আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১১,১২

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১১,১২
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১১

দরজা খুলতেই আমার মাথায় ঠাডা পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ কইরা দিয়া কাঁপতে লাগলাম। সাহেদা আচার নিতে নিতে বলল, কে রে?

– বিপদ সংকেত……

– কিসের?

আমি পালাইবার পথ খুঁজতেসি আর এদিকে আবার বেল বাজলো। পর পর দুইবার। যে বাইরে আছে তার ধৈর্য্য নাই। আমি কই যামু! সাহেদা আচার মুখে নিয়ে চাবাইতে চাবাইতে দরজার দিকে গেল। আমি সোফার পেছনে লুকাইলাম। সাহেদা দরজা খুলল।

– ম্যাম কেমন আছেন?

– আরে পর্ষী যে। কেমন আছো?

– ভালো। ম্যাম, আম্মু কোথায়?

– আম্মু!? ও ছোঁয়ার কথা বলছো? আছে তো।

আমি মনে মনে কইলাম, সাহেদা, তুই আমারে ডুবাইলি! যদি বিলাই হইতাম জানালা দিয়া লাফ দিয়ে পালাই যাইতাম। কিন্তু মনুষ্য হইয়া এখন সোফার পেছনে লুকাইয়াও শান্তি নাই।

পর্ষী ভেতরে আইসা বলল, আম্মু… ও আম্মু… আমি জানি তুমি লুকিয়ে আছো। তুমি যদি বের না হও তাহলে কিন্তু আমি ফ্রিজের গাজর সব খেয়ে নেবো। বইলাই সে ফ্রিজের দিকে রওনা দিল। আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, এই মাইয়ার তো দেখি আমার সাথে আমার লালু মিয়ার দিকেও চোখ পড়সে। আমার লালু……

পর্ষী ফ্রিজ খুইলা মাত্র হাত বাড়াইলো, আমি ইন্দুরের মতো সোফার পিছন থেকে বাইর হইলাম। সে টের পাইতেই দৌঁড়ে আইসা কইলো, আম……মু………। এমন ভাবে ঝাপাই পড়ল আরেকটু হইলেই পইড়া হাত ঠ্যাং ভাঙতাম। আমি তখন গাজরের চিন্তা কইরা কাঁদতেসি আর মনে মনে বলতেসি, গাজর তুমি কোথায়? তোমার বউরে কিডন্যাপ কইরা নিয়া যাইতেসে। তুমি কিসু করো।

ঝিলিক নীরব দর্শকের মতো টিভি ফালাইয়া হা কইরা কান্ড দেখতেসে আর আচার খাইতেসে। তারপর হঠাৎ কি বুঝতে পাইরা “খালা” কইয়া হাঁক মারলো। গেল গা আম্মার কাছে। আমি তো শ্যাষ। আম্মুরে কি কমু!? আমি নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়া সাহেদার দিকে সজল নয়নে হাজার আকুতি মিনতি কইরা তাকাইলাম। সাহেদা দুই হাত দুই পাশে নিয়া উল্টাইলো। সে কিসু জানে না। কি এক বান্ধবী জুটাইলাম সে দরকারের সময় কিসু জানে না। আল্লাহ, এক ঢোক গাজরের হালুয়া দাও, খেয়ে অদৃশ্য হই।

আমি সোফায় বইসা টিভি দেখতেসি। টিভিতে শাবানার বর তারে ছাইড়া চইলা গেসে তাই সে কানতেসে। আমারও কান্দন আইলো। তবে শাবানার দুঃখে না। গাজররে হারাইবার দুঃখে।

(দশ মিনিট আগে)
আম্মার প্রত্যাবর্তন হইল বসার ঘরে। ঘুম ভেঙে আনায় চোখ ঢলতে ঢলতে বলল, এটা কে? পর্ষী দৌঁড়ে গিয়া জড়াই ধরে বলল, আসসালামু আলাইকুম, নানুমনি… আম্মুর সাথে আমিও চমকাই উঠলাম। নানুমনি! আম্মু ওর মাথায় হাত বুলাই দিয়ে বলল, দেখ, দেখে শেখ। কতটুকু মেয়ে কত সুন্দর সালাম দেয়। তোমার নাম কি মামুনি?

– পর্ষী।

– কোথায় থাকো?

– পাশের বাসায়।

আমার মাথায় দ্বিতীয় বার ঠাডা পড়ল। এ মেয়ে পাশের বাসায় থাকে!? তাইলে তো আমারে রজীনার মতো বনবাসে যাইতে হবে। নইলে আম্মু আম্মু কইয়া এ আমার জীবন ছিঁড়া ত্যানার থেকেও খারাপ কইরা ফেলবো। এক পাশে গাজর আরেক পাশে আম্মুপাগল। আমি কই যামু! কি মুসিবতে পড়লাম!

আম্মু পর্ষীকে নিয়ে সোফায় বসে বলল, তুমি আমাকে নানুমনি ডাকলে যে মামুনি? পর্ষী চোখে পানি আইনা কইলো, আমার নানাভাই নানুমনি নাই। আমার জন্মের আগেই মারা গেসে। আম্মুর কাছে শুনসিলাম তারা অনেক ভালো ছিল। তোমাকে দেখলে নানুমনির কথা মনে পড়ে। আমি তোমাকে নানুমনি ডাকি? আম্মা মধুর হাসি দিয়া কইলো, আচ্ছা। আমি মনে মনে কইলাম, এটা তুমি কি করলা আম্মা!? আমার কল্পনার সংসারে তুমি এভাবে জল ঢাইলা দিলা? এখন যদি আমার এই মেয়ের বাপের লগে বিয়া দি দেয় আমার গাজরের কি হইবো! সে আমারে হারাইবো। ভাইবা আমি নাক টানলাম।

আমি সোফায় বইসা কানতেসি আর তাগো সিনেমা দেখতেসি। আম্মা আর পর্ষী দুষ্টামি করতেসে। আম্মা জিজ্ঞেস করল, তুমি কার সাথে থাকো?

– খালামনি আর খালুর সাথে।

– তোমার আব্বু আম্মু?

সে ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল দিয়া কইল, বলা যাবে না, সিক্রেট। আম্মাও মজা কইরা বলল, তাই? আমি মনে মনে কইলাম, এ্যাঁহ ঢঙের সিক্রেট। আমারে কোনদিক দিয়া ফাসাই দেয় আল্লাহ জানে।

– তা মামুনি কি খাবে বলতো?

– আমার খুব গাজর খেতে ভালো লাগে।

– ছোঁয়া, যা তো ওকে একটা গাজর ধুয়ে দে।

আমি ঝিলিকের দিকে তাকাইলাম, সে মনোযোগ দিয়া আচার চুষতেসে। সাহেদার দিকে তাকাইলাম, সেও আচার খাইতে খাইতে সিনেমা দেখতেসে। আমারেই আমার লালু মিয়ারে অন্য কারো হাতে দিতে যাইতে হইবো? অনেক কষ্টে ফ্রিজের সামনে গেলাম। আমার কলিজার ধন লালু মিয়া…… । যেই ফ্রিজের দরজা খুলমু পিছন থেকে পর্ষী কইলো, খুলে লাভ নাই, ফ্রিজে গাজর নাই। শুইনাই আমি দ্রুত ফ্রিজ খুইলা চেক করলাম। হায় হায়! আমার লালু মিয়া নাই! আমারে বোকা বানাইলো ঐ সময়! আমি লালু মিয়ারে বাঁচাইতে নিজেরে উৎসর্গ করলাম আর লালু মিয়াই নাই!? পর্ষী কইলো, নানুমনি আমি আজ আসি। আরেকদিন এসে গাজর খাবো। আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আর আসা লাগবে না। আমার লালু মিয়ার দিকে নজর দেয়। আম্মু হেসে বলল, আচ্ছা এসো। সে দৌঁড় দিয়া আমার কাছে আইসা ইশারায় নিচে ডাকল। আমি বসতেই কানের কাছে আইসা ফিসফিস কইরা কইলো, আমি কিন্তু আবার আসবো। যদি আবার লুকাও তবে পরেরবার আমার সাথে নিয়ে যাবো। তখন আর লুকাতে পারবা না। বলেই বের হইয়া গেল। আমি মনে কইলাম, কি ডেন্জারাস মাইয়্যা! আমার আম্মারে পটাইয়া চইলা গেল!
.
.
.
.
আজকে সকালে ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি বের হইলাম। সাহেদা নাকি আজকে যাবে না। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে অনেক ইরিগুলার হই গেসে মাইয়্যাটা। সারাদিন ফোন টিপে আর কি জানি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে। আগে কইতো কাঠখোট্টা, একদিনেই এখন পিরিত উপচাই পড়তেসে। আমিই স্লো মোশন হই আছি। এত দিন হইলো এখনো গাজররে পটাইতেই পারলাম না। মনের দুঃখের কথা ভাবতে ভাবতে হাঁটতেসি, গেটের কাছে যাওয়ার আগেই কে যেন পেছন থেকে জড়াই ধরল। আমি তাকাইতেই বলল, কেমন আছো আম্মু? আহারে! সকাল হইতে না হইতে কোথায় থেকে আমদানি হইসে।

– আমি বলেছি না আমি তোমার আম্মু না।

– তুমিই আমার আম্মু। শোনো পরশু আমার জন্মদিন। তুমি কিন্তু আমার জন্মদিনের কেক বানাই দিবা।

– আমার কাজ আছে।

– আমি কোনো কথা শুনবো না। তুমি বানাবা। বুঝছো আম…

আমি মুখ চাইপা ধরলাম; আমার গাজর আসতেসে। সে যদি দেখে একটা টিডি ফোক আমারে আম্মু আম্মু কইয়া চেঁচাইতেসে তাহলে আমারে আর বিয়া করবে না। গাজর যাওয়ার সময় এক পলক আমাদের দিকে তাকাইলো। আমার তখন হার্ট ব্লাস্ট হওয়ার মতো অবস্থা। গাজর…

সে গেটের বাইরে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিচ্ছে। আমি তার দিকে মুগ্ধ হইয়া তাকাই রইলাম। একটা ক্রিম কালারের শার্ট পরসে। কি যে সুন্দর লাগতেসে! যদি পারতাম কিডন্যাপ কইরা নিয়া আসতাম। ভাবনার মাঝে হাত ঢিলা হইতে পর্ষী সরাইয়া কইল, আমি কিন্তু বলে দিবো তুমি ঐ আঙ্কেলকে পছন্দ করো। শুইনা আবার চাইপা ধরলাম ওর মুখ। গাজর শুনলে আবার কোন মাইনকা চিপায় পড়ি। গাজর যাইতেই হাত সরাইয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যে মাইয়া, মুখ ফসকে কি যে বলে ফেলে।

– শুনো আম্মু, তুমি যদি কেক না বানাও তাহলে আমি ঐ আঙ্কেলকে বলে দিবো।

– ইহ্, এখনো নাক টিপলে দুধ বের হয় আসছে ব্ল্যাকমেইল করতে।

– নাক টিপলে হিন বের হয়, হিন। আম্মু, তুমি যে কি বলো না? দুধ বের হইলে তো মানুষের আর গরু লাগতো না।

– হইসে থাক। পন্ডিত। যাও বাসায় গিয়ে খেলা করো।

– আম্মু তুমি কি দেখো নাই আমি স্কুল ড্রেস পরে আছি।

– তাহলে স্কুলে যাও।

– ওকে আম্মু। বাই আম্মু, লাভ ইউ আম্মু। আবার দেখা হবে।

মাইয়্যা চইলা যাইতে বড় এক খান ঝামেলা গেল। যদিও বিরক্ত হই কিন্তু তাও মেয়েটার প্রত্যেক কথায় আম্মু ডাকটা শুনলে ভেতরটা ঠান্ডা হইয়া যায়৷ কি যে কিউট লাগে আম্মু ডাকলে! এমন মেয়ের আম্মু হইলে… এই না না কি বলতেসি। আমার এখন গাজর জামাই আছে অতএব এসব বলা নিষিদ্ধ। আমি আসতেসি গাজর জামাই। বইলা ভার্সিটি রওনা দিলাম।

আমাদের কোর্স কোঅরডিনেটর হচ্ছে রাবেয়া ম্যাম। প্রথমেই তার ক্লাস। আজকে সবাই ম্যামকে বলল তারা বনভোজনে যেতে চায়। একবছরে কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই এখন পরীক্ষার আগে একবার ঘুরে আসতে চায় কোথাও। এতে মনও ফ্রেশ থাকবে যদি এরপর পরীক্ষার প্রেশার পড়বে। তাও সেটা সামলে নেবে৷ ম্যাম বললেন তিনি দেখবেন কি করা যায়।

– উফ! আজকের ক্লাসগুলা। সবকিছুর মধ্যে খালি বনভোজনের আলোচনাটা ভাল্লাগসে।

ভার্সিটি থেকে বের হইয়া হাঁটা দিলাম। আজকে গাজরের ক্লাস ছিল না। ভুইলা গেসিলাম। নাইলে আমিও আসতাম না। সাহেদাটার লগে একটু গপ মারতাম ওর বাসায় যাইয়া। আজকে গিয়া শুরুতেই ওর লগে বনভোজনের প্ল্যান করতে হইবো। সবাই বলতেসিলো বাইরে কোথাও যাবে। কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান করতেসে সবাই। মোটামুটি দুইদিনের প্ল্যান বোধ হয়। আহ! আমি আর গাজর যদি একলা যাইতে পারতাম! সাগর পাড়ে হাত ধইরা হাঁটতাম। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। উফ! ভাইবা আমার কি যে সরম লাগতেসে। আরে!?

আজকে সিএনজিতে না উইঠা কি ভাইবা হাঁটা দিসিলাম। ভার্সিটি থেকে কিছুদূরে একটা অনেক বড় রেস্টুরেন্ট পড়ে। যে দাম খাবারের। সেখানে সাহেদারে দেখলাম মনে হইলো। একটা লোক ওর সামনে বসা। কে হইতে পারে? ভালো কইরা তাকাইতেই দেখলাম আয়ান স্যার! হ্যাঁ!? ডেইটে আসছে নাকি! আমি চুপি চুপি ঢুইকা এক কোণায় ঘাপটি মাইরা বসলাম। জিভ কেটে মনে মনে কইলাম, হে হে…… ডেইটে গোয়েন্দাগিরির মজাই আলাদা।

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_১২

আমি চুপি চুপি ঢুইকা এক কোণায় ঘাপটি মাইরা বসলাম। জিভ কেটে মনে মনে কইলাম, হে হে…… ডেইটে গোয়েন্দাগিরির মজাই আলাদা।

– কি খাবে বলো।

– আপনার যা ইচ্ছে, স্যার।

– বিয়ের পরও কি স্যার ডাকবে?

সাহেদা একটু হাসলো। আয়ান ওর পছন্দ মতো দু কাপ কফি অর্ডার করলো। অর্ডার শেষ কইরা বললো, ফ্যামিলি আর পরিবারের একটা সমস্যার জন্য আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। না হলে আপাতত বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। সাহেদা কিছু বলল না। আয়ান হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ছোঁয়ার সাথে তোমার পরিচয় ক’দিনের?

– হঠাৎ এ প্রশ্ন?

ওয়েটার ওদের কফি দিয়া গেল। আমিও ভাবলাম করতেসো ডেইট আমারে নিয়া টানাটানি করো ক্যা? আয়ান কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, সাহেদা, তুমি জানো আশা করি কারণ ছাড়া আমি কোনো প্রশ্ন করি না। সাহেদা কফির কাপটা নাড়াচাড়া করে বলল, ওর সাথে প্রায় একবছরের মতো পরিচয়। শুনেছিলাম ওর একটা অনেক বড়ো এক্সিডেন্ট হয়েছিল যার জন্য ওর মেমোরি লস হয়। আন্টির বিশেষ রিকুয়েষ্টে আমাদের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয় ছোঁয়া। তারপর থেকেই আমরা একসাথে।

– ওর বাবা মা এক্সিডেন্টের আগের কিছু বলেনি?

– তেমন কিছু শুনিনি কখনো। প্রয়োজন হয়নি তাই জিজ্ঞেসও করিনি কখনো।

– আমি আজ তোমাকে কিছু কথা বলব। আশা করি তুমি সাহায্য করবে।

– কি কথা?

ওয়েটার এসে ওদের থেকে বিল নিয়া গেল। আমি মনোযোগী ছাত্রীর মতো কান খাঁড়া করসিলাম কিন্তু সেই সময়টাতেই ওয়েটাররে আমার কাছে আসতে হইলো। এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাম অর্ডার? আমি মনে মনে কইলাম, টেকা নাই খানা কিনার, বিনা পয়সার পানি থাকলে দাও।

– আমি কিছু অর্ডার করবো না। একজন আসার আছে সে আসলে অর্ডার করবো।

– ওকে ম্যাম।

আমি আবার কান পাতলাম। আয়ান টেবিল থেকে উঠে কইলো, চলো। সাহেদা বলল, কোথায়?

– গোলাপ গ্রাম। সেখানেই বাকি কথা বলব।

ওররেহ! কি প্রেম, আহা! কিন্তু কি এমন গোপন কথা যে এখানে বলা যায় না? ওরা বাইরে রওনা দিল। আমিও পিছু নিলাম। কিন্তু শোকের কতা হইলো আমার তো যাওয়া সম্ভব না। মুই ফকির প্রো ম্যাক্স হয়ে আছি। আছে খালি সি এন জি ভাড়া। সেটা দিয়াও গোলাপ গ্রাম যাওয়া যাইবো না। আমি অতি দুঃখে কয়েকবার নাক টানলাম। ওরা ডেটিং করতে চইলা গেল। আমি হতাশ হইয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। আর গোয়েন্দাগিরি হইলো না।
.
.
.
.
ভালো কইরা ফ্রেশ হইয়া নিলাম। সুন্দর কইরা একটু সাজুগুজু করলাম। তারপর গাজরের ঘরের দিকে পা বাড়াইলাম। কলিংবেল টিপে খাম্বার মতো খাড়াই আছি৷ দুই মিনিট পর দরজা খুলতেই কইলাম, আ……ন…টি!? একটা পিচ্চি শাঁকচুন্নি খাঁড়াই আছে। কখন যে ঘাড়ে চাইপা বসে। কইতে না কইতেই আমার উপর ঝাঁপাই পরে কইলো, আম্মু……। কেউ আমারে এই শাঁকচুন্নি থেকে বাঁচার উপায় বইলা দাও।

– তুমি এখানে ক্যান?

– দাদুমনির কাছে আসছি।

– দাদুমনি!?

– তুমি যদি আঙ্কেলকে বিয়ে করো তাহলে তো আঙ্কেলের আম্মু আমার দাদুমনিই…

আমি মুখ চাইপা ধরলাম। আশে পাশে তাকাই দেখলাম কেউ আছে কি না। নাই দেইখা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কইলা, বেশি পাকসো, না?

– হ্যাঁ আম্মু। দেখো আমার গাল টিপলে কত নরম। পাকা জিনিস তো নরমই হয়। তাই না আম্মু?

– হ, পাকনা বুড়ি। আমারে এত আম্মু আম্মু করবা না।

– আম্মুকে আম্মু ডাকবো না তো কি ডাকবো? মম?

– মা বাদে অন্য কিছু।

– আচ্ছা।

– আন্টি কই?

– রান্নাঘরে।

– কি করে?

– আমার জন্য চালকুমড়ার মিষ্টি বানাচ্ছে।

ভেতর থেকে আন্টি জিগাইলো, কে রে পর্ষী? সে উত্তর দিলো, গাজরের হালুয়া আসছে। আমি তারে কইলাম, এই গাজরের হালুয়া কে?

– কেন, তুমি।

– আমারে কোনদিক দিয়ে গাজরের হালুয়ার মতো লাগে?

– তুমিই তো বলসো মা বাদে অন্য কিছু ডাকতে।

– তাই বলে…

– ওহহো, এত কথা কিসের গাজরের হালুয়া। চলো তো ভেতরে।

সে আমার হাত টাইনা নিয়া গেল। আন্টি দেখলাম দুধ জ্বাল দিচ্ছে। আমারে দেখে কইলেন, আরে ছোঁয়া যে। কেমন আছো আম্মু? আমি মিষ্টি কইরা হেসে কইলাম, জ্বি ভালো। কি বানাচ্ছেন?

– চালকুমড়া দিয়ে মিষ্টি বানাচ্ছি।

– সেটা কিভাবে বানায়?

– তোমাকে তো খাওয়াইনি আগে। প্রথমে চালকুমড়ার চামড়া ছিলে কেটে নেবে। তারপর মাঝের অংশ যেখানে বীজ থাকে সেই অংশটা কেটে সরিয়ে ফেলবে। এরপর মোটামুটি বড়ো বর্গাকার সাইজে টুকরো করে নেবে। টুকরোগুলোকে ছিদ্র করে হালকা লবণ পানিতে সিদ্ধ করে একটা ঝাঝরিতে অনেকক্ষণ রেখে পানিটা ফেলে দেবে। এবার একটা পাতিলে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে দুধ, চিনি, দারচিনি, এলাচ নিয়ে চুলায় দেবে। দুধটা ফুটে এলে কুমড়ার টুকরোগুলো দিয়ে দেবে। পরবর্তীতে নারিকেল কুচি ব্ল্যান্ড করে দেবে। হয়ে গেল চালকুমড়ার মিষ্টি।

আন্টির বর্ণনা শুনে আমি চালকুমড়ার মতো একটা হাসি দিয়ে কইলাম, আপনাকে একদিন বানিয়ে খাওয়াবো। আন্টিও হেসে সায় দিলেন। পিছন থেকে শাঁকচুন্নিটা কইলো, আমার কেক কখন বানাইবা, গাজরের হালুয়া?

ধুর, কি এক গাজরের হালুয়া, গাজরের হালুয়া কইরা আন্টির সামনে আমার মান সম্মান হালুয়া করে দিতেসে। সে আবার কইলো, মনে আছে তো আজকে সকালে কি বলসি? যদি কেক না বানাইসো তাহলে কিন্তু বলে দিবো তুমি……। আমি মুখ চাইপা ধরলাম। আন্টি আমাদের দিকে তাকাইলো। আমি চিনা হাসি দিয়া ওর মুখ চাইপা ধরে রান্নাঘর থেকে বের হই আসলাম। দিসিলো আরেকটু হইলে সব ফাঁস করে।

বাসায় বিছানার কিনারায় ঠ্যাং ঝুলাই লালুমিয়ার কল্লা চাবাইতেসি। বসার রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসতেসে। গাজরের বাসা ছাড়ি পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা আমাদের বাসায় আইসা ভর করসে। আম্মারে চোখের পলকে পটাই ফেলসে গতকালকে। আজকেও মাত্র ডিউটি থেকে আসছে আম্মা৷ ফ্রেশ হয়েই পাকনা বুড়ির জন্য নুডলস বানাইসে। এখন বসার রুমে বইসা গপ মারতেসে। ফাঁকে আমার লাভ হইসে, আমার জন্য এক থইলা লালু আনসে ঐ পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা। এখন বিছানায় বইসা বইসা লালুমিয়া খাইতেসি আর চিন্তা করতেসি কি করা যায়।

একটু পরে পর্ষী এসে কইলো, গাজরের হালুয়া, আমি আসি। কাল জন্মদিন হইলে অনেক পড়া জমে যাবে। তুমি কিন্তু মনে করে কেক বানাই আনবা। আমি কিন্তু গাজর দিসি তোমারে। আমি ভ্রূ কুঁচকায় কইলাম, এগুলা কি ঘুষ নাকি? সে বিজ্ঞের মতো কইলো, ছিঃ গাজরের হালুয়া, ঘুষ খারাপ জিনিস, জানো না? এগুলা তোমার পারিশ্রমিক। অগ্রিম দিলাম। আরো এক কেজি পরে দিমু। যদি না বানাও তাইলে কিন্তু তোমার গাজর নিয়া যামু। আমি ভেটকি মাছের মতো তার দিকে তাকাই রইলাম। এই টেমা কি কয়?

– আমি আঙ্কেলরেও ইনভাইট করসি। যদি দেখি কেক ভালো হয় নাই তাইলে আঙ্কেলরে কমু, দেখসো আব্বু, আম্মু কেক বানাইতে পারে না।

বইলাই দৌঁড় দিয়া চইলা গেল। পটকা মরিচ একটা। এক মিনিট! সে গাজররে আব্বু ডাকবো ক্যান? ধুর মাথায় সবটা প্যাঁচাইতেসে হেড ফোনের মতো। সাত নাম্বার গাজরে কামড় দিয়া কইলাম, ভাল্লাগে না।
.
.
.
.
ঘুমের মধ্যেই কানের কাছে হঠাৎ ঢুস ঢুস কইরা এলার্ম বাজতে লাগল। শুইনাই নিজের কপালে নিজে বাড়ি মারতে মন চাইলো। কি কুক্ষণে এই এলার্ম টোনটা সেট করসিলাম। এই কথা অবশ্য প্রতি দিনই ভাবি কিন্তু টোনটা চেঞ্জ করা হয়ে ওঠে না। আসলে ইচ্ছে কইরাই করি না। আমি যে নাকে তেল দিয়া ঘুমাই, বাসায় আগুন লাগলেও আমার ঘুম ভাঙবো না। কিন্তু কথা হইলো আজকে তো শুক্রবার। এলার্ম সেট করতে এতো বড় ভুল কেমনে করলাম! কোনোমতে হাতড়ে হাতড়ে ঢোল পিটা বন্ধ করলাম। তারপর আরাম করে হাসিমুখে ঘুম দিতেই পাঁচ মিনিটে আবার ঢোল পিটা শুরু। আল্লাহ গো… আজকে মোবাইলের কি হইসে। এলার্মটা বন্ধ হয় নাই ক্যান। বন্ধ করে চোখ লাগাইতে না লাগাইতেই ফের ঢোল পিটা। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলাম, তোর কি হইসে বাপ কইবি আমারে। ভালো কইরা পিট পিট করে তাকাই এলার্মটা বন্ধ করে যেই না চোখটা বন্ধ করসি কোত্থেকে ঝিলিক শাঁকচুন্নিটার আবির্ভাব হইলো। এসেই বলল, ছোঁয়াপু, উঠো উঠো। কয়টা বাজে। তোমার না কি কাজ আছে। আমি এখন কোনো কাজের কথা শোনার অবস্থায় নাই। আমি শুধু একটু ঘুমাইতে চাই। কিন্তু বেকুবটা আমার মনের কথা বুঝলো তো না আরো ঘাড়ে চেপে বইসা কইলো, উঠো, তাড়াতাড়ি। উঠো না। আমি কোনোমতে এক চোখ খুলে কইলাম, এখন কিছু শুনতে পারমু না। ঘুমামু।

– দশটা বাজে।

– বাজুক, আজকে আমি সারাদিন ঘুমামু।

– কাল যে বললা সুনামি হইলেও নাকি কেক বানাই ছাড়বা। আমি যেন তাড়াতাড়ি ডেকে দেই।

শুইনা আমার চোখের ঘুমরে গাট্টি গোট্টা বান্ধি মামার বাড়ি পাঠাই দিলাম। কেকটা যদি না বানাই তাইলে ঐ পিচ্চি ধাইন্না মরিচ আমার মান সম্মানরে কেক বানাই খাইবো। আমি ঝিলিকরে কইলাম, দশটা বেজে গেছে। আগে কইবি না?

– কতবার ডাকসি। তুমিই তো আমারে ঘুমের মধ্যে খেদাই দিসো।

– হইসে। বুঝছি।

আমি ফ্রেশ হইয়া আইসা রান্নাঘরে ঢুকলাম। আজকে ঐ মাইয়ার কেকের চক্করে আমার আরামের ঘুমটা গেল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here