আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,২০,২১

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,২০,২১
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_২০

— তুই এখানে কেন রাদিম।
রাদিমঃ তৃধার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তুই একটু যাবি এখান থেকে।
রোহাঃ একটু যাব কেন।পুরোটাই যাই।
রাদিম লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকিয়ে……. না মানে……
রোহা বসা থেকে ওঠে রাদিমের কাছে গিয়ে রাদিমের কাঁধে হাত দিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে……. আচ্ছা গেলাম তবে শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য। তারপর তোর কথা বলার সময় শেষ ঠিক আছে।

রাদিম তৃধার কাছে গিয়ে গলা খুকখুক করলো।
তৃধা বিরক্ত না হয়ে ব্রু কুঁচকে তাকালো রাদিমের দিকে।
— আগে অনেক বিরক্ত লাগতো এই ছেলেকে দেখলে।এখন বিরক্ত লাগে না কেন।বরং এর ঢং গুলো আমার ভালো লাগতে শুরু করলো।কেন এমন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।(মনে মনে)
তৃধাঃ সমস্যা কি আপনার কতক্ষণ ধরে গলা খুকখুক করছেন।গলায় কি বিড়ালের পশম আঁটকে গেছে।
রাদিমঃ না আসলে তেমন কিছু না তোমার মনোযোগ আমার দিকে করার জন্য এমনটা করেছি।
তৃধাঃ কেন এসেছেন এখানে।আর আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন।
রাদিমঃ তেমন কিছু না।

তৃধাঃ তাই নাকি। কোনো মেয়ের সাথে বাটপারি করতে গিয়ে আবার মার খেয়ে এসেছেন।
রাদিমঃ তেমন কিছুই না। তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছো।
তৃধাঃ কেন এসেছেন সেটা বলে এখান থেকে বিদায় হন।
রাদিমঃ একটা কথা বলার ছিলো।
তৃধাঃ হুম…..বলেন…..
রাদিমঃ আসলে……. কি….
তৃধাঃ দেখুন এখন কিন্তু রাগ হচ্ছে আমার। কি বলবেন বলেন না হয় চলে যান।
রাদিম চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে — আ…….আমি তো….তোমায় ভা…..লো…

রাদিমের কথার মাঝে তৃধা বলে — আজব এইটা বলতে এত ভয় পাচ্ছেন।আমি ভালো এইটা আমি নিজেও জানি। আর আমি ভালো এইটা বলতে এত ভয় পাওয়া লাগে।
রাদিম চোখ খুলে অসহায় ভাবে তাকালো তৃধার দিকে।
তৃধাঃ তাহলে এখন যেতে পারেন।
রাদিম মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল।
রাদিম চলে যেতেই তৃধা হাসতে শুরু করলো।
তৃধাঃ সত্যি ছেলেটা একটু দুষ্ট কিন্তু অতটা ও খারাপ নয়।অন্তত তাসরিফের মতো নয়।বেঈমান ছেলে যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে এইভাবে বেঈমানী করতে পারতো না।প্রিয় ঠিক বলেছে,,,,, আমার জীবনে এমন কেউ আসবে যে আমাকে অনেক ভালেবাসবে।হয়তো সেই মানুষটা এসেও গেছে।

|||

— আরে তৃধা কি করছিস।আমাকে লাল বেনারসি কেন পরাচ্ছিস।আর আপু তুমি আমার মুখে এইসব ময়দা কেন মাখছ।কেউ তো কিছু বলো।দুজন চুপচাপ হয়ে আছো কেন।
তৃধা আর রোহা কোনা কথা না বলে প্রিয়তিকে বউ এর মতো সাজিয়ে দিলো।সাজানো শেষ করে তৃধা প্রিয়তির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল। তৃধা আর রোহা প্রিয়তির দুপাশে বসলো।দুজনের মুখে মুচকি হাসি।কিন্তু প্রিয়তি কিছুই বুঝতে পারছে না। ড্রাইভার কাকু গাড়ি চালানো শুরু করলো।

আর রোহা প্রিয়তির চোখে কালো এক টুকরো কাপড় বেঁধে দিল।
প্রিয়তিঃ আরে করছো কি তোমরা আমার চোখ বাঁধলে কেন।
এক’ঘন্টা পর গাড়ি থামলো।রোহা আর তৃধা প্রিয়তিকে ধরে গাড়ি থেকে নামালো।
প্রিয়তিঃ তোমরা একটু বলবে কি করছো আমার সাথে। আমার চোখের বাঁধন খুলে দাও আপু প্লিজ।
ওরা কোনো কথা না বলে প্রিয়তিকে রেখে সেখান থেকে চলে গেল।

প্রিয়তিঃ কথা বলছো না কেন।তোমরা কি আছো না চলে গেছ।
— সবকিছু কেমন শুনশান লাগছে।
হঠাৎ করেই প্রিয়তির ভয় লাগা শুরু করে। প্রিয়তি নিজেই চোখের বাঁধন খুলে ফেললো।চোখের বাঁধন খুলে প্রিয়তি ধীরে ধীরে চোখ খুললো। চোখ খুলতেই চারদিকে কেমন ঝাপসা লাগছিলো প্রিয়তির।
— এত অন্ধকার তৃধা আর আপু কোথায় গেল।আমার ভীষণ ভয় লাগছে ওরা আমায় একা রেখে কোথায় চলে গেল।
— তৃধা……. তৃধা….. কোথায় তুই প্লিজ মজা করিস না। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
প্রিয়তি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠলো।
আলো জ্বলতেই প্রিয়তির মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেল।
— কি সুন্দর লাগছে বাড়িটা।বেলী, রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুল দিয়ে পুরো বাড়ির ভিতরটা সাজিয়েছে।কিন্তু এই বাড়িটা কার। ওরা আমায় এইখানে একা রেখে চলে গেল কেন।
প্রিয়তি ধীরে ধীরে সামনে হাঁটছে আর ওপর থেকে ফুলের বর্ষণ হতে লাগলো।প্রিয়তি হাত দুটো দুদিকে মেলে ধরলো।
— ইস্ কি সুন্দর সারপ্রাইজ দিলো ওরা আমায়।এত সুন্দর সারপ্রাইজ আমি কোনোদিন পাইনি।
তখন প্রিয়তির সামনে থাকা একটি ঘরের দরজা খুলে গেল।ঘরটা থেকে আমাদের জিহান খান হিরোদের মতো স্টাইল করে হেঁটে প্রিয়তির সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে সাদা গোলাপের গুচ্ছ সামনে ধরে।
প্রিয়তি জিহানের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ এইভাবে গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন কেন।
জিহানঃ এখনো বুঝতে পারছো না মায়াবিনী।
মায়াবিনী শব্দটা শুনে প্রিয়তির মনের ভিতর ভালো লাগা কাজ করলো।
জিহানঃ ভালোবাসি মায়াবিনী।
— আমাকে ভালোবাসি কেন বলছেন। আপনি আপনার মায়াবিনীকে গিয়ে বলুন।মুখ ফুলিয়ে প্রিয়তি কথাটি বললো।

জিহান মুচকি হেসে প্রিয়তির হাতে সাদা গোলাপ ফুলের গুচ্ছ ধরিয়ে দিয়ে প্রিয়তিকে কোলে তুলে নিলো।
— আরে কি করছেন কি আমায় নামিয়ে দিন বলছি।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলছি।
জিহান কিছু না বলে প্রিয়তিকে ফুলে সজ্জিত একটি ঘরে নিয়ে আসল।
প্রিয়তি ঘরে ডুকতেই অবাক হলো। পুরো ঘরটা সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ, কালো গোলাপ, বেলী ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।
গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে খাট সাজানো হয়েছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ঘরটা।
জিহান প্রিয়তিকে খাটে বসিয়ে দিল।
নিজে ও প্রিয়তির সামনে বসলো।প্রিয়তির হাতের ওপর হাত রেখে বলে — তুমি বলেছিলে যেদিন আমায় ভালোবাসবেন সেদিন স্পর্শ করবেন।আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়তি।প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা।আজকে আমি তোমায় সম্পূর্ণ নিজের করতে চাই। তোমার হাত ধরে বাঁচতে চাই। তুমি আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছ। তোমায় আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমায় ওই চোখের মায়ায় পরে গেছি। তোমাকে ছাড়া বাঁচা আমার জন্য কষ্টদায়ক।এই ছোট্ট বাড়িটা আমি আমার মায়াবিনীকে উপহার দিলাম।

তোমাকে আজকে আমার আরেকটা সত্যি বলবো।রাজিব চৌধুরী আর মিসেস রাইসা চৌধুরীর সন্তান একজন আদনান চৌধুরী। আমি ওনাদের নিজের সন্তান নই।আমাকে………
জিহানের মুখ চেপে ধরে প্রিয়তি।
— আর বলতে হবেনা। আমি সব জানি।এখন এইসব থাক অন্য কিছু….
জিহান দুষ্ট হেসে বলে — তাহলে কি করার কথা বলছো মায়াবিনী।
প্রিয়তি লজ্জায় পরে গেল জিহানের কথায়।
— আসলে আমি…..
জিহান প্রিয়তিকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে প্রিয়তির ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। জিহান আর প্রিয়তি ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলো।

|||

— আদনান ভাই দু’দিন আপনি কোথায় ছিলেন। আর এতরাতে….
আদনান কিছু না বলে রোহার গলা টিপে ধরে।
রোহার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছুটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
রোহার চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। আদনান রোহাকে ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নিচে পেলে দিলো।
রোহা প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে।আদনানের ভয়ে শব্দ করতে পারছে না। গলা ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে।

আদনান রোহার চুলের মুঠি ধরে — সত্যি করে বল তুই প্রিয়তিকে সব বলে দিয়েছিস।
— আ…আমি কিছু বলিনি।
আদনানঃ তাহলে ওর সাথে তোর এত কিসের মাখামাখি।
— আমি সত্যিই কিছু বলিনি।আমি তো তোমার ভালোর জন্য…..
আদনানঃ যদি কাউকে কিছু বলেছিস তাহলে তোকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে রেখে দিবো।বলে রোহার চুল ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রোহা হাঁটুর মাঝে মুখ রেখে কান্না করতে থাকে।

চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_২১

ফজরের আযানের সময় প্রিয়তির ঘুম ভেঙে যায়।
প্রিয়তি জিহানের নগ্ন বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় প্রিয়তির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি করে এখন ওনাকে মুখ দেখাবো।
প্রিয়তি ওঠে গোসল সেরে নামাজ পড়ে নিল।নামাজ পড়ে জিহানের পাশে বসে,,,,
….. এই যে শুনছেন উঠুন নামাজ পড়বেন।

জিহান নড়েচড়ে উঠলো।
… আরেকটু ঘুমাই বউ।
জিহানের ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বউ কথাটি শুনতে দারুণ লেগেছে প্রিয়তির।
— না আর একটুও ঘুমানো যাবেনা।নামাজ পড়বেন উঠুন।
জিহান অনেক কষ্টে উঠে বসলো।
জিহানঃ নামাজ পড়তেই হবে আজকে বউ।কাল থেকে পড়ি।
প্রিয়তি হালকা রাগ দেখিয়ে বলে — না এখন গোসল করে নামাজ পড়বেন।
প্রিয়তি জিহানকে ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিল।
জিহান গোসল করে বাহির হয়ে দেখে প্রিয়তি ঘরে নেই।

— দূর বউটা কি বোঝে না ওরে না দেখে আমি থাকতে পারি না।আবার কোথায় চলে গেল। নিশ্চয়ই কিচেনে গিয়ে রান্না শুরু করে দিয়েছে। জিহান নামাজ পড়ে জায়নামাজ গুছিয়ে খাটে বসতেই প্রিয়তি ট্রে হাতে করে হাজির ঘরে।
— নিন আপনার কফি।
জিহান কফির মগ হাতে নিয়ে…. ধন্যবাদ মেরি জান।

প্রিয়তি লজ্জা পেয়ে বারান্দায় চলে গেল।
জিহানও প্রিয়তির পেছনে পেছনে গেল।
— জানপাখি কফিতে চিনি এত কম কেন।
প্রিয়তিঃ কম মানে আমি তো চার চা চামচ চিনি দিলাম।
জিহানঃ তুমি খেয়ে দেখ।
প্রিয়তি জিহানের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে,,,,
……. সব তো ঠিকই আছে এর চেয়ে বেশি চিনি দিলে কফিটাই খারাপ হয়ে যাবে।
জিহান প্রিয়তির হাত থেকে কফির মগ নিয়ে চুমুক দিয়ে মুচকি হেসে বলে,,,,,,
…… এখন ঠিক আছে কফি।
প্রিয়তিঃ একটু আগে যে বললেন চিনি হয়নি।
— তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে মিষ্টি হয়ে গেছে।

|||

— রোহা রোহা খাবার দে তাড়াতাড়ি। আমাকে বের হতে হবে।
প্রিয়তির রান্না করা বিরিয়ানি আর গরুর কলিজা ভুনা আদনানকে খেতে দিলো রোহা।
আদনান চুপচাপ খেয়ে বাড়ি থেকে চলে গেল।

— আমার সাথে এমন কেন হলো। এই সাইকোর মায়ায় পরে গেলাম কিভাবে আমি। কেন জানি সারাক্ষণ সাইকোটার পাশে থাকতে ইচ্ছে করে। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তাহলে জিহান কি আমার জেদ ছিলো।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।স্বামী – স্রীর নাটক করতে করতে সাইকোর প্রেমে পরে গেলাম না তো আবার।এত কষ্ট দেওয়ার পরও কেন এত ভালো লাগে আপনাকে আদনান ভাই। আপনার দেওয়া আঘাত গুলো আমার ভালো লাগায় পরিনত হয়েছে।
রোহার ভাবনার মাঝে প্রিয়তি আর জিহান আসলো।
— আরে প্রিয়তি চলে এসেছিস
প্রিয়তিঃ হ্যাঁ আপু।তুমি খেয়েছ।
রোহাঃ না খাইনি পরে খাবো। তুই আর জিহান ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় একসাথে খাবো।
প্রিয়তি মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।

— মা বলেছে,,, আমাদের বিয়েটা আবার হবে।
প্রিয়তিঃ আবার কেন….
জিহানঃ কারন আমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছি তাই। আর শুধু আমার আর তোমার নয় রোহা আর আদনান ভাইয়ের বিয়েটা ও হবে।
প্রিয়তি চিন্তায় পরে গেল রোহা আর আদনানের বিয়ের কথা শুনে।
— ওরা তো স্বামী -স্রীর নাটক করছে।
জিহানঃ কি ভাবছো।
প্রিয়তিঃ ক…….কিছু না।
আমি একটু আসছি বলে প্রিয়তি রোহার কাছে চলে গেল।

রোহা বেলকনিতে বসে আছে।
— আপু তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
রোহা বাহিরের দিয়ে তাকিয়ে…… হুম বল….
প্রিয়তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদনান চলে আসল ঘরে।
রোহা আর প্রিয়তি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবে এখন তারা বুঝতে পারছে না।
রোহাঃ আচ্ছা তুই যা আমি তোকে রান্নার কাজে সাহায্য করবো।

প্রিয়তি দ্রুত পায়ে হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
— আর একটু হলে যে কি হতো আল্লাহ জানে।আচ্ছা মামনি যে আমাদের বিয়ের বিষয়ে কথা বলেছে রোহা আপু কি জানে।
প্রিয়তি সিঁড়ি দিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে।বাহির থেকে গাড়ির শব্দ কানে আসতেই প্রিয়তি দরজা খুলে দিল।

দরজা খুলতেই প্রিয়তির চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেল।
কালো রঙের একটি গাড়ি থেকে সুন্দরী একজন মহিলা বের হলো মহিলাটির সাথে স্টাইলিশ একটা মেয়ে বের হলো। বিদেশিদের মতো ছোট ছোট জামাকাপড় পরে এসেছে। মেয়েটি মনে হচ্ছে মহিলাটির মেয়ে হবে।চেহারার অনেকটাই মিল আছে।
দুজন হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির ভিতর আসল।

— হেই গার্ল এইভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন।আমাদের ভিতরে যেতে দেও।
মহিলাটির কথায় প্রিয়তি দরজার সামনে থেকে সরে গেল।
প্রিয়তি এখনো চোখ দুটি বড় বড় করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
— ওহ্ মাম্মা আদনান আর জিহান ব্রাদার কোথায়।
তখন আদনান সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে — আরে মাহবিন কখন আসলি তোরা।আর কাকিমা আসার সময় আমাকে বলতে আমি তোমাদের নিয়ে আসতাম।
প্রিয়তি এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝলো।
মাহবিনঃ আর বলো না ব্রাদার রাস্তায় যা জ্যাম ছিল আমার আর মাম্মার অবস্থা অনেক খারাপ। আর ডেডি জেঠুআব্বুর অফিসে গেছে।ওনারা দুজন একসাথে চলে আসবেন।
এরই মধ্যে প্রিয়তি ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসলো দুজনের জন্য।
মাহবিন শরবত খেয়ে প্রিয়তিকে ধন্যবাদ দিলো।
মাহবিনঃ আচ্ছা তুমি কে তোমাকে তো আগে দেখিনি এই বাড়িতে।
— ও তোমার ছোট ভাইয়ের বউ।

মাহবিন সামনে তাকিয়ে দেখে জিহান দাঁড়িয়ে আছে। মাহবিন বসা থেকে ওঠে জিহানকে জড়িয়ে ধরে,,,,
— কতদিন পর আমার কিউট ব্রাদার কে দেখলাম।কেমন আছো ব্রাদার।

মাহবিন জিহানকে জড়িয়ে ধরতেই প্রিয়তির রাগ হলো।
রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে মাহবিনকে চোখ দিয়ে গিলে খাবে।
জিহান মাহবিনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আর প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে দেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জিহানঃ মাহবিন তুই আর কাকিমা অনেক ক্লান্ত গিয়ে বিশ্রাম নে।
মাহবিনঃ আচ্ছা ব্রাদার তুমি কবে বিয়ে করলে আর আমাদের জানালে না কেন।
জিহানঃ সব পরে বলবো এখন বিশ্রাম নে অনেক দূর থেকে এসেছিস।
প্রিয়তি গেস্ট রুমে নিয়ে গেল দুজনকে।
দুজনকে গেস্ট রুমে রেখে ঘরে চলে গেল।

প্রিয়তি ঘরে এসে দেখে জিহান মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। জিহানকে এইভাবে হাসতে দেখে প্রিয়তি আরো রেগে গেল।প্রিয়তি রেগেমেগে জিহানের কাছে গিয়ে মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে নিচে পেলে দিল।
জিহানের শার্টের কলার ধরে বলে,,,
— মেয়েদের সাথে মাখামাখি করতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না।
প্রিয়তিকে তুই করে বলতে দেখে জিহান আশ্চর্য হলো।আর এত রাগান্বিত হতে দেখেনি কখনো প্রিয়তিকে।
— বাহ্ বউ দেখি আজকে খুব রেগে আছি।
প্রিয়তিঃ কি ভাবছিস তুই কথা বল।ওই ছোট জামাকাপড়ওয়ালীকে দেখে মাখামাখি করেছিস কেন।
জিহানের হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসি আটকে রেখেছে।যদি পাগলিটা আরো রেগে যায়।

— তুমি ভুল বুঝছো বউ।ও আমার বোন হয় তাই জড়িয়ে ধরেছে।আর তুমি এত রেগে যাচ্ছো কেন তুমি তো আমায় ভালোবাস না।
প্রিয়তি জিহানকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে জিহানের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। ইচ্ছে মতো ঠোঁট কামড়ে দিচ্ছে জিহানের। জিহান দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে। ব্যাথায় চোখ – মুখ লাল হয়ে গেছে। কিন্তু তাও তার মায়াবিনীকে কিছু বলছেনা। বউটা আজ বেশিই রেগে আছে। অবশ্য জিহানের ভালোই লাগছে প্রিয়তি জেলাস হয়ে এইসব করছে। তার বউ তাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে স্বীকার করতে চাইছেনা।

— কি অসভ্য মেয়ে জোর করে চুমু খাচ্ছে।

চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here