আমি_তোমার_গল্প_হবো,পর্ব:১২,১৩

আমি_তোমার_গল্প_হবো,পর্ব:১২,১৩
জাহান আরা
পর্ব:১২

গায়ে হলুদের রাতে শবনম এক বিষম খেলো যখন দেখতে পেলো শ্রাবণী আর প্রলয় ম্যাচিং করে শাড়ি পাঞ্জাবী পরেছে।
শবনমের বুকের ভিতর তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে শবনমের তিলে তিলে গড়া সব স্বপ্ন।
নিজেকে শবনমের মনে হচ্ছে পরাজিত সৈনিক বলে।
নিজেকে নিজের জুতাপেটা করতে ইচ্ছে করছে শবনমের প্রলয়ের কথাতে রাজি হয়েছে বলে।
কেনো রাজি হলো সে প্রলয়ের কথায়?
না হয় না পেতো প্রলয় কে।তবুও তো সান্ত্বনা ছিলো এক ছাদের নিচে আছে দুজন।
কিন্তু এখন কি হবে?

শ্রাবণীর দিকে বিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শবনম। মুনিঋষির যুগ হলে শবনমের এই তাকিয়ে থাকা শ্রাবণী কে ভষ্ম করে দিতো।
শবনমের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কে আরো বাড়িয়ে দিতেই যেনো শ্রাবণী আর প্রলয় একসাথে স্টেজে এসেছে শবনম কে হলুদ লাগাতে।

শবনমের ইচ্ছে হলো লাথি মেরে সব ফেলে দেয়।ভাঙচুর করে সব কিছু।
কি পেলো এই জীবনে সে?

খুব ছোটবেলায় তো বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছে তাদেরকে।
না পেলো বাবার আদর,না পেলো মায়ের আদর।
মা’কে তো শবনম কাছেও পায় নি খুব একটা।সেই সাত সকালে মা বেরিয়ে পরতো গার্মেন্টের উদ্দেশ্যে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতো ক্লান্ত হয়ে।তবুও মায়ের কোনো অবসর ছিলো না।বাসায় ফিরেই ব্যস্ত হয়ে যেতো কাঁথা সেলাই করতে।
শবনম বড় হয়েছে একা একা।

ভালোবাসা কি শবনম জানে না।কলেজে পড়ার সময় অনেকে প্রস্তাব দিয়েছিলো কিন্তু শবনম পারে নি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করতে।
কেউই প্রলয়ের মতো এরকম করে শবনমের মন চুরি করতে পারে নি।

অথচ ভাগ্যের কি ফের!

নিজের ভালোবাসার মানুষটা তাকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে।
পাশে বসা শ্রাবণের দিকে তাকালো শবনম। কি আনন্দিত এই ছেলেটা!
উচ্ছ্বাস যেনো ঠিকরে পড়ছে।শ্রাবণী শবনম কে হলুদ লাগালো প্রথমে।তারপর প্রলয়।

শবনম শিউরে উঠলো প্রলয়ের স্পর্শ পেয়ে।মনেমনে প্রার্থনা করলো সময়ের চাকা থেমে যাক এখানে। প্রলয় এভাবে ছুঁয়ে থাকুক তাকে আজীবন।একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো শবনমের চোখ বেয়ে।

সময় থেমে থাকে নি,শবনমের ইচ্ছে পূর্ণ হয় নি।প্রলয় চলে এলো স্টেজ থেকে।

প্রলয়ের হাতে শবনমের একফোঁটা চোখের জল।
নিজের রুমে এসে প্রলয় একটা জিপলক ব্যাগে একফোঁটা জল সংরক্ষণ করলো।
দরজা বন্ধ করে শুয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বুকের ভিতর এক অজানা ঝড় উঠেছে প্রলয়ের। একটা পাগলা ঘন্টা একটানা বেজেই চলেছে।ব্যথায়,যন্ত্রণায় প্রলয়ের দম আটকে আসতে লাগলো।

বিছানায় সোজা হয়ে বসলো প্রলয়। কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে তার?
শবনমের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে তার কি সমস্যা।
নিজেকে নিজে যতোই বুঝানোর চেষ্টা করছে প্রলয় পারছে না মন কে মানাতে।
মন বারবার প্রলয় কে তিরস্কার করে বলছে,”পারলে না প্রলয়,যাকে ভালোবাসো তাকে পারলে না নিজের করতে।কাপুরুষের মতো অন্যের হাতে তুলে দিলে নিজ উদ্যোগে।
ভালোবাসার অপমান করলে তুমি।এখন কেনো হারানোর ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছো ক্ষণেক্ষণে?”

অবুঝ মনের সাথে তর্ক জুরে দিলো প্রলয়ের বিবেক। মনকে বললো,”তাকে ভালোবাসি বলেই তো তার সুখ চাই।আমি আর কয়দিন এই পৃথিবীতে?
যেকোনো সময় চলে যাবো,তখন আমার শবনম কে দেখবে কে বলো?
ও বেচারি আমাকে হারালে নিজেও মরে যেতো।আমার ভালোবাসা অন্যের কাছে ভালো থাকুক রে বোকা মন,তুমি বুঝবে না আমার হিসেব।আমি মনের কথা মতো চলি না।”

মন প্রলয়ের বিবেক কে আবার তিরস্কার করে বললো,”বিবেক!
কিসের বিবেক তোমার?
ভালোবাসা মানে কি জানো তুমি?
ভালোবাসা একটা ঝড়,একটা প্রলয়। তোমার নাম প্রলয় হতে পারে কিন্তু প্রলয়ের মতো করে তুমি পারো নি নিজের ভালোবাসা কে ছিনিয়ে নিতে।তোমার ভালোবাসার শবনম কে তুমি বলে দেখতে সে কি চায়।
ভালোবাসাহীন মানুষের সাথে তোমার ভালোবাসার মানুষ ১০০ বছর কাটানোর চাইতে তোমার সাথে ১০ দিন কাটাতে পারলে সুখি হতো।তুমি পাষণ্ড দুঃখীনি মেয়েটাকে আরো দুঃখ দিলে।”

নিজের মনের এরকম তিরস্কার প্রলয়ের সহ্য হলো না।একবার ভাবলো ছুটে যায় ছাদে।চিৎকার করে বলে,”যা করেছি সব ভুল,যা বলেছি সব ভুল।আমি শবনমকে ভালোবাসি,শবনম শুধু আমার।”

কিন্তু পারলো না প্রলয়। মাথাব্যথা এসে চেপে ধরলো প্রলয়কে।তীব্র মাথাব্যথা প্রলয় কে মনে করিয়ে দিলো,”তুমি দুদিনের অতিথি মাত্র,ব্রেইন ক্যান্সার তোমাকে সেই সুযোগ দিবে না।তোমার সময় আর বড়জোর ২৫ দিন বেঁধে দিয়েছে ডাক্তার।এই মুহুর্তে এসে কেনো একটা মেয়েকে আজীবনের জন্য কাঁদাবে তুমি?
তোমার ২৫ দিনের ভালোবাসা তো মেয়েটার বাকী জীবনের সঙ্গী হতে পারবে না।ও বেচারি তখন কি করবে।”

অযু করে এসে প্রলয় সিজদা তে লুটিয়ে পড়লো।সিজদা তে গিয়ে বারবার আল্লাহকে বলতে লাগলো,”আমার মন কে শান্ত করো প্রভু,আমাকে সাহস দাও,আমাকে শক্তি দাও।আমি যাতে ঈমানের সাথে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারি।
মুছে দাও আমার মন থেকে শবনমের চিন্তা।আমাকে তোমার ইবাদতে মশগুল করে দাও।”

প্রলয় চলে যাওয়ার পর শ্রাবণী চেয়ারে বসে একনজরে তাকিয়ে রইলো ভাই,ভাবীর দিকে।
শ্রাবণী মনে মনে ভাবছে,”আমার বোকা ভাই,তুই কখনো জানতে ও পারবি না প্রলয় ভাই তোর জন্য নিজের ভালোবাসা ও ত্যাগ করে গেছে।তোর জন্য ভাবীর মনে আল্লাহ ভালোবাসা দিক।অনেক অনেক ভালোবাসা দিক।যাতে কখনো তুই কষ্ট না পাস,ভালোবাসার অভাবে যাতে তোকে আমার মতো হায় হুতাশ করতে না হয়।”

কাঁদছে শ্রাবণী নিরবে।কিভাবে কি হয়ে গেলো।সব কেমন এক নিমিষে বদলে গেলো।সেদিন প্রলয় ভাইকে যখন শ্রাবণী জানালো সে তাকে ভালোবাসে প্রলয় ভাই জবাব দিয়েছিলো,তার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব না।ভালোবাসায় সে বিশ্বাস করে না।যদি করতো তবে শবনমকেই নিজ থেকে ভালোবাসি বলতো।

শ্রাবণী আকুল হয়ে কেঁদে বলেছিলো,সেই ছোটবেলা থেকে কি ভীষণ ভালোবাসে প্রলয় কে।

জবাবে প্রলয় বলেছিলো,সেই ছোটবেলা থেকেই শ্রাবণীকে প্রলয় বোন ভেবে এসেছে।বন্যা আপার মৃত্যুর পর শ্রাবণীর মাঝে বোনের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে।যদি আগে বুঝতো প্রলয়কে নিয়ে শ্রাবণীর মনের এরকম মনোভাব,তবে কিছুতেই শ্রাবণীদের বাসায় যেতো না।শ্রাবণীর মুখদর্শন ও করতো না জীবনে।

কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে সেদিন শ্রাবণী।গুমড়ে মরেছে নিজের মধ্যে নিজে কাউকে জানতে দেয় নি।
শ্রাবণীর এই গুটিয়ে যাওয়া শ্রাবণ লক্ষ করেছে।বারবার জিজ্ঞেস করেও ব্যর্থ হয়েছে জানতে।

অনেকদিন পার হয়ে গেছে।শ্রাবণী নিজেকে সামলে নিয়েছে ধীরে ধীরে,তবুও আজ প্রলয় কে দেখে শ্রাবণী ঠিক থাকতে পারে নি।প্রলয়ের সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পরার রিকুয়েস্ট করে।
বিনা প্রতিবাদে প্রলয় রাজি হয়।

চলবে….

#আমি_তোমার_গল্প_হবো
পর্ব:১৩
জাহান আরা

রাত পোহালেই বিয়ে।শবনমের মাথা কাজ করছে না কি করবে সে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকজন এসে ছাদে ডেকোরেশন শুরু করে দিয়েছে।চারদিকে লাইটিং।
বাসার সামনে বিশাল গেইট।
রাহেলা বানু কিছুক্ষণ পর পর এসে শবনম কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তার নিজের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

বারবার শবনম কে বলছেন,”বড় শখ ছিলো আমার বন্যার বিয়ে এরকম ধুমধাম করে দিবো।আল্লাহ আমার ভাগ্যে রাখে নি বন্যার বিয়ে দেওয়া।বন্য চলে গেছে আমাকে ফাঁকি দিয়ে,আমার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূর্ণ করার জন্যই আল্লাহ আবার তোমাকে পাঠিয়েছে শবনম। আমার আরেকটা মেয়ে তুমি।বড় খুশি হতাম যদি তোমাকে আজীবনের জন্য নিজের করে নিজের বাসায় রাখতে পারতাম আমার প্রলয়ের বউ করে।কিন্তু ভাগ্যে ছিলো না।
তবুও আমি খুশি শবনম।
শ্রাবণ আমার আরেক ছেলে।হাতের তালুর মতো ওর নাড়িনক্ষত্র সব আমি চিনি।
ওর কাছে কখনো তুমি কষ্ট পাবে না।তুমি মুখ ফুটে বলার আগেই ও তোমার মনের কথা সব বুঝে যাবে দেখো। ”

শবনমের কিছু বলার নেই।হাউমাউ করে কাঁদার ইচ্ছে কিন্তু কাঁদছে না শবনম। কাঁদবে না কিছুতেই শবনম।
এরইমধ্যে দুজন মেয়ে এসেছে শবনম কে মেহেদী পরাতে।
মেহেদীর প্রতিটি রেখা শবনমের মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।শ্রাবণ একটু পরপর শবনমের রুমে আসছে শবনম কে দেখার জন্য।
চোখাচোখি হলেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখছে।শবনম অবাক হচ্ছে শ্রাবণের এরকম লজ্জা দেখে।

হলুদ শাড়িতে শ্রাবণের মনে হচ্ছে শবনম কে একটা হলুদ পাখি।যে কি-না কালকেই শ্রাবণের বুকের খাঁচায় আজীবনের জন্য বন্দী হবে।বুকের খাঁচায় পরম যত্নে শবনম কে লুকিয়ে রাখবে শ্রাবণ। কোনো আঘাত যেনো শবনম কে ছুঁতে না পারে কখনো।
শবনমের চোখে অশ্রু টলটল করছে।

অশ্রু যেনো ভোরের শিশির,যে কিনা কচু পাতার মধ্যে টলমল করছে,যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়ে যাবে।মনে মনে শ্রাবণ বললো,”ধন্য নাম তোমার শবনম।”

শ্রাবণের সব বন্ধুরা নিচে ডাকাডাকি করছে শ্রাবণ কে।কিন্তু শ্রাবণ যাচ্ছে না।একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসলো শবনমের সামনে।গালের নিচে এক হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো অপলক।
শ্রাবণের মনোযোগ কাড়তেই পকেটে ফোন বেজে উঠলো। বিরক্ত হয়ে শ্রাবণ ফোন বের করে দেখলো বন্ধুদের ফোন।
“দূর শালা!” বলে গালি দিয়ে উঠলো শ্রাবণ। তারপর ফোন বন্ধ করে দিলো।
শবনমের বিরক্ত লাগছে শ্রাবণ কে এভাবে বসে থাকতে দেখে।যতোই নিজেকে বুঝাক মা কেনো শ্রাবণ কে অনেক ভালোবাসবে কিন্তু দিনশেষে মন প্রলয় কে ভাবে।
শবনমের একটা গান মনে পড়লো নিজের মনের এই দুরবস্থা দেখে।

শবনম কে আশ্চর্য করে দিয়ে শ্রাবণ গুনগুন করে গেয়ে উঠলো,
“মন তোরে বলি যতো,
তুই চলেছিস তোরই মতো।
সাধ্য কি আমার ছুটি তোর…..”

শবনম অবাক হলো,ভীষণ অবাক হলো গান শুনে।ঠিক এক গানটাই শবনম ভাবছিলো এইমাত্র। কিন্তু শ্রাবণ জানলো কিভাবে।

.

শ্রাবণী প্রলয়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছে প্রলয় কে।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।
হাল ছেড়ে দিয়ে শ্রাবণী চলে এলো তাই প্রলয়ের রুমের সামনে থেকে।
রুমের ভিতর প্রলয় মাথার ভুল সব টেনে ছিঁড়ে ফেলছে মাথার যন্ত্রণায়।
বাহিরে কে যেনো বিয়ের গান শুনছে।
“আইজ ময়নার গায়ে হলুদ,কাল ময়নার বিয়া”

সেই গান তীরের মতো এসে প্রলয়ের মাথার ভিতর ঢুকে যাচ্ছে।আজ কেনো এতো বেশী যন্ত্রণা হচ্ছে প্রলয়ের বুঝতে পারছে না প্রলয়।
শবনম কাল চলে যাবে বলে।আর কি দেখবে না শবনম কে প্রলয়?
শবনম চলে গেলে কাকে ক্ষেপাবে বুয়া বলে?
শবনম না থাকলে কে এরকম আদা,লেবু মিশিয়ে ভালো করে চা বানিয়ে দিবে?
অবাক হয়ে সারাক্ষণ কে তাকিয়ে থাকবে প্রলয়ের দিকে?
সুযোগ পেলেই প্রলয়ের পাঞ্জাবি কে শুঁকবে প্রলয়ের ঘ্রাণ নেয়ার জন্য?
কোনো কিছু দেয়ার বাহানায় আলতো করে প্রলয়ের হাত ছুঁয়ে দিতে চাইবে কে?

কাল শবনম অন্যের হয়ে যাবে।একটা স্বাক্ষর দিয়ে শবনম আজীবনের জন্য শ্রাবণের হয়ে যাবে।
প্রলয় নিজের চোখে দেখবে শ্রাবণের বাম পাশে শবনম বসে আছে।
কিভাবে সহ্য করবে প্রলয় এই দৃশ্য?
কতো রাত নিজের অজান্তে প্রলয় স্বপ্ন দেখেছে শবনম কে।আর বুঝি সেই স্বপ্ন দেখতে পারবে না প্রলয়?

কাঁদছে প্রলয়। কেনো তার ভাগ্য এতো খারাপ হলো?
বারবার আল্লাহকে ডেকে বলছে প্রলয়, “আল্লাহ,কেনো এরকম ভাগ্য দিয়ে পাঠালে আমাকে দুনিয়ায়।শবনম কে কেনো আনলে আর জীবনে।কি ক্ষতি হতো আর কয়েকদিন পর শবনম এলে।অন্তত আমার মৃত্যুর পর আসতো সে।”

এই প্রথম প্রলয়ের ভীষণ অভিমান হলো।ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে বলে নিজের উপির নিজের ভীষণ রাগ হলো।কি ক্ষতি হতো যদি তার ব্রেইন ক্যান্সার না হতো।তাহলে তো শবনম কে প্রলয় নিজের করতে পারতো।এরকম করে নিজের ভালোবাসা কে তুলে দিতো না অন্যের হাতে।
রুমের সব জানালা খুলে দিলো প্রলয়।হুহু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকিছে রুমে।প্রলয় কে কাঁপিয়ে দিচ্ছে সেই বাতাস।
একটা পাতলা পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে আছে প্রলয় জানালার সামনে।
ঠান্ডা বাতাস কে উদ্দেশ্য করে বললো প্রলয়,”এই শীত আমাকে কি কষ্ট দিবে আর,বুকের ভিতর যে আমি একটা কষ্টের পাহাড় বয়ে বেড়াচ্ছি। ”

ঠান্ডায় প্রলয়ের কাঁপুনি চলে এলো।তবু প্রলয় সরলো না।সিদ্ধান্ত নিলো সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে।প্রলয় দেখতে চায় শরীরের কষ্ট বেশী পীড়া দেয় নাকি মনের কষ্ট!

.

রাত দুটোর দিকে শ্রাবণরা নিজেদের বাসায় চলে এলো।ড্রয়িং রুমে শ্রাবণের বন্ধুরা সবাই বসে গেছে কার্ড খেলতে। শ্রাবণ সোফায় সোজা হয়ে শুয়ে রইলো।
শ্রাবণী সবার জন্য চা বানাতে গেলো।
এই শীতের রাতে সবাই ঘনঘন চা খাবে জানা আছে শ্রাবণীর।এক ফ্লাস্ক চা বানিয়ে শ্রাবণের পাশে রেখে সবার উদ্দেশ্যে বললো,”এখানে চাবাছে,এখানে মুড়ি,এই কৌটায় বিস্কিট।ফ্রিজে খাবার আছে,ক্ষিদে পেলে ওভেনে গরম করে খেয়ে নিবেন সবাই।খবরদার আমাকে আর ডাকবেন না কেউ।”

শ্রাবণ ভেংচি কেটে বললো,”তোকে ডাকতে বয়েই গেছে,কাল থেকে আমার বউ থাকবে,আমার বউয়ের হাতের চা খাবো আমরা,তোর হাতের এরকম বাজে চা খেতে খেতে জিব পঁচে গেছে।যা ভাগ!”

শ্রাবণী রাগলো না।বরং হেসে ফেললো ফিক করে ভাইয়ের কথা শুনে।তারপর চলে গেলো নিজের রুমে।

.

মেহেদী পরার পর শবনম শুয়ে পরলো।শবনমের মা শাহেদা বেগম ও শবনমের সাথে শুয়েছেন।বারবার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলছেন,”বড় ভাগ্য করে জন্মেছিস তুই,তা না হলে এতোবড় ঘরে তোর বিয়ের কথা তো আমি ভাবতেও পারতাম না রে।
ওরা কি ভালো মানুষ,কি অমায়িক ভাব একবার।”

মায়ের কথা শবনমের কানে ঢুকিছে না।শবনম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। আগের বারের মতো এবার ও পালিয়ে যাবে পার্লার থেকে।কেউ কিছু বুঝার আগে।
যদিও শ্রাবণের জন্য কিছুটা মায়া হলো শবনমের। কিন্তু কিছু করার নেই তার।

চলবে….???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here