আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️,সিজন_২,পর্ব_৫,৬

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️,সিজন_২,পর্ব_৫,৬
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_৫

ওরে নিয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। পর্ষী বাচ্চাটার জন্য মন খারাপ লাগল। কিন্তু আমি আর কি করমু!?
.
.
.
.
কখন থেকে পার্কে বইসা আছি। বেকুবটা আসার নামই নাই। এদিকে ভার্সিটিতে লেট হয়ে যাইতেসে। অস্থিরতায় পা দুইটা তখন থেকে কাঁপতে কাঁপতে একটা আরেকটার সাথে ঠোকর খাইতেসে। ধুর বাপু, মাঝে মধ্যে এই সাহেদাটা এত লেট করায়! আজকে বিকালে ক্লাস, তাও লেট। কি দরকার আছিলো এত তাড়াতাড়ি বের হওয়ার। বাসা থেকে আরাম কইরা চারটা খেয়ে যাই ক্লাসটা করতাম। মাইয়াটা তাও করতে দিল না। কি এক দরকার, বের কইরা আনল সক্কাল সক্কাল। এখন কোন দিকে হাওয়া হইসে আল্লাহ মালুম। আজকে স্যারের ঠাট্টা কইরা দেওয়া লেট লতিফা নামটা শুনলে বাসায় গিয়া ওর ঘাড় মটকামু। ডানে বায়ে সমান তালে তাকাইতে তাকাইতে খুদা লাইগা গেল। ঘড়ির দিকে তাকাই দেখলাম সোয়া একটা। দুইটায় ক্লাস। যাইতে আধাঘন্টা, জ্যামের চক্করে পড়লে পুরা এক ঘন্টা। আজকে আমার কপালে খানা নাই। ক্লাসে পেটটা ষাঁড়ের মতো ডাকলে কিছু করার নাই। সাহেদাটা আমার প্রেস্টিজ রাখবো না।

– তুই আছিস!!!!!

– তো কই যামু? কোত্থেকে আসলি? এত হাঁপাছিস কেন? কোনোখানে চুরি করতে গেসিলি নাকি পুলিশ তাড়া করসে? না কুকুর ……

– হইসে আর আজাইরা বকিস না।

– তা তো বকতেসি। কয়টা বাজে?

– পানি আছে? দে তো।

পানির বোতল দিতেই ঢক ঢক করে পুরোটা শেষ কইরা ফেলল। আমার শেষ সম্বল! আমার পানি! আমি অসহায়ের মতো খালি বোতলটার দিকে তাকাই থেকে কইলাম, এক ফোঁটাও রাখলি না!?

– ছিলই বা কতটুকু? ঐ তো তলানি।

– খুদা লাগসে। আমি তোরে পানি দিসি, তুই খাওন দে।

ও আমারে একটা এলপেনলিবেন ধরাই দিয়ে কইল, এটা খা।

– এটা কি!?

– খাওন। তোর ফেবারেট। চল লেট হইতেসে।

আমি ভ্রূ কুঁচকাই ওর দিকে তাকাইলাম। ও কইলো, খাবি না? তাহলে ফেরত দে।

– না থাক। এতক্ষণ বসে থাকতে থাকতে আমার ব্রেইনের কাজ কমি গেসে। একটু চিনি পড়ুক।

– হুহ, চল চল।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা ওর সাথে সিএনজি উঠলাম। প্যাকেট খুলে চকলেটটা মুখে দিয়ে বাইরে তাকালাম। কিছুদূর গিয়া জ্যামে পড়তেই মনে পড়ল আজকে নতুন টিচার আসার কথা ক্লাসে। প্রথম দিনই কালার হই যামু। সাহেদারে, তুই আমার মান ইজ্জত রাখলি না। মনে হইতেসে আজকে কপাল খারাপ।

– এই টপিক সম্পর্কে তোমাদের আর কোনো প্রশ্ন আছে?

– আসতে পারি?

যেটা ভাবছি সেটাই হইসে। এখন দুইটা বিশ বাজে। সিড়ি বেয়ে পাঁচতলা উঠে অলরেডি হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসতেসে। পেটে দানা পানিও নাই। আমার সাথে পেটে থাকা ইন্দুর বিলাই গুলাও মনে হয় এত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে লাফাইতেও পারতেসে না। স্যার পেছন ফিইরা ছিল। আমাদের দিকে তাকিয়ে পুরা স্ক্যান কইরা নিয়া আমার দিকে তাকাইয়া নির্লিপ্ত কণ্ঠে কইল, তোমরা?সাহেদা কইল, আমরা ক্লাস করতে এসেছি স্যার।

– কটা বাজে?

আমরা বেকুবের মতো হাসলাম। স্যার বললেন, আজকে প্রথম দিন তাই ছেড়ে দিলাম। যাও বসো। আমরা চুপচাপ গিয়া চেয়ারে বসলাম। পেছন থেকে গুঁতা দিয়া সাহেদারে কইলাম, এই স্যারটা কি হ্যান্ডসাম, তাই না রে? সাহেদা চাপা কন্ঠে কইল, ওই চুপ করবি?

ক্লাস শেষ করার পর ফাইরুজরে জিগাইলাম, ফাইরু স্যারটার নাম কি রে?

– আয়ান স্যার।

নাম শুইনা সাহেদারে ফিসফিস করে কইলাম, তোর আয়ান স্যাররে পছন্দ হইসে? ও খাতা উল্টাইতে উল্টাইতে কইলো, সেটা আবার কোন স্যার? আমি মুখ সুঁচালো করে কইলাম, একটু আগে যে ক্লাস নিসে। সাহেদা খাতা ব্যাগে ঢুকাই কইলো, এই কাঠখোট্টা স্যাররে কে পছন্দ করবে? ওর কথা শুইনা আমি মুখ চেপে হাসতেসি আর মনে মনে কইতেসি, তোর জন্যই স্যার একদম পার্ফেক্ট। হঠাৎ বাইরে নজর পড়তেই একজন লোককে দেখলাম। কাকে যেন খুঁজতেসে। লোকটাকে বেশ চেনা চেনা লাগলো। চোখের আড়াল হতেই দ্রুত বাইর হইয়া এদিক ওদিক খু্জতে লাগলাম। খুঁজে তো পাইলাম না তবে একটা জিনিস বুঝলাম। দিন দিন লম্বা ঠ্যাংওয়ালা পোলার সংখ্যা বাড়তেসে। তাই চোখের পলকে হাওয়া হই যায় সব।

রাত সাড়ে সাতটার দিকে দরজায় নক পড়লো। খুইলা দেখি সাহেদা। ভেতরে ঢুইকা কইল, তোর জন্য একটা সুখবর আছে। তোর ক্রাশের খবর আনসি। আমি তো খুশিতে মঙ্গল গ্রহে যাইতে মন চাইল। আমি ওরে রুমে নিয়া আমার হীরার দাঁত দেখাইয়া বসলাম।

– বল বল, কি খবর?

– তুই যদি রাজি থাকিস তো সতীন সহ একটা বাচ্চার সাথে আরেকটা ফ্রি।

ওর কথা শুইনা আমার হীরার দাঁত গুলা আবার গুহায় ঢুকাইয়া ফেললাম। এ আমি কি শুনতেসি! হৃদপিণ্ডটা কয়েক টুকরা হইয়া কাঁনতসে। আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, এসব কি কইলা বান্ধবী? সাহেদা ঝিলিকরে ডেকে কইল, ঝিল, আমারে একটা প্লেটে কইরা আচার দে তো। ঝিলিক আচার আনতে গেল, আমি সাহেদারে জিগাইলাম, এ খবর কেমনে পাইলি?

– ভার্সিটি থেকে আসার পর আম্মার সাথে আবার বের হইসিলাম। তখনই একটা মার্কেটের সামনে তোর ক্রাশরে দেখলাম। দেখলাম গাড়ি থেকে এক দম্পতি বের হইলো। সে সাথে তোর ক্রাশ। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলাম। বলল, সাবিত। জিগাইলাম, আপনি গাড়ি চালান। বলল, জ্বি। বললাম, বাসায় কে কে আছে? বলল, বুড়া মা, বউ আর দুইটা বাচ্চা।

বউ আর বাচ্চা শব্দ দুইটা তীরের মতো আমার নরম মনে ঢুইকা গেল। আমি ফ্যাত ফ্যাত করতে লাগলাম। এতদিনে সব ফালাইয়া যাও একটা পোলার উপর ক্রাশ খাইলাম হেটাও নাকি দুই বাচ্চার বাপ। ঝিলিক আসতেই আমি ভালা মাইয়ার মতো বইসা রইলাম। হে জানলে আবার আব্বা আম্মারে কইবো। ঝিলিক যাইতেই মরা কান্না শুরু করলাম। সাহেদা পিঠে একটা কিল দিয়া কইল, চুপ কর। হুদা কাঁনদিস কা?

– আমার ক্রাশ, এ্যাঁ এ্যাঁ……

– তোর ক্রাশের গুল্লি মারি। তুই জানিস লোকটা সিগারেট খায়? আমার সামনে খাইতেসিলো।

শুইনাই আমার মুখ বাঁকা হইয়া গেল। আসলেই খচ্চর ব্যাডা। দুনিয়ায় আমার কাছে যত মানুষরে খচ্চর লাগে তার মধ্যে সিগারেট খাওয়া মানুষগুলারে বেশি লাগে। সিগারেট কস্মিনকালেও আমার সহ্য হয় না। আমি চোখ মুইছা কইলাম, ধুর, শালা জীবনে আর ক্রাশই খামু না। এখন আচার দে খাই। আচারের প্লেটে একটা খাবলা দিলাম।
.
.
.
.
যাহ! আমার ক্রাশ জীবন শুরু হইতেই শ্যাষ হইয়া গেল! আমার চেরি বর করলা বর হই গেল। ইচ্ছা করতেসে ঐ ব্যাডারে পিডি আমি কান্দি। যাহোক ভুইলা যামু নে, ক্রাশই তো। বর তো আর না। বর হইলে তো হাত ঠ্যাং ভাইঙা খাটে বইসাই রাইখা কইতাম, আর সিগারেট খাইবি?এগুলা ভাবতেসি আর কিড়মিড় করতেসি। ভাবনা শেষ হইতেই মুখ থেকে ব্রাশটা বাইর কইরা দেখলাম তার রুহানি আত্মা বাইর হই গেসে আমার দাঁতের চাপে। ব্যাডা খচ্চরের জন্য আমার ব্রাশটাও গেল। তোর থেইকা আমি আমার ব্রাশের দাম নিয়া ছাড়মু।

আজকেও বিকালে ক্লাস। আব্বা ছুটিতে আছে। আম্মা সকাল সকাল হাসপাতালে গেসে গা। ঝিলিক কাপড় দিতে ছাদে গেসে। আমি আর আব্বা সকালের ভাত খাইতে বসছি। আব্বা আমার দিকে হা কইরা তাকাই আছে। আমি করলা দিয়া একের পর এক লোকমা গিলতেসি আর বিড় বিড় করতেসি। চোখের পলকে করলার পাতিল খালি। আমি খাওয়া শেষ কইরা তিতা ঢেঁকুর তুললাম। আব্বা আমার কপালে হাত দিয়া কইলো, জ্বর তো নাই। তাহলে!?

– কি হইসে আব্বু?

– তুই করলা খাইলি কেমনে?

– করলা! কই আমি তো ক র লা……

তাকাই দেখলাম আব্বা এখনো খালি প্লেটে বইসা আছে আর এদিকে করলার পাতিল খালি। ঐ খচ্চররে গালি দিতে দিতে কখন যে করলা সব খাই ফেলসি টের পাই নাই। আব্বারে কি কমু চিন্তা করতে করতে আব্বা কইলো, দাঁড়া তোর আম্মারে ফোন দি। আমি তাড়াতাড়ি কইলাম, না না আব্বু৷ আমি ভালো আছি। আজকের করলাটা খুব মজা হইসে তো তাই খাই ফেলসি। যদিও খেয়াল হইতে বমি আসতেসিলো। পারলে এখুনি বমি কইরা দিতাম। আব্বা কি ভাইবা বইসা পড়ল। আমি আব্বারে তরকারি দিয়া কইলাম, তুমি খাও, ঠিক আছে আব্বু। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বইলাই আমার সামনে থেকে সইরা আসলাম।

বাইর হইতেই ফোন আসলো একটা। অচেনা নাম্বার। ধরলাম। হ্যালো হ্যালো করলাম। কোনো কতা নাই। ওপাশে কোনো শব্দ নাই। মেজাজটা খারাপ হই গেলো। একে তো ক্রাশ দুঃখে কান্দন আসতেডে। তার উপর এসব ফাউ কল আইসা মেজাজটাই খারাপ হই গেসে। কতা কইবি না, যাহ কাইট্টা দিলাম। দুই পা যাইতেই আবার কল। ধইরাই কইলাম, কি সমস্যা? তাও কথা কয় না৷ ধুর, কাইটা ব্লক মাইরা দিলাম। সিএনজিতে বড় কইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সাহেদা জিগাইলো, এত বড়ো কইরা নিঃশ্বাস ফালাইলি? ক্রাশের কথা মনে পড়তেসে? শুইনাই মেজাজটা আরো খারাপ হই গেল। কইলাম, ক্রাশ আর কইস না। বিরক্ত লাগের। সাহেদা কইল, কি হইসে?

কিসু বলার আগেই ফোন বেজে উঠল। আবার অচেনা নাম্বার। আমার নাম্বার কি কেউ ফেসবুকে ছাইড়া দিসে নাকি? এত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ক্যান! ধরে কইলাম, হ্যালো? অপরপাশ থেকে একটা পোলা কন্ঠ কইল, ভালোবাসি।

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_৬

এত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ক্যান! ধরে কইলাম, হ্যালো? অপরপাশ থেকে একটা পোলা কন্ঠ কইল, ভালোবাসি। শুইনা মেজাজ আরো খারাপ করে কইলাম, আপনি কে? টুট টুট টুট… কাইটা দিল! আমি রাগে টমেটোর মতো ফুইলা আছি। সাহেদা আমারে জিগাইলো, কে ফোন দিসে?

– আজাইরা।

ভার্সিটি পৌঁছাইলাম একটার দিকে। চারদিকে চড়ুই পাখির মতো পোলাপাইন কিচির মিচির করতেসে। আমার এখন কুল হওয়ার জন্য একটা শান্ত পরিবেশ লাগবো। কিন্তু এমন জায়গা ভার্সিটিতে কই পামু? সাহেদা একটু ক্যান্টিনের দিকে যাইতেসে কি দরকারে। আমিও ওর পিছনে যাইতেসি। কিন্তু ভাবতে ভাবতে পিছাই পড়সিলাম। তখনই একটা পোলার লগে ধাক্কা খাইলাম। পোলার হাতে কি সব জানি ছিল৷ সব ছড়াই ছিটাই পড়ল। আমি সরি কইলাম। সে মাথা নিচু কইরা জিনিসগুলা তুলতেসে। আমিও সাহায্য করলাম। কাগজ দেইখা মনে হইলো ভর্তির কাগজ। নতুন মনে হয়। কাগজগুলা এগিয়ে দিতে মুখের দিকে তাকাইয়া টাসকি খাইলাম। কেমনে কি! এত বাচ্চা দেখতে পোলা হয়!? এরও গাল লাল টুকটুকে। রোদে আরো লাল দেখাচ্ছে। গুবলু গালে গোলগোল চশমা পরা। মুখে হালকা খোঁজা দাঁড়ি। মনে মনে কইলাম, লাল গালওয়ালা পোলার সংখ্যা কি বাড়সে নাকি!? নাকি আমার সামনেই খালি পড়ে!? আমি হা কইরা তাকাই আছি। পোলা মিষ্টি কইরা চোখ নামাইয়া থ্যাংকু কইল। উফ্, শুইনাই আমার কইলজা ঠান্ডা বরফ হই জমি গেসে। পোলাটা চইলা যাইতেই বরফটা একটু গললো। আমি নিজের দুই গালে চাইর চড় মাইরা কইলাম, না, ছোঁয়া, এ হয় না। আর ক্রাশ খাওন যাইবো না। জীবনেও না। কেউ সামনে ছুরি ধইরা ক্রাশ খাইতে কইলেও না। কিন্তু……

পরদিন শুক্রবার। খুব আরামের ঘুম দিতেসিলাম। কিন্তু কিসব ঢুসঢাস শব্দে ঘুমের চৌদ্দটা বাইজা গেল। ঘুম থেকে উইঠা চোখ ডলতে ডলতে আম্মুরে জিগাইলাম, আম্মু…… বাইরে এমন ঢুস ঢাস আওয়াজ হইতেসে ক্যান? আম্মু মাত্র হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরী হইতেসিলো। কইল, পাশের বাসায় ভাড়াটিয়া উঠতেসে।

– ও। তুমি কি হাসপাতালে চলে যাইতেসো?

– হুম।

আমি বারান্দা দিয়া উঁকি মারলাম কে উঠতেসে দেখার জন্য। কাউরে দেইখা বুঝলাম না কে উঠতেসে। আমরা যে বাসাটায় থাকি সেখানে এক ফ্লোরে চাইরটা ফ্ল্যাট। আমাদের সামনের ফ্ল্যাটই মনে হয় খালি হইসে। সেখানেই মনে হয় কারা উঠতেসে। কতক্ষণ পরে আম্মা ভেতর থেকে ডাক দিলো। আমি যাইতেই কইল, তোর আব্বু একটু বের হইসে। আমি কইলাম, এত্ত সকালে কই গেসে? আম্মা ব্যাগ নিতে নিতে কইল, সাড়ে দশটা বাজে।

– ঐ হইল। এটা আমার জন্য ভোর।

– শুন, কাপড় চোপড় তো সব জমাই রাখিস। সব ধুয়ে দিসি। যা ছাদে দিয়ে আয়। ঝিলিক এতগুলা আলগাইতে পারবে না।

দেখলাম তিন বালতি কাপড় নিয়া ঝিলিক দরজার সামনে দাঁড়াই ভেটকি দিতেসে। আমি মুখ বাঁকা করে কইলাম, আম্মু, এত মানুষের ভিতরে আমি এখন বাইরে যাবো!? উফ! কত ধুলাবালি, তোমার মেয়ে তো সোনা থেকে ডায়মন্ড হয়ে যাবে।

– যা তো, ঢঙ করিস না। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি কাপড়গুলা ছাদে দিয়ে আয়। রোদ চলে যাবে না হলে।

মনে মনে কইলাম, আম্মা, বাইরে যে রোইদ, তোমার এত দামি মাইয়াও যদি এক মিনিট থাকে তো শুকাই কড়কড়ি হই যাবে। দেখবা ঘরে আসলে মুচমুচ কইরা ভাইঙা পড়মু।

আমি ইয়া বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা দুই বালতি নিলাম। ঝিলিক কইলো, ছোঁয়াপু আমারে দাও দুই বালতি। তোমার কষ্ট হবে। আমি কইলাম, আগে যখন নেস নাই। এখন আর ঢং করিস না।

– সাবধানে বের হইয়ো বাইরে জিনিসপত্র নিতেসে।

– হ, তোরে কইতে হবে না।

বালতি নিয়া মাত্র দরজা খুইলা বাইর হইলাম, সাথে সাথে কিসের সঙ্গে টং করে বাড়ি খাইয়া মাথাটা চরকির মতো চক্কর দিয়া উঠল। আল্লাহ গো! আমার মাথা ফাইট্টা গেল! তাকাই দেখি পাশের বাসার আলমারি উঠাইতেসিলো। আমি বেখেয়ালে তাহার সাথেই বাড়ি খাইসি। আমি শিং উঠবে ভাইবা আবার আলমারিতে মাথা দিয়া বাড়ি দিলাম। উ…রে…… কি জোরে দিসি। আমার কান্ড দেখে লোকজন বেকুবের মতো তাকাই রইল। ঝিলিক কইল, এটা কি হইলো?

– কিছু না।

আমি দেরি না কইরা ছাদে রওনা দিলাম নাহলে কোন সময় আমারে পাগল মনে কইরা পাবনায় দিয়া আসে।

মাথা ঢলতে ঢলতে আর কোনদিকে খেয়াল নাই। এভাবে যে বাড়িগুলা খাইলাম আজকে আমার খবর আছে। এমনিও ফাটা মাথা, বাড়ি দিয়া আরো ফাটাই নিসি। মনে মনে কইলাম, আলমারি তোর কপাল ভালা আমার লগে বাড়ি খাইছিস। অন্য কেউ হইলে তোর মাথা ফুইটা যাইতো। মনের দুঃখে ঝিলিক রে কইলাম একটা গান ধরতো। সে তাহার স্পেশাল কাউয়া সংগীত গাওয়া শুরু করলো। মাথা ব্যাথার চক্করে ভুইলাই গেসিলাম। আমি তাড়াতাড়ি কইলাম, থাম মনা, যে সুর……… আজ কাউয়াদের মাঝে থাকলে এতদিনে কাউয়া রাণী হই যাইতি। ঝিলিক তার আটাইশটা দাঁত বাইর কইরা হাসল। আমার দুঃখ কেউ বুঝলো না। আমার ঘুমটা…আমি ফ্যাত ফ্যাত কইরা নাক টানতে টানতে ছাদে বালতি রাইখা কইলাম, তাড়াতাড়ি কাপড়গুলা মেইলা দে ঝিল। মাথাটা টন টন করতেসে। ব্যাথা উঠতেসে মনে হয়। ঝিলিক ঝটপট কাপড় মেলতে লাগল। আমি দেয়াল ধইরা দাঁড়াই আছি। হঠাৎ মনে হইল কেউ আমার দিকে তাকাই আছে। আশেপাশে তাকাই দেখলাম কেউ নাই। বরং আরো মাথাটা চক্কর দিয়া উঠল। তারপর আর কিসু মনে নাই।
.
.
.
.
বসার ঘরে কাদের যেন কথা শুনা যাইতেসে। বুঝলাম ঝিলিকের। কাউরে আমার এক্সিডেন্টের কথা বলতেসে। আমি কান পাতলাম। ঝিলিক ফ্যাত ফ্যাত কইরা বলতেসে, আমি খালার কাছে শুনসি এক বছর আগে ছোঁয়াপুর একটা অনেক বড় এক্সিডেন্ট হইসিলো। মেলা রক্ত বাইর হইসিলো। তারপর নাকি বড়ো অপারেশনও হইসে।

– এখন ভালো আছে?

– এখনও ছোঁয়াপুর মাথা ব্যাথা করে, বমি হয়, মাথা ঘুরায়……

আমি মনে মনে কইলাম পোলা কন্ঠটা কার? কারে এত বিস্তারিত বর্ণনা দিতেসে? আমার মাথা এখনো প্রচন্ড ব্যাথা করতেসে। তুলতে পারতেসি না। তাই সাহস হইলো না বসার ঘরে যাওয়ার। পোলা কন্ঠটা বলল, আচ্ছা ডাক্তার তো ওষুধ দিয়েছে। এগুলা ঠিকমতো খাইয়ে দিও। আমি পরে এক সময় আসবো।

– আইচ্ছা।

তারপর দরজা মারার শব্দ। আমি চোখ খুইলা দেখলাম ঝিলিক আসছে। আস্তে আস্তে কইলাম, কে ছিল রে? ঝিলিক আমার কাছে বইসা কইল, একটা ভাইয়া। পাশের বাসায় উঠসে। আজকে ছাদে তুমি যখন জ্ঞান হারাইছিলা তখন ভাইয়াটা ছাদে আসছিল৷ তোমারে কোলে করে আনসে, ডাক্তার ডাকসে। আমি বিস্ফোরিত চোখে ঝিলিকের দিকে তাকাইলাম। কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, ঝিল, আমারে একটা লালু মিয়া দে। খাই।

বিকালে সাহেদা দেখতে আইলো। আমার সামনে একটা বড়ো কালো থইলা রাখলো। আমি হেলান দিয়া ছিলাম। থইলাই উঁকি দিতেই মনটা আনন্দে একশখানা হইয়া কইল, লালু মিয়া! আমার চোখ মুখ দেখে সাহেদা কইল, অনেক ভাইবা গাজরই আনসি। তোর তো আবার গাজর টোটকার মতো কাজ করে। কেউ যদি বলে আমি তোমারে গাজরের ফ্যাক্টরি দিমু আমারে বিয়া করবা? তুই সুড়সুড় কইরা নাচতে নাচতে তারে বিয়ে করে ফেলবি।

– এমন করে বলিস না।

– তো কেমন করে কমু? চোখ দুইটা কই রাইখা হাঁটিস? ঝিলিকের কাছে শুনসি আলমারির সাথে বাড়ি খেয়ে মাথা ফাটাই এখন কোকাইতেছিস।

– আরে সব ঐ আলমারির দোষ। আমার কোনো দোষ নাই। বিশ্বাস কর।

সাহেদা আর কিসু না কইয়া মাথা নেড়ে বলল, ডাক্তার কি বলসে?

– জানি না। ঝিল, জানে।

– কি বলসে রে ঝিল?

– রেস্ট নিতে বলসে। কিসু ঔষুধ দিসে। আর বলসে যদি ঔষুধের জন্য জ্বর আসে তবে জলপট্টি দিতে।

– আন্টি আসবে কখন?

– রাতে।

– আঙ্কেল কই? দেখলাম না যে।

– কি এক কাজে সকাল সকাল বের হইসে। এখনো আসে নাই। ফোন দিসিলাম ধরে নাই। মনে হয় ছোঁয়াপুর দাদার বাড়ি গেসে। কে যেন অসুস্থ।

আমি কইলাম, আমারে তো বলে নাই। কে অসুস্থ রে? ঝিলিক কইলো, জানি না। সাহেদা আমার কানে ফিস ফিস করে কইলো, তুই নাকি কোন পোলার কোলে চড়ে আসছিস। শুইনা আমার কানটা গরম হইয়া গেল। আমি ওরে সরাই কইলাম, আরে ধুর। পরিস্থিতিতে পড়ে এমন হইসে আর কি।

– আমি শুনসি ছেলেটা নাকি অনেক কিউট। তোর সাথে নাকি মানাইসে।

আমি ভ্রূ কুঁচকে কইলাম, কে কইসে এ কথা? ঝিলিক বলল, ছোঁয়াপু তুমি যদি দেখতা। তোমাদেরকে শাবানা আলমগীরের মতো লাগতেসিলো। মনে হইতেসিলো জামাই বউ। আমি মনে মনে কইলাম, তোর শাবানা আলমগীরের খ্যাঁতা পুড়ি। কে না কে আমারে কোলে কইরা আনসে আর তারে আমার জামাই বানাই দিসে।সাহেদা আমার কপালে হালকা টোকা মাইরা বলল, ভালা হই যা তাড়াতাড়ি। কালকে আবার আসমু সকালে। আম্মু বাইরে যাবে কালকে। বলসে তোর সাথে থাকতে। এর মধ্যে আবার বাড়ি টাড়ি খাইস না। সাহেদা চলে গেল। আমি ভাবতেসি কালকে ভালো হইলে পাশের বাসায় একটা উঁকি দিমু কি না। দেখা লাগবে না কার কোলে কইরা আসছি।

রাতে আব্বা আম্মা বিরাট এক ভাষণ দিল। আমি ভিজা বিড়ালের মতো চুপ কইরা বইসা রইলাম। কালকে একবার ঐ বাসায় গিয়া আলমারিটারে ইচ্ছা মতো কেলামু। ঐটার জন্য আমার মাথার বারোটা বাজছে। রাতে আম্মু খাওয়াই দিল তাড়াতাড়ি। আমারও মাথাটা টন টন করতেসিলো তাই শুইয়া পড়লাম।

মাঝরাতে ফোনটা টিং টিং কইরা বাজতেসে। পাশে ঝিলিক ভেটকি মাছের মতো ঘুমাইতেসে। এত রাতে কে কল দিলো? আমি ঘুম ঘুম চোখে হাতড়াই কোনোমতে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে কে জানি কইলো, কেমন আছো ছোঁয়া? আমি আদো আদো গলায় কইলাম, আপনি কে?

– এত সহজে আমাদের ভুলে গেলে? এত সহজে তো ভুলতে দেবো না ছোঁয়া। এগার বছর আগের ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি না হয় আবার হলো। তুমি এগার বছর আগেও আমার ছিলে, এখনো থাকবে। ভালোবাসি ছোঁয়া, বড্ড বেশি ভালোবাসি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here