অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-১০,১১

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-১০,১১
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-১০,১১
.
.
.
সাদাদের কথা শুনে দলের এক লোক এগিয়ে এসে বললো,
–আমিই কবির! আমারে কি দরকার? বস তোমার লগে তো কোনসময় ঘাপলা হয় নাই! কি চাও আমার কাছে?

সাদাদের চোখমুখ অগ্নিরূপ ধারণ করেছে। সে এগিয়ে এসে কবিরকে ধামাধাম পিটাতে লাগল। সাদাদকে মারার উদ্দেশ্যে দলের অন্য লোক এগিয়ে যাওয়ার আগেই সে এক ভয়ংকর হুংকার করে উঠলো,
–খবরদার! কেউ ভুলেও এদিকে আসবি না। তোদের সাহস দেখে আমি অবাক! তোরা আমার কলিজায় হাত দেস! সাদাদ রহমান সাদ এর কলিজায় হাত দেওয়ার পরিমান অনেক ভয়াবহ।

সাদাদের হুমকি খেয়ে দলের সব থতমত খেয়ে গেলো। দলেরই এক লোক, বয়স সবার চেয়ে খানিকটা বেশি হবে সে মিনমিন করে বললো,
-সাদাদ ভাই! আমার জানা মতে কবিরে তো আমনেগো দলের কারোর লগে কোন ঘাপলা করে নাই। কি হইছে ভাই?

সাদাদ আবার হুংকার করে বললো,
–আমার বউকে তুলে আনছিস তোরা! এই কুত্তারবাচ্চা তার গায়ে….
অনেক বড় ভুল করে ফেলছিস! আর সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস এখান থেকে না পালিয়ে। সাদাদ কথা বলতে বলতে সেখানে তার দলের লোকেরা জড়ো হয়। এবং সবকটাকে ধরে নিয়ে যায়।

.
সুবাহ রান্নাঘরে কাজ করছে। সাধারণ সময়ে তাকে ভুলক্রমেও রান্নাঘরে আসতে দেওয়া হয় না। পড়াশোনার মাঝেই দিন কাটে। কিন্তু আজ রুবাইয়া বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকেই রান্নার দিকটা দেখতে হচ্ছে। সেও ভাবলো আজ সুযোগ আছে টুকটাক কাজ করে নিক। সবজি কেটে ভালোভাবে ধুচ্ছে সে। চুলায় গোসত আর ডাল রান্না হয়ে গেছে। ভাত সে সবার আগেই রান্না করে। হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেতেই সে ভাবলো হয়তো আরফান এসেছে। রুবাইয়ার খবর সে আরফানকে ফোন করে জানিয়েছে। সুবাহ হাতটা মুছে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। সাদাদকে এই সময়ে আসতে দেখে সে বেশ অবাক হলো। সে মুচকি হাসি দিলো কিন্তু সাদাদ তাকে দেখে কিছুই বললো না। তাকে কেমন এলোমেলো লাগছে। সাদাদ গটগট করে রুমে চলে গেলো, সুবাহ কিছু জিজ্ঞাসা করারও সময় পায় নি। সেও সাদাদের পিছু পিছু তাদের রুমে গেলো। সাদাদ তাকে দেখেও কিছু বললো না। সুবাহই জিজ্ঞাসা করলো,
–আজ হঠাৎ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলে? ঠিক আছো? শরীর খারাপ করেনি তো?

সাদাদ সুবাহর কথার কোন জবাব দিলো না, সে এক ধ্যানে তার নিজের কাজ করে চলেছে। সুবাহ আবার বললো,
–সাদাদ! তুমি ঠিক আছো? তুমি তো এই সময়ে বাসায় আসো না?

সাদাদ রেগে সুবাহকে বেশ ধমকের সুরে বললো,
–কি সমস্যা তোমার? এভাবে বিরক্ত করছো কেন? আমি কি তোমাকে ডেকেছি! যাও এখান থেকে।

সুবাহ বেশ চমকালো। রীতিমত সাদাদের ধমকে কেঁপে উঠলো। তাও ভাবলো হয়তো সাদাদ কোন বিষয় নিতে চিন্তিত। তাই সে সাদাদকে ঘাটালো না। হালকা হেসে বললো,
–এমনি জিজ্ঞাসা করছিলাম। তুমি তো এই সময়ে বাসায় আসো না।

সাদাদ আবারও ধমকে বললো,
–আমি বাসায় এসে খুব ক্ষতি করে ফেললাম তোমার? বলো তো বেরিয়ে যাই বাসা থেকে?

সুবাহ এবার বেশ ভয় পেলো। তবুও মিনমিনে গলায় বললো,
–তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি তোমাকে খাবার দিচ্ছি!

সাদাদ সুবাহর দিকে বিরক্তিপূর্ণ চাহনিতে তাকালো। রেগে বললো,
–যাও তো এখান থেকে।

সুবাহ চুপ করে বেরিয়ে আসতে আসতে শুনলো সাদাদ বিড়বিড় করে বলছে,
–বিরক্ত করে ফেললো। উফ! কানের কাছে প্যানপ্যান! অসহ্য!

সুবাহর এবার না চাইতেও তার চোখের কোনে পানির ভিড় জমেছে। সে আস্তে করে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। সে চুপচাপ রান্না করতে লাগলো। খানিকক্ষণ পর সে অনুভব করলো তার পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। সে আস্তে করে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো নিচে। কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। হাত পাও রীতিমত কাঁপছে। বেশ খানিকক্ষণ পরে বাসার কাজের খালা মিনা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখে সুবাহ নিচে পড়ে আছে। সে আতংকিত হয়ে এগিয়ে এসে সুবাহকে ধরে জিজ্ঞাসা করে,
-বৌমনি? কি হইছে তোমার? সাদাদ বাবারে ডাক দিমু?

সুবাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তবুও কোনরকমে মিনা খালাকে মানা করলো। আস্তে করে বললো,
–আমাকে একটু মিষ্টি বা চিনিপানি এনে দাও!

মিনা খালা দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে সুবাহকে খাইয়ে দিলো। অনেকক্ষণ পর সুবাহ সুস্থবোধ করলো।

.
সাদাদ গোসল শেষ করে বাইরে আসে। তার হঠাৎ খেয়াল হয় যে সে সুবাহর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। পরক্ষণেই ভাবে একে তো সে এতো ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার উপর বাহির থেকে আসার সাথে সাথে সুবাহর প্রশ্ন, যার জন্য তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। সে রুমে পায়চারি করতে থাকে। এর মধ্যেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। সে ফোন তুলে নিয়ে বলে,
–শিশির! কোন খবর?

ওপাশ থেকে শিশির বললো,
-ফরেনসিক রিপোর্ট চলে এসেছে। তোকে একটু কষ্ট করে হাসপাতালে আসতে হবে। কথা আছে।

এপাশ থেকে সাদাদ উত্তর দিলো,
–আজ বিকেলে আসছি। ঠিক আছে?

শিশির “ঠিক আছে” বলে ফোন রেখে দিলো। সাদাদ ফোন রেখে সুবাহকে ডাক দিলো,
–সুবাহ! এই সুবাহ! এদিকে আসো।

এদিকে সুবাহ শরীরের দুর্বলতার জন্য উঠতে পারছে না। সে মিনা খালা কে বললো,
–খালা একটু উনাকে গিয়ে বলো আমি একটু পর আসছি, হাতে কাজ রয়েছে এখন।

খালা চিন্তিত ভাবে বললো,
-আমি গিয়া সাদাদ বাবারে কই তোমার অসুস্থতার কতা?

সুবাহ কড়াকড়ি ভাবে মানা করলো তাকে। মিনা খালাও ছুটলো জবাব দিতে।

-সাদাদ বাবা! বৌমনি একটু পর আইবো! হেয়….

সাদাদ খালার কথা পুরোটা না শুনেই বললো,
–আচ্ছা!
খালা আবারও বলার চেষ্টা করলো,
-বৌমনি অসুস…

এবারও কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না মিনা খালা। তার মধ্যেই সাদাদের ফোন আসায় সে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। মিনা খালাও চলে গেলো সুবাহর কাছে।

সুবাহ খুব কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে রুমের দিকে চললো।

এদিকে সাদাদ কথা শেষ করে রুমে এসে সুবাহকে পেলো না। এবার সে বেশ রেগে গেলো। এই মেয়ে তার কথা অমান্য করছে! সে আগের ভীতু সুবাহকেই বেশি পছন্দ করে, যে তার বলার আগেই সব রেডি করে রাখতো।

সুবাহ রুমে আসতেই তাকে দেখে সাদাদ বেশ উচু গলায় বললো,
–তোমাকে সেই কখন ডেকেছি আর আসলে মাত্র! আমার কথার কোন গুরুত্বই তোমার কাছে নেই?

সুবাহ অবাক চোখে সাদাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে সাদাদকে বললো,
–কোন দরকার ছিলো? ওদিকে কাজ করছিলাম! কেন ডেকেছো?

সাদাদ ভ্রুকুটি করে বললো,
–কেন দরকার ছাড়া তোমাকে ডাকি না?

সুবাহ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
–দরকার ছাড়া কেউ অসহ্য কিছু সহ্য করে না।

সাদাদ আবার ভ্রুকুটি করলো। কে অসহ্য? সুবাহ? সে কি একবারও তা বলেছে? মনে মনে ভেবে সাদাদ এবার গম্ভীর গলায় বললো,
–আমার পাঞ্জাবি আর পায়জামাটা একটু ইস্ত্রি করে দাও আমি বের হবো।

সুবাহর একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না কোন কাজ করতে! তবুও ক্লান্ত শরীরে এগিয়ে পায়জামা আর পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে ইস্ত্রি করতে গেলো।

এদিকে সাদাদ খাবার দেওয়ার জন্য তাড়া করছে। সুবাহ তাড়াতাড়ি ইস্ত্রি করতে গিয়ে ডান হাত বেশ খানিক জায়গায় ছ্যাকা খেয়েছে। যার জন্য সাথে সাথে ঠোসা পড়ে গেছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সুবাহ ইস্ত্রি করা শেষ করে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো। সাদাদকে খাবার দেওয়ার সময় সাদাদ খেয়াল করলো সুবাহ ডানহাতটা কম ব্যবহার করছে। সে সন্দেহ করে বললো,
–তুমিও খেতে বসে যাও।

সুবাহ হালকা হেসে বললো,
–চুলায় রান্না আছে, তাছাড়া আপুকে খাইয়ে দিয়ে গোসল সেড়ে আমি খাবো। আমার এখন ক্ষিধে পায় নি।

সাদাদের হঠাৎ খেয়াল হলো রুবাইয়ার কথা। সে সুবাহকে বললো,
–রুবাইয়ার অবস্থা কি বেশি খারাপ? আরফানকে ফোন দিয়ে চলে আসতে বলি। ও গেলোই কেন আজকে?

সুবাহ সাদাদকে মানা করে বলে,
–তার দরকার পড়বে না। আমি আরফান ভাইয়াকে ফোন করে দিয়েছি।

সুবাহ রান্নাঘরের দিকে গেলে মিনা খালা তাকে বলে,
–বৌমনি! তুমিও খাইয়া লও। এমনেই অসুস্থ হইয়া গেছিলা!

সুবাহ হালকা হেসে বললো,
–গোসল করেই খাবো। এখন খাবো না। তুমি কাজ করো তো নিজের।

খালা তরকারির বাটি হাতে ডাইনিং টেবিলে যেতে যেতে বললো,
-আমার কতা হুনবো ক্যা? আমি তো এই বাসার কাজের মহিলা। ভালা কতা তো হুনবা না।

সাদাদ মিনা খালাকে এভাবে রেগে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?
খালা সাদাদকে দেখে আরো ফুঁসে উঠে বললো,
–তোমার বউ হেই সময় মাথা ঘুরাইয়া পইড়া গেছিলো। এহন খাইবার কইছি হেয় কতা হুনে না। যা মন চায় করুক গা!

খালা বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে গেলো অন্য কাজে। এদিকে সাদাদ হাত ধুয়ে রান্নাঘরে গেলো সুবাহর কাছে।

.
রুবায়েত এক মাসের জন্য একটা মিশনে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে সে তার বউকে বুঝাতে পেরেছে যে তার জন্য এই কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ বুঝানোর পর সে সফল হয়। এবং মিশনের জন্য রওনা হয়। আসার সময়েও দেখে এসেছে সাদিয়ার চোখ পানিতে একাকার হয়ে আছে। সাদিয়ার মনে এখন একটাই প্রার্থনা, তার স্বামী যেন সঠিকভাবে, সুস্থভাবে তাদের কাছে ফিরে আসে।

(চলবে)..

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
দ্বিতীয়ধাপ
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-১১
.
.
.
রান্নাঘরে সাদাদের উপস্থিতি পেতেই সুবাহ তাড়াতাড়ি নিজের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নিলো। চুলোটা অফ করে রুমের দিকে যেতে নিলেই সাদাদ তাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলো।
–আই এম সরি সুবাহ! আমি তখন অনেক বাজে কথা বলে ফেলেছি। সত্যি মাথাতেই ছিলো না কি বলছি! সরি বউ!

সুবাহ কিছু বললো না। তার গলা ধরে এসেছে। কিছু বলার শক্তি পাচ্ছে না। তাও অনেক কষ্টেসৃষ্টে বললো,
–ইটস ওকে।

সাদাদ সুবাহর কাধে মাথা রেখে একটা শ্বাস ফেললো। সাদাদের শরীরটা মৃদু কাঁপছে। আচ্ছা সাদাদ কি কান্না করছে?
সুবাহর মাথায় ভাবনাটা আসতেই সে চমকে পিছন ফিরতে চাইলে সাদাদ তাকে বাধা দেয়।
–এভাবে একটু থাকতে দাও না!

সুবাহ চোখ বন্ধ করে ফেললো। আঁকড়ে ধরলো সাদাদের হাত যা তার পেটে অবস্থান করছে। বেশ কিছু সময় পর সাদাদ সুবাহকে নিয়ে টেবিলে বসে তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। সুবাহর চোখে এখনো পানি। ছলছল চোখে সে সাদাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাদ সুবাহকে দেখেও দেখেনি। বেশ কয়েকবার বলেছে কান্না থামাতে কিন্তু সুবাহ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সাদাদ আবারও বললো,
–তুমি কি কান্না থামাবে না আমি এখান থেকে চলে যাবো?

সুবাহ কিছু না বলে সাদাদকে জড়িয়ে ধরলো। তার মনে ভয় বাসা বেধেছে। হারানোর ভয়। হারিয়ে যাওয়ার ভয়। প্রতিনিয়ত তাকে ভয়েরা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। না পারছে সে কাউকে বলতে, আর না পারছে সহ্য করতে!
–জানো সাদাদ! আমি কখনো কোন পলিটিশিয়ানদের পছন্দ করতাম না। রাজনীতিতে আমার চরম ভয়। সেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। না চাইতেও এক পলিটিশিয়ানের জীবনে জড়িয়ে গেলাম। প্রতিনিয়ত আমি ভয়ে থাকি। এই বুঝি তুমি আর ফিরবে না, এই বুঝি আমি মরে যাবো!

কথাটা বলেই সুবাহ আবার চোখের পানি ছেড়ে দিলো। সাদাদ নিজেও অনেক গম্ভীর হয়ে গেছে। সত্যিই কি সাদাদ ভুল করেছে সুবাহকে নিজের জীবনে জড়িয়ে? কিন্তু ভালোবাসা কি এতো বাদবিচার মানে? সাদাদ সুবাহকে জড়িয়ে রইলো।
মনে মনে সাদাদ নিজেকেই দোষী মনে করে। সত্যিই তো! আজ সুবাহ তার জীবনে বলেই তো প্রথমে আসিফ নামের জানোয়ার আর তার পরে কবির! এরা কোনভাবে একে অপরের সাথে জড়িত নয়তো?
সাদাদ ছক কষতে লাগলো। ড্রাইভার রহমানে শেষ বলা শব্দ ছিলো ‘আস..’
মানে কি? আসিফ!
আসিফের কথা মাথাতে আসতেই সাদাদ হিংস্র হয়ে উঠলো। সুবাহকে সামলে সে বেরিয়ে পড়লো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

.
শিশির আরেকবার রিপোর্ট গুলোয় চোখ বুলালো। তারপর বেশ গম্ভীরভাবে সাদাদকে জানালো,
-তোকে আমি প্রথমেই বলেছিলাম এর মৃত্যু বিষক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়েছে। লাশকে অনেক আগে থেকেই স্লো পয়জন দেওয়া হচ্ছিলো। তোর দেওয়া ড্রাগসের জন্য এর মৃত্যু হয় নি। তাই তুই নিজেকে দোষারোপ করা ছাড়!
সাদাদ একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো। সাদাদ শিশিরের সাথে কথা বলে বাইরে আসতেই সে সুবাহকে ফোন দিলো।
–হ্যাঁ সুবাহ! তুমি একটু কষ্ট করে গাড়িতে উঠে হাসপাতালে চলে আসো। আমি গাড়ি পাঠিয়েছি তোমাকে আনার জন্য।
–এর কি দরকার?
–চুপচাপ চলে এসো তো। অনেকদিন তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাই না! আজ তোমায় নিয়ে ঘুরবো।

সুবাহ মুচকি হেসে “আচ্ছা” বলে ফোন রাখলো। আজ সে সাদাদের জন্য সাজতে চায়। তাই চট করে হালকা সেজে নিলো। সুবাহ হিজাব পড়ে। আজ মেরজান্ডা কালারে হিজাব পড়ায় সবার আগে তার নাকের হিরের ফুলটা চিকচিক করছে। আয়নায় নিজেকে দেখে তার নিজেরই ভালো লাগলো। সাদাদের পাঠানো গাড়ি করে সে রওনা দিলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

.
সাদাদ আর শিশির কেবিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সুবাহ হাসপাতালে পৌঁছাতেই খোঁজ নিয়ে চলে গেলো ড. শিশিরের কেবিনে। দোতলার ডানপাশে সিঁড়ি দিয়ে উঠেই সবার প্রথমেই শিশিরের কেবিন। সুবাহ কেবিনের দরজায় লাগানো নেমপ্লেটটায় চোখ বুলালো।
‘ড. শিশির রায়হান।’
এমবিবিএস(ডিএমসি)
ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন(সার্জারি)
বি এম ডি সি রেজি: এ-*****
ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্ট।

সুবাহ দরজায় দুইবার নক করলো। তারপর আস্তে দরজা খুলে উকি দিতেই দুইজোড়া চোখ তার দিকে স্থির হয়ে রইলো। সাদাদ প্রতিবারই সুবাহকে দেখে এমন হ্যাং মেরে বসে থাকে তা সুবাহ বেশ ভালো করেই জানে। এ সাদাদের নতুন নয় বেশ পুরোনো অভ্যাস। সাদাদ উঠে সুবাহর কাছে যেতেই শিশির তার অবাধ্য চোখ জোড়া নামিয়ে নিলো। তার ত্রিশ বছরের জীবনে এই প্রথম সে তার অনুভূতির অস্তিত্ব টের পেলো কিন্তু তাও কি না এক নিষিদ্ধ অনুভূতি? নিজেরই বন্ধুর বউ? ছিঃ ছিঃ! নিজেকে নিজের কাছে চরম বেহায়া উপাখ্যান করে সে উঠে দাঁড়ালো। হালকা হেসে সে সুবাহকে স্বাগতম জানালো। না চাইতেও শিশিরের নির্লজ্জ চোখজোড়া সুবাহর নাকফুলে স্থির। নাকফুলটার জন্য যেন সুবাহকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে। সে পকেটে হাত পুরে অন্য দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। নাহ! এই অনুভূতিকে এখনই চাপা দিতে হবে।
সুবাহ হালকা হেসে শিশিরকে ধন্যবাদ দিয়ে সাদাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।
–শিশির! এই যে তোর ভাবী! দেখার জন্য তো মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলি! আজ সুযোগ হলো তাই।
–আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! আমি সুবাহ তানজিম।

শিশির সুবাহর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
-আমি কিন্তু তোমাকে ভাবী বলতে পারবো না। এইটুকুনি পিচ্চি! এমনিতেও তোমার বরও আমার চেয়ে ছোট!

কথাটা বলেই শিশির হাসতে শুরু করলো। সাদাদ সুবাহ দুজনেই বুঝতে পারলো শিশিরের মশকরা। কিন্তু আসলেই কি এটা মশকরাই ছিলো?
সুবাহকে ডাক্তার দেখিয়ে সাদাদ তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। সুবাহর বায়নায় সাদাদ তাকে নিয়ে কলেজ লেক পার্ক নিয়ে গেল। সুবাহর খুব ইচ্ছে ছিল সে সাদাদের হাত ধরে এক গোধূলি প্রহরে খালি পায়ে হাঁটবে। কিন্তু সাদাদের বদৌলতে খালি পায়ে হাঁটা হলো না তবে সাদাদ তার হাত ধরে রেখেছে। তাতেই যেন সুবাহ স্বর্গসুখে ভাসছে। বিকেলবেলা হওয়ায় আশেপাশে বেশ ভীর। সুবাহ এতোটাও অনুমান করে নি। স্বাভাবিকভাবে পাশে সুদর্শন ছেলে থাকলে মেয়েরা তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মন কি আর তা মানে? সুবাহ তার ঠোঁটে হাসির রেখা টেনেই বললো,
–একটা কাজ করা উচিত!

সাদাদ হালকা ভ্রু কুঁচকে বললো,
–কি?
–তোমার পিছনে ইয়া বড় করে ‘ইনি বিবাহিত’ লিখে দেওয়া উচিত! তাতে যদি মেয়েদের নজর একটু কম পড়ে!

সুবাহর কথা শুনে সাদাদ হো হো করে হেসে দিলো। সুবাহ আবারও বললো,
–হেসো না তো! ডাইরেক্ট বুকে এসে লাগে! আমার বর তাতেই আমি গিলে খাচ্ছি! অন্য মেয়েদের কথা আর কি বলবো?

সাদাদ ভ্রুকুটি করে বললো,
–আমায় গিলে খাচ্ছো?

–হুম! চোখ দিয়ে!

সাদাদ আবার হাসলো। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সুবাহ থেমে গেলো। সাদাদের হাতে টান পড়ায় সে পিছে ফিরে সুবাহর দিকে তাকালো। সাদাদ ভয় পেয়ে গেলো কেননা সুবাহর চোখের কোন ভিজে গেছে তার চোখের পানিতে। সাদাদ এগিয়ে এসে সুবাহকে ধরে জিজ্ঞাসা করে,
–কি হয়েছে সুবাহ? তুমি কাঁদছো কেনো? এই?

সুবাহ সাদাদকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো।
–সাদাদ! আমার ভয় হচ্ছে! তুমি আমার থেকে হাড়িয়ে যাবে না তো? আমাকে ফেলে প্লিজ যেও না। আমি মরে যাবো! সত্যি!

সাদাদ সুবাহকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
–হুশ!
সাদাদ সুবাহর মাথায় আলতো করে চুমু দিয়ে তাকে নিয়ে পাশের বেঞ্চিতে বসে পড়লো।
–এতো ভালোবাসো আমায়?

–তোমার সন্দেহ আছে?

–উঁহু! মোটেই না। আর আমি আমার এই পাগলিকে ছেড়ে কই যাবো? আমি নিজেই এই পাগলিকে ছাড়া বাঁচবো না!

–হুম!

–সুবাহ?

সুবাহ সাদাদের দিকে তাকাতেই,
–সুবাহ! তোমাকে তো শক্ত হতে হবে। তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে হবে? আমার জন্য না হোক আমাদের বাচ্চার জন্য হলেও তো তোমাকে আমাদের বাঁচার শক্তি হতে হবে। ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং।

সাদাদ সুবাহর পেটে হাত রাখতেই সে অবাক হয়ে বলে,
–তুমি কি করে জানলে?

সাদাদ হাসলো। সুবাহ লজ্জা পেয়ে সাদাদের সাথে মিশে গেলো।

(চলবে)…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here