অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-৮,৯

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-৮,৯
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-৮
.
.
.
সাদাদের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে সুবাহ অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
–সেদিন আমাকে যখন ড্রাইভার কাকা রিকশা করে দিলো সে ইতস্তত করছিলো। আমি তেমন কিছু মনে না করে রিকশা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হই। রিকশা প্রথমে ধীরেই চলছিলো কিন্তু আস্তে আস্তে এর গতি বাড়তে লাগলো। আমি যখন বললাম আস্তে রিকশা চালাতে, লোকটা আস্তে তো দূর বরং আরো আরো জোরে চালাতে শুরু করলো। হঠাৎ মুখের উপর তারা ক্লোরোফর্ম স্প্রে করলো। এর উদ্ভট গন্ধেই বুঝতে পেরেছি। আমি তখনই বুঝে যাই যে আমার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। কিন্তু চিৎকার করার সময়ও পেলাম না। দুইপাশ থেকে দুইটা মাইক্রোবাস এসে এমনভাবে চেপে ধরলো যে…

সুবাহ ঢোক গিললো। সে সামান্যকিছুতেই আতংকিত হয়ে যায় আর এখানে তার সাথে এতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। সাদাদ সুবাহর কাঁধ ধরে বলে,
–হয়েছে! আজ আর বলতে হবে না।

সুবাহ হালকা হেসে চোখ খুলে সাদাদের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আবার বলে,
–মনে হচ্ছিলো ওইদিনই আমার শেষ দিন। আমি তাও চিৎকার করেছি কিন্তু লোকে কিভাবে শুনবে বাস দুইটা অনেক হর্ণ দিচ্ছিলো। ততক্ষণে ক্লোরোফর্মও কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। হাত পা অবশ হয়ে আসে। আমি ঢলে পড়ে যেতে নিতেই রিকশা তৎক্ষণাৎ থেমে যায় আর কেউ আমাকে কোলে তুলে নেয়। যখন জ্ঞান ফিরে তখন এক অন্ধকার রুমে নিজেকে আবিষ্কার করি। জায়গাটা অনেক নোংরা ছিলো। চারপাশে ভোঁটকা গন্ধ নাকে আসছিলো। আমাকে মেঝেতেই শুয়ে রাখা হয়েছিলো। আস্তে উঠে দেখি রুমটা একদম ফাঁকা। চিৎকার করতে যেয়ে ভাবলাম এখানে আমার চিৎকার শোনার কোন মানুষ নেই, যারা রয়েছে তারা জানোয়ার ছাড়া কিছুই না। আস্তে আস্তে আশেপাশে তাকিয়ে ভাবতে শুরু করলাম এখান থেকে কি করে বের হবো! কিন্তু উপায় পাচ্ছিলাম না। তখন দেখতে পেলাম একটা ভাঙা দরজা। দরজাটা খুলতে ক্যাচ ক্যাচ করে শব্দ তৈরি হতেই জানোয়ার গুলো টের পেয়ে যায়। আমি দৌড়াবার আগেই আমার চুলগুলো টেনে ধরে। দেখো এইভাবে!

সুবাহ হাত দিয়ে দেখায় তারা ঠিক কিভাবে চুল ধরেছিলো। চোখের কোনে পানি এসে ভিড় করেছে বহুক্ষণ আগে। সাদাদ সুবাহর হাত টেনে তার কাছে এনে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখে। তার চোখ লাল হয়ে আছে।

সুবাহ কিছুক্ষণ শব্দ করে কাঁদে। তার কান্না বেগ কিছুটা কমে এলে আবার বলে,
–আমার চুল ধরে টেনে মেঝেতে ফেলে দেয়। অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে। ওরা এক দলে চারপাঁচজন হবে। আমি অনেক চেষ্টা করি, ওদের কাছে মিনতি করি, তবুও তাদের পাষাণ হৃদয় গলতে অক্ষম। হঠাৎ করে একটা লোক এসে আমার কোমর স্পর্শ করে, খুবই বাজে ভাবে। তার মুখ আমার গলায় ছোঁয়াতে চায়। আমি চেষ্টা করতে থাকি নিজেকে ছাড়াতে। কিন্তু সামনের লোকটা ছটফট করতে থাকে আমার কাছে আসার জন্য। ওই লোকটাই আমার চুল ধরেছিলো। এর মধ্যেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোক সেই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কবির থাইম্মা যা। সারে কইছে মাইয়াডারে কিছু করুন যাইবো না। অক্ষত দিতে কইছে।

পাশে থেকে আরেক লোক বললো,
-আরে কবিরে জীবনেও মাইয়াগো ছোঁয় নাই! তাই এইডারে দেইখা হের মেশিন খাড়াইয়া গেছে।

আমি এতো বিশ্রি ভাষা নিতে পারছিলাম না। পাশে তাকাতেই দেখি একটা চেয়ারের ভাঙা অনেক অংশ পড়ে আছে। আমি আমার উপর লোকটার ঘাড়ে এক বিশ্রি কামড় বসিয়ে দিতেই লোকটি জোরে আর্তনাদ করে পাশে গড়িয়ে পড়লো। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সেই ভাঙা অংশগুলো থেকে একটা অংশ উঠিয়ে পেটাতে শুরু করলাম সামনে যাকে পাচ্ছি তাকে। পেটাতে পেটাতেই সেই দরজা দিয়ে অনেক কষ্টে বের হয়েই দৌড় দিয়েছি। আগে-পিছে, ডানে-বামে কিছু দেখি নি। কিন্তু বের হওয়ার আগে আমি সেই কবির নামে লোকটার লজ্জাস্থানে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করে এসেছি। তোমার আমানত ছোঁয়ার মতো দুঃসাহস করেছে সে! পরে দৌড়াতে দৌড়াতে তোমার সামনে এসে পড়ি।

সুবাহ সবটা বলে সাদাদের বুকে মাথা দিয়ে রাখে। সাদাদ তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। সুবাহ কাঁদছে। তাকে আবারো সেই দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে। সাদাদ সুবাহর গাল ধরে তার দিকে ফিরালো। কাঁদতে কাঁদতে তার নাক মুখ লাল হয়ে আছে। সাদাদ বললো,
–সুবাহ! এদিকে তাকাও আমার দিকে।

সুবাহ তার দিকে তাকিয়ে চোখ খুলতেই তার চোখের কোনা বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে লাগে। সাদাদ একটা ঢোক গিলে বলে,
–আজ তোমার সকল বিষন্ন অনুভূতি আমার পবিত্র স্পর্শ দিয়ে মুছে দেবো। তুমি এখনো পবিত্র। আজ থেকে তোমার মনে আর কোনো সংশয় থাকবে না। আজ আমি তোমাকে আমার মতো করে স্পর্শ করবো যেন সেই কালো প্রহর তোমার মনেই না আসে।

সুবাহ লজ্জা পেলো। কিটকেট কি বুঝলো জানা নেই তবে সে সাদাদের দৃষ্টি পেতেই আস্তে করে রুমের বাইরে চলে গেলো। সাদাদ উঠে রুমের দরজা লাগিয়ে সুবাহর কাছে এসে তাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিলো। সুবাহ লজ্জায় সাদাদের বুকে বিনা সংকোচে মুখ গুঁজলো।

.
এক দীর্ঘ ভালোবাসাময় রাত কাটলো সুবাহর। এখনো সে সাদাদের বাহুডোরে আবদ্ধ। বাইরে আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। ঠান্ডা বাতাসে পর্দাগুলো বিনা বাধায় উড়ে চলেছে। সকালটা বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে। সুবাহ উঠে বসে। গায়ের চাদরটা আরেকটু চেপে ধরে নিজের গায়ে। ডানপাশে সাদাদ গভীর ঘুমে। সুবাহ শুনেছে যে স্বামী স্ত্রীর ডানপাশে এবং স্ত্রী স্বামীর বামপাশে ঘুমানো সুন্নত। এতে সংসারে অশান্তি কমে। এরজন্য সুবাহ কখনোই সাদাদকে তার বাম পাশে শুতে দেয় নি। সাদাদও আর তাকে ঘাটায় নি। সুবাহ হালকা হেসে উঠে পড়লো।

.
ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে রুবাইয়া। এর মধ্যেই সুবাহর আগমন ঘটে সেখানে। সুবাহর ঠোঁটে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে আছে। রুবাইয়া নিজের বোনকে দেখে হালকা হাসলো। তার বুঝতে বাকি নেই। সুবাহর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে দুবোনে হাতে হাতে কাজ করতে লাগলো। এর মাঝেই ধাপধুপ করে হাজির হলো আরফান। সে রুবাইয়াকে ডাকে।
-রুবা! এদিকে একটু আসো, তোমার সাথে কথা আছে।

দেখা গেলো রুবাইয়া তার কথা না শুনে রান্নাঘরে চলে গেলো। সুবাহ রুবাইয়াকে এভাবে অভিমান করতে দেখে আরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–কি হয়েছে দুলাভাই? আপু রেগে আছে কেনো আপনার উপর!

আরফান সুবাহর দিকে অসহায় চাহনি দিলো। সুবাহ কিছু বুঝতে পেরে ঠেস মেরে বললো,
–দুই ভাই একরকম! এরা পারে খালি দেরি করে বাসায় আসতে! একদম ঠিক হইছে। এই আপু! তুই এতো সহজে মানবি না। দুইদিন পর বাবা হবে আর সে এখন দেড়ি করে বাসায় আসে, বউকে একা রাখে!

আরফান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। তারপর হুট করে রান্নাঘর থেকে আসা রুবাইয়াকে ঝাপটে ধরে। তার চোখে খুশির পানি। সুবাহ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি রুবাইয়া তার প্রেগন্যান্সির কথা কাল আরফানকে বলে নি? এর জন্যই তো কষ্ট করে দুবোনে ঘর সাজালো, সুন্দর করে কার্ড বানালো যাতে লিখা ছিলো, “আমি আসছি, বাবা”। রুবাইয়া কেঁদে ফেললো। আরফান তার বউকে কোলে তুলে নিয়ে চললো রুমের দিকে। আগে বউয়ের মান ভাঙাতে হবে। সুবাহ তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রান্নাঘর থেকে কফি নিয়ে চললো স্বামীসেবা করতে।

.
সাদাদ উপুত হয়ে ঘুমাচ্ছিলো। সুবাহ গিয়ে তাকে ডাকলো,
–সাদাদ! ওঠো। অনেক বেলা হয়ে গেছে। আর এই তোমার কফি। সাদাদ!

সাদাদ উঠলো তো নাই বরং আড়মোড়া ভেঙে কোলবালিশ জড়িয়ে আবার ঘুমাতে উদ্যত হলো। সুবাহ কোমরে হাত দিয়ে রাগী স্বরে বললো,
–সাদাদ! উঠো। জানো বাসায় কি কি হচ্ছে?

সাদাদ ঘুমঘুম কন্ঠে এক লজ্জাহীন কথা সুবাহকে শুনিয়ে দিলো,
–হুমমম..রাতে আদর আদর খেলা আর সকালে ঘুম ঘুম খেলা হচ্ছে!

সুবাহর ইচ্ছে হলো এই সাদাদের মুখে তুলো গুঁজে দিতে। অসভ্য একেবারে।
সুবাহ বেশ জোরেই বললো,
–জ্বী না! কদিন পর বাচ্চা নিয়ে খেলবে, তার রাস্তা তৈরি হচ্ছে।

সাদাদ এক লাফে উঠে বললো,
–এই সুবাহ? তুমি প্রেগন্যান্ট?

সুবাহ চোখ ছোট করে ফেললো। এক অসহায় শ্বাস ফেলে বললো,
–আমি না! আপু। আর আপনি চাচু হচ্ছেন।

সাদাদ অবাক হয়ে বললো,
–সত্যি? আরফান বাবা হচ্ছে? শালা আমাকে কিছুই বললো না। একে তো…

সুবাহ সাদাদের কথা আটকে দিয়ে বললো,
–সে নিজেই জেনেছে সকালে। রাতে কত আয়োজন করলাম আমি আর আপু মিলে কিন্তু এই লোক বাসায় এসেছে দেরি করে, তাই আপুও আর রাগ করে তাকে বলে নি। এখন বউয়ের রাগ ভাঙাচ্ছে রুমে বসে।

সাদাদ সুবাহ দুজনেই হেসে দিলো।

.
রুবায়েত তার বউয়ের খেদমতে ব্যস্ত। আজ সারাটা রাত সাদিয়া তাকে গাঁধার খাটুনি খাটিয়েছে। তার এই চকলেট খেতে ইচ্ছে করে তো ওই ফুচকা খেতে মন চায়! একটু ঘুমোলেই আবার ডেকে বলছে তার নাকি একা একা ভয় করছে। অথচ তার পাশেই রুবায়েত শুয়ে আছে। এই করতে করতেই সকাল হয়ে গেলো। রুবায়েত এর চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। সাদিয়াও ঘুমিয়েছে, হঠাৎ ফোনের আওয়াজ আসতেই রুবায়েত তাড়াতাড়ি ফোন তুলে সাইলেন্ট করে দিলো। ফোন তুলে বললো আজ সে ছুটি নেবে, এখন কাজে যাওয়ার মতো শক্তি ইচ্ছে কোনটাই তার নেই। সে ফোন কেটে সাদিয়াকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে রইলো।

(চলবে)..

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
দ্বিতীয়ধাপ
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-৯
.
.
.
সাদাদ সকালবেলা নাস্তা না করেই বেরিয়ে গেছে ফোন পেয়ে। সুবাহ অনেকবার নাস্তা করে যেতে বললে সে বললো সময় নেই, বাইরে নাস্তা করে নিবে। সুবাহ আর মানা করে নি। এমনিতেই সামনে ইলেকশন এর জন্য তাকে অনেক দৌড়াতে হয়। সুবাহর মন এখনও সায় দেয় না রাজনীতির প্রতি, তবুও কি আর করার! সাদাদের জন্য টেনশন করে, মন বেশি খারাপ হলে কেঁদে কেটে বুক ভাসায় তবু সাদাদ তার বিন্দুমাত্র জানে না। কারণ সুবাহ জানতে দেয় না। সুবাহ নাস্তা করে সকাল থেকেই বসে গেছে পড়াশোনা করতে।

.
সাদাদের লোকেরা ড্রাইভার রহমানকে ধরতে পেরেছে। সেই খবর শুনেই সাদাদ দৌড়ে এসেছে। ড্রাইভার রহমান ভয়ে কাছুমাছু হয়ে আছে। সে পালানোর অনেক চেষ্টা করে তবু পারে নি, খুব বুদ্ধির সাথে তাকে ধরা হয়েছে। সাদাদ প্রকাশ্যে কোন লোক লাগায় নি, গোপনে বাংলাদেশের কোন কোনা বাদ রাখে নি। অবশেষে ড্রাইভার রহমানের খোঁজ পায় চট্টগ্রাম শহরে। সাদাদ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। তার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে উঠছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে কাট কাট গলায় জিজ্ঞাসা করলো,
–কেনো এমন করলি সুবাহর সাথে? হু?

ড্রাইভার রহমান চুপ করে আছে। সাদাদ হুংকার দিয়ে উঠলো,
–বল! কত সম্মান করে ও তোর! আর তুই কি প্রতিদান দিলি? বাচ্চা একটা মেয়ের গায়ে তুই কলঙ্ক লাগিয়ে দিলি? কুত্তার বাচ্চা!

সাদাদ গালি দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়লো ড্রাইভারের উপর! ইচ্ছেমতো পেটাচ্ছে। কিন্তু তবু একটা কথাও পেট থেকে বের করছে না সে। তাই সাদাদ তুষারকে বললো,
–ইঞ্জেকশনটা নিয়ে আয়। এ এভাবে সত্যি বলবে না!

-জ্বী ভাই!

তুষার ইঞ্জেকশন এনে ড্রাইভারকে দিতে নিলে সাদাদ তার হাতে ইঞ্জেকশন দিতে বলে। সাদাদ সিরিঞ্জে ঔষধ নিতে নিতে বলে,
–আবার জিজ্ঞাসা করছি, বল! তোর সাথে আমাদের কি শত্রুতা? কেনো তুই আমার জীবনের পিছে পড়েছিস? নাকি কারো কথায় এই কাজ করেছিস? বল। নয়তো ঔষধ টা তোর শরীরে গেলে এমনিতেই কথা বের হবে।

ড্রাইভার রহমান হাঁপাতে শুরু করলো। স্বর জড়ানো গলায় বললো,
–আমি কিচ্ছু জানি না।

সাদাদ এর হিংস্রতা বাড়তে লাগলো। ভয়ংকর হয়ে উঠেছে সে। ইঞ্জেকশনটা ড্রাইভারের হাতে পুশ করে দিলো সাথে সাথে। নির্দিষ্ট সময় পর ড্রাইভার রহমান ঢুলতে লাগলো। সাদাদ ড্রাইভার রহমানের চোয়াল ধরে বললো,
–এবার বল! কে তোকে পাঠিয়েছে? কি উদ্দেশ্য তোর?

ড্রাইভার রহমান ঢুলতে ঢুলতে বললো,
–আমাকে টাকা দিয়েছে! অ..নেক টা..কা। শু..ধু সুবাহ মামনিকে..মার..তে হবে। আহ!

সাদাদ ড্রাইভার রহমানে ঘাড় চেপে বললো,
–কে টাকা দিয়েছে তোকে? সত্যি করে বল! সুবাহকে মামনিও বলিস! আবার মারতেও চাস! বল, কে তোকে পাঠাইছে?

-আস…

ড্রাইভার রহমানের আর কোন শব্দ শোনা যায় নি। সাদাদ প্রথমে অবাক হয় কিন্তু পরক্ষণেই রহমানের পালস চেক করে দেখে সে মৃত! কিন্তু সাদাদ তো এমন কোন ঔষধ দেয় নি যাতে সে মারা যাবে! কিভাবে মারা গেলো? সাদাদ তুষারের দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলো,
–কি ঔষধ দিয়েছিস?

তুষার ঔষধটা এনে সাদাদকে দেখালো। না ঔষধ তো ঠিকই আছে। সাদাদ দেরি না করে ফোন করলো।

.
এক সনামধন্য হাসপাতালে নিজ কেবিনে বসে রোগী দেখছিলেন ড. শিশির রায়হান। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে সেদিকে চোখ বুলাতেই তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো। ফোনটা তুলে কানে নিয়ে ঠেস মেরে বললো সে,
-কি ব্যাপার? আজ নেতামশাই নিজ থেকে এই ডাক্তারের স্মরণ করলো?

সাদাদ ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
–শিশির! তোর সাহায্যের প্রয়োজন! একটু আসতে পারবি?

শিশির ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সাদাদ নিজ থেকে তার কাছে সাহায্য চাইছে তারমাবে বিষয়টা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ।

.
শিশির রহমানের লাশটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
-লাশটাকে আগে ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্টে পাঠাতে হবে। তবেই বুঝতে পারবো আসলে মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে। আর এই ঔষধ এর বোতলটাও ল্যাবে পাঠাতে হবে। কিন্তু সাদাদ একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস?

সাদাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো কি?

-লাশের হাত আর পায়ের দিকটা লক্ষ্য কর! একদম বেগুনি রঙের হয়ে গেছে!

সাদাদ বেশ অবাক হয়ে বললো,
–হয়তো এটা মারের দাগ!

শিশির মাথা নাড়িয়ে বললো,
-উঁহুম! এটা মারের দাগ না। মারের দাগ সাধারণত কালচে নয় লাল হয়ে থাকে। আর এই দাগগুলো জমাট বাধা নয়, মারের দাগ হয়ে জমাট বাধা থাকতো।

সাদাদ উৎসুকভাবে জিজ্ঞাসা করলো,
–তাহলে?

শিশির বেশ ভাবগম্ভীরভাবে বললো,
-হয়তো বিষক্রিয়া!

সাদাদ অবাক হয়ে বললো,
–কিন্তু ওকে বিষ কে দিবে? আমি তো শুধু ওকে অ্যালকোহলের একটা ডোজ দিয়েছিলাম মাত্র!

শিশির ভেবে বললো,
-সেটা তো এখন ফরেন্সিক রিপোর্টই বলতে পারবে!

.
এক নাগাড়ে কান্না করে যাচ্ছে সাদিয়া। রুবায়েত তার পাশেই বসে তার কান্না থামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাদিয়ার কান্নার বেগ আরো বেড়েই চলেছে। রুবায়েত তাকে বলে,
-সাদিয়া? কান্না কেনো করছো বউ? আরে এক মাসের বিষয়! ত্রিশ দিনের একদিনও বেশি আমি ওখানে থাকবো না প্রমিস!

সাদিয়া কান্নাজড়ানো গলায় বললো,
-আমাকে একা ফেলে প্লিজ যেওনা। আমার বুক কাঁপছে। প্রতিনিয়ত তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি অস্থির! প্লিজ তোমাকে দোহাই লাগে, আমাকে এভাবে শাস্তি দিও না। আমি কিছুতেই থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।

রুবায়েত দেখলো সাদিয়া বেশ আতংকিত হয়ে গেছে। তার শরীর থেকে অঝরে ঘাম দিচ্ছে। তাই দেরি না করে সাদিয়াকে তার সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
-একটু শান্ত হও সাদিয়া। এই বিষয় আমরা পরে কথা বলবো। চুপ! চুপ! একদম চুপ!

সাদিয়া কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তবুও তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। প্রেগন্যান্সিতে আতংকিত হয়ে গেলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, তাই সাদিয়া নিজেও শান্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

.
এক ভাঙা দরজার ক্যাট ক্যাট শব্দ কানে আসতেই একদল জুয়ারি পাশ ফিরে তাকালো। সাদাদকে দেখে তারা চিনতে পারে নি। এপাশটায় অন্ধকার থাকায় তারা সাদাদের চেহারার হিংস্রতাও দেখতে পেলো না। সাদাদ গম্ভীর গলায় বললো,
–তোদের মধ্যে কবির কে?

(চলবে)….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here