অবান্তর_চিরকুট,পর্ব-9,10

#অবান্তর_চিরকুট,পর্ব-9,10
♡আরশিয়া জান্নাত
09

“আপনি কি ফ্রি আছেন? দেখা করতে পারবেন?”

মনখারাপ করে পার্কের বেঞ্চিতে বসে ছিল রাফসান। তখনই সিতারার মেসেজটা এলো। টেক্সটের দিকে তাকিয়ে কোনো রেসপন্স করলোনা। আজ কারো সঙ্গেই কথা বলার মুড নেই তার। সে আজ একাই ঘুরে বেড়াবে।

–আচ্ছা রাফসান আমি যখন তোমার সাথে ঝগড়া করি কিংবা মেজাজ গরম করে কিছু বলি তুমি বাইরে চলে যাও কেন?
–আমি চাইনা সেসব শুনে প্রভাবিত হতে। দুজন একসঙ্গে রেগে গেলে সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়বে। আর সত্যি বলতে আমি রাগ সহ্য করতে পারিনা। চেঁচামেচি শুনলে আমার সাফোকেশন হয়,,,
— আগে বলো নি কেন এটা? আমি তো রেগে গেলে অনেক চিল্লাই। তোমার অনেক কষ্ট হয় তাই না? স্যরি সোনা আর কখনো চিল্লাবো না।
— আরেহ স্যরি বলার কিছু নেই। সবার রাগ তো একরকম না।
–তোমার রাগ হয় না? এই পর্যন্ত তো একবারো রাগ করোনি।
–কে বলেছে হয়না, হয়তো।
–কি বলো!! দেখলাম না তো? বেশি রাগ হলে কি করো?
–বেশি করে মরিচ খাই। ঝাল খেয়ে রাগ কমাই।
–ওহ আল্লাহ কি সাংঘাতিক। তাহলে তো অনেক রাগ করেছ এই অবধি। আমি আরো ভাবতাম তুমি ঝাল পছন্দ করো!!!
— হাহাহা। বাদ দাও এসব
— না না বাদ দিবোনা। তুমি সত্যিই খুব অদ্ভুত!
–তাই?
–নয়তো কি! তবে জানো আমি খুব লাকি তোমার মতো বর পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
–ব্যাপার কি বাটারিং করা হচ্ছে?
–তোমার উপর মুগ্ধ হয়েছি। তাই কেমন প্রেম প্রেম জাগছে।
–আমার তো রোজ প্রেম প্রেম জাগে।
–ঢং না করে ঘুমাও। সকালে না অফিস আছে?
— আমি কি কিছু চেয়েছি নাকি। এই তুমি কি অন্য কোনো কিছু ভাবছো? এইসব চলে মনে না??

সাফা থতমত খেয়ে বললো, না না আমি কি ভাববো।
রাফসান হেসে তাঁকে বুকে জড়িয়ে বললো, ভালোবাসি বৌ টা।

“কেন সাফা কেন? আমার ভালোবাসা ফেলে চলে গেলে। তোমার কি একবারও আমার কথা মনে পড়েনা? আমি কেন তোমায় ভুলতে পারছিনা? আচ্ছা সোহেল কি তোমায় আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসে?”
আনমনেই চোখের কোণে জল ভরে এলো। চোখের পানি বিসর্জন দিতেও তার ভয় হয় যদি এসব অভিশাপ হয়ে যায়! সে তো সাফার খারাপ চায়না। সাফা সুখী হোক সেটাই চায়। মুখে সব বললেও মনে মনে ঠিকই এই ভেবে কষ্ট পায় সাফা তাকে ছাড়া সুখেই আছে। এখানে আত্মগ্লানীটা কিভাবে দূর করবে সে??
_________

সারাটাদিন খুব বিরক্তিকর কেটেছে সিতারার। একে একে সব ফ্রেন্ডরা ফোন করে বলছে, কিরে তোর প্রজেজিব বফ দেখি নতুন বৌ নিয়ে হানিমুনে গেছে। তোকে ডাম্প করলো শেষ পর্যন্ত! আগেই বলেছিলাম এমন ছেলের প্রতি ডেডিকেটেড হয়েও লাভ নাই। এখন দেখ কত রোমান্টিক ক্যাপশন দিয়ে ফটো আপ দিচ্ছে,,,,
সিতারা তাঁর ভাইয়ের একাউন্টে গিয়ে তাহজীবের আপলোড করা ছবিগুলি দেখলো। তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা আনহ্যাপি! ক্যাপশন তো একেকটা ভালোবাসার বন্যা বইয়ে দেওয়া। সিতারা খুব মন দিয়ে দেখলো কাপল ফটো দেখতে তাঁর ভালোই লাগে, তারচেয়ে বেশি ভালোলাগছে ছদ্মবেশী লোকটার দুইদিক সামলানোর ক্ষমতা দেখে।

“আপু তুই আবার তাহজীব ভাইয়ার টাইমলাইন ঘাটছিস?”

(সিতারার ভাই জাহিদ খানিকটা রেগে বললো)

“না এমনি দেখছিলাম দার্জিলিং কেমন,,”

(অপ্রস্তুত গলায় বললো সিতারা)

“আপু যা বলতে পারিস না তা বলতে আসিস কেন? আমরা সবাই ভালো করেই জানি তুই তাহজীব ভাইকে কতটা ভালোবাসতি। সে যে তোর কাঁটা গায়ে নুন ছিটাতে তোর পছন্দের জায়গায় হানিমুনে গেছে তাও অজানা না। এই নিষ্ঠুর লোকটা আমার দুলাভাই হয়নাই আমি অনেক খুশি হয়েছি। তোর উচিত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা”

“তুই তো তাহজীব ভাই বলতে পাগল ছিলি। আর এখন এই কথা বলছিস?”

“ঘোড়ার ডিম ছিলাম। বোনের উড বি ভেবে মাথায় তুলে রাখতাম, সে এটাকে কি ভাবতৌ কে জানে। তবে মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে ভুল করেনাই। ডোমিনেটিং স্বভাবের ন্যারো মাইন্ডের লোক। এর চিন্তাভাবনা এতো লো কি বলবো”

“এখন এসব বলছিস আমার সঙ্গে বিয়ে হয়নি বলে? বোনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিস?”

“তোরে সান্ত্বনা দিতে আমার বয়েই গেছে। তুই তো তাহজীব বলতে অজ্ঞান। চোখে কালোপট্টি বেঁধে বসেছিলি। এসব বললেও পাত্তা দিতি কখনো? উল্টো আমায় বকতি। আল্লাহ যে কি বাঁচান বাঁচিয়েছে তোকে একদিন ঠিক টের পাবি।”

“বেশি পাকনা সাজিস না। নে ধর তোর ফোন”

“বাব্বাহ এখনো জ্বলে? ভালো মেয়েরা এসব ফালতু ছেলেদের ভালোবাসে বলে আজ আমার মতো ছেলেরা সিঙ্গেল।”

“ফাজিল দাঁড়া তুই”

জাহিদ ফোন নিয়ে দৌড়ে পালালো। সিতারাও তাঁর পিছু ছুটছে। সোফিয়া ছেলেমেয়ের খুনসুটি দেখে প্রশান্তমনেই বললেন, যাক মেয়েটা আগের মতো স্বাভাবিক হচ্ছে।


রাফসানের কোনো রিপ্লাই না দেখে সিতারার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে। সে সবসময় আগ বাড়িয়ে যায় না জানি কেমন মেয়ে ভাবছে। মুখে যাই বলুক ভেতরে ভেতরে ঠিকই খারাপ ভাবছে। কিন্তু এখন যে তাঁকে খুব প্রয়োজন। কি যে করবে সে বুঝে আসছেনা।

পাঁচদিন ধরে রাফসান অফিস যাচ্ছেনা।শরীর মন কোনোটাই ভালো নেই তাঁর। সারাদিন ঘুমিয়ে পার করে আর রাতে ছন্নছাড়ার মতো ঘুরে বেড়ায়। মন খারাপের রেশ কাটানোর কোনো উপায় জানা নেই তাঁর। কি করবে কিছুই জানেনা, শুধু জানে তাঁর এই জীবনটা বয়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা কি এমন হতো ওদের একটা বাচ্চা থাকলে? সেই সন্তানের মুখে চেয়ে আরামসে জীবন কাটিয়ে দিতো। সাফা নিশ্চয়ই সন্তানের কাস্টডি নিতে চাইতো না? নাকি চাইতো! সন্তানের মায়ায় বাঁধা পড়েও কি থেকে যেত না?
প্রথম মিসক্যারেজ এর পর কত রাত সে কেঁদেছিল সেই আবেগপ্রবণ মেয়েটা কি পারতো সন্তানকে মা-হারা করে চলে যেতে?
কতবার কেঁদে বলেছে আমার একটা বাচ্চা চাই। তুমি এখুনি আমায় বাচ্চা দাও। অথচ তখন ওর হেলদের কন্ডিশন খুবই খারাপ ছিল। রাফসান কত কষ্টে সামলিয়েছে সেই আহত পাখিটাকে।
তারপর যখন সব ঠিকঠাক হলো সাফা বললো সে জব করবে। সারাদিন বাসায় থেকে তাঁর কষ্ট বাড়ছে।
পড়াশোনার পাশাপাশি কল সেন্টারে জব। এভাবেই কাটছিল দিন। সেকেন্ড টাইম কনসিভ করার চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়ে রাফসান নিজেই ডক্টর দেখিয়েছে শুরুতে। তবুও সাফার দিকে আঙুল তোলেনি।
সাফাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলতেই কেমন চেঁচিয়ে বলেছিল, বাচ্চা না হওয়া মানেই মেয়ের দোষ এটাই ভাবো তোমরা? তোমারো তো দোষ হতে পারে। তুমি ডাক্তার দেখাও গিয়ে আমি যাবোনা।
রাফসান ঠান্ডা গলায় বললো, সাফা আমি বলছিনা তোমার দোষ। আল্লাহ না দিলে বান্দা কিছু করতে পারেনা। আমি ডাক্তার দেখাতে বলছি কারণ প্রথমবারের জন্য কোনো জটিলতা তৈরি হয়েছে কিনা,,,,,

“এটার মানে কি রাফসান? আমি যা ভাবছি তা নয়? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললেই তো কথা বদলে যাবেনা।তুমি এটাই মিন করেছ এখানে আমার দোষ,,,”
তারপর সে রেগে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে লাগলো। রাফসান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে গেল। দরজার বাইরে অবধি শোনা গেল সাফা চিৎকার করে বলছে, কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাচ্ছ কেন। ফেস করার সাহস নেই?

আসলেই তো নেই, তবুও তো সব ফেস করতে হলো। এই কঠিন সত্যিটা তো এড়ানো গেল না।

ফোনে রিং হচ্ছে সেদিকে খবর নেই তার। বেশ কয়েকবার রিং বাজার পর বিরক্তচোখে ফোনে তাকালো। না চাইতেও ফোন রিসিভ করলো,

“হ্যাঁ বলুন মিস সিতারা”

“কি হইছে আপনার? কোনো খোঁজখবর নাই? কতগুলি মেসেজ দিলাম কল করলাম। রেসপন্স ই করছেন না!”

“আপনি আমার আত্মীয় নাকি বন্ধু? আপনাকে রেসপন্স দেওয়ার দায়বদ্ধতা আছে? আমার ইচ্ছে হয়নি তাই ব্যাক করিনি এখানে কৈফিয়ত চাওয়ার কি আছে?”

“আপনি এতো রেগে কথা বলছেন কেন? আপনার কি মন খারাপ? দেখুন আমি তো কৈফিয়ত চাইছিনা, টেনশন হচ্ছিল তাই জিজ্ঞাসা করলাম।এমন তো করেন নি আগে,,”

“চিনেন কয়দিন হয়? কি করে জানবেন এমন করি নাকি করিনা??”

সিতারা হেসে বললো, আসলেই তো! কথার লজিক আছে। আচ্ছা আপনি কোন সাবজেক্টে পড়েছেন বলুন তো?

রাফসান চুপ করে রইলো,

“শুনুন আপনি যেখানেই আছেন এড্রেস দিন তো। চটজলদি প্লিজ”

“মানে কি এসবের? আমি কেন বলবো আমি কোথায়?”

“এতো না পেঁচিয়ে বলুন তো। নাহয় এখুনি হাতিরঝিল আসুন আধঘণ্টার মধ্যে।”

“আপনি অধিকার খাটাচ্ছেন কিভাবে?”

“মেয়েরা স্বভাবতই অধিকার খাটায়। সম্পর্কের ধরাবাঁধার তোয়াক্কা না করেই। এখন যা বলছি করুন। আমি এখানে একা বসে আছি , জানেন তো এখন মেয়েরা কত আনসেইফ। দায়িত্ব বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি?”

রাফসান বোকার মতো হা করে রইলো। কি বলে এই মেয়ে। সে একা থাকুক বা দোকা এখানে ওর সেইফটির দায়িত্ব তার কিভাবে? স্ট্রেইঞ্জ!

চলবে,,,,

#অবান্তর_চিরকুট (পর্ব-10)

♡আরশিয়া জান্নাত

“শুনুন মিস সিতারা, এমন হুটহাট আবদার করে বসবেন না প্লিজ। আমার ইচ্ছে ছিলনা বের হবার তবুও বাধ্য হয়ে এসেছি,,”

“আবদার করে কেউ যদি কিছু পায় তবে কি সে নিষেধাজ্ঞা মানবে?”

“এসব কথাবার্তা শুনতে চাইছিনা।”

“এতো বিরক্ত কেন কি হয়েছে বলুন শুনি?”

“কিচ্ছু হয়নি। কেন ডেকেছেন তা বলুন”

“নাহ আগে বলুন আপনার ঘটনা। তারপর আমি বলবো। এমন ভ্রু কুঁচকে বিরক্তমুখ করে রাখা কাউকে আমি কথাটা বলতে পারবোনা। তারচেয়ে আপনার মুড চেইঞ্জ করতে বলুন আগে।”

“ওকে বলতে হবেনা। আমি যাই টাটা।”

” আরেহ আরেহ শুনুন তো ”

“কি?”

“বাব্বাহ এতো ঝাঁজ? আগেরজনের প্রভাব নাকি জন্মগত?”

“স্যরি?”

“হেহে ইটস ওকে।”

“আপনাকে স্যরি বলিনি। বললাম কি বুঝালেন সেটা আবার বলতে”

“দেখি চলেন তো কোথাও গিয়ে বসি। খুব খিদে পেয়েছে,,”

“তো বাসায় চলে যান। এখানে বসে আছেন কেন?”

“উফফ এতো কথা না বলে চলেন বিরিয়ানি খাবো।”

সিতারা একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেল রাফসান কে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে। রাফসান খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ালো। রাফসান এইটুকু বুঝে গেছে সিতারা নাছোড়বান্দা, সে যা বলবে তা করেই ছাড়বে।

“এবার বলুন এভাবে কয়দিন কাটাবেন?”

“কিভাবে?”

“আপনার সম্পর্কে আমি সব ইনফরমেশন কালেক্ট করেছি মি. রাফসান। আপনার এক্স ওয়াইফের নাম সাফওয়ানা ইসলাম। সে বর্তমানে যাত্রাবাড়িতে নতুন হাজবেন্ডের সঙ্গে আছে। আপনার ফ্যামিলি মেম্বার বলতে কেবল একটা ফুপী আছে যারা মোহাম্মদপুর থাকেন। আপনি কেডিএস গ্রুপে ফ্লোর ইনসার্চ হিসেবে জব করতেন, সেটা ছেড়ে তিনমাস লাপাত্তা ছিলেন। বর্তমানে খুব সাধারণ একটা কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে আছেন। তাও পাঁচদিন ধরে অফিস মিস করছেন। সারাদিন বাসায় থাকে রাতে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ান। রিসেন্ট আপনার আরেকটা অভ্যাস গড়ে উঠেছে। রোজ রাতে ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে নিচে লাফ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু কিছু একটার জন্য থেমে যাচ্ছেন প্রতিবার,,,,”

রাফসান হা করে তাকিয়ে রইলো সিতারার দিকে। এই মেয়ে কি গোয়েন্দা নাকি পুলিশ! সে এতোকিছুর খবর নিয়েছে কেন? তাকে ফলো করার কারণ কি! নাকি কোনো গ্রুপের সদস্য, সে কি কোনো ফাঁদে পড়ে গেল?? রাফসানের কপালে ঘাম জমতে শুরু করলো। সিতারা কে? কি চায় সে? তার তো বিশেষ কোনো সম্পত্তিও নেই ব্যাঙ্কেই যা ক’টা টাকা আছে। তবে কি সেজন্য?!

“মি. রাফসান চিন্তিত হবার কিছু নেই। আপনার অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।”

“কে আপনি? এতো সব তথ্য বের করার উদ্দেশ্য কি?”

“আপনি তো কিছু বলেন না। তাই আমিই বের করেছি। ঢাকা শহরে কারো সম্পর্কে তথ্য বের করা কঠিন নাকি?”

“মানুষ এমনি এমনি কারো তথ্য সংগ্রহ করেনা।”

“সেটা অবশ্যই ঠিক। আমারো উদ্দেশ্য আছে আর সেটা বলতেই আপনাকে ডেকেছি।”

“কি সেটা?”

সিতারা কিছুক্ষণ থেমে বললো, আপনি আমায় বিয়ে করতে পারবেন?

রাফসান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। সিতারা চারদিকে তাকিয়ে বললো, প্লিজ বসুন।

রাফসান বসে বললো, এইসবে মানে কি? কি চলছে আপনার মনে আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

“দেখুন আপনার সম্পর্কে যা জানার জেনেছি। আপনি চাইলে আমার সম্পর্কেও বলবো। আপনি এতো রিয়েক্ট না করে আমার সিচুয়েশনটা বুঝুন।”

“আপনার সিচুয়েশন বলতে?”

সিতারা রাফসানকে সবটা খুলে বললো। তাহজীবের সত্যিই গ্যারান্টি নেই, এখন হুট করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলেও সম্ভব হবেনা। সে ঠিকই সেটা ভেঙেই ছাড়বে। এই মুহূর্তে রাফসানের চেয়ে বেটার অপশন আর কিছুই মাথায় আসছেনা তার।
সবটা শুনে রাফসান বললো, দেখুন আপনার পরিস্থিতি আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আমি কিভাবে,,

“আপনার যেমন পাস্ট আছে আমারো আছে। আপনার মনের অবস্থা আমার চেয়ে ভালো কে বুঝবে মি. রাফসান?
আমি সেই মানুষটার জীবনে আর ফিরতে চাইনা, প্লিজ আমায় সাহায্য করুন।”

“আমাকে সময় দিন। আমি ভেবে জানাবো।”

রাফসান উঠে চলে গেল। সিতারা মাথানীচু করে বসে রইলো। রাফসান যদি না বলে দেয় কি করবে ও?
_________________

আকাশে পঞ্চমীর সরু চাঁদ দেখা যাচ্ছে। তার একটু পাশেই জ্বলজ্বল করে জ্বলছে একটা নক্ষত্র। রাফসানের মনে হলো, চাঁদটাও বুঝি সঙ্গী জুটিয়েছে! সিতারার সম্পর্কে তার ধারণা এই মেয়েটা খুব অদ্ভুত। মানুষকে অল্পতেই আপন করে নেওয়ার কিংবা বিশ্বাস করে ফেলার দারুণ ক্ষমতা তার। অবশ্য এর প্রমাণ তো সে প্রথমদিনই পেয়েছে। কিন্তু রাফসানের যে মনের অবস্থা এই সময়ে কাউকে জীবনে আনার কথা সে কল্পনাই করতে পারেনা। সিতারার মতো মেয়েকে কেউই রিজেক্ট করার কথা ভাববেনা, মেয়েটার পরিস্থিতি সত্যিই অনেক ক্রিটিক্যাল। নাহয় নিশ্চয়ই এমন কথা বলতো না। কি করবে কিছুই মাথায় আসছেনা। এ কেমন দোটানায় পড়ে গেল সে! না পারছে ইগ্নোর করতে না পারছে মেনে নিতে। সারাটা রাত তাঁর এই চিন্তাতেই কেটে গেল।



“বলছি কি সিতারার বিয়ের ব্যাপারে এবার ভাবা উচিত না বলো? এতোদিন তো ভেবেছি তাহজীবের সঙ্গে হবে। তাই আর বাইরে কোথাও বলিনি। এখন তো কথা বলতে হবে,বয়স তো আর বসে থাকছেনা!”

“সবে তো একটা যন্ত্রণার সময় পার করছে। ওকে একটু সামলে উঠতে দাও। তারপর নাহয় এ বিষয়ে আলোচনা করবো?”

“উফফ তোমার কি! তোমাকে তো কেউ কথা শোনায় না, আশেপাশের মানুষেরা কত কি বলে জানো?”

“শোনো সোফিয়া আমার মেয়ে যতদিন না চাইবে আমি ওকে এই বিষয়ে জোর করবোনা। এতে কে কি বলে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।”

“কিন্তু ,,,”

“কোনো কিন্তু না। গতবার তুমি আগ বাড়িয়ে আপার সাথে কথা বলেছিলে। আমি তখন কিছু বলিনি, তোমার উচিত ছিল এই বিষয়ে সিতারার সঙ্গে কথা বলা, ওদের সম্পর্কের অবস্থা না বুঝে হুট করে বিয়ের টপিক এনে মেয়েটাকে অপমান করানোর সুযোগ করে দিয়েছিলে তাহজীবকে। নাহয় আমার মেয়েকে রিজেক্ট করার স্কোপ ও পেতোনা। এবারো যদি তুমি এমন কিছু করো যাতে আমার মেয়ে ছোট হয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা এই আমি বলে দিলাম।”

সোফিয়া মন খারাপ করে উঠে চলে গেল। জহির সাহেব রাগের মাথায় সব বললেও ভুল কিছু বলেননি।

“বাবা আসবো?”
জহির সাহেব মাথা ঠান্ডা করে বললেন, হু আয়,
“তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে বাবা। তুমি কি ফ্রি আছো?”

“আমার মায়ের সামনে ব্যস্ততা দেখাবো? বল কি বলবি”

“বাবা, আমি এমন একজনকে চিনি যার এই পৃথিবীতে কেউ নেই, কিন্তু তার মনটা অনেক স্বচ্ছ। তার একটা অতীত আছে, ঠিক যেমন আমার আছে। সেই মানুষটাকে যদি আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেই তুমি কি খুব রাগ করবে?”

জহির সাহেব মেয়ের চেহারার দিকে চেয়ে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলেন। সিতারা তাঁর বাবার সামনে বসে বললো, বাবা আমি জানি আমার মানুষ চেনার ক্ষমতা নেই। আমি ভুল চয়েজ করি, তাই এবার আমি তোমায় জিজ্ঞাসা করছি। তবে বাবা আমি চাই তুমি এই বিষয়ে সিদ্ধান্তটা তাহজীব ভাইয়ার ফেরার আগেই নিবে। এই নাও তাঁর এড্রেস। তুমি চাইলেই দেখা করতে পারো কিংবা খবর নিতে পারো তোমার ইচ্ছেমতো।

জহির সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, তুই ভয় পাচ্ছিস সে ফিরে তোকে জোর করবে তাই এমন তাড়াহুড়োয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস?

“আমি জানি বাবা আমার কাছে আরো বেটার অপশন আছে। তোমরা চাইলেই আমার জন্য হাই কোয়ালিফাইড কাউকে আনতে পারবে। কিন্তু বাবা আমি এই মানুষটাকে চুজ করেছি কারণ আমার মনে হচ্ছে একমাত্র সে-ই পারবে আমার দুঃখ বুঝতে, আমাকে বুঝতে,আমাকে ভালো রাখতে।
বাবা আমি যাকে ভালোবাসতাম তাঁকে ঘিরেই আমার পৃথিবী ছিল, কিন্তু তাঁর পৃথিবীতে শুধু আমি ছিলাম না,,,,,,,,
বাবা তুমি একবার কথা বলবে? আমার বিশ্বাস তুমি নিরাশ হবেনা।”

“বেশ। আমি খোঁজখবর নিয়ে তোকে জানাচ্ছি।”

“বাবা সে কিন্তু ম্যারিড ছিল আর,,,, ”

“মানুষটা ভালো কিনা সেটা জরুরি। আর তুই যখন সবটা জেনেও আগ্রহী আমি এই ইস্যু তুলে বিড়ম্বনায় ফেলবোনা। তবে যদি আমি অন্য কোনো ত্রুটি পাই আশা রাখিস না।”

সিতারা হাসিমুখে বেরিয়ে গেল। মেয়ের চোখেমুখে প্রবল আত্মবিশ্বাসই বলে দিচ্ছে ছেলেটার বিষয়ে সে সম্পূর্ণ নিশ্চিত। অবশ্য তাঁর মেয়ের স্বভাবটাই এমন। কিন্তু এবার তিনি ছাড় দেবেন না। ভালোমতো খোঁজ নিয়ে তবেই এগোবেন।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here