এস_এল_আর,তৃতীয় পর্ব

এস_এল_আর,তৃতীয় পর্ব
ঈপ্সিতা_মিত্র

কথাগুলো শুনে আর কিছু বলতে পারেনি ভ্রমর। চুপ করে গেছিল সেই সময়। আসলে রনের মুখের ওপর কোন কথাই ঠিক কোনদিন বলতে পারতো না ভ্রমর। এতটাই ভালোবাসতো অন্ধের মতন। এমনকি সেই শেষদিন, যখন রন বলেছিল যে বিয়ে করতে পারবে না; এই রিলেশনটায় জাস্ট এমনি ছিল ও! সেদিনও কোন কথা বলতে পারেনি ভ্রমর। নিঃশব্দেই যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছিল রনের সাথে। কথাগুলো মনে পড়ে গেল হঠাৎ এই রাতের দার্জিলিংকে দেখে, জোনাকির মতন জ্বলতে থাকা বাড়িগুলোকে দেখে ভ্রমরের। আসলে এই অন্ধকারে যেন অতীতের ছবি ভেসে উঠেছিল সামনে, খুব স্পষ্টভাবে! এইসবই ভাবছিল, তখনই পাশের রুমের ব্যালকনির দরজা খোলার আওয়াজ হলো। অচিন্ত আনমনে বেরিয়ে এসেছিল রুমের বাইরে এখন। কিন্তু ভ্রমরকে পাশের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই চলে যাচ্ছিল, তবে সেই মুহূর্তে কিছু না ভেবেই ভ্রমর ওকে ডেকে বলে উঠেছিল,
—-” শুনুন। আই অ্যাম সরি, সকালের জন্য। আসলে আমার এক্স এর-ও ওরকম একটা ক্যামেরা ছিল! আপনাকে ভোরবেলা দেখে ওইসবই মনে পরে গেল! রিয়ালি সরি.. আপনি প্লিজ কিছু মাইন্ড করবেন না।”
কথাগুলো থমকে থাকা গলায় বললো ভ্রমর। চোখ দুটো ছলছল করছিল ওর এই সময়ে। তবে ভ্রমর অচিন্তর কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেছিল সেই মুহূর্তে ঘরে। কিন্তু অচিন্ত দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক সেকেন্ড আনমনে। হঠাৎ আসলে মনে হচ্ছিল চোখ দুটোর সাথে মেয়েটার নামটা তো বেশ ম্যাচ করেছে! সত্যিই ভ্রমর।
<৫>
এর পরেরদিন সকালে অচিন্ত হোটেলের কফি শপে প্রিয়াকে একা বসে থাকতে দেখে নিজেই এসে জিজ্ঞাসা করেছিল,
—–” গুড মর্নিং। কি ব্যাপার! আপনি একা? আপনার বন্ধু কোথায়?”
কথাটা শুনে প্রিয়া যেন একটু নিশ্চিন্ত হয়েছিল। যাক বাবা! বন্ধুর খোঁজ নিচ্ছে মানে নিশ্চয়ই পুরনো কথা মনে রাখেনি। কথাটা ভেবেই প্রিয়া হাসি মুখে বললো,
—–” আরে আপনি! বসুন না প্লিজ। আমার বন্ধু এখনো রুমেই। ও আজ রুমেই ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে রেডি হচ্ছে। ভাবছি একটা গাড়ি নিয়ে কোথাও একটা ঘুরে আসবো আজ।”
কথাটা বলতে বলতেই প্রিয়া অচিন্তর দিকে চেয়ারটা এগিয়ে দিল। অচিন্ত এবার একটু সময় নিয়ে বসে বললো,
—–” ভালোই তো। আর আজ ওয়েদারও খুব ক্লিয়ার। এই সময় ঘুরতে গেলে ভালোই লাগবে। তো কোথায় যাবেন ভাবছেন?”
প্রশ্নটা শুনে প্রিয়া অল্প চিন্তা নিয়েই বললো,
——” ভাবছি তো একটু পেলিং এর দিকটা ঘুরে আসবো। কিন্তু স্পটগুলো দেখে ফিরতে ফিরতে তো রাত হয়ে যাবে! আর বুঝতেই পারছেন, দুটো মেয়ে, একা!”
কথাগুলো শেষ হতে অচিন্ত এবার বলে উঠলো,
—–” হ্যাঁ, রাত তো হবে! কিন্তু পেলিং জায়গাটা খুব সুন্দর। দেখার মতন অনেকগুলো স্পটও আছে ভালোই। রাবদেনসে রুইনসটা তো আমার নিজের ভীষণ পছন্দের জায়গা। একটা ছোট্ট ট্রেক রুট আছে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে!”
কথাগুলো শুনতে শুনতে প্রিয়ার চোখ দুটো যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কেমন! একটা অজানা জায়গা দেখার ইচ্ছেটা ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরলো হঠাৎ। তাই ও কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করলো,
—–” আপনি আজকে কি করছেন? ফ্রি? তাহলে চলুন না আমাদের সাথে। আপনি গেলে একটু রাত হলেও কোন প্রবলেম নেই। আমি এই রাবদেনসে রুইনস জায়গাটার ব্যাপারে পড়েছিলাম! কিন্তু আপনার কাছ থেকে শোনার পর যাওয়ার ইচ্ছেটা আরো বেড়ে গেল।”
কথাটায় অচিন্ত এই মুহুর্তে একটুও সময় না নিয়েই বললো খুব সহজভাবে,
—–” হ্যাঁ, একসাথে যাওয়াই যায়। আর আমি তো অফিসের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কদিন ছুটি কাটাতেই এসেছি। তাই এই তিন চারদিন আমি একদম ফ্রি।”
এটা শুনে প্রিয়ার মুখেও এই মুহূর্তে চওড়া হাসি। যাক, ভালোই হলো। অচিন্তর মতন একজন ঘোরার পার্টনার কাম গাইড সঙ্গে থাকলে আর কোন চিন্তা নেই!
কিন্তু এরপর হোটেল থেকে বেরিয়ে ভ্রমরের পা – টা আটকে গেল হঠাৎ! ওদের গাড়ির সামনে এই ছেলেটা কি করছে! কথাটা ভেবেই ও বেশ অবাক হয়ে প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
—–” কি রে, এই অচিন্ত আমাদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কেন?”
প্রিয়া এই প্রশ্নে বেশ খুশি মনেই উত্তর দিল,
—–” কারণ অচিন্ত যাবে আমাদের সাথে আজ পেলিং। সকালে কফি শপে আমার সাথে কথা হয়ে গেছে।”
এই কথাটা শুনে ভ্রমর যেন আকাশ থেকে পড়লো! ও বেশ উত্তেজিত হয়েই বললো,
—–” কি! মানে? হঠাৎ ওই অচিন্ত কেন যেতে যাবে আমাদের সঙ্গে? তুই কি নিজে থেকে ওকে যেতে বলেছিস?”
এই প্রশ্নে প্রিয়া শান্ত গলাতেই বললো,
—–” হ্যাঁ, আমি বলেছি। আর অচিন্ত ফ্রি ছিল, তাই রাজি হয়ে গেছে। আর পেলিং কতটা রাস্তা বল তো এখান থেকে! ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে আমাদের। সেখানে আমরা দুটো মেয়ে যাওয়া সেফ না কি! বরং অচিন্ত আমাদের সাথে গেলে হেল্পই হবে আমাদের।”
এটা শুনে ভ্রমর মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে বললো,
—–” কেন? তোর অচিন্ত সলমন খান না কি? যে আমাদের প্রোটেক্ট করবে হিরোর মতন!”
এই কথাটায় প্রিয়া মুখ বেঁকিয়ে বললো,
—–” সলমন খান না হোক, তবে কোন হিরোর থেকে কম হ্যান্ডসম না কিন্তু! এটুকু স্বীকার করতেই হবে। যাইহোক, চল এবার।”
কথাটা শেষ করেই এবার ও ভ্রমরের হাত ধরে টেনে ওকে গাড়ির সামনে নিয়ে গেল। অচিন্ত এই মুহূর্তে এক পলক স্থিরভাবে দেখে নিল ভ্রমরকে। কিন্তু ভ্রমরের কোন বাক্যালাপ এলো না ঠিক এই ছেলেটার সাথে! আর এরপর গাড়িতেও ও চুপই করে রইলো। আসলে এই চলন্ত রাস্তার ভিড়ে জানলার ধারে সিটটায় বসে ওর এটাই মনে হচ্ছে যে সত্যি, এই ট্রিপটায় কি আসা উচিত হয়েছে ওর! আর যদি এসেও থাকে, দার্জিলিং এ কি আর কোন হোটেল ছিল না! বেছে বেছে এই টিউলিপেই উঠতে হলো! মানে যেখানে যাবে, কোন না কোন ভাবে কেস খেয়েই যাবে ভ্রমর! আর দার্জিলিং এ এই কেসের নাম ‘ অচিন্ত ‘। কথাটা ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, ছেলেটার নাম টা কি অদ্ভূত! অচিন্ত। যার কোন চিন্তা নেই। এরকম আবার কেউ হয় না কি পৃথিবীতে, যে সব সময় টেনশন ফ্রি থাকে! এসব এলোমেলো চিন্তার ভিরেই খেয়াল করলো প্রিয়া বেশ ভালো বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিয়েছে এই মিস্টার অচিন্তর সাথে। সারাক্ষণ বকবক করেই যাচ্ছে দুজনে। রাজনীতি থেকে সিনেমা, কি নেই সেই টপিকে। আবার আপনি আজ্ঞেও নেই এখন! একেবারে তুমিতকারিতে চলে গেছে বন্ধুত্ব। এসবই ভাবছিল, তখনই প্রিয়া অচিন্তকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
—-” আচ্ছা, তোমার ক্যামেরাটা দেখছি না তো? কি ব্যাপার, সেটা কোথায়?”
এই প্রশ্নে ভ্রমরের চোখটা আচমকা অচিন্তর দিকে চলে গেল। সত্যিই তো, ক্যামেরা তো নেই আজ ছেলেটার সঙ্গে! এটা খেয়াল হতেই দেখলো অচিন্তর চোখটাও ওর দিকে। এক পলক যেন স্থিরভাবে ভ্রমরের দিকে তাকিয়ে বললো আলতো হেসে,
—–” ক্যামেরা হোটেল রুমেই আছে। আসলে চার্জ দিতে ভুলে গেছিলাম। তাই আর আনিনি!”
এই উত্তরে প্রিয়া আর কোন প্রশ্ন না করলেও ভ্রমরের কেমন মনে হলো এটা আসল কারণ না! ক্যামেরাটা বরং ইচ্ছে করেই আনেনি অচিন্ত। হয়ত ওর জন্যই

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here