আলো-৯,১০

আলো-৯,১০
রোকেয়া পপি।
০৯

অনেকক্ষণ ধরে বসার রুমে টেলিফোনটা বাজছে। অহনা ওয়াশ রুমে ছিলো। তার কাছে মনে হলো আহা কেউ হয়তো খুব প্রয়োজনে ফোন করেছে।
বাসার সবাই গেল কোথায়?
ফোনটা কেউ ধরছে না কেন?

সে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আসলো। ফোনের কাছে যেতে যেতে ফোনটা থেমে গেল।
ও যখন ঘুরে নিজের রুমের দিকে যাওয়া শুরু করেছে, ঠিক তখন আবার ফোনটা বেজে উঠলো।

অহনা ফোনটা ধরে হ্যালো বলা মাত্র একটা মেয়ে হড়বড় করে কতো গুলো কথা বলে ফেললো। আচ্ছা শুনুন আপনাদের চার তলার টুকু কে একটু ডেকে দিবেন?
আমার খুব জরুরী।
ও আমাকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে থাকতে বলেছিলো।
কিন্তু আমি প্রায় দু ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি, ওকে দেখছি না।

অহনা হসে দিয়ে বললো, আচ্ছা শুনুন আপু।
আমাদের চার তলায় টুকু নামে কেউ থাকে না।
আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।
কেটে দিয়ে আবার ফোন করুন।

মেয়েটি ফোনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। তাহলে এখন আমার কি হবে আপু।
আমার মামা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছি।
টুকু কে না পেলে আমার কি অবস্থা হবে আপু?
আমি কোথায় খুঁজবো টুকু কে!
এদিকে কয়েকটা মাস্তান টাইপের ছেলে অনেকক্ষণ ধরে আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে।

আপু প্লিজ কান্না করবেন না।
আমি ফোন নামিয়ে রাখছি। আপনি আবার ট্রাই করুন। ঠিক পেয়ে যাবেন।

অহনা মন খারাপ করে ফোন রাখার পর দেখলো, রন্জু হন্তদন্ত হয়ে ঘরে এসেই সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছে।

অহনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ ভাইয়ের কান্ড কারখানা দেখলো।
তারপর পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো তুই কি কিছু খুঁজছিস ভাইয়া?

রন্জু মুখ না তুলেই উত্তর দিলো, দেখ না আমার মানিব্যাগটা পাচ্ছি না।
কোথায় যে রাখলাম।

অহনা ও রন্জুর সাথে হাত মিলিয়ে সব জায়গাতেই খুঁজলো।

কোথাও না পেয়ে অহনা চিন্তিত সুরে বললো, হঠাৎ তোর মানিব্যাগ হাওয়া হলো কিভাবে?
কতো টাকা ছিল?

আরে টাকা কোন ব্যাপার না। কিন্তু কিছু জরুরী কাগজপত্র ছিল।
আমি বের হবার সময় স্পষ্ট মনে আছে পকেটে ভরলাম।
কিন্তু এখন নেই!

অহনা গালে হাত দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, আমার মনে হয় রাস্তায় পরে গেছে তোর মানিব্যাগ।

রাস্তায় পরবে কিভাবে?
আমি তো গাড়িতে গেলাম, গাড়িতে আসলাম।
আলোর সাথে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম।
বিল দিতে যেয়ে দেখি এই অবস্থা।

ও আচ্ছা।
তলে তলে তাহলে এই চলছে।
আমার মনে হয় আলো তোর মানিব্যাগ গায়েব করে দিয়েছে।
তারপর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
খুব সাবধান ভাইয়া।
ও কিন্তু খুবই ডেন্জারাস মেয়ে।

রন্জু কপট ধমক দিয়ে বললো, কি যা তা বলছিস!
মুখে যা আসে তাই বলে দিলি!
তবে এটা ঠিক ও সাধারণ কোন মেয়ে না।

আজকে যা দেখালো না।
একজন গুন্ডাকে এক আছাড় দিয়ে ভর্তা বানিয়ে দিয়েছে।
রন্জু বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো।

শোন ভাইয়া আমি মোটেও যা মুখে আসছে তাই বলছি না।
আলো সেদিন চলে যাওয়ার পর আমার অনেক কিছু মিসিং।

রন্জু মুখ বাঁকিয়ে বললো, অনেক কিছু মিসিং।
অনেক কিছু মিসিং মানে কি সেগুলো আলো নিয়েছে।

মামার কি টাকা পয়সার অভাব?
যে আলো এগুলো করবে?
আজব!

রন্জু রাগ দেখিয়ে তার রুমে চলে গেল।

অহনা মন খারাপ করে ফোনের পাশে বসে আছে।
এই যে তার ভাইয়া তাকে অবিশ্বাস করলো, রাগ দেখালো।
এসব কোন কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সে মন খারাপ করে সেই মেয়েটির কথা ভাবছে।
মেয়েটি কি টুকু নামের তার প্রেমিককে খুঁজে পেয়েছে?
যদি না পেয়ে থাকে, তাহলে কি করবে মেয়েটা।
অহনার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
ইচ্ছে করছে মেয়েটার সাথে ফোনে আবার কথা বলতে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।
মেয়েটির ফোন নম্বর সে জানে না।
তাছাড়া খুব সম্ভবত মেয়েটি কোন রাস্তার ধারে দোকান থেকে ফোন করেছে।

রাতে আজ কিছুতেই রন্জুর ঘুম আসছে না।
প্রচন্ড তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ।
সে উঠে পর পর দুই গ্লাস পানি খেলো। তবুও তৃষ্ণা মিটছে না।

রন্জুর অবচেতন মন রন্জুকে বললো, শুধু শুধু এতো পানি খাচ্ছিস কেন রে পাগল?
দেহের তৃষ্ণা থাকলে না পানিতে তৃষ্ণা মিটবে।
তোর তৃষ্ণা তো মনে।
মনের তৃষ্ণা কি পানিতে মিটবে?

রন্জু নিজের মাথায় নিজে একটা চাপড় দিলো।
সত্যিই তো তার চোখের সামনে শুধু আলোর মুখটা ভেসে উঠছে। যতোবার চোখ বন্ধ করে
ততোবার শুধু সেই ছেলেটিকে আছাড় দেওয়ার দৃশ্য টা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

ও ফোন টা হাতে নিয়ে সময় দেখলো। একটা বিশ বাজে।
আলো কি ঘুমিয়েছে?
নিজের অজান্তেই সে আলোর নাম্বারে ডায়াল করলো।

আলো ফোনটা ধরেই এক নিঃশ্বাসে বললো, রন্জু ভাইয়া কাল ঠিক এগারোটার সময় নিউ মার্কেটের ওভার ব্রিজের নিচে থাকবে।
রন্জু কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে সুইচ অফ করে দিলো।

এদিকে রন্জু তো খুব অবাক!
এটা আবার কেমন কথা হলো, কোন রেস্টুরেন্টে বসতে বললেও হতো। এগারোটার দিকে থাকবে প্রচুর রোদ।
এই রোদে আমি কিনা ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকবো!
পাগল নাকি।
প্রশ্নই ওঠে না কাল যাওয়ার।

রন্জু মনে মনে যতোই বলুক যাবে না।
কিন্তু ও খুব ভালো করেই জানে আলোর ডাক অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।
সে এগারোটা বাজার আগেই সেখান পৌঁছে যাবে।
এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে আলোর জন্য।

রন্জু সারে দশটা থেকে অপেক্ষা করছে আলোর জন্য।
এখন প্রায় একটা বাজতে চলে।
আলোর দেখা নেই।
এদিকে সকালে না খেয়েই বেরিয়ে এসেছে। উদ্দেশ্য আলোর সাথে বসে একসাথে নাস্তা খাওয়া।

রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রন্জুর শুধু মাথা গরম হয়নি, মুখ চোখ লাল হয়ে আছে।
সে রাগে দুঃখে বাসার দিকে রওনা দিলো।

ওদিকে আলো সারে বারোটার দিকে রন্জুদের বাসায় উপস্থিত।
সে ফুপির গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ফুপি আজ তোমার হাতের রান্না খাবো।
একদম ভর্তা ভাজি করবে।

ফুপি গাল টেনে আদর করে বললো একদম আমার ভাইয়ের মতো হয়েছো।
ভাইয়ার ও ভর্তা হলে আর কিছুই লাগে না।
আচ্ছা মা আজ তোমার পছন্দের সব কিছু রান্না হবে।
তুমি অহনার রুমে গিয়ে আড্ডা দাও।
আমি ঝটপট করে ফেলছি সবকিছু।

আলো অহনার রুমে উঁকি দিয়ে দেখে অহনা হাতে একটা ঝুমকা নিয়ে মন খারাপ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে।

ও পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, কি রে মুখটা এমন ভুতুম পেঁচার মতো করে রাখছিস কেন?
ঘটনা কি?

দেখনা এই সেটটা গাউসিয়া মার্কেটের নিচে ফুটপাত থেকে খুব পছন্দ করে কিনছিলাম।
এখন একটা আছে, আরেকটা খুঁজে পাচ্ছি না।
বিকেলে এক জায়গায় যাবো।
এই সেটটা পরতে চেয়েছিলাম।

আলো বিছানায় বসতে বসতে বললো, এই ব্যাপার।
এর জন্য তোর মন খারাপ!

চল নিউ মার্কেট যাবো।
তোর দুলটা আমাকে দে। আমি মিলিয়ে এনে দিচ্ছি।

কি বলছিস!
পাগল হয়েছিস? এই ভর দুপুরে নিউ মার্কেটে যাবো!
মামনি খুব রাগ করবে।

রাগ করবে না। তুই আমার ওপরে ছেড়ে দে।
তাছাড়া তুই বিকেলে পরবি। এখন না গেলে পরবি কিভাবে?

অহনা আমতা আমতা করে বললো, হুম তা ঠিক।
আচ্ছা ঠিক আছে চল।

ওদের দুজনের বের হওয়া দেখে আলোর ফুপি পেছন থেকে ডেকে উঠল, এই তোরা খাওয়া দাওয়া না করে কোথায় যাস এই ভর দুপুরে?

আলো ছুটে এসে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললো, ফুপি ভর্তা বানাতে তো একটু সময় লাগবে।
আমরা যাবো আর আসবো।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে ফিরে আসবো।
সেই ফাঁকে তুমি খাবার রেডি করে টেবিলে সাজাও।

ঠিক আছে মা সাবধানে যাস।

আলো বের হবার মুখে রন্জুর সাথে দেখা।

রন্জু রাগে বেগুনি হয়ে বললো, এসবের মানে কি আলো?

আলো বোকার মত মুখ করে বললো, কোন সবের মানে ভাইয়া?

রন্জু রেগে গেলে ঠিকমতো কথা বলতে পারে না।
সে তোতলাতে তোতলাতে বললো, আমাকে ব্রিজের নিচে আসতে বলে, তুমি এখানে কি করছো?

আলো ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, তোমাকে যেতে বলছি।
আমি যাবো সেটা তো বলিনি।

চল অহনা আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

চলবে……

আলো-১০
রোকেয়া পপি

ভর দুপুরে রাস্তায় একটু ও জ্যাম নেই। ধানমন্ডি থেকে গাউসিয়া আসতে একটু ও সময় লাগলো না।
দশ মিনিটেই ওরা এসে পৌঁছে গেল।

তবে মার্কেট একদম ফাঁকা নয়। ভিড় আছে ভালোই।
ওরা গাউসিয়া নিচ তলায় হকার্স মার্কেটে ঘোরাঘুরি করলো কতোক্ষণ।
তারপর একটা দোকানে পেয়েও গেল সেই ঝুমাকার সেম ডিজাইন।

অহনা দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানী এক দাম ৫৫০ বলে বসে রইল।
আলো বার বার ৩৫০ টাকায় দিতে বললো।
কিন্তু দোকানী বুঝছে এরা নিবেই।
সে কিছুতেই দাম কমাবে না।

অহনা বললো বাদ দে না।
আমরা সেদিন পাঁচশ দিয়ে কিনছিলাম। পঞ্চাশ টাকা এদিক ওদিক কিছু হবে না।
আপনি প্যাক করুন।

আলো দু হাত তুলে ঘাড় নাচিয়ে বললো তোর ইচ্ছে।

অহনা খুব খুশি তার প্রিয় ঝুমকাটা কিনতে পেরে।
খুশির ঝলক ওর চোখে মুখে।
ওরা গাড়িতে এসে বসলো।

আলো আড় চোখে অহনা কে দেখলো।
তারপর দুষ্টুমি মার্কা হাসি দিয়ে বললো, তোর ঘটনা কিরে অহনা?

কিসের ঘটনা?

মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উলটে খেতে জানিস না।
শোন অহনা, আলোর চোখ ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয়।
আমি খুব বুঝতে পারছি এই ঝুমকার পেছনে একটা দারুন ঘটনা আছে।
বলে ফেল।

অহনা লজ্জায় বেগুনি হয়ে বললো, চুপ করবি আলো।
ড্রাইভারের সামনে এগুলো কি বলছিস।
তারপর একদম গলা খাদে নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললো, বাসায় যেয়ে বলবো।

আলো ফিরে এসে দেখে টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফুপি বসে আছে ।
আর রন্জু ভাইয়া একা একা গপগপ করে ভাত খাচ্ছে।

আলো টেবিলে বসতে বসতে ফুপিকে উদ্দেশ্য করে বললো, আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা ও করতে পারলো না তোমার ছেলে!
এতো খাদক বানিয়েছো কেন ফুপি।

আলোর কথা শুনে রন্জু আড় চোখে একবার আলোর দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল।

ফুপি হাসতে হাসতে বললো, যা মা হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমারো খুব খিদে পেয়েছে।
তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।

তুমি তো অপেক্ষা করছো, দেখতেই পাচ্ছি।
কিন্তু তোমার ছেলে তো গপগপ করে খাচ্ছে।
ভাবখানা এমন এখনি ট্রেন ছেড়ে দিবে।

আলোর ফুপি হো হো করে হেসে দিলো।
ওর পেছনে লাগতে হবে না। ও সকালে কিছু খায়নি।
তাই আমি বললাম খেয়ে নিতে।

আলো আবার কিছু বলতে যাওয়া মাত্র ওর ফুপি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আর কথা বাড়াস না তো মা।
যা ফ্রেস হয়ে আয়।

আলো উঠে যাওয়া মাত্র রন্জু মনে মনে হাসলো।
এই মেয়েটা ছোট বেলায় কি সুন্দর করে বলতো।
আমি বড়ো হলে তোমাকে বিয়ে করবো।
রান্না করে খাওয়াবো।
আর আজ ওকে কি ঘোলটাই না খাওয়ালো।

না এই মেয়ে টেবিলে আসার আগেই খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে হবে।

রন্জু কোন রকম নাকে মুখে খেয়ে উঠে পড়ল।
ওর মা অবাক হয়ে বললো, সে কি রে?
এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেন?
আরেকটু ভাত নে।

না মা অনেক হয়েছে।
তোমার ঠোঁট কাটা মেয়ে আসার আগেই আমি বিদেয় হই।

রন্জুর কথা শেষ হবার আগেই আলো আর অহনা এসে টেবিলে বসলো।

রন্জুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আলো বললো, কাকে ঠোঁট কাটা বলছো রন্জু ভাইয়া?

কাউকে বলি নাই।
মাপ করো আমাকে।
মা আমি ওপরে গেলাম। তোমার খাওয়া শেষ হলে আমার জন্য কড়া করে এক কাপ চা পাঠায় দিও।

আলো আজকে খুব মজা করে ভাত খেলো।
ওর ফুপি পাঁচ আইটেমের ভর্তা করেছে।
সাথে মাছ মাংস।
ও শুধু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে উঠলো।

খাওয়া শেষ করে আলো যখন অহনার বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে,
অহনা তখন আলমিরা থেকে একটা লাল জামদানি বের করে তার সাথে কি কি পরবে সেই মেলাতে ব্যাস্ত।

আলো চুপচাপ দেখছে অহনার কান্ড।
তারপর পকেট থেকে ঝুমকাটা বের করে দিল।
এই নে তোর সেই ঝুমকা।

অহনা অবাক হয়ে বললো, যেটা কিনলাম সেটা তো উনি প্যাক করে দিলো আমার আগের একটার সাথে।
ও দ্রুত ব্যাগ খুলে প্যাকেট বের করে দেখাল।

আলো হাসতে হাসতে বলল, যেটা একটা হারিয়ে গেছে, এটা ওটার জোড়া।
রেখে দে।

অহনা বিস্ময় প্রকাশ করে বললো, মানে কি?
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

কোন মানে নেই।
আমি ঐ ব্যাটাকে সাড়ে তিনশো দাম বলছি।
রাখছে সারে পাঁচশ।
আমি আমার দামে তিনটা আনছি।
ওনার ও বিক্রি হলো, আমারো নিজের দামে কেনা হলো।

অবাক বিস্ময়ে অহনার মুখের কথা বন্ধ হয়ে মুখ হা হয়ে গেছে।

আলো হাসতে হাসতে বললো, মুখটা বন্ধ কর।
মাছি ঢুকবে।
আর তোর সেই বিখ্যাত ঘটনা বল।

তোর এতো দামি দামি গহনা থাকতে এই এমিন্টিশনের জিনিসের জন্য এতো প্রেম কেন বল?

অহনা আবারো লজ্জায় বেগুনি হয়ে বললো, আসিফ আমার সাথে পড়ে।
খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। অনেক দিন ধরে ওর পেছনে লেগে আছি আমি।
কিন্তু পাত্তা দিতো না আমাকে, আমার বাবার অনেক টাকা জন্য।

ওরা খুব গরীব।
তাই আমাকে পছন্দ করলেও পাত্তা দিতো না।
আমি সেদিন ভার্সিটির ছাদে উঠে গেছিলাম।
ওকে না পেলে মরে যাবো।

সেদিন ও আমার প্রপোজালে রাজি হয়েছে।
তারপর ও আমাকে ওর টিউশনির টাকা দিয়ে এই শাড়ি আর ঝুমকা কিনে দিয়েছে।
আজকে ওর জন্মদিন।
ওর ইচ্ছে আমি আজ ওর দেওয়া গিফট পরে ওর সাথে দেখা করি।

এখন তুই বল, ঝুমকাটা পরার আগেই যদি হারিয়ে যায়।
তাহলে কেমন লাগে?

হুম সব বুঝলাম।
তাহলে আমাদের অহনা পাখিটা ডুবে ডুব জল খাচ্ছে।
এই জন্যই তো বলি, ঝুমকাটার দিকে তাকালেই অহনা পাখিটার চেহারা এমন বেগুনি হয়ে যাচ্ছে কেন?

যা ভাগ!
কি যা তা বলিস না তুই!
এখন আর কথা বলবি না। আমাকে রেডি হতে দে।
আর আমার শাড়িটা পরিয়ে দে।

তোর মাথা খারাপ।
আমি পরাব শাড়ি!
আমি জীবনে শাড়ি পরেছি নাকি?
তুই ফুপির কাছে পর।

আলোর কথা শেষ হবার আগেই ওর ফুপি চায়ের ট্রে হাতে দরোজা নক করলো।
ভেতরে আসবো।
তোদের জন্য চা এনেছি।

এসো ফুপি।
একদম ঠিক সময়ে এসেছো।
অহনা কে শাড়ি পরিয়ে দাও তো।

ওমা এখন শাড়ি পরে কোথায় যাবি তুই?

মা আমার বান্ধবীর আজ জন্মদিন।
সন্ধ্যায় পার্টি আছে।
তুমি একটু শাড়িটা ধরো না?

আচ্ছা রন্জু কে চা টা দিয়ে আসছি।

আলো চায়ের ট্রে নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললো, তুমি ওর শাড়ি ঠিক করে দাও।
আমি ভাইয়াকে চা দিয়ে আসছি।

ভাইয়া আসবো।

এসো।

এই নাও তোমার চা।

ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ দিয়ে কাজ নেই।
চা খেয়ে তোমাকে বের হতে হবে।

রন্জু চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

আলো না থেমে বলেই যাচ্ছে।
আজ তোমাকে গোয়েন্দা গিরি করতে হবে।

গোয়েন্দা গিরি মানে?
আমি ওসব পারব না।

পারতে তোমাকে হবেই।

আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো।
তোমার বোন নতুন প্রেমে পরেছে।
তুমি এখন ওকে ফলো করে ওর পিছু নিবে।
কোথায় যায়, কি করে সব দেখে আসবে।
তারপর ভালো করে ছেলেটার খোঁজ নিবে।
ভালো হলে তো ভালো।
কিন্তু যদি খারাপ হয়, প্রথমেই ওকে আটকাতে হবে।
পরে আর পারবে না ওকে পিছু হটাতে।

রন্জু আবাক হয়ে বললো, আজব!
তাই বলে আমি অহনার পিছু নিব।
ইমপসিবল।
আমার লজ্জা করে।
আমি পারবো না।

আলো মুখ কঠিন করে উচ্চ স্বরে বললো, ইউ নিড এ শাড়ি এন্ড পেটিকোট।

রন্জু লজ্জায় লাল হয়ে বললো, আস্তে।
চিল্লাচ্ছো কেন?
এ ধরনের কথা কেউ শুনে ফেললে কি ভাববে?

তুমি যা তাই ভাববে।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
দয়া করে তুমি থামো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here