#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১৪
ইমাদ বলল, “চল।”
নিলয় ক্লান্ত হয়ে বলল, “দীপুর মাথা খারাপ। ও সত্যিই স্টেজ থেকে নেমে যেতে পারে।”
ইমাদ কিছু বলল না। তবে নিলয়ের হাত টেনে ধরে নিয়ে চলল ওকে। ওদের আসতে দেখেই দীপা কটমট করে চোখ বড় করে তাকাল। ইমাদ কোনোরকম গুরুত্ব দিলো না। সে গিয়ে দীপার একপাশে বসল। নিলয় আরেকপাশে বসল। দীপা কিছু বলতে যাবে তখনি ইমাদ ওকে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। দীপা রাগে গড়গড় করতে করতে টিস্যু হাতে নিয়ে বলল, “এখন মুছে ফেলব আমি। এখনি। একদমি রাখব না। কেন ছুঁয়ালি তুই?”
ইমাদ সামনে হলুদের সাজানো ফলগুলোর দিকে তাকাল। ময়ূরাকৃতির আঙুরের ঝাঁক থেকে টুপ করে আঙুর তুলে নিলো। দীপা বলল, “আমি তোদের হাতে কিছু খাব না।”
ইমাদ দীপার দিকে তাকালও না। সে টপাটপ কয়েকটা আঙুর মুখে দিলো। ফ্রুট কার্ভিং এত অসাধারণ কেন? একদিন চেষ্টা করে দেখতে হবে পারা যায় কিনা। আপেলের তৈরী হাঁসটা দেখে তার এত ভালো লেগেছে যে সে হাস আকৃতির আপেলটা প্লেট থেকে তুলে হাতে নিয়ে ফেলল। দীপা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, “তুই এখানে নিজে খেতে এসেছিস নাকি আমাকে খাওয়াতে এসেছিস?”
ইমাদ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতের জিনিসটা দেখতে দেখতে মিনমিন করে বলল, “আপেল না খেলে কিছু হবে না তোর। এটা আমি নিয়ে যাই।”
ইমাদ আপেলটা দেখতে দেখতেই স্টেজ থেকে নেমে গেল। দীপা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “ইমি একটা বিষ্ঠা, হাঁসের বিষ্ঠা ও।”
নিলয় ভয়ে ভয়ে দীপাকে হলুদ ছুঁয়াল, “দোস্ত, নামিস না কিন্তু।”
দীপা আরো একটা টিস্যু টিস্যুবক্স থেকে তুলে নিতে নিতে বলল, “এখনি নাম। আমি তোরটাও মুছব। তোদের হলুদে আমার গাটা জ্বলে যাচ্ছে। সামনে থেকে সর তোরা।”
নিলয় গন্ডগোল হওয়ার ভয়ে উঠে যাচ্ছিল। দীপা ধমক দিয়ে বলল, “তুইও ফল খাওয়াবি না? এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? বিয়ের ভিডিওতে সবাই দেখবে আমার বন্ধুরা একেকটা ফল ফকির।”
নিলয় মাথা চুলকে হেসে দিলো। দীপার মুখে একটার পর একটা কমলা ঠুসে দিয়ে বলল, “নে নে খেয়ে খেয়ে ঢোল হয়ে যা। কাল নড়তেও পারবিনা।”
দীপা এতগুলো ফল মুখে নিয়ে আর কথা বলতে পারল না। চোখ বড় বড় করে আগুন ঝাড়ল। নিলয় ভেঙচি কেটে নেমে গেল। দীপা টিস্যু দুটো ফেলে দিলো। ওর বন্ধুরা ওকে হলুদ ছুঁইয়েছে। সে হলুদ কি সে মুছে ফেলতে পারে?
.
শিল্পী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরী করে। ব্যাংক থেকে বেরুতে বেরুতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। কান্দিরপারের জটলাটায় সে রিকশা নিয়ে আটকে ছিল। তখন খেয়াল হলো ব্যাংকে অনেকবার মঈনের নাম্বার থেকে কল এসেছিল। ব্যস্ত ছিল বলে ধরা হয়নি। মোবাইল বের করে কলব্যাক করল সে। ওপাশ থেকে একটা নারী কণ্ঠ ভেসে আসল। সাথে সাথে বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। চোখগুলো ধ্বক করে জ্বলে উঠল। মুহূর্তেই সেই জ্বলন চোখের জলে রূপও নিয়ে নিলো। চোখে জল নিয়েই ক্ষোভের সাথে বলল, “আমার স্বামীর মোবাইল আপনার কাছে কি করছে? কে আপনি?”
ভদ্রমহিলা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে দিগুণ ধমকে তাকে জানালেন মঈনের বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তিনি হাসপাতালের নার্স। মঈন এখন টাউয়ার হাসপাতালে ভর্তি।
শোনার সাথে সাথে শিল্পীর হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। জ্যামে আটকে থাকা পাশের লোকটা ভরকে গিয়ে তাকাল। শিল্পী ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে রিকশা থেকে লাফিয়ে নামল। জ্যামে এই রিকশা ঘুরতে অনেক সময় লাগবে। ওর এখন এত সময় নেই, আর না আছে ধৈর্য্য। যা আছে তা হলো চোখের জলের ফোঁয়ারা। পূবালী চত্ত্বরের রাস্তাটা দিয়ে সে অনেকটা দৌড়েই গেল। সারা শরীর কাঁপছে ওর। চারপাশটা একটু পর পর দুলছে। রাতের অন্ধকার এখন আরো বেশি অন্ধকার।
.
কালিয়াজুরি নিবাসী মোহাম্মদ কাদের এর দ্বিতীয় পুত্র মোস্তফা কাদিনের সহিত হাউজিং নিবাসী মরহুম আবুল খায়ের এর একমাত্র কন্যা ইসরাত জাহান দীপার পাঁচ লক্ষ টাকার দেনমোহরে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ ও দুই লক্ষ টাকার গয়না উশুল বাবদ বিবাহ ধার্য করা হইয়াছে। এই বিয়েতে আপনার সম্মতি থাকিলে বলুন কবুল। কাদিন জবাবে বলল, “কবুল।”
চলবে…
★দুঃখিত পর্বটি বেশি ছোট হয়ে গেছে। বড় করে পর্ব দিতে হলে আজকেও গল্প দিতে পারতাম না। অথচ, আপনারা কতটা অস্থির হয়ে থাকেন আমি তা জানি। তাই ছোট করে হলেও আজকে একটা পর্ব দিয়ে গেলাম। ভালোবাসা। ♥★