একজন_অনন্যার_গল্প#পর্ব_১

একজন_অনন্যার_গল্প#পর্ব_১
সুমা রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে অনন্যার বিয়ে হয়ে যায়। সে অর্থনীতিতে যখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে , তখন তাদের বাড়িতে শীতকালীন ছুটি কাটিয়ে সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করেছে, সে সময় তার বড় বোনোর জরুরি ফোন কল , “তোকে কালকের মধ্যেই বাড়ি আসতে হবে” আর আসার সময় তোর সবচেয়ে সুন্দর ড্রেসগুলি নিয়ে আসবি, যে ড্রেসে তোকে অনেক ভালো দেখায়। এ কথা শুনে অনন্যা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে যে, তার বিয়ের ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব এসেছে ।

অনন্যা কলেজে উঠার পর থেকেই, তারজন্য অনেক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করেছিলো। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে অনন্যা সব বিয়ের প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছে, এ কারণে তার বাবা তার প্রতি অনেক বিরক্ত। তাই এখন সে কি করবে,তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

তার মতো মেধাবী ছাত্রীর খুব ইচ্ছা ছিলো পড়াশুনা শেষ করে তারপর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে কিন্তু খুব ভালো ব্যবসায়ী, শিক্ষিত পাত্র অমিতকে পাওয়ায় অনন্যার বাবা একেবারেই রিস্ক নিতে চাননি। অনন্যার বাবার মতে, মেয়েদের বেশি বয়স হয়ে গেলে আর মেয়েরা মাস্টার্স পাশ করে ফেললে তাদের চেহারার লাবণ্যতা অনেক কমে যায়। সে কারণে সুপাত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পরে । তাই এ রকম ভালো সম্বন্ধ তিনি একেবারেই হাতছাড়া করতে চাননি।

তাই অনন্যা তার বোনের ফোন পাবার পরের দিনই তাদের বাড়িতে চলে আসলো। কিন্তু ঐ মুহূর্তে অনন্যার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না বলে, সে খুব সাদামাটাভাবে পাত্র পক্ষের সামনে এসে উপস্থিত
হলো। কিন্তু তার এই সাদামাটা সাজটাই যেনো পাত্রপক্ষের বেশি পছন্দ হয়ে গেলো । পাত্র উপস্থিত না থাকলেও পাত্রের ছোট ভাই অনন্যাকে দেখে তার ভাইয়ের জন্য তাকে পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করে ফেললো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর একদিন কথা প্রসঙ্গে অনন্যা তার পড়াশুনা শেষ করার প্রচন্ড ইচ্ছের কথা তার বাবার কাছে জানিয়েছিলো, তার বাবাকে সে আগেই জানিয়ে রেখেছিলো কখনো তারজন্য যদি বিয়ের ভালো সম্বন্ধ আসে, তাহলে প্রথমেই যেনো পাত্র পক্ষকে অনন্যার পড়াশোনা করার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানানো হয় আর এ ব্যাপারে পাত্রপক্ষ যেনো
কখনো বাঁধা সৃষ্টি না করে, তাহলে সে বিয়েতে অনন্যা
রাজি থাকবে।

যে পরিবার থেকে বিয়ের ব্যাপারে অনন্যার প্রস্তাব এসেছে, সে পরিবারের খাওয়া দাওয়া আর ব্যবসা একত্রে থাকায় সেটা ছিলো যৌথ পরিবার। তাই অনন্যার বাবা আগে থেকেই তার হবু শাশুড়িকে বলে রেখেছিলো, অনন্যার পড়াশোনার ব্যাপারে যেনো কোনোদিক দিয়ে বাধা না আসে। অনন্যার বাবার এই প্রস্তাবে তার শাশুড়ি সম্মতি জানায় । এ কারনে অনন্যার সাথে অমিতের বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়।
তবে অনন্যার বিয়েটা তার বাবার পছন্দ মাফিক হয়েছে। যে কারনে বিয়ের আগে তার হবু বর অমিতের সাথে অনন্যার সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি।একবারে বিয়ের সময় তাদের দেখাদেখি হয়েছিল।
আর বিয়েতে তারা অনন্যাকে অনেক রুচিশীল
শাড়ি, গহনা দিয়েছিল।

বিয়ের প্রথম বছরটা অনন্যার বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কেটেছিলো। দু’জন দু’জনকে না দেখে বিয়ে করা, অমিতের সব কিছুতেই যেনো তার সূক্ষ্ণ রুচিবোধ অনন্যার চোখে পড়ছিলো। তারা যেনো
দু’জন দুজনকে আস্তে আস্তে আবিষ্কার করতে থাকে। সারাক্ষণই দু’জন দু’জনকে মুগ্ধ করার কাজে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে একজন আরেকজন থেকে অনেকক্ষন দূরে থাকলে, একজন আরেকজনের জন্য সুন্দর সুন্দর গান বা কবিতার এক-দুই লাইন লিখে রাখে, তারপর আরেকজন এসে তার পরের লাইনটা
লিখে রাখে, এতে করে তাদের ভালো বাসাটা যেনো আরো বেশি গভীর হতে থাকে। যেমন ঃ

একজন যদি লিখে—

সুরের আকাশে তুমি যেগো শুকতারা,

:তাহলে আরেকজন লিখে–

আমায় করেছ একি চঞ্চল বিহবল দিশাহারা,

এ করে করে বিয়ের পর তাদের কঠিন প্রেম চলতে থাকে।
:

অনন্যার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ /ছয়ঘন্টার রাস্তা। তার শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহ শহরে।
সেখানে অমিতের বাপ দাদার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা আছে।
তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূরে হবার কারণে,, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট, যিনি তার ডিপার্টমেন্টের টিচার,, তাকে অনুরোধ করে সেখানে সে সীটের ব্যবস্থা করেছে। তবে বিয়ের আগে সে তাদের নিজেদের বাসা গ্রীন রোড থেকে ক্লাস করতো।

অনন্যা বিয়ের দুই – তিন মাস পর থেকেই মাঝে মাঝে হলে থেকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস গুলো করতে থাকে । কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ক্লাসে উপস্থিতি পঁচাত্তর পারসেন্ট না হলে সে পরীক্ষায় এটেন্ড করতে পারবে না। তবে তার বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি দূরে হওয়ায় তাদের ডিপার্টমেন্টের এক স্যারকে অনুরোধ করে, সে তার ক্লাসে উপস্থিত থাকার পারসেন্টেজটা অনেক কমিয়ে ৪৫% করে নিয়েছে।

অনন্যা যখন ক্লাস করার জন্য হলে এসে থাকে,
তখন মাঝে মাঝে তাকে চমকে দিয়ে অমিত, অনন্যাকে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গেইটে এসে দাড়িয়ে থাকে। সেই সময়টাতে, অমিতকে তার প্রেমিকের মতো মনে হয়। অনন্যার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত হলের গেষ্ট রুমে অমিত অপেক্ষা করতে থাকে । তারপর অনন্যার ক্লাস শেষ হলে তারা দু’জন একসাথে বেড়াতে বের হয়ে যায়। সে সময় তারা দুপুরের খাবারটা বাইরেই খেয়ে নেয়। তারপর তারা কখনো বোটানিক্যাল গার্ডেন, কখনো চারুকলা ইনস্টিটিউট বেড়াতে যায় , আবার কখনো শিল্পকলা একাডেমিতে একসাথে নাটক দেখে , কখনো আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে চটপটি, ফুসকা খায়, এ রকম করে করে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। তারপর কয়েক দিন ক্লাস করে আবার অনন্যা তার শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে । দু’জন দু’জনকে মুগ্ধ করার চেষ্টাতেই সময়টা দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কিভাবে যেনো তাদের বিয়ের এক বছর দ্রুত ফুরিয়ে যায়।

:

এর পরের বছরটা তাদের দৈনন্দিন অভ্যস্ততায় পরিণত হতে থাকে। আবেগ এর জায়গায় দখল করে নিতে থাকে বাস্তবতা। তাই মাঝে মাঝে অনন্যার স্বামী অমিত,তার সাথে হঠাৎ করেই দুর্ব্যবহার শুরু করে। অনন্যাকে বিয়ে করার আগের দিন গুলির মতো আবার সে বাইরের জগতে অনেক বেশি আনন্দ খুঁজে পায়। আর অনন্যা সংসারের গন্ডীতে আটকা পড়ে যায়। অনন্যা যে সমাজ থেকে এসেছে সেখানে সবাই ছিলো সহজ, সরল, উদারমনা। কিন্তু তার শ্বশুর বাড়ির পরিবেশটা সম্পূর্ণ ভিন্ন । অনন্যা বুঝতে পারলো এখানে শিক্ষার কোন মূল্য নেই,,এখানে মানুষকে মাপা হয় টাকা পয়সার মানদণ্ডে।

:

অনন্যার শ্বশুড়বাড়িতে কারো মধ্যে যেনো কোন আন্তরিকতা নেই। অনন্যা ভেবেছিলো আর কেউ বুঝুক না বুঝুক এই যৌথ পরিবারে তার স্বামী তার পাশে সব সময় থাকবে,তার বিপদে আর মানসিক অস্থিরতায় সব সময় তাকে সুপরামর্শ দিবে। কিন্তু দিন দিন অমিত কেমন যেনো বদলে যেতে লাগলো।

:

অনন্যা এই সংসারের গন্ডিতে একেবারে আটকা পড়ে
গেলো। অনন্যা বুঝে গেছে তার শ্বশুর বাড়ির মানুষদের মধ্যে আছে প্রচন্ড অহংকার আর পয়সার বড়াই । এ যৌথ পরিবারে বিয়ে হবার পর কোন একজন মানুষের
সাথে তার মনের কথা বলার মতো, এমন কাউকে কখনো সে খুঁজে পায়নি। এ জায়গায় সে তার স্বামী অমিতের সাপোর্ট ছাড়া কিভাবে চলবে? অনন্যার স্বামীর অনেক টাকা-পয়সা থাকলে কি হবে, একমাত্র তার ক্ষেত্রে অমিতের বিচারটা অনেক কঠিন। বিয়ের একবছর পার হতে না হতেই অনন্যা খেয়াল করলো,তার প্রতি তার স্বামীর কথাগুলি কতোটা অবহেলা মিশানো। ইদানিং তার এটা মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় যে, একমাত্র তাকে ছাড়া সবাইকে তার স্বামী কতোটা মূল্যায়ন করে কথা বলে,,বাড়ির কাজের লোক থেকে শুরু করে, তার স্বামী অমিতের প্রাক্তন বান্ধবীদের সঙ্গে অনেক বেশি মূল্যায়ন করে কথা বলা, বাড়ির প্রতিটি মানুষের প্রতি অনেক বশি আন্তরিকতা প্রদর্শন করা এবং তার প্রতি অবহেলা করে কথা বলা, যা অনন্যাকে অনেক বেদনার্ত করে তুললো।

অনন্যা এতোটা সহজ সরল যে, ইচ্ছে করলেই তার স্বামী অমিত তাকে মনের মতো বানিয়ে নিতে পারতো। এ বাড়িতে কে, কি রকম মানুষ, অনন্যার কিভাবে এ বাড়িতে চলা উচিত একটা সাধারন ধারণা দিতে পরতো, তাহলে হয়তো অনন্যার পক্ষে যৌথ পরিবারের সবার মন বুঝে চলা সহজ হতো। অনন্যা
বিয়ের পর থেকে তার শাশুড়ির সাথে ও অনেক আন্তরিকতাপুর্ন ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু সে
তার শাশুড়ির মনও জয় করতে পারেনি।
অনন্যার শ্বাশুড়ি যদি তাকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসতো তাহলে সে তার শাশুড়ির জন্য মন উজাড় করে ভালো বাসা দিতে পারতো। কিন্তু সবার কাছ থেকে অনন্যা শুধু পেয়েছে অনাদর, আর আবহেলা।

প্রতিটা মেয়ের যখন যৌথ পরিবারে বিয়ে হয়, তখন তার স্বামী যদি তাকে মূল্যায়ন করে–তখন মেয়েটিকে সবাই মূল্যায়ন করে,আর তার স্বামী অবহেলা করলে মেয়েটির স্থান কোথায়?? মেয়েটি যখন তার সব আপনজনকে ছেড়ে নতুন একটা পরিবারে আসে, তখন তো প্রতিটা মেয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে সর্বপ্রথম ভালো ব্যবহারটা আশা করে । কিন্তু বিয়ের
একবছর হতেই সে যেমন তার স্বামীর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করতে পারছে না তেমনি আশাকরতে পারছে না তার শ্বশুরবাড়ির কোনো একজন মানুষের কাছ থেকে।

এসব কথা ভেবে ভেবে ইদানিং , অনন্যার মনের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগলো। তার বাবার বাড়িতে সবাই তাকে কতো বুদ্ধিমতী মনে করতো অথচ তার স্বামী অমিত তার শ্বশুর বাড়িতে তাকে ইদানিং
অবহেলা করে সব সময় কথা বলার জন্য পরিবারের সবাই তাকে অবহেলা করা শুরু করেছে । তার স্বামীর এরকম ব্যবহারে অনন্যার ভিতর এমন একটা জেদ চেপে গেলো, সে মনে মনে ভাবতে লাগলো একসময় তার যোগ্যতা সে ঠিকই প্রমান করেই ছাড়বে।
:

বিয়ের পর অনন্যার পড়াশুনা চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। এতো কঠিন সাবজেক্ট , সব ক্লাস না করে সে কিভাবে ভালোভাবে পাশ করবে, সে চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকতো। অবশ্য অনন্যার ক্লাসের বান্ধবীরা তাকে অনেক বেশি সহযোগিতা করতে লাগলো। কিন্তু তার সব পড়াগুলি যেনো অনন্যা কিছুতেই মুখস্থ করতে পারছিলো না। অনেক সাধনা করে শেষ পর্যন্ত সে,
অনার্স আর মাষ্টারস পরীক্ষা মোটামুটি ভালোভাবেই পাশ করলো। সে মাষ্টারস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার আগেই ওর শ্বশুরবাড়ির কাছেই একটা ভালো কলেজে লেকচারার হিসেবে চাকুরী পেয়ে গেলো। আর এরমধ্যে অনন্যার এক কন্যাসন্তান হলো। অনন্যার কন্যাসন্তান জন্মের আগে, অমিতের এক আত্মীয়ের, তৃতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম উপলক্ষে অনন্যার স্বামী সে বাসায় তাকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলো। ঐ দম্পতিকে অমিত বুঝালো,,একজনের দশজন, পুত্র সন্তান হলেও সে অনেক অনেক সৌভাগ্য বান। অনন্যা বুঝে গিয়েছিলো পুত্র সন্তান তার স্বামীর কতোটা পছন্দের।

আবার একদিন অনন্যা তার শাশুড়ির সাথে
কথা প্রসঙ্গে ও বুঝতে পেরেছিলো তার শাশুড়ির
কাছেও পুত্রসন্তান কতোটা পছন্দের কিন্তু সে-তো আলট্রাসনোগ্রাম করে তার ছয়মাস প্রেগন্যান্সির সময় জানতে পেরেছে তার কন্যা সন্তান হবে। তখন থেকে তার মনটা বিষন্ন হয়ে থাকতো। দেখতে দেখতে
অনন্যার ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসলো।
অনন্যাকে ঢাকার একটা নামকরা ক্লিনিকে ভর্তি
করা হলো।

অনন্যার সন্তানের জন্মের পর যখন তার ডাক্তার এসে তাকে বললো, তোমার একটা ফুটফুটে কন্যাসন্তান হয়েছে, তুমি বাচ্চাটিকে আদর করো, তখন অনন্যা তার বাচ্চাটিকে দেখে তার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেলো। বাচ্চাটির নাম রাখলো **নামিরা**। আর ভাবতে লাগলো, সে তার কন্যাকে মনের মতো করে মানুষ করবে।

অনন্যা যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলো তখন সর্ব প্রথম, নামিরাকে নিয়ে তার সংসারে প্রবেশ করতে গিয়ে তার মনে এক অনাবিল শান্তি দোলা দিয়ে গেল। অনন্যার কেবলি মনে হতে লাগলো,

আমার প্রশান্তির জায়গা আমার সংসার,
যেথায় দখিনা বাতাস দোলা দিয়ে যায় বার বার —
কোন কিছুই করে না এখানে ক্লান্তি,
আমার ঘরে আছে এক অনাবিল শান্তি।

নামিরার মুখের স্নিগ্ধ কোমল হাসি তার শ্বশুরবাড়ির সবার মন জয় করে নিলো। শ্বশুর বাড়ির সবাই ফুল আর সোনার চেইন পরিয়ে নামিরাকে বরন করে নিলো। অনন্যা সব মায়েদের মতোই চাইতো আদর, সোহাগ আর ভালোবাসা দিয়ে যেনো সে আর অমিত দুজন মিলে যনো নামিরার মনকে ভরিয়ে তুলতে পারে,, কোমলতার স্নিগ্ধ পরশে নমিরার জীবন কে মায়াবী রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারে। নামিরার জন্মের
পর একমাস ঠিক এভাবেই কেটে গেলো। হাসি আনন্দে তাদের দিন কাটতে লাগলো।
:
নামিরার যখন একমাস পূর্ন হলো ,অমিত হঠাৎ একদিন তার ব্যাগ গুছিয়ে অনন্যাকে না বলে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যাবার সময়, অনন্যা অমিতের কাছে জানতে চাইলো , সে কোথায় যাচ্ছে? কিন্তু অনন্যাকে যাবার কোনো কারন উল্লেখ না করেই অমিত চলে গেলো। তারপর বাসায় ফিরে আসলো পনের ষোলদিন পর। অমিতের এ রকম ব্যবহারে
অনন্যা খুবই মর্মাহত হয়েছিলো।

পরে অমিত ফিরে আসার পর জানতে পারে তার
এক বন্ধুর বাসায় এতোদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলো। কোন কারন ছাড়া, নমিরার মতো এতো ছোট বাচ্চাসহ তাদেরকে একা শ্বশুরবাড়িতে এভাবে রেখে চলে যাওয়া, অনন্যার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিলো। কারন তার শ্বশুর বাড়ির মানুষ নামিরাকে সুন্দর ভাবে বরন করে নিলে ও ওদের মধ্যে ছিলো আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব। যে কারনে অনন্যা, তাদের সাথে তার কোনো সমস্যার কথা বলতে এতোটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো না।

অনন্যার বিয়ের তিনমাস পরও অমিত এরকম
ঘটনা ঘটিয়েছিলো। হুট করেই সে অনন্যাকে না বলে
কোথায় যেনো উধাও হয়ে যায়।

একবার অমিতের এক বন্ধুর নিমন্ত্রণে তারা বড়ো জাহাজে চড়ে পিকনিক করতে গিয়েছিলো। অনেক বড় জাহাজে পাঁচ, ছয়শ জন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলো। ওখানে খাবারেরও বিশাল আয়োজন ছিলো আর সোলস, মাইলস্ ব্যান্ড এর বড় বড় সঙ্গীতশিল্পীরা ও ওখানে গান পরিবেশন করছিলো। অনন্যার খুব ইচ্ছে ছিলো জাহাজের প্রতিটি অনুষ্ঠান উপভোগ করবার। কিন্তু দশ ঘন্টার এ জাহাজ ভ্রমণে অমিত, অনন্যাকে তার এক বন্ধুর কাছে রেখে কোথায় যেনো নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো চার-পাঁচ ঘন্টা পরও তার কোনো হদীস পাওয়া গেলো না । অনন্যার খুব ইচ্ছে ছিলো জাহাজের এতো সুন্দর অনুষ্ঠানগুলি সে আর অমিত একসাথে মিলে উপভোগ করবে কিন্তু কোন অনুষ্ঠানই সে আর উপভোগ করতে পারলো না। বার বার অমিতের বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করেও অমিতের কোনো সন্ধান সে করতে পারলো না। এতক্ষন অমিতকে চোখের সামনে না দেখায়, অনন্যার মনে এক অজানা আশংকা বিরাজ করতে লাগলো। সে ভাবতে লাগলো, অমিত আবার জাহাজ থেকে পরে যায় নিতো?? এতোটা সময় পেরিয়ে যাবার পর অনন্যা অমিতকে না দেখতে পেয়ে , সে অধের্য্য হয়ে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে অমিতকে খুঁজতে লেগে গেলো । অমিতের বন্ধুটিও তার সাথে সাথে ছিলো। তারপর সারা জাহাজ ঘুরে এমন জায়গায় অমিতকে পেলো, যেখানে অনন্যা তাকে আশা করতে পারেনি।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here