এস এল আর,প্রথম পর্ব

এস এল আর,প্রথম পর্ব
ঈপ্সিতা_মিত্র


জানলা দিয়ে ভোরের আলোটা চোখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল অচিন্তর। সেই মুহূর্তে পাশের টেবিলে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে দেখলো, পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই জানলায় চোখটা চলে গেল পরিষ্কার কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে। আজ আকাশে একদম মেঘ নেই! এই নভেম্বর মাসে আসার এটাই তো একমাত্র কারণ। সুন্দর নীল আকাশ, আর সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা। ভেবেই মুখে একটা হাসি চলে এলো অচিন্তর। কিন্তু এখনো ও শুয়ে আছে কিসের জন্য! এই সুন্দর ভোরটার একটা পারফেক্ট শট তো চাইই চাই। ব্যাস, কথাটা মনে হতেই সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়লো অচিন্ত। এরপর ব্যাগ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ডটাকে বার করলো নিজের, ক্যামেরা; ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী! তারপর আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে সেটা হাতে সোজা ব্যাল্কনিতে। সত্যি, আজকের ভোরটা এত মিষ্টি! ভোরের আলো চারিদিকে লাল আভার মতন ছড়িয়ে। আর দার্জিলিং শহরটাও ওর খুব ভালো লাগে। পাহাড়ের কোলে সাজানো একটা শহর। কলকাতার ভিড় আর পলিউশন থেকে একদম আলাদা। এখানে এসে প্রাণ ভোরে অক্সিজেন নেওয়া যায়। আর এই কাঞ্চনজঙ্ঘার টানেই তো এখানে আসা! এইসব ভাবতে ভাবতেই হোটেলের ব্যাল্কনি থেকে বেশ কয়েকটা কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে নিচ্ছিল অচিন্ত, তখনই পাশ থেকে একটা ভরাট মেয়েলি গলার আওয়াজ কানে এলো, —— “ আপনার ক্যামেরাটা এস এল আর?”
কথাটা শুনে অচিন্ত পাশের ব্যাল্কনির দিকে তাকালো সেই মুহূর্তে। খোলা চুল, বড় বড় দুটো চোখ, আলতো চাহুনির সাথে মিষ্টি একটা মুখের মেয়ে গোলাপি রঙের চাদর গায়ে ওর দিকেই তাকিয়ে এখন। কথাগুলো এক পলক দেখে মনে হল অচিন্তর। আর এই মনে হওয়ার ভিড়ে আবার সে জিজ্ঞেস করলো,
—–“ কি হলো? আপনার ক্যামেরাটা এস এল আর না?”
কথাটা শুনে অচিন্ত একটু ছোট্ট করে উত্তর দিল,
—–“ না, ডিএসএলআর।“
এটা শুনে মেয়েটা বলে উঠলো, —-“ ওহ, ওই একই হলো! তো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রাখেননি কেন?”
প্রশ্নটা শুনে কিছুতেই যেন মেলাতে পারলো না ঠিক অচিন্ত! তাই বেশ অবাক হয়েই বললো,
——“ হ্যাঁ! মানে?”
কথাটা শুনে মেয়েটা কেমন তির্যক হেসে বললো,
—–“ না, বেশিরভাগ ফটোগ্রাফারদেরই তো থাকে! ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। জোর করে ওই ইন্টালেকচুয়াল লুকটা আনার জন্য; আর একটু কায়দার জন্যও। তাই জিজ্ঞেস করলাম। এনিওয়েজ, ইউ ক্যারি অন।“
কথাটা বলেই মেয়েটা আর দাঁড়ালো না, নিজের রুমে চলে গেল। কিন্তু অচিন্ত কেমন স্ট্যাচুর মতন দাঁড়িয়ে রইলো কয়েক মিনিট। কি হলো এটা! সকাল সকাল মেয়েটা এসে কেমন শুনিয়ে গেল! চেনা নেই, জানা নেই; এ আবার কি! কথাটা ভেবেই খুব রাগ হচ্ছিল ওর। সত্যি! কি আশ্চর্য রকম লোকজন আজকাল! মুডটা কেমন খিঁচ খেয়ে গেল যেন। আর কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যও দেখতে ইচ্ছে করলো না ঠিক। গম্ভীর মুখে নিজের রুমে চলে এলো তাই।
<২>
“ কি রে কাকে শুনিয়ে এলি সকাল সকাল? আমি তো সব শুনছিলাম এতক্ষণ খাটে শুয়ে।“
প্রিয়ার প্রশ্নটা শুনেও কোন উত্তর না দিয়ে ভ্রমর সোফাতে বসে পড়লো চুপ করে। মুখটা এই মুহূর্তে থমথমে। এটা দেখে প্রিয়া আবার প্রশ্ন করে উঠলো,
—– “ কিরে, কি হলো তোর হঠাৎ! বেকার বেকার কাকে কথা শুনিয়ে এলি?”
কথাটা শেষ হতেই ভ্রমর এবার আনমনে উত্তর দিলো,
—–“ ওই ক্যামেরাটা! ওটা দেখেই তো সব মনে পড়ে গেল! রনেরও একটা এসএলআর ছিল। কি কায়দাই না মারতো ওটা নিয়ে! বেঁকে চুড়ে হেলে দুলে কত ফটোই না তুলতো!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললো ভ্রমর। কিন্তু এসব শুনে প্রিয়া এবার বেশ রেগেই বললো,
—-“ উফ, আবার! দু বছর আগে ব্রেক আপ হয়েছে; তাও তোর ভাঙা রেকর্ড আজও বেজে যায়! আর কি রে তুই? রনের এসএলআর ছিল বলে অন্য কারোর থাকলেই দোষ! আর তার জন্য তুই আবার যেচে পরে কথা শুনিয়ে আসবি!”
এটা শুনে ভ্রমর বেশ নির্বিকার চিত্তে বললো,
—-“ বেশ করেছি শুনিয়েছি। আর এই শোন, অলমোস্ট সব ছেলেরা সমান। আর ওইরকম দামি ক্যামেরা নিয়ে যারা কায়দা মারে, ফটো তো তোলে এক আনা, আর ন্যাকামি দশ আনা। সব হচ্ছে ওদের মেয়ে পটানোর জন্য! আমিও তো ওই দেখেই গলে গিয়েছিলাম সেইবার দুর্গা পুজোয়! এখন তাই ওই ক্যামেরা হাতে ছেলেগুলোকে দেখলেই মনে হয় রনের প্রতিনিধি সব কটা।“
কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা ধরে এলো ভ্রমরের। প্রিয়া বুঝলো এই আলোচনাটা আর টেনে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। তাহলে ভ্রমরের ধরা গলা এবার চোখের জল হয়ে নেমে আসবে। আসলে প্রিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয় ভ্রমরের এই যুগে জন্মানোটা ঠিক উচিত হয়নি আসলে। কি নেই ওর! এত সুন্দরী দেখতে! সেন্ট জোসেফের মতন ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলে জিওগ্রাফির টিচার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এই রকম একটা মেয়ে কি না দেবদাসের ফিমেল ভার্সন হয়ে দু বছর ধরে বসে আছে! তাও ওই এক্সট্রা পাকা, সব জান্তা ন্যাকাচন্ডি রনের জন্য। সত্যি! কিছু হবে না এই মেয়েটার!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here