আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_৯,১০

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_৯,১০
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_৯

আমি ফিরতেই দেখলাম গাজরটা একেবারে আমার খুব কাছে দাঁড়াই আছে। আমি বামে যাইতে লাগলে সে ডান হাত দরজায় রাখলো। যাহ! আমি তার জেলখানায় আটকা পড়লাম।

আমি উপরে ওর দিকে তাকাইতেই দেখলাম ওর চুল থেকে টপ টপ কইরা পানি পড়তেসে। ইচ্ছে করতেসিলো… ধুর, আমার এতো ইচ্ছে করে ক্যান। আপাতত আগে এই জেলখানা থেকে বের হইতে হবে। সে আমার আরেকটু কাছে আইসা কইল, শুনলাম তুমি নাকি আমাকে গাজর ডাকো। শুইনাই টমেটোর মতো লাল হই গেলাম। কোন ভূত পেত্নী গাজররে এই খবর দিসে। সামনে পাইলে আমি তার মুন্ডু দিয়া ডুগডুগি খেলতাম। আমি তার দিকে না তাকাইয়া কইলাম, কি যে বলেন স্যার। আমি কেন অযথা আপনাকে গাজর ডাকবো। হে হে……। আমি সাবধানে তার বাম হাতের নিচ দিয়া জেলখানা থেকে বের হইয়া আন্টির কাছে চম্পট দিলাম। যাক আটকায় নাই। এখন এখানে থাকা নিরাপদ নয়। একটু পরে সুযোগ বুইঝা বাসায় চইলা আসলাম। নইলে তার হাতে আবার পড়লে নিস্তার নাই।
.
.
.
.
আজকে বিকালে ক্লাস তাই আরামে ঘুমাইতেসিলাম হঠাৎ কলিংবেলটা টং টং কইরা বেজে উঠল। বেল বাজতেসে কেউ দরজা খুলে না। সব কি হাওয়া হই গেসে নাকি বাসা থেকে? আম্মার সকালে ডিউটি। আব্বাও বের হই গেসে। এই ঝিলিকটা দরকারের সময় ওয়াশরুম ঢুইকা বইসা থাকে। আমি কোনোমতে ঘুম ঘুম চোখে মুখটা বাংলার পাঁচ করে দরজা খুইলা উঁকি দিলাম। গাজর দাঁড়াই আছে। আমি সরার সুযোগ পাইলাম না। সে আমার দিকে পেত্নী দেখার মতো তাকাই রইল। ঝিলিক ওয়াশরুম থেকে বের হইয়া জিজ্ঞেস করল, কে ছোঁয়াপু? আমি কি কমু! ঝিল, ইচ্ছা করতেসে তেঁতুলগাছে চইড়া বসি। না হলে কইবো, এই পেত্নী মনুষ্য বসতিতে কি করে? মাথা একটা কাউয়ার বাসা থেকেও খারাপ হই আছে। দেখে মনে হইবো দশবারটা কাউয়ার বাইচ্চা এই বাসাতেই ডিম ফুটি বড়ো হই উড়াল দিসে। আমার এমন হাল দেইখা গাজরটা যেভাবে তাকাইলো মনে মনে কইলাম, আল্লাহ দড়ি ফালাও। আমি উইঠা যাই। আপাতত অলৌকিক দড়ির আশা না কইরা তারে বসতে বইলাই রুমে হুসাইন বোল্টের মতো দৌঁড় দিলাম।

পাঁচ মিনিট পর ঠিকঠাক হয়ে বের হইয়া দেখি বসার রুমে কেউ নাই। আমি ঝিলিকরে জিগাইতে কইল সে নাকি চলে গেছে। আমি ভাবলাম আসলোই বা কেন আর না বইলা চইলা গেলই বা কেন!? ফাঁকে দিয়া আমার পেত্নী মার্কা রূপ দেইখা গেল গাজরটা।

দুপুরে খাইতে বসতে ঝিলিক কোথা থেকে টেংরা মাছের ঝোল আইনা দিল। আমি তো খুশিতে বান্দরের দশ নাম্বার বাইচ্চার মতো লাফাইতে লাগলাম। আমার ফেবারিট টেংরা পিনচেচ (প্রিন্সেস)। পেটে বাচ্চা লইনা জালে ঝাপ দিসে মনে হয়। ভালো করসে, ইয়াম্মি। গপ গপ করে সেগুলা দিয়া ভাত খাইয়া লম্বা একটা ঢেকুর দিলাম। ইচ্ছে করতেসে এখন একটা লম্বা ঘুম দিতে পারলে টেংরা মাছ খাওয়াটা সার্থক হইতো। কিন্তু ক্লাস আছে। আমি রেডি হইতে হইতে ঝিলিকরে বললাম, টেংরা মাছ কখন আনসে দেখি নাই যে। ঝিলিক ভাতের প্লেট নিয়া টিভি ছাইড়া সামনে আরাম করে বইসা কইল, পাশের বাসার ভালো ভাইয়াটা দিয়ে গেছে। বলসে, তোমারে দিতে। তুমি নাকি খাইতে পছন্দ করো।

– বাব্বা, ভালো ভাইয়া! ভাইয়া বললেই তো হয় আবার ভালো লাগাইলি ক্যান?

– হ, ভালো ভাইয়াই তো। সেদিন যেভাবে তোমারে কোলে নিয়া দিয়া গেল। আমি না হইলে কি যে ফ্যাসাদে পড়তাম!

– হইসে, থাক। আর বর্ণনা দেওয়া লাগবে না। চুপচাপ খেয়ে উঠ।

আমি মনে মনে কইলাম, আসছে… একটা হুতুম গাজর। কিন্তু সে জানলো ক্যামনে আমার টেংরা মাছ পছন্দ!? উফ! হঠাৎ মাথা ব্যাথা করতেসে। ইদানিং ঘন ঘন মাথা ব্যাথা করে। অদ্ভুত!

প্রথম ক্লাসটায় ইচ্ছামতো ঝুরসি। টেংরার টোটকায় আমার সেই ঘুম পাইলো। কিন্তু এর পরের ক্লাস আমার গাজরের। অতএব এখন ঝুরাঝুরি চলবে না। দুই তিন মিনিট পর আমার গাজর লাল শার্ট পইরা আইলো। আজকে সত্যিই গাজর গাজর লাগতেসে। ইস্……! আমি তার রূপে হারাই গেলাম। কল্পনায় ওরে নিয়া সংসার পাতাইলাম। আমরা বিয়া করমু, তারপর একটা ছোট ঘরে টোনাটুনির মতো সংসার পাতমু। চড়ুইবাতির মতো রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া কইরা কতক্ষণ চিত্তই থাকুম। বিকালে ওরে নিয়া ঘুরতে যামু। এরপর আমগো বাইচ্চা কাইচ্চা হইবো। একটা গুবলু মেয়ে আর একটা গুবলু পোলা নিমু। ঠিক আমার গাজরটার মতো। হে হে…… আর ওদের নাম রাখমু…………

– ছোঁয়া… ছোঁয়া……

সাহেদা পিছন থেকে আমারে গুঁতা দিল। আমি কল্পনার সংসার থেকে বাস্তবে লাফ দিলাম। তাকাই দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকাই আছে। সাহেদা ফিসফিস করে কইলো, স্যার তোকে ডাকতেসে। আমি গাজরের দিকে তাকাইলাম। সেও আমার দিকে তাকাই আছে। আমি আবার কল্পনায় যাওয়ার আগেই গাজরটা বোর্ডে ডাকাইলো। ধুর, আমার সাধের সংসার……

বাসায় আইসা সোফায় আরাম কইরা শুইলাম। রুমে যাওয়ার শক্তি নাই। মাথায় খালি ঘুরতেসে আমার গাজরের কথা। আমার ডাক্তার জামাইটা! গাজর বরটা! এত হ্যান্ডসাম! আজরে লাল শার্টে তো… ইচ্ছে হইতেসে তার রূপে পাবনায় গিয়া ভর্তি হই। তবে মাথার চুলগুলা সবুজ রঙ করে দিলে পুরাই আমার লালুমিয়ার মতো লাগতো। ভাইবাই একপাক হাইসা নিলাম। বিয়ার পর লালুমিয়া টেস্ট করুম। দেখমু কেমন লাগে। আমি শুইয়া শুইয়া কুটনা হাসি দিতেসিলাম। আমার কল্পনার জগতের মাঝে আব্বু এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়া কইলেন, কেমন গেল ভার্সিটি? আমি চমকাই উঠে গ্লাসটা নিয়া কইলাম, ভা…লো। আজকে এত তাড়াতাড়ি? তুমি কখন আসছো আব্বু? আব্বু কইল, কিছুক্ষণ আগে। তুই তো তাড়াতাড়ি আসতে বললি আজ। তাই কাজ শেষ হতেই চলে এসেছি। আমি বেমালুম ভুইলা গেসি। ভাবসিলাম আম্মুও আসবে তাড়াতাড়ি তাই একসাথে কিছু বানাইয়া খামু। আমি গ্লাসটা টেবিলে রাখতেই আব্বা জিগাইলো, গাজরটা কে? শুইনা হেঁচকি উইঠা গেল। আমি বেকুবের মতো তাকাই কইলাম, গা…জ…র? সেটা আ…বার কি? কো…থায় শুনসো? তুমি যে কি ব…ল না আব্বু! হে… হে……।

আব্বু আমার দিকে তাকাই আছে। আমি একটা ভেটকি মেরে কইলাম, আমি পা…নি খেয়ে নি…ই আব্বু। না হলে হেঁ…চকি বন্ধ হ…বে না। বইলাই গ্লাসটা নিয়া আব্বুর সামনে থেকে হাপিশ হই গেলাম। নিজের রুমে আইসা দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়া মেঝেতে বইসা পড়লাম। ইয়া বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা হেঁচকি তুলতে তুলতে মনে মনে ভাবলাম বড় বাঁচান বাঁচছি। গাজরের কথা শুনলেই আমার এখন বহুত লজ্জা লাগে।

রাতে খেতে বসছি। আব্বা বলতেসে, আমি কাল একটু বাজারে যাবো বুঝলে। আম্মা জিগাইলো, যাইয়ো। আসার সময় কিছু ফলমূল আনিও। তোমার মেয়ে তো আবার গাজর ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। আমি বেকুবের মতো হাসলাম। আব্বা বললেন, হুম তা ঠিক। ভাবছি কাল কয়েক কেজি গাজর কিনে আনবো। তারপর হালুয়া বানিয়ে খাবো। ডালটা দাও তো। আমি শুইনা কাশতে শুরু করলাম। নাকে মুখে ঝোল উইঠা গেসে। আব্বা তাড়াতাড়ি আমারে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন। আমি কোনো মতে পানি খাইয়া কাশতে লাগলাম। চোখ নাক দিয়া পানি পড়তে লাগল লেদা বাচ্চাদের মতো। দশ মিনিট পর ঠান্ডা হইতে মিনমিন করে কইলাম, হঠাৎ এত গাজর কেন আব্বু? আব্বা নির্লিপ্তভাবে কইলেন, কদিন থেকে তোর আম্মু নাকি লক্ষ্য করছে তুই আনমনে গাজরের কথা বলিস৷ তাই ভাবলাম গাজর যখন এতই পছন্দ তো বেশি করেই আনি৷ আমি মনে মনে কইলাম, হ আব্বা, তুমি আমার মনের কথা বুঝছো। গাজর কাছে নাই ভাবলেই এক বোতল দুঃখের পানিতে সাঁতার কাটতে মন চায়। আইনা দাও আমার গাজররে…… আমার মিষ্টি গাজর……। আম্মা আমার মিষ্টি গাজরের মাঝে তিতা করলা ঢুকাই দিল। পাতে ভাজি করলা এক চামুচ দিয়া কইলো, আগে করলা খাওয়া শিখ। আমি কিসু না কইয়া আমার অতিসুন্দর বাংলা পাঁচ মুখ খানা দেখাইলাম।
.
.
.
.
দুই তিন দিন হইয়া গেল সাহেদা ক্লাসে আসে না। আমি ওর বাসায় গেলাম। সবই স্বাভাবিক। ওরে দেইখা মনেও হয় নাই অসুস্থ। জিগাইলাম কি হইসে, ক্লাসে যায় না ক্যান। কইলো কিছু না। ওর আধমরা মুখ দেইখাই বুঝলাম ডাল মে কুচ নেহি পুরি ডালই কালা হে। মনে মনে ভাবলাম, ঠিক মতো হিন্দিটা কইলাম!? কি জানি। থাক গা। এখন এই পাগলের পেটে সুড়সুড়ি দিয়া কথা বাইর করতে হইবো। বেটি কথা কয় না। বিকালে জোর কইরা দিঘির পাড়ে নিয়া গেলাম। সেখানে মেলা বসছে। আমি নাগরদোলা দেইখা সাহেদারে কইলাম, উঠমু, চল। তুই কিন্তু বেশি চিল্লাইতে পারবি না। বিশ টাকার টিকেট কাইটা দুইজনে উঠলাম। নাগরদোলা চালানো শুরু করতেই আমি ষাঁড়ের মতো ওর পাশে বইসা চিল্লাইতে লাগলাম। চড়া শেষে নামতেই সাহেদা কইল, কে জানি চিল্লাইতে মানা করসিলো? আমি হে হে কইরা হাইসা মাথা চুলকাইলাম।

ফুসকার দোকানে আইসা অর্ডার দিলাম। বেচারি শুকনা মুখে বইসা আছে। ফুসকা আসলে আমি নিয়া খাওয়া শুরু করলাম৷ ও নিতে লাগলে আমি প্লেট সরাই নিয়া কইলাম, আগে ক কি হইসে। সাহেদা মুখ ভেংচি মেরে কইলো, পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। আগে পেটটারে শান্তি করতে দে। তারপর দুনিয়ার ব্যাপারে কতা কমু। কি আর করা। দিলাম, খাইলাম, তারপর হাঁটা ধরলাম।

– এবার বল। কয়দিন ধরে কবিদের মতো উদাস ভাব।

– আমার বিয়ের জন্য চাপাচাপি করতেসে সবাই।

– ভালো তো। করে ফেল৷ আমি কতদিন বিয়ে খাই না।

– ছোঁয়া আমি সিরিয়াস।

দাঁত কেলাই কইলাম, আমিও। সাহেদা দিঘির দিকে তাকাইলো। আমি ওরে সাহস দিয়া কইলাম, কিচ্ছু হবে না। বিয়াই তো। ও আমার দিকে ফিরতেই হাসিগুলা এক পাক পেট থেকে ঘুইরা আসলো। সাহেদা নাকের জলে চোখের জলে হইয়া জুলুজুলু কইরা তাকাইয়া কইল, ছোঁয়া……আমি তোরে লালুমিয়া কিনে দিমু…… আমি ওরে দেইখা আর না হেসে পারলাম না। ও রাগ কইরা মুখ ফিরাই নিল।

পরদিন ওর বাসায় গিয়া আমার তো খুশিতে আনন্দে লাফাইতে মন চাইল। শুনলাম আজকে সাহেদারে দেখতে আসবে। আমার কি যে এক্সাইটেড লাগতেসে। কিন্তু সকাল থেকে বেকুবটা মুখ গোমড়া করে বইসা আছে৷ আমি দাঁত কেলাইতে কেলাইতে ওর সামনে গিয়া দাঁড়াইতেই ওর ঝারিতে উইড়া উগান্ডায় পড়বার অবস্থা।

– খুব মজা লাগতেসে না? আমার বিয়ে হয়ে গেলে তো তোর বান্দর নাচ থামানোর কেউ থাকবে না। ওটি হচ্ছে না। আম্মু আব্বু আমার বিয়ের কথা বলে ফেললো আর আমিই জানি না। এটা কেমনে সম্ভব!

– তোর কি দঃখ হইতেসে আঙ্কেল আন্টি বিয়ার কথা জানায় নাই দেইখা? তুই তো কত বিয়ার জন্য লাফাস।

– বিয়ে তো করমু, একটু ধীরে সুস্থে করমু। তা না সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলল রেডি হ। জানতে চাওয়ায় বলল আমাকে নাকি দেখতে আসবে। পছন্দ হলে পাকা কথাও বলে যাবে। এটা কোনো কথা!? ছোঁয়া, তুই হেল্প কর।

– কি হেল্প করমু?

– দেখ আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। পছন্দেরও একটা ব্যাপার স্যাপার আছে।

– তুই কাউকে পছন্দ করিস নাকি?

– তেমন কেউ না।

– তোর মুখ দেখে তো মনে হইতেসে…… কার উপর ক্রাশ খাইলি? কবে?

– ছোঁয়া, পিলিজ, বান্দুপি, হেল্প কর।

– আগে ক। কার উপর খাইছিস? আয়ান স্যারের উপর নাকি?

– আমারে পাগলে কামড়াইসে ঐ কাঠখোট্টার উপর ক্রাশ খামু!? আসার পর থেকে এই কদিনে যে রূপ দেখাইতেসে!

– হি হি…… তোমার চেহারা তো অন্য কিছু কইতেসে বান্দুপী। হে হে, কুচ তো হুয়া।

ও আমার দিকে বালিশ ছুইড়া মারলো। আমি ক্যাচ ধরেই দাঁত কেলাই রুম থেকে বাইর হয়ে আসলাম। রুমের ভেতরে হাওয়া গরম। ঝড় উঠলে আমারেই উড়াইয়া নিয়া যাইবো। আমি আবার বাইচ্চা মেয়ে। ঝড়ে উইড়া গিয়া কোন গত্তে (গর্তে) পড়ি ঠিক নাই। তখন আমার গাজর বর কত্তো কানবো। আমি আর রুম মুখি না হয়ে আপাতত চুলা মুখী হইলাম। সেখানে আর যাই হোক বিনা পয়সায় পেট ভোজন করতে পারমু।

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_১০

আমি আর রুম মুখি না হয়ে আপাতত চুলা মুখী হইলাম। সেখানে আর যাই হোক বিনা পয়সায় পেট ভোজন করতে পারমু। রান্না ঘরে আসতেই দেখলাম সাহেদার আত্মীয়রা ভীষণ ব্যস্ত। ছেলেপক্ষ দেখতে আসতেসে তাতেই এত খানা! খাবারের সুগন্ধে মাছি হইতে মন চাইতেসে। সাহেদা, দোয়া করি তোর আসা পূরণ হোক তাইলে যতবার তোরে দেখতে আসবে আমার পেটের ইন্দুর বিলাই গুলা ভালোমন্দ খাইতে পাইবো। সাহেদার আম্মা আমাকে দেখেই বললেন, ছোঁয়া, তুমি তো ভালো সালাদ বানাতে পারো। ধরো, এগুলা নিয়ে বানাও।

আইলাম খাইতে, লাগাই দিলো কামে। কেমনডা লাগে। আমি মনের দুঃখে সালাদ বানাইতে বসলাম। হঠাৎ দেখলাম পলিথিনের ভেতরে কি যেন জুলুজুলু করে আমার দিকে তাকাই আছে। আমার লালু মিয়ারা! উফ্, তোদের কত্ত মিস করি জানিস? কতদিন ভালো করে তোদের খাইতে পাই নাই। খাওয়ার কথা শুনে মনে হয় গাজরগুলা একটু ভয় পাইলো। আমি আস্বস্ত করে কইলাম, ভয় পাইস না। দেখবি ড্রাকুলার মতো একটা কামড় দিমু, টেরই পাবি না । শসা কাটতে কাটতে বইসা বইসা গাজর চিবাইতে লাগলাম। পেঁয়াজ কাটলাম, টমেটো কাটলাম, কাঁচামরিচ কাটলাম। গাজর কাটতে গিয়েই……

– আন্টি…

– শেষ সালাদ বানানো?

– হুম।

– কই দাও।

– ……

– গাজর কই?

– আমার পেটে…

– ছোঁয়া……

আমি রান্না ঘর থেকেও পলাইলাম। হায়রে আমার কপাল আজকে ফুঁটা। কি জন্য যে গাজরগুলা খাইতে গেলাম! লালু লালু!

দুপুর হইতে না হইতেই মেহমান এসে হাজির। আমি আগেই শুনছিলাম সাহেদার বিয়ের কথা চলতেসে। আম্মার সাথে এই নিয়া কথা বলসিলো আন্টি গতকালকে। যদিও কথা বলার সময় আমারে খেদাই দিসিলো তাও কান পাইতা শুনসিলাম আর কি। কিন্তু ওরে জানাই নাই। এই কথা ও শুনলে আমার উপর বোমা পড়বো। কিন্তু ছেলেটা কেডা! দেখা দরকার। এক পলক বসার ঘরে উঁকি দিলাম। এটা আমি কারে দেখলাম! আমি হাসি চাইপা সাহেদার রুমে গেলাম। ও মুখ বোঁচা কইরা বসে আছে। আন্টির চিল্লাচিল্লিতে শাড়ি পড়সে। আমি গিয়া কইলাম, সাজিস নাই ক্যান? সাহেদা আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকাইলো। আমি সাহস নিয়া কইলাম, আয় সাজাই দি।

– না।

– সাজবি না তো?

– না।

– পরে আফসোস করবি না তো।

– না। যা তো, ভালো লাগতেসে না।

– আইচ্ছা।

আমি পা বাড়াইতেই সাহেদা ডাকলো, ওই ছেলে দেখছিস?

– কেন?

– দেখতে কেমনরে?

– রাজপুত্তুর।

– ধুর ফাইজলামি করবি না।

– ফাইজলামি করলাম কই। বিশ্বাস না করলে নিজে গিয়া দেখ।

আমি রুম থেকে বের হই আসলাম। হাসিতে আমার পেটে সুড়সুড়ি লাগতেসে। আজকে যদি সাহেদা ফ্যাঁত ফ্যাঁত কইরা নাকের চোখের জলে এক না হইসে তো আমার নামও ছোঁয়া না।

সবাই কথা বলতেসে বসার ঘরে। আমি খাবাররুমের চেয়ারে বসে পা ঢুলাইতে ঢুলাইতে পিঠা চাবাইতেসি। আন্টি একটু পরে আইসা বললেন, সাহেদাকে কোণার রুমে নিয়ে যাও তো ছোঁয়া। আমি আরেকটা পিঠা মুখে পুইরা উঠে ওর রুমে গেলাম। মাইয়াটা পুরা তেঁতুলগাছের পেত্নী হই আছে। আজকে আসলেই ও আমারে চিবাই খাইবো যখন ছেলেরে দেখবো।

– চল।

– কই?

– কোণার রুমে।

– ছোঁয়া…

– কিতা?

– আমাকে সাহায্য কর বইন। তুই তো জানিস আমি……

– সত্যিই তুই চাস বিয়েটা ভাঙি?

– হুম।

– দেখা যাবে।

– এমন ডাইনি লুক দিচ্ছিস কেন?

– সেটা পরে বুঝবি। আয় তোর মাথাটা আঁচড়াই দেই।

– না, থাক।

– ধুর, কেমন পেত্নী পেত্নী লাগতেসে।

– লাগুক। তাইলে বিয়ে তাড়াতাড়ি ভাঙবো।

আমি কপালে হাত দিলাম। ও উইঠাই কোণার রুমে হাঁটা দিলো। আমিও পিছন পিছন গেলাম। ছেলেকে আগেই পাঠিয়ে দিসে আন্টি কোণার রুমে। সে মুখ নিচু কইরা ফোন গুতাইতেসে। ওর সাথে রুমে ঢুকেই হাসি মুখে বললাম, কেমন আছেন স্যার? আয়ান মুখ তুলতেই সাহেদার চোয়াল ঝুলে পড়লো। আমার দিকে তাকাতেই আমি কানের কাছে ফিসফিস করে কইলাম, তোমার ক্রাশকে কেমন লাগছে বনু?

– ছোঁয়া……

আমি ওকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে পালাইলাম, ডুবে যেতে লাগলে আয়ান ওরে বাঁচাইবো। আমি আবার খাবার ঘরে আইসা বসলাম। ওরা একটু প্রেম করুক, আমি পিঠার লগে পিরিত করি।

সবাই খাওয়া দাওয়া কইরা বিকালে চইলা গেল। শুনলাম পাকা কথাও হয়ে গেসে। সামনে আমাদের সেমিস্টার থাকায় একমাস পরে বিয়ের ডেট ফাইনাল করসে। আমি তো খুশিতে ভেতরে ভেতরে লাফাইতেসি। কিন্তু এখন ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বইসা থাকায় কিসু কইলাম না। দশ নাম্বার বিপদসংকেত চলতেসে। রুমের উপর দিয়া অলরেডি বয়ে গেছে। বিছানা এলোমেলো, পরনের শাড়িটা মেঝেতে। সাহেদা জামা আর পেটিকোট পরে ফ্যাঁত ফ্যাঁত করতেসে।

– ছোঁয়া…… তুই আমার সাথে এমন করতে পারলি! এ্যাঁ………………

এক ঝুঁড়ি পুরাই ফেলসে নাক মুছতে মুছতে। আমি আরেকটা টিস্যুবক্স আগাই দিয়া কইলাম, আমি আগেই তো বলসিলাম একটু সাজাই দেই৷ তুই তো… সাহেদা নাক ঝাইরা বলল, আমাকে বলিস নাই কেন পোলাটা ঐ কাঠখোট্টাটা ছিল।

– বললে কি তুই সাজতে?

– তা সাজতাম আ……

– হি হি…… যাক কথা বের হইসে।

– ছোঁয়া……

ও আমার দিকে বালিশ ছুইড়া মারলো। আমি কইলাম, তোর ফ্যাঁত ফ্যাঁত শেষ হইলে বাসার দিকে আসিস। আমি তোর জন্য এক পেয়ালা লালুর হালুয়া বানামু নে।
.
.
.
.
সক্কাল সক্কাল সাহেদা আইসা হাজির। আমি তখন নাক ডেকে পইড়া পইড়া ঘুমাইতেসি৷ ও আইসাই ঘুম থেকে উঠালো। চোখ কচলাইতে কচলাইতে কইলাম, দিলি তো কাঁচা ঘুমটা ভাঙাই।

– ইস রে… সকাল নয়টা বাজে এখনো ঘুমন্ত সুন্দরীর ঘুম কাঁচা রয়ে গেছে। আয় কেমিক্যাল দিয়ে দেই। পেকে যাবে।

– তুই পাকা গা। আমি ঘুমামু। কালকেও ব্যাথার ওষুধ খাইসি। ইদানিং মাথাটা বড়ো জ্বালাইতেসে।

– তোর মাথা যে তাই। এখন উঠ তো। একলা ভালো লাগতেসে না। তাই গল্প করতে আসছি।

– এক মাস ওয়েট করো বনু। রোজ দোকলা থাকবা। আমারে তখন মনেও পড়বে না।

– হ, যে দোকলা থাকমু, ঐ কাঠখোট্টার সময় থাকবে না আমার জন্য। যে আতিলের আতিল। বুঝাই যায়। সারাদিন বইয়ের সাথে পিরিত করবে।

– তখন বই হবে তোর সতীন।

– ধুর। ভাল্লাগে না।

– বাব্বা, এখনই এত অভিযোগ! বিয়ের আগে বলা শুরু করলে বিয়ের পরে কি করবি?

– বিয়ে পর দেখা যাবে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি দেখি একটু আচার খামু।

– যা যা, আচার রাক্ষসী। আচার আয়ান স্যারের সতীন।

– ছেলেদের সতীন হয় কেমনে!

– থুক্কু, সতীন তো হয় না। তাইলে কি কমু!?

– কিছু কওয়া লাগবে না এখন তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম যা।

আমি ফ্রেশ হয়ে বের হইয়া দেখলাম ও ঝিলিকের সাথে শাবানা আলমগীরের ছবি গিলতেসে। বসছে এক গামলা আচার নিয়ে। আমিও যোগ দিলাম। যাক আজকে কিসু কয় নাই৷ বেচারি কালকে ছ্যাকা খাইয়া দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাইতেসে। তাই এ ফাঁকে আচারে ভাগ বসাইলাম।

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাইজা উঠল। আম্মা কালকে নাইট ডিউটি কইরা আসছে তাই ঘুমে। আব্বু গেসে বাজারে। ভাবলাম আব্বু আসছে বাজার নিয়া। হাতটা ধুইয়া গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই আমার মাথায় ঠাডা পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ কইরা দিয়া কাঁপতে লাগলাম। সাহেদা আচার নিতে নিতে বলল, কে রে?

– বিপদ সংকেত……

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here