মনে হচ্ছে ইয়েজেরিনই হয়তো এই বাড়ির বড় বউ জুলেখা। জুলেখার আত্মাই হয়তো কোন মেয়ের শরীরে প্রবেশ করে ইয়েজেরিন সেজে আমার জীবনে এবং এই বাড়িতে এসেছে। ইয়েজেরিনই হয়তো এখন একের পর এক খুন করে যাচ্ছে। ইয়েজেরিন আর মুশকান এখন দুতালার ঘরটাতে রয়েছে। আপনি কি ইয়েজেরিনকে ধ্বংস করার কোন উপায় জানতে পেরেছেন?
তাই আমায় সাহায্য করতে এসেছেন !!?
.
সাধু বাবা আমার কতগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। আমি একটা বিষয় লক্ষ করলাম, আজ সাধু বাবাকে দেখতে কেমন যেনো অন্যরকম লাগছিলো। অনেকটা মৃত মৃত!! এরপর নীরবতা ভেঙে গম্ভীর কন্ঠে সাধু বাবা আমাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। তার কথাগুলো শুনে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। সে যা বলেছিলো তার ভাষায়:
.
“আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগের কথা। তখন এই বাড়িতে জুলেখার উপর অনেক অমানবিক অত্যাচার চালায় এই বাড়ির এবং সমাজের লোকেরা। এরপর তাকে এই বাড়ির ২ তালার ঘরটাতে ৪ দিন আটকে রাখা হয়। তারা অত্যাচার করতে করতে এটাই ভুলে গিয়েছিলো যে এই ঘরেই ডাকিনী দেবীর পুজা হতো। অবশ্য জুলেখা ইশ্বরভক্ত ছিলো।
সে ডাকিনী বিদ্যায় কিছুতেই বিশ্বাস করতো না। কিন্তু তার গর্ভে তখন তার সন্তান ছিলো এবং তাকে ৪ দিন ধরে কোন খাবার বা পানি দেওয়া হয় নি। এরপর সে ইশ্বরের কাছে অনেক সাহায্য চায়। কিন্তু ইশ্বর কখনো প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করে না। ঈশ্বর পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে থাকে এবং পৃথিবীর নিয়ম মতাবেক সব কিছু চালনা করে থাকেন। নিয়মের বিপরীতে চলে শয়তান। বিপদে পড়ে তাই বাধ্য হয়েই নিজের ঈমানকে বিশর্জন দেয় জুলেখা। সে আগেও শুনেছিলো যে ডাকিনী দেবী নাকি কারো প্রতি তুষ্ট হলে তাকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় না। তাই জুলেখা ডাকিনী মুর্তির পায়ের কাছে পড়ে থাকে এবং বাড়ির ছোট বউ সেখানে একটা ডাকিনী পুজার নিয়মের বই রেখে গিয়েছিলো। সেই বই অনুসরন করেই জুলেখা ডাকিনী দেবীর পুজো করা শুরু করে। সারাদিন ডাকিনী দেবীর কাছে নানান সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে জুলেখা। কিন্তু ডাকিনী দেবী কিছুতেই তার প্রতি তুষ্ট হয় না। আসলে বইয়ের নিয়ামানুসারে ডাকিনী দেবী তুষ্ট হলে তার চোখ রক্ত লাল হয়ে যাবে। আর মুখ ভেদ করে দুটো ভয়ংকর দাত বেরিয়ে আসবে। কিন্তু জুলেখার হাজার প্রার্থনাতেও ডাকিনী দেবী তুষ্ট হচ্ছিলো না। অবশেষে জুলেখা ভেঙে পড়ে। তার শরীরে আর কোন শক্তি থাকে না। এরপর ডাকিনী দেবীর কাছে চিৎকার করে
জুলেখা বলে “আমার শরীর তুমি নিয়ে নাও মা। কিন্তু আমার গর্ভের সন্তানকে তুমি পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত করো না। তারতো কোন দোষ নেই! আমি জানি আমার একটা কন্যা সন্তান হবে। আমি তার নাম দিয়েছি মুশকান। আমার মুশকানকে আমি তোমার কাছে উৎসর্গ করলাম ডাকিনী মা। এখন থেকে মুশকান তোমার মেয়ে। মুশকান ডাকিনী কন্যা। তাও তাকে আমার সাথে মৃত্যু দিও না। তাকে অন্তত তোমার জন্য বাঁচিয়ে রাখো। আমি মুশকানের শরীরের ভেতরেই বেঁচে থাকবো।” জুলেখা নিজেও জানতো না যে সে অসুস্হ্য হয়ে ডাকিনী দেবীর কাছে কি উৎসর্গ করলো। আসলে ৪ দিন ধরে অত্যাচারিত অবস্হায় ঐ ঘরে না খেয়ে পড়ে থাকার পর জুলেখার সাধারণ বুদ্বিমত্তা হারিয়ে যায়। সে প্রায় পাগল হয়ে যায়। এরপর সে নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে ডাকিনী মুর্তির শরীর ভেজাতে থাকে তাকে তুষ্ট করার জন্য। ঠিক তখনি এই সমাজের লোকেরা ঘরের দরজাটা খুলে। দরজা খুলে জুলেখাকে ঐ অবস্হায় দেখে লোকগুলোর বিশ্বাস আরো তীব্র হয়ে যায় যে, আসলেই জুলেখা ডাকিনী পুজারী। কিন্তু তারাতো জানতো না যে তাদের অত্যাচারে বাধ্য হয়েই জুলেখা ডাকিনী পুজো করতে বাধ্য হয়েছিলো। এরপর জুলেখাকে আবার উঠানে নিয়ে আসা হয় এবং চাবুক দ্বারা আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। এইদিকে দু’তালায় এরপর কি ঘটেছিলো এটা কেউ জানতো না! এরপর দুতালায় হঠাৎ ডাকিনী দেবীর চোখ
রক্ত লাল হয়ে যায়। তার মুখ ভেদ করে দুটো ভয়ংকর দাত বেরিয়ে আসে। ঘটনাটা কেউ দেখেনি। এমনকি জুলেখাও জানতো না যে ডাকিনী দেবী তার কথায় তার প্রতি তুষ্ট হয়েছে। আসলে ডাকিনী দেবীর কাছে এর আগে অনেকে অনেক কিছু উৎসর্গ করেছিলো। কিন্তু এই প্রথম কেউ তার নিজের গর্ভের সন্তানকে তার জন্য উৎসর্গ করলো। তাই ডাকিনী দেবী জুলেখার প্রতি তুষ্ট হয় এবং জুলেখার মনের ইচ্ছা পুরণ করেন। মুশকানকে ডাকিনী কন্যা হিসাবে স্বীকার করে নেয়। এবং জুলেখার মৃত্যুর পরেও তার গর্ভ থেকে ডাকিনী কন্যা হিসাবে মুশকানকে জীবন্ত ভাবে বের করেন। এরপর থেকে মুশকানের শরীরের ভেতরেই লুকিয়ে থাকতো জুলেখা। নিজের ক্ষোভগুলো মুশকানের স্বপ্নে এসে মুশকানকে বলতো সে। এরপর থেকে জুলেখা হয়ে যায় একটা অশরীরী আত্মা। কিন্তু সে কোন সাধারণ অশরীরী ছিলো না।যেহেতু ডাকিনী দেবী তার প্রতি তুষ্ট ছিলো তাই অশরীরী হওয়ার পরেও জুলেখাকে অনেক শক্তি দেয় ডাকিনী দেবী। কিন্তু আবার এই পরিবারে ফিরে এসে সবাইকে খুন করতে হলে জুলেখার একটা শরীরের প্রয়োজন হতো। তাই জুলেখা আবার ডাকিনী দেবীর কাছে একটা শরীর ভিক্ষা চায়। ডাকিনী দেবী আবারো তার মায়া দিয়ে একটা শরীর তৈরি করে জুলেখাকে দেয়।আসলে জুলেখার জন্য ডাকিনী দেবী মুশকানের মতো
একটা ডাকিনী কন্যা পেয়েছিলো। এর আশ্রয় নিয়ে ডাকিনী দেবী পৃথিবীতে এসে ডাকিনী সম্রাজ্যকে আরো বড় করতে পারতো। তাই জুলেখার প্রতি ডাকিনী দেবী একটু বেশিই তুষ্ট ছিলেন এবং তার সব আবদার রাখতেন। এরপর জুলেখা একটা অপরুপ সুন্দর শরীর পায়। কিন্তু ডাকিনী দেবীর একটা শর্ত ছিলো। জুলেখাকে নিয়মিত মানুষদের খুন করে তাদের তাজা রক্ত আর মাংস খেতে হবে। না হলে সে তার শরীর হারাবে। এরপর থেকে জুলেখা তার নতুন শরীরের লোভ দেখিয়ে রোজ পুরুষদের বোকা বানিয়ে এই পাশের বনে নিয়ে যেতো এবং তাদের রক্ত আর মাংস খেতো। এরই ভেতরে জুলেখা তার প্রতিশোধ নিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু ডাকিনী দেবী বলেছিলো যে মুশকানের ৯ বছর বয়স হওয়ার আগে পর্যন্ত যাতে জুলেখা সেই বাড়ির আশেপাশেও না যায়! তাই সে বাকিটা সময় বনের সেই কালো যাদুর জায়গায় ছিলো এবং একের পর এক মানুষকে সেখানে নিয়ে খুন করতো। আর কেউ যদি ভুল করেও বনের সেই জায়গায় যেতো তাহলে আর জীবিত হয়ে ফিরতো না। জুলেখার খাবারই হতে হতো তাকে। তাই এই বনের সেই জায়গাটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তাই সেখানে খুব কম মানুষই আসতো। কিন্তু তুমি মুর্খের মতো কৌতুহলতা দেখাতে সেখানে গিয়েছিলে। জুলেখা দিনের বেলায় অদৃশ্য অবস্হায় থাকতো। সে প্রথমেই তোমাকে দেখেছিলো।
সে অন্যদের মতো তোমাকেও খেয়ে ফেলতো। কিন্তু তুমি যখন কৌতুহলতা দেখাতে গিয়ে সেই কুড়েঘর থেকে ডাকিনী বিদ্যার বইটা নিলে তখন তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে। সে জানতো যে প্রত্যেক পুরুষেরই নারীর শরীরের প্রতি আকর্ষন থাকে তাই সে তোমার এই দুর্বলতার সুযোগ নেয়। সে তোমাকে অনুসরণ করে তোমার বাড়ি পর্যন্ত যায়। কিন্তু সে অদৃশ্যমান ছিলো তাই তাকে তুমি দেখতে পাউনি। এরপর যখন তুমি ডাকিনী মন্ত্র পড়া শুরু করলে তখন সে তোমার সাথে ছলনা করে তোমার সামনে নগ্ন অবস্হায় হাজির হয় এবং তোমাকে এটা সেটা মিথ্যা গল্প বলে বিশ্বাস করায় যে সে ডাকিনী রাজ্য থেকে এসেছে। তুমিও বোকার মতো তার কথা বিশ্বাস করো এবং তার শরীরের লোভে পড়ে যাও। এরপর সে আবারো তোমায় বোকা বানায়। তোমাকে দিয়ে নিজের জন্য খাবার যোগার করে সে। তুমি বাধ্য হয়েই তার জন্য একের পর এক নিষ্পাপ প্রানের বলি দাও। এতে ইয়েজেরিন এবং ডাকিনী দেবী দুজনেরই লাভ হচ্ছিল। এরপর তোমাকেই আবার পরে সে বাধ্য করে আবার এই বনের এলাকায় ফিরে আসতে। এবং অত্যন্ত চালাকির সাথে আবার সে নিজের বাড়িতে প্রবেশ করে। কিন্তু বাড়ির কেউ আর নতুন শরীরে তাকে চিন্তে পারে না। আর তুমিতো তাকে নাম দিয়েই ছিলে ‘ইয়েজেরিন’! তাই সে এই নামেই এই বাড়িতে থাকে। এরপর আবার সে তোমায় বোকা বানায় এবং তার অসমাপ্ত প্রতিশোধগুলো নেয়। সে প্রতি রাতে তোমার হাতে হাত রেখে ঘুমাতো!
সে এর মাধ্যমেই তোমাকে বশ করতো। এরপর তোমার শরীরকে নেকড়ে মানবে পরিণত করতো যাতে কেউ তোমায় বা ইয়েজেরিনকে সন্দেহ না করে। এরপর তুমিই ইয়েজেরিনের কথামতো প্রথমে সেই বৃদ্ধ, পরে বাড়ির ছোট বউ এবং এরপর বাড়ির ছোট ছেলেকে খুন করো। বাড়ির ছোট ছেলে আর তার বউ এর প্রতি ইয়েজেরিনের একটু বেশিই ক্ষোভ ছিলো তাই তাদের একটু বেশিই নির্মমভাবে খুন করায় তোমাকে দিয়ে। এবার বুঝলেতো যে ইয়েজেরিন আর জুলেখা এরা দুজন না। এরা দুজনে মিলে একজন এবং জুলেখার সন্তানই মুশকান। এরই মাধ্যমে জুলেখা এখনো টিকে রয়েছে।”
.
.
সাধু বাবার কথাগুলো শুনে আমি আরো বেশি চমকে গেলাম। তার মানে সেই বনের বই পাওয়া থেকে আজ পর্যন্ত আমার সাথে যা যা ঘটেছে তার পুরোটাই একটা নাটক ছিলো! ইয়েজেরিন আমার সাথে ছলনা করেছে! এরপর আমি সাধু বাবাকে বলি:
-এতো কিছুর মধ্যে আমার কি দোষ ছিলো?! ইয়েজেরিন কেনো আমার জীবনটাকে অভিশপ্ত করলো! ইয়েজেরিন এটা মোটেও ঠিক কাজ করেনি। এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে! ওকে শাস্তিটা দিবো আমি। এক ভয়ংকর শাস্তি দিবো। কিন্তু সাধু বাবা এইসব কিছু যদি আপনি আগেই জানতেন তাহলে সেই দিন কেনো বলেননি যেদিন আমি আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম?! আর আজ আপনার চেহারা এতোটা অদ্ভুত লাগছে কেনো? (আমি)
-তুমি বনের ভেতরে যেদিন আমার কাছে এসেছিলে সেদিন এসব সম্পর্কে আমি নিজেও কিছু জানতাম না। (সাধু)
-তাহলে এখন জানলেন কিভাবে?! অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে?!
-মানুষের মৃত্যুর পর তার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়! সে অনেক কিছু কাছ থেকে দেখতে এবং বুঝতে পায় যা সে বেঁচে থাকতে জানতো না। আমি মারা গেছি।
তাই আমি সব কিছু জানতে পারি!!
-মানে কি? কি বলছেন এসব?!
আপনি মারা গেছেন??!
-হ্যাঁ। আমি মারা গেছি। শুধু তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমার অতৃপ্ত আত্মাটা তোমার কাছে ছুটে এসেছে।
-কিন্তু আপনি কিভাবে মারা গেলেন? আর কে আপনাকে খুন করেছে?
-তুমি আমায় খুন করেছো। হ্যাঁ তুমি। আমি আগেই বলেছিলাম যে জুলেখা কোন সাধারণ অশরীরী আত্মা না। সে ডাকিনীর প্রিয় একটা অশরীরী আত্মা ছিলো। তার ভেতর অনেক ক্ষমতা ছিলো। আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তোমাকে সাহায্য করতে যাওয়া। আমি তোমাকে সাহায্য করতে গিয়ে ডাকিনীকে ধ্বংস করার উপায় জানতে পেরেছিলাম। এর পর সেই কারণটা বলতেই আমি এই বাড়িতে এসেছিলাম। তখন দেখলাম তুমি নেকড়ে মানব হয়ে গেছো। আর এই বাড়ির ছোট বউকে খুন করছিলে। জুলেখা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো যে আমি কেনো এসেছি! তাই সে তোমায় দিয়ে আমাকে খুন করায়।এরপর আমার লাশটা তুমিই টেনে নিয়ে আবার বনে ফেলে আসো। আমার ৪৩ বছরের তপস্যা কোন কাজে লাগেনি।
কারণ ডাকিনী দেবী জুলেখার পক্ষে ছিলো। আর তাই জুলেখা তোমায় বশ করে তোমায় দিয়ে আমাকে খুন করিয়েছে। কিন্তু আমি জানি এতে তোমার কোনো দোষ ছিলো না! তাই তোমায় সাহায্য করতে মৃত্যুর পরেও ফিরে এলাম।
-কি বলছেন এসব?! আমার একটুও মনে নেই যে আমায় বশ করার পর ইয়েজেরিন আমাকে দিয়ে কি কি করাতো। আমার জন্যেই আপনাকে মরতে হলো। আচ্ছা আপনি কি ডাকিনীকে ধ্বংস করার উপায় জানেন?
.
.
আমি সাধু বাবাকে প্রশ্নটা করলাম। কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন এবং এরপর আমার চোখের সামনে বাতাসে মিলিয়ে গেলেন। আমি হঠাৎ সাধু বাবাকে চলে যেতে দেখে আৎকে উঠি! আমি এদিকে সেদিকে পাগলের মতো সাধু বাবাকে ডাকতে থাকি আর খুজতে থাকি। কিন্তু তাকে আর খুজে পাই না। তাহলে কি সাধু বাবা আমাকে, ডাকিনীকে ধ্বংস করার উপায় বলতে অপারক! এরপর আমার প্রচন্ড রাগ হয়। আমি ভাবি, হোক সে জুলেখা বা ইয়েজেরিন! হোক সে কোন ভয়ংকর অশরীরী আত্মা! হোক না তার সাথে অনেক নিষ্ঠুরতা চলেছে! কিন্তু ইয়েজেরিন মোটেও এটা ভালো কাজ করেনি। তার এখন শাস্তি পাওয়া উচিত। আমি জানি যে ইয়েজেরিন আর মুশকান এখন বাড়ির দুতালায় রয়েছে। এরপর আমি অনেকটা রেগেই দুতালায় যাই। এরপর জোরে ঘরের দরজাটা ধাক্কা দেই। ধাক্কা দিতেই স্বাভাবিক ভাবে দরজাটা খুলে যায়।
কিন্তু ঘরের ভেতরে যা দেখলাম তাতে আমি আমার নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘরের ভেতর ইয়েজেরিন বা মুশকান কেউ ছিলো না! কিন্তু তারা কখন ঘর থেকে বের হলো! আমিতো তাদের বের হতে দেখিনি! আর ঘরটাও বেশ অদ্ভুত রকম লাগছিলো। ঘরটা দেখে মনে হচ্ছিলো যে এই ঘরটা অনেকদিন ধরে কেউ ব্যবহার করে না। ঘর পুরোটা ধুলায় ভর্তি ছিলো। চারিদিকে মাকরসার জাল। ঘরটা দেখতে অনেকটা প্রথম দিন যেমন ছিলো তেমন লাগছিলো। কিন্তু এরপর তো ঘরটা পরিষ্কার করা হয়েছিলো! আজ সকালেও তো ঘরটা স্বাভাবিক এবং থাকার মতো একটা ঘর ছিলো! আর এতো দ্রুত ঘরটা আবার আগের মতো হয়ে গেলো কিভাবে?! আর ইয়েজেরিন বা মুশকান কোথায় গিয়েছে!! এরপর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে আসলাম। এবার আমি আরো বেশি অবাক হলাম। কারণ এবার দেখলাম যে পুরোবাড়ি ধুলাবালি আর মাকরসার জালে ভরা। বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক বছর ধরে কেউ ব্যবহার করে না! এরপর সেই বৃদ্ধা মহিলাটাকে খুজতে থাকি। কিন্তু পুরো বাড়ি খুজে আর কাউকেই পেলাম না। বাড়ির প্রত্যেকটা ঘরে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা ঘর দেখে মনে হচ্ছিলো যে ঘরগুলো মনে হয় অনেক বছর ধরে ব্যবহার হয় না! কিন্তু কিছুক্ষন আগেইতো সব কিছু স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে এখন আমার সাথে কি হচ্ছে?!
তাহলে কি আমি আবার কোন মায়ায় জড়িয়ে পড়ছি!! কিন্তু ইয়েজেরিন আর মুশকান এখন কোথায় রয়েছে?! যে করেই হোক তাদেরকে আমায় খুজে বের করতেই হবে! কিন্তু এতো দ্রুত এই বাড়িটা এতোটা বদলে গেলো কিভাবে?! নাকি এটাই বাড়ির আসল চেহারা। আর জুলেখা, মুশকান,এই বাড়ির লোকগুলো আর সাধু বাবা আমার কল্পনা ছিলো!!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here