অন্য_মানুষ (পর্ব ২)

#অন্য_মানুষ (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– আমি কখনোই অন্য মানুষকে মেনে নিতে পারবো না। প্লিজ এখানেই শেষ করে দিন সব।

প্রিয়ার কাঁন্না মাখা গলায় এমন কথা শুনেও চুপ করে রইলো শান্ত। সে অনেক কিছু বলতে চাইলেও কিছুই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।
আর প্রিয়া শান্তকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
শান্ত নিজের থেকে প্রিয়ার হাত দুটি ছাড়িয়ে কিছুটা দুড়ে গিয়ে দাড়ায়। কারণ আজই প্রিয়ার বিয়ে। বর পক্ষের কেউ এসব দেখলে অনেক বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
প্রিয়ার থেকে কিছুটা দুরে সরে কড়া গলায় বলে,
– বাচ্চামো করো না প্রিয়া। ঘুমাতে যাও, সকাল হতে এখনো দু’এক ঘন্টা বাকি। আর বিয়ের দিন শরির দুর্বল করো না।
প্রিয়া কাতর গলায় বলে,
– একটা মানুষ কতোটা অসহায় হলে এমন বাচ্চামো করে বলুন তো।
শান্ত আবারও কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে,
– তোমাকে বলছি এখান থেকে চলে যেতে। কেও তোমাকে এভাবে দেখলে মান সম্মানের প্রশ্ন উঠবে।
– কেও আমার জীবন নিয়ে একবার ভাবলো না, তাহলে আমি কেন সবার মান সম্মান নিয়ে ভাববো?
শান্ত আবারও বিরক্তি নিয়ে বললো,
– এক জীবনে চাইলেই সব হয় না প্রিয়া। বাস্তবতা বলতেও একটা কথা আছে। ভাগ্যকে নিজের সাথে মানিয়ে নিতে হয়। তুমিও মানিয়ে নাও। অনেক সুখি হবে জীবনে।
প্রিয়া এবার ঝাঝালো গলায় বলে,
– কিসের বিয়ে? কিসের ভাগ্য? আমি মানিনা কোনো কিছু। ওই লোকটাকে আমার একটুও ভালো লাগে না। কাউকে ভাবতে পারিনা আমি আপনার জায়গায়। আমার লাইফে হয়তো আপনি, নয়তো কেও না। সকাল হলেই চেচিয়ে সবাইকে বলবো আমি, যে এই বিয়ে করছি না আমি। বিয়ে ভে’ঙে দিবো আমি। সব এলোমেলো করে দিবো,,,,

আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে একটা চ’র পরে প্রিয়ার গালে।
– বলছিনা ঘরে যেতে? এক কথা কতোবার বলা লাগে আর?
ঝালালো কন্ঠ মুহুর্তেই নিশ্চুপ হয়ে যায় প্রিয়ার। গালে হাত দিয়ে কয়েকটা নিশ্বাস নেয় সে।
আচমকাই শান্ত কি করে ফেললো এটা? নিজের মাঝে অনু-সুচনা হলে উল্টো দিকে ঘুরে দুই পা ফেলে ছাদের কিনারায় গিয়ে দাড়ালো। তার বুকের ভেতরটাও পুরছে খুব।

কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে ওভাবে দাড়িয়ে থেকে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো প্রিয়া। সিড়ি বেয়ে নামতেই সামনে পড়ে প্রিয়ার বড় বোন রিয়া। সকাল সকাল ছাদে কারো আওয়াজ শুনলে উপরে যাচ্ছিলো সে। প্রিয়াকে এভাবে দেখে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ার দিকে।
আর প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো।

রিয়া এবার দ্রুত ছাদে উঠে শান্তকে দেখে তার সামনে গিয়ে দাড়ায়? শান্তর দিকে চেয়ে রিয়া সোজাসুজি ভাবে বলে,
– প্রিয়া কাঁদছে কেন?
রিয়াকে দেখে একটুও চমকালো না শান্ত। ছোট্ট করে বলে,
– জানিনা,
রিয়া আবার বলে,
– একটু আগে এখানে কি হয়েছিলো ওটা জানতে চাইছি আমি।
শান্ত ওভাবেই তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলে,
– প্রিয়া কাঁদছিলো। আমি আসার পর নিচে চলে গেলো। হয়তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই একাকি কাঁদছিলো।
রিয়া ভ্রু-কুচকে শান্তর দিকে তাকিয়ে আবার নিচে চলে গেলো।

নিচে এসে দেখে প্রিয়া এখনো রুমে বসে কাঁদছে। প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
– কিছু কি লুকাচ্ছিস আমাদের কাছে?
রিয়ার কথায় তার দিকে চেয়ে প্রিয়া বলে,
– এই বিয়ে আমি করবো না আপু। আমি শান্তকে ভালোবা,,,,
রিয়া মুহুর্তেই প্রিয়ার মুখ চেপে ধরে প্রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– খবরদার এই কথা আর কখনো মুখে আনবি না। আজ তোর বিয়ে, সব কিছুর আয়োজন শেষ। এমন কি তোর হবু বরও এই বাড়িতে। বিষটা কতোটা লজ্জা জনক এটা বুঝতে হবে তোকে। প্রত্যেক সিদ্ধান্তের পেছনেই একটা উত্তম পরিকল্পনা থাকে। যা হচ্ছে তা তোর জন্য উত্তম কিছুই হচ্ছে। এক সময় দেখবি সব ভুলে গেছিস। আর এই কথা টা আর কক্ষনো কারো সামনে বলবি না। যতটুকু গেছিস ততটুকুই ফেলে রাখ। নতুন জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু কর।

প্রিয়া আবার কিছু বলতে যাবে তখন রিয়া তাকে সুজুগ না দিয়ে বলে,
– রাতে মনে হয় ঘুমাস নি। এখন ঘুমিয়ে পর। এখন প্রায় ভোর হয়ে গেছে। সকালে আমি সবাইকে বলে দিবো তোকে যেন না ডাকে।
,
,
দুপুর ঘনিয়ে এলো। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পথে। প্রিয়াকে গোসল করিয়ে সাজানোর কথা। রুমে, বেলকনিতে কোথাও নেই প্রিয়া। একাকি ওয়াশ রুমের ভেতর বসে কাঁন্না করছে সে। সেই অশ্রুকনা ধুয়ে যাচ্ছে পানির সাথে।

ফাহিম আর শান্ত মেহমান দের রিসিভ করছে। যদিও ফাহিমকে সঙ্গ দিতে শান্ত তার সাথে কাজ করছে, তবে তার মন পরে আছে অন্য জায়গায়। সব যেন চোখের পলকেই হয়ে যাচ্ছে।

ভেতরে সবাই সাজাচ্ছে প্রিয়াকে। প্রিয়ার চোখে এখন আর পানি নেই। জড় পদার্থের মতো হয়ে আছে সে। নেই হাসি নেই কাঁন্না, নেই মুখে কোনো কথা। যেন একটা পুতুলকে সাজাচ্ছে সবাই।

বিয়ের মুহুর্তে কবুল বলার আগেও প্রিয়া মাথা তুলে চার পাশে কাউকে খোজার মতো করে তাকাচ্ছে। কিন্তু চোখে পরছে না সেই মানুষটাকে। অবশেষে নিজের সব স্বপ্ন আশা ভালোবাসা মাটি চাপা দিতে বাধ্য হলো প্রিয়া। যখনই ইচ্ছে করছিলো আসর ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে যাবে তখনই বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব শক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

তবুও মনে সাহস জুগিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো প্রিয়া। কাঁদতে কাঁদতে একটা কথাই বলছিলো,
– আমি ওদের সাথে যাবো না মা। প্লিজ আমাকে এভাবে ওদের সাথে একা পাঠিয়ে দিও না।
প্রিয়ার কাঁন্নায় আশে পাশের মানুষ গুলো তাকিয়ে ছিলো শুধু নিশ্চুপ হয়ে।
প্রিয়ার বর হাবিব শান্ত মনে ফাহিমের কাছে গিয়ে বলল, প্রিয়া যখন যেতে চাচ্ছে না আজকের দিনও দে এখানেই সবার সাথে থাকুক। এতো দুরের রাস্তা আসা যাওয়া করতেও একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন।

ফাইনালি আজ এই বাড়িতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই। আর বাসর রাতটাও এই বাড়িতেই হবে।
,
,
রাতে রুম সাজিয়ে প্রিয়াকে রেখে গেলো রুমে। রাত তখন ১১ টা। হাবিব রুমে ঢুকে ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হয়ে আসতে। আর প্রিয়া জড় বস্তুর মতো নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে ফুলে সাজানো খাটের মধ্যখানে।

কিছুক্ষন পর হাবিব এসে তার পাশে বসলো। দুজনের মাঝেই নিরবতা। হাবিব খুব সরল মনের একজন মানুষ। তাই সব জায়গাতেই তার সরলতা। তেমনই আজও অনেকটাই নার্ভাস। তবুও নিরবতা ভেঙে হাবিব বলে,
– মন খারাপ?
এটা বলেই একটু ভ্রু কুচকালো হাবিব। তার এমন অযৌক্তিক প্রশ্নে প্রিয়া বিরক্তি বোধ করলো কি না?
এর মাঝে প্রিয়া মাথা তুলে বলে,
– আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
হাবিব একটু হাসি মুখে বলে,
– হ্যা বলো,,,,
প্রিয়া সোজাসুজি ভাবে বলে,
– আপনি আমার থেকে দুরুত্ব বজায় রাখবেন প্লিজ।
হাবিবের একটু মন খারাপ হলেও বিষয় টা মেনে নিলো সে। কারণ ফ্যামিলি গত ভাবে বিয়ে হয়েছে তাদের। নিজেদের মানিয়ে নিতেও তো একটু সময় লাগবে। তাই ছোট্ট করে সরল মনে বললো,
– আচ্ছা, আমি তোমার অনুমতি ছারা তোমার হাতও ছুবো না।
প্রিয়া আবার বলে,
– আরেক টা কথা।
– কি?
– আমি আপনাদের সাথে এখন যেতে ইচ্ছুক নই। এখানেই থাকবো কয়েক দিন। সব কিছু মানিয়ে নিতে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন।
হাবিব আবারও বললো,
– ঠিক আছে, তোমার সময়ের প্রয়োজন হলে তুমি সময় নিতে পারো। আমার কোনো আপত্তি নেই। তুমি আমার লাইফ পার্টনার। তোমার ইচ্ছেগুলে গুরুত্ব দেওয়া আমার কর্তব্য। সব না হয় অল্প অল্প করেই শুরু হোক।

To be continue……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here