চাঁহাত ৮ম পর্ব,৯ম পর্ব

চাঁহাত ৮ম পর্ব,৯ম পর্ব
আরশিয়া জান্নাত
৮ম পর্ব

কুইন রেড কালারের হালকা কাজের গাউন পড়ে বসে আছে চাঁহাত।সাজ বলতে কেবল ঠোঁটে রেড লিপস্টিক।এছাড়া কোনো অর্নামেন্ট পর্যন্ত পড়েনি।চুলগুলো খুব সুন্দর করে বান করে তাতে হোয়াইট স্টোনের হেয়ার পিন দেওয়া। কপালে বেশ কিছু চুল সাজানো আর কানের পাশের চুল কার্ল করা।
হাতে ডায়মন্ডের সিম্পল ব্রেসলাইট।
চাঁহাতকে দেখে ওমর ফারুক বললেন,ও মাই গড মাই প্রিন্সেস! ইউ আর লুকিং সো প্রিটি!
চাঁহাত হেসে বললো,বাবা তুমি সবসময় বাড়িয়ে বলো।
:মোটেই না।আমার মেয়েটা বিনা সাজেও এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রাজকন্যা।
সিয়াম বললো,একদম ঠিক বলেছ ভাইয়া।চেরি তোকে আজকে রেডে সত্যি চেরি লাগছে।
চাঁহাত হাসতে লাগলো।ওমর ফারুক মনে মনে বললেন,হে দয়াময় আমার মেয়েটার মুখে যেন সবসময় এমন হাসি থাকে!ওকে তুমি সুখী করো।
আয়াজ নার্ভাসনেস এ বারবার ঘেমে যাচ্ছে।মেকাপম্যান বললো,স্যার আপনি এভাবে ঘামছেন কেন।লুক টা স্পয়েল হয়ে যাচ্ছে তো।
আয়াজ মিনমিনে গলায় বললো,এখনো তো ঠিকই আছি।না জানি চাঁহাতের সামনে গেলে কি হয়।মেয়েটার সামনে গেলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।যেন সে আগুন আর আমি মোম!যার আশেপাশে থাকলেই আমি গলে গলে শেষ হয়ে যাই।ইশ কি যে হবে আজকে।
ব্লু ব্লেজার এর সাথে অফ হোয়াইট শার্ট আর কুইন রেড টাই,পায়ে কালো ফর্মাল সুজ আর চুলগুলো সুন্দর করে সাজানো।হাতে হোয়াইট ব্র্যান্ডেড ওয়াচ।আয়াজকে বরারবরে মতো হ্যান্ডসাম লাগছে।হাতে একগাদা টিস্যু নিয়ে সে ঘাম মুছতেই ব্যস্ত।সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো,উফ ভাই তুই এতো লো টেম্পারেচারে এভাবে ঘামছিস কেন?চাঁহাত কি বাঘ না ভাল্লুক এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে?
আয়াজঃ আপু রে আমার কি পরিমাণ নার্ভাস লাগছে বলে বুঝাতে পারবোনা।
তানহাজঃ আহা টেনশনের কিছু নেই।রিল্যাক্স থাকো।
সাদেক সাহেব এসে বললো ,হলো তোদের তাড়াতাড়ি চল।
আয়েশা ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বললো,আমার ছেলেটাকে রূপকথার রাজকুমারের মতো লাগছে।মাশাআল্লাহ! তারপর দোআ পড়ে মাথায় ফু দিলো।
🍒🍒🍒
চাঁহাতকে দেখে আয়াজের বুকে চিনচিন করতে লাগলো।এই মেয়েটা কি আমাকে মেরে ফেলার জন্য এভাবে রেডি হয়েছে?এতো সুন্দর লাগছে কেন তাঁকে?
পাশ থেকে তানহাজ চিমটি কেটে বললো,শালা মশাই একটু সামলে চলেন সবার ফোকাস আপনার দিকে।এমন হা করে থাকলে সবাই কি বলবে?
আয়াজ সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললো।
সুপ্তিঃ ওয়াও চাঁহাত।তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।এনিওয়ে আমি আয়াজের বড় বোন সুপ্তি।আর এ হচ্ছে আমার হাজবেন্ড তানহাজ।
চাঁহাতঃ হ্যালো আপু, হ্যালো ভাইয়া।আপনারা ভালো আছেন তো?
তানহাজঃ ভালো আছি।তুমি ভালো আছ তো?
:জ্বি।
তারপর আয়াজকে টেনে এনে চাঁহাতের পাশে বসিয়ে দিয়ে উনারা দুজন পগারপাড়।চাঁহাতের পাশে বসতেই আয়াজের হাঁটু কাঁপতে লাগলো।সে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো।চাঁহাত সেসব দেখে স্বাভাবিক গলায় বললো,
কি ব্যাপার মিঃ হিরো?আর ইউ নার্ভাস?
:না না ঠিক আছি।
:আমাকে কেমন লাগছে বলুন তো?
আয়াজ চাঁহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে বললো,অনেক সুন্দর লাগছে।
চাঁহাত মনে মনে বিরক্ত হয়ে বললো,দুনিয়ার মেয়েদের সাথে অভিনয় করে,নাচানাচি করে আমার সামনে আসছে ভং ধরতে,ঢং!
দুই পরিবারের উপস্থিতিতে খুব সাধারণ ভাবেই তাঁদের আংটি বদল হলো।তারপর বিয়ের তাং ঠিক করে সবাই একসঙ্গে বসে ডিনার করলো।ডিনার শেষে চাঁহাত নিজের রুমের বেলকনীতে দাঁড়িয়ে রইলো।তাঁর মন খারাপ লাগছে,আয়াজ তাঁর সঙ্গে ঠিকঠাক কথা পর্যন্ত বলেনি।এতো আনইজি ফিল করলে চলে? আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছিল এমন সময় রিপা আয়াজকে চাঁহাতের রুমে এনে বললো,এই তো দুলাভাই এটা হচ্ছে ছোট আপার রুম,আপনেরা কথা বলেন আমি যাই।
আয়াজ গিয়ে চাঁহাতের পাশে দাঁড়ালো।
:আপনার রিংটা পছন্দ হয়েছে মিস চাঁহাত?
চাঁহাত মাথা নাড়লো হ্যাঁ।
:আপনার কি মন খারাপ লাগছে?
চাঁহাত আয়াজের দিকে এক পলক তাকিয়ে হঠাৎ করে আয়াজকে জড়িয়ে ধরলো।ঘটনার আকস্মিকতায় আয়াজ একদম চমকে গেল। কি হলো এটা! কিছু বুঝে উঠবার আগেই চাঁহাত তাকে ছেড়ে দিয়ে রুমে এসে চুলের ক্লিপ খুলতে লাগলো।
আয়াজ তখনো বেলকনীতে দাঁড়িয়ে রইলো।ওর হার্টবিট বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে।
________

দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লাসে যাচ্ছে চাঁহাত।আজকেও ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে,উফফ।
আয়াজ মুভির প্রমোশনের ইভেন্ট নিয়ে মহাব্যস্ত।
এর মাঝে চাঁহাতের সাথে তাঁর মাত্র দু’বার কলে কথা হয়েছে।আয়াজ ফ্রি হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়,ততক্ষণে চাঁহাত ঘুমিয়ে পড়ে।আর সারাদিনের ব্যস্ততায় চাঁহাত ও ফোন করতে পারেনা।এভাবেই চলছে দুই মহাব্যস্ত মানুষের জীবন!
ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল চাঁহাত আর তাঁর চার ফ্রেন্ড এমন সময় একজন এসে বললো,হেই চাঁহাত কেমন আছ?
চাঁহাত কিছুক্ষণ ভালোমতো তাকিয়ে বললো,স্যরি আপনাকে চিনতে পারলাম না?
:আরেহ আমি সামির😒।নিধি ভাবীর দেবর।
:ওহ আচ্ছা আচ্ছা মনে পড়েছে।তা আপনি হঠাৎ এখানে?
:আমার ফ্রেন্ড একটা এখানে ল’ তে পড়ে।অনেকদিন ধরে আসবো ভাবছিলাম।সুযোগ হচ্ছিল না।এবার সুযোগ পেয়েই চলে এসেছি তাছাড়া ভাবীর কাছে জেনেছি তুমিও এখানে পড়।
:ওহ আচ্ছা😑।
ইরা পাশে থেকে ফিসফিস করে বললো,এটা কি সেই ছেলেটা নাকি যে তোর উপর ক্রাশ খেয়েছিল?
চাঁহাত আস্তে করে বললো,হু।
ইরা নীলয় কে চিমটি কাটতেই নীলয় বললো,হ্যাঁ রে চাঁহাত তোর বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো কবে?
চাঁহাতঃ দুই মাস পর।
সামির চমকে বললো,তোমার বিয়ে?কবে কখন কার সাথে আমি তো কিছুই জানিনা?
ইরা হেসে বললো,ওমা আপনি জানেন না?গেল মাসেই তো ওর অ্যাঙ্গেজমেন্ট হলো ওর বা’হাতের অনামিকাতে ডায়মন্ডের রিংটা খেয়াল করেননি?
সামির আহত চোখে চাঁহাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে বললো,কংগ্রেস।আচ্ছা আমি যাই আমার কাজ আছে।পরে দেখা হবে।
দীপু বললো,ধুর তোরা এভাবে না বললেও পারতি।বেচারা কি ভালো মুডে এসে ছ্যাঁকা খেয়ে গেল।
ইরাঃএ আর কিছুক্ষণ থাকলে চাঁহাতের মাথা খেয়ে ফেলতো।তাছাড়া আমরা তো ভুল কিছু বলিনি।চাঁহাত এখন মিঃ আয়াজের প্রপার্টি।
নুশু পাশ থেকে বললো,সারাজীবন আয়াজকে হেট করে করে শেষে মিসেস আয়াজ হয়ে যাওয়া চাঁহাতের সাথে সেলফী।Say chees
সবাই একসঙ্গে বললো চিজজ।
(নুশু আয়াজের বিয়ের খবর শুনে প্রথমে আপসেট হলেও যখন শুনলো মেয়েটি আর কেউ নয় চাঁহাত ওর খুশি আর দেখে কে।দীপুরা ভয়ে থাকলেও নুশুর রিয়েক্ট সবাইকে চমকে দিয়েছিল।নুশু সবার চেহারা দেখে বললো,আয়াজ কে আমি অনেক ভালোবাসি ।তাই বলে চাঁহাতকে ভালোবাসি না তা তো না।দুই প্রিয় মানুষ কাপল হচ্ছে এতে আমার আনন্দ চারগুণ হয়েছে।সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো)
সামির দূরে গিয়ে চাঁহাতের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে বললো,তুমি ভালো থেকো চাঁহাত।অনেক অনেক সুখী হও।

আয়াজ বেডে বসে মনোযোগ দিয়ে চাঁহাতকে দেখছে।চাঁহাত পড়ার টেবিলে বইয়ের উপর হাত রেখে আরামসে ঘুমাচ্ছে।আয়াজ তাঁর ফোনে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো ।তারপর চাঁহাতের কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
“কত মুভিতে অভিনয় করেছি ঘুমন্ত মেয়েদের পরীর মতো লাগে।তাঁরা অবশ্য মেকাপ করে পরিপাটি হয়ে থাকে।কিন্তু এই অগোছালো মেয়েটা এতো স্নিগ্ধ!
এই শুভ্রতাকে সবসময় আগলে রেখো চাঁহাত।”
চাঁহাত ঘুম থেকে উঠে আয়াজকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো।আপনি এসেছেন মিঃ হিরো?নাকি স্বপ্ন দেখছি?
আয়াজ দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো,আমাকে আজকাল স্বপ্নেও দেখা হয় বুঝি?
চাঁহাত ভ্রু কুঁচকে বললো,কেন নিজের উড বি কে স্বপ্নে দেখা নিষিদ্ধ নাকি?
সবাই তো আপনার মতো সিমার না।তাছাড়া আমার মন তো আবার এক্সট্রা সফট।মানুষের জন্য মনে মায়া একদম টইটম্বুর ।
আয়াজ একটানে চাঁহাতকে নিজের কাছে এনে চোখে চোখ রেখে বললো,এই মন কেবল আমার মিস চাঁহাত।এখানে অন্য কারো জন্য মায়া পুষলে হবেনা।এর এক ইঞ্চি ভাগও আমি কাউকে দিবোনা।
:এহ আসছে বড়! বছরে একবার খবর নিয়ে উনি আসছে এসব বলতে।সেই যে গেলেন আর একবার ও কি দেখতে মন চায়নি আপনার?এই আপনার বিবেক হু?
:ব্যস্ত ছিলাম অনেক।
:ঢং।
:আপনি কি ফ্রি আছেন?
:হুম কেন?
:ফ্রেশ হয়ে আসুন তাহলে, আজকে আমরা বাইরে ডিনার করবো।
:ওকে দুই মিনিট অপেক্ষা করুন।
আয়াজ হেসে বললো,একমাত্র আপনার দ্বারাই দুই মিনিটে তৈরি হওয়া সম্ভব মিস চাঁহাত!
চাঁহাত হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল।
“আজ আপনার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে মিস চাঁহাত।আই হোপ এবার আপনাকে চমকাতে পারবো!”

আয়াজ কি জানে চাঁহাত একটুও চমকাবে না???
ইশ চাঁহাত কি পারবেনা একটু চমকানোর অভিনয় করতে।কি বলেন আপনারা??

চলবে,,,,

চাঁহাত
৯ম পর্ব
আরশিয়া জান্নাত

খুব সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট এ আয়াজ আর চাঁহাত বসে আছে।পাশেই সুইমিং পুল,চারদিকে ফুল আর লাইট দিয়ে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা।স্লো মোশনে ভায়োলিন প্লে করা হয়েছে,পরিবেশ টা অসাধারণ।চাঁহাত চারদিকে তাকিয়ে বললো,
হিরোদের লাইফ অনেক প্যারাময় তাইনা?সারাক্ষণ এক গাদা বডি গার্ড নিয়ে ঘুরতে হয়।
আয়াজ ইশারায় গার্ডদের ইনভিজিবল হতে বলে চাঁহাতকে বললো,মিস চাঁহাত আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।তাঁর আগে কিছু অর্ডার করবো?
:না আগে বলুন তারপর নাহয় অর্ডার করবেন।
:ওকে।মিস চাঁহাত আপনি কি জানেন আমরা পূর্বপরিচিত? আই মিন আমাদের এরপূর্বেও দেখা হয়েছিল?
:তাই নাকি?কখন!
আয়াজ সেদিনের গল্প বলতে শুরু করলো আর চাঁহাত মনোযোগী শ্রোতা হয়ে সবটা শুনলো।
সবটা যদিও চাঁহাত জানতো তাও আয়াজকে বুঝতে দিলোনা।গভীর উচ্ছাসে বললো,ও মাই গড আপনিই তাহলে সেই ছেলেটা? আমাদের গল্প দিয়ে তো সিনেমা বানানো যাবে!
আয়াজ মুচকি হেসে বললো,উহু এটা সিনেমা হবেনা।
:কেন?
:এটা আমাদের খুব ব্যক্তিগত গল্প।আমি চাইনা সবাই সেটা জানুক!
:অহ আচ্ছা।
:এখন অর্ডার করি?
:হুম।
ডিনার শেষে তাঁরা সুইমিং পুলে পা ভিজিয়ে বসলো।চাঁহাত পা নাচাতে নাচাতে বললো,মিঃ হিরো ভালোবাসেন আমাকে?
আয়াজ আহত গলায় বললো,এতো বছর আপনাকে খুঁজেছি কি না ভালবাসলে?
:স্ট্রেটকাট বলুন।
:সেটা বিয়ের রাতে বলবো।
চাঁহাত মুখ ফুলিয়ে বললো,ঢং।
আয়াজ শব্দ করে হাসতে লাগলো।চাঁহাত তাকিয়ে রইলো আয়াজের দিকে ফিসফিস করে বললো,ইশ হাসলে কি সুন্দর টোল পড়ে।ছেলেটা এতো সুন্দর কেন?
তিয়াশা একটার পর একটা টিসু নিয়ে চোখ চেপে ধরে রাখছে।চোখের পানি থামছে না।একটু আগে আয়াজের সাথে ভিডিও কলে কথা হয়েছে,আয়াজের আনন্দ চোখ মুখ ঠিকরে পড়ছিল।আয়াজকে খুশি দেখে তিয়াশার তো সবসময় মন ভালো হয়ে যেত, আজ কেন হচ্ছে না?সেই আনন্দের উৎস অন্য কেউ বলে?তিয়াশা আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের লাল চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,আমি তোর বেলা না চাইতেও সেলফিস হয়ে যাই আয়াজ!তোর পাশে অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারছিনা।আমি কি করবো এখন?

দীপু বসে গিটার বাজাচ্ছে আর নীলয় বাদাম এর খোসা ছাড়িয়ে ইরাকে দিচ্ছে।
ইরাঃ দীপু আমার মনে হয় তোর মিউজিক নিয়ে কিছু ভাবা উচিত।তোর গানের গলা দারুণ!
নীলঃদীপুর কি সেসবে ধ্যান আছে? ওর সব গানের সুর তো নুশুর জন্য।
দীপু তিরস্কারের হাসি দিয়ে বললো,সে তো আমার গান শোনেনা।।
তারপর গাইতে লাগলো,
🎶🎶🎶🎶
সে কি জানে আজও তুই কথা বলিস
আমার সাথে মনে মনে প্রতিদিন, বেরঙিন
সে কি তোর কথা ভাবে আমার মতন করে?
তোর চিঠি কি সে পড়ে? এক মনে মাঝরাতে?
একটু মুচকি হেসে!
তার কাছে চলে যাওয়া সে তো যাওয়া নয়
দেখা হবে স্মৃতির গভীরে
🎶🎶🎶🎶🎶
সে কি জানে, অভিমানে তোকে হাসাতে?
সে কি পারে, বুকে ধরে তোকে ভোলাতে?
তোর প্রিয় গান কে গেয়ে শোনাবে?
বল আমার থেকে কে তোকে ভালো জানে!
ইশারাতে খুজে বেড়াই তোকে স্বপনে
তোর নাম ডেকে হেসে ফেলি আনমনে
কে নিয়ে যাবে তোকে রুপকথার দেশে
বল আমার থেকে কে তোকে ভালো জানে!
🎶🎶🎶🎶🎶🎶

দিলারাঃ হ্যালো আস্সালামু আলাইকুম।
আয়েশাঃ ওয়ালাইকুম আস্সালাম।কেমন আছেন বেয়াইন?
:ভালো আছি আপা।আপনি ভালো আছেন তো?
:হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
:আসলে আপা একটা কথা বলতে ফোন করেছি।
:বলেন।
:আপা বিয়ের শপিং তো শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই।আসলে চাঁহাতের স্কিনে এলার্জি আছে।মানে ও সাজগোজ বা অর্নামেন্ট পড়তে পারেনা।
:আমি জানি সেটা।আপনার ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে চাঁহাতের কি হয়েছিল আমরা জানি তো।
(দিলারা চমকে গেলেও কিছু বললো না ভাবলো চাঁহাত বলেছে হয়তো।)
:তাহলে তো হলোই।আমি যে কি টেনশনে পড়েছিলাম।বিয়েতে তো মিডিয়ার সবাই থাকবে সেখানে ও বিনা সাজে থাকলে আপনাদের আপত্তি হতো কিনা!
:কি যে বলেন।চাঁহাত এমনিতেই অনেক মিষ্টি দেখতে।ওকে সাজাতে হবেনা।তবে কষ্ট করে ড্রেসগুলো পড়তে পারলেই চলবে।
দিলারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।মেয়েটাকে এমন পরিবারে বিয়ে দিবে ভাবতেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
আর মাত্র এক মাস বাকি বিয়ের।আয়াজের মুভি রিলিজ করেছে দুই সপ্তাহ হতে চললো।দুই সপ্তাহেই হলগুলোতে দারুণ ভীড়।সবাই খুব ভালো রিভিউ দিচ্ছে।”মন পাঁজরে”তে নতুন নায়িকা হিসেবে সবাই তাথৈ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।আয়াজের মতো হিরোর মুভি মানেই ব্লকবাস্টার।
নুশু মুভি দেখে এসেই বললো,বুঝলি চাঁহাত এটা হলো আমার অজুর লাস্ট মুভি।
ইরা রেগে বললো, মানে কি? কি সব আবোলতাবোল বকছিস?
নুশু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,এরপর থেকে চাঁহাতের অজুর মুভি আসবে।আনমেরিড অজু তো আমার ছিল তাই না??
ইরা: হেহে তখন সে জীজু হবে।আমরা সবাই জীজুর মুভি দেখবো।
নুশুঃ হুহ!অজু থেকে জীজু হ্যাশট্যাগ ছ্যাঁকা খাইছি।
সবাই হাসতে শুরু করলো।
🌿🌿🌿🌿
নীল সাগরের পাঁড়ে সেই কিশোরী মেয়েটি সাদা রঙের জামা পড়ে ঝিনুক কুড়াচ্ছে।একটু পর পর গর্জন দিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে।ঝিনুক কুড়িয়ে একপাশে রেখে সাগরের পানিতে পা ভেজাতে লাগলো মেয়েটি।হঠাৎ বড় ঢেউ এসে তাঁকে ধাক্কা দিতেই তাল সামলাতে না পেরে তলিয়ে যেতে লাগলো অতল জলরাশিতে।ঠিক তখনই কেউ একজন শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরলো তাঁকে।সেই কঠিন সময়ে ক্ষীণ আশা হয়ে আসা মানুষটিকে খুব আপন মনে হলো তাঁর।চোখ মেলে তাঁকাতেই চমকে বললো আপনিই সেই যে সবসময় বাঁচান আমাকে?ছেলেটি হেসে বললো,তুমি আমার প্রাণভোমরা। তোমায় রক্ষা করা তো আমার দায়িত্ব।মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো।”
চাঁহাত চোখ মেলে বললো,এতোদিনে বুঝলাম সে আপনিই ছিলেন আর সেই কিশোরীটি আর কেউ না আমিই ছিলাম।
তখনো ভোরের আলো ফোটেনি।চাঁহাত বেলকনীতে গিয়ে শুকতারার দিকে তাকিয়ে বললো,আমার জীবনের সব কটা ভোর আপনাকে দেখেই যেন হয় মিঃ হিরো! উহু মিঃ আয়াজ।
বলেই মুখ ঢেকে ফেললো, ইশ কী লজ্জা!!!
🍁🍁🍁
আজকে নীলয়ের জন্মদিন।ইরা তাই নিজ হাতে ওর ফেভারিট বিরিয়ানি রান্না করেছে।নীলয়ের ফেভারিট ওরেঞ্জ কালারের জামদানি পড়ে,চোখে আইলাইনার আর কাজল দিয়ে চুলে বেনী করে এক পাশে ফেলেছে।একদম নীলয়ের পছন্দসই সাজ।ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া নীলয়ের পছন্দ না।তাছাড়া ইরার ঠোঁট এমনিতেই অনেক গোলাপি।সেজেগুজে নীলয়ের গিফট আর বিরিয়ানির বক্স নিয়ে ইরা বেড়িয়ে পড়লো।
ইরাকে দেখে নীলয় অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।ইরা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে নীলয়ের সামনে এসে বললো,তুই আমাকে দেখো হেল্প করতে এগিয়ে এলিনা কেন?
:ওটা তুই ছিলি বুঝিনাই তো।
:লায়ার।অন্য দিকে ফিরে আছিস কেন?আমি কি তালগাছের সাথে কথা বলছি?
:বল বল কেন ডেকেছিস তা বল।
:আজিব! কেন ডেকেছি জানিস না?
:না জানি না।এমন সেজেগুজে এসেছিস কেন?কার বিয়ে লাগছে?
ইরা কিছু না বলে পার্কের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো।তারপর ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলো।
নীলয় ওখানেই ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে রইলো।তাঁর হৃদকম্পন একশো ছাড়িয়ে গেছে হয়তো।কি জোরে হাতুড়ি পেটাচ্ছে বুকে।
ইরা ওর দিকে ফিরে বললো,ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা? এদিকে আসবানা??
নীলয় নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ইরার পাশে বসলো।
ইরা মিষ্টি করে হেসে বললো,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জানপাখি টা।
:জানপাখি ডাকতে বারণ করেছি না?
:আজকে সব বারণ স্থগিত।তুই তোকারিও চলবেনা।তুমি করে বলবা।
:বিয়ের আগে কোনোকিছুই স্থগিত হবেনা।
:উফফ।তোমার ঐসব রুলস রেগুলেশন ছাড়ো তো।দেখি হা করো –
খেয়ে বলোতো কেমন হয়েছে?
নীলয় খেয়ে দেখলো অনেক মজা হয়েছে কিন্তু মুখে কিছু বললোনা।
ইরা ভাবলেশহীন নীলয়কে দেখে রেগে বললো,তোমার এসব মুডের মানে কি নীলয়?আমি এতো কষ্ট করে তোমার জন্য শাড়ি পড়ে এসেছি আর তুমি একবারো তাকাও নি।বিরিয়ানি রান্না করেছি খেয়ে কিছু বলছোনা?পছন্দ হয় নি ভালো হয় নি খেতে?
নীলয় চুপচাপ খেতে লাগলো কিছু বললোনা।
ইরা তাকিয়ে ওর খাওয়া দেখলো।”কেমন পিশাচ আমাকে একবার খেতেও বললোনা।এই যে ভোরে উঠে কষ্ট করে রেঁধে এনেছি তার কোনো ভ্যালু নাই!”কষ্টে ইরার চোখে পানি চলে এলো।
নীলয়ের খাওয়া শেষ হতেই।বক্স ব্যাগে রেখে গিফট দিয়ে কিছু না বলে ইরা বাসার পথে হাঁটা দিলো।
নীলয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৌড়ে গিয়ে ইরার রিকশায় উঠে বললো, “মামা নদীর পাড়ে চলেন।”
ইরা অন্য দিকে ফিরে কেঁদেই চলেছে।নীলয় বুঝতে পেরে ইরার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,বিরিয়ানি টা এতো মজা হয়েছে যে তোমাকে ভাগ দিতে পর্যন্ত ইচ্ছে হয়নি।যদি বাসায় থাকতাম পুরো হাড়ি আমি একাই সাবার করতাম।।আর তোমার দিকে তাকাইনি কেন জানো? এতো সৌন্দর্য দেখার ক্ষমতা আমার নেই।চোখ জলসে যাচ্ছে অলরেডি দেখো কেমন লাল হয়ে আছে।
ইরা চোখে পানি রেখেই হেসে ফেললো।
তারপর নীলয়ের বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো,তুমি অনেক আনরোমান্টিক।আই হেট ইউ।
নীলয় কিছু বললোনা।এই সময়টা সে অনুভব করেই কাটাতে চায়।সব কথা মুখে বলতে হয়না।”আচ্ছা ইরা কি আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে??”
এমন সময় ইরা বললো,খুব শুনতে পাচ্ছি।তোমার চেয়ে তোমার হৃদকম্পন বেশি কথা বলে।
নীলয় চমকে গেল।ইরা চোখ বন্ধ করে হাসতে লাগলো।
🌿🌿🌿
:হ্যালো আয়াজ আই এম ইন ডেঞ্জার।প্লিজ আর্লি আসো।
:কি হয়েছে তোর বলবি তো?কোথায় তুই?হ্যালো হ্যালো??তিয়াশা..
আয়াজ মিরাজ কে ডেকে আর্জেন্ট সিঙ্গাপুর-এর ফ্লাইট বুক করতে বললো।
কাউকে কিছু না বলেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিলো।তিয়াশা ওর বেস্টফ্রেন্ড,নিশ্চয়ই বড়সড় কোনো বিপদ হয়েছে।নাহয় এভাবে কখনও ফোন করে বলতো না।আয়াজ আর কিছু ভাবতে পারলো না।ফ্লাইটে উঠবার আগে চাঁহাত কে মেসেজ করলো, I’ll be back very soon…Take care.

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here