আমার একাকীত্বের শহরে আপনি,০১,০২,০৩

#আমার একাকীত্বের শহরে আপনি,০১,০২,০৩
#লেখিকা_ফিহা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

এইভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন °প্রিয়°।
তৃধার কন্ঠস্বর কানে আসতেই নড়েচড়ে উঠলো প্রিয়তি।
প্রিয়তিঃ আমি ঠিক আছি তৃধা। আজ তোর এত দেরি হলো কেন ভার্সিটিতে আসতে।
তৃধাঃ আর বলিস না। ওই হতছাড়াটা আমাকে ছাড়তেই চাইছে না।
প্রিয়তিঃ তাসরিফ ভাইকে বলে দিমু তুই হতছাড়া বলেছিস।
তৃধাঃ বলে দিস।কচু করবে আমার।
প্রিয়তিঃ ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে এইভাবে বলিস কেন।

তৃধাঃ তো কিভাবে বলতাম প্রিয়।তাসরিফের সাথে দেখা করলেই বিপদ।ছাড়তেই চায় না।

ওদের দুজনের কথার মাঝে স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলো।
তৃধাঃ আস্তে বল রাজিব স্যার শুনলে কান ধরে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখবে।
রাজিব স্যারঃ প্রিয়তি আর তৃধা কি ফুসুরফুসুর করছো।দাঁড়াও।

দুজন ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালো।এই রাজিব স্যারকে সবাই জমের মতো ভয় পায় আর ফ্রিতে অপমান তো আছেই।
দুজনে মুখটাকে পেঁচার মতোন করে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজিব স্যারঃ কি কথা বলছিলে দুজন বলো।না বললে শাস্তি পেতে হবে। আর তোমরা ভালো করেই জানো আমার ক্লাসে কথা বলা নিষেধ।
দুজন ভয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

রাজিব স্যার ধমক দিয়ে,,,,,, কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করেছি। বলবে নাকি কান ধরে পুরো ভার্সিটি ঘুরবে।
দুজনেই ভয়ে আঁতকে উঠলো।
তৃধাঃ না না স্যার বলছি।আসলে আমি প্রিয়তিকে বলছিলাম আপনার ক্লাসে যেন না কথা বলে তাহলে আপনি শাস্তি দিবেন।
রাজিব স্যারঃ মিথ্যে বলছো কেন এইটা কোনো কথা হলো।

সবাই রাজিব স্যারকে ভয় পায়।পুরো ক্লাস একদম চুপচাপ।

প্রিয়তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো…..স…সত্যি বলছে স্যার।
রাজিব স্যারঃ সেট-আপ।
রাজিব স্যারের ধমকে পুরো ক্লাসের ছেলে মেয়ে ভীষণ ভয় পেলো।
রাজিব স্যার টেবিল থেকে কালো রঙের মোটা বেত এনে তৃধার হাতে পাঁচ-ছয় ঘাঁ বসিয়ে দিলো।
ব্যাথায় তৃধার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
খুব ব্যাথা পেয়েছে তৃধা।
রাজিব স্যারঃ বসো।

আর প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে,,,,, আর তুমি পুরো ভার্সিটি কান ধরে হেঁটে আবার ক্লাসে এসে টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে।

প্রিয়তি কোনো কথা না বাড়িয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।
সে ভালো করেই জানে স্যারের কথা না শুনলে আরো কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
প্রিয়তি কান ধরে হাঁটছে আর লজ্জায় ভীষন কান্না পাচ্ছে।
ভার্সিটির সবাই তাকিয়ে আছে।
সবাই ভালো করেই বুঝতে পারছে এইটা রাজিব স্যারের কাজ।
কেউ কেউ মজা নিচ্ছে।আবার কেউ কেউ প্রিয়তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে

চতুর্থ ইয়ারের ক্লাস থেকে একজন বলে উঠলো,,,,, আরে রোহা দেখ প্রিয়তি কান ধরে হাঁটছে।আমি নিশ্চিত এইটা রাজিব স্যারের কাজ।
রোহা নিচে তাকাতেই তৃপ্তির হাসি দিলো।
রোহা প্রিয়তিকে সহ্য করতে পারে না।
অবশ্য তার একটা বিশেষ কারন আছে।
প্রিয়তি দেখতে অনেক সুন্দরী। একদম অস্পরার মতো লাগে।
প্রিয়তির সৌন্দর্যের কারনে রোহা তাকে পছন্দ করেনা।
রোহা সবসময়ই চায় তার চেয়ে কেউ সুন্দর হতে পারবে না।

প্রিয়তিকে এইভাবে অপমানিত হতে দেখে রোহা মজা নিচ্ছে।
এইদিকে প্রিয়তি লজ্জায় কান্না করে দিলো।হঠাৎ করেই মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো প্রিয়তির।প্রিয়তির সবকিছু কেমন ঝাপসা ঝাপসা মনে হচ্ছে। প্রিয়তি পরে যেতে নিবে তার আগেই কেউ তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
এই দৃশ্য দেখে রোহা প্রচন্ড রেগে গেল।

চলবে………

#আমার_একাকীত্বের_শহরে___আপনি
#লেখিকা__ফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০২

এইদিকে রাজিব স্যার ক্লাস থেকে প্রিয়তিকে ঘুরে পরে যেতে দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন।
তিনি ক্লাস শেষ করে টিচার্স রুমে চলে গেলেন।

তৃধা দৌঁড়ে প্রিয়তির কাছে গেলো।
তৃধাঃ জি,,,,জিহান ভাইয়া।
জিহান বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,,,,, এই মেয়ে এইভাবে তাকিয়ে না থেকে এর জ্ঞান ফেরার ব্যবস্থা করো।
তৃধাঃ জ্বি,,,,,,জ্বি ভাইয়া।
(জিহান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ইয়ারের ছাত্র। জিহান খুবই রাগী ছেলে।ভার্সিটির সবাই জিহানকে ভয় পায়।জিহান দেখতে যেমন সুদর্শন পড়ালেখাতে ও তেমন ভালো।জিহানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসাতে ক্লাস থেকে বের হয়ে ভার্সিটির মাঠে আসতেই দেখলো প্রিয়তি পরে যাচ্ছে তখন জিহান দৌঁড়ে গিয়ে প্রিয়তিকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচায়।)
তৃধা জিহানের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে,,,, ভাইয়া এই নিন পানির বোতল।

জিহান হাতে পানি নিয়ে প্রিয়তির চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
প্রিয়তি পিটপিট করে চোখ খুলতেই ভয় পেয়ে গেলো জিহানকে দেখে।
প্রিয়তি দ্রুত জিহানের কাছ থেকে সরে আসলো।
প্রিয়তিঃ স,,,সরি ভাইয়া।আ,,,আসলে……
জিহান ধমক দিয়ে,,,,,,, আজব আমি কি বাঘ না ভাল্লুক এমন ভয় পাচ্ছ কেন।
প্রিয়তি কিছু না বলে তৃধার হাত ধরে দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে আসল।

তৃধা হাঁপাতে হাঁপাতে আরে কি করছিস প্রিয় হাত ছাড় আমি আর দৌঁড়াতে পারছি না।
তৃধাঃ পাগলি একটা। এই নে তোর ব্যাগ ধর।
আমি জানতাম তোর জ্ঞান ফিরলে জিহান খানকে দেখলে তুই অলিম্পিক রেস্ দিবি।তাই ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় তোর ব্যাগ সাথে করে নিয়ে এসেছি।
আচ্ছা জিহান ভাইয়াকে দেখলে তুই এতো ভয় পাস কেন।
প্রিয়তিঃ এমন ভাবে বলছিস যেন নিজে ভয় পান না।
তৃধা থতমত খেয়ে,,, না আসলে আমি তেমনটা বলতে চাইনি।
প্রিয়তি তৃধার গাল দুটি টেনে টেনে,,,, ওরে আমার ঢংয়ের রানি হয়েছে আর ঢং দেখাতে হবে না।
তৃধা মুখ ফুলিয়ে,,,,, আমি ঢং করি।
প্রিয়তিঃ আলে আমাল বাবু তাহ্।রাগ করে না আর ঢং বলবো না।
তৃধা প্রিয়তিকে এইভাবে কথা বলতে দেখে ফিক করে হেসে দিলো।

তৃধাঃ এখন শরীর কেমন লাগছে তোর।
প্রিয়তিঃ আসলে রোদ বেশি হওয়ার মাথাটা ঘুরে গেছিলো।এখন পুরো ঠিক আছি।
তৃধাঃ যাক বাবা চিন্তা মুক্ত হলাম।
আচ্ছা প্রিয় তুই যে বাড়িতে একা থাকিস রাতে তোর ভয় লাগেনা।
তৃধার প্রশ্নে প্রিয়তির মনটা খারাপ হয়ে গেল।
প্রিয়তিঃ ভয় লাগবে কেন আর আমি একা থাকি কে বললো তোকে।
তৃধাঃ মানে তুই একা নয়।
প্রিয়তি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভয় লাগবে কেন “” তারা★ গুনতে গুনতে কখন ঘুমিয়ে পরি নিজেও জানি না।
তৃধাঃ এইভাবে একা আর কত থাকবি।
প্রিয়তি কিছু না বলে মুচকি হাসলো।

জিহান বাসায় এসে রুমে ঢুকতেই দেখলো তার বড় ভাই আদনান হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রোল করছে।

জিহানঃ ভাই তুমি এইখানে কি মনে করে।তাও আবার হাত পা ছড়িয়ে আমার বিছানায় শুয়ে আছো।
আদনানঃ কেন আসতে পারি না তোর রুমে।
জিহানঃ পারিস।এখন আমি অনেক ক্লান্ত আমাকে একা থাকতে দে একটু।
আদনানঃ ঠিক আছে এইবারের মতো ছাড় দিলাম।কাল কিন্তু লং ড্রাইভে যেতে হবে আমার সাথে।
জিহানঃ ওকে ব্রাদার।
আদনান মুচকি হেসে জিহানের রুম থেকে চলে গেল।

জিহান সাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মোবাইল বেজে উঠল।
জিহান বিরক্তিকর কন্ঠে,,,, এই সময় আবার কার ফোন।

জিহান ফোন রিসিভ করতেই,,,,,,,,,,আরে ভাই আজ সোজা কোমর জড়িয়ে ধরলি।যা লেগেছে না। ভার্সিটির সব মেয়েদের মন জ্বলে পুড়ে গেলো।
জিহানঃ ফাজলামি বন্ধ কর রাদিম। আমি ইচ্ছে করে মেয়েটাকে ধরিনি।পরে যাচ্ছিলো তাই…..
রাদিমঃ ও,,,ও,,,ও তাই নাকি জিহান চান্দু কবে থেকে মেয়েদের পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নেবার চাকরিতে জয়েন করলি ভাই।তাহলে সব মেয়েরা তোর স্পর্শ পেয়ে ধন্য হয়ে যেত।
জিহান রেগে,,,, শালা ফোন রাখ কাল ভার্সিটি আসি তারপর তোর বারোটা বাজামু।
রাদিমঃ হু দেখা যাবে।সত্যি কথা বললেই দোষ।
জিহান ফোন কেটে দিলো।

জিহান ভাইয়া…… জিহান ভাইয়া…….
জিহানঃ কি হলো জাইমা এইভাবে চেচাচ্ছিস কেন।
জাইমাঃ মা তোকে ডাকছে ভাই।
জিহানঃ ভালো লাগছে না। মাকে বলে দিস পরে যাবো।
জাইমাঃ মা তোকে জরুরি কথা বলতে ডাকছে।
জিহানঃ আচ্ছা চল।
রাইসা বেগমঃ তাহলে আসলি তুই।
জিহানঃ কি জরুরি কথা তাড়াতাড়ি বলো।
রাইসা বেগমঃ আগে বস আমার বাচ্চা।
রাইসা বেগম প্লেটে ঝোলের সঙ্গে ভাত মেখে জিহানকে হা করতে বললো,,,,,নে হা কর।
জিহানঃ এই হচ্ছে তোমার জরুরি কথা মা।
রাইসা বেগমঃ আপাতত খাওয়া ছাড়া তো আমি আর জরুরি কোনো বিষয় দেখছিনা।
আর তুই প্রতিদিন এমনটা করিস।না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবি।যখন মা থাকবো না তখন ও কি না খেয়ে থাকবি।
জিহান মুখ ফুলিয়ে,,,, এইদম এইসব বাজে কথা মুখে আনবে না মা।
রাইসা বেগমঃ ঠিক আছে বলবো না ঝটপট খাবার শেষ কর।
জিহানঃ হুম।

প্রিয়তি রান্না শেষ করে সাওয়ার নিয়ে খেতে বসলো।
খাবার মুখে দিতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
প্রিয়তি না খেয়েই ছাঁদে চলে গেল।
আকাশের দিকে তাকিয়ে পুরোনো কথা ভাবতে লাগলো।
(প্রিয়তি মামনি ওঠ সকাল হয়ে গেছে স্কুলে যেতে হবে তো।
প্রিয়তিঃ আম্মু আরেকটু ঘুমোই না।
মিতা বেগমঃ না একটুও না।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
প্রিয়তি ঘুম ঘুম চোখে,, আমার কিউট আম্মু আর একটু ঘুমোই না।
মিতা বেগমঃ বাবা আসলে বকা খাবে। তাড়াতাড়ি ওঠে খেয়ে স্কুলে যেতে হবে ওঠো।
প্রিয়তিঃ ঠিক আছে আম্মু। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি খাইয়ে দিও।
মিতা বেগমঃ ঠিক আছে আমার ছোট্ট রাজকুমারী আপনার কথাই সই।)

প্রিয়তির ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো।
প্রিয়তি দরজা খুলে ওপাশের ব্যাক্তিটিকে দেখে অবাক হলো।

চলবে…………………..

[🍂ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🍂]

#আমার_একাকিত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৩

প্রিয়তি অবাক হয়ে আরে তৃধা তুই এইসময়ে।
তৃধাঃ কেন রে প্রিয় আমার কি তোর বাড়িতে এইসময়ে আসা মানা আছে।
প্রিয়তিঃ না আমি সেটা বলতে চাইনি।তুই তো এইসময়ে কোনোদিন আসিসনা তাই আর কি।
তৃধাঃ আম্মু বাড়িতে নেই ফুফির বাড়ি গেছে। একা একা ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসলাম তোর কাছে।আমার খুদা লাগছে। খাবার দে তাড়াতাড়ি।
প্রিয়তি তৃধার কথায় কিছুটা অবাক হলো।

প্রিয়তিঃ তুই টেবিলে বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।
প্রিয়তি কিচেনে গেলো খাবার আনতে।
আর তৃধা ঘরের সব লাইট নিভিয়ে দিলো।
প্রিয়তিঃ তৃধা তুই কই গেলি।আর সব লাইট নিভিয়ে দিলি কেন।
প্রিয়তি তৃধার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।
প্রিয়তি ভয়মিশ্রিত কন্ঠে,,,
— তৃ,,,,,তৃধা বো,,,বোন আমার মজা করিসনা।কই লুকিয়ে আছিস বের হ্ বলছি। তোর প্রিয় খাবার বিরিয়ানি এনেছি।তুই বের না হলে বিরিয়ানি পাবিনা।
হঠাৎ পিছন থেকে কিছু পরার শব্দ পেলো।
প্রিয়তি ভয় পেয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

আর এইদিকে তৃধা প্রিয়তিকে ভয় পেতে দেখে বেশ মজা নিচ্ছে।
তৃধাঃ এখন কেমন লাগছে প্রিয়,,,,,,,,য়।তোর না একা থাকতে ভয় লাগেনা।খেলাতো মাএ শুরু ।
হঠাৎ প্রিয়তি একটা ছায়া দেখতে পেল।
প্রিয়তিঃ কে ওখানে।তৃধা দেখ মজা করিসনা। আমি এখন মজার মুডে নাই।বের হ্ বলছি।
লাইট জ্বলে ওঠলো হঠাৎ করে।
প্রিয়তি যেন দেহে প্রান ফিরে পেল।অনেকটাই ভয় পেয়ে আছে।

প্রিয়তি পিছনে তাকিয়ে দেখে তৃধা মুখ চেপে হাসছে।
তৃধাকে এইভাবে হাসতে দেখে রাগে প্রিয়তির মুখ লাল টমাটোর মতো হয়ে গেল।
প্রিয়তিকে এইভাবে রাগ হতে দেখে তৃধা হাসি থামিয়ে দিলো।
তৃধা ধীর পায়ে প্রিয়তির সামনে এসে দাড়াঁলো।
তৃধাঃ স,,,,,,রি প্রিয়।আসলে তুই বলেছিলি তোর নাকি বাড়িতে একা থাকতে ভয় লাগেনা তাই একটু আর,,কি।সরি।
তৃধার মুখে নিষ্পাপ ভাব দেখে প্রিয়তি হেসে দিলো।
প্রিয়তিঃ এইরকম মজা কেউ করে।
তৃধাঃ সরি।আর করবো না তো বলছি প্রিয়।

দুজন একসাথে খাবার শেষ করলো।
দুজন সোফায় বসে টিভি দেখছে।
তৃধাঃ প্রিয়তি হরর মুভি দেখবি।
প্রিয়তিঃ না না আমি এইসব দেখবো না।
তৃধাঃ কেন তুই না এইসবে ভয় পাসনা একটু আগে বললি যে।
প্রিয়তিঃ না ইয়ে মানে….
তৃধাঃ এত কিছু বুঝিনা দেখবি মানি দেখবিই।
প্রিয়তি অসহায় ভাবে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজন বসে বসে হরর মুভি দেখছে।
আর প্রিয়তি একটু পর পর তৃধার গায়ের সাথে ঘেঁষে ঘেঁষে বসছে।
তৃধা বিরক্ত হয়ে,,, সমস্যা কি প্রিয়।কোলে ওঠে বসার ইচ্ছে করছে নাকি।
প্রিয়তি একটু ঘুমের ভান করে,,,, আমার ঘুৃৃম পাচ্ছে তৃধা।চল ঘুমিয়ে পরি।

ঘুমাতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপওি। তৃধা নাক ডেকে ডেকে ঘুমায়। প্রিয়তি তৃধার জন্য ঘুমাতে পারছেনা।প্রিয়তি ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা।তৃধা আবার ঘুমে মারামারি করে। তৃধা ঘুমের মধ্যে বকবক করছে।
প্রিয়তি তৃধার মুখের সামনে কান নিয়ে শুনার চেষ্টা করছে।

তৃধা বিরবির করে বলছে,,,, তাসরিফের বাচ্চা তোকে আমি গিলে খাব।তুই আমার সাথে বাটপারি করিস।আমি হিংসুটে তাই না।তবে রে দাড়াঁ দেখাচ্ছি মজা,,,, বলেই ঘুমের মধ্যে এক লাথি মারে। তৃধার লাথি খেয়ে প্রিয়তি খাট থেকে পরে গেল।
প্রিয়তি কোমরে হাত দিয়ে,,, ও,,,মা,,,,,গো।আমার কোমর গেলো গো এই অসভ্য মেয়ে আমার ভেঙে দিলো গো।
প্রিয়তির চিৎকারে তৃধা ধুরমুর করে ঘুম থেকে ওঠে বসলো।
তৃধাঃ কি,,,কি হলো প্রিয়তি তুই কই। আর এইভাবে কোথা থেকে চিৎকার করছিস।
প্রিয়তি খুব রাগ হলো। আমাকে পেলে দিয়ে এখন বলছে কোথা থেকে চিৎকার করছি।

প্রিয়তি রেগে,,,
— নিচে তাকা। তোর লাথি খেয়ে আমি নিচে পরে কোমর ভেঙে ফেলেছি।
তৃধাঃ কি করে এইসব হলো আর আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম।
প্রিয়তিঃ তুই ঘুমের মধ্যে তাসরিফ ভাইকে বকছিস আর আমাকে লাথি দিলি।
তৃধাঃ ওহ্ আচ্ছা এই সমস্যা। সরি প্রিয় আর হবে না। নে আমার হাত ধর।
প্রিয়তি তৃধার হাত ধরে খাটের ওপর বসলো।
তৃধা অসহায় ভাবে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে,,, আমি ইচ্ছে করে করিনি।ঘুমের মধ্যে হয়ে গেছে। সরিরিরি,,,,।
প্রিয়তিঃ এইবারের মতো মাপ করে দিলাম।
তারপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালে…….
প্রিয়তি ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা বানিয়ে তৃধাকে ডাকতে গিয়ে দেখে তৃধা মরার মতো ঘুমাচ্ছে।
প্রিয়তিঃ তৃধা এই তৃধার বাচ্চা ওঠ বলছি।আর কত ঘুমাবি।সারারাত আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিলিনা।এখন আরাম করে ঘুমাচ্ছে ওঠ৷
তৃধা একটু নড়েচড়ে,,,,, আরেকটু ঘুমোই না প্রিয়। কানের ওপর এত চেচাচ্ছিস কেন।
প্রিয়তিঃ নয়টা বেজে গেছে।রাজিব স্যার এর ক্লাস আছে ভুলে গেছিস।
তৃধা লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে।
তৃধাঃ হ্যাঁ।হ্যাঁ।আমি এক্ষুনি তৈরি হচ্ছি।
তৃধাকে এইভাবে ভয় পেতে প্রিয়তি হেসে দিলো।
দুজন একসাথে নাস্তা করে ভার্সিটি চলে আসল।

ভার্সিটিতে…….
তৃধাঃ প্রিয়তি আর পাঁচ মিনিট আছে ক্লাসের।
প্রিয়তি আর তৃধা প্রানপনে দৌড়াচ্ছে।
দৌড়াতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপওি।
দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর কারনে প্রিয়তি আর তৃধা দুজনেই উষ্ঠা খেয়ে পরে গেল।
প্রিয়তি ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে ফেললো ।কালকে এমনিতেই তৃধার লাথি খেয়ে কোমর ভেঙে গেছে।আজকে তো পুরো কোমরই শেষ।

তখনই কার বিরক্তিমাখা কন্ঠস্বর কানে আসলো প্রিয়তির।
— স্টুপিড মেয়ে আমার ওপর থেকে ওঠো।
প্রিয়তি পিটপিট করে চোখ খুললো। চোখ খুলতেই প্রিয়তি ভীষণ ভয় পেলো।
প্রিয়তি মনে মনে,,,, তার মানে আমি নিচে পরিনি।এই অদ্ভুত ভয়ংকর লোকটার ওপর,,,,,,,, ছিঃ ছিঃ প্রিয়তি আজকে তুই শেষ। এই জিহান খান তোর তেরোটা বাজিয়ে দিবে।

জিহানঃ আজব মেয়ে তো ওঠছোনা কেন।আমার কোমরটা মনে হয় ভেঙে গেছে। এত মোটা তুমি আর কিছুক্ষণ আমার ওপর থাকলে আমার মৃত্যু নিশ্চিত।
মোটা বলাতে প্রিয়তির খুব রাগ হলো।
প্রিয়তিঃ আপনি আমাকে মোটা কেন বললেন।আপনি জানেন আমার ওজন মাএ বিয়াল্লিশ কেজি।
জিহানঃ তা তো তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এখন আমার ওপর থেকে ওঠো।
প্রিয়তি ওঠে দাঁড়ালো।
জিহানঃ ছেলে দেখলেই গায়ে পরতে ইচ্ছে করে।
প্রিয়তিঃ আমি ইচ্ছে করে পরিনি।আসলে ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই তাড়াহুড়োতে এমন হয়েছে।
প্রিয়তি আর জিহান পাশে তাকাতেই দুজনের চোখ বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।

চলবে………
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here