কোথাও_কেউ_নেই হুমায়ুন আহমেদ ১৮.

কোথাও_কেউ_নেই
হুমায়ুন আহমেদ

১৮.
জাহানারা অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার?
মামুন হাসিমুখে বলল, কোন ব্যাপার না। এমনি এসেছি। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম এসেছি। যখন দেখে যাই কেমন আছেন।
ভালই আছি।
করছেন কি?
দেখতেই পাচ্ছেন ফাইল নিয়ে বসে আছে।
জাহানারার ঠোঁট বিরক্তিতে বেঁকে গেল। মামুন অবাক হয়ে মুনার সঙ্গে জাহানারার অদ্ভুত একটা মিল খুঁজে পেল। মুনাও মাঝে মাঝে বিরক্তিতে ঠোঁট বাকাত। ঠিক এই ভঙ্গিতে বাকাত। মামুন বলল, লোন স্যাংশন হয়ে গেছে সেই খবরটাও দিতে এলাম।
পুরনো খবর আগেই একবার দিয়েছেন।
ও আচ্ছা।
মামুন অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। তার উঠে যাওয়া উচিত। কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছে না। বসে থাকতে ভাল লাগছে।
আপনি বাড়ি খুঁজে পেয়েছেন?
না।
এখনো খুঁজছেন? না খোঁজা বন্ধ করে দিয়েছেন?
খুঁজছি। আপনি কী চা খাবেন?
জি খাব।
জাহানারা নিজে উঠে গিয়ে চায়ের কথা বলে এল। মামুন লক্ষ্য করল শুধু চা নয়, চায়ের সঙ্গে বিসকিট দেবার কথাও বলছে। এবং ফিরে এসে বসেছে হাসিমুখে। আগের বিরক্তির লেশমাত্র নেই।
আপনি কি এখনো শশানে বেড়াতে যান?
না। যাই না। আপনার কথার পর ভয়ে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
বিকালে কি করেন-ঘরেই বসে থাকেন?
হুঁ। বসে থাকা ছাড়া আর কি করব। গল্পের বই পড়ি। আপনার কাছে গল্পের বই আছে?
আছে। কাল নিয়ে আসব। অনেক আছে।
বলেই মামুন একটু চমকাল। কারণ গল্পের বই তার কাছে নেই। খুঁজলে-টুজলে এক-আধটা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনেক বই আছে এটা পুরো মিথ্যা। এত বড় একটা মিথ্যা কথা সে কেন বলল। এই মেয়েটার আচার-আচরণ অনেকটা মুনার মতো সেই কারণেই কী?
জাহানারা বলল, কালই আপনাকে বই নিয়ে আসতে হবে না। পরের বার যখন এদিকে আসবেন নিয়ে আসবেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আপনার কাজকর্ম কেমন এগুচ্ছে?
কোন কাজকর্মের কথা বলছেন?
ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন যে কাজকর্মের জন্যে। আমাদের তো রিপোর্ট করতে হবে।
কাজ চলছে পুরোদমে। জিনিসপত্র আনতে ঢাকা যাব।
জাহানারা কৌতূহলী হয়ে তাকাল।
কবে যাবেন?
এখনও ঠিক করিনি শিগগিরই যাব। আপনার কোন খবর থাকলে দিবেন। আমি পৌঁছে দেব।
কাকে পৌঁছে দেবেন?
আপনার মাকে। তারা তো ঢাকাতেই থাকেন। তাই না?
আমার কোন খবর নেই।
কোন জিনিসপত্র দিতে চাইলে দিতে পারেন। কোন রকম সংকোচ করবেন না। এখানে মোক্তার পাটি বলে এক রকম পাটি পাওয়া যায়। মোক্তা গাছের ছাল দিয়ে তৈরি ভাল জিনিস। আমি যোগাড় করে দেব।
আপনাকে কিছু জোগাড় করতে হবে না। আমি কোন কিছু পাঠাতে চাই না।
আপনার বদলির কী হয়েছে?
হয়নি কিছু।
হেড অফিসে দরখাস্ত করেছিলেন যে তার কী হল?
জানি না। কিছু হয়নি নিশ্চয়ই। হলে কি আর এখানে পড়ে থাকতাম? নিন। চা খান।
চা খাবার পরও মামুন ঘণ্টা খানিক বসে রইল। সে বুঝতে পারছিল জাহানারা বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু তার উঠতে ইচ্ছা করছে না। জাহানারা একবার বলেই ফেলল, চলে যান কেন শুধু শুধু বসে আছেন? এই যাচ্ছি বলেও মামুন বসে রইল। জাহানারা চশমা পরে মাথা নিচু করে কাজ করছে। চশমা নাকের ডগার দিকে অনেকটা নেমে এসেছে। সুন্দর লাগছে দেখতে। এই মেয়েটির চোখ দু’টি সুন্দর। কিন্তু চশমার জন্যে সুন্দর চোখ আড়ালে পড়ে থাকে। যে ভদ্রলোক এই মেয়েটিকে বিয়ে করবে। সে হয়ত বুঝতেও পারবে না তার স্ত্রীর চোখ কত সুন্দর।
আজ তাহলে ফাই?
আরেক কাপ চা খেতে চাইলে খেতে পারেন।
মামুন উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়ল। ইতস্তত করে বলল, আরেক কাপ চা অবশ্যি খাওয়া যায়। জাহানারা হেসে ফেলল।
হাসছেন কেন?
এমনি হাসছি। আপনি আরাম করে বসুন। আমি চায়ের কথা বলে আসি।
মামুন ঠিক আরাম করে বসতে পারল না। ম্যানেজার তার ঘর থেকে আড়াচোখে বারবার তাকাচ্ছে। তার চোখে-মুখে এই বিরক্তির কারণটি কী? একজন মহিলা কর্মচারীর সামনে বসে কাজের ক্ষতি করছে এইটিই কী বিরক্তির কারণ?
গল্পের বই খুঁজতে গিয়ে মামুন বাড়ি চষে ফেলল, কিছুই নেই। পুরনো কিছু মাসিক পত্রিকা পাওয়া গেল নাম-সোনার দেশ, উইপোকা সে সব ঝাঝড়া করে ফেলেছে। মার ঘরে পাওযা গেল। হয়রত আলীর জীবনী এবং তপসী রাবেয়া। হয়রত আলীকে ইউপোকা কাবু করতে পারেনি। কিন্তু তাপসী রাবেয়াকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। মামুন নিশ্চয়ই হয়রত আলীর জীবনী নিয়ে জাহানারার কাছে যেতে পারে না। অথচ সে বলে এসেছে অনেক বই আছে। এখন যদি গিয়ে বলে কোনো বই নেই তাহলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে। বানিয়ে কিছু-একটা বললে কেমন হয়?
চোখ কপালে তুলে বলতে পারে, আর বলবেন না। সব বই উধাও। কয়েক দিন ছিলাম না। এখানে বাড়ি সাফ করে দিয়েছে। ধর্মের কয়েকটা বই ছাড়া কিছু নেই। কিন্তু কথাটা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে? এই অজ জায়গায় লোকজনদের এতটা সাহিত্য প্রীতি থাকার কথা নয়। কিছু বই আনিয়ে নিলে কেমন হয়?
মুনাদের বাড়ি ভর্তি বই। বকুলের বই পড়ার সখ। মুনাকে কতবার দেখেছে বই কিনছে। সেই সব বই বকুল নিশ্চয়ই শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায়নি।
মামুন রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চিঠি লিখতে বসল। অনেক দিন পর মুনাকে লিখছে। কেমন যেন সংকোচ লাগছে লিখতে। আগে কত সহজে লিখিত–প্ৰিয় মুনা। কিন্তু এখন প্রিয় শব্দটি পর মনে হল শব্দটা মানাচ্ছে না। কিন্তু শুধু মুনা দিয়ে চিঠি শুরু করতে ইচ্ছা করছে না। দু’এক লাইনে চিঠি শেষ করবে ঠিক করেও দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলল।
প্রিয় মুনা,
একটি বিশেষ প্রয়োজনে লিখছি। চিঠি পাওয়া মাত্র তুমি আমাকে গোটা দশেক ভাল গল্পউপন্যাস ভিপি করে পাঠিয়ে দিবে। তোমার অফিসের কোন বেয়ারাকে বললেই সে ভিপি করে দেবে। আমার অত্যন্ত প্রয়োজন। একা থাকি তো কিছুই করার নেই। সন্ধ্যার পর মনে হয়। ভূতের বাড়িতে বাস করছি। রাত দশটা পর্যন্ত জেগে থেকে ঘুমুতে যাই। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম এলে বাচিতাম। তা আসে না। কোনো কোনো দিন বারোটা পর্যন্ত বেজে যায়। গ্রাম দেশে রাত বারোটা ভয়াবহ ব্যাপার। মনে হয় অন্য কোন ভুবনে বাস করছি। গল্পের বই থাকলে সময়টা কাটবে।
মুনা একটু আগে যে কথাটা লিখেছি সেটা ঠিক না। বইগুলি আমার জন্যে নয়। জাহানারা নামের এক মেয়ের জন্য। তোমাকে আমি এক সময় বলেছিলাম যে আমি কোনো দিন তোমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব না। তবু শুরুতে বলে ফেলেছি। কেন বললাম? কারণ আমার মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল তুমি কি না কি মনে কর। যদিও আমি জানি তোমার মধ্যে এইসব ক্ষুদ্র ঈর্ষার কোন ব্যাপার নেই।
এইবার জাহানারার কথা বলি। কৃষি ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার। এখানে একা একা থাকে। তোমার সাথে মিল আছে। তার মধ্যে কঠিন একটা ভাব আছে। যখন বিরক্ত হয় তোমার মতো ঠোঁট বাকিয়ে দেয়। তুমি নিশ্চয়ই ভাবিছ মেয়েটিকে নিয়ে এত কথা লিখছি কেন? লিখছি কারণ লেখার কিছু নেই। অথচ আমার ইচ্ছা করছে বিরাট একটা চিঠি লিখতে।
মুনা আমি খুব একা হয়ে পড়েছি। রোজ রাতে ঘুমুতে যাবার সময় খুব মন খারাপ হয়। তুমি ঐ ব্যাপারটা নিজের মনে গেথে রেখে নিজে কষ্ট পাচ্ছি, আমাকে ও কষ্ট দিচ্ছি। আমি কতবার তোমাকে বলব আমি ফেরেশতা নই। আর তাছাড়া ফেরেশতারাও মাঝে-মধ্যে ভুল করে। করে না? তুমি কি বলতে পারবে যে এ জীবনে তুমি কোনো ভুল করনি। না তুমি বলতে পারবে না।
আচ্ছা মুনা…
এ পর্যন্ত লিখে মামুন চিঠিটা গোড়া থেকে পড়ল এবং মনে হল চিঠিটা খুব বাজেভাবে লেখা হয়েছে। এই চিঠি পাঠানোর কোনো মানে হয় না। সে চিঠি টুকরো টুকরো করে ফেলল।
জাহানারা অফিসে নেই। ম্যানেজার সাহেব বললেন, উনি আসেননি। আপনার কিছু বলার থাকলে আমাকে বলুন। মামুন বলল, উনার জন্যে একটা বই এনেছিলাম।
আমার কাছে দিয়ে যান পৌঁছে দেব।
উনি আসেননি কেন?
শরীর ভাল নেই। গাল ফুলেছে। বোধ হয় মামস।
বলেন কি? তাহলে তো দেখতে যেতে হয়।
ম্যানেজার বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রইল। মামুন বলল, বেচারী বিদেশে অসুখে পড়েছে স্থানীয় মানুষ হিসেবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, কী বলেন?
ম্যানেজার সাহেব কিছুই বললেন না।
ডাক্তার দেখছে তো?
হ্যাঁ দেখছে।
মামসের একটা ভাল কবিরাজি চিকিৎসা আছে। ধুধুল পাতার রস, বটগাছের শিকড় এবং মধু এই তিনটা একত্রে মিশিয়ে পুলটিস করে দিতে হয়। আমার একবার মামস হয়েছিল। দেওয়া মাত্র আরাম হয়েছে।
তাহলে যান। আপনার ওষুধ দিয়ে আসুন। আমার বাসা তো চেনেন। চেনেন না?
হ্যাঁ চিনি।
জাহানারা মামুনকে দেখে মোটেই অবাক হল না! যেন সে জানত সে আসবে। মামুন বলল, আপনাকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে দুগালে দু’টি কমলা লেবু ঢুকিয়ে বসে আছেন। তাকানো যাচ্ছে না।
কই আপনি তো দিব্যি তাকিয়ে আছেন।
বই এনেছি আপনার জন্যে।
কি বই?
হযরত আলীর জীবনী।
জাহানারা তাকিয়ে রইল। মামুন হাসিমুখে বলল, ঐ দিন আপনাকে মিথ্যা কথা বলেছিলাম। বাড়িতে কোনো বই নেই। আমি ঢাকা থেকে নিয়ে আসব।
আপনি বসুন।
মামুন বসল। ছোট্ট একটা ঘর। সুন্দর করে সাজানো। বুক শেলফ ভর্তি বই। জাহানারার হাতেও একটা বই। সে বইয়ের পাতা মুড়তে মুড়তে বলল, বেশিক্ষণ থাকবেন না। আপনারও হবে।
হলে হবে। নো প্রবলেম। খাওয়া-দাওয়া কী করছেন?
বার্লি খাচ্ছি। সলিড কিছু গিলতে পারি না। আপনি কী চা খাবেন?
চা দেবে কে?
কে দেবে সেটা আমি দেখব। আপনি খাবেন কি না বলুন।
খাব।
জাহানারা উঠে ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এল চা নিয়ে।
এত তাড়াতাড়ি কিভাবে করলেন?
আমি করিনি। ভাবী করে দিয়েছেন। আপনি চা খেতে খেতে একটি সত্যি কথা বলবেন?
বলুন কি জানতে চান?
আপনি কেন আসেন আমার কাছে?
মামুন কিছু বলতে পারল না। চায়ে চুমুক দিতে লাগল। জাহানীরা শাড়ি দিয়ে ফোলা গাল ঢেকে চুপচাপ বসে আছে। তার বসার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে সে প্রশ্নের জবাব চায়।
বলুন কেন আসেন?
আমি আজ উঠি?
উঠবেন তো বটেই। সারাদিন আমার ঘরে বসে থাকার জন্যে আপনি নিশ্চয়ই আসেননি? কেন আপনি আমার কাছে বারবার আসেন একটা বলে চলে যান।
মুনার সঙ্গে আপনার চেহারার খুব মিল আছে। আচার-আচরণও দুজনের এক রকম। দুজনের প্রকৃতিই খুব কঠিন। আপনার সাথে যখন কথা বলি তখন মনে হয় মুনার সঙ্গেই কথা বলছি। এই জন্যেই আসি।
মুনা কে?
ওর সঙ্গেই আমার বিয়ের কথা।
বিয়েটা কবে?
ওসব চুকে-বুকে গেছে। বিয়ে হচ্ছে না।
কেন, উনার কী অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে?
না তা হয়নি। ও সে রকম মেয়ে নয়।
এর পরের বার আমি যখন ঢাকা যাব তখন আমাকে উনার ঠিকানা দেবেন। আমি উনাকে বুঝিয়ে বলব।
আপনার ওকালতির কোনো দরকার নেই। আচ্ছা আমি উঠি।
মামুন উঠে দাঁড়াল। জাহানারা বলল, প্লিজ আপনি-একটু বসুন। আমার কথায় রাগ করে এ ভাবে চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগবে।
মামুন বসল। দীর্ঘ সময় দুজনের কেউই কোনো কথা বলল না।

শওকত সাহেবের মনে হল কে যেন এসে তার বুকে বসেছে। যে বসেছে সে মানুষ নয়। বিশাল কোন একটি জন্তু যার গায়ে বোটকা গন্ধ। জন্তুটি শুধু বসেই নেই, প্রকাণ্ড থাবা বাড়িয়ে তাঁর গলা চেপে ধরতে চাইছে। তিনি বুঝতে পারছেন গলা চেপে ধরা মানেই মৃত্যু। কাজেই তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন যাতে জন্তুটি তার গলা চেপে ধরতে না পারে। শওকত সাহেবের মুখ দিয়ে ফেনা বেরুতে লাগল। তিনি গোঙানির মত শব্দ করতে লাগলেন। ঠিক তখন মুনা ডাকল, মামা দরজা খোল কি হয়েছে? চিৎকার করছে কেন?
শওকত সাহেব চোখ মেললেন। জম্ভটি নেই। স্বপ্নই দেখছিলেন। কিন্তু ঠিক স্বপ্নও বোধ হয় নয়। সমস্ত ঘরাময় বোটিকা গন্ধ কোথেকে এল?
মামা দরজা খোল। কী হয়েছে তোমার?
তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন। ঘড়ি দেখলেন দু’টা দশ। অনেকখানি রাত সামনে পড়ে আছে। জেগে বসে কাটাতে হবে। বাকি রাতটা এক ফোঁটা ঘুম আসবে না। তিনি ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললেন।
স্বপ্ন দেখছিলে নাকি মামা?
হুঁ।
নাও পানি খাও।
শওকত সাহেব পানি খেয়ে বিড়বিড় করে বললেন, তুই কি এই ঘরে কোন বোটিকা গন্ধ পাচ্ছিস?
না তো।
আমি পাচ্ছি। ইঁদুর মরে পড়ে থাকেল যে রকম গন্ধ হয় সে রকম গন্ধ।
বলেই শওকত সাহেবের মনে হল এই গন্ধের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর আগে এই জাতীয় গন্ধ ছিল এই ঘরে। এত তীব্র ছিল না। কিন্তু ছিল।
মুনা, কোনো রকম গন্ধ পাচ্ছিস না?
উঁহু। তুমি কী বারান্দায় ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে বসবে?
শওকত সাহেব হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। বারান্দায় ইজিচেয়ারে এসে বসলেন। উঠোনে জ্যোৎস্না হয়েছে। দিনের মতো আলো। ফাকফািক করছে চারদিক।
মামা, এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে আসি দুধ খাও। ঘুম আসবে।
কিছু আনতে হবে না। তুই আমার পাশে বসে থাক।
মুনা তার পাশে বসতেই তিনি নরম গলায় বললেন, বেশিদিন বাঁচব না। ডাক এসে গেছে।
মুনা তরল গলায় বলল, এটা তো তুমি গত পাঁচ বছর ধরে বলছি।
আজ নিশ্চিত হয়েছি।
তাহলে তো ভালই হল। কবে মারা যাচ্ছে জেনে গেলে। আমরা যারা জানি না তাদের হচ্ছে অসুবিধা। সব সময় একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়।
শওকত সাহেব মৃদু গলায় বললেন, সব সময় ঠাট্টা করিস না মা। তিনি মুনার হাত ধরলেন। মুনা লক্ষ্য করল, মামার হাত অস্বাভাবিক শীতল। তিনি অল্প অল্প কাঁপছেন।
কি স্বপ্ন দেখেছি বল তো শুনি।
একটা জন্তু বুকের ওপর বসেছিল।
এই থেকেই তোমার ধারণা হয়ে গেল তুমি আর বাঁচবে না?
তিনি কিছুই বললেন না! মুনা সহজ ভঙ্গিতে বলল, ধর তুমি যদি মরেই যাও তাতে খুব আফসোস থাকার কথা নয়। বড় সমস্যার সমাধান করেছ। মেয়ের ভাল বিয়ে দিয়েছ। কারো কাছে তোমার কোন ধার-দেনা নেই। তাছাড়া–
শওকত সাহেব মুনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুই একটা বিয়ে করলে আমি খুব সহজে মরতে পারব।
বলতে চাচ্ছি। আমি তোমাকে মরতে দিচ্ছি না?
তিনি কিছু বললেন না। মুনা বলল, আমাকে নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করবে না মামা। আমি বেশ আছি। তুমি মরে গেলেও আমার কোনো অসুবিধা হবে না।
শওকত সাহেব থেমে থেমে বললেন, আমি মামুনকে একটা চিঠি লিখেছি। ওকে আসতে লিখেছি।
এই কাণ্ড আবার কবে করবে?
পরশু দিন। ও এলে আমি তোর কোনো কথা শুনব না।
মুনা মাথা নিচু করে বসে রইল। শওকত সাহেব বললেন–ঝগড়াঝাটি ঝামেলা এইসব হয়। এটাকে এত বড় করে দেখলে পৃথিবী চলে? চলে না। কমপ্রমাইজ করতে হয়।
তুমি ব্যাপারটা জান না বলে এসব বলছ। জানলে এ রকম করতে না। শোন তোমাকে আমি বলি। এর পরও যদি তুমি ওকে বিয়ে করতে বল আমি করব। মন দিয়ে আমার কথাটা শোন মামা।
আমি মামুনকে নিয়ে বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম কল্যাণপুরে। একটা বাড়ি পছন্দ হল আমাদের। ও বাড়ি ভাড়া করল। এক’দিন বিকেলে ঐ বাড়িতে গিয়েছি। জিনিসপত্র সাজাচ্ছি। ও হঠাৎ দরজা বন্ধ করে ফেলল। বাকিটা তোমাকে তো আর বলতে হবে না মামা। খুবই সহজ গল্প। এ ধরনের একটা ঘটনা আমার ছেলবেলাতেও ঘটেছিল। তখন আমার বয়স তের। তোমাদের কাউকে কিছু বলিনি। আমার মনটা অসাড় হয়ে গেছে মামা। ঘেন্না ধরে গেছে।
মুনার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। শওকত সাহেব কোন কথা বললেন না। উঠোনের জ্যোৎস্নার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। মুনা নিজেকে চট করে সামলে নিল। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বলল, একটা কাজ করা যাক মামা। আমি বরং বকুলকে লিখে দেই এখানে আসবার জন্যে। হঠাৎ ঘর খালি হয়ে গেছে তো তাই তোমার এ রকম লাগছে। ওরা এলে ভাল লাগবে। এখন আর তোমার মনে হবে না কোনো জন্তু তোমার বুকে বসে আছে।
মুনা খিলখিল করে হেসে ফেলল। পরমুহুর্তেই হাসি বন্ধ করে গম্ভীর মুখে বলল, বকুল বোধ হয়
এ কথা কেন বলছিস?
বিয়ের পর আমাকে একটি চিঠিও দেয়নি।
শওকত সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কোনো চিঠি লিখেনি?
না। কেউ আমাকে পছন্দ করে না মামা। আমার মধ্যে কিছু একটা বোধ হয় আছে যা মানুষকে
আজেবাজে কথা বলিস না।
আজেবাজে কথা না মামা, খুব সত্যি কথা।
মুনা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। হালকা গলায় বলল, যখন ছোট ছিলাম। তখন খারাপ লাগত এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। মামা, যাও শুয়ে পড়।
আমি আর শোক না।
সারারাত বসে থাকবে এখানে?
হ্যাঁ।
বেশ থাক। আমি ঘুমুতে গেলাম। সকালে অফিস।
বিছানায় গিয়েও ঘুম এল না। মুনা এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। মর্নিং অফিস হয়েছে। সাতটার আগে ঘর থেকে বেরুতে হয়। কাল নিৰ্ঘাৎ অফিস কামাই হবে।
সত্যি সত্যি তাই হল, ঘুম ভাঙল নটায়। তার বিরক্তির সীমা রইল না। শওকত সাহেব এখনো বারান্দায় চেয়ারে।
মামা, আমাকে ডাকলে না কেন?
আরাম করে ঘুমুচ্ছিলি তাই ডাকিনি? তোর কাছে একটা ছেলে এসেছে।
কে এসেছে?
চিনি না, গিয়ে দেখ। বসার ঘরে আছে।
মুনাও ছেলেটিকে চিনল না। লুঙ্গী পরা খালি পায়ের একটি ছেলে জড়সড় হয়ে চেয়ারে বসে ছিল মুনাকে দেখে লাফিয়ে উঠল। তোর-চৌদ্দ বছর বয়স। সবে গোঁফ উঠতে শুরু করছে।
কে তুমি?
আপা আমার নাম গোবিন্দ। জলিল মিয়ার চায়ের স্টলে কাম করি।
আমার কাছে কী?
বাকের ভাই আপনারে যাইতে কইছে।
বাকের ভাই আমাকে যেতে বলেছে মানে? সে তো জেলখানায়।
জি না থানা হাজতে।
থানা হাজতে আমাকে যেতে বলেছে?
জি।
সখ তো কম না দেখি। থানা হাজতে আমি কি জন্যে যাব? খবরটা তোমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে?
জি। আমি গেছিলাম। বাকের ভাই কষ্টের মধ্যে আছেন।
কষ্টের মধ্যে তো থাকবেই, থানা হাজতে কে আর তাকে কোলে করে বসে থাকবে?
বিরক্তিতে মুনা ভ্রূ কুঁচকাল। গোবিন্দ বলল, আমি যাই আপা?
আচ্ছা যাও।
মুনা স্বপ্নেও ভাবেনি সে বাকেরকে দেখতে যাবে। অসুখ-বিসুখ হয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকলে দেখতে যাওয়া যায়। কিন্তু চোর-ডাকাতের সঙ্গে বাস করছে এমন একজনের কাছে যাওয়া যায় না। বাবু এখানে থাকলে একটা কথা হত। তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যেত। বাবু নেই। গেলে তাকে একা যেতে হয়। থানার লোকজনদের গিয়ে বলা আমি একজন আসামীকে দেখতে এসেছি।-সেও একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। তারা নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে–আসামি আপনার কে? তখন যদি সে বলে–কেউ না তাহলেও ঝামেলা। ওরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করবে। নিজেদের মধ্যে চোখে চোখে কথা বলার চেষ্টা করবে। জঘন্য। মুনা ঠিক করল যাবে না। কিন্তু তবুও বিকেলে চলে গেল। ওসি সাহেবকে সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল, আমি বাকের সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আপনাদের হাজতে আছেন। দেখা করা কী সম্ভব হবে?
বাকের ভাই কেমন আছেন?
ভাল।
দাড়ি রেখেছেন কেন?
রোজ রোজ শেভ করা মুশকিল। তুমি ভাল আছ?
আমি খারাপ থাকব কেন? আমি তো আপনার মতো গুণ্ডামিও করিনি, বন্দুক–বোমা নিয়ে লাফ-ঝাঁপও দেইনি।
তা ঠিক।
আমি তো দেখেছি। ধরা পড়লেই ছাড়া পেয়ে যান। এবার পাচ্ছেন না কেন?
কেউ ছাড়াবার চেষ্টা করছে না। তুমি কি একটু দেখবে?
আমি দেখব?
কেউ কিছু করছে না। মুনা। আমার ভয় ধরে গেছে।
বাকেরের গলা কেঁপে গেল। মুনা বলল, মামা যখন ঝামেলায় পড়ল তখন আপনি অনেক কিছু করেছিলেন। আমার পাশে আপনি ছাড়া কেউ ছিল না। কাজেই এবার তো সেই উপকারের শোধ দিতেই হবে।
সে সব কিছু না মুনা।
কিছু না হবে কেন? এটা আপনার প্রাপ্য। আপনি এ রকম রোগা হয়ে গেছেন কেন? অসুখ-বিসুখ?
না অসুখ-বিসুখ না। এখানে খাওয়া খুব খারাপ। হোটেলের খাওয়া তো সহ্য হয় না।
আপনার ভাই আপনার কোন খোঁজখবর করছে না?
বাকের জবাব দিল না। মুনা বলল, আজ উঠি, আমি কাল আবার আসব।
বাকের বলল, তোমার সঙ্গে কোনো টাকা-পয়সা থাকলে দিয়ে যাও, খুব কষ্টে আছি। টাকার অভাবে সিগারেট খেতে পারি না।
মুনা দীর্ঘ সময় বাকেরের দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট সেল ঘরে বাকের ছাড়াও আরো চারজন মানুষ। এদের একজনের জন্যে টিফিন কেরিয়ারে করে খাবার এসেছে। ভাত গোসত। এই সন্ধ্যাবেলায় সে গপগপ করে খাচ্ছে। ঝোলে তার হাত-মুখ মাখামাখি হয়ে গেছে। সেদিকে তার ভ্রক্ষেপ নেই। একজন অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে সঙ্গীর খাওয়া দেখছে। অন্য সবাই তাকিয়ে আছে মুনার দিকে।
মুনা তার হাত ব্যাগ খুলল। টাকা-পয়সা কিছু নিয়ে আসেনি। ফিরে যাবার রিকশা ভাড়াটা শুধু আছে। মুনার অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল। সে লক্ষ্য করল তার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। কেন এ রকম হবে? সে চাপা গলায় বলল, কাল আমি আপনার জন্যে টাকা নিয়ে আসব।

সকাল নটার মতো বাজে।
ঝাঁ ঝাঁ রোদ উঠেছে। মামুন দোতলার বারান্দায় বসে দাড়িতে সাবান লাগাচ্ছে। আজ তাকে অনেকগুলি কাজ করতে হবে। রাজমিস্ত্রীকে খবর দিতে হবে। সেতাবগঞ্জে যেতে হবে সিমেন্টের জন্যে। চাইনিজ সিমেন্টের বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি ব্যাগে বিশ-ত্রিশ টাকা কম পড়বে। আকিল মিয়ার রড দিয়ে যাবার কথা। সে আসেনি। তার খোঁজেও যেতে হবে। আজ দিনের মধ্যে কি কি করতে হবে একটা কাগজে লিখে ফেললে হয়। মামুন ঠিক করল দাড়ি শোভ করার পরই পয়েন্ট বাই পয়েন্ট সব লিখে ফেলবে। সামনে প্রচুর কাজ। ভালই লাগছে। কাজ ছাড়া মানুষ থাকতে পারে?
আয়নাটা ভাল না। মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে চোয়াল ভাঙা অচেনা একটি লোক বসে আছে। স্বাস্থ্য বোধ হয় খারাপ হয়েছে। মামুন গালে ব্লেড ছোঁয়াতেই অনেকখানি কেটে গেল। টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগল। আরো কি কাণ্ড? নতন ব্লেড। গাল কাটার কথা না। সে কি দাড়ি শেভ করাও ভুলে গেছে? মামুন তোয়ালে দিয়ে গাল চেপে উঠে দাঁড়ানো মাত্র অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখল। মুনা আসছে। কাধে পাটের একটি ব্যাগ। এই ঝাঁ ঝাঁ রোদেও গায়ে একটা চাদর। বিস্মিত চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে এগুচ্ছে। দ্বিধার ভঙ্গিটি স্পষ্ট। মামুন উঁচু গলায় চোঁচাল। এ্যাই এ্যাই। মুনা তাকাল চোখ তুলে। হাসল। মামুন ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলল। মুনা নয়, জাহানারা। এত বড় ভুলও হয় মানুষের। মুনা কেন এখানে আসবে? তার এত কী দায় পড়েছে?
কী ব্যাপার এ্যাই এ্যাই করে চেঁচাচ্ছিলেন কেন?
মামুন হাসল। জাহানারা বলল, এত বড় অসুখ দেখে এলেন তারপর তো এক’দিনও এলেন না। নানান রকম ঝামেলায়…।
কোন ঝামেলা ছিল না। আপনি ইচ্ছে করেই যাননি। মামুন কী বলবে বুঝতে পারল না। আপনার গাল দিয়ে তো টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। তুলা দিয়ে গাল চেপে রাখুন। ঘরে তুলা নেই?
না এটা কি ডাক্তারখানা। তুলা, জগ ওষুধপত্র এইসব থাকবে। আসুন ভেতরে আসুন।
না। আমি বসব না। হয়রত আলীকে ফেরত দিতে এসেছি।
পড়েছেন নাকি?
আপনি এত কষ্ট করে নিয়ে গিয়েছেন আর আমি পড়ব না। মেয়েদের আপনারা কি ভাবেন, পাষাণ?
মামুন বলল, আপনি একটু বসুন। দেখি আমি চায়ের ব্যবস্থা করি। এই পাঁচ মিনিট।
জাহানারা বসে রইল। মামুন প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেল। চা তাকেই বানাতে হবে। কাজের যে মেয়েটি আছে সে ভাত-তরকারি ছাড়া অন্য কিছু রাঁধতে পারে না।
জাহানারা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, আমার খুব একটা ভাল খবর আছে।
কী খবর?
দেখি আন্দাজ করুন তো?
মেয়েটি হাসছে মিটমিটি। তার চরিত্রের সঙ্গে এই হাসিটি ঠিক মিশ খাচ্ছে না। মামুন ধাঁধায় পড়ে গেল।
বলতে পারলেন না? আমার ট্রান্সফার অর্ডার হয়েছে।
বলেন কি?
আমি শনিবারে ঢাকায় চলে যাচ্ছি।
আমিও ঢাকায় যাচ্ছি। আমি আপনাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। কোনো চিন্তা করবেন না। গল্প করতে করতে যাব। ফাইন হবে।
জাহানারা হাসল। মামুন অবাক হয়ে বলল, হাসছেন কেন?
আপনার মধ্যে একটা ছেলেমানুষি আছে তাই দেখে হাসছি।
জাহানারা আবার হাসতে লাগল। কিশোরীদের হাসি; যা শুধু শুনতে ইচ্ছে করে।
আপনি খুব খুশি হয়েছেন?
খুশি হব না। মানে! কী বলছেন। আপনি?
এই জায়গাটা কী এতই খারাপ?
হ্যাঁ খারাপ। আর কিছুদিন থাকলে আমি মরে যেতাম।
মানুষ খুব কঠিন জিনিস। মানুষ এত সহজে মরে না।
আমি মরি। আপনার গাল দিয়ে কিন্তু এখনো রক্ত পড়ছে। ঘরে ওষুধপত্র কিছুই নেই?
না।
গাঁদা ফুলের পাতা কচলে গালে দিন না।
গাঁদা ফুলের পাতা আমি পাব কোথায়?
জাহানারা আবার হাসতে শুরু করল। তার আজ এত আনন্দ হচ্ছে। সে বেশিক্ষণ থাকবে না। বলে এসেছিল। কিন্তু সে বিকাল পর্যন্ত রইল। অনবরত কথা বলল। যাবার সময় কেমন যেন বিষন্ন হয়ে গেল। হালকা স্বরে বলল, আপনি যতবার ঢাকা যাবেন ততবার আমাদের বাসায় আসবেন। আসবেন তো?
হ্যাঁ আসব।
আমি আপনাকে সঙ্গে নিয়ে এক’দিন উনাকে দেখতে যাব।
কাকে দেখতে যাবেন?
ঐ যে মেয়েটি যে আমার মত দেখতে।
ও মুনাকে?
হ্যাঁ। উনি আমাকে দেখে আবার রেগে যাবেন না তো?
না রাগবে না; ও অন্য ধরনের মেয়ে।
জাহানারা নিঃশ্বাস ফেলল।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here