আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১৮,১৯

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১৮,১৯
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৮

জিহানঃ কেন যে প্রিয়তিকে রোহার কাছে রেখে আসলাম।ওর কিছু হলে আমি রোহাকে শেষ করে দিবো।এখন কোথায় খুঁজি। ভাই ও ঘরে নাই। দুজনে মিলে প্রিয়তির যদি ক্ষতি করে পেলে।এখন কিভাবে খুঁজবো।এইদিকে রাদিম এক্সিডেন্ট হয়ে বসে আছে। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে কেন যে রোহার কাছে রেখে আসলাম। আমারই ভুল প্রিয়তির কিছু হলে আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না।

|||

চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটি ঘরে পেলো প্রিয়তি চেয়ার বাঁধা অবস্থায়। এত অন্ধকার দেখে প্রিয়তি ভয় পেয়ে গেল।
— এইখানে কি করে আসলাম।আ…..আহ্ আমার মাথা অনেক ভার ভার লাগছে।
প্রিয়তি চারপাশে দেখলো।ডান পাশে তাকাতেই রোহাকে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখলো।
— রোহা আপু রোহা আপু চোখ খুলো।
কানে হালকা চিৎকার শুনে রোহা নড়েচড়ে উঠলো। তারপর চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখে প্রিয়তি চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে।
— প্রিয়তি আমরা এইখানে কিভাবে আসলাম।
প্রিয়তিঃ জানিনা আমার মনে পরছেনা।আমার ভীষণ ভয় লাগছে আপু।

(ফ্ল্যাশবেক…….
রোহা আর প্রিয়তি যখন কথা বলছিলো কফিশপে
তখন পিছন থেকে যে কথাটি বলেছিলো রোহাকে তার মুখে কালো রঙের মুখোশ ছিলো তাই দুজন দেখতে পাইনি লোকটিকে।দুজন পিছনে তাকাতেই আবার ওদের পিছনে থেকে কেউ তাদের মুখে রুমাল চেপে ধরে। তারপর দুজন অজ্ঞান হয়ে যায়।জ্ঞান ফিরার পর দুজন দুজনকে অন্ধকার ঘরে পেল।)

রোহাঃ আরে হ্যাঁ।ওই লোকটা বলেছিল,,,, সে সুযোগ তোকে দিলে তো নিজেকে শুধরে নিবি।
প্রিয়তিঃ এখন কিভাবে বের হবো আপু।ওরা আসার আগেই যদি আমরা পালাতে পারতাম।
রোহাঃ ওয়েট ভাবতে দেও।
— মাথায় আসছে না কিছু প্রিয়তি তুমি কোনো উপায় বের করো।
প্রিয়তিঃ আমার কাছে একটা উপায় আছে। কিন্তু কাজে লাগবে কিনা জানিনা।
রোহাঃ বলো তাড়াতাড়ি বলে পেলো আমাদের হাতে সময় খুব অল্প।
প্রিয়তি চেয়ার নিয়ে পরে গেল।
রোহাঃ আরে আরে পরলে কেন।
প্রিয়তিঃ বাম পাশে তাকাও একটা ঝুড়ি তার পাশেই একটা ছোট ছুরি আছে।আমি চেয়ার নিয়ে গড়িয়ে ছুরিটা মুখে নিয়ে আবার গড়িয়ে তোমার কাছে আসবো।তুমি আমার মুখ থেকে তোমার মুখে ছুরিটা নিয়ে আমার হাতে দিবে।

প্রিয়তি চেয়ার নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ঝুড়ির কাছে গেল।অনেক ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু কিছুই করার নেই। প্রিয়তি অনেক কষ্টে দাঁত দিয়ে ছুরিটাকে কামড়ে ধরে আবার গড়িয়ে রোহার কাছে আসলো।প্রিয়তি যা বললো রোহা তাই করলো।
রোহা প্রিয়তির হাতে ছুরিটি দিলো।প্রিয়তি অনেক কষ্টে মোটা দড়িটি কাটলো।অবশেষে হাতের বাঁধন খুলে প্রিয়তি রোহার বাঁধন খুলে দিল।

রোহা চেয়ার থেকে ওঠে প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরলো।
রোহাঃ ধন্যবাদ বোন তোর বুদ্ধি কাজে না লাগলে আমরা বাঁচতে পারতাম কিনা জানিনা।
প্রিয়তিঃ তুমি আমায় বোন বললে।বোন কথাটি শুনে প্রিয়তি কান্না করে দেয়।
রোহাঃ এই পাগলি কান্না করিসনা। আজ থেকে তুই আমার ছোট বোন। আর আজ থেকে তোকে আমি তুই করে বলবো।
প্রিয়তি কিছু না বলে রোহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
রোহাঃ আমাদের দুজনকে বের হতে হবে এখান থেকে চল।পরে না হয় দুজন দুজনকে ধরে কান্নাকাটি করবো।
রোহার কথা শুনে প্রিয়তি হেসে দিলো।
প্রিয়তিঃ আচ্ছা চলো।

প্রিয়তি ঘরের বাম পাশে দুটো মোটা লাঠি দেখতে পেয়ে লাঠি দুটো সাথে করে নিয়ে নিলো।
প্রিয়তিঃ আপু একটা লাঠি তোমার কাছে রাখো কাজে লাগবে।
রোহাঃ হুম তুই ঠিক বলেছিস।তোর মাথায় এত বুদ্ধি আসে কোথা থেকে।
প্রিয়তিঃ চুপ করো মনে হলো সামনে কেউ আছে।
দুজন আওয়াজ ছাড়া হাঁটছে যেন কেউ শুনতে না পায়।
সামনে যেতেই দেখে একটা লম্বা,মোটা লোক হাতে গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা তাদের পিছ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সুযোগে প্রিয়তি লোকটার মাথায় আঘাত করলো আর রোহা মুখে কাপড় বেঁধে দিলো।যেন লোকটার আওয়াজ কেউ না শুনতে পায়।লোকটাকে সাইড করে দুজন আবার সামনে এগোতে লাগলো।

ডান পাশে তাকাতেই মোটামুটি একটা বড় জানালা দেখতে পেল প্রিয়তি।
প্রিয়তিঃ আপু সামনে দিয়ে না গিয়ে ওই বড় জানালা টপকে আমরা পালিয়ে যেতে পারবো।
রোহাঃ আমার ভয় লাগছে। যদি হাত পা ভেঙে যায়।
প্রিয়তিঃ কিছু হবে না।আমি আছি তো। আগে তুমি নামবে তারপর আমি চলো।
রোহা ভীতু কন্ঠ…….. চ….চল।
দুজন জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রিয়তিঃ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন লাফ দেও।
রোহা কান্না করে দিবে এমন অবস্থা।
— ভয় লাগছে।
প্রিয়তিঃ বুঝতে চেষ্টা করো।পরে ওরা চলে আসলে আমাদের যদি খারাপ কিছু করে দেয়।প্লিজ আপু…….
রোহা চোখ বন্ধ করে জানালা দিয়ে লাফ দিল সাথে চিৎকারও দিল।

প্রিয়তিঃ এইটা কি করলে চিৎকার করলে কেন।মনে হয় এদিকে কেউ আসছে চিৎকার শুনে।
প্রিয়তি আর কিছু না ভেবে লাফিয়ে পরলো জানালা দিয়ে।
দুজন অনেক ব্যাথা পেয়েছে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে।
প্রিয়তিঃ আপু দৌঁড়াও।তোমার চিৎকারে ওরা বুঝে গেছে।
দুজন প্রাণপনে জঙ্গলে দিয়ে দৌড়াচ্ছে।
(ওদের দুজনকে যে বাড়িতে আটকে রেখেছিল। বাড়িটা জঙ্গলের ভিতরে এইজন্য ওদের দুজনের কাছে ঘরটা অন্ধকার মনে হয়েছিল। মূলত জঙ্গলের কারনে এমন মনে হয়েছে।)
দুজন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সামনে রাস্তা পেয়ে গেল।

প্রিয়তি হাঁপাতে হাঁপাতে — আপু রাস্তা এসে গেছে যদি
একটা গাড়ি পেয়ে যেতাম।
তখনি গাড়ির শব্দ শুনা গেল।
প্রিয়তি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে হাত দুটো ওপরে তুলে লিফট চাচ্ছে।
গাড়িটি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
প্রিয়তি গাড়ির জানালার কাছে গিয়ে — ভাই আমাদের একটু লিফট দেওয়া যাবে।
লোকটি জানালা খুলতেই প্রিয়তি লোকটিকে দেখে দেহে যেন প্রান আসলো।
প্রিয়তিঃ আ….আপনি।
গাড়িতে থাকা লোকটি আর কেউ নয় জিহান। রাগান্বিত দৃষ্টিতে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে।
— কয়টা থাপ্পড় আছে আজকে কপালে আল্লাহই জানে।(মনে মনে)
জিহান কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। রোহা আর প্রিয়তি দুজন গাড়ির পিছনের সিটে বসলো।
জিহান কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাচ্ছে।

|||

গাড়ি খান বাড়ির সামনে থামতেই প্রিয়তি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে
চলে যেতে নিবে তার আগেই জিহান প্রিয়তির হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যায়।
আর রোহা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

|||

জিহানের সামনে ভীতু চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তি।
জিহানঃ কি হলো জবাব দিচ্ছনা কেন কোথায় ছিলে তুমি।আর ওই অসভ্য মেয়েটার সাথে কই গিয়েছিলে।কত জায়গায় তোমায় খুঁজেছি।তোমায় না পেয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।কিন্তু এইভাবে যে রাস্তায় পাবো তোমাদের কল্পনা ও করিনি৷ এই জায়গাটা কিভাবে চিনো তোমরা। বলো উওর দেও।
প্রিয়তি বাধ্য হয়ে সব বলে দিলো।
প্রিয়তি কথা শুনে জিহান হুট করে প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।
— প্লিজ আর এমন করো না। তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।তুমি আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছ।
প্রিয়তিঃ ভালোবাসেন আমায়……..
প্রিয়তি কথা শুনে জিহান থমকে গেল।
— কি হলো বলুন ভালোবাসেন আমায়….

চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৯

— ভালোবাসেন আমায়…
জিহান কিছু না বলে ঘর থেকে চলে গেল।
প্রিয়তি টলমল চোখে জিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রিয়তি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে রোহার ঘরে গেল।
— আপু হলো তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রোহাঃ এইতো আমি তৈরি চল।জিহান যাবেনা।
প্রিয়তিঃ জানিনা।
রোহাঃ তোর জামাই আর তুই বলছিস জানিস না।এটা কোনো কথা হলো।
প্রিয়তি মন খারাপ করে বলে – আমি সত্যি জানিনা।
রোহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
দুজন একটা রিকশাতে ওঠে বসলো।
প্রিয়তিঃ আপু কালকের ঘটনাটা নিয়ে কিছু ভেবেছ।
রোহাঃ আমার মনে হচ্ছে এইসব আদনানের কাজ।আর কাল থেকে ওকে বাড়িতে ও দেখছিনা।
প্রিয়তিঃ আমার ও তাই মনে হয়।
রোহাঃ তুই জিহানকে সব জানিয়েছিলি আদনানের ব্যাপারে।
প্রিয়তিঃ বলতে গিয়েই তো এতকিছু হয়ে গেল।

রিকশা ভার্সিটির গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো।
রিকশাওয়ালাঃ আপারা আপনাদের ভার্সিটি চইলা আইছে।
রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে রোহা আর প্রিয়তি দুজন রিকশা থেকে নেমে যার যায় ক্লাসে চলে গেল।

প্রিয়তি ক্লাসে গিয়ে দেখে তৃধা মন খারাপ করে বসে আছে।
প্রিয়তি তৃধার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রিয়তিঃ এখনো রেগে আছিস আমার উপর।
তৃধা কিছু না বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
প্রিয়তি পিছন থেকে তৃধাকে জড়িয়ে ধরে সরি বলে,কানে ধরে।
তৃধাঃ এইবারের মতো মাপ করে দিলাম।
প্রিয়তিঃ আজকে আমার সাথে আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাব।মানা করবিনা। তুই না যেতে চাইলেও জোর করে নিব।
তৃধাঃ জিহান ভাইয়ার সাথে থাকতে থাকতে এখন ভাইয়ার মতো ডায়লগ মারা শুরু করছোস।
প্রিয়তিঃ কখন আবার ওনার মতো হলাম।ধর তোকে বললাম,,, তোকে আমার সাথে আমার শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।তুই বলবি না আমি যাব না আরো বিভিন্ন কারন দেখাবি।তাই আমি কোনো কারন শুনতেও চাইছিনা। আমার সাথে তোকে যেতেই হবে।
তৃধাঃ যেতেই হবে প্রিয় না গেলে হয়না।বাড়িতে কিছু কাজ আছে।
প্রিয়তিঃ হয়েছে আমি জানি তুই কেমন কাজ করার মেয়ে।আমি আন্টিকে ফোন করে বলে দিব তুই আমার সাথে আছিস।
প্রিয়তির জোরাজোরিতে তৃধা রাজি হয়ে গেল।

ক্লাস শেষে প্রিয়তি, তৃধা দাঁড়িয়ে আছে গেইটের সামনে।
তৃধাঃ কার জন্য দাঁড়িয়ে আছিস।জিহান ভাইয়ার জন্য ভাইয়াকে তো আজকে দেখলাম না।
জিহানের নাম শুনতেই প্রিয়তির মন খারাপ হয়ে গেল। প্রিয়তি কিছু বললো না।
তখন রোহা এসে দুজনের সামনে দাঁড়ালো। তৃধা রোহাকে দেখেই রাগ উঠে গেল।
তৃধা প্রিয়তির কানে ফিসফিসিয়ে বলে — এই অসভ্য মেয়ে আমাদের কাছে কেন এসেছে আবার অপমান করতে।
প্রিয়তিঃ তোকে পরে সব কাহিনী খুলে বলবো এখন রাগ করিসনা বোন আমার প্লিজ।
রোহাঃ দুজন কানে – মুখে কি ফিসফিস করছো।
প্রিয়তিঃ কিছুনা আপু।চল আমরা বাড়ি যাই।তৃধাকেও সাথে নিয়ে যাব।
রোহা মুচকি হাসি দিয়ে বলে — ভালোই হলো।আজকে তিনজন অনেক মজা করবো।
তৃধার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা।এই মেয়ে কেন প্রিয়তির সাথে যাবে আর প্রিয়তিও কিভাবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে।
তিনজন খান বাড়িতে আসল।

রোহাঃ প্রিয়তি জিহান, আদনান ভাই কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।
প্রিয়তিঃ সত্যি তো কাউকেই তো দেখছি না।বাদ দেও আপু।আজকে আমরা তিনজন বাড়িতে কেউ নেই অনেক মাস্তি করবো।তুমি গোসল সেরে আসো।আমি তৃধাকে আমার সাথে নিয়ে যাই।
রোহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রিয়তি তৃধাকে ঘরে নিয়ে আসল।
তৃধাঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না প্রিয়। আমাকে বুঝিয়ে বল।এই মেয়ে এই বাড়িতে কেন।
প্রিয়তি তখন সব ঘটনা এক এক করে খুলে বললো।
তৃধা হা করে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে।
তৃধা অভিমান করে বলে — এতকিছু হয়ে গেল আমাকে কিছুই জানাইলি না।
প্রিয়তিঃ সরি রে ওই সময় আমি পাইনি অনেক ধকল গেছে।
তৃধাঃ ঠিক আছে সবকিছু মেনে নিলাম।কিন্তু রোহা আপু এত কিছু করার পরও তুই ওনাকে মাপ করে দিলি।
প্রিয়তিঃ মানুষ ভুল করে আবার শুধরায়। আর আপু এখন আর আগের মতো নেই। অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে।
প্রিয়তি আলমারি থেকে মেরুন রঙের একটি শাড়ি তৃধার সামনে রেখে — গোসল সেরে শাড়িটা পরে নে।
তৃধাঃ শাড়ি পরমু মানি। প্রিয় তুই ভালো করেই জানিস আমি শাড়ি পরতে পারিনা।
প্রিয়তিঃ তুই গোসল সেরে আয়। আমি পরিয়ে দিমু।
প্রিয়তির জোরাজোরিতে তৃধা রাজি হলো।
তৃধা গোসল সেরে বের হতেই প্রিয়তি তৃধাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো।
প্রিয়তি ও গোসল করে সেরে নিলো।
তারপর দুজন কিচেনে গেল।রোহা আগে থেকেই কিচেনে ছিলো।
প্রিয়তি রোহাকে কিচেনে দেখে অবাক হলো। রোহাকে কখনো কিচেনে আসতে দেখেনি প্রিয়তি।
প্রিয়তিঃ আপু তুমি কিচেনে কি করছো।তুমি ঘরে যাও।আমি রান্না করছি।
রোহাঃ না আজকে আমি ও তোকে হেল্প করবো।
প্রিয়তিঃ কিন্তু আপু……
রোহাঃ কোনো কিন্তু না আমি তোকে রান্নার কাজে সাহায্য করবো।
প্রিয়তি আর কথা না বাড়িয়ে রান্নার কাজে লেগে পরলো।আর রোহা টুকিটাকি সাহায্য করছে।অবশ্য এতে অনেক কষ্টও হয়েছে রোহার। আর তৃধা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজনের কান্ড দেখছে।
— বাহ্ এতো দেখছি সত্যিই ভালো হয়ে গেছে। যাক ভালো হলেই ভালো।আমার প্রিয়কে কম অপমান করেনি। নিজেকে তাহলে শুধরালো এই মেয়ে।(তৃধা মনে মনে)।
প্রিয়তিঃ তাহলে আমাদের বিরিয়ানি,গরুর কলিজা ভুনা রান্না শেষ হলো।চলো সবাই একসাথে খাব।
প্রিয়তি আর রোহা দুজনে মিলে টেবিলে খাবার রাখলো।আর তৃধা খাওয়ার টেবিলে বসে বসে সব দেখছে। সবাই একসাথে খাবার শেষ করতেই কলিং বেল বেজে উঠল।
রোহা গিয়ে দরজা খুলে দিল।
রোহা দরজা খুলতেই জিহান আর রাদিম ভিতরে ডুকলো।

প্রিয়তিঃ আপনারা…….
জিহানঃ আমার বাড়িতে আমার আসা বারন নাকি…..যাই হোক খাবার দেও না খেয়ে আছি।
এইদিকে রাদিম তৃধার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
— শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে আমার পরীটাকে।
তৃধা রাদিমের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
প্রিয়তি জিহানকে কিছু না বলে খাবার দিল।
তৃধা আর রোহা ছাঁদে গেল গল্প করতে।
প্রিয়তি জিহান আর রাদিমকে খাবার দিচ্ছে।
দুজনের খাওয়া শেষ হতেই রাদিম বলে — ভাবি তৃধা কোথায়।
প্রিয়তিঃ কেন……
রাদিমঃ না মানে ওর সাথে কথা আছে আমার।
প্রিয়তিঃ আপুর সাথে ছাঁদে গেছে।
রাদিমঃ ধন্যবাদ ভাবি বলে ছাঁদে চলে গেল।
জিহানঃ আমি যাচ্ছি। খাবারগুলো গুছিয়ে সোজা ঘরে আসবে।
প্রিয়তি কিছু বললো না। মন খারাপ করে জিহানের যাওয়ার দিকে তাকালো।

|||

— ব…..বস বস দয়া করুন আমাদের ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবেনা।আমাদের মাপ করে দেন।
বসঃ তোদের কতবার বলেছি মেয়ে দুটোকে ভালো করে দেখে রাখবি।আমার সব প্লেন ভেস্তে দিলি।তোদের একটাকেও বাঁচতে দিবনা।বলেই বস চারজন গার্ডের ওপর গুলি চালিয়ে দিলেন।
বসঃ এত দিনের সব প্লানিং নষ্ট করে দিলো এই অসভ্যের বাচ্চারা।আদনানকে ব্যবহার করছি এই কথাটা সবাই জেনে গেলে আমার সব শেষ। না…. না কিছুতেই এতদিনের শ্রম নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। বলেই বস ওখান থেকে চলে গেল।

|||

জিহান খাটে বসে মোবাইল স্ক্রোল করছে। প্রিয়তি ঘরে ডুকেই জিহানকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল,,,,,,
— আপনি কিছু বলবেন আমায়।
প্রিয়তির কথা শুনে জিহান মোবাইল রেখে প্রিয়তির কাছে এসে দাঁড়ালো। প্রিয়তি ভয় পেয়ে গেল জিহানকে এত কাছে দেখে। ভয়ে পিছিয়ে গেল।
জিহান সামনে এগোচ্ছে প্রিয়তি পেছনে যাচ্ছে।
জিহানঃ পিছনে যাচ্ছো কেন।
প্রিয়তিঃ আ…. আপনি কেন সামনে এগোচ্ছেন।

জিহান প্রিয়তিকে স্পর্শ করতে যাবে তার আগেই প্রিয়তি বলে উঠলো — আমায় স্পর্শ করবেন না প্লিজ।
জিহান কিছুটা অবাক হলো প্রিয়তির কথায়।
জিহানঃ কেন তোমায় স্পর্শ করলে কি এমন হবে।তাছাড়া তুমি আমার স্রী তোমায় স্পর্শ করা আমার জায়েজ আছে।
প্রিয়তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে – নামে মাএ স্রী আপনার। স্রীর মর্যাদা দিয়েছেন আমাকে।যতদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না ততদিন আমায় স্পর্শ করবেন না।যেদিন ভালোবাসবেন সেদিন আমাকে স্পর্শ করতে আসবেন।তার আগে আমায় স্পর্শ করবেন না প্লিজ জিহান বাবু।
বলেই প্রিয়তি চোখে জল নিয়ে ঘর থেকে চলে গেল।

চলবে…….
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here