আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_১৮,১৯

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥,পর্ব_১৮,১৯
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১৮

আমি কিছুক্ষণ শাড়িটা নিয়া লাফাই হঠাৎ চোরের মতো চোখ সরু কইরা কইলাম, এটা এখানে আইলো কেমনে! তখন মুন রুমে ঢুকল। আমারে দেইখা কইল, এমন শিয়ালের মতো উঁকি মাইরা আছিস কেন?

– এটা এখানে আসলো কেমনে?

– আমি আনসি।

– ও।

আমি মন খারাপ কইরা শাড়িটা রাইখা দিলাম। ইস্, শাড়িটা এত পছন্দ হইসিলো, এখন তো এটা মুন পরবে। মুন আমার গায়ে শাড়িটা জড়াই দিয়া বলল, তোকে বেশ মানাইসে। চয়েজ আছে।
– আমাকে মানাই কি হবে? পরবি তো তুই।

– কে বলসে? এটা তোর জন্য।

– তুই আমার জন্য এত টাকা খরচ করলি!?

– আমি কেন খরচ করতে যাবো? তোর জামাই…

আমি মুখ সরু কইরা কইলাম, আমার জামাই আসলো কোত্থেকে? বিয়া করবি তুই। মুন আমারে কাটানোর জন্য বলল, আরে, ঐ আর কি। বলে ফেলসি। যা তো এটা পরে আয়।

– এখন?

– হুম। দেখবো তোকে।

– ইস্, দরদ একেবারে বেয়ে বেয়ে পড়তেসে। আমি এখন পরবো না। তোর গায়ে হলুদের দিনই পরবো।

আমি শাড়িটা তুলে রাখলাম। মুন কেন যেন মুখ কালো করে ফোন হাতে বেরিয়ে গেল। বুঝলাম না।
.
.
.
.
দুপুরে খেয়ে আমি বিছানায় শুয়ে ইচ্ছা মতো মোবাইল টিপতেসি। হঠাৎ সারা সায়েম এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপর। আমি অবাক হইয়া কইলাম, তোরা কোথা থেকে আসলি?

– আম্মুর সাথে।

– সানজিদা আপু আসছে? দাঁড়া দেখা করে আসি।

সানজিদা আপুর দুই ছেলে মেয়ে। সারা আর সায়েম। দুই জনে যমজ। আমি সানজিদা আপুর সাথে দেখা করতে যাইতে চাইলে দুইজনে দুইপাশ থেকে আমার বুকে মাথা রাইখা শুয়ে বলল, আগে আমাদেরকে একটা গল্প শোনাতে হবে। তারপর। কি এক জ্বালা! আমি কইলাম, আমি এসে শোনাই। ওরা ছাড়তে নারাজ। কি আর করা। শুরু করলাম।

– একটা ছোট দুষ্ট পরী ছিল। সে এতো দুষ্ট ছিল যে তার বাবা মা তাকে নিয়ে হয়রান হয়ে যেত। সে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। একদিন এক মানুষ ছেলের সঙ্গে দেখা হল। পরীটা দেখেই পছন্দ করে ফেলল। প্রত্যেকদিন এটা ওটার ছলে ছেলেটাকে দেখতে যেতো। একদিন পরীটা জানতে পারল ছেলেটা অন্য একজনকে ভালোবাসে। তখন পরীটা তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেল। শেষ।

সারা বলল, এটা কোনো গল্প হল? আমি কইলাম, মনে কর এটা গল্পের ট্রেইলার। রাতে কমু। এখন ছাড় তো। আমি ওদের কবল থেকে বাইর হইয়া সানজিদা আপুর কাছে গেলাম। সানজিদা আপু মিষ্টি খালার সাথে কথা বলতেসে। আমি যাইয়া জড়াই ধইরা কইলাম, এই বোনটারে তো ভুইলা গেসো। একেবারে দেখতে আসো না।

– কি করতাম বল, তোর ফাজিল ভাগ্নী ভাগিনায় সারাদিন জ্বালায়।

– দুলাভাই আসে নাই।

– না। ও বিয়ের একদিন আগে আসবে।

– ভালো করসো। চলে আসছো। বিয়ের অবশ্য এখনো এক সপ্তাহ বাকি। আরো কেনাকাটাও বাকি। তুমি আসছো, এবার জমিয়ে বাকি কেনাকাটা করা যাবে।

হঠাৎ মুন আইসা বলল, তোরও তো জন্মদিন আসতেসে পরশু দিন। শুনে আমার মুখ কালো হইয়া গেল। সানজিদা আপু বলল, এখন কথাটা না বললেই নয়? মুন বলল, না। কারণ কালকে আমরা সবাই একটা পিকনিকে যাবো। রেদোয়ান ঠিক করেছে, কালকে ওর পরিবার আর আমার পরিবার ওদের বাংলোতে বেড়াতে যাবো।

– সেটা তো অনেক দূরে। কক্সবাজার। এতো দূর কে যাবে। তোরা যা। আমি যাবো না।

মুন আমারে জড়াই ধইরা কইল, তোমারে তো যেতেই হবে বোনটি। তুমি না গেলে তো মজাই হবে না।

– তোর মতলব কি বল তো।

– আমার মতলব হলো বিয়ের আগে তোমাদের সবার সাথে ঘুরতে যাবো।

– আমি এখন যাবো না।

– তো কি বিয়ের পর আমার হানিমুনে তোকে নিয়ে যাবো?

আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম মিষ্টি খালা বলল, আরে বাবা, কি শুরু করলি। ছোঁয়া মা, ঘুরে আয়। মন ভালো থাকবে। এই সময় তো এমনিতেও মন খারাপ করে কাটাস।

– কিন্তু …

– আম্মার অর্ডার পেয়ে গেছো। এবার চলো, কাপড় গোছাবে।

মুন আমারে ঠেলতে ঠেলতে নিয়া গেল রুমে। আমি বড় কইরা নিঃশ্বাস ফেইলা কইলাম, পারলাম না মাইয়াটারে সোজা করতে। আমারেই জ্বালাই ফেলল।
.
.
.
.
রেদোয়ান একটা মাইক্রো ভাড়া করল। ভেবেছিল ওদের বাড়ির গাড়ি করে যাবে কিন্তু পরে সেটা নাকোচ কইরা দিল। রেদোয়ানদের চট্টগ্রামে নিজেদের বাড়ি। ওর বাবা ব্যবসায়ী। একমাত্র ছেলে রেদোয়ান। তাই পছন্দের কথা বলতেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে ওর বাবা মা।

আমরা সবাই রেডি হয়ে দশটার মধ্যে রেদোয়ানের বাড়ি পৌঁছাই গেলাম। আমরা মোট দশজন। একটা মাইক্রোতেই সবাই এঁটে গেলাম। সেখান থেকে রওনা দিলাম সাড়ে এগারটার সময়। মাঝে দেড়টার সময় একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর আবার রওনা দিলাম। রেদোয়ানের বাংলোয় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সোয়া চারটা বাইজা গেল। আমি গাড়ি থেকে নেমে আশপাশ তাকাইলাম। জায়গাটা সুন্দর। সবাই নামতেই রেদোয়ান সবাইকে রুম দেখাই দিল কে কোন রুমে থাকবে। রেদোয়ান আর আমাদের রুম পাশাপাশি। আহা! কি প্রেম!!! আমি কোন এক পাগলের প্রেমে পইড়া পুরা জীবনটারে ত্যানা ত্যানা কইরা ফেললাম। না হলে এতদিনে বিয়া সাদি কইরা দশ বাচ্চার মা হইতাম।

ডিনার কইরা সবেমাত্র বিছানায় পিঠ লাগাইলাম। এমন সময় মুন আইসা বলল, এখন শোয়াশুই নাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে বলল, সাগর পাড়ে আগুন জ্বালাবে। সবাই ওখানে যাবে। আমি আরো আরাম কইরা শুইয়া কইলাম, তোরা যা, আমি একটু ঘুমাই। মুন আমারে টাইনা উঠাইলো। বলল, সামনে বহুত ঘুমাইতে পারবি। উঠ। দেখি রেডি হইতে হবে। আমি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে কইলাম, এর জন্য আবার রেডি কিসের?

– শাড়ি পরমু।

– তো পর।

– তুইও পরবি।

– আমার কি বিয়া লাগসে? আমি পরমু ক্যান?

– আমার বিয়া লাগসে তাই। এবার ওঠ।

ও ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি, একগাছি কাচের চুড়ি আর একজোড়া নুপুর বাইর করল। আমি অবাক হয়ে বললাম, এগুলা এখানে আনছিস ক্যান? মুন নিজের শাড়ি বের করতে করতে বলল, আজকে এই শাড়িটা পরবি। এটাতে তোকে মানায়। ঐ লাভার ভ্যাম্পায়ারের দেওয়া নীল শাড়িটা। সুন্দর দেইখা যত্ন কইরা তুইলা রাখছিলাম। শাকচুন্নিটা কোন ফাঁকে নিয়া আসছে। আমি শাড়িটা নিজের কোলে নিয়া কইলাম, পরমু না। মুন আমারে মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল কইরা বলল, আমি তো কয়দিন পরে চলেই যাবো। একটা অনুরোধ রাখতে পারবি না? ছয় বছর আগেও তো পরছিলি। এখন না হয় আবার পরবি। আমি ঘাড়ে হাত দিলাম। এখনও দাগটা আছে। হঠাৎ কইলাম, ওয়েট এ মিনিট। তুই কেমনে জানলি যে আমি ছয় বছর আগে শাড়িটা পরসি। কে বলসে তোরে? মুন আমতা আমতা করে বলল, এটা আবার জানার কি আছে। কেউ তোকে জন্মদিনের গিফট দিসে আর তুই পরবি না। তা হয়? তাই বললাম। আয় আজ তোকে আমি নিজে সাজাবো।

মেয়ের মতিগতি বুঝতে পারতেসি না। থাক, বিয়ার আগে একটা আবদার করসে যখন করুক। ও আমাকে সুন্দর কইরা সাজাই দিল। সাজ শেষে আমারে বলল, তোরে তো পুতুলের মতো লাগছে। দাঁড়া কাজলের টিপ দিয়ে দেই। নজর লেগে যাবে। আমি হাসলাম। ও বলল, এই হাসিস না। হাসিস না।

– কেন?

– মে মার যাউংগি তেরি খুব সুরুত মুসকান দেখকার।

– এমন পিডা দিমু যে এখান থেকে সাগরে যাই পড়বি। যা, রেডি হ।

মুন হেসে তৈরী হতে চইলা গেল। আমি দেখতেসি নিজেকে আয়নায়। এমন কইরা শুধু একজনের জন্যই সাজার ইচ্ছা ছিল এক সময়। আজ সে বিদেশে নিজের ভালোবাসারে নিয়া সুখের সাগরে ডুবে আছে।
.
.
.
.
সব রেডি। কাঠ যোগাড় করে রাখা হইসে। সবাই সাতটার মধ্যেই সাগর পাড়ে পৌঁছাই গেল। আমি আর মুন সবার পরে গেলাম। এমনিতেই আমরা সব সময় লেট করি। আজকেও করলাম। মুন গিয়া রেদোয়ানের সাথে বসল। আমি এক পাশে সইরা বসলাম। তখন থেকে দুইজনে কি নিয়া ফিসফিস করতেসে। ভাবলাম ওদের প্রেম আলাপ শুইনা আমার কি কাম। রেদোয়ানের বাবা মা মিষ্টি খালা আর সানজিদা আপুর সাথে কথা বলতেসে। সারা আর সায়েম নিজেদের মতো করে খেলতেসে। দুইটায় বালু ঘাটাঘাটি করতেসে। ভাবলাম একবার ধমক দিমু কিনা পরে ভাবলাম থাক। প্রথম আসছে একটু বালু পেটে পড়ুক স্মৃতি হিসাবে। আমি একলা বইসা আছি। মাঝেমধ্যে বাতাস লাগতেসে গায়ে। আমার খোলা চুলগুলা বাতাসে এলোমেলো হইয়া আমার মুখে চোখে ডুকতেসে। কি বিরক্তি!!! তার উপর ওরা যেভাবে গল্প শুরু করসে। পরিবেশটা শান্ত থাকলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন ভালো লাগতেসে না। আমি যে একটা মানুষ আছি তাও এদের খেয়াল নাই। ইচ্ছা করতেসে চইলা যাই। উঠেই যাইতেছিলাম। এমন সময় রেদোয়ান বলল, এটেনশান প্লিজ। আজকে আমাদের সাথে আমার এক বিশেষ বন্ধু যোগ দিতে এসেছে। লেট মি ইন্ট্রোডিউস……

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৯
#সাহেদা_আক্তার

এমন সময় রেদোয়ান বলল, এটেনশান প্লিজ। আজকে আমাদের সাথে আমার এক বিশেষ বন্ধু যোগ দিতে এসেছে। লেট মি ইন্ট্রোডিউস……

হঠাৎ আমাদের থেকে বেশ কিছু দূরে পিয়ানোর শব্দ। শব্দটা আমার পেছনে। আমি পিছন ফিইরা দেখলাম একটা মঞ্চের মতো বানানো হইসে। আসার সময় খেয়াল করি নাই। সেখানে একটা পিয়ানো রাখা। আমাদের দিকে উল্টো মুখ কইরা একটা ছেলে পিয়ানো বাজাইতেসে। সাদা শার্ট আর হালকা নীল জিন্স পরা। দুইটা স্পটলাইট তার মাথার উপর জ্বলতেসে। সে ‘A Thousand Years’ গানটার সুর তুলল। কিছুক্ষণ বাজিয়ে গলা ছেড়ে দিল। বেশ ভালোই গাইতেসে। আমার বেশ ভালো লাগতেসে। পরিবেশটার সাথে গানটা যেন মিশে গেল। কেন জানি খারাপ হইয়া গেল মনটা। চেরি ফলের কথা মনে পড়তেসে খুব। কবে পিছু ছাড়বে ওর স্মৃতি!!!!!!

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
Heart beats fast colours and promises
How to be brave?
How can I love when I’m afraid to fall?
But watching you stand alone
All of my doubt suddenly goes away somehow.

One step closer
I have died everyday waiting for you
Darling don’t be afraid
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

Time stands still beauty in all she is
I will be brave
I will not be anything take away
What’s standing in front of me
Every breath
Every hours has come to this

One step closer
I have died everyday waiting for you
Darling don’t be afraid
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

All alnoe I believe I would find you
Time has brought your heart to me
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

One step closer ……
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

হঠাৎ দেখলাম গানের মাঝে ছেলেটা পিয়ানো ছেড়ে উইঠা আসল। আরেকজন লোক এসে পিয়ানো বাজানোর দায়িত্ব নিল। ছেলেটার মুখে একটা মুখোশ স্পটলাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করতেসে। তাই চেনা যাইতেসে না। সে গান গাইতে গাইতে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি তারে দেইখা চমকে উঠলাম। ছেলেটার পরনে আমার চেরি ফলের শার্ট যেটা আমি এতদিন যত্ন কইরা আলমারিতে লুকাই রাখছিলাম। ছেলেটা গান শেষ হতেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে একগুচ্ছ গোলাপ ধরে বলল, হ্যাপি বার্থ ডে, ছোঁয়া। আমি তারদিকে তাকাই আছি আর সে আমার দিকে। বারোটা বাইজা গেসে। সবাই আমার একসাথে উইশ করলো। আমার সেদিকে খেয়াল নাই। এখন মাথায় শুধু একটা জিনিস ঘুরতেসে এই ছেলে শার্টটা পাইলো কোথায় থেইকা। কারন বুক পকেটে ফুলগুলা আন্টি নিজের হাতে সেলাই করছিলো। আমাকে একদিন বলছিল। এই শার্ট দ্বিতীয় কারো হইতে পারে না। কে এই ছেলে? আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ছেলেটার মুখের মুখোশটা খুইলা নিলাম। সাথে সাথে একটা বড়োসড়ো ধাক্কা খাইলাম। দুই পা পিছনে সইরা গেলাম। ও আমার দিকে তাকাই হেসে বলল, কেমন আছো, গাজরের হালুয়া? চে… চে… চেরি ফল!!!!!!!!!!! আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবি নাই এমন কিছু। আমি দুই হাত দিয়া মুখ চাইপা ধরলাম। কেউ কিছু বলার আগেই দৌঁড়ে চইলা আসলাম বাংলোয়। প্রথম চোখের ফোঁটাটা না হয় গোপন থাক।

আমি দরজা বন্ধ কইরা দরজার পাশে বইসা আছি। টপটপ কইরা চোখের পানি পইড়া বুকের কাছের শাড়ির অংশটা ভিইজা গেসে। চিবুকের কাছে ফোঁটাগুলো হাত দিয়া ধইরা রাখা বোতামটায় পড়তেসে। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, হঠাৎ এতদিন পরে কেন? কেন আবার আমার সাজানো জগতটাকে এলোমেলো করতে ফেরত এসেছে? আমি তো সবাইকে আঁকড়ে ধরে বেশ ভালো আছি। তোমাকে আঁকড়ে আমি কষ্ট ছাড়া কিছু পাইনি। তাহলে কেন ফিরে আসতে চাইছো আমার জীবনে? আমি দরজার পাশে বইসা মুখ ঢাইকা কাঁদতে লাগলাম। দরজা ওপাশে হঠাৎ ওর ডাক শোনা গেল। দরজায় ধাক্কা মাইরা বলল, ছোঁয়া, দরজা খোলো। দেখো, আমি ফিরে এসেছি। তুমি দরজা খুলবে না? তোমার চেরি ফলকে দেখবে না? ছোঁয়া… প্লিজ দরজা খোলো। ওর গলার স্বরে আমার আরো কান্না পাইতেসে। চোখের পানি ঝর্ণার মতো গলগল কইরা বাইর হইতেসে। ও বলল, ছোঁয়া, তুমি যতক্ষণ দরজা খুলবে না আমি কিন্তু এখানেই দরজার পাশে বসে থাকবো। ও বইসা পড়ল। আমি নিজেকে না বুঝাইতে পারতেসি না থামাইতে পারতেসি। এতদিন কি চাঁদনির সাথে থাইকা সাধ মিটে নাই? আজ আমার কাছে ফেরত আসছে? আমি দরজার এই পাশে আর ও ওই পাশে। মাঝে যেন শত যোজন দূরত্ব!!!
.
.
.
.
চোখ খুইলা দেখি সূর্যের আলো মেঝেতে মহা আনন্দে নাচানাচি করতেসে। কালকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ফ্লোরে ঘুমাই পড়সি টের পাই নাই। হঠাৎ মনে পড়ল চেরিফল বলছিল যতক্ষণ আমি দরজা খুলমু না ও দরজার ঐপাশে বইসা থাকবে। সত্যিই এখনো বইসা আছে নাকি! আমি সাবধানে দরজা খুইলা উঁকি দিলাম। তাকাই আমি বেকুব হই গেলাম। দেখি কেউ নাই। এ্যাঁহ্, সিনেমার ডায়ালগ মারসে কালকে। আমিও গাধার মতো ভাবছি এখনো বইসা আছে। দরজা মারতে গিয়া এক টুকরা কাগজের দিকে চোখ পড়ল। কাগজটা নিয়া দেখলাম লেখা, আমি ওয়াশরুম গেলাম। পইড়া আমার মাথাটা খারাপ হইল, এই বেক্কলে চিঠিও লেইখা গেসে যে সে ওয়াশরুম যাইতেসে। আর কি কইতাম! বিয়ার পরে তো বৌয়ের থেইকা ওয়াশরুম যাওয়ারও অনুমতি লাগবো তার। আমি কি তার বউ হওয়ার কথা ভাবতেসি নাকি!? এটা সম্ভব না। ভাইবা মন খারাপ হইয়া গেল। আমি আবার দরজা মাইরা ফ্রেশ হইয়া নিলাম।

জানালার কাছে দাঁড়াইতেই মনটা একেবারে ফুরফুরে হইয়া গেল। রুমটা থেকে সাগর দেখা যায়। কি সুন্দর সাগরের ঢেউ আইসা আছড়ে পড়তেসে পাড়ে। আমার তো দেইখা খুশিতে নাচতে মন চাইতেসে। দাঁড়া, আজকে সাগরে গোসল করমু। আমি দরজা খুইলা গুনগুন করতে করতে নিচে নামলাম। নাস্তার টেবিলের দিকে তাকাইতেই মুখ কালো হইয়া গেল। চেরি ফল আমার দিকে তাকাই ভেটকাইতেসে। ইচ্ছা করতেসে ভেটকি মাছটারে ধইরা লবণ মরিচ দিয়া মাইখা তেলে ভাজি কইরা খাই। আমি মুনের পাশে গিয়া বসলাম। ওর খানা দেইখা কইলাম, এমন করে খাইতেছিস কেন? জন্মে জেলি পাউরুটি খাস নাই? মুন আমার দিকে তাকাই মুখ সুচালো কইরা কইল, একদম এমন বলবি না। কালকে তো দরজা মাইরা সেই লেভেলের নাক ডাইকা ঘুম দিসো। আমারে তো ঘুমাইতেই দিলি না রুমে। আমি প্রতিবাদ কইরা কইলাম, আমি মোটেও নাক ডাকি না। আমিও একটা পাউরুটিতে জেলী মাখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি চেরিফল আমার দিকে তাকাই আছে। আমি মুখ হাতে ভর দিয়া পাউরুটি কামড়াইতেসি আর ভাবতেসি, এভাবে তাকাই আছে কেন? জীবনে কোনোদিন পেত্নী দ্যাখে নাই? আমি আরেক পিস পাউরুটিতে জেলী মাইখা চেরির দিকে আগাইয়া দিলাম। সে সুন্দর কইরা আমার হাত থেইকা কাইড়া নিয়া ওটা বাইচ্চা ইন্দুরের মতো কচকচ কইরা খাইয়া ফেলল। তারপর আবার তাকাইলো আমার দিকে। আমি আরেকটা পাউরুটি দিতে সে ওটাও খাইয়া তাকাই রইলো। আমি আর খাইতে পারলাম না। বেচারার মনে হয় বেশি খিদা লাগসে। আমি একটা প্লেটে দশটা পাউরুটি আর জেলীর বোতলটা ওর সামনে রাইখা কইলাম, এত খিদা লাগসে যখন বেশি কইরা খান। অন্যের দিকে তাকাই পেটেব্যাথা তুলানোর দরকার নাই। আমি যাইতে লাগলে সে আমার হাত ধইরা বলল, জেলী লাগাই দাও না হলে পেট ভরবে না। এ্যাঁহ্, শখ কতো! যেন আমি তার বউ। ভালবাইসা জেলী লাগাই দিমু আর উনি বইসা বইসা গিলবো। আমি কাছে আইসা বললাম, হাত ছাড়েন, জেলী লাগাই দিতেসি। সে হাত ছাড়লো ওমনি আমি ফুরুত কইরা দৌঁড় দিলাম। সে আর ধরার সুযোগ পাইলো না। যাওয়ার আগে তার দিকে ফিইরা একটা ভেংচি কাটলাম। বেশি করলে তারেই জেলী লাগাইয়া কস কস কইরা খামু। হুহ্।

আমি রুমে বইসা দু’ঘন্টা ধরে কোঁকাইতেসি। খিদা লাগসে। সকালে নাস্তায় গাজর না খাইলে আমার প্রচুর খিদা পায়। কি করি? এটা তো আর নিজের বাড়ি না যে যাইয়া ফ্রিজ থেইকা গাজর নিয়া আসমু। মুন বেটিটাও সেই সকাল থেইকা হাওয়া। নাস্তার টেবিলে যে দেখসি আর কোনো পাত্তা নাই। নিশ্চয়ই হবু বরের লগে ঘুরতে গেসে। যাবেই তো। এখন তো আর বোইনরে চিনবে না। আমি আর সহ্য করতে পারতেসি না। নাহ্, আমারে কালা চোর হওয়া লাগবো।

আমি আস্তে কইরা দরজা খুইলা বাইর হইলাম। উঁকি মাইরা দেখলাম কেউ নাই। মনে হইল কোনো কাকপক্ষীও বাড়িতে নাই। ভালো হইসে। আমি নাইমা ফ্রিজের কাছে চইলা গেলাম। খুইলাই দেখি ফ্রিজে থাকা গাজরগুলা আমার সাথে অভিমান কইরা বলতেসে, তোমার এতক্ষণে আসার সময় হইল? আমরা সেই কতক্ষণ ধইরা ওয়েট করতেসি। আমি মনে মনে কইলাম, না, সোনারা। রাগ করে না। এই তো আমি এসে গেছি। আমি মোটা দেইখা গাজর নিয়ে সবে মাত্র একটা কামড় দিয়া পিছন ফিরসি, সাথে সাথে ভয় পাইয়া একটা চিক্কুর দিলাম। আল্লাহ গো! একটা খাম্বা থুক্কু চেরি ফল আমার দিকে চোখ বাঁকা কইরা তাকাই আছে। আমি কি কমু বুঝতেসি না। ধরা খাওয়া চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাইতেসি। সে জিগাইল, কি করছো এখানে? আমি আমতা আমতা কইরা বললাম, কি…কি…কিছু না তো। আ…আমি যাই। আমি চইলা যাইতে ছিলাম। সে আমার গাজর ধরা হাতটা টাইনা ফ্রিজের সাথে চাইপা ধরল। আমি আইটকা গেলাম। আমি অসহায়ের মতো গাজরের দিকে তাকাইতেসি আর গাজর আমার দিকে। তোরে খাইতে আইসা কি বিপদেই না পড়লাম। হঠাৎ সে আমার গাজরে ভাগ বসাইলো। আমার কামড়ানো অংশে একটা কামড় বসাইয়া কইল, আচ্ছা, এই জায়গাটা এতো মিষ্টি কেন? চিনিতে ঢুবিয়েছো নাকি? আমি তো লজ্জায় কই লুকামু বুঝতেসি না। বেটা, ছয় বছর বিদেশে থাইকা ইয়ে হই আসছে। আমি সরমে মুখ তুলতে পারতেসি না। সে তো হাতটা ছাড়ার নামই নিতেসে না। সে আমার কাছে এগুতেই আমি পিছিয়ে ফ্রিজের সাথে মিইশা গেলাম। হায় হায় আর যাওয়ার জায়গা নাই। পারতেসি না ফ্রিজের ভেতর ঢুইকা যাইতে। সে আমার বাম কানের কাছে এসে বলল, তোমার গায়ের গন্ধটা আগের থেকেও মিষ্টি লাগছে। কি ব্যবহার করো বলতো? আমি আর দাঁড়াইতে পারতেসি না। খালি মাটিটা ফাঁক হওয়া বাকি। হঠাৎ সে হাতটা ছাইড়া দিল। আমি সাথে সাথে এক দৌঁড়ে রুমে। সেই ছয় বছর আগের ব্যাঙটা আবার ফেরত চইলা আসছে বুকের ভেতর। আইসাই তিরিং বিরিং লাফাইতেসে। গাজররে!!! Crush is coming back……

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here