একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ৫

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫
শিল্পী ড্রেসিং টেবিল এর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল। সে কী বুড়িয়ে যাচ্ছে? আর মঈন? আয়নার মধ্য দিয়েই সে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে বই পড়তে থাকা মঈনের দিকে তাকাল। মঈনের চুলের জুলফি সাদা হতে শুরু করেছে। তার ঝরঝরে উশকোখুশকো চুলের মাঝেও এই কবছরে কতশত শুভ্র চুল গজিয়েছে। চামড়াও ঝুলে পড়তে শুরু করলো বলে! চোখে জুটেছে চশমাও। তবুও ওকে এত অপরূপ দেখায় কেন? পুরোনো টগবগে যুবকের মতই তাকে এত ভালোবাসে কেন শিল্পী? তার ভালোবাসা মরচে পড়ে পুরোনো হতে পারে না? পুরোনো হতে হতে একদম ঝাপসা হয়ে সব স্মৃতি মুছে যেতে পারে না? সেইসব স্মৃতি যেসবে আটকে আছে সে আর মঈন। না মঈন ত আটকে নেই! সে আবারো ভুল ভাবতে বসেছে। আজীবন শুধু ভুলই ভেবে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে টুলে বসল। হাতে, গলায় লোশন মাখতে মাখতে ডাকল, “মঈন?”
প্রত্যুত্তরে মঈন বিরক্তির একটা শব্দ করল। শিল্পী নিঃশব্দে হাসল। বলল, “ঐ মেয়েটা তোমার নাম ধরে ডাকলেও কী তুমি এভাবে বিরক্ত হও?”
“আমি তুমি ছাড়া আর কিছুতে বিরক্ত নই।” মঈন বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল।
“আমি না ভুলেই গিয়েছিলাম।”
শিল্পী মঈনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। ভেবেছিল মঈন কিছু বলবে, কিন্তু কিছুই বলল না। শিল্পীই অনেকটা সময় পর বলল, “কী ভুলে গিয়েছিলাম জানতে চাইবে না?”
মঈন বইটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। স্পষ্ট এড়িয়ে গেল তাকে। শিল্পী তবুও বলল, “আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুমি বলেছিলে জীবনে যদি আবার কাউকে দ্বিতীয়বারের মতন ভালোবাসতে পারো তবে আমায় ছেড়ে যাবে। কথাটা বহুকষ্টে ভুলেছিলাম। কেন মনে করিয়ে দিলে আবার?”
মঈন হাত বাড়িয়ে এবার টেবিলল্যাম্পটা নিভিয়ে দিলো। শিল্পী বসে রইল অন্ধকারে। ভেতরটা এত ছটফট করে! কেন করে? সে হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঝরে পড়ল তার শব্দহীন অশ্রু, অসহায়ত্ব। একটা সময় পর বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এল সে। মঈনের পাশে লাশের মত একদম সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। দৃষ্টি নিবদ্ধ সিলিং এ।
কান্নারুদ্ধ গলায় জানতে চাইল, “কার জন্য আমায় ছেড়ে যাচ্ছ?”
“দিস ইজ নান অফ ইউর বিজন্যাস।”
“জানতাম এখনও ঘুমাওনি।”
মঈন আরো বিরক্ত হলো।
শিল্পী থেমে থেমে বলল, “আমায় আরো আগে ছেড়ে চলে যেতে? প্রথমেই ডিভোর্স নিতে। এই এতগুলো বছর পর এসে কেন এমন করছ? সত্যটা তো আর আজ জানোনি। বহু আগেই জেনেছ।”
“সত্য জানবার কথা বললে আমি বলব বিয়ের আগে থেকেই সব জানতাম আমি।”
শিল্পী হতবুদ্ধি হয়ে উঠে বসল, “কী বললে?”
“হ্যাঁ, আমি জানতাম। সব জানতাম।”
“সব জানতে তাহলে বিয়ে করলে কেন?”
“তোমায় শাস্তি দিতে।”
শিল্পী দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরল। কান্না থেমে গেছে তার। মঈন তাহলে এজন্য বিয়ে করেছিল তাকে! এজন্যে? বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো না তার। বুকের ভেতরটা ভেঙে গেল। চোখের সামনে দ্রুতগামী ট্রেনের মতন দাপটে বেড়াতে লাগল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলি। পুরোনো মঈন যে ট্রেনের একমাত্র যাত্রী সে ট্রেন বুকের মাঝে ছুটার শব্দ শিল্পী আর নিতে পারছে না। ভেতর পিষে স্মৃতিরা এমনভাবে ছুটে চলছে কেন? অসহ্য!
শিল্পী বলে উঠল, “মুবিন আমার কাছেই থাকবে। আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে। তুমি যেদিকে ইচ্ছে চলে যাও। যার কাছে ইচ্ছে চলে যাও। আমি তোমায় আর কখনো আটকাব না, কিন্তু আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে।”
মঈনও এবার উঠে বসল, “মুবিন আমার কাছে থাকবে।”
“মিলা তোমার সাথে থাকবে।”
“না। আমি মুবিনকে কোথাও নিয়ে যেতে দিব না। মিলাকে রাখতে না চাইলে রেখো না। মিলা, মুবিন দুজনই আমার সাথে থাকবে।”
“ওয়াও। আজো তুমি সেলফিস’ই রয়ে গেছ। একদম আগের মতন! আজো শুধু নিজেরটাই ভাবো। তুমি দুজনকেই রেখে দিলে আমি কাকে নিয়ে থাকব?”
“কেন তুমি তোমার প্রেমিকাকে নিয়ে থাকো। আমাকে আর আমার সন্তানদের তো তোমার দরকার নেই, মঈন।”
“রাগাবে না, শিল্পী। একদম রাগাবে না আমায়।” ভয়াল কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল সে।
শিল্পী হিসহিস করে উঠল, “এত রাতে চিৎকার করবে না। বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে।”
“মুবিন আমার কাছেই থাকবে। আমার ছেলে আমি নিয়ে যাব। বাধা দিতে এসো না। তাহলে মেয়েকেও হারাবে।” মঈন বালিশ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। গেস্টরুমে ঘুমাবে সে। দরজা খুলতেই মিলাকে দেখতে পেল। নরম গলায় জানতে চাইল, “এখনো জেগে আছ?”
“পড়ছিলাম, বাবা।”
“তাহলে এখানে কী করছ? যাও নিজের ঘরে যাও।”
“পানি খেতে এসেছিলাম।”
মিলার হাতে পানির গ্লাস। মিলা পানি সহ গ্লাসটা ডাইনিং টেবিলে রেখে নিজের ঘরে চলে গেল। পানি খেতে আর ইচ্ছে করছে না তার।
মঈন অনেকক্ষণ দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে রইল। শিল্পী চোয়াল শক্ত করে বলল, “যাচ্ছ না কেন? দরজা খোলা থাকলে আমি ঘুমোতে পারি না।”
মঈন অনেক বেশি শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল। সে শব্দে শিল্পী কেঁপে উঠে দু’হাতে কান চেপে ধরল।
.
“হ্যালো, কে বলছেন?” দীপার ঘুমঘুম কণ্ঠ।
“আমি কড়ি বলছি। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। তুমি রিলিজ নিয়েছ জানতাম না।”
“তুমি এখন হাসপাতালে?” দীপা ঝট করে উঠে বসল। ঘুম কেটে গেছে তার।
“হ্যাঁ।”
“তুমি আমার বাসায় এসে পড়ো। তোমার সাথে দেখা করতে পারলে সত্যিই আমি অনেক খুশি হবো।”
“উমমম হাসপাতাল থেকে বেশি দূরে না তো?”
“না, না বেশি দূরে না। আমি এড্রেসটা দিয়ে দিচ্ছি। তুমি একটা রিকশা নিয়ে চলে এসো প্লিজ।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
চলবে…
★অটোগ্রাফ সহ আমার ২য় বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” এর প্রি-অর্ডার চলছে….
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882805749142024&id=100022378217757
ফোনে অর্ডার করুন- ১৬২৯৭ এই নাম্বারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here