অন্য_মানুষ (পর্ব ৪ ও শেষ)

#অন্য_মানুষ (পর্ব ৪ ও শেষ)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– তুমি প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাও প্লিজ। সে ভালো নেই। সে বললো তোমার জায়গায় অন্য কোনো মানুষকে সে কখনোই মেনে নিতে পারবে না।
শান্ত একটু হেসে বলে,
– আপনি বলছেন এই কথা? কয়দিন আগেও তো আপনার সুর টা ছিলো অন্য রকম। আমার প্রতি প্রিয়ার একটু দুর্বলতা ছিলো বলে আমাকে সহ্যই করতে পারতেন না আপনি। আর আজ বলছেন এই কথা? যে প্রিয়াকে নিয়ে দুরে কোথাও চলে যেতে।
রিয়া অপরাধির ন্যায় বললো,
– হুম বলছি। দুড়ে কোথাও চলে যাও তাকে নিয়ে। এদিক টা আমি সামলে নিবো।

শান্ত একটু হেসে বলে,
– তা কখনো সম্ভব না। সম্ভব হলে আমি অনেক আগেই প্রিয়াকে কাছে টেনে নিতাম। আপনারা তাকে বিয়ে দিচ্ছেন, তাকে ভালো খারাপ বোঝাচ্ছে। এই সময়টা অব্দি চেয়ে থাকতাম না আমি। আর এখন বলছেন প্রিয়াকে নিয়ে দুরে কোথাও চলে যেতে। তো আমি না হয় কাজটা করলাম। তারপর আমার ফ্যামিলি? ঘরে আমার একজন অসুস্থ বাবা, আমার ছোট ভাই লেখাপড়া করছে আমার মা, তাদের সবার জাবতিয় খরচ, বাসা ভাড়া। সব এখন আমার দায়িত্বে। আমার পুরো পরিবার এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি একটা মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো দুরে কোথাও? আচ্ছা তবুও মানলাম, প্রিয়াকে আমি নিয়ে গেলাম। তারপর কি তাকে আমি হ্যাপি রাখতে পারবো? জীবন এতোটা ইজি না। জীবনটা কোনো কল্পনার মতো হলে আমরা যেমন খুশি তেমন সাজিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আফসোস কল্পনা আর বাস্তব এক না।
– তো এখন কি করবো?
– প্রিয়াকে একা থাকতে দিন। হয়তো কয়দিন পর আমিও অনেক দুরে চলে যাবো। তখন দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।

রিয়া চুপ করে রইলো। শান্ত আর কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।
আমরা জীবনকে যতটা ইজি ভাবি জীবন ততটাও ইজি না। কিছু মানুষের জীবন সহজ হলেও বেশির ভাগ মানুষকেই অনেক কিছু সেক্রিফাইস করে বাচতে হয়।
,
,
– আপনি আমাকে সারা দিন এতো ফোন দেন কেন? দেখেন যে এতে আমি বিরক্তিবোধ করি তাও কেন এতো বিরক্ত করেন আমায়? শান্তিতে থাকতে দিবেন না নাকি একটু।
বলেই ফোন কেটে দেয় প্রিয়া।
প্রিয়ার আচরণে হাবিব অপমানিত বোধ করলেও কিছু বললো না। বিয়ের পর থেকেই প্রিয়া প্রতি দিন এড়িয়ে চলছে তাকে। আর ইদানিং অপমানও করে।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমন সম্পর্ক নিয়ে কখনোই সংসার বাধা যায় না।
প্রথম একদিন দুই দিন এমন হলে হয়তো মানা যায় যে নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তাই এমনটা করছে। কিন্তু প্রিয়ার বেলায় বেপার টা পুরোপুরি উল্টো। দিন দিন তার খারাপ আচরণ বেড়েই চলছে। বিষয় টা নিয়ে প্রিয়ার ফ্যামিলির সাথে আলাফ করতে হবে। প্রিয়া কি তাকে মানিয়ে নিতে সময় লাগছে নাকি, অন্য কোনো কারণ?
,
,
অফিস শেষে এক সাথে কপিশপ এ বসলো হাবিব ও ফাহিম। হাবিবের বাড়ি চট্টগ্রাম হলেও সে জব করে ঢাকায় ফাহিমের সাথে। সেই সুবাদে পরিচয়। তাই আজ ফাহিমকে নিয়ে আলাদা বসলো সে। প্রিয়ার বিষয় টা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন মনে হলো তার৷
দুই কাপ কপির অর্ডার দিয়ে হাবিব ভদ্র ভাবে বসে বললো,
– আপনার সাথে আগে আমার যেই সম্পর্কই থাকুক। এখন সম্পর্কে আপনি আমারও বড় ভাই হন। তবুও পার্সনাল কিছু বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে হলো আমার।
ফাহিম একটু হেসে বলে,
– যেভাবে বলছেন মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস কিছু?
হাবিব শান্ত ভাবে বললো,
– বিষয়টা আসলে সিরিয়াসই। তবে আপনার সাথে কিভাবে শেয়ার করবো বুঝতে পারছি না।
ফাহিমও এবার একটু সিরিয়াস লুক নিয়ে বললো,
– সমস্যা নাই বলতে পারেন আমাকে।
হাবিব কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– আসলে বিষয় টা প্রিয়াকে নিয়ে। বিয়ের পর থেকে সহ্যই করতে পারে না আমাকে। মানে এমন ভাবে কথা বলে যেন আমি তার শত্রু। আমি প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো নতুন বিয়ে করেছে তাই এমন করছে। কিন্তু ইদানিং আমাকে খুব ছোট করে কথা বলে সে। আমার মা সেদিন ফোনে কথা বলতে চাইলো, তাও মুখের উপর না করে দিলো। ওই কারণে মা আপনাদের কারো সাথে এখন তেমন একটা কথা বলে না। আসলে ভাইয়া, সংসার তো এভাবে হয় না তাই না? প্রিয়া তার সমস্যার কথাটা আমার সাথে শেয়ার করলেও আমি সাপোর্ট দিতাম তাকে। বাট তার এই আচরণ গুলো খুবই বেমানান।

ফাহিম বিষয়টা কিছুটা বুঝতে পারলো। তারপর শান্ত ভাবে বলে,
– আচ্ছা আমি বিষয় টা দেখছি।
– হ্যা ভাইয়া, তাই আপনাকে জানালাম বিষয় টা।
,
,
বাড়িতে এসে কাউকে বিষয় টা জানায় নি ফাহিম। প্রিয়াকে ডেকে নিয়ে গেলো আলাদা।

– তোর কি কারো সাথে রিলেশন ছিলো প্রিয়া?
ভাইয়ার কথায় কিছুক্ষন নিরব থেকে দুই দিকে মাথা নাড়ালো প্রিয়া। যার অর্থ নেই।
ফাহিম আবার বলে,
– তোর শশুর বাড়ির লোক দের সাথে এমন আচরণ করছিস কেন তুই? প্রথম দিনও বেয়াদবি করেছিস, আর এখনও করছিস? তুই চাস টা কি?
প্রিয়া শান্ত ভাবে বলে,
– আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমাকে মে’রে ফেলো তোমরা।
– এসব কোন ধরনের কথা?
– হুম ঠিকই তো বলছি। মাও কথা শুনায় আপুও কথা শুনায় এখন তুমিও কথা শুনাবে। তার চেয়ে ভালো মে’রেই ফেলো আমাকে।
– আচ্ছা তুই ই বল তোর চাওয়া টা কি?
– আমি কিছুই চাই না।
ফাহিম এবার বিরক্ত হয়ে বলে,
– আমি তোকে বলার জন্য জোড় করবো না। তবে তোর মনে নিশ্চই কিছু একটা আছে। যাই থাকুক। হাবিব এখন তোর স্বামী। ছেলেটা ভালো দেখেই তোকে তার হাতে তুলে দিয়েছি। আর আমাদের বিশ্বাস ছিলো আমাদের সিদ্ধান্তটাই তুই মেনে নিবি। তোর প্রতি সবার বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু তোর মনে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তুই যা ভালো মনে করিস তাই কর। ভাই হিসেবে আর কি বা বলতে পারবো তোকে? কিছু করলেও তোর কারণে আমাদের সম্মান যাবে, এটা কোনো বিষয় না। তুই সুখে থাক এটাই আমাদের চাওয়া। দিন শেষে শুধু একটাই কথা মনে থাকবে যে, তুই আমাদের বিশ্বাসের সাথে বেঈমানি করেছিস।

কিছুক্ষন নিরব থেকে ফাহিম চলে গেলো। চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে শুয়ে নিরবে কাঁদছে প্রিয়া। তার সাথেই কেন এমন হতে হলো?
,
,
কেটে গেলে বেশ কিছু দিন। প্রিয়ার শশুর বাড়ি থেকেও চাপটা বাড়লো। বৌ হয়তো বৌ এর মতো থাকবে, আর নয় তো ডিবোর্স হয়ে যাবে। অনেক সহ্য করেছে তারা।

– আমি জানি স্বামী থাকা স্বত্বেও এভাবে আপনার পেছনে পরে থাকাটা আপনাকে ভালোবাসা টা পাপ। আমি জেনে শুনেই এমনটা করি। আর করবো না। একদিন আপনিও কষ্ট পাবেন খুব। আমার জন্য কাঁদবেনও। তখন আর আমি থাকবো না। আর হ্যা, আপনাকে আমার চেয়ে আর কেও কখনো বেশি ভালোবাসতে পারবে না। কেও বাসবে না এতো ভালো।
শান্ত কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে,
– আমি কাল চলে যাচ্ছি। সব ঠিক ঠাক করে নিবে। স্বামীর সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলবে তুমি। সুখি ফ্যামিলি হবে তোমারও। আর উলৃটোপাল্টা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।এক জীবনে সব সম্ভব হয় না।
প্রিয়া চোখের পানি মুছে বলে,
– আমি চাইলে আত্মহত্যা করতে পারতাম। কিন্তু করিনি কেন জানেন? কারণ আমি এপারও হারাতাম, আর ওপারও হারাতাম। কোনো জীবনে পেতাম না আপনাকে। আমি খুব ভালো ভাবেই বেচে থাকবো। এপাড়ে আপনাকে পাইনি, তাতে কি হয়েছে? ওপাড়ে গিয়ে আল্লাহ্’র কাছে চেয়ে নিবো আপনাকে। কারণ জন্নাতে গেলে ওখানে কিছু চাইলে তো আল্লাহ্ ফিরিয়ে দিবেন না।

বলেই ওখান থেকে চলে গেলো প্রিয়া। প্রিয়ার শেষ কথাটা খুব গভিরে গিয়ে লাগলো শান্তর। প্রচুর কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তারও। কিন্তু কাঁদতে মানা। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। কারণ তার ফ্যামিলি তাকিয়ে আছে তার দিকে
,
,
৪ বছর পর ইতালি থেকে যখন ফিরে এলো শান্ত। তখন সব কিছু যেন স্মৃতির পাতায় রয়ে গেলো। লাইফের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলো তাও স্মৃতির পাতায় এখনো জ্বল জ্বল করছে।

এতো বছর পর দেশে ফিরে আসায় অবশেষে শান্তর বিয়ের জন্য পাত্রি দেখছিলো সবাই। সবার মুখে কতো আনন্দের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

আজ ৪ বছর পর প্রিয়ার মুখোমুখি হলো শান্ত। প্রিয়ার কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা। শান্ত আদর করে গাল টেনে দিয়ে কোলে তুলে নিলো তাকে। প্রিয়ার দিকে চেয়ে বলে,
– নাম কি রেখেছো তার?
প্রিয়া একটু হেসে বলে,
– আমার সব থেকে প্রিয় নামটা’ই রেখেছি, শান্ত।
শান্ত কথা ঘুরানোর জন্য বললো,
– তোমার হাসবেন্ট কোথায়? নাকি তুমি একাই এসেছো?
– এসেছিলো সে। একদিন থেকে চলে গেছে। কয়দিন পর আবার আমাকে নিতে আসবে।
শান্ত হেসে বললো,
– বাহ্ হ্যাপি ফ্যামিলি।
প্রিয়া একটু মুচকি হেসে বলে,
– সবাই হ্যাপি শুধু আমি ছারা। এতো বছর হলো বিয়ের। আমাদের সন্তানও আছে এখন। তবুও আজও আমার মনে হয় সে আমার কাছে অন্য মানুষই। মন থেকে আপন করতে পারিনি তাকে। কারণ সে আমার ভালোবাসা ছিলো না। সে ছিলো অন্য মানুষ।

~ সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,

~ এমন অনেক অন্য মানুষ আছে। নিজে স্যাটেল হতে পারেনি তাই ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে। এর পর সে যখন নিজে স্যাটেল হবে তখন সেও অন্য কারো ভালোবাসার মানুষকে ঘরে তুলে আনবে। প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়। এমন হাজারও সংসার শুরু হয় অন্য মানুষের হাত ধরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here