#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৭,৮
#সাবিকুন নাহার নিপা
পর্ব-৭
বিন্তীদের বাড়িতে যাওয়ার আগে শিশির ভেবেছিল ওর দিনগুলো বোরিং কাটবে। একটা কিছু ছুতোয় ঢাকা চলে আসবে একদিন থেকেই। কিন্তু ওখানে এতো ভালো লাগলো! দুদিন হয়ে যাবার পর বিন্তী শিশির কে বলল,
“চাচী ফোন করেছিল। জানতে চেয়েছে আমরা কবে ফিরব। ”
শিশির কপাল কুচকে বলল,
“কী আশ্চর্য! একটা জায়গায় আসতে না আসতেই যাবার প্রশ্ন আসছে কেন! মা’য়ের আক্কেল টা কী। ”
বিন্তী ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,
“তাহলে চাচীকে কী বলে দেব?”
“বলো যে এখানে পার্মানেন্টলি থাকতে আসি নি। ফিরব। ”
বিন্তী নিঃশব্দে হেসে বলল, আচ্ছা।
বিন্তীদের বাড়ির সবাই যেন একটু বেশীই ভালো। বিন্তীর বাবাকে শিশির আগে থেকেই চিনে। মা, ভাই, বোন তাদের সঙ্গে আলাপ হবার পর শিশির মনে মনে বলল,
বিন্তী কিছুতেই এদের মেয়ে না। কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। এরা ভালোমানুষ বলে মেয়ে পরিচয় দিয়ে বড় করেছে।
বিন্তীর মা অসুস্থ থাকলেও নিজের হাতে শিশিরের জন্য রান্না করছেন। নতুন নতুন পিঠে বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন। পুকুর থেকে বড় মাছ ধরা হচ্ছে শিশিরের নাম করে। এতটা আদর যত্ন শিশির আজ পর্যন্ত কোথাও পায় নি। শিশিরের আত্মীয় স্বজন সংখ্যায় কম না। নানুর বাড়ির আত্মীয় স্বজন রা নানী মারা যাবার পর পর ই দূরের হয়ে গেছে। এখন শুধু গ্রামে একটা বাড়িই পড়ে আছে। সেখানে থাকার লোক নেই। আর বাবার ভাই, বোন যারা আছে তারা ঢাকায় থাকে ঠিকই কিন্তু দেখা হয় কালেভদ্রে।
এতো ভালোবাসা বহুদিন পর পেল। আর পেয়ে দু’হাতে মুঠো ভরে নিতে থাকলো।
খাওয়া দাওয়া ছাড়াও এখানে এসে ঘুরেফিরে দারুণ সময় কাটছে। ইমনের সঙ্গে হাটে, বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নৌকা করে নদীর ওপার যাচ্ছে। বঁড়শিতে মাছ ধরছে। শহুরে জীবনের খোলস থেকে বেরিয়ে মাটির কাছাকাছি এসে খুব উপভোগ করছে।
***
বাড়িতে আসার দুদিনের মধ্যে বিন্তী আর শিশিরের একবারও ঝগড়া হয় নি। প্রথম দিন রাতে ঘুমাতে যাবার সময় বিন্তী শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি খাটে ঘুমাও। ”
“আর তুমি?”
“আমি মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমাব। যদিও অভ্যাস নেই। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এক্সট্রা ঘর নেই। ঐশির সঙ্গে ঘুমাতে গেলে মা আবার ত্যাড়া চোখে তাকাবে। ”
“তোমার কী রাতে লাফালাফি করার স্বভাব আছে?”
“মানে?”
“মানে হাত, পা ছোড়াছুড়ি করার স্বভাব না থাকলে খাটের ওই প্রান্তে ঘুমাও। ”
বিন্তী ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সিরিয়াসলি? বাড়িতে তো এক ঘরে থাকবে না বলে দক্ষযজ্ঞ বাধালে।
“আরে এক খাটে ঘুমানো নিয়ে সমস্যা নেই। আমার তো তোমার রুমে থাকা নিয়ে সমস্যা। কারন আমার প্রাইভেসি লাগে। ”
“এতো প্রাইভেসি কেন লাগে?”
“এই তুমি এতো প্রশ্ন করছ কেন?”
বিন্তী আর কথা বাড়ালো না। বিছানা ঠিক করে মাঝখানে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো। শিশির লাইট অফ করে বালিশ ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়লো। কিছু সময় চুপ থেকে বলল,
“বিন্তী ঘুমিয়েছ?”
“না। ”
“তোমার বাড়ির লোক খুব ভালো। তোমার মতো না। তুমি এরকম বদমায়েশ কিভাবে হলে?”
বিন্তী নিঃশব্দে হাসলো। বলল,
“কী জানি। ”
শিশির আর কথা বাড়ালো না। বিন্তী জিজ্ঞেস করলো,
“শিশির তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“ছিলো। ঠিক ছিলো না, ছিলো আর আছের মাঝামাঝি। ”
“বুঝলাম না। ”
“মানে আমাদের মাসে দশবার করে ব্রেক আপ হয়। তাই বুঝতে পারছি না যে আছে বলব নাকি ছিলো বলব। ”
বিন্তী হেসে ফেলল। বলল,
“তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন? আর তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে খুব একটা কষ্টে আছ। ”
“কষ্টে কেন থাকব। আরে সিরিয়াস কিছু না। না পেলে মরে যাব এই টাইপ প্রেম না। তবে পেলে মরে যেতাম এটা শিওর। ”
“তাহলে এটা আবার কেমন প্রেম। ”
“প্রেম কী না সেটাও জানিনা। সবার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমার না থাকলে বন্ধুদের আড্ডায় প্রাস্টিজ থাকবে না তাই নামের গার্লফ্রেন্ড। ”
বিন্তী অবাক গলায় বলল,
“নামের গার্লফ্রেন্ড?”
“হ্যাঁ। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাপল ছবি আপলোড করার জন্যও তো একজন কে দরকার। ”
বিন্তী শব্দ করে হেসে ফেলল। শিশিরও হাসলো। হাসি থামিয়ে শিশির বলল,
“এখন মনে হচ্ছে যে তুমি আঙ্কেল, আন্টির মেয়ে। ”
বিন্তীর হাসি থামছে না। থেমে থেমে হেসে উঠছে। শিশিরের ভালো লাগছে। বিন্তীকে এখন আর শত্রুপক্ষও মনে হচ্ছে না। কথা বলেও আরাম লাগছে। শিশির জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার প্রেম তো সিরিয়াস ছিলো তাই না?”
প্রশ্নটা করে শিশির জিব কাটলো। সেনসিটিভ টপিকে কথা বলা একদম উচিত হয় নি। বিন্তী বলল,
“তোমার প্রেমের গল্প শুনে মনে হচ্ছে আমারটাও সিরিয়াস ছিলো না। ”
বলে বিন্তী আবারও হাসতে শুরু করলো। শিশিরও হাসলো।
ওই রাতে দুজনে অনেকক্ষন গল্প করে কাটালো। সকালবেলা খেয়েদেয়ে শিশির বেরিয়ে পড়লো ঘুরতে আর বিন্তী মা বোন কে সাহায্য করছিল। বিন্তীর মা মেয়েকে নিয়ে ভয়ে ছিলেন। এরকম একটা বিয়েতে মেয়ে মানিয়ে নিতে পারবে কী না এই নিয়ে দ্বিধার শেষ ছিলো না। কিন্তু শিশির কে দেখে নির্ভার হলেন। ছেলেটা একদম মাটির মানুষ। যেভাবে সবার সঙ্গে মিশছে।
পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলো একটা রাত কেটে যাবার পর। হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে রাতে বেশ ভালো শীত পড়ে। তাই পাখা চালানো দরকার হয় না। ঐশির ঘর থেকে বিন্তীর স্পষ্ট হাসির আওয়াজ নিজ কানে শুনে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছে।
***
চার দিনেও যখন শিশির রা ফিরছে না তখন তুষার এলো। এসে দেখলো শিশির এখানে বেশ আনন্দেই আছে। তুষার কে পেয়ে শিশিরের আনন্দ আরও দ্বিগুন হলো। দুই ভাই মিলে পুকুরে একদিন মাছ ধরতেও নেমেছিল।
আশেপাশের আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের আদর, আপ্যায়ন সবকিছুই হাসিমুখে গ্রহন করলো শিশির। যারা বিন্তীর ভবিষ্যৎ ভেবে চিন্তায় মরে যাচ্ছিলো তারাও শিশির কে দেখে ভারী অবাক হলো।
দুদিনের বেড়ানো দশদিনে গিয়ে ঠেকলো। শেষমেস শিরিনের ধাক্কাধাক্কিতে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো। শিশির সবাইকে কথা দিলো যে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ও আবারও আসবে পিকনিক করতে। বিন্তী না এলেও ও আসবে।
আসার আগে বিন্তীর মা শিশিরের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“বিন্তীকে দেখো রেখ।”
শিশির অপ্রস্তুত হয়ে গেল। একটু হাসার চেষ্টা করলো। শিশিরের চুপসে যাওয়া মুখ টা বিন্তীর চোখ এড়ালো না। আসার সময় বিন্তী কানে কানে বলল,
“আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি। সব মায়েরাই নিজের মেয়ে জামাইদের এই কথা বলে। রিলাক্স হও। ”
শিশির বিন্তীর দিকে গভীর চোখে তাকালো। ওর মনে তখন অন্য ভাবনা। না বিন্তী সেটা বুঝবে না।
***
ঢাকায় ফেরার পরের দিন শিশির বিন্তীর ঘরে গেল। বিন্তী বলল,
“কিছু বলবে?”
“থ্যাংকস। ”
“কেন?”
“আমাকে জোর করে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য। ”
“আমি জোর করে নিয়ে গেলাম কই। তুমি না গেলে তো আর ধরে বেঁধে নিয়ে যেতে পারতাম না। ”
শিশির ইতস্তত করে বলল,
“তুমি আমার ঘরে থাকতে পারো। ”
বিন্তী ভারী বিস্মিত হলো। বলল,
“শরীর ঠিক আছে?”
শিশির অপ্রস্তুত হয়ে গেল। বলল,
“না এই কয়দিন থেকে মনে হলো যে তুমি অতোটাও ডিস্টার্বিং না। ”
বিন্তী হেসে বলল, ওহ। আমি ভাবলাম আমাদের বাড়িতে গিয়ে ভালো লেগেছে বলে খুশি হয়ে গিফট দিচ্ছো।
শিশির মাথা চুলকে বলল,
“না গিফট এনেছি। ”
বিন্তী আবারও অবাক হলো। বলল,
“তুমি আমার সঙ্গে এত ভালো করে কথা বলছ কেন শিশির?”
“আগে বলো গিফট দেব কী না?”
“হ্যাঁ দাও। ”
শিশির বেরিয়ে গেল। মিনিট খানেকের মধ্যে একটা ডায়েরি এনে বিন্তীকে দিলো। বিন্তী উল্টেপাল্টে দেখলো। শিশির বলল,
“ভালো স্টুডেন্টরা নিয়মিত ডায়েরি লিখে। তোমারও নিশ্চয়ই অভ্যাস আছে। ”
বিন্তী মাথা নেড়ে বলল, থ্যাংক ইউ । খুব ভালো হয়েছে। আমি নিয়মিত লিখব।
শিশির চলে যাবার পর বিন্তী ডায়েরি টা খুলল। ওর ডায়েরিতে লেখার অভ্যাস নেই। কখনো ভালোও লাগে নি। আজ ই প্রথম লিখবে। কলম টা হাতে নিয়ে বিন্তী লিখলো,
“শিশির আমি দিনলিপি লিখতে পছন্দ করি না। তবে তোমার ডায়েরি তে তো একটা কিছু লিখতেই হয়। কী লেখা যায় বলো তো! তোমার আমার গল্প? হ্যাঁ সেটা লেখা যায়। ”
বিন্তী হেডিং এ বড় অক্ষরে লিখলো,
‘অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো ‘
চলবে….
#অপ্রেমের_ গল্পটা_যেভাবে_ শুরু_ হয়েছিলো
#পর্ব-৮
#সাবিকুন নাহার নিপা
বিন্তীর এই বাড়িতে শুয়ে, বসে থাকা আর টিভি দেখা ছাড়া কোনো কাজ নেই। রান্না বান্না আর ঘরের অন্যান্য কাজের জন্য একজন বুয়া আছে যিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকেন। শিরিন সব তদারকি করেন। বিন্তী টুকটাক কাজ করার চেষ্টা করলেও শিরিন করতে দেয় নি। বলেছে,
“তুমি কাজ কেন করবে? কাজের লোকের কী অভাব! সময় না কাটলে টিভি দেখো, বই পড়। ”
বিন্তীও তাই করছে। কিন্তু কতক্ষন ই বা এসব ভালো লাগে। শাশুড়ীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে গল্প করে কিংবা তার সিরিয়াল দেখার সময়ে বসে থেকে সঙ্গ দেয়। এভাবে সময় কাটছে।
শিশিরের সঙ্গে দেখা এবং কথাবার্তা দুটোই কম হয়। শিশির সকালের খাবার ই খায় বারোটার পর। খাওয়ার সময় শিরিন বসে থাকে। বিন্তী একদিন খাবার দাবার এগিয়ে দিতে গেলেও শিশির বলল,
“মা কোথায়? ব্যস্ত নাকি?”
বিন্তী বুঝলো যে খাওয়ার সময় মায়ের উপস্থিতিটুকু চায় শিশির৷ তাই আর ওমুখো হয় না। খেয়েদেয়ে অনেক সময় নিয়ে সেজেগুজে শিশির বেরিয়ে যায়। ফিরে সন্ধ্যায়। মাঝেমধ্যে রাতও হয়। সন্ধ্যায় ফিরলে তখন দুপুরের খাবার খায়। রাতের খাবার আবার বারোটায়।
তুষার আরও বেশী ব্যস্ত। সকালে বেরিয়ে যায় সন্ধ্যায় ফিরে আসে। ইউনিভার্সিটি বন্ধু বান্ধব নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকে। তবে সন্ধ্যেবেলা ফিরলে বিন্তীর সঙ্গে গল্পগুজব করে।
শিশিরের সঙ্গে বিন্তীর আর ঝগড়াঝাটি হয় নি। বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকে বিন্তীকে খুচিয়ে আর কথা বলে নি। তবে অন্য কথাবার্তাও হয় কম। শিরিন মাঝেমধ্যে বলে শিশিরের ঘরে গিয়ে থাকতে। বাড়িতে কাজের লোক আছে, তাদের চোখে ব্যাপার টা ভালো ঠেকছে না। এদের মাধ্যমে সবাই জেনে যাবে। কিন্তু বিন্তীর খুব সংকোচ হয়। শিশিরের ঘরে থাকতে শুরু করে আবার কোন নতুন ঝগড়ার সূচনা হয় কে জানে!
***
শিশিরের ঘুম ভাঙলো আজ দশটার দিকে। ফোন হাতে নিতেই দেখলো ঝুম্পার অসংখ্য কল এসেছে। এই মেয়ে অনেক দিন আগেই ওকে ব্লক ছাড়িয়ে ফোন করেছে কিন্তু ও রিসিভ করে নি। আপাতত এই প্যারা ওর ভালো লাগছে না। মাঝখানে বিন্তীকে নিয়ে ঝামেলায় ছিলো বলে ও নিজেই ব্লক করেছিল। পরে ব্লক ছাড়ানো ভুল হয়েছে। অসংখ্য ফোন, ম্যাসেজ দিয়ে ভরিয়ে ফেলছে। বিন্তীর সঙ্গে বিয়ে যেমন ই হোক হয়েছে। এখন আরেকটা মেয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখার কোনো মানে হয় না। যদিও ওই সম্পর্কে কোনো কমিটমেন্ট নেই। তারচেয়েও বড় কথা হলো কিভাবে যেন শিশিরের বাবা ঝুম্পার কথা জেনে গেছেন। বিন্তীদের বাড়িতে যাওয়ার আগে ডেকে বলেছিলেন,
“যে মেয়েটার সঙ্গে প্রায়ই রেস্টুরেন্টে খেতে যাও, আশা করি তার সঙ্গে তোমাকে আর দেখা যাবে না। ”
শিশির একটা শুকনো ঢোক গিলল। বাবা কী ওর পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছে নাকি! গোয়েন্দা লাগে না অবশ্য। তুষার কোনো কিছু জানলে সেটা মা জানবে। আর মা পতিভক্ত স্ত্রী। সে নিশ্চয়ই স্বামীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করে থাকবে।
এসব কারণেও শিশির ঝুম্পাকে এড়িয়ে চলে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ঝুম্পা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না যে শিশির বিয়ে করছে। বিয়ের ছবি দেখেও ভাবছে প্রাংক।
শিশির লাস্ট ম্যাসেজ টা ওপেন করলো। সাথে সাথেই ওর চক্ষু চড়কগাছ। ঝুম্পা লিখেছে,
“তুমি সমস্ত লিমিট ক্রস করে গেছো বাবু। আমি আসছি তোমার বাসায়। তোমাকে না দেখে থাকতে পারছি না। ”
শিশির লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঝুম্পা বাড়িতে এলে তো সর্বনাশ। শিশির বাইরে এসে তুষার কে ডাকতে লাগলো। তুষার এই সময়ে বাসায় থাকে না খেয়াল হতে মা’কে ডাকা শুরু করলো। বিন্তী নিজের ঘরে ছিলো। এসে বলল,
“তুষার আর চাচী দুজনের কেউই বাসায় নেই। তুমি আজ এতো সকালে? বাই দ্য ওয়ে গুড মর্নিং। ”
“আর মর্নিং! আমার আজ শুরু হয়েছে ব্যাড দিয়ে। বলো ব্যাড মর্নিং। ”
“ব্যাড মর্নিং। কিন্তু কী হয়েছে জানতে পারি?’
শিশির মোবাইলের স্ক্রিন টা বিন্তীর সামনে ধরে বলল,
“দেখো। ”
বিন্তী ম্যাসেজ টা পড়ে বলল, এটা কে?”
“ঝুম্পা। ওই যে সেই নামের গার্লফ্রেন্ড। ”
“ওহ। তা আসুক সমস্যা কী?”
শিশির চিৎকার করে বলল, আরে সমস্যা তো নিজেই বাড়ি বয়ে আসছে। তুমি বলছ সমস্যা কী!
“তাহলে কী করবে এখন?”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না। তুষার থাকলে বুদ্ধি দিতে পারতো। ”
বিন্তী কিছু বলল না। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো। শিশির বলল,
“ঝুম্পা বাড়ি এসে ঝামেলা করবে। আর বাবা এসে লাত্থি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করবে।”
বিন্তী মন খারাপ করা গলায় বলল,
“আমার তো তেমন বুদ্ধিসুদ্ধি নেই। তাই কোনো হেল্প করতে পারছি না।”
বিন্তীর কথায় শিশিরের চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। বলল,
“তুমি হেল্প করতে পারো। ”
“কীভাবে? ”
“ঝুম্পার সঙ্গে কথা বলো। ও কিছুতেই বিশ্বাস করছে না যে আমি বিয়ে করেছি। তুমি বললে বিশ্বাস করবে। প্লিজ একটু বলো। আমাকে বাঁচাও। দরকার হলে তোমার জন্য জান দিয়ে দেব। ”
“তোমার জান নিয়ে তো আর কোনো লাভ নেই। ভুনা করে খাওয়া যাবে না। আচ্ছা ঠিক আছে দাও কথা বলি। ”
শিশিরের অবস্থা খারাপ বলে বিন্তীর রসিকতা গায়ে মাখলো না।
ঝুম্পার নাম্বারে ডায়াল করে ফোন টা বিন্তীর দিকে এগিয়ে দিলো।
ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে দেয়া। চারবার রিং হতেই ঝুম্পা ফোন ধরে বলল,
“হ্যালো বাবু, এতক্ষনে লাইনে আসছ? তোমার প্রবলেম কী বাবু?”
বিন্তী মিহিস্বরে বলল,
“আমি বাবু না। ”
ঝুম্পা থতমত খাওয়া গলায় বলল,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি কিন্তু তোমার বাবুর আম্মুও না। ”
ঝুম্পার গলার স্বর এবার চেঞ্জ হলো। নরম গলায় বলল,
“তাহলে কে? কাজিন?”
শিশির সব টা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। বিন্তী বলল,
“না আমি বাবুর বউ। ”
ঝুম্পা একরকম চিৎকার করে বলল,
“হোয়াট! ফাজলামো হচ্ছে! শিশির কে ফোন টা দিন। ”
“না দেয়া যাবে না। তোমার বাবু এখন ভীষণ ব্যস্ত। ”
“কোথায় ও? কী করছে?”
বিন্তী শিশিরের দিকে তাকালো। শিশির ইশারায় বলল, চালিয়ে যেতে।
বিন্তী বলল, বাবু এখন তার বউয়ের সঙ্গে ব্যস্ত। আসলে বাসায় এই সময়ে কেউ নেই বুঝতেই পারছ….
শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিন্তী তো একের পর এক ছক্কা মারছে। আর ঝুম্পা বেচারি!
ঝুম্পা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“দেখুন একদম ফাজলামো করবেন না। আপনি জানেন আমি কে?”
” তোমার বাবুর মোবাইলে তো ডায়নাসোর নামে নাম্বার টা সেভ করা। তাই আমি ওই নাম ই ভেবে নিয়েছি। ”
শিশির আঁতকে উঠলো৷ সর্বনাশ! ঝুম্পার রিয়েকশন এখন কী হচ্ছে! মেয়েটা হার্ট অ্যাটাক না করলে হয়!
ঝুম্পা বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“কী নামে সেভ করা?”
“ডায়নাসোর। সেই সঙ্গে স্ক্রিনে কিং কোবরার ছবি এড করা। তুমি ফোন করলে বা তোমাকে ফোন করতে গেলে ওই ছবিটা ভেসে ওঠে। ”
ঝুম্পা বাকহারা হয়ে গেল। সেই সঙ্গে শিশিরও। বিন্তী তো এরপর জেলে যাবে শিওর। কারণ ঝুম্পা আর এই পৃথিবীতে টিকেই থাকবে না। মরে গেলে শিশিরও ফেসে যাবে। তখন কাঁদতে কাঁদতে মিথ্যে করে হলেও বলতে হবে, আহারে মেয়েটা কতো ভালো ছিলো!
শিশির ইশারায় বিন্তীকে ফোন রাখতে বলল। বিন্তী রাখলো না। ঝুম্পা অনেকক্ষন পর বলল,
“আমার প্রুভ চাই। ”
“কীভাবে প্রুভ দেব। কাপল ছবি তুলে পাঠাব? রোমান্টিক? ওকে এক্ষুনি পাঠাচ্ছি। ”
বিন্তী ফোন কেটে শিশির কে বলল, রোমান্টিক ছবি পাঠাতে হবে।
শিশির ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,
“আর থাক। যা ডোজ দিয়েছ তাতেই হবে। ”
“ছবি না দিলে তো তোমার বাবু শান্ত হবে না। ফিডিং বোতল নিয়ে এরপরও তোমার পিছনে ঘুরঘুর করবে। ”
শিশির রেগে বলল,
“এই বিন্তী উল্টাপাল্টা কথা বলবে না। ”
“ও’কে। ছবিটা দিয়ে দাও। প্রবলেম সলভ। ”
শিশির বিন্তীর পাশে বসে সেলফি তুলল। বিন্তী সেটা দেখে বলল,
“এটা দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে যে তোমাকে মেরেধরে ছবি তোলানো হচ্ছে। ভাববে আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে ছবি তোলাচ্ছি। ”
শিশির বলল,
“তাহলে?”
বিন্তী ফোন টা হাতে নিয়ে বলল,
“দাঁত বের করে ভালো একটা পোজ দাও। ”
শিশির দাঁত বের করে পোজ দিলো। ছবি তোলার সময় বিন্তীর কাধে হাত রেখে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। বিন্তী ফটাফট কতগুলো ছবি তুলে নিলো।
***
ছবি দেখে ঝুম্পা সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বলল,
“ওই কুত্তাটা’কে বলে দিবেন যে ঝুম্পার জন্য প্রতিদিন দশ টা ছেলে লাইন দিয়ে থাকে৷ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজনেস ম্যান রা বিয়ের জন্য পাগল। কিন্তু আমি ও’কে রিয়েল লাভ করতাম বলে কিছু করিনি। ওর তো কোনো যোগ্যতাই নেই আমার বয়ফ্রেন্ড হবার। ”
“কেন তুমি কী ভিনগ্রহের লোক?”
“আমার ইনস্টাগ্রাম আর টিকটকে ফলোয়ার দেখুন বেয়াদব মহিলা। তারপর বুঝবেন। আর কুত্তাটা’কে বলবেন যে আমি ও’কে প্রচুর অভিশাপ দিচ্ছি। ”
“বাবুকে অভিশাপ দেয়া কী ঠিক?”
ঝুম্পা একটা বিশ্রী গালি দিয়ে ফোন টা রেখে দিলো। শিশির রাগী গলায় বলল,
“বিন্তী তুমি আসলেই বড্ড কথা বলো।”
“প্রবলেম সলভ করে দিলাম তার জন্য থ্যাংকস দাও!”
শিশির হেসে বলল, থ্যাংকস। ঝুম্পাকে এই প্রথম মনে হয় কেউ জব্দ করতে পারলো। তোমার ট্রিট পাওনা রইলো।
বিন্তী বলল, ওকে। ট্রিট বুঝে নেব সময়মতো।
শিশিরের প্রবলেম কমার বদলে আরও বেড়ে গেল। ঝুম্পা তার ব্যক্তিগত একাউন্টে বিন্তী আর শিশিরের ফটো আপলোড করে নিজেকে ভিক্টিম হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করলো। আর এই সুযোগে সবাই শিশিরের বিয়ের খবর জেনে গেল।
চলবে….