#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৩,৪
#সাবিকুন নাহার নিপা
পর্ব-৩
গাড়িতে বিন্তী আর শিশির কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলল না। শিশির আড়চোখে বিন্তীকে বারবার দেখলো। রেগে আছে নাকি নরমাল আছে সেটা বোঝার জন্য। শিশির যখন বিন্তীর ঘরে দেখা করতে গিয়েছিল তখন বিন্তী স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করেছিল,
“আপনি বিয়েটা কেন করছেন?”
“বাবা করতে বলেছে তাই। ”
“বাবা করতে বললেই করতে হবে? আপনার নিজের কোনো ডিসিশন নেবার ক্ষমতা নেই?”
“আমি ভালো ছেলে। বাবার কথা শুনে চলি। ”
বিন্তী কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল,
“আমাকে অনুগ্রহ করার দরকার নেই। আপনি বিয়েতে না করে দিন। ”
শিশির একটু সময় নিয়ে বলেছিল,
“আচ্ছা। ”
বাইরে বেরোতেই শিশির সব ভুলে গেল। এবং প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো, বিয়েটা কখন হচ্ছে!
***
ওদের ঢাকায় পৌছুতে পৌছুতে ভোর হয়ে গেল৷ শিশির ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। বিন্তীকে থাকতে দেয়া হলো অন্যঘরে। বিয়ের পর শিশিরের সঙ্গে ওর একটা কথাও হয় নি।
ঘুম থেকে ওঠার পর শিশিরের মা বলল,
“শিশির তোর ঘরে নতুন ফার্নিচার ঢোকাতে হবে। সবকিছু গুছিয়ে নে।”
শিশির অবাক গলায় বলল,
“কেন?”
“কেন মানে কী? বিন্তী থাকবে না?”
“বিন্তী থাকবে কেন? বাড়িতে অন্যঘর আছে সেখানে থাকুক। ”
“এসব কী কথা! বিন্তী অন্যঘরে থাকবে কেন? তোমার বউ ও। ”
“সে যাই হোক। কারোর সঙ্গে আমি রুম শেয়ার করব না। ”
শিরিন আর কথা বাড়ালো না। শিশির কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেলে বিন্তীর জিনিসপত্র ওর ঘরে পাঠানো হলো। ফিরে এসে সেটা দেখে শিশিরের মেজাজ খারাপ হলো। চিৎকার করে মা’কে ডেকে বলল,
“আমি বললাম না যে রুম শেয়ার করব না। ”
শিরিন নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“বললেও শোনা যাবে না। বিন্তী এই ঘরে থাকবে।”
শিশির সোজা বিন্তী যে ঘরে থাকে সেই ঘরে চলে গেল। বিন্তী তখনও ঘুমে ছিলো। দরজায় দুমদাম আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলো। শিশির তখনও এক নাগাড়ে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। বিন্তী দরজা খুলতেই শিশির বলল,
“শোনো বিন্তী তুমি আমার ঘরে থাকবে না। ”
বিন্তী বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। শিশির আবারও বলল,
“এই বাড়িতে অনেক ঘর আছে। সবচেয়ে ভালো যেটা সেটাতে থাকো। কিন্তু আমার ঘরে আসবে না। ”
বিন্তী ঠান্ডা গলায় বলল,
“তোমার ঘরে থাকার জন্য আমি মরে যাচ্ছি এমনটাই বা কেন মনে হলো?”
শিশির ধাক্কা খেল বিন্তীর কথা শুনে। বলল,
“তাহলে তোমার জিনিসপত্র আমার ঘরে কেন?”
“সেটা তোমার মা’কে জিজ্ঞেস করো। ”
শিশির এমনিতেই রেগে ছিলো। তার উপর বিন্তীর চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় আরও মেজাজ খারাপ হলো। রাগ হলে শিশিরের মাথার ঠিক থাকে না। বলল,
“মা’কে কেন জিজ্ঞেস করবো। আমার গলায় ঝুলে পড়েছো তো তুমি। ”
বিন্তী গলার স্বর খানিকটা রুক্ষ করে বলল,
“আমি ঝুলিনি। তোমার বাবা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম বিয়েটা না করতে। ”
শিশির রাগী গলায় বলল, হ্যাঁ সব দোষ তো আমার বাবার। লাস্ট মোমেন্টে এসে বিয়ে ভেঙে ঝামেলা করে আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে আবার বড় বড় কথা! প্রেমিকের সঙ্গে বনিবনা হয়নি অমনি বিয়ে ভেঙে দিলে। আর আমাকে বিয়ে করবার বেলায় ঘোড়ার মতো তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে এলে। আবার ঢং করে বলা হচ্ছে, আঁমিঁ তোঁ বঁলেঁছিঁলাঁমঁ বিঁয়ে নাঁ কঁরতে!
বিন্তী চুপচাপ শুনলো। শিরিন এসে বলল,
“শিশির চেচামেচি কেন করছিস?”
শিশির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মা একটা কথা শুনে রাখো। এই মেয়ে আমার ঘরে থাকতে গেলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তোমাদের কথামতো বিয়ে করেছি ঠিকই কিন্তু আমার পারসোনাল লাইফে কারোর ইন্টারফেয়ার সহ্য করব না।”
শিশিরের কথার মাঝখানেই বিন্তী দরজাটা মুখের উপর লাগিয়ে দিলো।
শিশির চিৎকার করে বলল,
“এই হলো ভালো মেয়ের নমুনা! একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মাতৃতুল্য মহিলার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে! বেয়াদব! ”
শিরিন বলল, তুই যা এখন। এতো পাকামি করতে হবে না।
শিশির নিজের ঘরে এসে বিন্তীর জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিলো। রাগ হলে ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই এক সমস্যা। বিয়ে নিয়ে শিশিরের অতো মাথাব্যথা ছিলো না। কিন্তু বিন্তীর এই ঘরে থাকা নিয়ে মাথাব্যথা হচ্ছে। শিশির অন্যরকম একটা লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত। এই ঘর টা ওর প্রিয় জায়গা। বাইরে না গেলেও এই ঘরে সারাদিন শুয়ে বসে থাকলেও ওর বিরক্ত লাগে না। তাছাড়া শিশিরের রাত জাগার অভ্যাস আছে। রাত জেগে মুভি দেখা, গেম খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ কলে আড্ডা দেয়া, গান শোনা সবকিছু ছেড়ে দিতে হবে ঘরে আরেকজন এসে থাকতে শুরু করলে। বিয়ে করেছে বলে নিজের সব শখ, ইচ্ছে বিসর্জন দিতে হবে!
শিশিরের মেজাজ খানিকটা ঠান্ডা হলো। ফোন হাতে নিতেই দেখলো ঝুম্পা ম্যাসেজ দিয়েছে। শিশিরের বিয়ের কথাটা ঝুম্পা বিশ্বাস করে নি। ভেবেছে শিশির কারো বিয়েতে গিয়ে অমন ছবি তুলেছে। ঝুম্পা যতক্ষণ ব্লকলিস্টে থাকে ততক্ষন শিশির শান্তিতে থাকে। ঝুম্পা লিখেছে,
“শিশির চলো আজ দেখা করি। ”
শিশির জবাবে লিখলো,
“না আজ না। আজ একটু ক্লান্ত। ”
“কী হয়েছে? জানো আমি তোমার জন্য দুজন ফকির খুঁজে এনে খাইয়েছি। ”
শিশির মনে মনে বলল, ফাজলামির আর জায়গা পাস না! তুই খাইয়েছিস ফকির! তুই তো মানুষের টা খেয়ে ফকির বানিয়ে দিস। নিশ্চয়ই অনেকগুলো ভাত, তরকারি বেঁচে গেছে তাই খাইয়েছিস।
শিশির লিখলো,
“তোমার অনেক দয়া। থ্যাংক ইউ। ”
“ইশ! ফরমাল কেন হচ্ছো? পার্টনারের জন্য এটুকু করব না?”
“সো সুইট অফ ইউ। কিন্তু আমি যে সত্যিই বিয়ে করে ফেলেছি। ”
ঝুম্পা ম্যাসেজ সিন করার ত্রিশ সেকেন্ড পর ফোন করলো। শিশির ফোন রিসিভ করতেই ঝুম্পা আহ্লাদী গলায় বলল,
“দেখো বিয়ে নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো প্রাংক করবে না। আমি এসব টলারেট করতে পারি না। ”
শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কিছু করার নেই বাবু। বাবার চাপে পড়ে এক রাক্ষুসী কে বিয়ে করে নিয়েছি। নাহলে পথে বসতে হতো। ”
ঝুম্পা তার ফর্মে ফিরে গেল। বলল,
“আমি তোর সঙ্গে ভালো করে কথা বললে তোর সহ্য হয় না। ”
“আপসেট হইয়ো না। তুমি খুব ভালো হাজবেন্ড পাবে। আমার মতো হয়তো হবে না। ”
ঝুম্পা আরও কিছুক্ষন গালি দিলো। শেষে বলল,
“তোকে ওই তিনটা কুত্তায় কামড়াক। কামড়ে মাংস খেয়ে ফেলুক৷ আর কোনোদিন আমাকে ফোন করবি না। ”
“আচ্ছা। ঘরে বউ রেখে পরকিয়া করা ঠিকও না। ”
ঝুম্পা ফোন রেখে দিলো। ঠিক তখনই দরজার সামনে বিন্তী এসে দাঁড়ালো। শিশির এগিয়ে যেতেই বিন্তী প্রশ্ন করলো,
“আমি কী তোমাকে বলেছি আমি ভালো মেয়ে?”
শিশির বড় বড় চোখ করে তাকালো। বিন্তী বলল,
“আমাকে যারা ভালো বলেছে তাদের গিয়ে কথা শুনিয়ে এসো। আর হ্যাঁ আমি বলছি যে আমি ভালো মেয়ে না। বেয়াদবও। কিন্তু তুমিও অসভ্য। ”
শিশিরের চোখে বিস্ময়। বিয়ে করা বউ যে এভাবে মুখের উপর অসভ্য বলবে সেটা ওর ধারণায় ছিলো না। তার উপর মেয়েটা এই বাড়িতে আজ ই এসেছে।
বিন্তী বলল,
“আরেকটা কথা, নিজেকে নাটোরের কাঁচা গোল্লা ভাবা বন্ধ করো। ”
শিশির রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“তুমি আসলেই বেয়াদব। বয়সে বড় মানুষের সঙ্গে বেয়াদবি করতে লজ্জা করে না?”
“কে বয়সে বড় তুমি? শিশির তুমি কী জানো আমি তোমার থেকে পাঁচ মাসের বড়?”
শিশির বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো।
চলবে….
#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৪
বিন্তী শিশিরের থেকে বয়সে বড় এই খবর শুনে শিশির একদম মুষড়ে পড়লো। দৌড়ে গিয়ে মা’কে বলল,
“মা এসব কী শুনছি? বিন্তী নাকি আমার চেয়ে বড়?”
তুষার ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিলো। শিশিরের কথা শুনে ছুটে এসে বলল,
“কী বলছিস? ভাবী তাহলে প্রিয়াংকা চোপড়া? ”
শিরিন বলল,
“বেশী বড় না। দুই তিন মাসের হবে মনে হয়। ”
শিশির আর্তচিৎকার করে উঠে বলল,
“পাঁচ মাস। এখন একটা বড় বউ নিয়ে আমাকে ঘুরতে হবে!
তুষার দাঁত বের করে হেসে বলল,
“এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার ব্রো। ”
শিশির কী করবে বুঝতে পারলো না। একদিকে বিন্তীকে সহ্য করতে পারছে না। অন্যদিকে বিন্তী বয়সে বড় শুনে কপাল চাপড়াচ্ছে।
***
বিন্তী ফোন টা খুলল। শিশিরের মা জানিয়েছে যে বাড়ি থেকে ও’কে ফোন করে পাচ্ছে না। বাবা, মায়ের নাম্বারে ফোন না করে বিন্তী ওর বোন ঐশির নাম্বারে ফোন করলো।
ঐশি ফোন ধরে বলল,
“আপা কেমন আছিস?”
“ভালো। ”
“ঘুমাচ্ছিলি?”
“হু। ”
“ওদিকে সব ঠিকঠাক? ”
“কী ঠিকঠাক হবে?”
ঐশি একটু চুপ থেকে বলল,
“তোর সঙ্গে যাই নি বলে রেগে আছিস? মায়ের শরীর খারাপ না হলে যেতাম। ”
বিন্তীর চোখে পানি এসে গেল। বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সবারই কিছু বন্ধু বান্ধব জুটে যায়। বিন্তীরও তেমন কয়েকজন ছিলো। তবে প্রানের বন্ধু যাকে বলে সেরকম কেউ হয় নি। যার সঙ্গে দুটো কথা বলে শান্তি পাবে। সেই জায়গাটা ঐশী পূরন করেছে। বয়সে দুজনের ব্যবধান থাকলেও সম্পর্কটা বন্ধুত্বেরই।
বিন্তীকে চুপ করে থাকতে দেখে ঐশী বলল,
“বাবা আর ইমন কাল সকালে যাবে। আমিও আসব। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো। ঐশী বলল,
“মায়ের উপর রেগে আছিস! মায়েরা রাগ করলে ওরকম অনেক কিছু বলে। ”
“তাই বলে মরে যেতে বলবে?”
“ওসব মনে রাখিস না। ওরকম একটা সিচুয়েশনে মায়ের জায়গায় তুই থাকলে কী করতি একবার ভাব। ”
“তোরও কী মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি?”
“না। শোন আপা যে একদিন অপমান করে প্রশ্রয় পায়, সে সারাজীবন ওই কাজ করতেই থাকতো। খুব ভালো করেছিস। জীবন তো একটাই। কে কী ভাবলো সেসবের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ভালো থাকা। বাবা মায়ের উপর রেগে থাকিস না। তুই যেমন তোর জায়গায় ঠিক, তারাও তেমন তাদের জায়গায় ঠিক। ”
“হু। ”
“রাখছি। কাল দেখা হচ্ছে।”
“আচ্ছা।”
বিন্তীর খুব অসহায় লাগছে। এরকম জীবন তো ও কখনো চায় নি। সবসময় মাথাউঁচু করে বাঁচতে চেয়েছে। কিন্তু বিবাহিত জীবন টা শুরুই হলো করুনা দিয়ে। শিশিরের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ ওর কেমন হবে জানেনা। কিন্তু সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে যে শিশির ও’কে দয়া করেছিলো।
***
রাতে শিশিরের বাবা বিন্তীকে ডেকে পাঠালেন। বিন্তী গিয়ে বলল,
“চাচা ডেকে পাঠিয়েছেন?”
“হ্যাঁ বিন্তী। বসো। ”
বিন্তী বিছানার এক পাশে বসলো। শিশিরের বাবা বললেন,
“শিশিরের ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলতে চাই বিন্তী। বিয়ের আগে সময় এতো কম ছিলো যে বলা হয়ে ওঠেনি। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো।
“শিশির জেদি আর একগুয়ে স্বভাবের। যেটা একবার করবে বলে ঠিক করে সেটাই করে। খুন করে ফেললেও সিদ্ধান্তে নড়চড় হয় না। এই যে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরজন্য কম মার খায় নি। তবুও শোধরায় নি। বলে যখন ম্যূড হবে, পড়াশোনার নাম শুনলে ভয় লাগবে না তখন আবার শুরু করবে। ”
শিশিরের বাবা একটু থামলেন। বিন্তী চুপচাপ শুনতে লাগলো।
“তোমার হয়তো মনে হতে পারে যে শিশির তোমার পারফেক্ট না। মনে কেন হবে, ওটাই সত্যি। কিন্তু একটা ব্যাপারে গ্যারান্টি দিচ্ছি শিশির কিন্তু খারাপ ছেলে নয়। ও উচ্ছৃঙখল হতে পারে কিন্তু খারাপ না। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো। শিশিরের দোষ, গুন কোনোটাই শুনতে ভালো লাগছে না। ওর আগ্রহও নেই। তবুও একটা মানুষ আগ্রহ নিয়ে বলে যাচ্ছে যখন শুনতে হবে।
শিশিরের বাবা বললেন,
“তোমাদের দুজনেরই আসলে একটু সময় দরকার। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
বিন্তী মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
“চাচা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ ছিলো। ”
“হ্যাঁ বলো। ”
“আপাতত বউভাতের অনুষ্ঠান টা স্থগিত থাকুক। পরে নাহয় করলেন। ”
শিশিরের বাবা চুপ করে রইলেন। বিন্তী আবারও বলল,
“একটা অনুষ্ঠানে কতো আত্মীয়স্বজন লোকজন আসবে। তাদের সামনে হাসিখুশি থাকার অভিনয় চালিয়ে যাওয়া বোধহয় ঠিক হবে না। ”
“বেশ তবে তাই হোক। ”
“থ্যাংক ইউ। ”
“তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে কী ভাবলে?”
“এমবিএ কমপ্লিট করার ইচ্ছে আছে। ”
“এই বাড়িতে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না বিন্তী। তোমার যা ভালো লাগে তাই করো। সবার আগে নিজের ক্যারিয়ার কে প্রায়োরিটি দাও। বাকীসব গোল্লায় যাক। ”
বিন্তী হাসলো। শেষ কথাটা ওর খুব ভালো লেগেছে।
শ্বশুরের সঙ্গে কথা শেষ করে বিন্তী যখন বের হলো তখন শিশির আর তুষার ডাইনিং টেবিলে ভাত খাচ্ছিলো। বিন্তী তাকাবে না ভেবেও একবার তাকালো। দেখলো শিশির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শিরিন ডেকে বলল,
“বিন্তী কাল তোমার বাবা, ভাই আসছে তো?”
“হ্যাঁ সেরকম ই বলল। ”
“তোমাদের তো মনে হয় ওখানে বেড়াতেও যেতে হবে। ”
বিন্তী কিছু বলার আগেই শিশির বলল,
“আমার কিন্তু কাজ আছে। আমি পারব না। ”
শিরিন ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে কী ও একা যাবে নাকি?”
“একা কেন তুষার যাবে। ”
তুষার বিরক্ত গলায় বলল,
“বিয়ের পর জামাই, বউ একসঙ্গে যায়। আমিও যেতে পারি। কিন্তু তোকে তো যেতে হবে। ”
শিরিন বলল,
“একদম ঠিক। ”
“আমার কাজ আছে। ”
শিরিন আরও কিছু বলার আগে বিন্তী বলল,
“তুষার কেন যাবে? ও’কে কী আমি বিয়ে করেছি। ”
শিশির বিন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার সঙ্গে এতো তেজ দেখাতে এসো না। আমি একবার না বললে সেটা আর হ্যাঁ হয় না। ”
শিরিন বলল, আস্তে বল। তোর বাবা শুনতে পাবে।
শিশির গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
“ক্লিয়ার কথা শোনো মা, আমি কিন্তু যাব না। তুষার কে পাঠাও। ”
তুষার আবারও বলল, গাধার মতো কথা বলিস না।
বিন্তী বলল, কী আর করার। তুমিই আমার সঙ্গে যেও তুষার। তবে আগে বুঝলে আমি তোমাকেই বিয়ে করার জন্য ঘোড়ার মতো লাফাতাম।
তুষারের মুখের খাবার কাশতে কাশতে পড়ে গেল। শিশির হা হয়ে তাকিয়ে আছে। শিরিন শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল,
“শিশির এই মেয়ে তো দেখি তোর মতোই বদমায়েশ। ”
বিন্তী নিজের ঘরে চলে গেল।
***
পরদিন সকালে শিরিন জোর করে শিশির কে ঘুম থেকে ওঠালো। শিশির ঘুমঘুম গলায় বলল,
“কী সমস্যা মা?”
“আজ তাড়াতাড়ি ওঠ। তোর শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে। ”
“আমি কী করব?”
“কিছু করতে হবে না। সেজেগুজে বসে থাকবি। ”
“মানে কী? আমাকে এসব কেন করতে হবে কেন?”
“আরে অনেক কাজ আছে। আগে ওঠ। বিন্তীকে নিয়ে মার্কেটে যাবি। ওর জন্য তো কিছু কেনা হয় নি। ”
“তুমি যাও। ”
“আমি গেলে রান্নাঘরের কাজ কে সামলাবে? তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন কী না খেয়ে থাকবে?”
শিশির একবার বলতে চাইলো তুষার কে পাঠাও৷ তারপর থেমে গেল। পাজী মেয়েটার তো মুখে কোনো কিছু আটকায় না।
শান্তির ঘুম পন্ড করে বিন্তীকে নিয়ে মার্কেটে যাবার জন্য রেডি হলো। তুষারও সঙ্গে যাচ্ছে। দুজনেই নাকেমুখে খেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। বিন্তী এলো মিনিট দশেক পর। বিন্তীকে দেখেই শিশির বলল,
“আসুন ম্যাডাম আসুন। ”
বিন্তী স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“আমি কী তুষারের পাশে বসব?”
তুষারের চোয়াল ঝুলে পড়লো। শিল আর নোড়া এক হয়ে ও’কে যেন পিষে ফেলছে।
শিশির কটমট চোখে তাকালো। বিন্তীর তাতে কোনো হেলদোল নেই। ও সত্যিই গিয়ে তুষারের পাশে বসলো।
চলবে….