আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_৭,৮

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_৭,৮
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_৭

– এত সহজে আমাদের ভুলে গেলে? এত সহজে তো ভুলতে দেবো না ছোঁয়া। এগার বছর আগের ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি না হয় হলো আবার। তুমি এগার বছর আগেও আমার ছিলে, এখনো থাকবে। ভালোবাসি ছোঁয়া, বড্ড বেশি ভালোবাসি।

কে ফোন করসিলো আল্লাহ মালুম। এগার বছর আগে কি হইসিলো? কি ভুইলা গেলাম? মাথার উপর দিয়া গেল। আম্মারে জিগাইতে হইবো। কিন্তু এখন এসব ভাবার টাইম নাই, এখন ঘুমের টাইম। বড্ড ঘুম পাইতেসে।
.
.
.
.
আশেপাশে তাকাই দেখলাম কেউ নাই। তারপর কে একজন আসলো। আমি চেহারা দেখতেসি না। হঠাৎ আমারে কোলে তুইলা কই যেন নিয়া গেল। উঁচা পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়াইয়া কইলো, ছোঁয়া উঠবি না বিছানা থেকে ফালামু? শুইনাই ধড়মড় কইরা উইঠা বসলাম। ভাবলাম এত উঁচা থেকে ফালাইলে আমি বাঁচুম না। তাকাই দেখি সাহেদা আমার দিকে তাকাই বিছানায় বসে আছে। আমি জিগাইলাম, তুই কখন আসলি?

– একটু আগে।

– এত সকালে?

– ফোনটা একটু দেখ কয়টা বাজে। এগারটা।

আমি হাই তুলে কইলাম, কালকের ঔষুধটায় ঘুম পায়। এখনো পাইতেসে। আরেকটু ঘুমাই। আমি শুই যাইতে লাগলে সাহেদা টাইনা কইল, বেশি ঘুমালে খারাপ লাগবে। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলাম, অসুস্থ মানুষরে একটু ঘুমাইতে দে। সাহেদা ছাইড়া দিয়া কইল, ঘুমা গা। আমি আমার দামি দাঁত দেখাইয়া শুইয়া পড়লাম। এক ঘুমে দেড়টা। উইঠা দেখলাম সাহেদা আর ঝিলিক বসার ঘরে টিভি দেখতেসে। আমিও সোফায় আরাম কইরা বসলাম। সাহেদা আচার খাইতেসিলো৷ এ বেডি আমগো বাসায় আসলেই ইন্দুরের মতো শুঁকে শুঁকে আচারের ডিব্বার উপর যাই পড়ে। এখন আরো কিপটা হইসে। আচারের ভাগ বসাইতে চাইলে দিতে চায় না। আমারে দেখে কইলো, ঘুম ভাঙসে ঘুমন্ত সুন্দরীর?

– হ৷ আচার দে তো খাই।

– খালি পেটে কিসের আচার? যাহ, ভাত খা।

– একটা দে না।

– একটাও না। ভাত খাইয়া আয়। খালি পেটে আচার খেয়ে শরীর খারাপ করলে পরে আন্টি আমারে আর আচার দিবে না।

– যাহ কিপটুস।

আমি খাইতে গেলাম। খেয়ে গোসল কইরা বারান্দায় রোইদে একটু বসছি কি বসি নাই আমসির মতো শুকাই একেবারে কড়কড় করতেসি। দিনকাল কি যে হইল! একটু রোদেও বসতে পারি না গরমে। সাহেদা কইল ও চলে যাইতেসে। আন্টি নাকি চলে আসছে। আমি গিয়া দরজা মারলাম। বেচারিটা আসছে আর আমি নাক ডেকে পইড়া পইড়া ঘুমাইসি।

দশমিনিট পরে কে যেন কলিং বেল বাজাইলো। ঝিলিকরে ডাক দিলাম। কোনো খবর নাই। শেষে আমি গিয়াই দরজা খুলে হা কইরা রইলাম। ভার্সিটির সেই গুবলু পোলাটা। সাদা শার্ট প্যান্ট পরা। চুলগুলা একটু বড়ো, ভেজা। বুঝা যাইতেসে গোসল করে আসছে। চুলগুলা গোল্লা চশমার সামনে চোখের উপর। আমার ইচ্ছা করতেসিলো হাত দিয়া চুলগুলা একটু নাড়াই দিই তাইলে গাছের পাতায় জমা বৃষ্টির পানির মতো কিছু ফোঁটা টুপ করে পড়বো। তার হাতে একটা ঢাকা দেওয়া বাটি। বাটিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়া বলল, গাজরের হালুয়া। বানিয়েছিলাম একটু। আপনি তো অসুস্থ তাই… আনলাম। আমি একটু ভ্যাবাচেকা খাইয়া বাটিটা নিয়ে কইলাম, ভেতরে আসেন।

– না, বাসায় কেউ নেই। যেতে হবে।

– আপনারা সামনের বাসায় উঠেছেন?

– জ্বি, আসি।

কিসু বলার আগেই ছেলেটা টুক কইরা গিয়া দরজা মাইরা দিল। আমিও দরজা মাইরা মাথায় হাত দিলাম। মনে মনে কইলাম, ভাবসিলাম ভার্সিটিতেই তো দেখা, আর চোখের সামনে পড়বে না। পড়লেও কচিৎ। এখন রোজ আমারে এই গুবলুটার মুখ দেখতে হবে! আমি তো পাগল হই যামু। সাহেদারে যদি বলি ও আমারে ঝাঁটা নিয়া দৌঁড়াবে। আমি যে আবার ক্রাশ খাইলাম!

বিকাল থেকে বাটিটা সামনে নিয়া মাথায় হাত দিয়া বইসা আছি। ঝিলিক এসে কইল, ওমা, গাজরের হালুয়া! বাটিটা নিয়া এক চামুচ মুখে দিতেই এমন মুখ বাঁকাইলো যে মনে হয় কেউ যেন ওরে নিম পাতার রস খাওয়াইসে। দৌঁড় দিয়া মুখ থেকে ফালাই আইসা কইল, এটা কি ছিল! এত লবণ ক্যান! কেউ এত লবণ দেয়? লবণ দিয়ে রান্না করসে নাকি? আমি এজন্যই বাটি নিয়া বইসা আছি। এক চামুচ মুখে দিয়া আর খাওয়ার সাধ জাগে নাই। কিন্তু গুবলুটা দেওয়ায় ফেলতেও মন চায় নাই। আর সে সামনের বাসায় উঠায় মাথাটা তিনশো ষাইট ডিগ্রিতে চরকির মতো ঘুরপাক খাইতেসে। ঝিলিক কইলো, বাটি দাও, এগুলা ফালাই আসি। আমি তখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। চুলায় কি যেন দিয়ে আসছে, ও শব্দ শুইনা রান্নাঘরে চইলা গেল। আমি তখনও ভাবতেসি। পাঁচ মিনিট পর আইসা কইলো, ছোঁয়াপু, হালুয়া কই?

– কিসের হালুয়া?

– আরে, বাটিতে গাজরের হালুয়া ছিল যে।

– এইতো।

তাকাই দেখি নাই। খেয়াল হইতেই মনে হল কান বয়রা হই গেসে। এত লবণ ছিল যে আনমনে খাইয়া এখন জিহ্বা নাড়াইতে পারতেসি না। ঝিলিকরে ইশারায় কইলাম পানি দে। সে দৌঁড়ে গিয়া এক গ্লাস পানি আনলো। আমি পানি খাইয়া ধাতস্থ হইতেই ঝিলিক কইলো, তুমি এত লবণ কেমনে খাইলা ছোঁয়াপু!? মনে মনে ভাবলাম, হের লগে আমার কোন জন্মের শত্রুতা আছিল যে লবণ দিয়া গাজরের হালুয়া দিল?

– ঝিল। আমাকে একটা ব্যাথার ওষুধ দে। মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে।

সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠতে বহুত আলসি লাগে। ভার্সিটি গিয়াও হাই তুলতে লাগলাম। সাহেদা প্রত্যেকবারই আমারে দেইখা হতাশায় মাথা নাড়ায়। এবারও নাড়াইতে নাড়াইতে কইলো, শরীরের কি অবস্থা?

– ঘুম অবস্থা। ইচ্ছে করতেসে রাস্তায়ই পইড়া পইড়া ঘুমাই।

– এটা তোর দ্বারাই সম্ভব। তমাল স্যারের নোটগুলা তোর কাছে আছে?

– স্যারের নোটসগু…লা……

আমি ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়াই ভেতরে তাকাই রইলাম। আমাদের ক্লাসরুমে গুবলুটার কি কাজ! এখানে আসলো কোত্থেকে! সে সুন্দর কইরা শার্ট প্যান্ট পরে আসছে। চশমাও বদলাইসে। গুল্লু মার্কা বাদ দিয়ে চিকন ফ্রেমের চশমা পইরা আসছে। চুলগুলাও সুন্দর কইরা আঁচড়ানো। আমি তো তার রূপে ওখানেই গইলা শেষ৷ আমি যখন তার রূপে বিভোর হয়ে ক্লাসে ঢুকতেসি তখন গুবলুটা পেছন থেকে ডাক দিয়া বলল, আমি কি ঢোকার পারমিশন দিয়েছি? আমি জঙধরা রোবটের মতো তার দিকে তাকাইলাম। একে তো তার রূপে কাইত, এখন পারমিশানও লাগবে!? আমি সাহস জুগিয়ে কইলাম, আপনি এখানে? গুবলুটা কইলো, আমি তোমাদের গেস্ট টিচার। দুইমাস পড়াবো। আমি সন্দিহান চোখে তাকাইলাম। সে তার ভাব নিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দেখে এখন ম্যাচিউর মনে হইতেসে। সেদিনও গুল্লু মার্কা চশমায় বাচ্চা লাগসিলো। গুবলুটা বলল, নেক্সট টাইম পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢুকবে।

– জ্বি স্যার।

আমি সিটে গিয়া বসতে সাহেদা কইল, চিনিস নাকি?

– হুম, আমাদের সামনের ফ্ল্যাটে উঠসে। ওই আমারে ছাদ থেকে কোলে করে আই মিন বাসায় নিয়ে আসছে।

সাহেদা উঁকি দিয়া কইলো, আর কিসু কইলাম না। শেষে স্যারের কোলে কইরা নামলি! আমি চাপাস্বরে কইলাম, আমি কি জানতাম নাকি এই পোলাটা আমাদের স্যার? আর আমার হুশ থাকতে কখনো কোনো পোলার কোলে উঠমু? সাহেদা খাতা খুলে লেকচারে মনোযোগ দিতে দিতে বলল, তবে স্যার খারাপ না দেখতে। তোর সাথে মানাবে। ঝিলিকের চয়েজ আছে৷ আমি লজ্জা পাইয়া কইলাম, সাহেদা তুইও।

বিকালবেলা বাটিটা ফেরত দিতে যামু ভাবতে ভাবতে পাগল হওয়ার অবস্থা। যত দরজার কাছে যাই বুকের ব্যাঙটা লাফাই বের হইয়া যাইতে চাই। কি এক মুসিবত! কিছুতেই শান্ত করতে পারি না। শেষে একগাদা শক্তি নিয়া দরজায় নক করতে একজন মহিলা দরজা খুললেন। আমাকে দেখেই সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললেন, কেমন আছো ছোঁয়া?

– জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

– হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এসো ভেতরে এসো।

আমি এই প্রথম গুবলুটার বাসায় আসলাম। আন্টি বললেন, বসো। কি খাবে? আমি ভদ্রতা কইরা বললাম, কিছু খাবো না আন্টি, বাটিটা দিতে আসছিলাম। বাসায় কেউ নেই? আঙ্কেল কোথায় আন্টি?

– তোমার আঙ্কেল বাইরে থাকে। আমার ছেলেটা কাজে গেছে। আসতে লেট হবে। তুমি বসো।

– ও।

মনে মনে কইলাম, বাহ্ আঙ্কেলের সাথে গুবলুর খবরটাও ফ্রি পাইলাম। কিন্তু গুবলুর নামটা জানা হইলো না। আন্টিকে জিগামু? না থাক। কালকে ভার্সিটি গেলে জিগামু কাউরে। ঐদিন তো আমরা যাওয়ার আগেই পরিচয় পর্ব সেরে ফেলসিলো। আন্টি রান্নাঘরে কি যেন করতেসে। উঁকি দিতেই দেখলাম চুলায় দুধ দিয়েছেন। আমি জিগাইলাম, কি করেন আন্টি?

– একটু পায়েস রান্না করব তোমার জন্য।

– এত কষ্ট করার কি দরকার আন্টি?

মনে মনে ডিংকাচিকা নাচ দিয়া কইলাম, আমার আরেক বালুবাসা। তাড়াতাড়ি বানান আন্টি। খাইয়া চম্পট দেই। আন্টির সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে, পেট ভইরা পায়েস খেয়ে তারপর বাসায় আসলাম। আম্মা জিগাইলো, কই ছিলি? সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখিস নাই? আমি কইলাম, পাশের বাসায় আম্মু। নতুন ভারাটিয়া আন্টির কাছে। উনি কি মজা করে পায়েস রান্না করেন। শিখে আসছি। একদিন খাওয়াবো তোমাদের।

– খাওয়াস, এখন যা ঝিল আর তোর আব্বুকে নাস্তার জন্য ডেকে দে। হালিম রান্না করেছি।

– আম্মু আমি পেট ভরে পায়েস খেয়েছি আর কিছু খাবো না।

আমি ঝিলিক আর আব্বুকে নাস্তা করতে পাঠাইয়া দিয়া একটা গাজর নিয়া নিজের রুমে আইসা বসলাম। হাতের গাজরটারে নিয়া বিছানায় গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম খুশিতে। লালু মিয়ারে… আন্টি কত্ত ভালো। আমারে গুবলুটার নাম্বার দিসে। বলসে দরকার হইলে যাতে ফোন করি। উফ্! আন্টিটা এত ভালা ক্যান! আমি গাজর দিয়া সেভ করসি। তারপর হঠাৎ মনে হইল আন্টি আমার নাম জানল কেমনে!

পরেরদিন বান্দরের মতো লাফাইতে লাফাইতে সাহেদারে কইলাম, জানিস ঐ পোলা মানে স্যারের আম্মাটা অনেক ভালো। সাহেদা বলল, কোন স্যার? আমি কইলাম, আরে আমাদের পাশের বাসার। ধুর নামও জানি না। জানিস আমারে স্যারের নাম্বার দিসে না চাইতেই।

– নাম্বার দিসে কিন্তু নামটাও জিজ্ঞেস করিস নাই?

– কেমনে জিগামু বুঝতে পারি নাই।

– তো কি নামে সেভ করছিস?

– গাজর।

– এ্যাঁ!!!!

ঠিক তখনই পেছনে কারো উপস্থিতি টের পাইলাম। তাকাই দেখি গাজর থুক্কু গুবলুটা খাড়াই আছে। আমার আত্মা ঐখানেই উইড়া গেসে। কদ্দূর শুনসে আল্লাহ মালুম। সে কিসু বলার আগেই সালাম দিয়া ক্লাসরুমে দৌঁড় দিলাম।

চলবে……

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_৮

তাকাই দেখি গাজর থুক্কু গুবলুটা খাড়াই আছে। আমার আত্মা ঐখানেই উইড়া গেসে। কদ্দূর শুনসে আল্লাহ মালুম। সে কিসু বলার আগেই সালাম দিয়া ক্লাসরুমে দৌঁড় দিলাম।

ক্লাসে গিয়া হাঁপাইতে লাগলাম। সাহেদা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে কইল, এমন দৌঁড় দিলি ক্যান? আমি নিজেরে কোনোমতে শান্ত কইরা কইলাম, ঐ গুবলুটা যদি জানে আমি তার নাম গাজর রাখসি কি বলবে! সাহেদা পানির বোতল বাইর করতে করতে বলল, তাইলে রাখছিস ক্যান?

– নাম জানি না তো।

– তা জেনে নে। বাই দা রাস্তা, তুই স্যারকে গুবলু বলছিস?

আমি ভেটকি মারলাম। গুবলুই তো। গুবলু স্যার। গাজর স্যার। আসলেই নামটা জানা দরকার। রাইসা মাত্র এসে ব্যাগ রাখতে জিজ্ঞেস করলাম, রাইসু, গতকাল যে স্যারটা আসছে গেস্ট টিচার হিসেবে তার নাম কি রে?

– আকাশ স্যারের কথা বলছিস? আকাশ আয়মান।

– ও।

– জানিস স্যার না ডাক্তার।

আমি আর সাহেদা একে অপরের দিকে তাকাইলাম। গুবলুটা ডাক্তার! কি পিচ্চি লাগে দেখতে! আর গুল্লু মার্কা চশমায় তো লেদা বাইচ্চা। আমি জিগাইলাম, তুই ঠিক জানিস? কোন হসপিটালের?

– সেটা জানি না।

– তো জানলি কেমনে?

– শুনসি।

– ডাক্তার হলে গেস্ট টিচার হইসে ক্যান।

– জানি না।

রাইসা নিজের কাজে মন দিল আর আমি সাহেদার হাত চিইপা ধইরা ফিস ফিস কইরা কইলাম, সাহেদা, আমার গাজর ডাক্তার। সাহেদা আমার হাত ছাড়াইয়া কইল, তাই বলে আমার হাতরে চেপে মেরে ফেলছিস কেন? আমার সেদিকে মন নাই, মন তো আকাশের কাছে উড়াল দিল। এ আকাশ সে আকাশ না। এ আকাশ গাজর আকাশ। আমার ভাবনার মাঝে ফাইরুজ এসে বলল, এই ছোঁয়া কাল আকাশ স্যার যে টপিকটা পড়াইসে ঐটা তোর কাছে আছে?

– হ্যাঁ আছে তো। গাজর স্যার আই মিন ইয়ে মানে…

ফাইরুজ ভ্রূ কুঁচকে বলল, গাজর স্যার!? তুই আকাশ স্যারকে গাজর ডাকিস!? সবাই শুইনা আমার দিকে তাকাইলো। ব্যাস, আমার গাজর কাহিনী বাতাসের আগে ছুটল। ক্লাসের সবাই বলে হাসতে লাগল৷ কি লজ্জা! কি লজ্জা!

আজকেও গাজরের ক্লাস৷ আমি তার দিকে তাকাই আছি আর মনে মনে ভাবতেসি, গাজর জানলে কি বলবে আমি তারে গাজর বলসি। ধুর গাজরকে তো গাজরই বলব। না আমার গাজর তো লালুমিয়া। এত গাজরে জট পাকাইতেসে। আমার গাজরময় জীবনে তুমি আমার সেরা গাজর। আজ থেকে তোমার নাম আকাশ আয়মান গাজর। ভাইবাই মনে মনে হাসি পাইলো। বোধ করি আমি ভাবনার হাসি বাস্তবে হাসছিলাম আর তা গাজরের চোখে পড়সে। ব্যাস, ডাক পড়ল।

বাসায় ফেরার সময় আমি আড়মোড়া ভেঙে কইলাম, উফ! গাজরটা এত জ্বালাইলো আজ! কতবার বোর্ডে নিল বাচ্চা পোলাপানদের মতো। পড়াও ধরল কয়বার।সাহেদা সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে বলল, তুই মনযোগ দিস নাই কেন পড়ায়? আমি অন্য জগতে হারাই গিয়া বললাম, গাজরের কথা ভাবলে আমার আর কিছু মাথায় ঢোকে না। সাহেদা হতাশ ভঙ্গিতে কইল, মানুষ হয়ে গেল গাজর আর গাজর হয়ে গেল লালু মিয়া। হায়রে! তোর দ্বারাই এসব সম্ভব। এখন উঠ সিএনজিতে। আমি হাসতে হাসতে উইঠা পড়লাম।
.
.
.
.
দুপুরে খাইয়া আমি বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাইতেসি লালু মিয়ার লগে আর গাজরের কথা ভাবতেসি। হঠাৎ কিসের যেন সুঘ্রাণ নাকে আইসা সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আমি মাত্র উঠে বসে লালুমিয়ার শেষটুকু মুখে পুরতে যাইতেছিলাম এমন সময় সাহেদা পিছন থেকে পিঠে একটা বাঘিনীর মতো চাপড় দিয়া কইল, কেমন আছেন, মিস গাজর? ওর দিকে আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া তাকাইলাম। আমার এক্সপ্রেশান দেইখা ও দ্রুত কইল, এই ব্যাথা পেয়েছিস নাকি! সরি রে, বেশি জোরে……

– আমার লালু……

– কি হইসে তোর লালুর?

– আমার লালু… তোর ধাক্কায়…… বিছানার কোণা দিয়ে…… নিচে……

-…………

আমি মাত্র বিলাপ করার জন্য মুখ খুলতে যাইতেছিলাম, সাহেদা এক চামুচ কি যেন ঢুকাই দিল। আমি সাথে সাথে খুশিতে চোখের জলে নাকের জলে এক হয়ে কইলাম, লালুর হালুয়া!!!

– হ, লালু মানে গাজরের হালুয়া। তোর জন্য আনসি। আমি বানাইসিলাম। কিন্তু তুই যেভাবে একটুকরা গাজরের জন্য শোক করতেছিস তার থেকে ভালো সেটার দুঃখে তোর এটা না খাওয়াই উচিত।

– ইহ্, না না। দে দেখি খাই। ভালোই হইসে।

– তুই তো আমার থেকে ভালো পারিস। বানাস না কেন?

– হুমমমমম। আসি লগপ……

– কিহ!?

আমি গপ গপ করে শেষ চামুচ শেষ কইরা কইলাম, আলসি লাগে। সাহেদা বিরক্তের সাথে আমার দিকে তাকাই কইল, কত বার বলসি মুখে খাবার নিয়ে কথা বলবি না। আলসি তো লাগবেই। খালি গাজর খাইতে আলসি লাগে না।

– হ, এই নে তোর বাটি আর চামুচ।

– দুই মিনিটও হয় নাই সব পেটে চালান দিয়ে দিলি! একবার সাধলিও না।

– এই সাধের ভাগ হবে না।

– ভাগ, তোর সাধের খ্যাঁতা পুড়ি। তোর সাধ তোর কাছে রাখ। আমি গেলাম।

– ওই, শোন না। রাগ করিস না। তোর জন্য একটা কাজ আছে।

– কি বলতো।

– সোনা বান্ধুপী আমার। আমাকে আমার গাজরের বায়ো আর ফ্যামিলির খবর নিয়া দে।

– ইহ্। পাত্তাম ন। (পারব না)

– সোনা তো।

– আন্টিরে বল গিয়ে। তোর গাজর যেহেতু ডাক্তার, নিশ্চয়ই ভালো খোঁজ নিতে পারবে।

– না না, এটা গোপন মিশন। দে না বইন।

– আমি কই পামু!?

– বুদ্ধি বাইর কর।

– হ। আমি এখুনি গিয়ে আঙ্কেলরে বলতেসি। এর থেকে সহজ সমাধান আর হয় না। বায়ো টায়ো সবকিছুর সাথে সোজা বাসর ঘরে চইলা যাস।

– না………

– না হইলে চুপ কইরা এখন রেডি হ। বাইরে যামু তোরে নিয়া।

– কত কষ্ট করে সারা সকাল ক্লাস করে আসছি। এখন আবার কই যাবি?

– তুই রেডি হবি না আঙ্কেলরে কমু।

– না না যাইতেসি।

আমি জামা আর টাওয়াল নিয়া ওয়াশরুম ঢুকলাম। গোসল কইরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বইসা সাজতেসি এমন সময় সাহেদা এসে কইল, তোরে কি গাজরের সাথে প্রেম করাইতে নিতেসি? এমন সাজতেছিস ক্যান?

– এমন করিস ক্যান? দেখবি তুইও ক্রাশ খাবি একদিন।

মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম, আজকে ওরে ক্রাশ খাওয়াইও, আল্লাহ। আজকেই যেন ক্রাশ খায়। আজকেই যেন……

– তুই দোয়া করা বন্ধ করলে বের হমু।

– তুই জানলি কেমনে আমি দোয়া করতেছি?

– আর একটা বাক্য বলবি তো চটকানা খাবি। চল।

ও আমার হাত ধরে টাইনা বের করে আনল। কাঁদো কাঁদো হয়ে মনে মনে কইলাম, এমন জল্লাদ রসকষহীন বান্ধবী আর কারো না হোক।
.
.
.
.
সন্ধ্যার আগে সাহেদা বাসায়ই আসতে দিল না। বাপরে কত শপিং করসে! পুরা মার্কেট তুইলা আনতে পারলে হয়তো শান্তি হইতো। আমি ফ্রেশ হইয়া রান্নাঘরে গেলাম। আম্মা আব্বা এখনো আসে নাই। ঝিলিক বসার রুমে হা কইরা টিভি গিলতেসে। এই ফাঁকে আমি পায়েস বানাইলাম। ঝিলিক জেরির মতো সুগন্ধের টানে উইড়া উইড়া রান্নাঘরে আইসা কইলো, এত সুন্দর সুগন্ধ! পায়েস রানসো ছোঁয়াপু!?

– হুম।

আমি ওরে এক বাটি দিলাম। আর এক বাটি নিয়া ডাইনিংয়ে ডাকনা দিয়া রাখলাম। তারপর সুন্দর কইরা মাথা আঁচড়াই নিলাম। অপারেশনের পর এক বছরে চুলগুলা কাঁধ পর্যন্ত হইসে। সুন্দর করে একসাইডে সিঁথি করে চুলটা একটা ক্লিপ দিয়ে আটকাইলাম। একটু সাজুগুজু কইরা বাটি নিয়া বের হইলাম। দরজা টোকা দিতেই আন্টি দরজা খুলল। আমাকে দেখে হেসে বললেন, আরে ছোঁয়া, এসো। কেমন আছো?

– জ্বি ভালো আন্টি। পায়েস বানিয়েছিলাম। ভাবলাম আপনাদের একটু দেই। খেয়ে কেমন হয়েছে বলবেন।

– বাহ! ভালো করেছো। ছেলেটাও মাত্র বাইরে থেকে এল। বসো।

আন্টি বাটি নিয়া রান্নাঘরে চইলা গেল। আমি সোফায় মাত্র বসমু এমন সময় দেখলাম গাজর ওয়াশরুম থেকে বের হইসে। গায়ে হাফপেন্ট আর একটা নরমাল গেঞ্জি। মাথার চুল একটা টাওয়াল দিয়া মুছতে মুছতে রুমের দিকে যাইতেসে। আমি চিন্তা করলাম একটা গাজর যদি এমন হাফপেন্ট আর গেঞ্জি পরে সামনে দিয়া হাঁটে কেমন লাগবো। ভাইবা হাসি পাইলো৷ তবে সবচেয়ে বেশি হাসি পাইলো গেঞ্জির লেখা দেখে। সেখানে ইট মি লেখা। গাজর ইট মি লেখা গেঞ্জি পইরা হাঁটতেসে। হাসি চাপাইতে না পাইরা একটু শব্দ হয়ে গেল। ব্যাস, সাথে সাথে গাজর আমার দিকে তাকাইলো। আমি তখনো মুখ চাইপা আছি। পেটে হাসি ঘুরপাক খাইতেসে।

– তুমি?

– জ্বি স্যার, পায়েস দিতে আসছিলাম।

– তো হাসছো কেন?

– কিছু না। আমি যাই।

আমি সোফা থেকে উইঠা দরজার দিকে রওনা দিলাম। তারে দেইখা আমার হাসি আটকাইতে পারতেসি না। এখন না গেলে আমি পেটে হাসি জমাইতে জমাইতে ভেটকাই যামু। দরজাটা খুলমু এমন সময় সে আমার পিছন থেকে বাম হাত দিয়া দরজা চাইপা ধরল। আমি ফিরতেই দেখলাম গাজরটা একেবারে আমার খুব কাছে দাঁড়াই আছে। আমি বামে যাইতে লাগলে সে ডান হাত দরজায় রাখলো। যাহ! আমি তার জেলখানায় আটকা পড়লাম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here