একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ১২

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১২
রিমা রান্নাঘরে ছিল। তরকারিতে পাঁচ ফোঁড়ন দিতেই কাইয়ূম পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। রিমা হেসে বলল, “ঢঙ্গে ধরেছে?”
কাইয়ূম বলল, “আমাকে ত কেউ ধরেনি, তোমাকে ধরেছে।”
রিমা কপট রাগ দেখাল, “তোমাকে এখন ধরবার সময় নেই। যাও নিজের কাজে যাও। বাসা ভর্তি মানুষ। কেউ একজন এসে পড়বে এরপর কেলেঙ্কারি।”
“আর কদিন পর এই রান্নাঘর আর তোমার আমার থাকবে নাগো। এখন এভাবে বিদায় করো না। তখন কাদিনের বউয়ের জন্য আমাদের রোম্যান্সে ভাটা পড়বে।”
“সে বহু দেরি। তোমার ভাইয়ের আর ইহ জনমে বিয়ে হবে কিনা সন্দেহ।”
“কেন? কেন?”
“কোনো সিদ্ধান্তেই সে আসতে পারে না। কতগুলো মেয়ে দেখলাম আমরা। সে এখনও কিছুই জানায় না। শেষে কড়ির সাথের মেয়েটাকেও দেখে এলাম। আমার ত দিব্যি পছন্দ হয়েছে।”
“ওর পছন্দ হয়নি, না?”
“কাদিন আর কাদিনের আল্লাহই ভালো জানে। হ্যাঁও বলে না, নাও বলে না। সবকটা মেয়ে দেখে এসেই এমন একটা অবস্থা করে সে। তার জন্য বেচারা কায়েসকে না আয়বুড়ো থাকতে হয় পরে। তোমার ভাগ্য ভালো তুমি কাদিনের বড়।”
কাইয়ূম রিমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুলতে দুলতে আহ্লাদে ভেসে গিয়ে বলল, “আমার বলছ কেন? আমাদের ভাগ্য ভালো বলো না।”
পরমুহূর্তেই বুয়ার ডাক ভেসে এসে ওদের দুজনকে দুদিকে ছিটকে দিলো। বুয়া জোরে জোরে ভাবি ডাকতে ডাকতে রান্নাঘরের দিকেই আসছে।
কাইয়ূম বলল, “আমি যাই।”
রিমা ধমকে বলল, “না আরো থাকো।”
.
মেসে ইমাদদের পাশের ঘরটায় নাঈম থাকে। বন্ধুত্ব ততটা গভীর না হলেও যথেষ্ট উষ্ণ। আসতে যেতে ওদের দেখলেই নাঈম চওড়া হেসে অভর্থ্যনা কিংবা বিদায় জানায়। কাছে থাকলে পিঠও চাপড়ে দেয়। ইমাদ নির্বিকার থাকে। কখনো কখনো ইচ্ছে করে নাঈমের হাসি হাসি মুখটার দিকে তাকায়ও না। ব্যস্ততম হয়ে ছুটে চলে, কিন্তু ছুটতে ছুটতে সে প্রার্থনা করে মেসে ফেরবার সময়টায় নাঈম যেন মেসেই থাকে। ওকে দেখেই যেন হাসি হাসি চেহারায় তাকায়। প্রার্থনা কখনো প্রাণ পায়, কখনো আবার পায় না। তবে নাঈম মেসে থাকলে কখনো ওর হাসির এদিকওদিক হয় না।
ইমাদ নাঈমের দরজায় কড়াঘাত করল, “আসতে পারি?”
নাঈম বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানছিল। জানালা দিয়ে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে উঠে বসল, “ইমাদ যে! এসো, এসো।”
ইমাদ নাঈমের পাশে বসল, “ভালো আছো?”
“বিন্দাস আছি। তোমার খবর বলো।”
“বিন্দাস থাকলে হাসো না যে?”
“এই তো হাসছি।”
ইমাদ নাঈমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর দৃষ্টি পলকহীন। নাঈম ইমাদের পিঠ চাপড়ে বলল, “তুমি তাহলে খেয়ালও করো। আমি ত ভাবতাম তুমি আমাকে দেখোই না।”
“কী হয়েছে?”
নাঈম বিষণ্ন গলায় বলল, “তেমন কিছু নারে ভাই। টিউশনী নিয়ে প্যারায় আছি। দুটো টিউশনীই হাতছাড়া হয়ে গেছে। মহাবিপদে আছি।”
“আচ্ছা।”
“টিউশনী গিয়ে ভালোই হলো। তুমি যে এক পিস জানা হলো।”
ইমাদের আর বসতে ইচ্ছে হলো না। সে উঠে চলে এল। নাঈম একা একা হাসতে হাসতে মাথা নাড়ল। এই দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড্ড কঠিন। প্রতিনিয়ত মেসের যে মানুষগুলো ওর হাসির বদলে হাসি দিয়ে গেছে, তারা কেউই আজ তার খোঁজ নিতে আসেনি, কিন্তু যে মানুষটা কখনো হাসির বদলে একবারো হেসে তাকায়নি, যাকে অহঙ্কারী বলে মনে মনে গাল বকেছে, সে মানুষটাই আজ অসময়ে তার পাশে এসে দু দন্ড বসেছে।
.
স্কুলের করিডোরে রেলিং ধরে মিলা আর সুহা দাঁড়িয়ে আছে। রাগে সুহার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। সে ধমকে বলল, “তুই আন্টিকে কিছু বলিসনি কেন?”
“কি বলতাম আমি?”
“কি বলতিস মানে? তুই বলতিস এই পাখাটাও তুমি খুলে নিয়ে গিয়ে তোমার ছেলের ঘরে লাগাও। তোমার ছেলে দুটো পাখার বাতাস হা করে করে গিলুক।”
“কিছু বললে মুবিন বলবে ওকে হিংসে করি। কথাটা আমার সহ্য হবে না। আরো কয়বার নানান বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় মুবিন মন খারাপ করে ফেলেছে। বলেছে আমি নাকি ওকে হিংসে করি।”
“কিছু মনে করিস না। তোর ভাই আরেকটা শয়তান।”
মিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীচের মাঠটার দিকে তাকিয়ে রইল। অসংখ্য ছেলে মেয়ে মাঠটায় জড়ো হয়েছে। সবাই সবার বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত। কেউ কেউ খেলছে, কেউবা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। কেউ বসে আছে একা। শব্দের কোলাহলে কান ভারি হয়ে আসছে।
সুহা হাত বাড়িয়ে মিলাকে শক্ত করে আগলে ধরল, “একদম মন খারাপ করবি না। একদম না। ভালো করে পড়। তোর অবস্থান, সফলতায় তুই তোর জবাব দিবি।”
“আমিন।” মিলা অবহেলার হাসি হাসল।
সুহা বলল, “তাই হবে দেখে নিস।”
“জানিস, সামনে মুবিনের জন্মদিন। মা অনেক বড় করে অনুষ্ঠান করবেন।” বেদনার হাসি মিলার ঠোঁটে চেপে বসল।
সুহা দাঁতে দাঁত পিষল। কিছু বলল না ও। সাথে সাথে ঠিক করে ফেলল মিলার জন্মদিনে সে তার জমানো টাকা থেকে আয়োজন করবে। একটা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক, আর ওদের প্রিয় ফুচকা পার্টি।
.
আকাশে অর্ধচন্দ্র জেঁকে বসেছে। চারিদিকে বেড়েছে নিস্তব্ধতা। জানালা ঠিকরে কড়ির মুখে জোছনা ঝরছে। বাবা – ভাইদের ঠকিয়েছে সে। প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছেও। ভালোবাসা মানুষের বিবেকবোধ, চিন্তা করবার শক্তি কেঁড়ে নিয়ে পঙ্গু করে নিজেই হয়ে উঠে পরম আশ্রয়। শেষে কড়ির মতন প্রতারিত মানুষদের জীবনভর নিঃসঙ্গ থাকতে হয়।
কড়ি জানে সে আজ কতটা একলা। পরিবারের মানুষগুলোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না ও। সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসলে ও উঠে চলে যায়। বারবার মনে হয় ও তাদের মাঝে বসবার যোগ্য নয়। খেতে বসে অধিকারবোধ থেকে ভাইদের প্লেট থেকে মুরগীর কলিজা, মাছের ডিমটা জোর করে তুলে আর খেয়ে ফেলতে পারে না।
এই মানুষগুলোর বিশ্বাস, আস্থা, তাকে নিয়ে করা গৌরব সে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের অজান্তেই তাঁদের সে শেষ করে দিয়েছে। চুলের মাঝে হাত গলিয়ে কপালে হাত রেখে বসে ফুঁপাচ্ছে ও।
চলবে…
★অটোগ্রাফ সহ আমার ২য় বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” এর প্রি-অর্ডার চলছে….
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882805749142024&id=100022378217757
ফোনে অর্ডার করুন- ১৬২৯৭ এই নাম্বারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here